জয় শ্রীরাম – জয় শ্রীরাম
জয় শ্রীরাম – জয় শ্রীরাম
জয় শ্রীরাম – জয় শ্রীরাম
বিপুল সংখ্যায় সমাগত আমার প্রিয় সংস্কৃতি-প্রেমী ভাই ও বোনেরা, আপনাদের সবাইকে বিজয়া দশমীর পবিত্র উৎসবে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
ভারত উৎসবের দেশ। বছরে ৩৬৫ দিনের মধ্যে হয়তো এমন কোনও দিন নেই, যখন ভারতে কোনও না কোনও প্রান্তে কোনও উৎসব পালিত হয় না।
হাজার হাজার বছরের সাংস্কৃতিক পরম্পরার ফলে অনেক বীর, পৌরাণিক গাঁথার সঙ্গে যুক্ত জীবন, ইতিহাসের ঐতিহ্যকে শক্তিশালী করে তোলা সাংস্কৃতিক পরম্পরার উপস্থিতিতে আমাদের দেশ এই সকল উৎসব থেকে জনমানসে সংস্কার ও শিক্ষার মাধ্যমে মিলেমিশে চলার নিরন্তর প্রশিক্ষণের কাজ করতে থাকে।
উৎসব আমাদেরকে পরস্পরের সঙ্গে যেমন যুক্ত করে, তেমনই অনেক সময় আমাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। উৎসব আমাদের উৎসাহ ও উদ্দীপনায় ভরপুর করে তোলে, নতুন নতুন স্বপ্ন দেখার সামর্থ্য অঙ্কুরিত হতে সাহায্য করে। আমাদের শিরা-ধমনীতে প্রাণশক্তি ভরে দেয়, সেজন্য ভারতের সামাজিক জীবনে উৎসব হ’ল একটি প্রাণতত্ত্ব। আর এই উৎসব প্রাণতত্ত্ব হওয়ার ফলে আমাদের হাজার হাজার বছর পুরনো মহান পরম্পরাকে কখনই ক্লাব সংস্কৃতির শরণাপন্ন হতে হয়নি। উৎসবই আমাদের সমাজে সমস্ত অভিব্যক্তির উৎকৃষ্ট মাধ্যম হয়ে ওঠে, আর এটাই হ’ল এই উৎসবগুলির শক্তি।
আমাদের দেশে উৎসবের মাধ্যমে প্রতিভা বিকাশ, প্রতিভাকে সামাজিক গরিমা প্রদান এবং প্রতিভা প্রদর্শনের নিরন্তর প্রচেষ্টা জারি রয়েছে। কলা, বাদ্য, সঙ্গীত ও নৃত্য আমাদের উৎসবগুলির অভিন্ন অঙ্গ হয়ে উঠেছে। সেজন্য দেশের হাজার হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে এই সংস্কৃতি সাধনার ফলে ভারতীয় পরম্পরায় রোবট জন্ম নেয় না, সৃষ্টিশীল মানুষ জন্ম নেয়। তাঁর মনে মানবতা, করুণা, সমবেদনা, দয়া এবং প্রাণশক্তির সঞ্চার করে এই উৎসব অনুষ্ঠান।
আর সেজন্য এই ক’দিন ধরে আমরা নবরাত্রির নয় দিন ধরে ভারতের সমস্ত প্রান্তে নবরাত্রি উৎসব পালন করেছি। এই শক্তিসাধনার পরবে শক্তির উপাসনা, আরাধনার মাধ্যমে সমস্ত ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করার জন্য অন্তরের অসামর্থ্য ও কুসংস্কার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এই শক্তি আরাধনা এক নতুন স্বরূপে আমাদের মনে নতুন শক্তি সঞ্চার করে।
আর যখন মায়ের উপাসনারত এই দেশ, নিবিড় শক্তি সাধনা করছে, সেই মাটিতে শক্তিসাধনার পাশাপাশি, প্রত্যেক মা ও কন্যার সম্মান এবং গৌরব রক্ষার সংকল্প আমাদের নিতে হবে। এটা সমাজের প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব।
আর সেজন্য এবার আমি ‘মন কি বাত’ – এ বলেছিলাম যে, আমাদের দেশে উৎসব যুগের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে আসছে। আমাদের এমন একটি সমাজ রয়েছে, যা গর্বের সঙ্গে প্রতিটি পরিবর্তনকে স্বীকার করে। আমরা প্রতিটি স্পর্ধাকে প্রতিস্পর্ধা জানাতে ভালোবাসি এবং প্রয়োজন অনুসারে নিজেদের বদলাতেও পারি।
যখন কেউ বলেন, ‘হস্তি মিটতি নেহি হামারি’ কেন আমাদের গরিমা সদা অক্ষুণ্ন থাকে? সময় হাতে রেখে পরিবর্তন আনতে পারলেই এটা সম্ভব! কারণ, আমাদের সমাজ যখনই কোনও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়েছে, তখন এই সমাজের মধ্য থেকেই সেই কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মহাপুরুষ জন্ম নিয়েছেন। তখন শুরুতে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সংঘর্ষ হলেও কিছুদিন পর সেই সম্মানিত তপস্বী, সেই যুগপুরুষ আমাদের জনগণের প্রেরণা পুরুষ হয়ে উঠেছেন।
সেজন্য আমাদের মজ্জায় পরিবর্তন স্বীকার করার ঐতিহ্য রয়েছে। এই ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখেই আমি এবার ‘মন কি বাত’ – এ বলেছিলাম যে, দীপাবলী উৎসবে আমরা মহালক্ষ্মীর পুজো করি, লক্ষ্মীর আগমনকে আমরা আবেগমোথিত হয়ে স্বাগত জানাই। আমাদের মনে স্বপ্ন থাকে যে, আগামী বছর দীপাবলী পর্যন্ত এই মহালক্ষ্মী আমাদের ঘরে অধিষ্ঠান করবেন, আমাদের সমৃদ্ধি আনবেন। সেজন্য আমি ‘মন কি বাত’ – এ বলেছিলাম যে, আমাদের বাড়িতে, গ্রামে, শহরে ও পাড়ায় লক্ষ্মী-স্বরূপা যে কন্যারা থাকেন, তাঁদেরকে চিহ্নিত করে সম্মানিত করুন। যে কন্যারা তাঁদের জীবনে কিছু অর্জন করে���েন, যে কন্যারা অন্যদের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে উঠতে পারেন, আমরা মিলিত কর্মসূচির মাধ্যমে সেই কন্যাদের যদি সম্মান জানাতে পারি, সেটাই হবে সত্যিকারের লক্ষ্মী পুজো। কারণ, তাঁরাই আমাদের দেশের আসল লক্ষ্মী। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের উৎসবে এ ধরনের পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
আজ বিজয়া দশমীর পবিত্র উৎসবের পাশাপাশি, আমাদের ভারতীয় বায়ুসেনার জন্মদিবস। এদেশের বায়ুসেনা যেভাবে মহাপরাক্রমে নতুন নতুন উচ্চতা অর্জন করছে, আজকের এই বিজয়া দশমীর পবিত্র উৎসবে যখন আমরা ভগবান হনুমানজীকে স্মরণ করি, আসুন আমরা ভারতীয় বিমান বাহিনীকেও স্মরণ করি। আমাদের বিমান বাহিনীর সমস্ত বীর সেনানীদের স্মরণ করি, আর যাঁরা আজ বীরদর্পে কর্মরত তাঁদেরকে শুভেচ্ছা জানাই। তাঁদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি।
আজ বিজয়া দশমীর পবিত্র উৎসব, অসুর শক্তির বিরুদ্ধে দৈবী শক্তির বিজয়ের উৎসব। কিন্তু সময় হাতে থাকতে আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ নিজের মনের মধ্যে যে অসুরশক্তি আছে, তাকে পরাস্ত করা। তবেই আমরা রামকে অনুভব করতে পারবো। প্রভু রামকে নিজের মনে অনুভব করতে হলে নিজেদের জীবনে জয়লাভ করতে হলে, প্রতিপদে সাফল্য পেতে হলে, নিজেদের মনের দুর্বলতা, ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং অসুর প্রবৃত্তিকে ধ্বংস করাই আমাদের প্রাথমিক দায়িত্ব। তবেই আমরা নিজেদের জীবনকে প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরিয়ে তোলার সামর্থ্য অর্জন করতে পারবো।
আজ বিজয়া দশমীর পবিত্র উৎসব, আর ��মরা মহাত্মা গান্ধীর ১৫০তম জন্ম জয়ন্তী পালন করছি। তাই দেশবাসীকে সংকল্প নিতে হবে – আমরা দেশের স্বার্থে এ বছর প্রত্যেকে কমপক্ষে একটি সংকল্প বাস্তবায়িত করবোই। এমন একটি সংকল্প হতে পারে – জল সংরক্ষণ। সংকল্প হতে পারে – খাদ্যের অপচয় করবো না। সংকল্প হতে পারে – বিদ্যুৎ সাশ্রয় করবো। এটাও সংকল্প হতে পারে – দেশের সম্পত্তি নষ্ট করবো না, নষ্ট হতেও দেবো না।
আসুন, আমরা এই বিজয়া দশমীর পবিত্র উৎসব, মহাত্মা গান্ধীর ১৫০তম জন্ম জয়ন্তী, গুরু নানক দেবের ৫৫০তম প্রকাশপর্ব – এই অদ্ভূত সংযোগ উপলক্ষে এগুলি থেকে প্রেরণা নিয়ে কোনও না কোনও সংকল্প গ্রহণ করি আর নিজেদের জীবনে বিজয় লাভের উদ্দেশে কাজ করতে থাকি।
মিলিতভাবে কাজ করার শক্তি অপার। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা ভাবুন, মিলিত শক্তির মহিমা প্রতিষ্ঠা করতে তিনি এক আঙুলে গোবর্ধন পর্বতকে উত্তোলন করলেও সমস্ত গোয়ালাদের লাঠির মিলিত শক্তিকে গোবর্ধন পর্বত তোলার কাজে যুক্ত করেছিলেন। তেমনই প্রভু রামও সমুদ্র লঙ্ঘণ করার জন্য সেতু নির্মাণে সঙ্গীদের মিলিত শক্তি প্রয়োগ করেছিলেন। তাঁর অরণ্যবাসী বন্ধুদের মিলিত শক্তি প্রয়োগ করেই তিনি যে সেতু নির্মাণ করেছিলেন, তার ওপর দিয়ে হেঁটেই তিনি শ্রীলঙ্কায় পৌঁছেছিলেন। আমাদের উৎসব এই মিলিত শক্তি ও সামর্থ্যেরই প্রতীক। এই শক্তির দৌলতেই আমরা আমাদের সংকল্প থেকে সিদ্ধির পথে যেতে পারি।
নিজেদের প্লাস্টিক মুক্ত করা�� জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে। যে প্লাস্টিক আমরা একবার ব্যবহার করে ফেলে দিই, তেমন প্লাস্টিক থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। এতে পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি, আমাদের শহরগুলির বড় বড় সড়ক ও পয়ঃপ্রণালী অবরুদ্ধ হওয়ার সমস্যার সমাধান হবে এবং আমাদের পশুধন ও সামুদ্রিক জীবন নিরাপদ থাকবে।
আজকের দিনটিকে প্রভু রামজীর বিজয় উৎসবের পরবকে আমরা হাজার হাজার বছর ধরে বিজয়পর্ব রূপে পালন করি। রামায়ণ পালা মঞ্চস্থ করে ‘সংস্কার সরিতা’ প্রবাহের প্রচেষ্টা করি। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এভাবে সংস্কার সঞ্চারিত হয়।
আজকের এই দ্বারকা রামলীলা সমিতির মঞ্চায়নের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার, পরিচিত করানোর যে প্রচেষ্টা হয়েছে, তাকে আমি অন্তর থেকে প্রশংসা করি।
আপনাদের সকলকে বিজয়া দশমীর অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আর আমার সঙ্গে আরেকবার বলুন –
জয় শ্রীরাম – জয় শ্রীরাম
জয় শ্রীরাম – জয় শ্রীরাম
জয় শ্রীরাম – জয় শ্রীরাম
অনেক অনেক ধন্যবাদ।