আপনাদের সবাইকে নববর্ষের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। কিরলোসকার গোষ্ঠীর জন্য তো আজ দ্বিগুণ উদযাপনের সুযোগ। রাষ্ট্রনির্মাণে তাঁদের সহযোগিতার ১০০ বছর পূর্ণ হচ্ছে, সেজন্য আমি কিরলোসকার গোষ্ঠীকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুগণ, কিরলোসকার গোষ্ঠীর সাফল্য ভারতীয় শিল্প এবং ভারতীয় শিল্পোদ্যোগীদের সাফল্যের প্রতীক। সিন্ধু সভ্যতা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত ভারতীয়দের শিল্পোদ্যোগের আত্মা দেশের উন্নয়নকে নতুন প্রাণশক্তি, নতুন গতি দিয়েছে। যখন দেশ দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ ছিল, তখন শ্রী লক্ষ্মণরাও কিরলোসকারজী এবং এরকম হাতে গোণা কয়েকজন শিল্পোদ্যোগী ভারতাত্মার এই প্রাণশক্তিকে জীবিত রেখেছে। কোনও পরিস্থিতিতেই একে দুর্বল হতে দেয়নি।
এই ভাবনাই দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে সহায়ক হয়েছে। আজকের এই দিন লক্ষ্মণরাও কিরলোসকারজীর ভাবনা ও স্বপ্নকে উদযাপন করার দিন। পাশাপাশি, শিল্পোদ্যোগীদের জন্য উদ্ভাবন ও আত্মত্যাগের প্রেরণা গ্রহণ করার একটি অমূল্য সুযোগ। আজকের দিনে লক্ষ্মণরাওজীর জীবনীগ্রন্থ প্রকাশের সুযোগকে আমি একটি সৌভাগ্যের বিষয় বলে মনে করি। বইটির সুন্দর নাম রাখা হয়েছে ‘যান্ত্রিকী যাত্রা’। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, তাঁর যাত্রাপথের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হ’ল, ভারতের সাধারণ যুবসম্প্রদায়কে উদ্ভাবন ও উদ্যোগের প্রাণশক্তিতে উজ্জীবিত করা।
বন্ধুগণ, কিছু করে দেখানোর ভাবনা, ঝুঁকি নেওয়া, নতুন নতুন ক্ষেত্রে নিজের কর্মধারাকে সম্প্রসারিত করার ভাবনা আজও প্রত্যেক ভারতীয় শিল্পোদ্যোগীর আসল পরিচয়। ভারতের শিল্পোদ্যোগীরা অধীর হয়ে থাকেন দেশের উন্নয়ন এবং নিজেদের ক্ষমতা ও সাফল্য বিস্তারের জন্য। আপনারা হয়তো ভাবছেন, আজ যখন বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে আমাদের অর্থনীতির গতি নিয়ে নানারকম খবর শোনা যাচ্ছে, তখন আমি এতো প্রত্যয় নিয়ে কিভাবে কথা বলছি!
বন্ধুগণ, ভারতীয় শিল্পোদ্যোগের প্রতি আমার বিশ্বাস, আপনাদের সকলের প্রতি আমার আস্থা থেকে একথা বলছি। পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য প্রত্যেক সমস্যাকে জয় করার ক্ষেত্রে যে ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন, তা ভারতীয় শিল্প জগতের শিরা ও ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে। আর সেজন্য আজ যখন আমরা একটি নতুন বছরে প্রবেশ করছি, নতুন দশকে প্রবেশ করছি, তখন আমি এটা বলতে বিন্দুমাত্র সঙ্কোচ করি না যে, এই দশক ভারতীয় শিল্পোদ্যোগীদের দশক হবে। ভারতের নবীন শিল্পোদ্যোগীদের দশক হবে।
বন্ধুগণ, এই দশকে আমাদের দেশকে ৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার অর্থনীতির দেশ হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্য আসলে একটি পর্যায় মাত্র। আমাদের স্বপ্ন আরও বড়, আমাদের আশা অপার, আমাদের লক্ষ্য আরও সুদূরপ্রসারী। আর সেজন্য ২০১৪ সালের পর থেকে দেশে নিরন্তর চেষ্টা চলছে, যাতে ভারতীয় শিল্প জগতের স্বপ্ন দেখা এবং তার বিস্তার কোনও বাধার সম্মুখীন না হয়। এই সময়ের মধ্যে সমস্ত সিদ্ধান্ত, সমস্ত পদক্ষেপের পেছনে একটাই ভাবনা ছিল, ভারতে কাজ করতে থাকা প্রত্যেক শিল্পোদ্যোগীর সামনে থেকে সবধরণের প্রতিবন্ধকতা দূর করে তাদের জন্য একটি উন্নত বাণিজ্যিক আবহ গড়ে তোলা।
বন্ধুগণ, দেশের জনগণের সঠিক সামর্থ্য তখনই যথাযথভাবে প্রকাশিত হয়, যখন সরকার দেশ ও দেশবাসী শিল্প জগতের সামনে বাধা হয়ে ওঠে না, তাদের সাথী হয়ে পাশে থাকে। বিগত বছরগুলিতে আমাদের দেশ এই পথেই এগিয়ে চলেছে। বিগত বছরগুলিতে দেশে সঠিক উদ্দেশ্যে সংস্কার, সংহতির সঙ্গে সম্পাদন, তীব্রতার সঙ্গে রূপান্তরণ, প্রক্রিয়াকরণ সঞ্চালন এবং পেশাগত সুশাসন প্রদানের লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শিল্প জগতের সমস্যাগুলিকে বোঝার চেষ্টা করা এবং সেগুলি দূরীকরণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বন্ধুগণ, আজকাল দেউলিয়াপনা এবং ব্যাঙ্করাপ্টসি কোড নিয়ে বা আইবিসি নিয়ে এত আলোচনা হয়, কিন্তু এর মাধ্যমে এত অর্থ ফেরৎ এসেছে কল্পনা করতে পারবেন না। আপনারা খুব ভালোভাবেই জানেন যে, কিছু ক্ষেত্রে লাভ-লোকসান থেকে বেরিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। যেসব কোম্পানি ব্যবসায় সাফল্য পাচ্ছে না, তার পেছনে কোনও ষড়যন্ত্র, ভুল ভাবনা বা লোভের তাড়না থাকাটা জরুরি নয়। দেশে এ ধরণের শিল্পোদ্যোগীদের জন্য একটা পথ খুঁজে বের করার প্রয়োজন ছিল; আইবিসি তার ভিত্তি রচনা করেছে। আজ কিংবা কাল এ নিয়ে অবশ্যই গবেষণা হবে আর গবেষকরা নিশ্চিতভাবেই জানাবেন যে, আইবিসি কত ভারতীয় শিল্পোদ্যোগীদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করেছে, তাঁদের সর্বস্বান্ত হওয়া থেকে বাঁচিয়েছে।
বন্ধুগণ, ভারতের কর ব্যবস্থায় আগে কি ধরণের ত্রুটি ছিল, সেগুলি আপনারা ভালোভাবেই জানেন। ইন্সপেক্টর রাজ, কর সংশ্লিষ্ট নীতিগুলিতে ভ্রম, আর ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যে নানা করের জাল ভারতীয় শিল্প জগতকে গতিশীল হতে নানা রকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতো। দেশ এখন এই প্রতিবন্ধকতাগুলি থেকে মুক্ত হয়েছে। আমাদের কর ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ ও দক্ষ করতে জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করতে করদাতা এবং কর বিভাগের মধ্যে ‘হিউম্যান ইন্টারফেস’ সমাপ্ত করে একটি নতুন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। আজ দেশে কর্পোরেট ট্যাক্স এবং কর্পোরেট ট্যাক্সের দর যত কম, তা আগে কখনও ছিল না।
বন্ধুগণ, সংশ্লিষ্ট মহল থেকে জিএসটি এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির সংস্কারের দাবি দীর্ঘকাল ধরেই শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু এগুলি এতদিনে বাস্তবায়িত হয়েছে। কারণ, আমরা ভারতীয় শিল্প জগতের সামনে থেকে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে চেয়েছি। শিল্পকে সম্প্রসারিত করার সবরকম সুযোগ দিতে চেয়েছি।
বন্ধুগণ, অনেকেই নিজেদের ভাবমূর্তি গঠনের জন্য প্রাণশক্তি ব্যয় করছেন, যেন ভারত সরকার শিল্পোদ্যোগীদের পেছনে বেত হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বেইমান এবং দুর্নীতিগ্রস্থদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়াকে ভারতীয় শিল্পোদ্যোগীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করা আমার মতে একটি জঘন্য অপপ্রচার। ভারতীয় শিল্প যাতে একটি স্বচ্ছ পরিবেশে ভয় বাধাহীনভাবে এগিয়ে যেতে পারে, দেশের জন্য সম্পদ সৃষ্টি করে, নিজেদের জন্যও সম্পদ সৃষ্টি করতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা সমস্ত রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ভারতীয় শিল্প জগতকে আইনের জাল থেকে মুক্ত করার প্রচেষ্টা আমরা শুরু থেকে করে আসছি। সেজন্য দেশে দেড় হাজারেরও বেশি পুরনো আইন বাতিল করে দিয়েছি। কোম্পানি আইনের সঙ্গে যুক্ত ছোট ছোট কারিগরি ভুলের জন্য শিল্পোদ্যোগীদের কিভাবে ক্রিমিনাল প্রসিকিউশন হ’ত, সে সম্পর্কে আমি বিস্তারিত বলতে চাই না। এখন এ ধরণের অনেক ভুলকে অপরাধহীন পরিগণিত করা হয়েছে। যে শ্রম আদালতে এখন কাজ চলছে, তাও শ্রম সম্মতিকে সরল করার প্রক্রিয়া। এর দ্বারা ভারতীয় শিল্প এবং কর্মী ও শ্রমিকরা উভয়েই লাভবান হচ্ছেন।
বন্ধুগণ, ভারতীয় অর্থ-ব্যবস্থাকে মজবুত করার জন্য দেশে তৎকালীন উপায়গুলির পাশাপাশি, সুদূরপ্রসারী সমাধান নিয়েও একসঙ্গে কাজ করা হচ্ছে। দেশে এমন সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, যার মাধ্যমে শুধু বর্তমান নয়, আগামী প্রজন্মের মানুষও লাভবান হবেন।
বন্ধুগণ, গত বছর দেশে নিষ্ঠাভরে কাজ করা, সম্পূর্ণ সততা ও স্বচ্ছতা নিয়ে কাজ করার পরিবেশ আজ দেশের সর্বত্র দেখা যায়। এই পরিবেশ দেশকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নির্ধারণে সাহস যুগিয়েছে। ভারতে একবিংশ শতাব্দীর পরিকাঠামোর জন্য ১০০ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ আনতে, জনগণের ‘ইজ অফ লিভিং’ সুগম করতে প্রত্যেক স্তরে সুপরিকল্পিতভাবে এগোনো, দেশের মানবসম্পদে বিনিয়োগ করা – প্রত্যেক ক্ষেত্রে কাজ চলছে এবং আগের তুলনায় অনেক দ্রুতগতিতে কাজ চলছে।
বন্ধুগণ, আমি যে তীব্রতার সঙ্গে রূপান্তরণ নিয়ে বলবো, তা পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট। আমাদের তৃণমূলস্তরে তীব্রগতিতে কাজ করারই সুফল হ’ল বিগত পাঁচ বছরে বিশ্বে ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’ – এর র্যাঙ্ক হিসাবে ৭৯ ধাপ উন্নতি করেছি। উদ্ভাবনকে উৎসাহ দেয়ার জন্য দেশে যে তীব্রগতিতে নীতি প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তারই প্রভাবে মাত্র পাঁচ বছরে বিশ্ব উদ্ভাবন সূচকে ২০ ধাপ উন্নতি করেছি। লাগাতার অনেক বছর ধরে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে বিশ্বের সর্বোচ্চ ১০টি দেশের মধ্যে থাকা ভারতের জন্য একটি বড় সাফল্য।
বন্ধুগণ, বিগত কয়েক বছরে দেশে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে, সেটি হ’ল – নবীন শিল্পোদ্যোগীদের সংখ্যা বৃদ্ধি। আজ দেশে নবীন শিল্পপতিরা নতুন নতুন ভাবনা এবং বাণিজ্যিক মডেল নিয়ে সামনে এগিয়ে আসছেন। এখন সেই সময় এসে গেছে, আগে শিল্পের কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন পণ্য উৎপাদন, খনি এবং ভারী শিল্পের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হ’ত। কিন্তু এখন আজকের যুবসম্প্রদায় নতুন নতুন ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন। এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হ’ল দেশের ছোট ছোট শহরগুলি থেকে উঠে এসে নবীন প্রজন্মের মানুষেরা সাফল্য অর্জন করছেন।
বন্ধুগণ, একটা সময় ছিল, যখন বলা হ’ত – বম্বে ক্লাব দেশের শিল্পপতিদের বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু আজ এরকম কোনও ক্লাব যদি সত্যি থেকে থাকে, তাকে ভারত ক্লাব বলা উচিৎ, যাতে ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে পুরনো দিগগ্জ এবং নবীন শিল্পোদ্যোগী প্রত্যেকেরই প্রতিনিধিত্ব থাকবে। আমি মনে করি, ভারতের পরিবর্তমান বাণিজ্য সংস্কৃতির বিস্তার ও তার সামর্থ্য আমার বক্তব্যের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সেজন্য ভারতের সামর্থ্যকে, ভারতীয় শিল্পপতিদের সামর্থ্যকে কেউ যদি খাটো করে দেখেন, তা হলে তাঁরা ভুল করছেন। নববর্ষের শুরুতে আমি আজ এই মঞ্চ থেকে ভারতীয় শিল্প জগৎকে আরেকবার বলবো যে, নিরাশাকে আপনাদের ধারেকাছে আসতে দেবেন না। নতুন প্রাণশক্তি নিয়ে এগিয়ে যান। আপনাদের বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য দেশের যে প্রান্তেই যান না কেন, ভারত সরকার আপনাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলবে। হ্যাঁ, আপনাদের পথ কি হবে, কিরকম হওয়া উচিৎ, সে বিষয়ে লক্ষ্মণরাওজীর জীবন থেকে প্রেরণা নিয়েই আর দু-চার কথা বলতে চাই।
বন্ধুগণ, লক্ষ্মণরাওজী দেশের সেই প্রেরণাদায়ী ব্যক্তিদের অন্যতম, যিনি ভারতের প্রয়োজন অনুসারে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং নানাবিধ যন্ত্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। দেশের প্রয়োজন অনুসারে, যন্ত্র নির্মাণের এই ভাবনা ভারতের উন্নয়নের গতি এবং ভারতীয় শিল্প জগতের উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করেছে। আমাদের জিরো ডিফেক্ট জিরো এফেক্টের মন্ত্র নিয়ে বিশ্ব মানের পণ্য উৎপাদন করতে হবে। তবেই আমরা রপ্তানি বৃদ্ধি করতে পারবো, বিশ্ব বাজারে নিজেদের জয়ধ্বজা ওড়াতে পারবো। আমাদের ‘ভারতীয় সমাধান, বিশ্ব প্রয়োগ’ নিয়ে ভাবতে হবে। সেই অনুসারে নিজেদের প্রকল্প গড়ে তুলতে হবে। আমি এখানে দুটি প্রকল্প নিয়ে কথা বলতে চাই। একটি হ’ল – অর্থনৈতিক লেনদেনবিষয়ক ইউপিআই প্রকল্প এবং দ্বিতীয়টি হ’ল – সারা দেশে এলইডি বাল্ব পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্যে উজালা যোজনা।
বন্ধুগণ, ভারত দ্রুত ব্যাঙ্ক লেনদেন চায়। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার দেখতে চায়। মাত্র তিন বছরের মধ্যে ইউপিআই – এর ক্রমবর্ধমান নেটওয়ার্ক জনগণের এই ইচ্ছাকে পূরণ করেছে। আজ যে কোনও দেশবাসী সপ্তাহের ৭ দিনই ২৪ ঘন্টার যে কোনও সময়ে সহজে অনলাইন লেনদেন করতে পারে। আজ ভীম অ্যাপ অনেক বড় ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে।
বন্ধুগণ, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে, ইউপিআই – এর মাধ্যমে প্রায় ৯ লক্ষ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। চলতি অর্থবর্ষের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এর মাধ্যমে ১৫ লক্ষ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। আপনারা আন্দাজ করতে পারেন, দেশ কত দ্রুতগতিতে ডিজিটাল লেনদেনকে আপন করে নিয়েছে।
বন্ধুগণ, দেশে এ ধরণের সমাধানের প্রয়োজন ছিল, যাতে ন্যূনতম বিদ্যুৎ খরচে অধিক আলো আর মূল্য সাশ্রয় হয়। এই প্রয়োজনীয়তা থেকেই উজালা যোজনা সৃষ্টি হয়েছে। এলইডি উৎপাদনকে উৎসাহ দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় নীতি পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলে, বাল্বের দাম কমেছে। একবার জনগণ যখন এর উপযোগিতা অনুভব করেছেন, তখন চাহিদাও বেড়েছে। গতকালই উজালা যোজনার পাঁচ বছর পূর্ণ হ’ল। এটা আমাদের প্রত্যেকের জন্য আনন্দের কথা যে, ইতিমধ্যেই সারা দেশে ৩৬ কোটিরও বেশি এলইডি বাল্ব বিতরণ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশে প্রথাগত রাস্তার আলো ব্যবস্থাকে এলইডি-ভিত্তিক করে তোলার জন্য পাঁচ বছর ধরে নিরন্তর প্রচেষ্টা চলছে। এর মাধ্যমে ১ কোটিরও বেশি এলইডি রাস্তার আলো বসানো হয়েছে। এই দুই প্রচেষ্টার মাধ্যমেই প্রতি বছর প্রায় ৫ হাজার ৫০০ কোটি কিলোওয়াট প্রতি ঘন্টা বিদ্যুৎ সাশ্রয় হচ্ছে। এর মধ্যে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা মূল্যের বিদ্যুৎ সাশ্রয় হচ্ছে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ হ্রাস পেয়েছে। এটা আমাদের সকলের জন্য আনন্দের বিষয় যে, ভারতের এই উদ্ভাবন – ইউপিআই হোক কিংবা উজালা বিশ্বের অনেক দেশে প্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে।
বন্ধুগণ, এমনই সাফল্যের গল্প আমাদের মেক ইন ইন্ডিয়া অভিযান আমাদের শিল্প জগতের শক্তি। আমি ভারতীয় শিল্প জগৎ থেকে প্রত্যেক ক্ষেত্রে এমনই সাফল্যের কাহিনী শুনতে চাই। জল জীবন মিশন থেকে শুরু করে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, ইলেক্ট্রিক মোবাইলিটি, বিপর্যয় মোকাবিলা, প্রতিরক্ষার মতো প্রত্যেক ক্ষেত্রে আপনাদের জন্য অনেক অনেক সাফল্যের কাহিনী অপেক্ষা করছে। সরকার সমস্ত রকমভাবে আপনাদের সঙ্গে রয়েছে, আপনাদের প্রতিটি প্রয়োজন মেটানোর জন্য রয়েছে।
আপনারা এই আবহকে কাজে লাগান। নিরন্তর উদ্ভাবনের পথে যান, বিনিয়োগ করতে থাকুন, দেশ সেবায় নিজেদের অবদান রাখুন – এই কামনা নিয়ে আমার বক্তব্য সম্পূর্ণ করছি। আরেকবার কিরলোসকার গোষ্ঠীকে, কিরলোসকার পরিবারকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। একটি অভাবনীয় শতক উদযাপনের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
ধন্যবাদ।