জয়ললিতাজির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর উদ্দেশে আমি শ্রদ্ধা নিবেদন করি।আপনাদের সকলকে জানাই আমার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। জয়ললিতাজি যেখানেই থাকুন না কেন,আপনাদের সুখী হতে দেখে তিনিও বিশেষ সুখী হবেন বলেই আমি মনে করি।
তাঁর একটি স্বপ্নের প্রকল্প ‘আম্মা টু হুইলার’ কর্মসূচির আজ সূচনা করতেপেরে আমি আনন্দিত। আম্মার ৭০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তামিলনাডুতে ৭০ লক্ষবৃক্ষরোপণ করা হবে বলে আমি জানতে পেরেছি। এই দুটি কর্মসূচি নারী ক্ষমতায়ন এবংপ্রকৃতি সুরক্ষার কাজকে অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
বন্ধুগণ,
পরিবারের মহিলা সদস্যদের আমরা যখন ক্ষমতায়নের সুযোগ দান করি তখন আমরা সমগ্রপরিবারেরই ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করি। যখন কোনও মহিলাকে শিক্ষার দিক থেকে আমরা সাহায্যকরি, তখন আমরা সমগ্র পরিবারটির শিক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করি। যখন আমরা কোনও মহিলারসুস্বাস্থ্যের সুযোগ-সুবিধা প্রসারে উদ্যোগী হই, তখন সমগ্র পরিবার যাতে সুস্থ সবলথাকে সেই বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করি। একজন নারীর ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখার মাধ্যমেএকটি গৃহস্থ পরিবারের ভবিষ্যতকে আমরা নিশ্চয়তা দান করি। ঠিক এই লক্ষ্যেই আমরা কাজকরে চলেছি।
বন্ধুগণ,
সাধারণ নাগরিকদের স্বার্থে জীবনযাত্রার মানকে সহজতর করে তোলার ওপর বিশেষদৃষ্টি দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছে আমাদের সবকটি প্রকল্প ওকর্মসূচি। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য সুলভ ঋণ সহায়তা,স্বাস্থ্য পরিষেবা কিংবা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা – যাই হোক না কেন, এটাই হ’ল আমাদেরমূল মন্ত্র। এই মন্ত্রকে সম্বল করে কেন্দ্রের এনডিএ সরকার কাজ করে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার আওতায় ১১ কোটিরও বেশি ঋণ সহায়তা মঞ্জুর করাহয়েছে। কোনও রকম ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি ছাড়াই জনসাধারণের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ৪লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এই প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হ’ল এই যে সুফলগ্রহীতাদের ৭০ শতাংশই কিন্তু মহিলা।
ভারতের নারী সমাজ যে বহু যুগের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে স্বনির্ভরকর্মসংস্থানের পথে এগিয়ে চলেছেন, কর্মসূচিটির সাফল্য একথাই প্রমাণ করে। নারীক্ষমতায়নের লক্ষ্যে আমরা আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। সাম্প্রতিক কেন্দ্রীয়বাজেটে আমরা ঘোষণা করেছি যে নতুন মহিলা কর্মীদের ক্ষেত্রে ইপিএফ বাবদ প্রদেয় অর্থতিন বছরের জন্য ১২ শতাংশের পরিবর্তে ৮ শতাংশ ধার্য করা হবে। কিন্তু নিয়োগকর্তারপ্রদেয় অর্থ ১২ শতাংশ হারেই অপরিবর্তিত থাকবে।
স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া কর্মসূচির আওতায় মহিলা শিল্পোদ্যোগীদের দেওয়া হবে ১০লক্ষ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ সহায়তা। রাজ্যগুলির প্রস্তাব ও পরামর্শঅনুযায়ী কল-কারাখানা সম্পর্কিত আইনটিতেও আমরা একটি পরিবর্তন এনেছি। যার ফলে, নাইটশিফ্ট-এ অর্থাৎ রাতেও মহিলাদের কাজ করার সুযোগ দেওয়া হবে। মাতৃত্বকালীন ছুটিও ১২সপ্তাহ থেকে আমরা বাড়িয়ে দিয়েছি ২৬ সপ্তাহ পর্যন্ত।
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় সুফল গ্রহীতাদের জন্য বাসস্থান নির্দিষ্টমহিলাদের নামেই নথিভুক্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
জন ধন যোজনাটি মহিলাদের বিশেষভাবে সাহায্য করেছে। ৩১ কোটি জন ধনঅ্যাকাউন্টের মধ্যে ১৬ কোটি অ্যাকাউন্ট গ্রহীতাই হলেন মহিলা। ২০১৪ সালে মহিলাদেরঅ্যাকাউন্ট যেখানে ছিল ২৮ শতাংশের মতো এখন তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ শতাংশ।স্বচ্ছ ভারত কর্মসূচি মহিলাদের শ্রদ্ধা ও সম্মান পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করেছে।দেশে গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রসার ৪০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮শতাংশে। সবকটি সরকারি স্কুলে ছাত্রীদের জন্য শৌচাগার নির্মাণের বিষয়টিকে আমরা একটিবিশেষ অভিযান হিসাবে গ্রহণ করেছি।
বন্ধুগণ,
জনসাধারণের ক্ষমতায়নের পাশাপাশি প্রকৃতির সুরক্ষা সম্পর্কিত বেশ কিছুকর্মসূচিও কেন্দ্রীয় সরকার গ্রহণ করেছে। উজালা কর্মসূচির আওতায় বন্টন করা হয়েছে ২৯কোটি এলইডি বাল্ব। এর ফলে, বিদ্যুৎ বিলে সাশ্রয় ঘটেছে ১৫ হাজার কোটি টাকার। কার্বনডাই অক্সাইড নির্গমনের মাত্রাও তাৎপর্যপূর্ণভাবেই হ্রাস পেয়েছে।
উজ্জ্বলা যোজনার আওতায় বিনামূল্যে ৩ কোটি ৪০ লক্ষ রান্নার গ্যাস সংযোগদেওয়া হয়েছে এ পর্যন্ত। ধোঁয়া মুক্ত পরিবেশে রান্নাবান্নার সুযোগ লাভের মাধ্যমেউপকৃত হয়েছেন মহিলারা। কেরোসিনের ব্যবহার কম হওয়ায় পরিবেশ সুরক্ষার কাজেও সুবিধাহয়েছে। শুধুমাত্র তামিলনাডুতেই এই কর্মসূচির মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন ৯ লক্ষ ৫০ হাজারমহিলা।
দেশের পল্লী অঞ্চলে গ্যাসের যোগান বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রসারেরকথা মনে রেখে কেন্দ্রীয় সরকার গোবর-ধন প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছে। এই কর্মসূচিরলক্ষ্য হ’ল গোবর এবং কৃষি বর্জ্যকে কম্পোস্ট, বায়োগ্যাস এবং বায়ো সিএনজি-তেরূপান্তরিত করা। এরফলে, একদিকে যেমন আয় ও উপার্জন বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে তেমনইহ্রাস পাবে গ্যাসের জন্য ব্যয়ের মাত্রাও।
বন্ধুগণ,
কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে বর্তমানে তামিলনাডুতে রূপায়িত হচ্ছে ২৪ হাজারকোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগের প্রকল্প। এনডিএ সরকার ক্ষমতায় আসার পরই এইপ্রকল্পগুলির কাজ শুরু হয়েছে। এগুলির মধ্যে রয়েছে – সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প, অশোধিততেলের পাইপ লাইন, জাতীয় মহাসড়ক এবং বন্দর সম্পর্কিত বিভিন্ন কাজকর্ম। চেন্নাইমেট্রো রেলের জন্য মঞ্জুর করা হয়েছে ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকারও বেশি।
কংগ্রেস সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকাকালীন ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের আওতায়তামিলানাডুকে দেওয়া হয়েছিল ৮১ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এনডিএ সরকার ক্ষমতাসীনহওয়ার পর চতুর্দশ অর্থ কমিশনের আওতায় তামিলনাডুকে দেওয়া হয়েছে ১ লক্ষ ৮০ হাজারকোটি টাকা। অর্থাৎ, ১২০ শতাংশ বেশি অর্থ দেওয়া হয়েছে এই রাজ্যটিকে।
আগামী ২০২২ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি দরিদ্র মানুষের যাতে একটি করে নিজস্ববাসস্থান থাকে, সেই লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। গত তিন বছরে নির্মিতহয়েছে প্রায় ১ কোটির মতো বাসস্থান।
গ্রামীণ আবাসন কর্মসূচির জন্য ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে তামিলনাডুকে দেওয়া হয় ৭০০কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ২০০ কোটি টাকার মতো অর্থ এই লক্ষ্যে দেওয়া হয়েছে এইরাজ্যটিকে। অন্যদিকে, শহরাঞ্চলের জন্য আবাস নির্মাণ প্রকল্পে তামিলনাডুকে দেওয়াহয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
বন্ধুগণ,
প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা রূপায়ণের ফলেও উপকৃত হয়েছেন তামিলনাডুর কৃষকসাধারণ। এই কর্মসূচির আওতায় এই রাজ্যের কৃষকদের ২,৬০০ কোটি টাকারও বেশি দাবিদাওয়ামিটিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তামিলনাডুর মৎস্যচাষের আধুনিকীকরণেও সচেষ্ট রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। নীলবিপ্লব কর্মসূচির আওতায় মৎস্যজীবীদের লং লাইনার ট্রলারের জন্য আমরা আর্থিক সহায়তা দানেরব্যবস্থা করেছি। গত বছর ৭৫০-এরও বেশি সংখ্যক সাধারণ নৌকাকে লং লাইনার ট্রলারেরূপান্তরিত করতে রাজ্য সরকারকে আমরা দিয়েছি ১০০ কোটি টাকা। এর ফলে, মৎস্যজীবীদেরজীবনযাত্রা আরও সহজ হয়ে ওঠা ছাড়াও এই ধরণের ট্রলারগুলির সাহায্যে তাঁরা আরও বেশিঅর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
ভারতের রয়েছে সমুদ্র সম্পদের এক বিশাল ভাণ্ডার। সুদীর্ঘ উপকূল রেখারকল্যাণে রয়েছে অফুরন্ত সম্ভাবনাও। সাগরমালা কর্মসূচি রূপায়িত হচ্ছে কেন্দ্রীয়সরকারের পক্ষ থেকে। এর সুবাদে অন্তর্দেশীয় এবং বৈদেশিক বাণিজ্য খাতে ব্যয়েরমাত্রাও অনেকাংশে হ্রাস পাবে। ভারতের উপকূল রেখা বরাবর বসবাসকারী সাধারণ মানুষ এরফলে বিশেষভাবে উপকৃত হবেন।
সাম্প্রতিককালে ঘোষিত কেন্দ্রীয় বাজেটে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ কর্মসূচির কথা আমরাউল্লেখ করেছি। এর আওতায় প্রতিটি দরিদ্র পরিবার চিহ্নিত হাসপাতালগুলিতে প্রতি বছর ৫লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার সুযোগ লাভ করবেন সম্পূর্ণ বিনা খরচে। এর ফলে, উপকৃতহবেন দেশের ৪৫ থেকে ৫০ কোটি সাধারণ মানুষ।
‘প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বিমা যোজনা’ এবং ‘জীবন জ্যোতি বিমা যোজনা’র আওতায়বিমার সুযোগ সম্প্রসারিত হয়েছে ১৮ কোটিরও বেশি জনসাধারণের কাছে। ৮০০টিরও বেশিজনওষধি কেন্দ্রের মাধ্যমে অনেক স্বল্প খরচে ওষুধের যোগান দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিআমরা।
জনসাধারণের জীবনযাত্রায় এক ইতিবাচক পরিবর্তন সুনিশ্চিত করে তুলতে আমরাঅঙ্গীকারবদ্ধ।
আমি আরও একবার শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাই জয়ললিতাজির উদ্দেশে। আপনাদের সকলকেজানাই আমার বিশেষ শুভেচ্ছা।
ধন্যবাদ।
আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ।