বিপুল সংখ্যায় আগত আমার কাশীর নবীন বন্ধুগণ, ভাই ও বোনেরা আমার প্রণাম নিন।
কাশীর মানুষ আমাকে এত ভালোবাসা দিয়েছেন যে, এখানে এলে আমার মন আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। আমি আপনাদেরই সন্তান, সেজন্য বারংবার কাশী আসতে মন চায়।
ভাই ও বোনেরা, হর হর মহাদেব।
আমার সৌভাগ্য যে দেশের জন্য সমর্পিত আরেকটি বছর আমি বাবা বিশ্বনাথ এবং মা গঙ্গার আশীর্বাদ নিয়ে শুরু করছি। আপনাদের সকলের এই স্নেহ ও আশীর্বাদ আমাকে প্রতি মুহূর্তে প্রেরণা যোগায় আর দেশবাসীর সেবার সংকল্পকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।
বন্ধুগণ, এই সেবা ভাবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আজ এখানে ৫৫০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ ব্যয় করে যে প্রকল্পগুলি তৈরি হয়েছে, সেগুলির উদ্বোধন হ’ল কিংবা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে।
এই উন্নয়নের ধারা শুধু বেনারস শহরেই নয়, আশেপাশের গ্রামগুলিও এর দ্বারা উপকৃত হবে। এতে বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের মতো অতি আবশ্যক পরিষেবার পাশাপাশি কৃষক, তাঁতি ও বস্ত্রশিল্পীদের নতুন নতুন সুযোগ গড়ে তোলার প্রকল্পও সামিল হয়েছে।
শুধু তাই নয়, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়কে একবিংশ শতাব্দীর গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান কেন্দ্র রূপে গড়ে তুলতেও কয়েকটি প্রকল্পের সূত্রপাত করা হয়েছে। এই সকল প্রকল্পের জন্য আমি বেনারসের জনগণকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুগণ, আমি যখনই আপনাদের মাঝে আসি, তখন একটি কথা অবশ্যই মনে করাই যে, আমরা কাশীতে যত পরিবর্তনই আনার চেষ্টা করি না কেন, তা এই শহরের ঐতিহ্য এবং পৌরাণিক প্রেক্ষিতকে সযত্নে রক্ষা করে তবেই পরিকল্পনা সাজাই। অনন্তকাল ধরে এই শহরের যে পরিচিতি, তা সুরক্ষিত রেখে এই শহরে নানা আধুনিক পরিষেবার সমাবেশ ঘটানো হচ্ছে।
চার, সোয়া চার বছর আগে যখন কাশীবাসী পরিবর্তনের সংকল্প নিয়েছিলেন, তখন থেকে আজকের মধ্যে নগরোন্নয়নে যতটা কাজ হয়েছে, তা স্পষ্টভাবে দেখা যায়। ঠিক বলছি কি, দেখা যায় না? ধন্যবাদ।
আপনারা সবাই সেই ব্যবস্থার সাক্ষী, যখন আমাদের কাশীকে ভোলেবাবার ভরসায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, আজ আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, বাবা বিশ্বনাথের আশীর্বাদে আমরা বারানসীর উন্নয়নকে নতুন মাত্রা দিতে সফল হয়েছি।
আজ আর সেই বিদ্যুতের খুঁটি ও তারের জাল দেখা যায় না। কাশীর যাবতীয় অব্যবস্থা এখন চতুর্মুখী উন্নয়নে পরিবর্তিত হয়েছে। আমি এখানকার সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার আগে যখনই এখানে আসতাম, তখন বিদ্যুতের তারের জাল দেখে ভাবতাম, কবে এই শহরকে এই অব্যবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারব! আজ দেখুন, শহরের অধিকাংশ অঞ্চলে রাস্তায় ছুটতে থাকা বিদ্যুতের তার আর দেখা যায় না, অন্যান্য অঞ্চলেও মাটির নীচে তার বিছানোর কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।
আজ এখানে বৈদ্যুতিকীকরণের সঙ্গে যুক্ত ৫টি বড় প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হ’ল পুরনো কাশীকেও বিদ্যুতের তারের জাল থেকে মুক্তি দেওয়া। এই সকল প্রকল্পের মাধ্যমে বারানসী শহর ছাড়াও আশেপাশের অনেক গ্রামে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্য পূরণে কাজ করা হবে। আজ একটি বিদ্যুৎ উপ-কেন্দ্রের শিলান্যাসও হ’ল। এটি নির্মিত হলে আশেপাশের অনেক বড় এলাকার ভোল্টেজের সমস্যা মিটবে।
বন্ধুগণ, বারানসীকে পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার রূপে বিকশিত করার লক্ষ্য মাথায় রেখে সরকার এই শহরটিতে বিশ্বমানের পরিকাঠামো গড়ে তুলছে। একবিংশ শতাব্দীর প্রয়োজনীয়তা অনুসারে যানবাহন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা – সকল রকম পরিষেবা ও উন্নয়নের কাজ করা হচ্ছে।
আজ কাশী এলইডি বাল্বের আলোয় ঝক্মক করছে। এখন রাতের বেলাতেও মা গঙ্গাকে স্পষ্ট দেখা যায়। আর এই এলইডি বাল্ব লাগানোর ফলে বিদ্যুতের বিলেও অনেক সাশ্রয় হয়েছে। বারানসী নগর নিগমও এলইডি বাল্বের মাধ্যমে অনেক কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে।
বন্ধুগণ, চার বছর আগে যাঁরা কাশীতে এসেছিলেন, তাঁরা আজ এলে দেখবেন, এই শহর কিভাবে বিস্তারলাভ করছে। অনেক বছর ধরেই বেনারসে রিং রোডের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছিল। কিন্তু এর কাজ লালফিতের ফাঁসে আটকে ছিল। ২০০৪ সালে আমরা সরকারের দায়িত্ব নিয়ে কাশীর রিং রোডের ফাইল খুঁজে বের করি। কিন্তু কাজ শুরু করার পরও পূর্ববর্তী উত্তর প্রদেশ সরকার এই প্রকল্পের গতি আসতে দেয়নি। তারা ভাবতেন, এখন এই কাজ হয়ে গেলে, সবাই মোদীর জয়জয়কার করবেন – সেজন্য চেপে রেখেছিলেন।
কিন্তু আপনারা যোগীজির নেতৃত্বে সরকারকে নির্বাচন করার পর থেকেই অনেক দ্রুতগতিতে কাজ শুরু হয়। হরহুয়া থেকে গাজীপুর পর্যন্ত চার লেনের সড়কপথের কাজ ইতিমধ্যেই প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। আর হরহুয়া থেকে রাজাতালাব এবং চন্দৌলি পর্যন্ত একটি নতুন সার্কিট গড়ে তোলার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এপথে গঙ্গার ওপর একটি সেতুও নির্মাণ করা হবে। যার মাধ্যমে বেনারসে বড় বড় মালবাহী ট্রাকের যাতায়াত হ্রাস পাবে।
বন্ধুগণ, কাশী রিং রোড নির্মাণের ফলে চারপাশের অনেকগুলি জেলাও উপকৃত হয়েছে। বিহার, নেপাল, ঝাড়খন্ড ও মধ্যপ্রদেশগামী সড়কগুলি প্রশস্ত করা হয়েছে। বারানসী- হনমনা ন্যাশনাল হাইওয়ে নম্বর-৭, বারানসী-সুলতানপুর মার্গ, বারানসী-গোরখপুর সেকশন এবং বারানসী-হন্ডিয়া সড়কপথ নির্মাণে কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে।
ভাই ও বোনেরা, বেনারস শহরের মধ্যেও কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে অনেকগুলি সড়ক প্রকল্পের কাজ চলছে। মহমুরগঞ্জ থেকে মন্ডুআডিহ যাতায়াতে আগে কত সমস্যা হ’ত, বিশেষ করে, স্কুলের ছেলেমেয়েদের নিয়ে অভিভাবকদের কত সমস্যা হ’ত তা আপনাদের মনে করিয়ে দেবার প্রয়োজন নেই। অনেক বছর অপেক্ষার পর মন্ডিআডিহ উড়ালপুলের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। তেমনই, গঙ্গার ওপর নির্মিত ‘সামনেগাট পুল’ সম্পূর্ণ হওয়ার ফলে রামনগর যাতায়াত অনেক সহজ হয়েছে। এই পুরনো পুলটি সংস্কারের পাশাপাশি অনেক চওড়াও করা হয়েছে। তাছাড়া, বজুউইড-সিন্দৌরা মার্গ প্রশস্তিকরণ, শিবপুর-ফুলবরিয়া মার্গ’কে চার লেনে রূপান্তরণ, রাজাতালাব পুলিশ চৌকি থেকে জখিনী পর্যন্ত পথ প্রশস্ত করার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। আস্থা এবং পর্যটনের দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ পঞ্চকোসী মার্গের উন্নয়নের কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।
ভাবতপুল থেকে কাছারী মার্গ পর্যন্ত সড়ক নির্মাণে প্রায় ৭৫০কোটি টাকাব্যয় করা হয়েছে। আগে এই পথ কতটা সরু ছিল, তা আপনারা ভালোভাবেই জানেন। কয়েক মিনিটের পথ যেতে কয়েক ঘন্টা লেগে যেত। নৈমিত্তিক যানজটে মানুষ কখনও কখনও সঠিক সময়ে বিমান কিংবা রেল যাত্রা করতে পারতেন না। যেদিন এই পথ সম্পূর্ণভাবে তৈরি হয়ে যাবে, তখন এইসব সমস্যা থেকে মুক্তি সুনিশ্চিত।
বন্ধুগণ, বারানসীতে যে উন্নয়ন হয়েছে, তা এই শহরে আসা পর্যটকদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা দিয়েই বোঝা যায়। চার বছর আগে বাওতপুর বিমানবন্দর হয়ে বছরে প্রায় চার লক্ষ পর্যটক যাতায়াত করতেন। এখন এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে বছরে ২১ লক্ষ। বেনারসকে স্মার্টসিটিতে রূপান্তরের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাকে সংহত করা হচ্ছে। পরিবহণ ব্যবস্থার বোঝা হ্রাস করতে ইন্টিগ্রেটেড কমান্ড এবং কন্ট্রোল সেন্টার গোটা শহরের প্রশাসন ও জনপরিষেবাকে নিয়ন্ত্রণ করবে।
বেনারসে নির্মীয়মান মাল্টি-মডেল টার্মিনালের কাজ সম্পূর্ণ হলে এই শহর যাতায়াত ও পণ্য পরিবহণের বড় কেন্দ্র হয়ে উঠবে। সড়ক, রেল ও জলপরিবহণ – এই তিনটি ক্ষেত্রেই উন্নত হলে ব্যবসা এবং শিল্পও উপকৃত হবে।
বন্ধুগণ, কাশীতে যাতায়াতের সময় বাঁচাতে গঙ্গাবক্ষে ফেরি পরিষেবা চালু করার প্রকল্পের কাজ চলছে। বারানসী থেকে হলদিয়া পর্যন্ত জাতীয় জলপথ নম্বর-১ –এর কাজও শুরু হয়ে গেছে। শহরে সর্বত্র সিএনজি গাড়ি চালানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ভাই ও বোনেরা, সোশ্যাল মিডিয়ায় যখন মানুষ খুশি হয়ে বারানসী ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে ছবি পোস্ট করেন, তখন আমার খুব আনন্দ হয়। এই স্টেশন ছাড়াও হমন্ডুআডিহ কিংবা সিটি স্টেশন সবকটিতেই উন্নয়ন যজ্ঞ চলছে, আধুনিকীকরণের কাজ চলছে। রেলপথে যাঁরা কাশী আসেন, তাঁরা এখন স্টেশন থেকেই নতুন কাশী দেখতে পাবেন।
বন্ধুগণ, বারানসী থেকে এলাহাবাদ হয়ে ছাপড়া পর্যন্ত ডবল রেল লাইন পাতার কাজ এগিয়ে চলছে। বারানসী থেকে বালিয়া পর্যন্ত বিদ্যুতিকীকরণের কাজও সম্পূর্ণ হয়েছে। বারানসী থেকে এলাহাবাদ সিটির মধ্যে বৈদ্যুতিকীকরণ ও ডবল রেল লাইন পাতার কাজ চলছে।
পরিকাঠামোর পাশাপাশি বারানসীর সঙ্গে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের রেল যোগাযোগ কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত চার বছরে বারানসী থেকে অনেকগুলি নতুন রেলগাড়ি চালু করা হয়েছে। বারানসী থেকে নতুন দিল্লি, বরোদা, পাটনা প্রভৃতি শহরে যাওয়ার জন্য আধুনিক পরিষেবা ও দ্রুতগতিসম্পন্ন মহামনা এক্সপ্রেস, বারানসী-পাটনা জনশতাব্দী এক্সপ্রেস চালু করা হয়েছে। হুবলী, মাইশোর এবং গুয়াহাটির মতো দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলির সঙ্গে বারানসীর রেল সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়েছে।
বন্ধুগণ, কাশী শহরের সৌন্দার্যায়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এখন আর গঙ্গার ঘাটে নোংরা দেখতে পাবেন না। আলো ঝলমলে ঘাটগুলি থেকে এখন গঙ্গার বুকে নৌকার পাশাপাশি কুরুঞ্জ বিহারও করতে পারবেন। আমাদের মন্দিরগুলিতে ভক্তদের পৌঁছতে যাতে কোনও কষ্ট না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে পর্যটনে পরিবর্তন আনার অভিযান জারি রয়েছে।
ভাই ও বোনেরা, বিগত চার বছর ধরে কাশীর ঐতিহ্যশালী মন্দির ও ভবনগুলির সংস্কারের কাজ চলছে। এখানকার ময়দাগিরসিত টাউনহলে গান্ধীজি স্বাধীনতা আন্দোলনের দীপ প্রজ্জ্বলন করেছিলেন। এটি সংস্কারের পাশাপাশি আমরা হেরিটেজ ভবনের গৌরব পুনরুদ্ধারের কাজ জারি রেখেছি।
বারানসীর বড় বড় পার্কগুলির সার্বিক উন্নয়ন, ভাঙাচোরা প্রবেশদ্বারগুলির সৌন্দর্যায়নের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। সারনাথের পর্যটকদের জন্য ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো’-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যটনকে উৎসাহ যোগাতে বুদ্ধ থিম পার্ক, সারঙ্গনাথ দিঘী, গুরুধাম মন্দির, মার্কণ্ডেয় মহাদেব মন্দির, ভৈরবকুন্ড, সারঙ্গনাথ কুন্ড এবং দুর্গাকুন্ডের মতো অনেক স্থানের পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্যায়ন সুনিশ্চিত করা হয়েছে।
বিগত চার বছর ধরে কাশী সফরে আসা অনেক দেশের শীর্ষ নেতাদের যেভাবে কাশীবাসী স্বাগত জানিয়েছেন, তা দেশের গৌরব বৃদ্ধি করেছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ম্যাঁক্রো, জার্মানীর রাষ্ট্রপতি ফৈঁক ওয়ালটার-কে অদ্ভূত সংবর্ধনা কাশীবাসী দিয়েছেন – তা সারা পৃথিবীতে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রীও কাশীকে একটি কনভেনশন সেন্টার উপহার দিয়েছে।
বন্ধুগণ, আগামী বছরের গোড়াতেই বেনারসের এই আতিথেয়তা সারা পৃথিবীর দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। আগামী জানুয়ারি মাসে কাশীতে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে প্রবাসী ভারতীয় ও ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের মহাকুম্ভ আয়োজিত হবে। সেজন্যে সরকার নিজের মতো প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু এক্ষেত্রে আপনাদের সহযোগিতা জরুরি। প্রত্যেক কাশীবাসীকে এগিয়ে আস্তে হবে। কাশীর প্রত্যেক গলি থেকে রাজপথ ও চৌমাথাগুলিতে যেন বেনারসের রঙ ও রস, এই শহরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ছাপ পরিস্ফুট হয় – সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে অতিথি সৎকারের এমন দৃষ্টান্ত আমরা স্থাপন করতে চাই, যা অতিথিরা সারা জীবন মনে রাখবেন। আর আমি চাই যে, প্রবাসী ভারতীয় দিবসে যাঁরাই এখানে আসবেন, এখানকার অভিজ্ঞতা তাঁদেরকে কাশী পর্যটনের আজীবন দূত করে তুলুক।
ভাই ও বোনেরা, পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে কাশীতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন বর্জ্য নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা এবং বর্জ্য থেকে সম্পদে রূপান্তরণের কাজ এগিয়ে চলেছে। বর্জ্য থেকে সার উৎপাদনের জন্য একটি বড় কারখানা স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য থেকে কম্পোস্ট সার উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। করসরা-তেই বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া, ভবনীয়া পোখরি, পাহাড়িয়া মন্ডি এবং আইডিএ পরিসরে জীব জ্বালানি উৎপাদনের কারখানা স্থাপিত হয়েছে।
বন্ধুগণ, মা গঙ্গাকে পরিচ্ছন্ন রাখতে গঙ্গোত্রী থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত একটি বৃহৎ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। শুধু পরিচ্ছন্নতা নয়, শহরের বর্জ্য যাতে গঙ্গায় না মেশে তার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। সেজন্য ইতিমধ্যেই প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০টিরও অধিক প্রকল্প মঞ্জুর করা হয়েছে।
বেনারসেও ৬০০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগে একই উদ্দেশ্যে কাজ শুরু হয়েছে। বিনাপুর থেকে রামাণায় সিওয়ারেজ ট্রিপল প্ল্যান্ট গড়ে তোলার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। পাশাপাশি, এর সঙ্গে যুক্ত পরিকাঠামো নির্মাণের কাজও হচ্ছে। গোটা শহরে কয়েক হাজার নতুন সিওয়ার চেম্বার নির্মাণের পাশাপাশি দেড়শোটিরও বেশি গণশৌচালয় নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা উন্নত করা হচ্ছে। কয়েক হাজার বাড়িতে নতুন পানীয় জলের সংযোগ ও গোটা শহরে জলের মিটার বসানোর কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।
বন্ধুগণ, আপনাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি রূপে শুধু বারানসী শহর নয়, এর চারপাশের অনেক গ্রামের সড়ক, বিদ্যুতায়ন ও পানীয় জলের পরিষেবা সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব আপনারা আমাকে দিয়েছেন। আমি নিরন্তর কাজ করে চলেছি, আজও তেমনই নাগেপুর গ্রামের জন্য একটি বড় পানীয় জল প্রকল্প উদ্বোধন করা হ’ল। এছাড়া, এই নাগেপুর, জয়াপুর, ককরিয়া, ডোমরি ইত্যাদি সকল গ্রামকে সড়কপথে যুক্ত করা এবং সেচের জল, পানীয় জল ও বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে। এই গ্রামগুলির ছেলেমেয়েদের জন্য খেলার মাঠ, স্বরোজগার কেন্দ্র, চাষবাসের উন্নত ব্যবস্থা এবং যথাযথ স্বাস্থ্য পরিয়াষেবার জন্য অনেক ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বন্ধুগণ, আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতায় কাশী আজ পূর্ব ভারতে একটি উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। বিএইচইউ-তে গড়ে ওঠা আধুনিক ট্রমা সেন্টার এখন হাজার হাজার মানুষের জীবন রক্ষার কাজ করছে। তেমনই বেনারসে নির্মীয়মান নতুন ক্যান্সার হাসপাতাল, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল মানুষকে আধুনিক চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সম্প্রতি আমি বিএইচইউ-তে এইমস্-এর সহযোগিতায় একটি বিশ্বমানের স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলার চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। আজই বিএইচইউ-তে রিজিওন্যাল অপথ্যালমোজি-র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি। ৫৪ বছর আগে শ্রদ্ধেয় লালবাহাদুর শাস্ত্রী এখানে চক্ষু বিভাগটির উদ্বোধন করেছিলেন। সেই বিভাগটিতেই আজ ক্ষেত্রীয় নেত্র সংস্থান রূপে উন্নতিকরণের গৌরব আমি অর্জন করলাম। এটির কাজ পুরোদমে শুরু হলে পূর্ব উত্তর প্রদেশ, বিহার, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খন্ড ও নেপালের কোটি কোটি মানুষ উপকৃত হবেন। কাশীবাসীকে আর চোখের কঠিন রোগের জন্য আর অন্য বড় শহরে আর যেতে হবে না। শুধু তাই নয়, এই সংস্থান এখন উচ্চস্তরে চোখের ডাক্তারদের প্রশিক্ষিত করে তোলা এবং গবেষণায় উৎকর্ষ সুনিশ্চিত করার কাজ করবে।
বন্ধুগণ, অনেক নতুন হাসপাতাল নির্মাণের পাশাপাশি বেনারসের পুরনো হাসপাতালগুলির সংস্কারের কাজও চলছে। পান্ডেপুরে ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগে ইএসআই হাসপাতালটির আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে। তাছাড়া, পুরনো হাসপাতালগুলিতে শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতাল স্থাপনের ক্ষেত্রেও উৎসাহ যোগানো হচ্ছে। এছাড়া, ব্লক ও তহশিল স্তরেও অনেক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে।
বন্ধুগণ, উত্তর প্রদেশে যোগীজির নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর এই সমস্ত কাজে অভূতপূর্ব গতি এসেছে। আমি যোগীজি ও তাঁর গোটা টিমকে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে এটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অভিনন্দন জানাই। দেশের ৫০ কোটি ভাই-বোনকে বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা সুনিশ্চিত করার এই প্রকল্পের ট্রায়াল ইউপি সহ দেশের অনেক অঞ্চলে চালু হয়েছে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর সারা দেশে এই প্রকল্প চালু করা হবে।
ভাই ও বোনেরা, স্বাস্থ্যের পাশাপাশি সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে মজবুত করতে চায়। শ্রদ্ধেয় মদন মোহন মালব্যের স্বপ্ন ছিল যে, একই পরিসরে প্রাচীন বিদ্যার পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষা চালু করা হোক। তাঁর এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে আজ বিএইচইউ-তে আমরা এরকম অনেক কেন্দ্র উদ্বোধন করলাম।
বেদের জ্ঞান থেকে শুরু করে একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান ও ভবিষ্যতের প্রযুক্তির সমাধানকে মাথায় রেখে এখানে একদিক বৈদিক বিজ্ঞান কেন্দ্র আর অন্যদিকে অটল ইনকিউবেশন সেন্টার চালু করা হয়েছে।
আমার নবীন বন্ধুগণ, আমাদের দেশের প্রাচীন সংস্কৃতি ও সভ্যতা নিয়ে যতটা গর্ব করব, আমরা ততটাই ভবিষ্যতের উপযোগী নতুন নতুন প্রযুক্তির প্রতি আকর্ষিত হব। দেশের দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিগত পরিপ্রেক্ষিতে ৮০ কোটিরও বেশি নবীনদের শক্তি যুক্ত হলে নতুন ভারত নির্মাণ অনেক সহজ হবে। একথা মাথায় রেখেই বিএইচইউ-এর এই অটল ইনকিউবেশন সেন্টার আগামীদিনে এখানে দেশের স্টার্টআপের ক্ষেত্রে নতুন প্রাণশক্তি যোগানোর কাজ করবে।
আমাকে বলা হয়েছে যে, ইতিমধ্যেই সারা দেশ থেকে প্রায় ৮০টি স্টার্টআপ কোম্পানি এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করেছে। এর মধ্যে ২০টি ইতিমধ্যেই এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। সেজন্য আমি এ ধরণের সাহসী দূর দৃষ্টিসম্পন্ন যুবক-যুবতীদের অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুগণ, বিগত চার বছরে কৃষি ও গ্রামীণ অর্থ ব্যবস্থাকে গতিশীল করার কাজ ত্বরান্বিত হয়েছে। এখানেও গত জুলাই মাসে রাজাতালাবে নির্মিত প্যারিসেবল কার্গো কেন্দ্র উদ্বোধনের সৌভাগ্য আমার হয়েছে। এই কেন্দ্র বারানসী ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের কৃষকদের ফসল নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচানোর পাশাপাশি তাঁদের আয় বৃদ্ধির জন্য মূল্য সংযোজনে সাহায্য করছে। এখানে আলু, টমেটো ও অন্যান্য ফল ও শাকসব্জি গুদামজাত করায় সুবিধা রয়েছে। রেল স্টেশন সংশ্লিষ্ট হওয়ায় এখান থেকে ফল ও সব্জি দ্রুত অন্যান্য শহরে পাঠানো যায়।
এছাড়া, এখন আন্তর্জাতিক ধান্য গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণের কাজও প্রায় সম্পন্ন হয়ে এসেছে। ভবিষ্যতে কাশী নানা উন্নত ধানের প্রজাতি সংরক্ষণ ও এগুলো নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে এই কেন্দ্র অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। চিরাচরিত চাষের বাইরে কৃষক ভাই-বোনদের অন্যান্য উৎস থেকে আয় সুনিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও এই কেন্দ্র পথপ্রদর্শক হবে। চাষের পাশাপাশি পশুপালন ও মউ পালনেও উৎসাহ যোগানো হবে।
একটু আগেই এখানে কৃষক ভাই-বোনদের মৌমাছি ধরার বাক্স উপহার দেওয়া হয়েছে। এখানে আপনারা শুধু ছবি দেখতে পাচ্ছেন। সরকার তাঁদের অতিরিক্ত আয় সুনিশ্চিত করতে এই ব্যবস্থা নিয়েছে। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, ইতিমধ্যেই দেশ রেকর্ড পরিমাণ ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি রেকর্ড পরিমাণ মধু উৎপাদন করছে।
ভাই ও বোনেরা, বেনারস পূর্ব ভারতের তাঁতী, বস্ত্রশিল্পী ও হস্তশিল্পীদের এমন কেন্দ্র, যাঁরা সকলেই মাটিকে সোনা বানাতে পারেন। বারানসীর চরকা, হস্তচালিত তাঁত এবং হস্তশিল্প কেন্দ্রগুলিকে প্রযুক্তিগত সাহায্য এবং কারিগরদের নতুন নতুন বাজারের সঙ্গে যুক্ত করতে এখানে বেশ কয়েকটি ট্রেড ফেসিলিটেশন সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া, তাঁতীদের স্বার্থে ৯টি কমন ফেসিলিটেশন সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। তাঁতী ভাই-বোনদের উন্নত মানের ‘বাপ’ মেশিন প্রদান করা হচ্ছে, যাতে তাঁদের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
একই রকমভাবে কুমোর ও মৃৎশিল্পীদেরও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ পরিচালিত কাদামাটি মাখা এবং শিল্পকৃতি শুকানোর আধুনিক যন্ত্র প্রদান করা হয়েছে। ফলে তাঁরা কম সময়ে অনেক বেশি উন্নতমানের মাটির বাসন ও অন্যান্য তৈজসপত্র এবং শিল্পকৃতি নির্মাণ করতে পাচ্ছেন।
বন্ধুগণ, এভাবে বারানসীর প্রত্যেক বর্গের আবালবৃদ্ধবণিতার জীবনমানকে উন্নত করতে সরকার প্রতিনিয়ত প্রয়াসরত। কাশী এখন দেশের হাতে গোনা কয়েকটি শহরের অন্যতম যেখানে বাড়িতে বাড়িতে পাইপ লাইনের মাধ্যমে রান্নার গ্যাস পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সেজন্য এলাহাবাদ থেকে বেনারস পর্যন্ত পাইপলাইন পাতা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৮ হাজারেরও বেশি বাড়িতে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস পৌঁছে দেওয়া গেছে। পরবর্তী পর্যায়ে আরও ৪০ হাজার বাড়িতে পৌঁছনোর কাজ চলছে। এছাড়া উজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে বেনারস ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ৬০ হাজারেরও বেশি দরিদ্র মহিলাদের বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস প্রদান করা হয়েছে।
বন্ধুগণ, ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ – এর পথে চলে কাশীবাসী নতুন উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করছেন। এই সমস্ত প্রকল্পের মাধ্যমে এখানকার নবীন প্রজন্মের মানুষদের কর্মসংস্থানের অনেক সুযোগ গড়ে উঠছে। ব্যবসায়ীদের জন্য এই প্রকল্পগুলি ব্যবসার নতুন নতুন সম্ভাবনা গড়ে তুলছে। আসুন আমরা নতুন কাশী, নতুন ভারত নির্মাণের সংকল্প ও সমর্পণভাব নিয়ে কাজ করি।
আরেকবার এই সমস্ত প্রকল্পের জন্য আপনাদের অভিনন্দন জানাই। আশাকরি, ভবিষ্যতেও এভাবে আপনাদের অপার স্নেহ ও আশীর্বাদ আমাকে প্রেরণা যোগাবে। আপনারা আমাকে প্রধানমন্ত্রী পদের দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু একজন সাংসদ হিসাবে আমি আপনাদের কাছে নিজের কাজের হিসাব দিতে বাধ্য। বিগত চার বছরে আপনাদের প্রতিনিধি রূপে আপনাদের জন্য কতটা কাজ করতে পেরেছি, তার একটা ছোট্ট ঝলক দেখালাম। আমি মনে করি যে, আপনারাই আমার মালিক, আমার হাই কমান্ড। সেজন্য আপনাদের প্রদত্ত করের প্রত্যেক পয়সার হিসাব দেওয়ার দায়িত্ব আমার।
আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আপনাদের সামনে এই জবাবদিহির সৌভাগ্য হয়েছে। আমি আরেকবার আপনাদের অপার স্নেহ, আশীর্বাদ ও অপ্রতিম ভালোবাসার জন্য আপনাদের অন্তর থেকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।
আমার সঙ্গে বলুন –
ভারতমাতা কি জয়।
ভারতমাতা কি জয়।
ভারতমাতা কি জয়।