আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের সদস্য সুরেশ প্রভু, হরদীপ সিং পুরী, সি আর চৌধুরী, সচিব ডিআইপিপি রমেশ অভিষেক, এখানে উপস্থিত শিল্পপতিগণ এবং বাণিজ্যিক জগতের সঙ্গে যুক্ত আমার ভাই ও বোনেরা।
গোটা দেশ আজ গণেশ পূজায় ব্যস্ত। আর প্রত্যেক ভালো কাজকে মঙ্গলময় করে তুলতে আমরা ভগবান গণেশ-কে স্মরণ করেই এগিয়ে যাই। সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী ভারতের বড় প্রতীক ‘নতুন ভারত’-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র নির্মাণের সময় শ্রী গণেশের পূজার্চনার উপযুক্ত সময় আজ।
দেশের আর্থিক উন্নতি, সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি, প্রকৃতির প্রতি আমাদের সংবেদনশীলতা এবং এসবের পরিচয় ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অ্যান্ড এক্সপো সেন্টার অর্থাৎ আইআইসিসি-তে আমরা ১২৫ কোটি ভারতবাসীর এই ভাবনার প্রতিফলন দেখতে পাবো, আজ বিশ্বে ভারতের যে মর্যাদা গড়ে উঠছে, ভারত যে স্থানে পৌঁছে যাচ্ছে – তার প্রতিফলন দেখতে পাবো।
প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে এই নির্মাণ এদেশের ৮০ কোটি যুবক-যুবতীর মনোভাব ও প্রাণশক্তির একটি কেন্দ্র হয়ে উঠবে। বর্তমান সরকারের সেই দূরদৃষ্টির অংশ রূপে, যার কেন্দ্রে বিশ্বমানের পরিকাঠামো আর ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’ রয়েছে আর যেভাবে একটি ফিল্মের মাধ্যমে এবং বাইরে থ্রি-ডি মডেলের মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে যে, এটি নিছকই একটি কনভেনশন সেন্টার শুধুই একটি এক্সপো সেন্টার নয়, দেশ ও বিশ্বের বাণিজ্যিক লেনদেনের একটি জীবন্ত ও প্রাণবন্ত কেন্দ্র হয়ে উঠবে।
দিল্লির মধ্যেই এটি এক প্রকার ‘মিনি সিটি’ হিসাবে গড়ে উঠবে। একই ক্যাম্পাসে কনভেনশন হল, এক্সপো হল, মিটিং হল, বেশ কিছু হোটেল, বাজার, অফিস ও বিনোদনের মতো সমস্ত সুবিধা একই জায়গায় গড়ে উঠবে।
এখন দেশের রাজধানীতে আন্তর্জাতিক মানের বড় আয়োজন করতে আমাদের বারবার দ্বিধার শিকার করতে হচ্ছে, বিশ্বের সকল দেশ থেকে প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো কি না; এই সমস্যা থেকে আমাদের মুক্তি দেবে এই কেন্দ্রটি। এখানে যে কনভেনশন হল নির্মিত হবে, তাতে একসঙ্গে ১০ হাজার দর্শক বসতে পারবেন। বসার ক্ষমতা অনুযায়ী একে বিশ্বের ৫টি বৃহত্তম আর এশিয়ার তিনটি বৃহত্তম কনভেনশন হল রূপে গণ্য করা হবে।
সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কথা হ’ল বিগত চার বছরে যে বড় বড় কাজ করার পরম্পরা বিকশিত হয়েছে, সেই প্রক্রিয়াকে এটি আরও বিস্তারিত করে তুলবে। এটি ভারতের বৃহত্তম কনভেনশন এবং এক্সপো সেন্টার রূপে গড়ে উঠবে।
বন্ধুগণ, এই সরকার দেশের উন্নয়নের জন্য অভূতপূর্ব সব প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে। দীর্ঘতম সুড়ঙ্গ নির্মাণ কিংবা দীর্ঘতম গ্যাস পাইপ লাইন পাতার কাজ, সমুদ্রবক্ষে দীর্ঘতম সেতু নির্মাণ, বৃহত্তম মোবাইল ফোন নির্মাণ কারখানা গড়ে তোলা, দেশের প্রত্যেক গ্রামের ব্রডব্যান্ড সংযোগের কাজ, দেশের প্রত্যেক গ্রামের প্রতিটি পরিবারে বিদ্যুৎ পৌঁছনো, সর্ববৃহৎ অপ্রত্যক্ষ কর ব্যবস্থা গড়ে তোলা, স্বচ্ছ ভারত অভিযানের মাধ্যমে বৃহত্তম পরিচ্ছন্নতা আন্দোলনকে গণআন্দোলনে রূপ দেওয়া আর দেশের সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রকল্প ‘আয়ুষ্মান ভারত’ শুরু করার কাজও এই সরকার করেছে।
এই দৃষ্টান্তগুলি শুধুই দেশের ব্যবহারিক ও সামাজিক পরিকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে নতুন দিশা দেখানো প্রকল্প নয়, একবিংশ শতাব্দীর ভারত, নতুন ভারতের গতি, পরিমাণ ও দক্ষতার প্রতীক।
বন্ধুগণ, আজ দেশের প্রত্যেক অঞ্চলে যে নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থাগুলি গড়ে উঠছে, আইআইসিসি সেগুলির তালিকায় গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন রূপে পরিগণিত হবে। প্রত্যেক আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ এই পরিসরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নেতাদের জন্য সমস্ত রকম পরিষেবা থাকবে যতটা তাঁরা বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম অর্থনীতির কাছ থেকে প্রত্যাশা করেন।
যে অর্থ ব্যবস্থা ৮ শতাংশ গতিতে বিকাশশীল, আগামী ৫-৭ বছরে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার এবং আগামী দেড় দশকের মধ্যে ১০ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দেশ হিসাবে গড়ে ওঠার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে।
আমি এটা জেনে অত্যন্ত আনন্দিত যে, এই পরিসর আধুনিক যাতায়াত ব্যবস্থা সমৃদ্ধ হবে। সরাসরি বিমানবন্দর থেকে হাই স্পীড মেট্রো; মিটিং হোক, বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টার হোক, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস হোক, মনোরঞ্জন, কেনাকাটা কিংবা পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাগুলি সবই একটি জায়গায় পাওয়া যাবে।
এই প্রকল্প সরকারের সেই প্রকল্পের অংশ, যার মাধ্যমে ভারতের উন্নয়নের খাতিরে সকল পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করা হচ্ছে।
ভাই ও বোনেরা, আমরা বিশ্বের সর্বত্রই দেখতে পাই, এমনকি ছোট ছোট দেশগুলিও বড় বড় কনফারেন্স আয়োজন করার ক্ষমতা রাখে। এই ধরণের আধুনিক ব্যবস্থা নির্মাণের ফলে অনেক দেশ ‘কনফারেন্স ট্যুরিজম’-এর হাব হয়ে উঠেছে। কিন্তু আমাদের দেশে দীর্ঘকাল এই লক্ষ্যে কোনও ভাবনাচিন্তা করা হয়নি। সমস্ত বড় বড় কনফারেন্স, বাণিজ্য মেলা সবকিছু আয়োজনের জন্য একটাই জায়গা ছিল – প্রগতি ময়দান। আর ক্রমে প্রগতি ময়দানেরও পরিকাঠামোগত অবনমন ঘটছিল। আমরা সেই ভাবনায় পরিবর্তন এনেছি। তারই পরিণামস্বরূপ আজকের এই আয়োজন।
শুধু দেশের রাজধানী দিল্লিতেই নয়, দেশের অন্যান্য রাজ্যের রাজধানীতেও আমরা আইআইসিসি-র মতো বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে তুলে বাণিজ্য সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত একটি শক্তিশালী পরিকাঠামো গড়ে তুলতে চাই। তা হলে আমাদের দেশেও কনফারেন্স ট্যুরিজমের একটি পরিকাঠামো গড়ে উঠবে।
আন্তর্জাতিক স্তরের শিখর সম্মেলন বড় বড় কোম্পানিগুলির বার্ষিক সাধারণ সভা, সরকারের সমস্ত বিভাগের কর্মসূচি – সবকিছুই এই কেন্দ্রগুলিতে সহজেই অনুষ্ঠিত হবে। এই আধুনিক কনভেনশন সেন্টারগুলি কোনও না কোনওভাবে দেশের জনগণের সরল জীবনযাপনকে সুনিশ্চিত করবে। প্যান্ডেল, জল, বিদ্যুৎ, ঝড়, বৃষ্টি, ঠান্ডা, গরম কোনও কিছু নিয়ে ভাবতে হবে না, অধিকাংশ মানুষের ব্যবহারের উপযোগী একটি ব্যবহারযোগ্য অত্যাধুনিক ব্যবস্থা সুলভেই পাওয়া যাবে।
কোনও শহর যত বেশি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক গতিবিধির আয়োজন করতে সক্ষম হয়, সেই শহরের মানুষ তত বেশি তার দ্বারা উপকৃত হন। এই কনভেনশন সেন্টারগুলি শহরের পরিচিতি গড়ে তোলে।
বন্ধুগণ, আইআইসিসি আন্তর্জাতিক স্তরে অতুল্য ভারত-কে তুলে ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠবে। আমি আশা রাখি যে, যখন এটি সম্পূর্ণ হবে, তখন কনফারেন্স ট্যুরিজম, মিটিং ইনসেন্টিভ কনফারেন্সেস অ্যান্ড এক্সিবিশনের গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য রূপে ভারতের পরিচিতি গড়ে তুলে দেশকে নতুন আর্থিক সমৃদ্ধি এনে দেবে।
আইআইসিসি দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ও শিল্পপতিদের আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শন ও পরিচয় করাতে সহজ মাধ্যম হয়ে উঠবে। বিশেষভাবে, দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের শিল্পপতিরা নিজেদের প্রচার-প্রসারে এতটা খরচ করতে পারেন না। তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হয়ে উঠবে। তাঁরা এখানে আন্তর্জাতিক ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে সরাসরি লেনদেন করতে পারবেন। আন্তর্জাতিক স্তরের প্রযুক্তি সম্পর্কে তাঁরা নিজেরাও জানতে পারবেন এবং নিজের উদ্যোগকে সেই হিসাবে গড়ে তুলতে পারবেন।
এই পরিষেবা সরকারের বিভিন্ন প্রচেষ্টার সাফল্যকে ত্বরান্বিত করবে। সেজন্য ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উপযোগী মানবসম্পদকে দক্ষ করে তোলা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, স্টার্ট আপ-এর জন্যও এটি অনেক বড় সুযোগ এনে দেবে। স্টার্ট আপ-এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হ’ল বিনিয়োগকারীদের সামনে নিজেদের ভাবনাকে সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়া। এই কেন্দ্র দেশের উদ্ভাবন ক্ষমতাসম্পন্ন যুবসম্প্রদায়ের জন্য একটি বড় মঞ্চ গড়ে তুলবে। এখানে নতুন নতুন ভাবনা ও উদ্ভাবন নিয়ে আলাপ-আলোচনা থেকে শুরু করে বিনিয়োগ এবং ব্র্যান্ডিং-এর প্রক্রিয়া সহজভাবে সম্পন্ন হতে পারবে। সেজন্য আমি বলেছি যে, এটি ভারতে স্টার্ট আপের ক্ষেত্রে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পরিসর হিসাবে গড়ে উঠতে চলেছে।
আজ আমাদের দেশের যুবক-যুবতীরা ১০ হাজারেরও বেশি স্টার্ট আপ কোম্পানি চালু করেছে। এই প্রেক্ষিতে এই আধুনিক ব্যবস্থা সমাজের প্রত্যেক বর্গ ও প্রত্যেক স্তরের মানুষকে উপকৃত করবে। সবচেয়ে বড় কথা হ’ল এই কেন্দ্র দেশের ৫ লক্ষ যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করবে। এখানে শুধু দেশের আর্থিক ও সাংস্কৃতিক শক্তি প্রদর্শিত হবে না, এই প্রকল্প লক্ষ লক্ষ গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারকে জীবনের নতুন দিশা দেখাবে। এই প্রকল্প দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি, দক্ষতা কেন্দ্রগুলি এবং যে কোনও স্কুল-কলেজে পাঠরত নবীনদের আকাঙ্খা পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখে।
ভাই ও বোনেরা, বিগত চার বছরে আইআইসিসি-তে এই সমস্ত বড় প্রকল্পের পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান হয়েছে। পরিষেবা ক্ষেত্র, কৃষি ক্ষেত্র, নির্মাণ ও উৎপাদন ক্ষেত্রে বড় মাত্রায় কর্মসংস্থান হচ্ছে। কয়েকটি প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রেও বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে।
পাইকারি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কেবলমাত্র ই-কমার্স ক্ষেত্রই ৫০ আরব ডলারেরও বেশি শুল্ক জমা পড়েছে। এই পরিসংখ্যান যত ব্যাপক হচ্ছে, কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বন্ধুগণ, পরিষেবার পাশাপাশি উৎপাদন ক্ষেত্রেও আজ মেক ইন ইন্ডিয়া প্রবল গতিতে এগিয়ে চলেছে। ভারত আজ মোবাইল ফোন নির্মাণের হাব হয়ে উঠেছে। ফলে, গত চার বছরে দেশে চার-সাড়ে চার লক্ষেরও বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে। আজ আমরা দেশের মোবাইল ফোনের চাহিদার ৮০ শতাংশ মেটাতে পারছি, পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানীও করতে পারছি। এরফলে, দেশের ৩ লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয় হয়েছে।
বন্ধুগণ, বিগত চার বছরে দেশে স্বচ্ছ ও মেধা ভিত্তিক ব্যবসার উন্নত পরিবেশ গড়ে তোলা হয়েছে। আজ দেশের টেলিকম সেক্টর, ৫০০ বছর পুরনো অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসেছে। এখন এটি দেশের দ্রুততম উন্নয়নশীল ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। দেশ এখন ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক পরিকাঠামোর দিকে বাড়ছে। স্বচ্ছ দরপত্র এবং ডিজিটাল ইন্ডিয়া অভিযানের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া অভূতপূর্ব গতিপ্রাপ্ত হয়েছে। আজ ভয়েস কল প্রায় বিনামূল্যেই করা যায় এবং ১জিবি ৪জি ডেটা আড়াই-তিনশো টাকা থেকে কমে ১৯-২০ টাকা হয়ে গেছে। অর্থাৎ দেশের সাধারণ মানুষ এখন ইন্টারনেটের শক্তিতে সমৃদ্ধ। শিল্প মহলও ব্যবসার নতুন নতুন সুযোগে আশান্বিত।
টেলিকমের পাশাপাশি, দেশের পর্যটন ক্ষেত্রেও নিরন্তর উন্নয়নের রেকর্ড গড়েছে। দেশে লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে।
বন্ধুগণ, দেশ চালাতে হলে সুষ্ঠ ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন হয়। আর এটা ২-৪ মাস কিংবা ২-৪ বছরে তৈরি হয় না। বছরের পর বছর ধরে প্রতিনিয়ত বিকাশের মাধ্যমেই সুষ্ঠু ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলি গড়ে ওঠে। এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হ’ল ঠিক সময়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং কোনও রকম লালফিতের ফাঁস ছাড়াই সেসব সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন।
এই ছোট ছোট ব্যাঙ্কগুলিকে মিলিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথাই ধরুন না কেন – কয়েক ডজন সরকারি ব্যাঙ্ক থাকার কী প্রয়োজন? বছরেরর পর বছর ধরে এ নিয়ে বিতর্ক শুনে আসছি। প্রায় আড়াই দশক আগে এ নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের চর্চা চলছে। কিন্তু এই লক্ষে এগিয়ে আসার সাহস কেউ জোটাতে পারেননি। কিন্তু বিগত ৫০ মাসে এনডিএ শাসনাধীন কেন্দ্রীয় সরকার দেশের স্বার্থে অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বছরের পর বছর ধরে ঝুলে থাকা অনেক দোদুল্যমানতাকে সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে বাস্তবায়িত করা হচ্ছে। আগে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে কিছু ছোট ব্যাঙ্ককে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন আরও তিনটি ব্যাঙ্ককে মিশিয়ে একটি ব্যাঙ্ক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমার মনে পড়ে, ৩-৪ বছর আগে যখন প্রথমবার সংস্কারের প্রসঙ্গ উঠতো, তখন কেউ কেউ সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে লিখতেন, মোদীর সাহস থাকলে ব্যাঙ্কগুলিকে মিলিয়ে দিয়ে দেখুক! এখন যখন আমরা করে দেখিয়েছি, তখন তাঁদের কলম ঘুমিয়ে পড়েছে – সবাই চুপ।
জিএসটি, বিমুদ্রাকরণ, বেনামী সম্পত্তি আইন, দেউলিয়া কোড, ফেরার অর্থ তছরূপকারী সংশ্লিষ্ট আইন – ৩ লক্ষেরও বেশি সন্দেহাস্পদ কোম্পানিগুলির নথিভুক্তিকরণ বাতিল করে দেওয়া, এই সমস্ত সিদ্ধান্ত সৎ এবং স্বচ্ছ ব্যবসার পরিবেশ গড়ে তুলতে সরকারের দায়বদ্ধতার জলজ্যান্ত উদাহরণ।
বন্ধুগণ, দেশের স্বার্থকে সবার উপরে রেখেছি বলেই একই ব্যবস্থা এবং কর্মচারী নিয়ে সরকার বিগত চার বছরে চতুর্মুখী উন্নয়ন করতে পেরেছে। ব্যবস্থাকে সঠিক দিশায় চালিত করা গেছে।
বন্ধুগণ, আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে, জনগণের স্বার্থে কঠিন কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার এই পরম্পরা জারি থাকবে। এত চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও দেশের অর্থ ব্যবস্থার ভিত প্রতিদিন শক্তিশালী হয়ে চলেছে। আগামীদিনে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে অভ্যন্তরীণ গড় উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পর্যন্ত করার জন্য একটি বিস্তৃত প্রকল্পের কাজ চলছে। ২০১৫ সালের মধ্যে অভ্যন্তরীণ গড় উৎপাদনকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি। যার মধ্যে ১ ট্রিলিয়ন ডলার হবে নির্মাণ শিল্প ও কৃষি।
বর্তমান সরকারের এই প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ ভারত বিগত চার বছরে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’-এ ৪২ ধাপ উন্নতি করেছে। এখন তো দেশের রাজ্যগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কে কার চেয়ে এগিয়ে যাবে। ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’-এর এই প্রতিযোগিতা জনগণের জীবন ধারণের সারল্য বৃদ্ধি করছে।
আমাদের এই সংস্কার যাত্রা এখন জেলা ও তহশীল স্তরে পৌঁছে দিয়েছি। জেলা স্তরেও ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’-এর দিকে লক্ষ্য রেখে সার্বিক উন্নয়নের কাজ করা হচ্ছে। আগামী দিনে জেলাগুলির অভ্যন্তরীণ গড় উৎপাদন ২-৩ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য কেমন উদ্যোগ নিতে হবে, কোন্ কোন্ ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার দিতে হবে – এসব নিয়ে পর্যালোচনা করে সরকার এই সংস্কার যাত্রাকে স্থায়ী রূপ দিতে চাইছে।
বন্ধুগণ, আমাদের দেশ যত বড়, যুবসম্প্রদায়ের সংখ্যা যত বিশাল, ততই আমাদের দেশে বড় বড় স্বপ্ন দেখার অধিকার রয়েছে আর সেসব স্বপ্ন বাস্তবায়নের অধিকারও রয়েছে। এই বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের পাশাপাশি শিল্প জগতেরও রয়েছে, আপনাদের সকলের রয়েছে।
আমি বিশ্বাস করি যে, আমরা সবাই মিলে নতুন ভারতে নবীনদের আকাঙ্খার মূর্ত রূপ দিতে পূর্ণ শক্তি দিয়ে কাজ করব। আগামী এক-দেড় বছরের মধ্যে আইআইসিসি-র প্রথম পর্ব সম্পূর্ণ করার প্রচেষ্টা চলছে। এর নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত সকলকে আমি অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আমাকে এখনই বলা হয়েছে যে, এই পরিসরে এখনই প্রায় আড়াই হাজার মানুষ কাজ করছেন। অর্থাৎ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের আগেই এর পরিকাঠামো ক্ষেত্রে এত মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
আমার বিশ্বাস, যেসব স্বপ্ন নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি, পরিবর্তিত বিশ্বে, বিশ্বায়নের অর্থনীতির যুগে ভারতও সবদিক দিয়ে নিজেকে প্রাসঙ্গিক ও নেতৃত্বদানের জন্য প্রস্তুতি নেবে। নিজেদের সামর্থ্য গড়ে তুলবে। এই স্বপ্নগুলি নিয়ে সকলে একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে আমি আরেকবার সকলকে এই কাজের উত্তম পদ্ধতি এবং দ্রুতগতিতে উত্তম নির্মাণের শুভেচ্ছা জানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।