তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল শ্রী বনোয়ারীলাল পুরোহিত, মুখ্যমন্ত্রী শ্রী এড়াপুড়ি কে পালানিস্বামী, মন্ত্রীসভার সদস্য শ্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশাঙ্ক, উপমুখ্যমন্ত্রী ও. পনিরসেলভাম, আইআইটি মাদ্রাজের চেয়ারম্যান, প্রতিষ্ঠানের পরিচালন সমিতির সদস্য, অধিকর্তা, উপস্হিত অতিথিবৃন্দ এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আমার যুব বন্ধুরা, আজ এখানে আমার উপস্হিতি বড় সৌভাগ্যের।
বন্ধুগণ,
আমার সামনে ‘উদ্যমী নতুন ভারত’ এবং ‘ছোট ভারত’উপস্হিত রয়েছে। এখানে শক্তি, শিহরণ এবং ইতিবাচক দিক রয়েছে। আমি তোমাদের ডিগ্রি প্রদান করে, তোমাদের চোখে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে পাচ্ছি। এমনকি আমি তোমাদের চোখে ভবিষ্যতের ভারতও দেখতে পাচ্ছি।
বন্ধুগণ,
আমি এখান থেকে উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের পিতা-মাতাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এমনকি তাঁদের গর্ব এবং উৎফুল্লতাও কল্পনা করতে পারছি। তাঁদের নিরলস পরিশ্রম এবং আত্মত্যাগই তোমাদের জীবনে এই শুভ মূহুর্তক্ষণে এনে দাঁড় করিয়েছে। তাঁরা তোমাদের পাখনা দিয়েছে যাতে তোমরা উড়তে পারো। এই একই গর্ব তোমাদের শিক্ষকদের চোখেও প্রতিফলিত হচ্ছে। তাঁদের নিরলস প্রয়াসে, শুধুমাত্র ভালো ইঞ্জিনিয়ার নয়, তোমাদের একজন ভালো নাগরিকও তৈরি করেছে।
আমি সহকারি শিক্ষকদের প্রয়াসের কথাও উল্লেখ করতে চাই, যাঁরা নীরবে তোমাদের খাবার তৈরি করেছে, ক্লাসরুম এবং হোস্টেল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখেছেন। তোমাদের এই সাফল্যে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। অন্য প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে আমি আমার ছাত্রবন্ধুদের অনুরোধ করবো, উঠে দাঁড়িয়ে তোমাদের শিক্ষক, পিতা-মাতা এবং সহকারি শিক্ষকদের উদ্দেশে হাততালি দিয়ে ধন্যবাদ জানাবার জন্য।
বন্ধুগণ,
আইআইটি মাদ্রাজ তামিলনাড়ু রাজ্যের অবিষ্মরণীয় প্রতিষ্ঠান, যার একটি বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। এ রাজ্যের তামিল ভাষা পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম প্রাচীন ভাষা। তবে এখানে দেশের আরও একটি নতুন ভাষা রয়েছে, তা হল আইআইটি মাদ্রাজের ভাষা, যেটা কখনই ভোলার নয়।
বন্ধুগণ,
তোমরা সত্যিই সৌভাগ্যবান। তোমরা যেসময় এই অসাধারণ কলেজ থেকে পাশ করে বেরোচ্ছো তখন সারা বিশ্ব ভারতের দিকে সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে এগিয়ে এসেছে। আমি আমেরিকায় এক সপ্তাহব্যাপি সফর শেষে সবেমাত্র দেশে ফিরেছি। এই সফরে আমি আমেরিকার রাষ্ট্রপতি, বাণিজ্যিক প্রধান, একাধিক উদ্ভাবনকারী, উদ্যোগপতি ও বিনিয়োগকারীদের সাথে বৈঠক করেছি। আমাদের আলোচনা একটি সূত্রেই বাঁধা ছিল, তা হল নতুন ভারতের আশা এবং ভারতের যুব সম্প্রদায়ের সামর্থের মনোবল।
বন্ধুগণ,
ভারতীয়রা সারা বিশ্বে নিজেই নিজের পরিচিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভবক্ষেত্রে। তাঁরা অধিকাংশই তোমাদের আইআইটির প্রাক্তনী। এরকমই ভাবেই তোমরা ভারতকে সারা বিশ্বে শক্তিশালী করে তোলো। আজই আমি ইউপিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ যুব আধিকারিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। আমি অভিভূত যে তাদের মধ্যে অনেকেই আইআইটি গ্র্যাজুয়েট। তোমাদের মতোই আইআইটি গ্র্যাজুয়েটরাই ভারতকে আরও উন্নত স্হানে এবং বাণিজ্যিক বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে পারে। তোমরাই আরও সমৃদ্ধশালী ভারত গড়ে তুলতে পারবে।
বন্ধুগণ,
আমি দেখেছি একুশ শতকের ভিত দাঁড়িয়ে আছে মূলত উদ্ভাবন, যৌথভাবে কর্মকান্ড এবং প্রযুক্তির ওপর। এগুলি একে অপরের পরিপূরক।
বন্ধুগণ,
আমি সম্প্রতি সিঙ্গাপুর-ভারত হ্যাকাথন ঘুরে দেখেছি। সেখানে ভারত এবং সিঙ্গাপুরের উদ্ভাবনকারীরা যৌথভাবে কাজ করছেন। তাঁরা সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলির সমাধানে প্রয়াস চালাচ্ছেন। সকল ইঞ্জিনিয়াররাই একটি দিকেই মনোনিবেশ করে আছেন। এই উদ্ভাবনকারীরা বিভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে এসেছেন। তাঁদের অভিজ্ঞতাও ভিন্ন। কিন্তু তাঁরা সকলেই শুধুমাত্র ভারত বা সিঙ্গাপুরের নয়, সারা বিশ্বের সমস্যা সন্ধানের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। এটাই হল উদ্ভাবন শক্তি, যৌথভাবে কর্মকান্ড এবং প্রযুক্তি। এর সুফল শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কেউ ভোগ করবে না, সকলেই এর ফল পাবে।
আজ ভারত ৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার অর্থনীতির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তোমাদের উদ্ভাবন, আকাঙ্খা এবং প্রযুক্তির প্রয়াস এই স্বপ্ন পূরণ করবে। এগুলিই ভারতকে প্রগতিশীল অর্থনীতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
বন্ধুগণ,
আইআইটি মাদ্রাজই হল এর সঠিক উদাহরণ, কয়েক দশক পুরানো এই প্রতিষ্ঠান একুশ শতকের আকাঙ্খা এবং প্রয়োজনে কাজ করে চলেছে। কিছুক্ষণ আগে আমি এই ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত গবেষণা পার্ক পরিদর্শন করেছি। দেশের মধ্যে এটিই প্রথম এ ধরণের পার্ক। আমি আজ এখানে এই স্টার্ট আপের বাস্তু ব্যবস্হা দেখে অভিভূত। আমি আগেই বলেছিলাম, এখানে দুশোরও বেশি স্টার্ট আপ গড়ে উঠতে পারে। তাদেরই কিছু প্রতিষ্ঠান দেখার আজ আমার সৌভাগ্য হল। সমস্ত স্টার্ট আপই ভারতের একটি নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি করেছে যা ভবিষ্যতে বিশ্বে তাদের জায়গা করে দেবে।
বন্ধুগণ,
ভারতের উদ্ভাবনের মধ্যে রয়েছে অর্থনীতি এবং তার প্রয়োগের মিশ্রণ। আইআইটি মাদ্রাজের সৃষ্টি এই ধারাবাহিকতা থেকেই। এখানকার ছাত্রছাত্রী এবং গবেষকরা সমস্যাগুলি নিয়ে চিন্তা করেন এবং কিভাবে সহজে এর সমাধানসূত্র বের করা যায় তার প্রয়াস চালান।
বন্ধুগণ,
আমরা আমাদের দেশে উদ্ভাবনের জন্য একটি শক্তিশালী বাস্তু ব্যবস্হা তৈরি করেছি এবং গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য কাজ করছি। প্রযুক্তির শিক্ষা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং দেশীয় প্রযুক্তি বিষয়গুলি এখন বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। এরজন্য দেশে সমস্ত বিদ্যালয়ের অটল টিঙ্কারিং ল্যাব তৈরি করা হয়েছে।
তোমাদের মতো অনেক ছাত্রছাত্রী যখন এই প্রতিষ্ঠানে আসবে এবং উদ্ভাবনের ওপর কোনও কাজ করবে তখন ওই ল্যাবের প্রশিক্ষণ তাদের কাজে লাগবে। পরবর্তী সমস্যাটি হল বাজার নির্ধারণ এবং স্টার্ট আপের উন্নতি। স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া কর্মসূচি এই ধরণের সমস্যা মোকাবিলা এবং বাজার নির্ধারণে সাহায্য করবে। গবেষণার উৎসাহদানে এবং দেশের উন্নতিতে আমরা প্রধানমন্ত্রী রিসার্চ ফেলোশিপ স্কিম চালু করছি।
বন্ধুগণ,
এই অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলস্বরূপ ভারত আজ বিশ্বের তিনটি শীর্ষ স্টার্ট আপ বাস্তু ব্যবস্হার মধ্যে অন্যতম। এখন তোমাদের সামনে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে নিজের নাম তৈরি করার সুযোগ রয়েছে।
বন্ধুগণ,
তোমরা স্মরণ করতে পারো যখন তোমরা কিভাবে আইআইটির-তে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলে? কিভাবে বিষয়টিকে নিয়ে ভাবতে?তোমাদের কঠিন পরিশ্রমই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। তোমাদের সামনে এখন প্রচুর সুযোগ অপেক্ষা করে রয়েছে। তবে সব পদক্ষেপই সহজ নয়। যখন তুমি প্রথম ধাপে যাবে, তখন সেটাকে অসম্ভব বলেই মনে হবে। তবে তারজন্য হাল ছেড়ে দেবেন না। ধীরে ধীরে প্রতি পদক্ষেপে এগোতে হবে। একধাপ থেকে অন্য ধাপে যখনই যাবে, তোমার সামনে একটির পর একটি সমস্যা এসে হাজির হবে। কিন্তু মানুষের প্রয়াস লুকিয়ে রয়েছে সম্ভাবনার মধ্যেই। সুতরাং স্বপ্ন দেখা ছাড়লে হবেনা, প্রতিকূলতাকে জয় করতেই হবে।
বন্ধুগণ,
আমি জানি, তোমরা যখন এই প্রতিষ্ঠান থেকে উত্তীর্ণ হয়ে বেরোবে, তোমাদের সামনে আকর্ষণীয় সুযোগ অপেক্ষা করে রয়েছে। এটাকে কাজে লাগাও। আমি তোমাদের সকলেই এটাই অনুরোধ করবো। কোথায় কাজ করছো, কোথায় রয়েছ সেটা বড় কথা নয়। এটা সবসময় স্মরণে রাখবে তুমি তোমার মাতৃভূমির প্রয়োজনেই কাজ করছো। এটা স্মরণে রাখবে, তোমার কাজ, উদ্ভাবন এবং গবেষণা দেশবাসীর কাজে লাগবে। এটা শুধুমাত্র তোমার সামাজিক কর্তব্য নয়, এটি অপরিমেয় বাণিজ্যিক অভিজ্ঞতা তৈরি করবে।
আমাদের বাড়ি, অফিস এবং শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত জলকে কিভাবে পুনরায় ব্যবহার করা যায় এবং জল ব্যবহার কমিয়ে সংরক্ষণ করা যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে আমি সকলকে ভাবনাচিন্তা করার অনুরোধ জানাবো। আজ আমরা সমাজ থেকে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিককে মুক্ত করার প্রয়াস চালাচ্ছি। এর পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব কি ব্যবহার করা যায় এবং তার থেকে যাতে পরিবেশে ক্ষতি না হয় তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা করা প্রয়োজন। আমি তোমাদের মতোই যুব উদ্ভাবকদের এ বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করতে বলবো।
সংক্রামক রোগ ছাড়াও এমন অনেক ব্যাধি আছে যেগুলি আগামীদিনে বিশাল সংখ্যক মানুষের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। উচ্চরক্তচাপ, মধুমেহ, স্হুলতা, অবসাদ এগুলি আমাদের দৈনন্দিন জীবনধারণের থেকে সৃষ্টি ব্যাধি। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে এই ধরণের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তা নিয়ে আইআইটির ছাত্রছাত্রীদের এগিয়ে আসা দরকার।
আমি ফিটনেস এবং স্বাস্হ্য সচেতনতা নিয়ে বিশেষ জোর দিচ্ছি, কারণ তোমরা তোমাদের স্বাস্হ্যকে উপেক্ষা করেই নিজেদের কাজে মগ্ন থাকো। আমি সকলকে ফিট ইন্ডিয়া আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
বন্ধুগণ,
আমি দু ধরণের মানুষ দেখেছি। এক ধরণের মানুষ যারা কাজ করতে চান, আরেক ধরণের মানুষ আছেন যারা কাজ থেকে পালিয়ে যেতে চান। তোমাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তোমরা জীবনে কোন পথে বেছে নেবে।
বন্ধুগণ,
তোমাদের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তোমাদের বর্তমানে পাঠ্যক্রমের সমাপ্তি হল। কিন্তু এটাই তোমাদের শিক্ষার শেষ নয়। শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ ক্রমাগত চলতেই থাকবে। যতদিন আমরা বাঁচবো, ততদিনই আমরা শিখবো। আমি আরও একবার তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এবং মনুষ্যত্ববোধে জীবনকে উৎসর্গ করার জন্য শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
ধন্যবাদ, অজস্র ধন্যবাদ।