দেশের সম্পদ ও সম্মান রক্ষা,
নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত সিআইএসএফ – এর বন্ধুরা,
এখানে উপস্থিত সমস্ত বীর পরিবারগুলির সদস্য,
ভদ্র মহিলা ও ভদ্র মহোদয়গণ,
সুবর্ণ জয়ন্তীর এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছনোর জন্য আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। একটি সংগঠন হিসাবে আপনারা যে ৫০ বছর সম্পূর্ণ করেছেন, সেটি একটি প্রশংসনীয় ব্যাপার। এই দীর্ঘ ৫০ বছরে যে মহানুভবরা এই সংগঠনের দায়িত্ব পালন করেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন, মানবসম্পদের সঠিক সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানকে যাঁরা নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন – তাঁদের সবাইকে প্রণাম জানাই। দেশের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষিত নিরাপত্তা বাহিনীকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য আপনাদের প্রত্যেককেই অভিনন্দন জানাই।
ভাই ও বোনেরা, প্রতিবেশী শত্রুরা আমাদের সঙ্গে সম্মুখসমরে অবতীর্ণ হওয়ার ক্ষমতা না থাকার ফলে অন্য ধরণের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকায় আপনাদের এই অভিজ্ঞতা আরও গুরুত্বপূর্ণ। সন্ত্রাসবাদের আশ্রয় নিয়ে তাঁরা আমাদের নানাভাবে ক্ষতি করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাই, দেশের সম্পদ রক্ষা করার জন্য আপনাদের সদা সতর্ক থাকতে হয় এবং বিভিন্ন কঠিন সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়।
একটু আগে যখন এখানে প্যারেড চলছিল, তখন আমরা সেই প্রাণশক্তি ও সংকল্প অনুভব করছিলাম, যা বৈভবশালী ভারত নির্মাণের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এই অসাধারণ প্রদর্শনের জন্য আমি প্যারেড কমান্ডার এবং প্যারেডে যোগদানকারী সকল জওয়ান ও আধিকারিকদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
আজ এখানে অনেক সাথীদের উৎকৃষ্ট দেশ সেবার জন্য মেডেল দেওয়া হ’ল। সেজন্য তাঁদের আমি অভিনন্দন জানাই। এছাড়া, যাঁরা সাধারণতন্ত্র দিবসে ঘোষিত পুলিশ পদক এবং জীবন রক্ষক পদক পেয়েছেন, তাঁদেরকেও আমি অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুগণ,
সিআইএসএফ – এর সঙ্গে যুক্ত সমস্ত মানুষ দেশের সম্পদ নিরাপদ রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
নতুন ভারতের নতুন ও আধুনিক ব্যবস্থাকে নিরাপদ রাখার জন্য দেশের আশা ও আকাঙ্খাকে বাস্তবায়িত করতে আপনারা নিরন্তর কাজ করে চলেছেন।
আমরা জানি যে, অনেক নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। তার সাজসজ্জা, কর্মপদ্ধতি ও গঠন প্রণালী আমরা ব্রিটিশ শাসকদের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। সময়ানুকূল বেশ কিছু পরিবর্তনও এসেছে। কিন্তু খুব কম সংস্থাই রয়েছে, যেগুলি স্বাধীনতার পর দেশের প্রয়োজনের কথা ভেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এরকম ব্যতিক্রম সংস্থার মধ্যে সিআইএসএফ অন্যতম, যা স্বাধীন ভারতের সৃষ্টি। স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য জন্ম নেওয়া সংগঠনগুলির মধ্যে সিআইএসএফ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাহিনী। এর জন্ম, লালন-পালন, এর বিকাশ ও বিস্তারের ক্ষেত্রে এর সুযোগ্য নেতৃত্বের ‘প্রোগ্রেসিভ আনফোল্ডমেন্ট’ অত্যন্ত কার্যকরি ভূমিকা পালন করেছে। আর এই সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষ এই বাহিনীর জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়।
আমরা যাঁরা শাসন ক্ষমতায় রয়েছি, ক্যাবিনেটে বসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রতিটি বিষয়কে মঞ্জুর করি – আপনাদের দায়িত্বের ক্ষেত্রে এরচেয়ে অনেক বেশি নিয়মানুবর্তিতা ও সতর্কতা পালন করতে হয়। বিগত ৫০ বছরে দেশের অসংখ্য মানুষের প্রয়োজনকে মাথায় রেখে এ ধরণের সংস্থার কর্মপদ্ধতি বিকশিত ও বিস্তারিত হয় বলেই এ ধরণের সংগঠন দেশবাসীর হৃদয়ে একটি বিশ্বাসের সম্বল হয়ে ওঠে। সেজন্য আমি আপনাদের যতই ধন্যবাদ জানাই, তা কম হবে।
রাজেশ রঞ্জনজী বলছিলেন যে, আমাদের জন্য আশ্চর্যের ও আনন্দের বিষয় হ’ল – স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী আমাদের অনুষ্ঠানে এসেছেন। কিন্তু আমি বলি, এখানে না এলে আমি অনেক কিছুই পেতাম না।
৫০ বছরের তপস্যা কম নয়। বছরে ৩৬৫ দিন চোখ খোলা রেখে মস্তিষ্ককে তটস্থ রেখে, হাত-পা ও শরীরকে প্রতিদিন লাগাতার ৮ – ৯ ঘন্টা প্রস্তুত রেখে শত শত দুর্ঘটনা ও ভয়ানক বিপর্যয় থেকে দেশকে আপনারা বাঁচাতে থাকেন। দু – একটি এমন ঘটনা ঘটে যেতে পারে, যা সারা বছরের তপস্যায় জল ঢেলে দেওয়ার মতো। সেজন্য আপনারা আরও সতর্ক থাকেন। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আমিও সর্বদা নিরাপত্তা বলয়ে বেষ্টিত থাকি। বিশেষ ব্যক্তি বা সংস্থাকে এরকম নিরাপত্তা বলয়ে ঘিরে রাখাও সহজ কথা নয়। আমাকে ক্ষমা করবেন, কোনও ব্যক্তিকে নিরাপত্তা বলয়ে বেষ্টিত রাখা এতটা কঠিন নয়, যতটা কঠিন একটি প্রতিষ্ঠানকে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বলয়ে বেষ্টিত রাখা, যেখানে ৮ লক্ষ মানুষ যাতায়াত করে, প্রতিটি চেহারা নতুন প্রত্যেকের আচার-ব্যবহার আলাদা, তাঁদের থেকে একটি প্রতিষ্ঠানকে নিরাপত্তা দেওয়া যে কোনও বড় ভিআইপি-কে নিরাপত্তা দেওয়ার থেকে লক্ষ গুণ কঠিন কাজ। যা আপনারা করেন এবং দেশের প্রতিটি উল্লেখযোগ্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে নিরাপত্তা বলয়ে ঘিরে রাখেন। আপনারা শুধুই কোনও প্রতিষ্ঠানের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকেন না।
আপনারা শুধুই ভারতের উন্নয়ন যাত্রাকে নিরাপদ রাখেন না, আপনারা ভারতের উন্নয়ন যাত্রাকে একটি বিশ্বাসের অনুভবে মাত্রান্বিত করে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হ’ল আপনারা অনেকেই আমাদের মতো অনেক রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে তাঁরা নিজেদের শাহেনশাহ্ হিসাবে, বড় ভিআইপি বলে মনে করেন। বিমানবন্দরে আপনারা যদি তাঁদের কোনও জিজ্ঞাসাবাদ করেন, তা হলে তাঁদের পারদ চড়ে যায়, রেগে যান, অপমানিত বোধ করেন, ‘দেখে নেব’ বলে শাসান। আপনারা হাত জোড় করে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, সাহেব এটা আমার ডিউটি। কিন্তু তাঁরা কোনও মতেই বুঝবেন না – এটাই আমাদের দেশের ভিআইপি সংস্কৃতি।
আমি আপনাদের একটি অভিজ্ঞতার কথা শোনাই। আমি যখন দলের কাজ করার জন্য সারা দেশ ঘুরে বেড়াতাম। তখন একজন অগ্রজ নেতাও আমার সঙ্গে ছিলেন। আমাদের দেশে এমন কিছু বিমানবন্দর রয়েছে, যেখানে নিরাপত্তার অভাবে ডবল চেকিং হয়। যেমন – শ্রীনগর, আগে গুয়াহাটিতেও এমন হ’ত – এখন কী হয় তা আমি জানি না। তো আমার সঙ্গে যে বড় নেতা ছিলেন, তাঁকে বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে থাকা রক্ষী থামিয়ে চেক করতে শুরু করেন। তখন নেতা রেগে যান। ভেতরে সিটে গিয়ে যখন তিনি বসেন, তখন আমার সঙ্গে পর্যন্ত তিনি কথা বলছিলেন না। পরবর্তী ক্ষেত্রে আমি তাঁকে বললাম যে, আপনি আগে যাবেন না, আপনি আমার পেছন পেছন আসুন, আমি আগে চেকিং করাবো।
আমি রক্ষীর সামনে গিয়ে হাত তুলে বললাম, নিন ভাই আরতি সেরে নিন! রক্ষী বললেন, সাহেব আমি আপনাকে চিনি। আমি বলি, তাতে কী হয়েছে, আপনি আপনার কর্তব্য পালন করুন। না হলে আমি যাব না। আপনারা মেটাল ডিটেক্টরকে যেভাবে ঘুরিয়ে চেক করেন – তাকে আমি আরতি বলি। তারপর আমি নেতাকে বলি, আসুন, এটা ভাববেন না যে, আপনার চেকিং হচ্ছে বরং ভাবুন আপনার আরতি হচ্ছে। এজন্য গর্ববোধ করুন। আমি জানি যে, এই ভিআইপি সংস্কৃতি কখনও কখনও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সঙ্কট হয়ে ওঠে। কিন্তু আমি নিজে গোড়া থেকে নিয়মানুবর্তী পালন করি বলে, আমাকে নিয়ে কারও সমস্যা হয় না। এখন আপনাদের বাহিনীতে দেড় লক্ষ রক্ষী রয়েছেন। এই সংখ্যা বৃদ্ধি করে ১৫ লক্ষ করে দিলেও যতক্ষণ পর্যন্ত দেশের নাগরিকরা নিয়মানুবর্তী না হবেন, আপনাদের কাজ করতে সমস্যা হবে। সেজন্য এই সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষে আমরা কিভাবে নাগরিকদের আরও প্রশিক্ষিত করতে পারি, এত বড় নিরাপত্তা ব্যবস্থার গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত করতে পারি, বোঝাতে পারি – তার প্রয়োজন রয়েছে। সেজন্য আপনাদের অসাধারণ প্যারেড দেখতে দেখতে আমার মনে একটি ভাবনার উদয় হয়েছিল, যা আজ আপনাদের কাছ বলব বলে ভেবেছি। আমার মনে হয়েছে যে, কোনও বিমানবন্দরে এবং মেট্রো স্টেশনে আমরা ডিজিটাল মিউজিয়াম গড়ে তুলব, সেই মিউজিয়ামের পর্দায় লাগাতার প্রদর্শিত হবে কিভাবে সিআইএসএফ – এর জন্ম হয়েছে, এর বিকাশ ও বিস্তার কিভাবে হয়েছে। কী ধরণের পরিষেবা প্রদান করা হয়, জনগণের কাছ থেকে এই রক্ষীরা কী ধরণের সহযোগিতা চান, বিমানবন্দর কিংবা মেট্রো স্টেশনে যাতায়াতকারী যাত্রীরা এগুলি দেখলে তাঁদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। তাঁরা অনুভব করবেন যে, ২৪ ঘন্টা কর্মরত মানুষদের সম্মান জানানো উচিৎ এবং তাঁদের জন্য গর্ব করা উচিৎ। এই সচেতনতা অত্যন্ত প্রয়োজন, তবেই আমরা নাগরিকদের নিয়মানুবর্তী হতে প্রশিক্ষণের পথে নিয়ে যেতে পারব। এক্ষেত্রে আমি আপনাদের পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছি।
সিআইএসএফ – এ অন্যান্য কেন্দ্রীয় সুরক্ষা বাহিনীর তুলনায় মহিলাদের সংখ্যা অনেক বেশি। এর মাধ্যমে দেশের শক্তি নিশ্চিতভাবেই নতুন করে তুলে ধরা হচ্ছে। আমি সিআইএসএফ – এ কর্মরত মহিলাদের তাঁদের সাফল্যের জন্য অভিনন্দন জানাই, তাঁদের বাবা-মা’কে অভিনন্দন জানাই, বিশেষ করে, তাঁদের মা’কে যিনি কন্যাকে নিরাপত্তা রক্ষীর ইউনিফর্ম পরিধান করে দেশের উন্নয়নযাত্রাকে নিরাপদ করার দায়িত্ব নিতে প্রেরণা যুগিয়েছেন। এই কন্যাদের লক্ষ লক্ষ অভিনন্দন। বন্ধুগণ, নিরাপত্তা এবং সেবা ভাব নিয়ে আপনারা যেভাবে কাজ করছেন – তা দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নতুন ভারতের জন্য যে আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে,
বন্দর গড়ে উঠছে, বিমানবন্দর গড়ে উঠছে, মেট্রো বিস্তার লাভ করছে, যত বড় বড় শিল্পোদ্যোগ ও ব্যবসা চালু হচ্ছে – সেগুলির নিরাপত্তার দায়িত্ব আপনাদের ওপর রয়েছে। দেড় লক্ষেরও বেশি কর্মীর শক্তিতে সমৃদ্ধ এই বাহিনী ভারতে পা রাখা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের নিরাপদ অনুভব করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
বন্ধুগণ, বিমানবন্দর এবং মেট্রোগুলিতে আজ আপনাদের কারণেই নিরাপদ, আপনাদের সমর্পণ, সতর্কতা এবং আপনাদের ওপর জনগণের বিশ্বাসই এই নিরাপত্তার ভিত্তি। এখন তো দেশে দ্রুতগতিতে বিমানবন্দর এবং মেট্রো পরিষেবা বিস্তার লাভ করছে। উভয় ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বে এ ধরণের পরিষেবার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দেশে পরিণত হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছি।
বন্ধুগণ, আমার অনেকবার মেট্রোতে যাতায়াত করার সৌভাগ্য হয়েছে। আমি দেখেছি, আপনারা কতটয়া পরিশ্রম করেন, কিভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা প্রত্যেক যাত্রীর দিকে নজর রাখেন, তাঁদের জিনিসপত্রের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখেন, আপনাদের পরিশ্রমের ফলেই সাধারণ মানুষের মেট্রো রেল ও বিমান যাত্রা সুখময় হয়। কিন্তু অনেকেই ভাবেন, আপনাদের কাজ শুধু এতটুকুই! শুধু তল্লাশী নেওয়া
বন্ধুগণ, দেশবাসীর এটা জানা প্রয়োজন যে, সিআইএসএফ – এর প্রত্যেক নিরাপত্তা কর্মী শুধু তল্লাশীর কাজই করেন না, মানবিক সংবেদনশীলতার সঙ্গে নিরাপত্তার প্রতিটি পর্যায় সুচারু রূপে পালন করেন।
বন্ধুগণ, বিপর্যয় মোকাবিলায় আপনাদের তৎপরতা সর্বদাই প্রশংসনীয়। গত বছর কেরলে ভয়ানক বন্যায় আপনাদের মধ্যে অনেকেই দিন-রাত এক করে মানুষের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার কাজ করেছেন, শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও আপনারা বিপর্যয় মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। নেপালে প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পের পর আপনাদের অবদান আন্তর্জাতিক স্তরে উচ্চ প্রশংসিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, সেই ভয়ানক বিপর্যয়ের ফলে যেসব পরিবার তাঁদের পরিজনদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন, তাঁদেরকে আবার পরিবারে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনারা সম্পূর্ণ সংবেদনশীলতা নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। একইভাবে, মেয়েদের নিরাপত্তা রক্ষায় আপনাদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
বন্ধুগণ, আজকের এই সমারোহে আমরা যখন একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি, আমাদের সেই সহযোগীদের স্মরণ করতে হবে, যাঁরা দেশের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে আত্মবলিদান দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন। সন্ত্রাস ও হিংসাকে উৎসাহ যোগানো, অপশক্তিগুলির হাত থেকে দেশ ও আমাদের অমূল্য ঐতিহ্যকে, আমাদের সম্পদ রক্ষার জন্য যাঁরা জীবন উৎসর্গ করেছেন, সিআইএসএফ, সিআরপিএফ কিংবা অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনীর সৈনিকরা, আপনাদের এই আত্মবলিদানের ফলেই আজ আমরা নতুন ভারতের স্বপ্ন দেখতে পারছি।
এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনীর ৪ হাজারেরও বেশি মানুষ ছাড়াও পুলিশের ৩৫ হাজারেরও বেশি কর্মী আত্মোৎসর্গ করেছেন। আমি সেই শহীদদের শ্রদ্ধা জানাই।
কিন্তু এই সুরক্ষা বাহিনীগুলির সঙ্গে যুক্ত মানুষদের আমি মন থেকে বলতে চাই, আবেগ নিয়ে বলতে চাই যে, এই খাকি ইউনিফর্ম পরা মানুষদের এদেশে যতটা সম্মান পাওয়া উচিৎ ছিল, তা তাঁরা পাননি। এদেশের সাধারণ মানুষও তাঁদেরকে সেই মর্যাদা দেননি। সেজন্য স্বাধীনতার পর প্রথমবার লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আমি ৩৫ হাজারেরও বেশি পুলিশ কর্মীদের আত্মবলিদানকে শহীদের মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাব রেখেছিলাম। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের মনে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যই আমি এমনটি করেছিলাম, যাতে প্রত্যেক কন্সটেবলের সঙ্গেও তাঁদের বযবহারে পরিবর্তন আসে। আমরা যত বেশি আমাদের নিরাপত্তা কর্মীদের সম্মান করতে শিখব, দেশ তত বেশি নিরাপদ থাকবে – একথা মাথায় রেখেই আমরা দিল্লিতে জাতীয় পুলিশ স্মারক গড়ে তুলেছি। আমি চাই, দেশের প্রতিটি স্কুলের প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে তাঁদের শিক্ষক-শিক্ষিকারা এই পুলিশ স্মারক দেখানোর জন্য নিয়ে আসুন। তারা এই স্মারক দেখে অনুভব করুক যে, কাঁরা আমাদের নিরাপদ রাখতে তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাঁদের বীরগাথা, তাঁদের শৌর্য পরবর্তী প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করুক। শহীদদের পরিবারের পাশে যেন দেশের সাধারণ মানুষ এসে দাঁড়ান, সহানুভূতিশীল হন। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, এখানে খোলা জীপে দাঁড়িয়ে যখন এসেছিলাম, তখন তিন প্রজন্মের পুলিশ কর্মীদের দর্শন লাভের সৌভাগ্য হয়েছে। এখানেও আপনাদের পরিবারের তিন প্রজন্মকে দেখে আমি মুগ্ধ। বয়ঃবৃদ্ধ, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মীরা ও সেবারত উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা আপনাদের মতো নবীন প্রজন্মের মানুষদের সঠিক পথ প্রদর্শন করবেন। পাশাপাশি, এখানে আপনাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সৌভাগ্য হ’ল। দেশের প্রতি আপনাদের সেবায়, তাঁদের অবদান অনস্বীকার্য। আমি তাঁদেরকেও প্রণাম জানাই। তাঁরাই কর্মরত মানুষদের তটস্থ থাকতে শক্তি যোগান।
বন্ধুগণ, তীব্র গরমে, প্রবল ঠান্ডায়, ভীষণ বৃষ্টিতে আপনারা নিজেদের কর্মে অটল থাকেন। দেশবাসীর জন্য হোলি, দেওয়ালী ও সমস্ত উৎসব অনুষ্ঠান থাকে। কিন্তু আপনাদের তখন দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। আমাদের নিরাপত্তা কর্মীদের পরিবারের সদস্যরাও এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত থাকেন। তাঁদেরও স্বপ্ন ও আকাঙ্খা রয়েছে। তাঁরাও সাধারণ মানুষের মতো আশঙ্কায় ভোগেন। কিন্তু দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁরা সমস্ত সমস্যাকে হাসিমুখে মোকাবিলা করেন আর জয়লাভ করেন।
যখন কোনও অসহায় শিশু ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকায় মোড়া নিজের পিতাকে স্যালুট জানাচ্ছে – এরকম ছবি দেখি, যখন কোনও বীরাঙ্গনা তাঁর জীবনসঙ্গীকে হারানোর দুঃখে হাহাকার করে ওঠেন, তখন আমরা নিজেদের অশ্রু পান করে ……..!