মহারাষ্ট্রেররাজ্যপাল শ্রীমান বিদ্যাসাগর রাও, রাজ্যের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমান দেবেন্দ্রফড়নভিশজি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মী শ্রীমান নীতিন গড়করিজি, অশোক গজপতিরাজুজি, রাজ্য সরকারের মন্ত্রী শ্রীমান রবীন্দ্র চ্যবনজি, বিধায়ক শ্রীমান প্রশান্তঠাকুরজি এবং এখানে এক বিরাট সংখ্যায় সমবেত আমার প্রিয় ভাই-বোনেরা।
আগামীকালছত্রপতি শিবাজী মহারাজের জন্মবার্ষিকী। তাঁর একদিন আগে, অর্থাৎ আজ, রায়গড় জেলায় এইঅনুষ্ঠানের আয়োজন এক আনন্দময় সমাপতন। আজ আমি এখানে দুটি বিশেষ কর্মসূচি উপলক্ষেউপস্থিত থাকার সুযোগ লাভ পেয়েছি। এর প্রথমটি হল আমাদের নীতিন গড়করিজির নেতৃত্বেদেশের জাহাজ, বন্দর এবং জলপথ ক্ষেত্রগুলিতে এক নতুন উৎসাহ-উদ্দীপনার সঞ্চার এবংদ্বিতীয়টি হল যে তারই একটি অঙ্গ হিসেবে মুম্বাইয়ের জেএনপিটি-র চতুর্থ টার্মিনালটি জাতিরউদ্দেশে উৎসর্গীকরণ।
বিশ্বায়নএবং বিশ্ব বাণিজ্য সম্পর্কে গত কয়েক বছর ধরেই আমরা অনেক কথা শুনে আসছি। কিন্তু ঘরেবসে থেকে এবং বিশ্ব বাণিজ্যের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে আলোচনায়সময় কাটিয়ে দেশকে আমরাসেভাবে কিছুই দিতে পারি না। বিশ্ব বাণিজ্য সকলের কল্যাণে আসবে তখনই, যখন বিশ্ববাণিজ্যে অংশগ্রহণের উপযোগী বিশ্বমানের পরিকাঠামো আমরা তৈরি করতে পারব।
সমুদ্র-কেন্দ্রিকব্যবসা-বাণিজ্যের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে এই বিশেষ ক্ষেত্রটিতে। ভারতের সৌভাগ্য যে দেশেরপ্রথম রাজকীয় তথা জাতীয় ব্যক্তিত্ব ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ সামুদ্রিক শক্তির সম্ভাবনাকেআবিষ্কার করতে পেরেছিলেন। আর এই কারণেই, এখানে এত দুর্গ গড়ে উঠেছে যেগুলির সঙ্গেযোগাযোগ রয়েছে সমুদ্রপথের। আর এই কারণেই সমুদ্রমুখী চিন্তাভাবনারও ক্রমপ্রসারঘটেছে। আজ এত বছর পরেও আমরা যখন ছত্রপতি শিবাজী মহারাজকে স্মরণ করি এবং জেএনপিটি-রএই চতুর্থ টার্মিনালটি সরকারিভাবে জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করি, তখন আমরা সহজেইকল্পনা করতে পারি যে কি ধরনের ভবিষ্যৎদ্রষ্টা ছিলেন আমাদের পূর্বসূরীরা এবং কোনদূরদৃষ্টির সাহায্যে তাঁদের চিন্তাভাবনার প্রসারঘটেছিল।
ভারত যদিসমুদ্র বাণিজ্যে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করতে পারে, তাহলে এই দেশের সমুদ্রসম্ভাবনাও বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। আমরা যদি একের পর এক বন্দর উন্নয়নের কাজে সচেষ্টহই, তাহলে সেগুলি আরও আরও আধুনিক হয়ে উঠবে। এর ফলশ্রুতিতে বেশ কিছু সংখ্যক জাহাজদ্রুতগতিতে সমুদ্র পারাপার করতে পারবে এবং বিশ্ব বাজারে পৌঁছে যাবে আমাদের উৎপাদিতকোটি কোটি টন পণ্যসামগ্রী। কখনও কখনও সঠিক সময়ে পণ্য যোগানের ক্ষেত্রে এক তীব্রপ্রতিযোগিতা দেখা যায়। বরাত যখন চূড়ান্ত হয় এবং অর্থনৈতিক চুক্তি যখন সম্পাদিত হয়,তখন খুব অল্প সময়ের মধ্যে পণ্য যদি নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া যায়, তাহলে উৎপাদকও ক্রেতা – উভয়েই লাভবান হয়ে থাকেন। অন্যদিকে, পণ্যের যোগান যদি বিলম্বিত হয়,তাহলে তাঁদের ক্ষতি স্বীকার করতে হয়। কিন্তু পণ্যের যোগান সঠিক সময়ে পৌঁছে দেওয়াসম্ভব হয় তখনই, যখন আমাদের বন্দর ক্ষেত্রগুলিতে এই ধরনের সুযোগ-সুবিধার প্রসারঘটে।
আমরা যেশুধুমাত্র ‘সাগরমালা’ প্রকল্পের আওতাতেই বন্দরগুলির উন্নয়নে আগ্রহী তা নয়। আমরাবরং গুরুত্ব আরোপ করি বন্দর পরিচালিত উন্নয়ন প্রচেষ্টার ওপর যাতে আমাদেরসুযোগ-সুবিধাগুলিকে উন্নয়নের এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে পারি। কারণ, এই সমস্তসুযোগ-সুবিধা আমরা কিভাবে ব্যবহার করতে পারছি তা আমাদের কাছে এক চ্যালেঞ্জ-বিশেষ। মনেরাখতে হবে, ৭,৫০০ কিলোমিটারের মতো এক বিশাল উপকূলরেখা রয়েছে ভারতের। আমাদের রয়েছেএমনই এক ভৌগোলিক অবস্থান যা মহাসাগরীয় ক্ষেত্রে দেশকে এক বিশ্বশক্তির আসনেঅধিষ্ঠিত করতে পারে।
ভারত সরকারনিজেই এই কাজটি ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে। পরিবেশের কথা প্রায়ই উঠে আসে বিভিন্নআন্তর্জাতিক মঞ্চে। পরিবেশ সম্পর্কিত সমস্যার সমাধানে যে ক্ষেত্রগুলি বিশেষভাবেগুরুত্বপূর্ণ, তার মধ্যে অন্যতম হল জলপথে পরিবহণ। ১০০টিরও বেশি জলপথকে আমরাচিহ্নিত করেছি। এই জলপথ যদি আমরা ব্যবহার করতে পারি, সারা দেশে আমাদের নদী ওসমুদ্র উপকূলগুলিকে যদি আমরা পণ্য পরিবহণের কাজে ব্যবহার করতে পারি, তাহলে আমরাঅনেক ব্যয়সাশ্রয়ী উপায়ে পণ্যের যোগান নিশ্চিত করতে পারি। পরিবেশ যাতে ক্ষতিগ্রস্তনা হয়, সেই লক্ষ্যে ইতিবাচক অবদান আমরা এইভাবে সৃষ্টি করতে পারি। একইসঙ্গে, বিশ্বউষ্ণায়নের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই যে সংগ্রাম শুরু হয়েছে, তাতেও আমরা ইতিবাচক অবদানেরনজির রাখতে পারি।
আজ নভিমুম্বাইয়ে পরিবেশ-বান্ধব একটি বিমানবন্দর বাস্তবায়িত হতে চলেছে। স্বাধীনতা-উত্তরকালে এই আকার ও আয়তনের পরিবেশ-বান্ধব বিমানবন্দর প্রকল্প রূপায়িত হচ্ছে এইসর্বপ্রথম। গত ২০ বছর ধরে আপনারা এর কথা শুনে আসছেন। বেশ কয়েকটি নির্বাচনকালে নানাপ্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল এ সম্পর্কে। বেশ কয়েকজন বিধায়কও নির্বাচিত হয়েছিলেন এবংএই প্রতিশ্রুতির ওপর নির্ভর করে বেশ কয়েকজন সাংসদ পদও লাভ করেছিলেন। এর মধ্যেইআবার বহু সরকারের উত্থান-পতন ঘটেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই ধরনের কোন বিমানবন্দরআজ পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি। আমাদের খুঁজে দেখতে হবে যে এর পিছনে কারণ কি ছিল। এর সবচেয়েবড় কারণ হল, পূর্ববর্তী সরকারগুলির কর্মসংস্কৃতির প্রতি অনীহা।
১৯৯৭ সালেঅটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে যখন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন এই স্বপ্নকেবাস্তবায়নের লক্ষ্যে চিন্তাভাবনার কাজ অনেকটাই এগিয়ে যায়। আমি যখন প্রধানমন্ত্রীহলাম, তখন দিন-রাত আমার চিন্তাভাবনাই ছিল এই ধরনের কাজের বাস্তবায়নকে ঘিরে। শুধুমাত্রনভি মুম্বাই বিমানবন্দরই নয়, এই ধরনেরই বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছিলপ্রায় ৩০ বছর আগে। এই অনুমোদন এসেছিল কাগজে-কলমে। কখনও কখনও আবার এর কথা ঘোষণা করাহয়েছিল ২০ বছর আগে। কখনও বা হয়তো একজন রাজনীতিবিদ এসে সেখানে একটি ফলক স্থাপন করেগিয়েছিলেন। তাঁর ছবিও প্রকাশিত হয় সংবাদমাধ্যমে এবং তিনি সেখানে ভাষণও দিয়েগিয়েছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ফাইল আর কাগজপত্রের বাইরে ঐ প্রকল্প কোনদিনইবাস্তবের মুখ দেখার সুযোগ পায়নি। আমি নিজে খুব আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম এই ধরনেরদীর্ঘসূত্রিতায়। আমার উদ্বেগও কিছু কম ছিল না।
‘প্রগতি’নামে আমি এক বিশেষ কর্মসূচি শুরু করলাম। প্রকল্পের অচলাবস্থা সম্পর্কে দেশের সমস্তমুখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় সচিবদের সঙ্গে প্রযুক্তি-চালিত মঞ্চে আমি পর্যালোচনারকাজও শুরু করে দিলাম। দেবেন্দ্রজি আমাকে জানিয়েছিলেন এই প্রকল্পটি সম্পর্কেও। কিন্তুসমস্ত কিছুই ছিল কাগজপত্রে মাত্র। সকলেই আশায় আশায় ছিলেন, আজ না হয় কাল, কেউ নাকেউ আসবেন এবং এক বিবৃতি দিয়ে বলবেন যে তাঁর সময়কালেই এটি অনুমোদিত হয়। এই ধরনেরব্যক্তিদের কোনরকম বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। আমি তাই আপনাদের সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি,সবক’টি দপ্তরকে সঙ্গে করে ‘প্রগতি’র মঞ্চে আপনারা এই সমস্যার কথা তুলে ধরুন।আপনারা শুনে খুশি হবেন যে ২০ এমনকি ৩০ বছর ধরেও যে সমস্ত প্রকল্প রূপায়ণের কাজথেমে ছিল, ‘প্রগতি’র মঞ্চে সেগুলির পর্যালোচনার মাধ্যমেই আবার নতুন করেকর্মসংস্কৃতি জেগে ওঠে। আপনারা শুনলে অবাক হবেন যে ১০ লক্ষ কোটি টাকার মতোপ্রকল্পের কাজ স্থগিত হয়ে গিয়েছিল এবং এক সময়ে সেগুলি চলে যায় বিস্মৃতির অতলে। কিন্তুআমরা আবার সেগুলিকে সেই বিস্মৃতির গহ্বর থেকে বের করে এনে বাস্তবায়িত করেছি। আমরাঐ প্রকল্পগুলির জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছি। তার নির্মাণ কাজ এখন দ্রুতগতিতে এগিয়েচলেছে। নভি মুম্বাই বিমানবন্দর প্রকল্পটি তারই অন্যতম।
আমাদেরঅসামরিক পরিবহণ ক্ষেত্রটি দ্রুতগতিতে বিকাশশীল। কিছুক্ষণ আগে গজপতি রাজুজিব্যাখ্যা করে জানিয়েছেন যে আজ থেকে ২০-২৫ বছর আগে সারা দেশে যে ধরনের বিমানচলাচলের ব্যস্ততা ছিল, তার বহুগুণ ব্যস্ততা বেড়েছে শুধুমাত্র মুম্বাইবিমানবন্দরেই। সময়ের এখন পরিবর্তন ঘটেছে। যদি আপনারা বিমানবন্দরে উপস্থিত হন,দেখবেন বিমানে আরোহণের জন্য লম্বা লাইনে অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বিমানযাত্রীরা বোর্ডিং পাস পাওয়ার জন্য। ভারতের বেশ কিছু বিমানবন্দরেই এই ছবি আপনারাদেখতে পাবেন।
পরিকাঠামোরদিক থেকে এই ক্ষেত্রটিতে চাহিদার তুলনায় আমরা অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছি। তাই ক্রমবিকাশশীলঅসামরিক বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রটির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমরা চেষ্টা করে চলেছি গতিবৃদ্ধির লক্ষ্যে,চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে। হ্যাঁ, আমরাই সম্ভব করেছি সেই কাজ। আপনারাহয়তো কয়েক বছর আগেই শুনেছেন যে একুশের শতক আগত প্রায়। হয়তো আশির দশক থেকে আপনারাশুনে আসছেন যে একবিংশ শতাব্দীর আবির্ভাব ঘটতে চলেছে অনতিবিলম্বেই। প্রতিদিনেরসংবাদপত্রে কোন না কোনভাবে এই খবর প্রকাশিত হয়েছে। তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রীরকন্ঠেও ধ্বনিত হয়েছে একবিংশ শতাব্দীর আগমন বার্তা। কিন্তু কথা ছাড়া কাজ কিছুইহয়নি।
আজ থেকে২০-২৫ বছর আগে বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রটিকে একুশ শতকের উপযোগী করে যদি গড়ে তোলা হত,তাহলে এখন আমাদের নিশ্চয়ই এই বিশাল কাজ করে যাওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হত না। অথচ,এটি ছিল নিঃসন্দেহেইএকটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র যার সম্পর্কে কোন দ্বিমতথাকতে পারে না। আশ্চর্যের বিষয়, স্বাধীনতা পরবর্তী কালে দেশে যে সরকারগুলিকে আমরাপেয়েছিলাম, তারা কিন্তু একটি সুসংবদ্ধ বিমান পরিবহণ নীতিই স্থির করে উঠতে পারেনি। কিন্তুক্ষমতায় আসার পর আমরা সেই নীতি বাস্তবায়িত করেছি। যদি আমরা মনে করি যে বিমানপরিবহণ ক্ষেত্রটি শুধুমাত্র রাজা-মহারাজাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ তাহলে কিন্তু আমরা এক বিরাটভুল করব। কারণ, সাধারণ মানুষই বর্তমান যুগে বিমান পরিবহণ সবথেকে বেশি মাত্রায়গ্রহণ করতে আগ্রহী। অটলজির সরকারেও আমরা একজন বিমান পরিবহণ মন্ত্রীকে পেয়েছিলাম।সেই সময় আমি ব্যস্ত থাকতাম সংগঠনের কাজে। আমি তাঁকে প্রশ্ন করেছিলাম, বিমানে একজনমহারাজার ছবি থাকবে কেন? এর কারণ ছিল, ঐ সময় রাজা-মহারাজা অর্থাৎ, বিত্তবানব্যক্তিরাই বিমান পরিবহণের সুযোগ গ্রহণ করতেন। আমি তাঁকে বলেছিলাম যে একজন সাধারণমানুষের ছবি সেখানে থাকা দরকার। পরে, অটলজির সময়ে এই লক্ষ্যে কাজও শুরু হয়েছিল।
শুধুমাত্রপায়ে চপ্পল পরে একজন সাধারণ মানুষ কেন বিমানে আরোহণ করতে পারবেন না, এই প্রশ্নওআমাদের মনে এসেছিল। তাই আমরা শুরু করেছি ‘উড়ান’ কর্মসূচির কাজ। দেশে ১০০টিবিমানবন্দর গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে চলেছি। এর অনেকগুলিই হবে নতুন। কিছুকিছু আবার বর্তমান বিমানবন্দরগুলিরই উন্নত সংস্করণ।
জনসাধারণএখন গতির যুগে বাস করছেন। তাই, মাত্র ২০-৩০ জন যাত্রী নিয়েই ছোট ছোট বিমান একস্থান থেকে অন্য গন্তব্যে চালু করা উচিৎ। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য আমরা এই ধরনেরইএকটি উড়ান কর্মসূচি চালু করেছি যার জন্য একজন বিমান যাত্রীকে খরচ করতে হবে আড়াইহাজার টাকা মাত্র। আমরা উত্তর-পূর্ব ভারতের ওপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছি কারণ, এখানেরয়েছে সংযোগ ও যোগাযোগের একান্তই অপ্রতুলতা।
আমারভাই-বোনেরা, আপনারা জেনে সুখী হবেন যে আমাদের দেশে চলাচলকারী বিমানের মোট সংখ্যাএখন প্রায় ৪৫০। সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে এই ৪৫০ বিমান এক গন্তব্য থেকে পৌঁছেযাচ্ছে অন্য গন্তব্যে। স্বাধীনতা-উত্তর কালে আমাদের মোট বিমানের সংখ্যা ৪৫০ হলেও, আরওআনন্দের কথা যে শুধুমাত্র এই বছরটিতেই বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রে বরাত দেওয়া হয়েছে৯০০টি নতুন বিমানের। এর থেকেই আপনারা কল্পনা করতে পারবেন যে কি দুরন্ত গতিতে এগিয়েচলেছে দেশের বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রটি।
নতুন নতুনকর্মসংস্থানের সুযোগ ও সম্ভাবনাও রয়েছে বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রে। দেবেন্দ্রজিকিছুক্ষণ আগেই আমাকে বলেছেন যে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি, পরিকাঠামো বিকাশেরও একবিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। জলপথ, স্থলপথ এবং আকাশপথের মাধ্যমে ভারতের অর্থনীতি কতটাউজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে সে সম্পর্কে একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে বিমান পরিবহণক্ষেত্রে যদি ১০০ টাকা বিনিয়োগ করা হয়, তাহলে এর মাধ্যমে আয়ের অঙ্ক বৃদ্ধি পাবে৩২৫ টাকায়। এতটাই শক্তিশালী এই বিশেষ ক্ষেত্রটি। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিরসম্ভাবনার পাশাপাশি, রয়েছে ভারতের পর্যটন ক্ষেত্রের সার্বিক বিকাশ সম্ভাবনাও।
ভারত একবৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ। সংযোগ ও যোগাযোগের যদি প্রসার ঘটে, তাহলে একজন বিদেশি পর্যটকদেশের কোন একটি জেলায় এক মাস অতিবাহিত করলেও জেলার সবকিছু ভালোভাবে দেখে উঠতেপারবেন না। হ্যাঁ, এরকমই এক বৈচিত্র্যময় দেশ হল আমাদের ভারত। তাই, পর্যটন ক্ষেত্রএবং তার শক্তি দেশের পর্যটন ক্ষেত্রটিকেও আরও চাঙ্গা করে তুলতে সাহায্য করবে।পর্যটন হল এমনই একটি ক্ষেত্র যেখানে ন্যূনতম বিনিয়োগের মাধ্যমে সর্বাধিক মাত্রায়রুজি-রোজগারের ব্যবস্থা করা সম্ভব। এই ক্ষেত্রটি থেকে আয় ও উপার্জনের সুযোগ ঘটবেপ্রত্যেকেরই, তা তিনি একজন ট্যাক্সি চালক বা অটো চালক হোন, কিংবা কোন অতিথিশালারমালিক অথবা ধরুন কোন ফুল বিক্রেতা কিংবা মন্দিরের পুজারী। প্রত্যেকেই পাবেন আয় ওউপার্জনের বিভিন্ন সুযোগ।
বিমানপরিবহণ ক্ষেত্রকে পর্যটনের প্রসারে সরাসরি কাজে লাগাতে আমরা আগ্রহী। আমি বিশ্বাসকরি যে আজ এখানে নভি মুম্বাইয়ে পরিবেশ-বান্ধব যে বিমানবন্দরের শিলান্যাস ঘটতেচলেছে, তার নির্মাণ কাজ যাতে সঠিক সময়ে শেষ হয় তা আমরা নিশ্চিত করব। কোন কাজেরদায়িত্ব যখন আপনারা আমাদের ওপর ন্যস্ত করেন, তখন তা সঠিক সময়ে শেষ করার দায়িত্বওআমাদেরই।
মহারাষ্ট্রতথা মুম্বাইতে আমি আজ যে সমস্ত প্রকল্প প্রত্যক্ষ করছি, তা থেকে আগামী ২০২২ এবংতার পরবর্তীকালেও কি বিশাল কর্মযজ্ঞ ঘটতে চলেছে তা সহজেই কল্পনা করতে পারি। গত২০-২৫ বছর আগে কিন্তু এ কথা আপনারা চিন্তাই করতে পারতেন না। ২০২২, ২০২৩, ২০২৪ এবং২০২৫ সালের কথা যদি আমরা চিন্তা করি, তাহলে আমরা দেখতে পাব যে এই নভি মুম্বাইবিমানবন্দর থেকেই একের পর আরেক বিমান তাদের ডানা মেলতে শুরু করেছে।
এই একইসময়কালে মুম্বাইয়ের অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের কাজও দ্রুততার সঙ্গেই সম্পন্ন হবে। এইঅঞ্চলে সমুদ্রপথ, জলপথ, স্থলপথ এবং রেলপথে আরও কি কি প্রকল্প বাস্তবায়িত হতেচলেছে, তার সাক্ষী থাকবেন আপনারা নিজেরাই। আর এইভাবেই, ছত্রপতি শিবাজী মহারাজেরউদ্দেশে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের সুযোগও আমরা লাভ করব। কিভাবে সমস্ত কিছুর দ্রুতপরিবর্তন ঘটে চলেছে, তা আপনারা সহজেই কল্পনা করতে পারছেন।
এইবিমানবন্দর থেকে একটি বিমান ধরার সুযোগ আপনারা অনতিবিলম্বেই লাভ করবেন এই আশায়আপনাদের সকলকেই জানাই আমার শুভেচ্ছা। অভিনন্দন জানাই শ্রীমান দেবেন্দ্রজি,কেন্দ্রে আমার সহকর্মী গজপতি রাজুজি ও নীতিন গড়করিজি এবং আর সকলকেই।
ধন্যবাদ।