গুজরাটের রাজ্যপাল শ্রী ও পি কোহলি, মুখ্যমন্ত্রী শ্রী রুপানি, উপ-মুখ্যমন্ত্রী শ্রী নীতিন ভাই, গুজরাটের মন্ত্রী পরিষদের সদস্য শ্রী ভূপেন্দ্রজি চুড়াসমা, শ্রী প্রদীপ সিং জাদেজা, গুজরাট ফরেন্সিক সায়েন্স ইউনিভার্সিটির ডাইরেক্টর জেনারেল ডঃ জে এম ব্যাস, সমাবর্তনে সম্মিলিত সকল শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিবর্গ, পদক বিজেতা কৃতি ছাত্রছাত্রী, তাঁদের অভিভাবক এবং আজ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অতিথি বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা।
ভাই ও বোনেরা, আপনাদের সবাইকে গুজরাটের ফরেন্সিক সায়েন্স ইউনিভার্সিটির চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আমি আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই। এজন্য স্বাগত জানাচ্ছি, কেউ যেন ভুল করেও না ভাবেন যে, আমি এখানে একজন অতিথি। সবার আগে আমি সেই ছাত্রছাত্রীদের হৃদয় থেকে শুভেচ্ছা জানাই, যাঁরা আজ ডিগ্রি পাচ্ছেন এবং এর মাধ্যমে তাঁদের জীবনে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় শুরু করতে যাচ্ছেন। আমি সকল ছাত্রছাত্রীদের বাবা-মা এবং পরিবারের অন্য সদস্যদেরও আন্তরিক অভিনন্দন জানাই, তাঁদের লালন-পালন, যত্ন ও পরিশ্রমেই তাঁদের আদরের কন্যা কিংবা পুত্রটি আজ এই সাফল্য লাভ করেছে।
আমি বিশেষ করে, গুজরাট ফরেন্সিক সায়েন্স ইউনিভার্সিটিতে আসতে পেরে আনন্দ অনুভব করছি। এই বিশ্ববিদ্যালয় এবং এখানে যাঁরা পড়াশুনা করছেন, সেইসব ছাত্রছাত্রীরা দেশে এই বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় সকল বিষয়ে পড়াশুনা করার জন্য নয়। একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে এখানে পড়াশুনা করা হয়। আমি জানি যে, এই গান্ধীনগর আসার পথ ছাত্রছাত্রীদের অত্যন্ত মসৃণ ছিল না। তাঁরা যখন এখানে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আমি নিশ্চিত যে, অনেকেই তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করেছেন – কেন এই বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করতে যাচ্ছ ? অনেক বেশি অপরাধ বিষয়ক টিভি দেখার ফল? নাকি পড়ার বই ছেড়ে আগাথা কৃষ্টি কিংবা ফেলুদার বই পড়ে এই সিদ্ধান্ত! কিন্তু তোমরা বিচলিত না হয়ে এই বিষয়টি বেছে নিয়েছো এবং স্রোতের বিপরীতে হেঁটে বর্তমান সময়ের প্রয়োজনের নিরিখে একটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ্যক্রমে শিক্ষিত হয়ে উঠেছ। এটা প্রমাণ করে যে, তোমাদের আত্মবিশ্বাস কত জোরালো আর তোমাদের রয়েছে নিজেদের স্বপ্ন সফল করার লক্ষ্যে ঈশ্বর-প্রদত্ত দৃঢ়প্রত্যয়। এই প্রত্যয় তোমাদের ভবিষ্যৎ জীবনে অনেক সহায়ক হবে। বন্ধুগণ, এটা গর্বের বিষয় যে, অত্যন্ত কম সময়ে জিএফএসইউ (গুজরাট ফরেন্সিক সায়েন্স ইউনিভার্সিটি) শিক্ষাদানে উৎকর্ষের জন্য ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের বিচারে ‘এ গ্রেড’ পেয়েছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, জিএফএসইউ ভারতের হাতে গোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম, যারা যাত্রা শুরুর পরপরই এই সাফল্য অর্জন করেছে। ৩৫টি কোর্স এবং ২ হাজার ২০০ জন ছাত্র নিয়ে জিএফএসইউ ফরেন্সিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সেজন্য আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষ, ব্যবস্থাপনা এবং শিক্ষা কর্মীদের শুভেচ্ছা জানাই। তাঁদের প্রাণশক্তি ও দায়বদ্ধতা এত অল্প সময়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে গুজরাট তথা ভারতের গর্ব হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে।
বন্ধুগণ, পুলিশ, ফরেন্সিক সায়েন্স এবং বিচার ব্যবস্থা – এই তিনটি ক্রিমিনাল জাস্টিস ডেলিভারি সিস্টেমের অভিন্ন অঙ্গ। যে কোনও দেশে এই তিনটি অঙ্গ যত বেশি শক্তিশালী হয়, সেদেশের নাগরিকরা ততটাই নিরাপদ থাকেন এবং অপরাধীদের গতিবিধি ততটাই নিয়ন্ত্রিত থাকে। এই ভাবনা নিয়েই গুজরাটে আমরা এই তিনটি স্তম্ভকে নিয়ে সংহত ও বিস্তারিত শিক্ষার উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজ শুরু করেছিলাম। রক্ষা শক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ন্যাশনাল ল ইউনিভার্সিটি এবং ফরেন্সিক সায়েন্স ইউনিভার্সিটি অর্থাৎ এভাবে আইন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত সংহত ও বিস্তারিত শিক্ষার জন্য কাজ শুরু করেছিলাম। আজ রক্ষা শক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রশিক্ষিত ছাত্রছাত্রীরা আমাদের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীগুলিতে যোগদান করছে। ন্যাশনাল ল ইউনিভার্সিটি এবং ফরেন্সিক সায়েন্স ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করে যুবক-যুবতীরা তাঁদের দক্ষতার মাধ্যমে দেশের বিচার এবং আইন প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে।
বন্ধুগণ, আজকের পরিবর্তিত সময়ে অপরাধীরা নিজেদের অপরাধ লুকানোর জন্য যে ধরণের নতুন নতুন পথ বেছে নিচ্ছে, সেই পরিস্থিতিতে তাদের অপরাধ চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া ও বিচার এতটাই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তাঁদের মনে এই ভীতি সঞ্চার হয় যে অন্যায় করলে কোনও না কোনও সময়ে ধরা পড়বে আর সাজাও ভুগতে হবে। এই ভয় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। সেজন্য ফারেন্সিক সায়েন্স এত গুরুত্বপূর্ণ। শাস্তির নিশ্চয়তা আমাদের বিচার-ব্যবস্থাকে নতুন শক্তি প্রদান করে। আমি জিএফএসইউ-কে এজন্য প্রশংসা করি যে, তাঁরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অপরাধের তদন্ত এবং বিচার ব্যবস্থাকে মজবুত করতে আন্তর্জাতিক স্তরে দক্ষ মানবসম্পদের একটি বড় উৎস তৈরি করছে। শুধু ভারতই নয়, সারা পৃথিবীতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যেই আপনারা অনেক দেশের অপরাধ গবেষকদের প্রশিক্ষণ এবং পরামর্শ দিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উজ্জ্বল করেছেন।
আমাকে বলা হয়েছে যে, বিগত পাঁচ বছরে জিএফএসইউ ৬ হাজারেরও বেশি আধিকারিককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এর মধ্যে ২০টিরও বেশি দেশের ৭০০-রও বেশি পুলিশ আধিকারিক এখানে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং নিজ নিজ দেশে ফিরে তাঁদের জ্ঞান ও দক্ষতা ব্যবহার করে তাঁদের দেশ ও সমাজকে নিরাপদ রাখার কাজ করছেন। আপনাদের জন্য প্রত্যেক গুজরাটবাসী গর্বিত।
বন্ধুগণ, আধুনিক প্রযুক্তি যত এগিয়ে যাবে, আপনাদের ব্যবস্থাপনাও তেমনই আধুনিক হওয়া প্রয়োজন। ডিজিটাল প্রযুক্তি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ফরেন্সিক বিজ্ঞানকেও নতুন শক্তি যুগিয়েছে। আগে তো সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ফিজিক্যালি করতে হ’ত। কিন্তু আজ ডিজিটাল প্রযুক্তি এই কাজকে সহজ করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে নতুন নতুন সফটওয়্যার গড়ে উঠেছে। ফলে, ডিজিটাল টুলস্-এর ব্যবহার বৃদ্ধির সুযোগ আজ যতটা রয়েছে, ভবিষ্যতে এই লক্ষ্যে আরও বিস্তারিত ভাবনার অবকাশ রয়েছে। বন্ধুগণ, একদিকে ইন্টারনেট আমাদের সকলের জীবনকে সহজ করে তুলেছে আর অন্যদিকে এর মাধ্যমে নতুন নতুন সাইবার অপরাধ জন্ম নিচ্ছে। এই সাইবার অপরাধ দেশের নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলি, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলি এবং হাসপাতালগুলির অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশকেও এই সাইবার অপরাধ প্রভাবিত করতে পারে। সেজন্য এটি জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে শুধু ভরত নয়, পৃথিবীর সমস্ত দেশের জন্যই একটি বড় সমস্যা। আজ এই উপলক্ষে আমি সমস্ত সাইবার ও ডিজিটাল বিশেষজ্ঞদের অনুরোধ জানাই যে, আপনারা ডিজিটাল ইন্ডিয়া মিশনের সহযোগিতা করে দেশ ও সমাজকে সুরক্ষিত ও শক্তিশালী করতে এগিয়ে আসুন। সরকার দ্বারা সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের জন্য এ ধরণের অপরাধীদের মনে ভয় সৃষ্টি করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন। আমি জানি যে, আপনারা সাইবার অপরাধ গবেষণা কেন্দ্রগুলিকেও শক্তিশালী করেছেন কিন্তু পাশাপাশি আপনাদের এই অভিজ্ঞতা দেশে অন্যান্য ক্ষেত্রেও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, যা কম সময়ে এ ধরণের অপরাধীদের ধরতে তদন্ত সংস্থাগুলিকে সাহায্য করতে পারে।
বন্ধুগণ, পরিবর্তিত সময়ের দাবি মেনে শুধু অপরাধ নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও ফরেন্সিক সায়েন্সের গুরুত্ব বেড়েছে। যেমন – বিমা ক্ষেত্রে দাবি নিষ্পত্তি এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও যে কোনও দুর্ঘটনার পর অচেতন রোগীকে যথাযথ চিকিৎসা শুরু করতে চিকিৎসক ও সেবিকাদের জন্যও ফরেন্সিক সায়েন্স গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। সেজন্য ফরেন্সিক বিজ্ঞানের প্রত্যেক ছাত্রকে মানব বুদ্ধিমত্তা বিকাশের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়গুলি সম্পর্কে জানতে হবে। আপনাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো গুজরাট ও রাজস্থানের পগী সম্প্রদায় সম্পর্কে শুনেছেন। কচ্ছ এবং রাজস্থানের গুজরাট সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী এই পগীরা শতাব্দীর পর শতাব্দীকাল ধরে মানব বুদ্ধিমত্তার জন্য বিখ্যাত। যেমন তাঁরা উটের পায়ের ছাপ দেখে বলে দিতে পারেন যে, উটটি একা ছিল নাকি তার পিঠে কেউ বসেছিলেন, কতজন বসেছিলেন, উটটি কতটা ওজন বহন করছিল ইত্যাদি। ছোটবেলা থেকে তাঁদের পঞ্চ ইন্দ্রিয় সংবেদনশীল হয়ে উঠত পারম্পরিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। তাই আজও অনেক জটিল অপরাধ সমাধানের জন্য পুলিশ পগী সম্প্রদায়ের মানুষদের সাহায্য নেয়। আমি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশাসনকে বলতে চাই যে, বিশ্বে এরকম মানব বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের এরকম অনেক উদাহরণ রয়েছে। ফরেন্সিক সায়েন্স ইউনিভার্সিটি কি এগুলি নিয়ে কাজ করছে? আগে যখন ডিজিটাল প্রযুক্তি ছিল না, তখন অণ্বেষকরা হাতের ছাপ মিলিয়ে প্রমাণ সংগ্রহ করে নিজেদের মতামত জানাতেন। হস্তলিপি বিশারদরা তাঁদের মতামত দিতেন। সাইকো অ্যানালিস্টদের কাছ থেকেও অপরাধীর সাইকো প্রোফাইল নেওয়া হ’ত। অনেক ক্ষেত্রেই এরা সকলেই একত্রিত হয়ে অনুসন্ধান করতেন। আজ প্রযুক্তির মাধ্যমে সবকিছু অনেক সহজ হয়ে গেছে। এই পারম্পরিক জ্ঞান প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত হয়ে অপরাধ নির্ণয়ে দক্ষতা এনেছে, পুঙ্খানুপুঙ্খ করেছে। আমি মনে করি, আমাদের ফরেন্সিক বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার ক্ষেত্রেও পারম্পরিক জ্ঞান, মানব বুদ্ধিমত্তা এবং আধুনিক প্রযুক্তির মেল-বন্ধন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা উচিৎ।
বন্ধুগণ, অপরাধী ও অপরাধের পদ্ধতিগুলি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই প্রতিনিয়ত পরিবর্তমান অপরাধের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আপনাদের অপরাধ চিহ্নিতকরণের নতুন নতুন পদ্ধতি গড়ে তুলতে হবে, যাতে একজন অপরাধীও ছাড় না পায়। ডিএনএ প্রোফাইলিং আজ ফরেন্সিক তদন্তের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই প্রযুক্তির সাহায্যে এমনসব অপরাধের কিনারা করা গেছে, যা অন্যথা সম্ভব হতোই না। ফরেন্সিক তদন্তে ডিএনএ প্রযুক্তির গুরুত্ব অনুধাবন করে আমাদের সরকার ডিএনএ প্রযুক্তি (ব্যবহার ও প্রয়োগ) রেগুলেশন বিল, ২০১৮ মঞ্জুর করেছে। এই বিলের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করব যাতে সকল ডিএনএ পরীক্ষা বিশ্বস্ত থাকে এবং তথ্যাবলী নিরাপদ থাকে। সরকার সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে অবস্থিত এ ধরণের ডিএনএ বিশ্লেষণ গবেষণাগারগুলিকে শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চণ্ডীগড়ে অবস্থিত কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক বিজ্ঞান গবেষণাগারটিকে নির্ভয়া প্রকল্পের মাধ্যমে আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে। আমি নিশ্চিত যে, আগামীদিনে মহিলারা যেসব জঘন্য অপরাধের শিকার হন, সেগুলি নিরুপণ দ্রুত যথাযথভাবে সম্পন্ন করা যাবে।
বিগত দিনে আপনারা হয়তো খবরের কাগজে পড়েছেন যে, মধ্যপ্রদেশের মনসৌরে একটি আদালত মাত্র দু’মাসের মধ্যে শুনানি সম্পন্ন করে এক নাবালিকার ওপর ধর্ষণের অপরাধীদের ফাঁসির সাজা শুনিয়ে দিয়েছে। এর আগে মধ্যপ্রদেশেরই কাটনিতে আরেকটি আদালত মাত্র পাঁচদিন শুনানির পর এহেন অপরাধীদের ফাঁসির সাজা দিয়েছিল। রাজস্থানেও বেশ কয়েকটি আদালতে এ ধরণের দ্রুত সাজা প্রদান সম্ভব হয়েছে। ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের বিচারে আমাদের আদালতগুলির এই সংবেদনশীলতা এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ফরেন্সিক বিজ্ঞান ও আপনাদের মতো বিশেষজ্ঞদের সাহায্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারও কড়া আইন প্রণয়ন করেছে। পুলিশি তদন্তে ফরেন্সিক বিজ্ঞান আদালতগুলিকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা প্রদান করেছে। এভাবে বিচার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে অপরাধীদের বাঁচার সুযোগ না দেওয়ার জন্য আপনাদের যোগ্যতা দেশ ও সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
বন্ধুগণ, ফরেন্সিক বিজ্ঞানকে দেশের প্রত্যেক রাজ্যে অধিকতর শক্তিশালী ও বিস্তারিত করার জন্য সরকার লাগাতার কাজ করে চলেছে। দেশের সকল রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক করে তোলার প্রকল্পের স্বার্থেই সরকার জিএফএসইউ-কে আরও উন্নত করার প্রস্তাব মঞ্জুর করেছে। আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক স্তরে আরও নতুন নতুন ‘সেন্টার অফ এক্সেলেন্স’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কাজও শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পে ৩০০ কোটি টাকা খরচ করা হবে, যার ৬০ শতাংশ কেন্দ্রীয় সরকার বহন করবে।
আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, গুজরাট সরকারও এই প্রকল্পের জন্য নিজেদের পক্ষ থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে। এই অর্থের মাধ্যমে ফরেন্সিক বিজ্ঞান প্রযুক্তির আধুনিকীকরণ ও বিস্তারের কাজ করা হবে।
বন্ধুগণ, আপনারা পড়াশুনার জন্য অত্যন্ত সঠিক বিষয় বেছে নিয়েছেন। ফরেন্সিক বিজ্ঞানের কিছু সূত্র যা আপনারা ক্লাসে শিখেছেন, সেগুলি আপনাদের জীবনে অন্য ক্ষেত্রেও কাজে লাগবে। যেমন – আপনাদের শেখানো হয়েছে ‘ল অফ ইনডিভিজ্যুয়ালিটি’ এই সূত্র আপনাদের জীবনেও কাজে লাগবে। স্বামী বিবেকানন্দ বলতেন, প্রত্যেক আত্মাই হ’ল সম্ভাবনাময় পরমাত্মা। এর মানে আমরা প্রত্যেকেই নিজেদের মধ্যে অনেক শক্তি ধারণ করি, যা আমরা নিজেরাই জানি না। নিজের শক্তিকে চিনতে পারার জন্য প্রথম পদক্ষেপ হ’ল আত্মবিশ্বাসকে পোক্ত করা, নিজের কর্মক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস বৃদ্ধি। আত্মসম্ভাবনাকে বিশ্বাস করা। লোকার্ডের কাছ থেকে তোমরা শিক্ষা পেয়েছো যে, অপরাধ প্রবণতা এমন একটি জিনিস, যা অপরাধীকে কিছু না কিছু সূত্র ছেড়ে যেতে বাধ্য করে। আমি নিশ্চিত যে, আপনারা যে কোনও অপরাধেরই কিনারা করতে পারবেন। কিন্তু মনে রাখবেন, আপনাদের প্রত্যেককে সমাজে একটি মূল্য সংযোজন করতে হবে। আর এই মূল্য সংযোজনের সময়ে অন্যদের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতেও ভুলবেন না। নতুন নতুন ভাবনাচিন্তা এবং ধারণার জন্য আপনাদের মনকে সবসময় উন্মুক্ত রাখবেন। নিজেদের চিন্তাভাবনার মাধ্যমে বিশ্বকে সমৃদ্ধ করুন আর অন্যদের শ্রেষ্ঠ গুণগুলিকে গ্রহণ করুন। এই বৈচিত্র্য আপনাদের সমৃদ্ধতর ব্যক্তি হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। আর আমি যখন ‘ল অফ প্রোগ্রেসিভ চেঞ্জ’-এর কথা বলব, যেখানে প্রাকৃতিকভাবেই আপনারা যা যা শিখেছেন, তা নিয়ে ভাবার পাশাপাশি ভবিষ্যতের কথা ভাবুন। আমরা এমন বিশ্বে বসবাস করছি, যেখানে সবকিছু প্রকৃত অর্থেই দ্রুত বদলাচ্ছে। যে কোনও নতুন ভাবনা পুরনো হতে সময় লাগছে না। তেমনই আপনারাও সারা বিশ্বে পরিবর্তমান ধ্যান-ধারণার কেন্দ্রে রয়েছেন। আপনাদের শিক্ষা ও বুদ্ধিমত্তা আপনাদের গতানুগতিক চিন্তাভাবনার বাইরে গিয়ে অপরাধ ও তার কারণ খুঁজে বের করার প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এই দক্ষতা যাতে আপনাদের শুধু দ্রুততাই নয়, পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে তাল রেখে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনতেও সাহায্য করে, আর আপনারা এই পৃথিবীকে আরও বেশি বাসযোগ্য করে তুলতে পারেন। তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কৃতজ্ঞতার সঙ্গে আপনাদের ধন্যবাদ জানাবে। বন্ধুগণ, যুবসমাজের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনও প্রকল্প বা উদ্যোগ সফল হতে পারে না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, আপনারা যে জ্ঞান লাভ করেছেন তা আপনাদের দেশের সেবায় কার্যকরি ভূমিকা নিতে এবং পেশাগত সাফল্য অর্জন করতে সাহায্য করবে। আশা করি, আপনারা নিজেদের বুদ্ধিমত্তাকে নিয়মিত শান দিয়ে যাবেন। আমি সমস্ত কৃতি ছাত্রছাত্রীদের তাঁদের উজ্জ্বল ও স্পন্দিত ভবিষ্যত কামনা করি।
আর একটি বিষয় আমি এখানে লক্ষ্য করলাম যে, খুব কম ছেলেরাই পুরস্কার পাচ্ছেন, মেয়েরাই অধিকাংশ পুরস্কার নিয়ে যাচ্ছেন। দেখুন, এটাই পরিবর্তিত সময়ের লক্ষণ। আমি বিশেষ করে এই মেয়েদের এবং তাঁদের অভিভাবকদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। এই মেয়েদের বিশেষভাবে রাখী বন্ধনের শুভেচ্ছা জানাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ।