মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী মাননীয় প্রবীন্দ জগন্নাথ, তাঁর পত্নী শ্রদ্ধেয়া কবিতা জগন্নাথ, উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল শ্রদ্ধেয় রাম নায়েক, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদে আমার সহযোগী শ্রদ্ধেয়া সুষমা স্বরাজ, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী যোগী আদিত্যনাথ, হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী শ্রী মনোহরলাল, উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত, আমার মন্ত্রী পরিষদের অন্যান্য সহযোগী এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত ও কাশীর নানা প্রান্ত থেকে আগত উপস্থিত ভাই ও বোনেরা।
সবার আগে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক অভিনন্দন ও স্বাগত জানাই। আপনারা সবাই এখানে নিজেদের পূর্বজদের মাটির ঘ্রাণ নিতে ছুটে এসেছেন। কাল যাঁরা প্রবাসী ভারতীয় সম্মানে ভূষিত হবেন, তাঁদের আমি অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাই। আজকের দিনটি আমার জন্যও একটি বিশেষ দিন। সুষমা স্বরাজ মহোদয়া যেমন বলছিলেন, আপনাদের সামনে শুধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, কাশীর সাংসদ হিসেবেও শ্রী মোদী আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছেন। আমি প্রার্থনা করি, বাবা বিশ্বনাথ ও মা গঙ্গার আশীর্বাদ আপনাদের ওপর বর্ষিত হোক।
বন্ধুগণ, আপনাদের সঙ্গে আজ কথা শুরু করার আগে আমি ডঃ শ্রী শ্রী শ্রী শিবকুমার স্বামীজির প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন করতে চাই। তুমকুরের শ্রী সিদ্ধগঙ্গা মঠে বেশ কয়েকবার গিয়ে তাঁর আশীর্বাদ গ্রহণের সৌভাগ্য হয়েছে। যখনই দেখা হত, তিনি একজন সন্তানের মতো আমাকে স্নেহ করতেন। এত আশীর্বাদ দিতেন, এহেন মহান সন্ন্যাসী প্রয়াণ আমাদের সকলের জন্যই অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। মানবকল্যাণে তাঁর অবদানের কথা দেশ সব সময় মনে রাখবে। আমি তাঁকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা জানাই।
ভাই ও বোনেরা, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী ভারতীয়দের সঙ্গে বার্তালাপের এই অভিযান শুরু করেছিলেন আমাদের সকলের প্রিয় শ্রদ্ধেয় অটলবিহারী বাজপেয়ী। তাঁর প্রয়াণের পর এই প্রথম প্রবাসী ভারতীয় সম্মেলন হচ্ছে। সেজন্য আমি এই অবসরে শ্রদ্ধেয় অটলবিহারী বাজপেয়ীকেও এই বিরাট ভাবনার জন্য প্রণাম জানাই।
বন্ধুগণ, আপনারা সবাই এখন কাশীতে রয়েছেন। এই কাশীর সঙ্গে আপনাদের একটা যোগসূত্র রয়েছে। বেনারস নগরী চিরকাল ভারতের সাংস্কৃতিক, আধ্যাত্মিক এবং জ্ঞানের পরম্পরার সঙ্গে বিশ্বকে পরিচয় করিয়ে আসছে। আপনারাও নিজেদের হৃদয়ে ভারত এবং ভারতীয়ত্ব সঞ্জীবিত রেখে এই মাটির প্রাণশক্তিকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরছেন। বন্ধুগণ, আমি আপনাদের ভারতের ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’ মনে করি। ভারতের সামর্থ্য, ক্ষমতা, বিশেষত্বের প্রতিনিধি এবং প্রতীকও মনে করি। সেজন্য আপনারা এখন যে দেশেই থাকুন না কেন, সেখানকার সমাজকে আপন করে নিয়েছেন। সেখানকার সংস্কৃতি এবং অর্থ ব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করেছেন। আপনারা ‘বসুধৈব কুটিম্বকম’ এই ভারতীয় দর্শনে আমাদের পারিবারিক মূল্যবোধের বিস্তার করেছেন। আপনারা সবাই যে দেশে রয়েছেন সেখানকার সমাজের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রবীন্দ জগন্নাথ যেভাবে সম্পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন, তাছাড়া, পর্তুগাল, ত্রিনিদাদ, টোব্যাগো এবং আয়ারল্যান্ডের মতো অনেক দেশে সক্ষম মানুষেরা নেতৃত্ব প্রদান করছেন যাঁদের শিকড় ভারতে।
বন্ধুগণ, আপনাদের সকলের সহযোগিতায় বিগত চার বছরে ভারত বিশ্বে নিজের স্বাভাবিক স্থান অর্জনের লক্ষ্যে একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। আগে অনেকে বলতেন যে ভারত বদলাতে পারে না। আমরা সেই ভাবনাকে বদলে দিয়েছি। আমরা পরিবর্তন এনে দেখিয়েছি।
বন্ধুগণ, বিশ্ব আজ আমাদের পরামর্শকে অত্যন্ত মন দিয়ে শোনে এবং বোঝার চেষ্টা করে। পরিবেশের নিরাপত্তা এবং বিশ্বের উন্নয়নে ভারতের অবদান বিশ্ববাসী স্বীকার করছেন। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সর্বোচ্চ পরিবেশ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন্স অফ দ্য আর্থ’-এর পাশাপাশি, ‘সিওল পিস প্রাইজ’ পাওয়া এই প্রক্রিয়ার পরিণাম।
বন্ধুগণ, আজ ভারত অনেক বিষয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো জায়গায় পৌঁছে গেছে। আন্তর্জাতিক সৌরসঙ্ঘ এরকমই একটি মঞ্চ। এর মাধ্যমে আমরা বিশ্বকে ‘এক বিশ্ব, এক সূর্য, এক গ্রিড’-এর লক্ষ্যে নিয়ে যেতে চাই। আমরা ভারতের সমস্যাগুলির এমন সমাধানসূত্র খুঁজছি যার দ্বারা অন্যান্য দেশের সমস্যারও সমাধান হয়। ‘স্থানীয় সমাধান, বিশ্বব্যাপী প্রয়োগ’ – এই ভাবনা নিয়ে আমরা সংস্কার, সম্পাদন ও রূপান্তরণ এবং ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ সূত্র ধরে এগিয়ে বিগত সাড়ে চার বছরে কী পেয়েছি তার একটি চিত্র আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই।
আজ ভারত বিশ্বে দ্রুতগতিতে অগ্রসরমান অর্থনৈতিক শক্তি। ক্রীড়াক্ষেত্রেও আমরা বৃহৎ শক্তি হয়ে ওঠার পথে এগিয়ে চলেছি। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ভারত অত্যাধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পেরেছে। মহাকাশ ক্ষেত্রেও আমরা রেকর্ড সাফল্য পেয়েছি।
আজ আমরা বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্টার্ট-আপ আবহ গড়ে তুলতে পেরেছি। স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রকল্প ‘আয়ুষ্মান ভারত’ চালু করেছি। আমাদের যুবসম্প্রদায় ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র মাধ্যমে রেকর্ড পরিমাণ মোবাইল ফোন, কার, বাস, ট্রাক, ট্রেন নির্মাণ করছে। তেমনই আমাদের কৃষকরা রেকর্ড পরিমাণ ফসল উৎপন্ন করছেন।
আমাদের একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি নিয়ে বলতে গিয়ে বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকার দিল্লি থেকে জনগণের উন্নয়নে যে অর্থ প্রেরণ করে তার মাত্র ১৫ শতাংশ জনগণের হাতে পৌঁছয়। এত বছর ধরে যে দল দেশ শাসন করেছে, সেই দলেরই একজন প্রধানমন্ত্রী সেই সত্যটা স্বীকার করেছেন, সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, তাঁর ১০-১৫ বছর শাসনের কালেও এই লুন্ঠন বন্ধ করার কোন চেষ্টা করা হয়নি। দেশের মধ্যবিত্তরা সততার সঙ্গে যে কর দেন, তার ৮৫ শতাংশ এভাবে লুন্ঠন হত।
বন্ধুগণ, আমি আপনাদের আজকের সত্যটা বলতে চাইছি। আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ৮৫ শতাংশ লুন্ঠনকে বন্ধ করে দিয়েছি। বিগত সাড়ে চার বছরে আমাদের সরকার প্রায় ৫ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা, অর্থাৎ প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলার ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সরাসরি জনগণের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দিয়েছে। গৃহ নির্মাণ, ছাত্রবৃত্তি, গ্যাস সিলিন্ডার কিংবা ফসল বাবদ এই অর্থ হস্তান্তর হয়েছে। আগের মতো চলতে থাকলে এই টাকার মধ্য থেকে সাড়ে চার লক্ষ কোটি টাকা লুন্ঠন হত। এই পরিবর্তন আমরা এনেছি।
বন্ধুগণ, ইচ্ছাশক্তির অভাবেই আগে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কিন্তু আমরা এসেই যে কোন সরকারি পরিষেবার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তর চালু করি। বিগত সাড়ে চার বছরে আমাদের সরকার প্রায় ৭ কোটি ভুতুড়ে সুবিধাভোগীকে ব্যবস্থা থেকে তাড়িয়েছে। এই ৭ কোটি মানুষ বাস্তবে নেই, এরা কাগজেই জন্ম নিয়েছিল, আর সুবিধাও পেত। অর্থাৎ, সমগ্র ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং ইতালির মিলিত জনসংখ্যা।
বন্ধুগণ, এই উদাহরণ ভারতে বিরাট পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন ভারত গড়ে তোলার প্রতি আত্মবিশ্বাসের একটি প্রতীক। এটি ভারতের গৌরবময় অতীতকে পুনঃস্থাপিত করতে ১৩০ কোটি ভারতবাসীর সঙ্কল্পের পরিণাম। আর আজ আমি অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বলতে চাই যে এই সঙ্কল্পে আপনারাও সামিল হয়েছেন।
বন্ধুগণ, ভারত সরকার চায় আপনারা বিশ্বের যেখানেই থাকুন না কেন, নিরাপদ থাকুন। বিগত সাড়ে চার বছরে নানা প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক সঙ্কটে আটকে পড়া ২ লক্ষেরও বেশি ভারতীয়কে আমরা ভিন্ন ভিন্ন দেশে সাহায্য পৌঁছে দিতে পেরেছি। আপনাদের সামাজিক নিরাপত্তার পাশাপাশি, পাসপোর্ট, ভিসা, পিআইও এবং ওসিআই কার্ড সংক্রান্ত সমস্ত প্রক্রিয়াকে সহজ করার জন্য সরকার কাজ করে চলেছে। কয়েক মাস আগে প্রবাসী ভারতীয়দের জন্য একটি নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সারা পৃথিবীতে যেখানে আমাদের দূতাবাস রয়েছে, সেখানে আপনাদের সবার পাসপোর্ট পরিষেবার জন্য একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। এখন আর এক পা এগিয়ে ‘চিপ-ভিত্তিক ই-পাসপোর্ট’ জারি করার লক্ষ্যেও আমরা কাজ করে চলেছি।
বন্ধুগণ, পাসপোর্টের পাশাপাশি ভিসার নিয়মগুলিকেও সরল করা হচ্ছে। ই-ভিসা পরিষেবা চালু হওয়ায় আপনাদের সময়ের সাশ্রয় হচ্ছে। এখনও যদি এর মধ্যে কোন সমস্যা থাকে, আপনাদের পরামর্শ অনুযায়ী তাও দূর করা হবে। আপনারা জানেন, আমাদের সরকার পিআইও কার্ডকে ওসিআই কার্ডে পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকেও সহজ করেছে। বন্ধুগণ, আপনাদের নিজেদের মাটি থেকে যতই দূরে থাকুন, নতুন ভারত নির্মাণে আপনাদের সক্রিয় অংশীদারিত্ব আমরা কামনা করি। ভারতে যে পরিবর্তন আসছে, যে নতুন সুযোগ গড়ে উঠছে, সেখানে আপনাদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা গবেষণা এবং উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে পারেন। সরকার ভারতের স্টার্ট-আপ-এ প্রবাসী ভারতীয় পরামর্শদাতাদের একটি মঞ্চে নিয়ে আসতে চাইছে। প্রতিরক্ষা উপকরণ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও আপনারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
ভাই ও বোনেরা, ভারতমাতার নিরাপত্তা, অর্থ ব্যবস্থার পাশাপাশি আপনাদের আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সংযোগকে শক্তিশালী করতে ‘প্রবাসী তীর্থ দর্শন যোজনা’ চালু করা হচ্ছে। এই মঞ্চে আমি আগেও বলেছি, আজ আবার বলছি, আপনারা যে দেশেই থাকুন না কেন, সেখানকার প্রতিবেশী ন্যূনতম পাঁচটি অ-ভারতীয় পরিবারকে ভারতে আসার জন্য প্রেরণা যোগান। আপনাদের এই প্রচেষ্টা দেশে পর্যটন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এভাবে আপনারা মহাত্মা গান্ধীর সার্ধ শতবর্ষ উপলক্ষে ভারতীয় দর্শনকে কিভাবে অন্যদের মধ্যে সঞ্চারিত করবেন সে সম্পর্কেও ভাবুন। বিগত দিনে শ্রদ্ধেয়া সুষমা স্বরাজের নেতৃত্বে বিশ্বের অনেক দেশে একটি প্রচেষ্টা হয়েছে। আমাদের সমস্ত দূতাবাসে সে দেশের শিল্পীদের দ্বারা গান্ধীজির প্রিয় ভজন ‘বৈষ্ণব জন তো তেনে কহিয়ে’ গাওয়ানোর অনুরোধ করেছিলেন। আপনারাও ইউটিউব-এ এগুলির ভিডিও দেখলে অবাক হবেন যে শিল্পীরা কতটা ভাব বিভোর হয়ে এই ভজন গেয়েছেন। এর মাধ্যমে গান্ধী কতটা বিশ্বজনীন সেই অনুভূতি আপনাদের শিহরিত করবে। সেজন্য আপনারা যদি কোন বিশেষ অনুষ্ঠান করতে চান, সেক্ষেত্রে ভারতীয় দূতাবাস যথাসম্ভব সাহায্য করবে। গুরুনানক দেবের ৫৫০তম জয়ন্তী পালন করছি। গুরুবাণীকে অন্যান্য দেশের মানুষের কাছে কিভাবে পৌঁছে দেওয়া যায়, ভারতের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে বিশ্ববাসীকে কিভাবে পরিচিত করা যায়, সেগুলি সম্পর্কে আপনারা কিছু করুন, এই অনুরোধ রাখছি। আমি জানি যে আপনারা আগে থেকেই এরকম অনেক কিছু করেছেন, তবুও আপনাদের কাছে এলে আমি এরকম কথা না বলে থাকতে পারি না।
আমি আজ বিশেষভাবে উত্তরপ্রদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। কোন রাজ্যের পক্ষে এরকম প্রবাসী ভারতীয় দিবসের আয়োজন করা অত্যন্ত কঠিন। বিশ্বের এতগুলি দেশ থেকে অতিথিরা এসেছেন, তাঁদের যাতে কোন অসুবিধা না হয়, সমস্ত দিকে লক্ষ্য রেখে এই ধরণের আয়োজন করতে প্রায় এক বছর লেগে যায়। এরকম একটি কর্মসূচির পর ক্লান্তি অবসানে আরও এক বছর লাগে। কিন্তু এর পাশাপাশি আমি উত্তরপ্রদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানাব এজন্য যে, কুম্ভ মেলার আয়োজনে যে দু-তিন বছর লাগে সেটাও তারা এক বছরে সম্পন্ন করেছে। কুম্ভ মেলায় ১০ কোটি মানুষ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সেজন্য একথা ভেবে আমার সঙ্কোচ হচ্ছিল যে উত্তরপ্রদেশের ওপর বাড়তি দায়িত্ব চাপাব কি চাপাব না। কিন্তু শ্রী আদিত্যনাথ যোগীর নেতৃত্বে রাজ্য প্রশাসন আমাকে আন্তরিক আশ্বাস দিয়েছে যে তারা এই আয়োজন করতে পারবে এবং তারা এটা করে দেখিয়েছে। এভাবে দুটো বিরাট কর্মসূচি একসঙ্গে আয়োজন করে তারা বিশ্বের সামনে উত্তরপ্রদেশ সরকারের সামর্থ্যকে তুলে ধরেছে। সেজন্য আমি তাদের বিশেষ অভিনন্দন জানাই।
পাশাপাশি, আমি কাশীর নাগরিকদের মাথা নত করে প্রণাম জানাই, কারণ আমি আগে গুজরাটে এই প্রবাসী ভারতীয় দিবস পালন করেছি। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বলুন কিংবা আজ দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে, আমিই একমাত্র ব্যক্তি যে সমস্ত প্রবাসী ভারতীয় দিবসে হাজির ছিলাম। একবার মাত্র আমি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এতে অংশগ্রহণ করেছিলাম, আর অন্যান্যবার আমি সশরীরে হাজির ছিলাম। গুজরাটের আয়োজনে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আমি আতিথেয়তার নেতৃত্বে ছিলাম। কিন্তু আজ কাশীবাসী যেভাবে এই অনুষ্ঠানকে সরকারি অনুষ্ঠান হতে দেননি, জনগণের অনুষ্ঠান করে তুলেছেন সেজন্য আমি তাঁদের অভিনন্দন জানাই। প্রায় ৪০০ অভ্যাগত কারোর না কারোর বাড়িতে অতিথি হয়েছেন। বৃহত্তর কাশীতে যে ‘টেন্ট সিটি’ তৈরি করা হয়েছে, সেখানেও একটি আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে। আমাকে বলা হয়েছে যে অনেক প্রবাসী অভ্যাগত প্রথমে এসে যে হোটেলে উঠেছিলেন, সেখান থেকে তাঁরা ‘টেন্ট সিটি’র আনন্দ নিতে চলে গেছেন। আমি গত দু’মাস ধরে অনুভব করছিলাম যে কাশীবাসীরা তাঁদের নগরে এক প্রকার বিশ্বের রাজধানীর আবহ গড়ে তুলেছেন। প্রত্যেক অভ্যাগত যে তাঁদের নিজেদের অতিথি। এর আগে কোন প্রবাসী ভারতীয় সম্মেলনে এরকম আবহ দেখা যায়নি। আমি সেজন্য কাশীবাসীদের প্রণাম জানাই। স্থানীয় প্রশাসনকে অভিনন্দন জানাই। আর এসব কিছুর পেছনে শ্রদ্ধেয়া সুষমা স্বরাজের নেতৃত্ব এবং তাঁর দলকেও অভিনন্দন জানাই। কাশীর গৌরব বৃদ্ধি হলে এখানকার সাংসদ হিসেবে আমার আনন্দ চারগুণ বৃদ্ধি পায়।
আপনারা পরিশ্রম করেছেন, প্রকল্প গড়ে তুলেছেন, দিন-রাত না ঘুমিয়ে, ঘাম ঝরিয়ে, অক্লান্ত পরিশ্রমে এই সম্মেলনকে নতুন মাত্রা দিয়েছেন। আর সকলে আমার পিঠ চাপড়াচ্ছে। এটা তো আপনাদের ভালোবাসা। কাশীর সাংসদ হিসেবে আমার কর্মভূমির এই গৌরবে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। অবশেষে, আরেকবার আপনাদের সবাইকে কাশীতে পায়ের ধূলো দেওয়ার জন্য অন্তর থেকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই। ভারতে আপনাদের এই ভালোবাসার সফর আনন্দময় হোক এই কামনা করে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, সাংসদ হিসেবে নয়, বিগত দু’বছর ধরে আমি নিজের আনন্দের জন্য এই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছি। ভারতে মার্চ মাস একরকম পরীক্ষার মাস। দশম কিংবা দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য সারা বছর ধরে ঐ পরিবারগুলিতে উৎকন্ঠার আবহ থাকে। আমি সবসময়ই পরীক্ষার আগে ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে, তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে এবং শিক্ষকদের সঙ্গে বার্তালাপ করতে চাই। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আগামী ২৯শে জানুয়ারি নরেন্দ্র মোদী অ্যাপের মাধ্যমে ভিডিও-র মাধ্যমে পরীক্ষার্থী ছেলে-মেয়ে, তাদের পরিবারের সদস্য এবং শিক্ষকদের সঙ্গে যুক্ত হব। এবার আমার সঙ্গে বিদেশ থেকেও অনেকে যুক্ত হবেন। কোটি কোটি পরিবারের সঙ্গে আমি পরীক্ষা-যোদ্ধাদের নিয়ে কথা বলব। কিভাবে তাদের উৎকন্ঠা কম করা যায় তার পদ্ধতি বলব। ২৯শে জানুয়ারি সকাল ১১টায়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আপনারাও সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলিকে একথা জানাবেন যাতে পরীক্ষার আগে তারা এ থেকে উপকৃত হতে পারেন।
আমি আরেকবার এই বিশেষ দিনে আমাদের প্রিয় বন্ধু প্রবীন্দ জগন্নাথকে সপরিবারে আসার জন্য, সময় দেওয়ার জন্য অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই। তাঁর পিতা আধুনিক মরিশাস গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁকে আধুনিক মরিশাসের স্থপতি বলা হয়। তিনিও অনেক বড় ভারতপ্রেমী ছিলেন। বিগত দিনে তিনি বিশেষভাবে সপরিবারে কাশীতে বেড়াতে এসেছিলেন। আজ প্রবীন্দজি এসেছেন। তাঁর স্ত্রী শ্রীমতী কবিতাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। তাঁদের এই পারিবারিক ভারত প্রেম প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। আমি আরেকবার আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।