মঞ্চে উপস্থিত ওড়িশার রাজ্যপাল অধ্যাপক গণেশীলালজি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আমারবন্ধুনবীনপট্টনায়কজি, আমারকেন্দ্রীয়মন্ত্রিসভারসদস্যজুয়েলওরাঁওজি, সুরেশ প্রভূজি,ধর্মেন্দ্রপ্রধানজি, অন্যান্য বিশিষ্টজনএবংআমারপ্রিয়ভাইওবোনেরা,
এখানে আমি তালচের থেকে আসছি। সেখানে অনেক দশক আগে যে সার কারখানার স্বপ্ন বোনা হয়েছিল, কিন্তু কোনও না কোনও ত্রুটির ফলে সমস্ত স্বপ্ন ভেস্তে গিয়েছিল। সেখানকার মানুষও আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন যে কোনোদিন আবার এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে পারে, আজ সেখানে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে সেই প্রকল্প পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু হল। তালচের এখন সেই অঞ্চলে আর্থিক গতিবিধির কেন্দ্র হয়ে উঠবে।
তেমনি আজ এখানে আধুনিক ওড়িশা, আধুনিক ভারত নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় যে আধুনিক পরিকাঠামো, তারই অন্তর্গত এই বীর সুরেন্দ্র সাঁই বিমানবন্দর উদ্বোধনের সৌভাগ্য হল। বীর সুরেন্দ্র সাঁই বিমানবন্দরের মাধ্যমে বিমান পরিষেবা গ্রহণকারী প্রত্যেক যাত্রী তাঁর নাম শুনতেই ওড়িশার বীরত্ব, ত্যাগ ও তাঁদের সমর্পণের গাথার প্রতি স্বাভাবিকভাবেই আকর্ষণ বোধ করবেন।
আজ আমার এখানে একসঙ্গে বেশ কয়েকটি বৃহৎ প্রকল্পের শুভসূচনার সৌভাগ্য হয়েছে। এই বিমানবন্দর ওড়িশায় দ্বিতীয় বিমানবন্দর রূপে আত্মপ্রকাশ করছে। এত বছর ধরে ওড়িশায় কেন দ্বিতীয় বিমানবন্দর হয়নি, তাঁর জবাব আপনাদের খুঁজতে হবে, হয়তো আমার জন্যে অপেক্ষা করছিলেন।
আমি গুজরাটের মানুষ, আমাদের রাজ্যে একটি জেলা হ’ল কচ্ছ। প্রায় মরুভূমি অঞ্চল বলা চলে, সীমান্তের ওপারে পাকিস্তান। সেই জেলায় পাঁচটি বিমানবন্দর রয়েছে। আর আজ এত বছর পর ওড়িশায় দ্বিতীয় বিমানবন্দর হচ্ছে। একটু আগেই সুরেশ প্রভূজি বলছিলেন যে, দেশে বিমান পরিষেবার ক্ষেত্রে কেমন উন্নতি হচ্ছে, আপনারা শুনলে অবাক হবেন, দেশ যখন স্বাধীন হয়েছিল তখন থেকে ২০১৬ পর্যন্ত দেশে মোট যতটি বিমান উড়তো – তাঁর সংখ্যা প্রায় সাড়ে চারশো। আর শুধু বিগত এক বছরে দেশে সাড়ে নশো বিমান কেনার অর্ডার বুক হয়েছে। কেউ কল্পনা করতে পারেন যে আমরা কোথা থেকে কোথায় পৌঁছেছি, কত দ্রুতগতিতে পৌঁছেছি।
আমি মনে করি এই বীর সুরেন্দ্র বিমানবন্দর ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে এমন এক ত্রিবেণী সঙ্গমে অবস্থিত যা ভুবনেশ্বর, রাঁচি, রায়পুর – এই তিন রাজ্যের রাজধানীর সঙ্গে প্রায় সমান দূরত্বে রয়েছে। আপনারা কল্পনা করতে পারেন এর কারণে এই তিনটি রাজ্যের উন্নয়নের ডানায় কত না পালক জুড়তে চলেছে। উন্নয়ন এখানে একটি নতুন উড়ালের অপেক্ষায়।
ঝারসুগুদা, সম্বলপুর এবং ছত্তিশগড়ের আশপাশের অঞ্চলগুলিতে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই পরিষেবা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। একবার কোথাও গিয়ে যাতায়াতের সুবিধা দেখলে অনেকেই ব্যবসায়ী দৃষ্টিকোণ থেকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আমাদের ভাবনায় ‘সবকা সাথ – সবকা বিকাশ’ এর মানে আঞ্চলিক ভারসাম্যও থাকতে হবে। শুধু পশ্চিম ভারতের উন্নয়ন হচ্ছিল, পূর্ব ভারতের উন্নয়ন হচ্ছিল না, এই ভারসাম্যহীনতা দেশের জন্যে সংকট সৃষ্টি করেছে। সেজন্যে আমারা লাগাতর পূর্ব ভারতের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল ওড়িশার উন্নয়ন। পূর্ব উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, উত্তর-পূর্ব ভারত; এই গোটা এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হওয়া দেশের জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আজ যেমন এখানে একটি বিমানবন্দর উদ্বোধন করছি, দুদিন পর তেমনি সিকিমে একটি বিমানবন্দর উদ্বোধন করবো। আপনারা কল্পনা করতে পারেন যে কত দ্রুতগতিতে কাজ হচ্ছে! আজ আমার একটি কয়লাখনির উদ্বোধনের সৌভাগ্যও হয়েছে। আমরা জানি যে আজ জীবনের গতিবিধির কেন্দ্রে রয়েছে জ্বালানি, আর ওড়িশা এক্ষেত্রে অনেক ভাগ্যবান; তার কাছে কালো হিরের ভাণ্ডার রয়েছে। কিন্তু তা এমনি পড়ে থাকলে বোঝা, আর উত্তোলিত হলে বৈভব। সেজন্যে এর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে উত্তোলন, এ থেকে শক্তি উৎপাদনের কাজ আর উন্নয়নের সম্ভাবনা সমূহের অনুসন্ধান; আজ এখানে তারও সূত্রপাত হচ্ছে, আর সঙ্গে জুড়ছে কয়লা থেকে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়া।
যে কোনও অঞ্চলে বিমান পরিষেবার পাশাপাশি রেল যোগাযোগেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। আর পরিবর্তিত যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থা, উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। উন্নত সড়কপথ, রেলপথ, বিমানপথ, জলপথ, ইন্টারনেট যোগাযোগ – এই সবই অত্যন্ত আবশ্যক হয়ে উঠেছে।
তাই আজ প্রথমবারের মতো একটি জনজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলকে রেলপথে যুক্ত করার মাধ্যমে আমরা আরেকটি বড় পদক্ষেপ নিতে পেরেছি। আমি মনে করি যোগাযোগ ব্যবস্থার এই উন্নতি আগামীদিনে ওড়িশার চতুর্মুখী উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে। আমি আরেকবার এখানকার নাগরিকদের বীর সুরেন্দ্র সাঁই বিমানবন্দর উদ্বোধনের জন্য অত্যন্ত গর্ব ও আনন্দ জানিয়ে আমারবক্তব্যসম্পূর্ণকরছি।
অনেকঅনেকধন্যবাদ।