মাননীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রী রাজনাথ সিংজী, প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী শ্রী শ্রীপাদ নায়েকজী, তিন সেনাবাহিনীর প্রধান, অন্যান্য প্রবীণ আধিকারিকগণ, কারগিলের বীর সৈন্য বা এখানে উপস্থিত অন্যান্য শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিবর্গ, আর আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা কারগিল বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ প্রত্যেক দেশবাসী শৌর্য এবং রাষ্ট্রের জন্য সমর্পণের এক প্রেরণাদায়ক গাথাকে স্মরণ করছে। এই উপলক্ষে আমি সমস্ত শূরবীরদের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই, যাঁরা কারগিলের পর্বতশৃঙ্গগুলি থেকে তেরঙ্গা পতাকা উৎখাতের ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিয়েছে। যাঁরা নিজেদের রক্ত দিয়ে সর্বস্ব উৎসর্গ করেছেন, সেই শহীদদের জন্মদাত্রী বীরমাতাদের প্রণাম জানাই। কারগিল সহ জম্মু ও কাশ্মীরের সমস্ত নাগরিকদের অভিনন্দন, যাঁরা দেশের প্রতি নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন। বন্ধুগণ, ২০ বছর আগে কারগিলের পাহাড়গুলিতে যে বীরগাথা লেখা হয়েছে, তা বর্তমান প্রজন্মকে প্রেরণা যোগাতে থাকবে, আর সেই প্রেরণা থেকে বিগত ২-৩ সপ্তাহ ধরে দেশের নানা প্রান্তে ‘বিজয় দিবস’ নিয়ে নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। দেশের সমস্ত মিলিটারি স্টেশন এবং সীমান্তবর্তী ও তটবর্তী অঞ্চলগুলিতে অনেক কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
একটু আগে এখানেও আমাদের দেশের সেই সুপুত্রদের শৌর্যের স্মৃতিচারণ করা হয়েছে। আর আজকের এই উপস্থাপনে অনুশাসন, কঠোর পরিশ্রম, বীরত্ব, ত্যাগ এবং বলিদানের পরম্পরা প্রদর্শিত হয়েছে, সংকল্প উচ্চারিত হয়েছে আর সংবেদনাপূর্ণ মুহূর্তেও ছিল। কখনও বীরত্ব আর পরাক্রমের দৃশ্য দেখে করতালির রোল উঠেছে, আবার কখনও বীরমাতাদের দেখে সকলের চোখে জল ভরে এসেছে। এই সন্ধ্যা যেমন উৎসাহ সঞ্চার করে তেমনই বিজয়ের আস্থা প্রকাশ করে ত্যাগ ও তপস্যার প্রতি মাথা নত করতে বাধ্য করে।
ভাই ও বোনেরা, কার্গিল যুদ্ধ বিজয় ভারতের বীরাঙ্গনাদের অদম্য সাহসেরও জয় ছিল, কার্গিলের জয় ভারতের মর্যাদা ও অনুশাসনের জয়, কার্গিলের জয় প্রত্যেক দেশবাসীর আশা ও কর্তব্য পরায়ণতার জয়।
বন্ধুগণ, যুদ্ধ সরকার লড়ে না, যুদ্ধ গোটা দেশ লড়ে। সরকার আসে-যায়, কিন্তু যাঁরা দেশের জন্য জীবন-মৃত্যকে পায়ের ভৃত্য করে নিজেদের উৎসর্গ করেন, তাঁরাই অজর-অমর হয়ে থাকেন। সৈনিকরা আজকের প্রজন্মের পাশাপাশি, আগামী প্রজন্মের জন্যও নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেন। আমাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখার জন্য তাঁরা আত্মবলিদান করেন। সৈনিক জীবন আর মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্য বোঝেন না, তাঁদের জন্য কর্তব্যই সবকিছু। দেশের পরাক্রমের সঙ্গে যুক্ত এই জওয়ানদের জীবন কোনও সরকারের কার্যকালের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। শাসক ও প্রশাসক যে কেউ হতে পারেন – কিন্তু পরাক্রমী এবং তাঁদের বীরত্বের ওপর সমস্ত ভারতবাসীর অধিকার রয়েছে।
ভাই ও বোনেরা, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে প্রথমবার শপথ গ্রহণের কয়েক মাস পরই আমার কার্গিল যাবার সৌভাগ্য হয়েছিল। এমনিতে আমি ২০ বছর আগেও কার্গিল গিয়েছিলাম, যখন সেখানে ভয়ানক যুদ্ধ চলছিল। শত্রুরা পাহাড়ের উচ্চতায় বসে আমাদের সুরক্ষা নিয়ে খেলছিল। মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে, তবুও আমাদের সৈনিকরা তেরঙ্গা ঝান্ডা নিয়ে সবার আগে উপত্যকাগুলি জয় করতে চাইছিল। একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে আমি আমাদের যুদ্ধরত সৈনিকদের শৌর্যকে সেই মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রণাম জানিয়েছিলাম। কার্গিল বিজয় স্থানে গিয়ে আমার তীর্থস্থান দর্শনের অনুভূতি হয়েছিল।
বন্ধুগণ, যুদ্ধভূমিতে কেমন পরিবেশ ছিল তা আমরা অনুভব করতে পারি, সারা দেশ তখন আমাদের সৈনিকদের পাশে দাঁড়িয়েছিল, দেশের প্রত্যেক যুবক-যুবতী রক্তদানের জন্য প্রস্তুত ছিলেন, শিশুরা নিজেদের পয়সা জমানোর ঘট ভেঙে কার্গিল যুদ্ধের সৈনিকদের উদ্দেশে দান করেন। সেই সময়ে, শ্রদ্ধেয় অটল বিহারী বাজপেয়ী দেশবাসীকে একটি আশ্বাস দিয়েছিলেন, “যাঁরা দেশের জন্য জীবন দেন, তাঁদের ও তাঁদের পরিবারকে যদি আমরা রক্ষণা-বেক্ষণ না করতে পারি, তা হলে মাতৃভূমির প্রতি নিজেদের কর্তব্য পালনের উপযুক্ত বলে ভাবারও অধিকার থাকবে না”।
আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, অটলজীর সেই আশ্বাস রক্ষা করতে এবং আপনাদের সকলের আশীর্বাদে বিগত পাঁচ বছর ধরে সৈনিক ও সৈনিক পরিবারের কল্যাণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে পেরেছি। স্বাধীনতার পর থেকে দশকের পর দশক ধরে সৈনিকদের যে দাবি ছিল, সেই ‘এক পদ, এক পেনশন’ চালু করার কাজও আমাদের সরকার করেছে।
এবার সরকারে আসার পর আমরা প্রথম যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেটি হ’ল শহীদ সন্তানদের ছাত্র বৃত্তি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত। এছাড়া, ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালের মাধ্যমে আমাদের সৈনিকদের বীরগাথা দেশবাসীকে প্রেরণা যোগাচ্ছে। কয়েক দশক ধরে এই যুদ্ধ স্মৃতিস্মারকের জন্য প্রতীক্ষা ছিল। সেই প্রতীক্ষা সমাপণের সৌভাগ্য আপনারা আমাদের দিয়েছেন।
ভাই ও বোনেরা, পাকিস্তান প্রথম থেকেই কাশ্মীর নিয়ে ছলচাতুরি করে আসছে। ১৯৪৮, ১৯৬৫, ১৯৭১ – এও তারা এই ছলের আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু ১৯৯৯ সালে প্রথমবার আগের মতো ছল করতে গিয়ে তারা উপযুক্ত শাস্তি পেয়েছে। সেই সময়ে অটলজী বলেছিলেন, “আমাদের প্রতিবেশী ভেবেছিল যে, কার্গিল নিয়ে ভারত প্রতিরোধ করবে, বিরোধীতা করবে এবং উত্তেজনায় সমগ্র বিশ্ব ভয় পাবে। হস্তক্ষেপ করার জন্য আর মধ্যস্থতা করার জন্য কেউ কেউ ঝাঁপিয়ে পড়বে। আর তারা একটি নতুন রেখা আঁকতে সক্ষম হবে। কিন্তু আমরা যে এরকম কড়া জবাব দেব, তারা সেই আশা করেনি”।
বন্ধুগণ, কান্নাকাটি করার বদলে কড়া জবাব দেওয়ার এই রণকৌশলের পরিবর্তন শত্রুকে পরাস্ত করেছে। এর আগে অটলজীর নেতৃত্বাধীন সরকার প্রতিবেশীর সঙ্গে যে শান্তি স্থাপনের চেষ্টা করেছিলেন, তাতে ভারতের প্রতি বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গী বদলাতে শুরু করেছিল। এমনকি, যারা আগে আমাদের প্রতিবেশীদের কুকীর্তি দেখেও চোখ বন্ধ করে থাকতো, সেই দেশগুলিও আমাদের দৃষ্টিকোণ বুঝতে শুরু করেছিল।
ভাই ও বোনেরা, ভারতের ইতিহাস সাক্ষী যে, আমরা কখনও কোনও দেশকে প্রথম আক্রমণ করিনি। মানবতার স্বার্থে শান্তিপূর্ণ ব্যবহার আমাদের সংস্কারের অঙ্গ। আমাদের সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তিও একই রকম। তাঁরা যেমন নিজেদের দেশের নিরাপত্তা রক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়, তেমনই গোটা বিশ্বে মানবতা ও শান্তি রক্ষক হিসাবেও নিজেদের কর্তব্য পালন করে।
আমি ইজরায়েল সফরে যাওয়ার পর সেদেশের প্রধানমন্ত্রী আমাকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাইফা মুক্ত করার ছবি দেখিয়েছিলেন। ফ্রান্স সফরে গিয়ে দেখেছি যে, বিশ্ব যুদ্ধের স্মৃতিসৌধগুলিতে ভারতীয় সৈনিকদের প্রাণ উৎসর্গ করার কাহিনী লেখা রয়েছে।
বিশ্বযুদ্ধে মানবতা রক্ষার খাতিরে ১ লক্ষেরও বেশি ভারতীয় সৈনিক শহীদ হয়েছিলেন। বিশ্ববাসী এটাও ভুলতে পারবে না যে, রাষ্ট্রসংঘের শান্তিরক্ষা অভিযানগুলিতে এ যাবৎ সর্বোচ্চ সংখ্যক ভারতীয় সৈনিক যোগদান করেছেন এবং সর্বোচ্চ সংখ্যক ভারতীয় সৈনিক শহীদ হয়েছেন। প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষেত্রেও বছরের পর বছর ধরে আমাদের সেনাবাহিনীর সমর্পণ ও সেবা ভাবনা, সংবেদনশীল ভূমিকা ও অধিকাংশ পীড়িতদের কাছে পৌঁছনোর ক্ষমতা ভারতীয় জনগণের হৃদয় ছুঁয়েছে।
বন্ধুগণ, আমাদের শূরবীর, পরাক্রমী সেনা পরম্পরাগত যুদ্ধে সিদ্ধহস্ত। কিন্তু আজ গোটা বিশ্বে যুদ্ধের প্রকৃতি বদলে গিয়েছে। আজ মানবজাতি ছায়াযুদ্ধের শিকার। এর অন্যতম অনুঘটক সন্ত্রাসবাদ, সমগ্র মানবতার সামনে একটি বড় প্রতিস্পর্ধা। বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক যুদ্ধে পরাজিত কিছু শক্তি এই ছায়াযুদ্ধের মাধ্যমে নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের চেষ্টা করছে, সন্ত্রাসবাদকে ইন্ধন যোগাচ্ছে।
আজ সময়ের দাবি হ’ল মানবতায় বিশ্বাস রক্ষাকারী সমস্ত শক্তি সশস্ত্র বাহিনীগুলিকে সমর্থন করুক। তবেই সন্ত্রাসবাদের যথাযথ মোকাবিলা সম্ভব।
ভাই ও বোনেরা, আজ যুদ্ধ মহাকাশে পৌঁছেছে, সাইবার বিশ্বকে যুদ্ধ ব্যবহার করা হচ্ছে। সেজন্য আমাদের সেনাকে আধুনিক করে তোলাকে আমরা অগ্রাধিকার দিয়েছি। এই আধুনিকতাই আমাদের সেনাবাহিনীর পরিচয় হয়ে উঠুক। জল-স্থল-আকাশে আমাদের সেনাবাহিনী যাতে নিজ নিজ ক্ষেত্রে উচ্চতর শিখর স্পর্শ করার সামর্থ অর্জন করে, আমরা সেভাবেই তাঁদের আধুনিক করে তুলতে চাইছি।
দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কারও চাপ সহ্য করা হবে না। কোনও প্রভাব কিংবা অভবাবকে গ্রাহ্য করা হবে না। সে ‘অরিহন্ত’ – এর মাধ্যমে পরমাণু ত্রিকোণ রচনা হোক কিংবা ‘এ-স্যাট’ পরীক্ষণ, ভবিষ্যতের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার প্রয়োজনে নিজেদের আর্থিক সীমাবদ্ধতাকে পরোয়া না করে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি এবং নিতে থাকবো।
গভীর সমুদ্র থেকে শুরু করে অসীম মহাকাশ পর্যন্ত যেখানে যেখানে ভারতের কল্যাণের দিকটি নিরাপদ রাখার প্রয়োজন হবে; ভারত নিজের সামর্থ্য যথাসম্ভব ব্যবহার করবে। এই ভাবনা নিয়ে আমরা দ্রুতগতিতে দেশের সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণ বজায় রেখেছি।
ভারত আজ দ্রুতগতিতে আধুনিক রাইফেল থেকে শুরু করে ট্যাঙ্ক, কামান এবং লড়াকু বিমান নির্মাণের কাজে এগিয়ে চলেছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র জন্য আমরা বেসরকারি ক্ষেত্রে অধিক অংশীদারিত্ব এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করেছি। প্রয়োজন অনুসারে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রেরও আমদাবনি করা হচ্ছে।
আগামী দিনে আমাদের সেনা বিশ্বের আধুনিকতম সাজ-সরঞ্জামে সজ্জিত হয়ে উঠবে। কিন্তু বন্ধুগণ, সেনাকে অধিক কার্যকরি করে তুলতে আধুকতার পাশাপাশি আরেকটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হ’ল – সমন্বয়। সেনার পোশাক যে রঙেরই হোক না কেন, সেই পোশাক যাঁরা পরিধান করেন, তাঁদের উদ্দেশ্য একই থাকে, মানসিকতাও একই রকম কাজ করে। আমাদের জাতীয় পতাকায় যেমন তিনটি ভিন্ন ভিন্ন রঙ রয়েছে। আর এই তিনটি রঙ একত্রিত হয়েই যে জাতীয় পতাকা গড়ে ওঠে, তা সৈনিকদের আত্মবলিদানে প্রেরণা যোগায়। তেমনই, আমাদের সেনার তিনটি অঙ্গকে আধুনিক সামর্থ্য প্রদান করতে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হওয়াই হ’ল সময়ের দাবি।
বন্ধুগণ, সেনাবাহিনীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি, আমরা সীমা সংলগ্ন গ্রামগুলিকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার উন্নয়নের অংশীদার করে তুলেছি। প্রতিবেশী রাষ্ট্র সন্নিহিত আমাদের সীমান্ত কিংবা সমুদ্র তটবর্তী গ্রামের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজও আমরা করেছি। আমরা খুব ভালোভাবেই জানি যে, সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিকে কী ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কঠিন পরিস্থিতির সময় সীমান্তবর্তী গ্রামের মানুষেরা গ্রাম ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। এহেন পরস্থিতি পরিবর্তনের জন্য বিগত পাঁচ বছরে সীমান্ত এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পকে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছি। দেশের ১৭টি রাজ্য এই প্রকল্পের মাধ্যমে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকারও বেশি সাহায্য পেয়েছেন।
জম্মু ও কাশ্মীরে আন্তর্জাতিক সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামগুলির নাগরিকদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমি বিশ্বাস করি যে, দেশের প্রত্যেক নাগরিক এবং আমাদের পরাক্রমী বীরদের মিলিত উদ্যোগে দেশের নিরাপত্তা যেমন অভেদ্য রয়েছে, তেমনই থাকবে। দেশ সুরক্ষিত থাকলেই আমরা উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন উচ্চতা স্পর্শ করতে পারবো। কিন্তু রাষ্ট্র নির্মাণের পথে আমাদের আরও কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
ভাই ও বোনেরা, ১৯৪৭ সালে কি শুধুই একটি ভাষা কিংবা কেবলই একটি ধর্মের লোক স্বাধীন হয়েছেন? শুধু একটি জাতিই কি স্বাধীন হয়েছে নাকি সম্পূর্ণ ভারত স্বাধীন হয়েছে?
আমাদের সংবিধান যখন রচিত হয়েছিল, সেটি কি কোনও নির্দিষ্ট ভাষা, ধর্ম বা জাতির জন্য লেখা হয়েছিল? একেবারেই না। সম্পূর্ণ ভারতের জন্য লেখা হয়েছিল। ২০ বছর আগে যখন আমাদের ৫০০-রও বেশি বীর সেনা কার্গিলের বরফ ঢাকা পাহাড়ে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তাঁরা কাদের জন্য করেছিলেন? বিহার রেজিমেন্টের বীর চক্রধারী মেজর সর্বাণন, যাঁকে ‘হিরো অফ বাটালিক’ বলা হয়, তিনি ছিলেন তামিলনাডুর বাসিন্দা কিংবা দিল্লির রাজপুতানা রাইফেলস্ – এর ক্যাপ্টেন হানিফ উদ্দীন কাদের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন? হিমাচল প্রদেশের সুপুত্র, জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর রাইফেলস্ – এর পরম বীরচক্র ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রা যখন বলেছিলেন ‘ইয়ে দিল মাঙ্গে মোর’, তখন তাঁর মন কার জন্য বেশি চাইছিল? নিশ্চয় কোনও নির্দিষ্ট ধর্ম, ভাষা বা জাতির জন্য নয়, সম্পূর্ণ ভারতের জন্য, ভারতমাতার জন্য।
আসুন, আমরা সবাই মিলে সংকল্প গ্রহণ করি যে, তাঁদের এই বলিদান আমরা ব্যর্থ হয়ে যেতে দেব না। আমরা তাঁদের থেকে প্রেরণা নেব আর তাঁদের স্বপ্নের ভারত নির্মাণের জন্য আমরাও নিজেদের জীবন উৎসর্গ করবো।
আজ এই কার্গিল বিজয় দিবসে আমরা বীরদের থেকে প্রেরণা গ্রহণ করে, বীর মাতাদের থেকে প্রেরণা নিয়ে দেশের জন্য কর্তব্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে নিজেদের সমর্পণ করি – এই সংকল্প নিয়ে সমস্ত বীরদের প্রণাম জানিয়ে আপনারা সবাই আমার সঙ্গে বলুন –
ভারতমাতার জয়
ভারতমাতার জয়
ভারতমাতার জয়
অনেক অনেক ধন্যবাদ।