ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং তাঁর আহ্লাদিনী শক্তি শ্রীরাধার জন্মের সাক্ষীর পবিত্র ব্রজভূমির পবিত্র মাটিকে প্রণাম জানাই। এখানে উপস্থিত সমস্ত ব্রজবাসীদের আমার – রাধে রাধে!
বিপুল সংখ্যায় আগত আমার প্রিয় কৃষক ভাই-বোন, পশুপালক ভাই-বোনেদের সবাইকে আরেকবার – রাধে রাধে!
নতুন জনাদেশ পাওয়ার পর কানহার নাগরীতে প্রথমবার আসার সৌভাগ্য হ’ল। আমাকে ও আমার সঙ্গীদের মথুরা এবং গোটা উত্তর প্রদেশের মানুষ বিপুল আশীর্বাদ দিয়েছেন। আপনাদের সেই সহযোগিতার জন্য, দেশের হিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য, আমি আপনাদের সামনে এই ব্রজভূমি থেকে মাথা নত করে কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাদের আদেশ পালন করে বিগত ১০০ দিনে আমরা অভূতপূর্ব কাজ করে দেখিয়েছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, দেশের উন্নয়নের জন্য আপনাদের এই সমর্থন এবং সহযোগিতা নিরন্তর পেতে থাকবো।
বন্ধুগণ, ব্রজভূমি সর্বদাই গোটা দেশকে, সমগ্র বিশ্ব ও মানবতাকে, জীবনকে প্রেরণা যুগিয়েছে। আজ গোটা বিশ্ব পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য, বৃক্ষ-গুল্মকে বাঁচানোর জন্য রোল মডেলের অণ্বেষণ করছে, কিন্তু ভারতের কাছে সর্বদাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মতো প্রেরণার উৎস রয়েছে। তাঁর কল্পনায় পরিবেশের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে সবই অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
আপনারা একটু ভাবুন, কালিন্দী – যাকে আমরা যমুনা বলে ডাকি, বৈজন্তীমালা, ময়ুরাক্ষী বাঁশের বাঁসুরি, কদম গাছের ছায়া এবং সবুজ ঘাসের মাঠে তাঁর ধেনু – এগুলি ছাড়া কি কৃষ্ণের ছবি সম্পূর্ণ হতে পারে? হতে পারে কি? এই দুধ, দই, মাখন ছাড়া কেউ কি বালগোপালের কল্পনা করতে পারেন? করতে পারেন কি?
বন্ধুগণ, প্রকৃতি, পরিবেশ এবং পশুধন ছাড়া আমাদের আরাধ্য নিজেই যখন অসম্পূর্ণ, ততটাই অসম্পূর্ণ আমাদের দেশ ভারতের কল্পনা। পরিবেশ এবং পশুধন সর্বদাই ভারতের আর্থিক ভাবনার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সেজন্য ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’, ‘জল জীবন মিশন’ কিংবা কৃষি ও পশুপালনে উৎসাহ যোগাতে, প্রকৃতি এবং আর্থিক উন্নয়নের মধ্যে ভারসাম্য গড়ে তুলে আমরা শক্তিশালী ও নতুন ভারত নির্মাণের পথে এগিয়ে চলেছি।
ভাই ও বোনেরা, এই ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে আজ আমরা এখানে অনেক বড় সংকল্প নিয়েছি। আর আমি মনে করি, দেশের কোটি কোটি পশুর জন্য, পরিবেশ ও পর্যটনের জন্য এমন কর্মসূচি শুরু করার জন্য ভারতে ব্রজভূমির থেকে উপযুক্ত কোনও স্থান হতে পারে না।
একটু আগেই ‘স্বচ্ছতা হি সেবা অভিযান’ – এর সূচনা হয়েছে। ‘জাতীয় পশুধন রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি’রও সূচনা হয়েছে। পশুদের স্বাস্থ্য, পশুপালন, পুষ্টি এবং ডেয়ারি শিল্প সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু অন্য প্রকল্পেরও সূত্রপাত হয়েছে। এছাড়া, আজ মথুরার পরিকাঠামো উন্নয়ন ও পর্যটন সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধনও হয়েছে। এই প্রকল্পগুলির জন্য আপনাদের সকলকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আমার জন্য খুশির বিষয় হ’ল – আজ ভারতের সকল কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র এবং সমস্ত অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক ও পশুপালক একেকটি কেন্দ্রে একত্রিত হয়ে প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্রজভূমির সঙ্গে যুক্ত হয়ে এখানকার অনুষ্ঠান দেখতে ও শুনতে পাচ্ছেন। তাঁদেরকেও আমি প্রণাম ও শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুগণ, আজ থেকে কিছুদিন পর আমরা মহাত্মা গান্ধীর ১৫০তম জন্মজয়ন্তী পালন করবো। মহাত্মা গান্ধীর প্রকৃতির প্রতি, পরিচ্ছন্নতার প্রতি যে আগ্রহ ছিল, তা থেকে শেখা এবং নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করা সমস্ত ভারতবাসীর দায়িত্ব। এটি তাঁর প্রতি হবে শ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধাঞ্জলি। মহাত্মা গান্ধী ১৫০ – এই প্রেরণার বছর, ‘স্বচ্ছতা হি সেবা’র পেছনেও এই ভাবনা যুক্ত রয়েছে। আজ থেকে শুরু হওয়া এই অভিযান, বিশেষ করে প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে মুক্তির প্রতি সমর্পিত।
ভাই ও বোনেরা, প্লাস্টিক সমস্যা সময়ের সঙ্গে গুরুতর হচ্ছে। ব্রজবাসীরা ভালোভাবেই জানেন, কিভাবে প্লাস্টিক পশুদের মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠছে। তেমনই নদীনালা, সরোবার, পুকুরের জলজ প্রাণী ও মাছেরা প্লাস্টিক গিলে ফেলে অসময়ে মারা যাচ্ছে। সেজন্য এখন আমাদের একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক থেকে মুক্তি পেতেই হবে। আমাদের চেষ্টা করতে হবে, যাতে এ বছর দোসরা অক্টোবরের মধ্যে আমাদের বাড়ি, অফিস, সমস্ত কর্মক্ষেত্রকে সিঙ্গল ইয়ুজ প্লাস্টিক থেকে মুক্ত করতে পারি।
আমি সারা দেশের গ্রামে গ্রামে কাজ করতে থাকা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, যুব মণ্ডলী, মহিলা মণ্ডলী, ক্লাব, স্কুল-কলেজ এবং সরকারি-বেসরকারি সমস্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রত্যেক ব্যক্তি ও সংগঠনকে এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আপনাদের সন্তান-সন্ততির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আপনাদের এটা করতেই হবে। আপনারা যে প্লাস্টিক বর্জ্য জড়ো করবেন, প্রশাসন তা সংগ্রহ করে এনে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য তৈরি করবে। যে বর্জ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয়, তা সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে দেওয়া হবে, সড়ক প্রস্তুত করতে কাজে লাগবে।
ভাই ও বোনেরা, কিছুক্ষণ আগে আমার এমন মহিলাদের সঙ্গে সাক্ষাতের সৌভাগ্য হয়েছে, যাঁরা বিভিন্ন প্রকার প্লাস্টিক বেছে আলাদা করেন। এই প্লাস্টিকের অধিকাংশই পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয়। এর মাধ্যমে সেই মহিলারা রোজগারও করেন। গ্রামে গ্রামে এই প্রক্রিয়া চালু করতে হবে। ‘বর্জ্য থেকে সম্পদ’ সৃষ্টির ভাবনাই পরিবেশকে রক্ষা করবে, আমাদের আশেপাশের পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখবে।
বন্ধুগণ, ‘স্বচ্ছতা হি সেবা’ অভিযানের পাশাপাশি, আমাদের স্বভাবেও কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। এবার আমি লালকেল্লার প্রকার থেকে বলেছি, আজ আবার বলছি, আমরা যখন দোকানে বা বাজারে সব্জি কিনতে যাই, তখন সঙ্গে অবশ্যই যেন নিজেদের বাড়ি থেকে থলে নিয়ে যাই, কাপড়ের কিংবা পাটের তৈরি থলে। প্যাকিং – এর জন্য দোকানদার যাতে কম প্লাস্টিকের ব্যবহার করেন, তাও আমাদেরই দেখতে হবে। আমার মতে, সরকারি দপ্তরগুলিতে, সরকারি অনুষ্ঠানেও প্লাস্টিকের জলের বোতলের জায়গায় ধাতব বোতল কিংবা মাটির পাত্রের ব্যবহার করা উচিৎ।
বন্ধুগণ, পরিবেশ যখন পরিচ্ছন্ন থাকে, চারপাশে নোংরা আবর্জনা না থাকলে এর সরাসরি ও ইতিবাচক প্রভাব জনস্বাস্থ্যে প্রতিভাত হয়। আমি যোগীজির নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারের প্রশংসা করে বলতে চাই, যেভাবে এই রাজ্যে পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে, তাতে আমি খুশি। এই সরকারের প্রচেষ্টার পরিণাম সম্পর্কে একটু আগেই যোগীজি বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। যোগীজি যখন সাংসদ ছিলেন, তখনও তিনি সংসদের প্রায় প্রত্যেক অধিবেশনে উত্তর প্রদেশের মস্তিষ্কে জ্বরের ফলে অনেক শিশুর আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যুর কথা শুনিয়ে এর বিহিতের জন্য নানা দাবি রাখতেন। দেশে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করতেন। যখন যোগীজি মুখ্যমন্ত্রী হন, তখন কিছু স্বার্থাণ্বেষী গোষ্ঠী এই শিশু মৃত্যু নিয়ে যোগীজির বিরুদ্ধে দোষারোপ করে। কিন্তু আজ যোগীজি যে পরিসংখ্যান দিয়েছেন, তা থেকে স্পষ্ট যে, অপরিচ্ছন্নতাই এই রোগের মূল কারণ ছিল। আর তা দূর করতেই এই সাফল্য এসেছে। আমি এভাবে পরিচ্ছন্নতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে অনেক শিশুর জীবন বাঁচানোর জন্য, মানবতার সপক্ষে পবিত্র কাজের জন্য তাঁকে এবং একাজে যুক্ত সমস্ত আধিকারিক, কর্মচারী, পরিবার, সংস্থা ও সাধারণ নাগরিকদের ধন্যবদা জানাই, কৃতজ্ঞতা জানাই।
বন্ধুগণ, পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত আরেকটি বিষয় হ’ল জলসঙ্কট। এই জলসঙ্কট দূর করার জন্য আমরা ‘জল জীবন মিশন’ শুরু করেছি। এই অভিযানের মাধ্যমে জল সংরক্ষণ এবং প্রত্যেক বাড়িতে জল পৌঁছে দেওয়াকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। ‘জল জীবন মিশন’ – এর মাধ্যমে আমাদের গ্রামে বসবাসকারী কৃষকেরা লাভবান হবে, আমাদের মা ও বোনেরা উপকৃত হবেন। জলের পেছনে খরচ কমলে তাঁদের অনেক আর্থিক সাশ্রয় হবে।
বন্ধুগণ, কৃষকদের আয় বাড়াতে পশুপালন এবং অন্যান্য ব্যবসা শুরু করার প্রচেষ্টা চলছে। পশুপালন, মৎস্যচাষ, মরগূপালন এবং মৌমাছি পালনে বিনিয়োগ করলে অধিক রোজগার এনে দেবে। সেজন্য বিগত পাঁচ বছরে কৃষি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিকল্প নিয়ে আমরা নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবতে শুরু করি। পশুধনের উৎকর্ষ ও সুস্বাস্থ্য নিয়ে ডেয়ারি উৎপাদিত পণ্যগুলির বৈচিত্র্য বাড়ানোর জন্যও বেশ কিছু জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দুগ্ধবতী পশুদের গুণবত্তা সুনিশ্চিত করতে ‘রাষ্ট্রীয় গোকুল মিশন’ চালু করা হয়েছে। আর এ বছর সারা দেশে পশুদের যথোচিত রক্ষণা-বেক্ষণের জন্য ‘কামধেনু আয়োগ’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমাদের নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে কাজের ফলে গত পাঁচ বছরে দুগ্ধ উৎপাদন প্রায় ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি, কৃষক ও পশুপালকদের আয় প্রায় ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমার একটি অভিজ্ঞতার কথা বলি। আফ্রিকাতে একটি ছোট দেশের নাম রোয়ান্ডা। আমি গত বছর সেদেশে গিয়েছিলাম। আর সেই দেশ থেকে আমার সফর নিয়ে যে খবর আসে, তা নিয়ে কিছু মানুষ চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। তাঁরা বলেন যে, মোদীজী রওয়ান্ডা গিয়ে ২৫০টি গরু উপহার নিয়ে এসেছেন। কিন্তু সম্পূর্ণ ঘটনা দেশবাসীর সামনে কেউ খুলে বলেননি। আসলে রওয়ান্ডা সরকার গ্রামের মানুষদের গরু উপহার দেয়, আর সেদেশের নিয়ম অনুসারে সেই গরুর প্রথম বাছুর সরকারের হাতে তুলে দিতে হয়। সরকার সেই বাছুরগুলিকে আবার সেই পরিবারগুলির হাতে তুলে দেয়, যাঁদের বাড়িতে গরু নেই। এভাবে যে শৃঙ্খল চলে, তার মাধ্যমে রওয়ান্ডা সরকার চায় যে, দেশের প্রত্যেক পরিবার পশুপালন ও দুগ্ধ উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত থাকুক। এই পশুপালন ও দুগ্ধ উৎপাদনকে রওয়ান্ডা সরকার সেদেশের অর্থনীতির বুনিয়াদ গড়ে তুলতে চায়। আমিও রওয়ান্ডার গ্রামে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। সেদেশে এই প্রকল্প উদ্বোধনের সৌভাগ্য হয়েছে। আর কিভাবে সেদেশের গ্রামে পশুপালন এবং বিশেষ করে দুগ্ধ উৎপাদনকে রোজগারের উপায় করতে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। আমি নিজের চোখে দেখে এসেছি। কিন্তু আমাদের দেশের দুর্ভাগ্য যে, কিছু মানুষের কানে ‘ওম’ কিংবা ‘গরু’র শব্দ ঢুকলেই তাঁদের চুল সোজা হয়ে যায়, তাঁদের মনে হয় যে, দেশ ষোড়শ-সপ্তদশ শতাব্দীতে পিছিয়ে পড়েছে। তাঁদের এই মহাজ্ঞান দেশের সর্বনাশ করতে কিছু বাকি রাখেনি। সেজন্য আজ আমাদের দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে পশুধন প্রসঙ্গকে আমি অত্যন্ত মূল্যবান বলে মনে করি। আপনারাই ভাবুন, পশুধনের কল্যাণ ছাড়া অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব হবে কি না? গ্রাম ও গ্রামীণ পরিবারগুলি পশুধন ছাড়া চলতে পারবে কি? কিন্তু না জানি কেন, কিছু শব্দ শুনতেই কিছু মানুষের কারেন্ট লাগার মতো কিছু হয়।
বন্ধুগণ, পশুধনকে আমাদের সরকার কতটা অগ্রাধিকার দেয়, তা আপনারা বুঝতে পারবেন আমাদের গত ১০০ দিনে যতগুলি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তার অন্যতম হ’ল পশুদের টিকাকরণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত। এই অভিযানকে সম্প্রসারিত করতে ‘রাষ্ট্রীয় পশুরোগ নিয়ন্ত্রণ’ কর্মসূচি এবং ‘কৃত্রিম গর্ভধারণ’ কর্মসূচি শুরু করা হয়েছে।
বন্ধুগণ, আপনারা ভালোভাবেই জানেন যে, পশুধন অসুস্থ হলে কত বড় ঝটকা লাগে। কৃষকদের যাতে পশুর চিকিৎসায় অনর্থক ব্যয় না করতে হয়, এই ভাবনা থেকেই আজ ১৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে একটি বড় অভিযান চালু করা হয়েছে। এফএমডি বা ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ থেকে মুক্তির জন্য দেশের সমস্ত পশুকে এই রোগ থেকে মুক্তি প্রদানের জন্য একটি ব্যাপক অভিযান শুরু করা হয়েছে।
এই এফএমডি-কে আমাদের উত্তর প্রদেশের কিছু গ্রামাঞ্চলে এই রোগকে বলা হয় – মুঁহপকা। আপনারা শুনলে অবাক হবেন যে, বিশ্বের অনেক দেশ এরকম অভিযান চালিয়ে তাঁদের দেশের সমস্ত পশুকে এই রোগ থেকে মুক্তি দিয়েছেন। অনেক ছোট ছোট গরিব দেশও এক্ষেত্রে বড় সাফল্য পেয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের দেশে কোনও সরকার এই রোগের বিরুদ্ধে তেমন কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।
বিশ্বের গরিব ছোট ছোট দেশগুলি যদি তাদের পশুধনকে এই রোগ থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি দিতে পারে, তা হলে শ্রীকৃষ্ণের ভূমিতে কোনও পশুকে কি এই রোগে আক্রান্ত হয়ে কষ্ট পেতে দেওয়া যায়! আমরা ৫১ কোটি গরু, মোষ, ভেড়া, ছাগল ও শুয়োরকে বছরে দু’বার টিকাকরণের মাধ্যমে তাদের রোগমুক্তি নিশ্চিত করা হবে। যাদের টিকাকরণ হবে, সেগুলির ‘পশু আধার’ বা ইউনিক আইডি প্রদান করে কানে ট্যাগ লাগানো হবে। পশুদের জন্য যথারীতি ‘স্বাস্থ্য কার্ড’ও চালু করা হবে।
ভাই ও বোনেরা, এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য অত্যন্ত স্পষ্ট যে, আমাদের পশুধনের সুস্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করা, তাদের পুষ্টিসাধন এবং পশুদের নতুন ও উন্নত বিকাশ। এভাবে আমাদের পশুপালকদের আয়ও বৃদ্ধি পাবে। আমাদের শিশুরা যথেষ্ট পরিমাণ দুধ খেতে পাবে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ দুগ্ধ উৎপাদক দেশ রূপে ভারতের পরিচয় বজায় থাকবে।
ভাই ও বোনেরা, ভারতের ডেয়ারি শিল্পকে সম্প্রসারিত করতে আমাদের নতুন নতুন উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এই উদ্ভাবন যেন আমাদের গ্রামীণ সমাজ থেকেও আসে, সেজন্য আজ ‘স্টার্ট আপ গ্র্যান্ড চ্যালেঞ্জ’ চালু করা হয়েছে। আমি বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ ও দেশের অন্যত্র স্টার্ট আপ কোম্পানি শুরু করা মেধাবী তরুণ-তরুণীদের বিশেষভাবে আহ্বান জানাই। আইআইটি-তে পাঠরত মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের আহ্বান জানাই। আসুন, আজ যে ‘স্টার্ট আপ গ্র্যান্ড চ্যালেঞ্জ’ চালু করা হচ্ছে এতে অংশগ্রহণ করুন। আমাদের সমাধান খুঁজতে হবে, দেশের সমস্ত পশুধনের জন্য যথেষ্ট সবুজ পশুখাদ্যের ব্যবস্থা কিভাবে করতে পারি, প্লাস্টিক ব্যাগের সস্তা ও সুলভ বিকল্প কী হতে পারে, এমন অনেক কিছুর সমাধানকারী স্টার্ট আপ শুরু করতে হবে, কেন্দ্রীয় সরকার আজ সেই চ্যালেঞ্জকে আপনাদের সামনে তুলে ধরেছে। আসুন, নতুন নতুন ভাবনা নিয়ে আসুন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, দেশের সমস্ত সমস্যার সমাধান দেশের মাটি থেকেই উঠে আসবে।
আমি নবীন বন্ধুদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, তাঁদের ভাবনাকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে এবং প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের ব্যবস্থাও করা হবে। এতে কর্মসংস্থানের অনেক নতুন সুযোগও তৈরি হবে।
বন্ধুগণ, মথুরা সহ এই সম্পূর্ণ ব্রজক্ষেত্র তো আধ্যাত্ম এবং আস্থার স্থান। এখানে ঐতিহ্য পর্যটনের অসীম সম্ভাবনা রয়েছে। আমি আনন্দিত যে, যোগীজির সরকার এই লক্ষ্যে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
আজ মথুরা, নন্দগাঁও, গোবর্ধন ও বরসানায় সৌন্দর্যায়ন এবং যাতায়াত ব্যবস্থা সংক্রান্ত অনেক প্রকল্প উদ্বোধন কিংবা শিলান্যাস করা হয়েছে। এখানে গড়ে ওঠা পরিষেবা শুধু উত্তর প্রদেশ নয়, গোটা দেশের পর্যটনকে অনেক শক্তিশালী করবে। বিগত ৫ বছরে পর্যটনকে যেভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে, ফলস্বরূপ, ভারতের পর্যটন ক্ষেত্রের তুলনামূলক বিশ্ব র্যাঙ্কিং – এ অনেক উন্নতি হয়েছে। ২০১৩ সালে ভারতের গ্লোবাল র্যাঙ্কিং ছিল ৬৫ নম্বরে, আর এ বছর ভারত ৩৪ নম্বরে পৌঁছে গেছে। ভারতের এই র্যাঙ্কিং – এ উন্নতিই সাক্ষী যে এই ক্ষেত্রেও কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রশস্ত হচ্ছে।
বন্ধুগণ, এই ১১ই সেপ্টেম্বর আজকের দিনটির একটি বিশেষত্ব হ’ল – এক শতাব্দীকাল আগে আজকের দিনেই স্বামী বিবেকানন্দ শিকাগোতে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই ভাষণের মাধ্যমে গোটা বিশ্ব ভারতের সংস্কৃতি, আমাদের পরম্পরা সম্পর্কে আরও গভীরভাবে বুঝেছে। স্বামী বিবেকানন্দ, তাঁর বক্তব্যে বিশ্বশান্তির জন্য ভারতের দর্শনকে তুলে ধরেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য দেখুন, পরবর্তীকালে সেই ১১ই সেপ্টেম্বরই ৯/১১-তে আমেরিকায় এত বড় সন্ত্রাসবাদী হামলা হয় যে, বিশ্ববাসী সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন।
ভাই ও বোনেরা, আজ সন্ত্রাসবাদ এক নতুন চিন্তাধারায় পরিণত হয়েছে, যা কোনও সীমান্তে সীমাবদ্ধ নয়, এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা, একটি আন্তর্জাতিক ভাবধারায় পরিণত হয়েছে, যার শক্তিশালী শিকড় আমাদের প্রতিবেশী দেশে প্রস্ফূটিত হচ্ছে। এই দর্শনকে যারা লালন-পালন করছে, সন্ত্রাসবাদীদের যারা প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আজ সমগ্র বিশ্বকে সংকল্প নিতে হবে, কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। ভারত নিজের মতো এই সমস্যা মোকাবিলায় সম্পূর্ণ সক্ষম। এটা আমরা দেখিয়ে দিয়েছি এবং ভবিষ্যতেও দেখাবো। সম্প্রতি সন্ত্রাস বিরোধী আইনকে কঠোর করার সিদ্ধান্তও এই লক্ষ্যে এক বড় পদক্ষেপ। সন্ত্রাসবাদ কোনওভাবেই নিজেদের কুকর্ম লুকাতে পারবে না।
ভাই ও বোনেরা, সন্ত্রাসের সমস্যা থেকে শুরু করে দূষণের সমস্যা কিংবা কঠিন রোগের সমস্যাকে আমাদের মিলেমিশে পরাজিত করতে হবে। আসুন, আমরা সংকল্পবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাই এবং আজ যে উদ্দেশ্যে আমরা একত্রিত হয়েছি, তা সফল করার চেষ্টা করি। আরেকবার আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অভিনন্দন জানাই। আপনাদের সবাইকে অন্তর থেকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার সঙ্গে পূর্ণশক্তি দিয়ে জোরে বলুন। দু’হাত উপরে তুলে বলুন …..
ভারতমাতার জয়
ভারতমাতার জয়
ভারতমাতার জয়
অনেক অনেক ধন্যবাদ।