আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
আমাদের চমনলালজির মতন অনেক পুরনো চেহারা আজ এখানে দেখতে পাচ্ছি। জম্মু ও কাশ্মীরের জন্যে আজকের এই দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই রাজ্যে আজ এটি আমার চতুর্থ কর্মসূচি। আজ সকাল থেকেই লে-লাদাখের উঁচু উঁচু পাহাড় থেকে রওনা হয়ে, কাশ্মীর উপত্যকায় কাজ সেরে এখন জম্মুর তরাই অঞ্চলে পৌঁছেছি, এই দীর্ঘ পথে উন্নয়নের প্রবাহ সরেজমিনে দেখতে গিয়ে এখানে পৌঁছুতে দেরী হয়ে গেল। ঠিক সময়ে পৌঁছুতে পারিনি বলে আপনাদের সবার কাছে ক্ষমা চাইছি।
লে’র সঙ্গে অবশিষ্ট ভারতের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী জোজিলা সুড়ঙ্গ, বান্দীপোরার কিশনগঙ্গা প্রকল্প কিম্বা চিনাব নদীতে নির্মীয়মান জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, এই সবকিছু জম্মু ও কাশ্মীরের জন্যে একেকটি নতুন সৌভাগ্যের দুয়ার খুলে দিচ্ছে। জম্মু ও কাশ্মীরের প্রবাহিত জলধারা আগামীদিনে এখানকার উন্নয়নধারায় গতিসঞ্চার করবে।
একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প দেশবাসীকে সমর্পণের পর দ্বিতীয়টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন; আজকের এই দিনটিকে অদ্ভুত এবং স্মৃতির মণিকোঠায় উজ্জ্বল করে তুলবে। কিছুক্ষণ আগে জম্মুর পরিকাঠামোর সঙ্গে যুক্ত চারটি বড় প্রকল্পের শিলান্যাস এবং উদ্বোধনের সৌভাগ্য হয়েছে। এগুলি আপনাদের সকলের জন্য কতটা লাভজনক হবে, তা এ থেকে অনুমান করতে পারবেন যে, আজ সমগ্র জম্মু ও কাশ্মীরে যত বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়, সেই পরিমাণের এক-তৃতীয়াংশ এই একটি শক্তি প্রকল্প থেকে উৎপাদিত হবে।
এই প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী উন্নয়ন কর্মসূচি রূপে নির্মিত হচ্ছে। ১ হাজার মেগাওয়াটের এই প্রকল্প দ্রুত সম্পন্ন হওয়ার জন্য একেবারে প্রস্তুত। ৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে নির্মীয়মান এই প্রকল্পে জম্মু ও কাশ্মীরের নবীন প্রজন্মের অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। প্রায় আড়াই হাজার মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান হবে। তা ছাড়া, এখানকার কৃষক, সব্জি বিক্রেতা, দুধ বিক্রেতাদের মতো সমস্ত পেশার মানুষের জন্য এই প্রকল্প নতুন সৌভাগ্যের দরজা খুলে দেবে।
বন্ধুগণ, আমাদের সরকার দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ নিয়ে কাজ করছে। এই দৃষ্টিকোণটি হ’ল বিচ্ছিন্নতা থেকে ঐক্য। অর্থাৎ দেশের যে অঞ্চলগুলি কোনও না কোনও কারণে অবশিষ্ট ভারত থেকে আলাদা হয়েছিল, উন্নয়নের আলো যেখানে যেখানে পৌঁছয়নি সেই অঞ্চলগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সেজনয উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি কিংবা জম্মু ও কাশ্মীরে যতটা সম্ভব উন্নয়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেই প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমি নিজেও প্রতিটি জায়গায় পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করছি। আমি খুব খুশি যে, পূর্ববর্তী কোনও প্রধানমন্ত্রীর এমন সৌভাগ্য হয়েছে কিনা জানি না। রাজনৈতিক কাজ ছাড়াও সম্ভবত, এক ডজনেরও বেশি আমি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে জম্মু ও কাশ্মীরে এসেছি। এর আগে তো আপনারা আমাকে দীর্ঘদিন এই রাজ্যে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন, আমাকে লালন-পালন করেছেন।
যোগাযোগ থেকে উন্নয়নের সূত্র ধরে আমরা কাজ করছি। সেই যোগাযোগ সড়ক নির্মাণ হোক কিংবা আন্তরিক যোগাযোগ হোক, কোনও সুযোগই আমরা হাতছাড়া করতে চাই না। জম্মু ও কাশ্মীরের উন্নয়নের জন্য এমনভাবে আমরা কাজ করছি যাতে নতুন ভারতে এই রাজ্যটিকে উদীয়মান তারকা হিসাবে গণ্য করা হয়। ভারতের মানচিত্যরের কথা কল্পনা করুন, যখন ভারতের মুকুট থেকে হীরের মুকুটের মতো জ্যোতি বিচ্ছুরিত হবে, এই বিচ্ছুরণ অবশিষ্ট ভারতকে উন্নয়নের পথ দেখাবে।
ভাই ও বোনেরা, সেই উজ্জ্বল দিনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্য সরকারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগেই জম্মু শহরকে যানজট মুক্ত করার জন্য একটি রিং রোডের শিলান্যাস করা হয়েছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে এই রিং রোড নির্মাণের চেষ্টা করা হবে। এই রিং রোড আগামীদিনে জম্মুবাসী এবং লক্ষ লক্ষ পর্যটকের জন্য উন্নত পরিষেবা প্রদান করবে।
যাঁরা উন্নয়নের নকশা সম্পর্কে অবহিত, তাঁরা বুঝতে পারছেন যে, প্রায় ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ লিঙ্ক রোড জম্মু শহরের দু’দিকেই একটি নতুন জম্মু স্থাপন করবে। অর্থাৎ কিভাবে সম্প্রসারিত হবে, তা আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। শহরের যানজট দূর করা ছাড়াও এই রিং রোড পুঞ্চ, রাজৌরি, নৌশেরা এবং অখনূর অঞ্চলে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে ভারী সামরিক যন্ত্রপাতি পরিবহণের পথও সহজতর করে তুলবে।
বন্ধুগণ, আপনাদের এই জম্মু শহরকে ভবিষ্যতে স্মার্টসিটি হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এখানকার ট্রাফিক ব্যবস্থা থেকে শুরু করে পয়ঃপ্রণালী, স্মার্টসিটির জন্য নির্ধারিত মান অনুযায়ী পুনর্নির্মিত হচ্ছে। রাজ্য সরকার নিষ্ঠার সঙ্গে এই কাজ করছে। এজন্য কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ মঞ্জুর করা হয়েছে।
ভাই ও বোনেরা, উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমাদের সম্পূর্ণ ফোকাস পরিকাঠামো উন্নয়নে। হাইওয়ে, রেলওয়ে, ওয়াটারওয়ে, আইওয়ে, রোডওয়ে – এইসব কিছু হ’ল একবিংশ শতাব্দীর অনিবার্যতা। এক্ষেত্রে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গী অত্যন্ত স্পষ্ট। ১২৫ কোটি ভারতবাসীর জীবন মানকে উপরে তুলতে হলে আগে তাকে সরল ও সুগম করে তুলতে হবে। এই ভাবনাকেই আমরা নতুন নাম দিয়েছি ‘স্মার্ট ব্যবস্থা’। এই ভাবনারই পরিণামস্বরূপ আজ ভারতমালা প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশে জাতীয় সড়কের জাল দ্রুতগতিতে বিস্তারিত হচ্ছে।
জম্মু ও কাশ্মীর হোক কিংবা উত্তর-পূর্ব ভারত, পশ্চিম ভারত হোক কিংবা দক্ষিণ – সারা দেশে এই জাতীয় সড়কের জাল প্রসারিত করতে প্রায় ৩৫ হাজার কিলোমিটার নতুন উন্নতমানের সড়কপথ নির্মাণের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি সংস্থান এবারের বাজেটে রাখা হয়েছে। তার মধ্যে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা শুধু জম্মু ও কাশ্মীরে এ বাবদ বিনিয়োগ করা হবে।
ভাই ও বোনেরা, জম্মু ও কাশ্মীরে অনেক মহাসড়ক প্রকল্প চালু রয়েছে। জম্মুর সঙ্গে একদিকে শ্রীনগর এবং অন্যদিকে অবশিষ্ট ভারতের উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করার জন্য ইতিমধ্যেই কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে বেশি কিছু পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই বাস্তবায়িত করা হয়েছে, আর কিছু দ্রুত এগিয়ে চলেছে। জম্মু-পুঞ্চ, উধমপুর-রামবন, রামবন-বানিহাল, শ্রীনগর-বানিহাল এবং কাজিগুন্ড-বানিহাল প্রকল্পগুলি দ্রুত সমাপ্তির পথে এগুলি এই রাজ্যের লাইফলাইন হিসাবে পরিগণিত হবে। এগুলির জন্য প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া, এই রাজ্যের প্রতিটি গ্রামকে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনার মাধ্যমে সংযুক্ত করার কাজও এগিয়ে চলেছে। বিগত দু’বছরে সারা দেশে প্রায় ১ লক্ষ কিলোমিটার গ্রামীণ পথ এই প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটারেরও বেশি পথ নির্মিত হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরে।
জম্মু ও কাশ্মীরের জনয রোজগারের সর্ববৃহৎ উপায় হ’ল পর্যটন। এই রাজ্যে বিভিন্ন ধর্মের তীর্থস্থান রয়েছে। বাবা বরফানি হোন কিংবা মাতা রানীর দরবার। দেশ-বিদেশ থেকে ভক্তরা দলে দলে এখানে আসেন। এই তীর্থযাত্রীদের অধিক স্বাচ্ছন্দ্য ও পরিষেবা প্রদানের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির নানা প্রচেষ্টা সরকার করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই কাটরায় মা বৈষ্ণোদেবীর পদতলে রেলপথ পৌঁছে গেছে। প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হওয়ার পরই এই রেলপথের উদ্বোধন করার সুযোগ আমার হয়েছিল। এই রেলপথ মায়ের দরবারে আসা ভক্তদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। আমরা এখানেই সীমাবদ্ধ থাকতে চাই না। সেজন্য মা বৈষ্ণোদেবীকে কেন্দ্র করে আজ নতুন দুটি বড় প্রকল্প উদ্বোধন করেছি। প্রথমটি মা বৈষ্ণোদেবীর দর্শনের জন্য একটি বিকল্প পথ আর দ্বিতীয়টি মায়ের দরজা পর্যন্ত পণ্যদি পৌঁছে দেওয়ার জন্য রোপওয়ে।
বন্ধুগণ, এখন মায়ের দর্শনের জন্য ভক্তরা তারাকোটার পথেও যেতে পারবেন। কাটরা এবং অর্ধকুঁওয়ারীর মধ্যে পায়ে চলা ভক্তদের জন্য এই বিকল্প পথ। এতে ভিড়ের ধাক্কায় পড়তে হবে না। আমাকে বলা হয়েছে যে, এই পথটিকে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ লিঙ্ক রোডের মাধ্যমে বর্তমান পায়ে চলা পথের সঙ্গেও যুক্ত করা হবে, যাতে পদব্রজে মন্দিরে যাঁরা যাবেন, তাঁরা দুটির মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিতে পারেন। তাঁদের যাত্রাপথ যেন আনন্দময় ও নিরাপদ থাকে। সেজন্য সমস্ত রকম পরিষেবার দিকে নজর রাখা হয়েছে।
বন্ধুগণ, এই বিকল্প পথ ছাড়াও যে পণ্য পরিবাহী রোপওয়েটি আজ আমার উদ্বোধনের সৌভাগ্য আমার হ’ল, এর মাধ্যমে শ্রীমাতা বৈষ্ণোদেবী শ্রাইন বোর্ড তীর্থযাত্রীদের তাজা খাদ্য ও পানীয় প্রদানে অনেক দ্রুততার সঙ্গে কাজ করতে পারবে। মন্দিরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও এই রোপওয়ে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। কাটরা থেকে মন্দিরে পন্য পরিবাহিত হবে আর৪ সেখান থেকে ফেরার পথে বর্জ্য পরিবাহিত হবে।
বন্ধুগণ, যাত্রী পরিবহণের জন্য এ ধরণের ব্যবস্থা নির্মাণের কথা ভাবা হচ্ছে। ৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগে নির্মিত হচ্ছে ভবন-ভৈরোঁ উপত্যকা রোপওয়ে। এর মাধ্যমে ঘন্টায় ৮০০ জন যাত্রীকে নিয়ে যাওয়া যাবে। বয়স্ক ও দিব্যাঙ্গ ভক্তরা এর দ্বারা উপকৃত হবেন। যখনই রোপয়ে পূর্ণ শক্তিকে কাজ করতে শুরু করবে, তখন প্রতি তিন মিনিটে ৪০-৫০ জনকে নিয়ে যাওয়া যাবে। এই রোপওয়ে প্রকল্পে দিল্লি মেট্রোর মতো অটোমেটেড টিকিটিং সিস্টেম থাকবে। তীর্থযাত্রীদের সুবিধার জন্য শ্রাইন বোর্ড যেভাবে কাজ করছে, তার জন্য আমি মাননীয় অধ্যক্ষ ও তাঁর গোটা দলকে হৃদয় থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
ভাই ও বোনেরা, জম্মু ও কাশ্মীরে পরিকাঠামো উন্নয়ন হলে পর্যটন শিল্প উন্নত হবে। পর্যটন উন্নীত হলে কর্মসংস্থান বাড়বে। কিন্তু কর্মসংস্থানের জন্য শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যে শিক্ষার উন্নয়নে দুটি বড় সংস্থার কাজ করার উদ্যোগকে মঞ্জুর করেছে। জম্মুতে নির্মীয়মান আইআইএম এবং আইআইটি এ রাজ্যের দক্ষতা উন্নয়নে মাইলফলক রূপে পরিগণিত হবে। এছাড়া, জম্মু ও কাশ্মীরের ১৬ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রীদের দেশের প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এবং নামী কলেজগুলিতে পড়ার জন্য ছাত্রবৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ভাই ও বোনেরা, নারী ক্ষমতায়ন আমাদের সরকারের অগ্রাধিকার। বিগত চার বছরে আমরা এমন কিছু প্রকল্প চালু করেছি, যেগুলির মাধ্যমে মহিলাদের আর্থিক ও সামাজিক ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে সারা দেশে প্রায় সাড়ে নয় কোটি মহিলা শিল্পপতি কোনও রকম গ্যারান্টি ছাড়াই ছোট ছোট ব্যবসা কিংবা কারখানার জন্য ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পেয়েছেন। এর মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরের ৫০ লক্ষেরও বেশি মহিলা উপকৃত হয়েছেন।
এভাবেই উজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে দেশের গরিব মা ও বোনেদের ধোঁয়ামুক্ত রান্নাঘর প্রদানের চেষ্টা করেছি। দেশের দলিত-পীড়িত-বঞ্চিত-পিছিয়ে পড়া দরিদ্র মা ও বোনেরা এই প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন। সারা দেশে প্রায় ৪ কোটি মা ও বোনকে এই বিনামূল্যে এলপিজি সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৪ লক্ষেরও অধিক জম্মু ও কাশ্মীরের মা ও বোনেরা উপকৃত হয়েছেন।
বন্ধুগণ, স্বচ্ছ ভারত অভিযানের মাধ্যমে সারা দেশে উন্মুক্ত স্থানে প্রাকৃতিক কর্ম মুক্ত করার অভিযান চলছে। এটি কেবলই পরিচ্ছন্নতার অভিযান নয়, এতে মা ও বোনেদের সম্মান জড়িত। জম্মু ও কাশ্মীরের মা ও বোনেরা কতটা সচেতন ও সক্রিয়, তার উদাহরণ ইতিমধ্যেই দেশ ও বিশ্ব দেখেছে। আমি নিজে উধমপুরের ৮৭ বছর বয়সী মায়ের সাহসিকতার কথা টিভির মাধ্যমে জেনেছি। এই বয়সেও তিনি একটি একটি করে ইঁট গেঁথে নিজের হাতে শৌচাগার নির্মাণ করেছেন। কারও সাহায্য নেননি। প্রবল ইচ্ছাশক্তি তাঁকে এই সাফল্যে পৌঁছে দিয়েছে।
বন্ধুগণ, এমনই সব প্রচেষ্টাই আমাদের উদ্যম ও সাহসকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। কোথাও পাঁচ বছরের কন্যারা এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, তো কোথাও ৮৭ বছর বয়সী মায়েরা। এ থেকে অনুমান করা যেতে পারে যে, পরিচ্ছন্নতা ও সম্মানের ভাবনা কতটা গভীর। সেজন্য এখন পর্যন্ত গ্রামীণ পরিচ্ছন্নতার সাফল্য ৮০ শতাংশেরও বেশি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরে ইতিমধ্যেই ৮ লক্ষেরও বেশি বাড়িতে শৌচাগার নির্মিত হয়েছে।
বন্ধুগণ, মহিলাদের আর্থিক ও সামাজিক ক্ষমতায়ণ ততক্ষণ অসম্পূর্ণ থাকবে যতদিন না তাঁদের দক্ষতা উন্নয়ন সুনিশ্চিত করা যাবে। একথা মাথায় রেখে সারা দেশের মতোই জম্মু ও কাশ্মীরের মহিলাদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্যে অনেকভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই প্রায় ৫ হাজার মহিলাকে হস্তশিল্প, সেলাইয়ের কাজ এবং কৃষি সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
ভাই ও বোনেরা, দু’বছর আগে আমি যখন এখানে এসেছিলাম, তখন এ রাজ্যের নবীন প্রজন্মের কাছে আবেদন রেখেছিলাম যে, সরকারি প্রকল্পগুলি থেকে লাভবান হওয়ার জন্য এগিয়ে আসুন। আজ একথা বুক ফুলিয়ে বলতে পারি যে, এই রাজ্যের নবীন প্রজন্ম এই প্রকল্পগুলি থেকে অনেক উপকৃত হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনার মাধ্যমে এই রাজ্যের প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। এই অ্যাকাউন্টগুলিতে আজ পর্যন্ত প্রায় ৮০০ কোটি টাকা জমা হয়েছে। এটি শুধু জম্মু ও কাশ্মীরের পরিসংখ্যান। অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত শ্রমিক ভাই ও বোনদের জন্য গড়ে তোলা অটল পেনশন যোজনায় এই রাজ্যের ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ যুক্ত হয়েছেন। সরকার ন্যূনতম কিস্তি প্রদানের মাধ্যমে যে দুটি জীবন বিমা প্রকল্প শুরু করেছে, এ রাজ্যের প্রায় ৯ লক্ষ মানুষ এই দুটি প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এর মাধ্যমে ইতিমধ্যেই ৩ কোটি ‘ক্লেইম’ অনুযায়ী টাকা প্রদান করা হয়েছে।
বন্ধুগণ, এই রাজ্যের যুবকেরা সর্বদাই সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য আগ্রহ দেখিয়েছেন। পরম্পরা অনুযায়ী সেনাবাহিনী, কেন্দ্র ও রাজ্যের পুলিশ এবং ইন্ডিয়া রিজার্ভ ব্যাটেলিয়ানগুলিতে ইতিমধ্যেই ২০ হাজারেরও বেশি সৈনিক এই রাজ্য থেকে নিয়োগ হয়েছেন।
বন্ধুগণ, এটি ডোগরাদের মাটি – এটি বীরভূমি। এই ভূমিতে শৌর্য, সংযম যেমন জন্ম নেয় তেমনই মধুর সঙ্গীতও জন্ম নেয়। এই মাটি থেকে উৎপন্ন বাসমতির সৌরভ যেমন আমাদের মোহিত করে, তেমনই আধুনিক কলকারখানায় উৎপাদিত পণ্যও আমাদের সংকল্পকে আরও শক্তিশালী করার পথ দেখায়।
আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই যে, মা বৈষ্ণোদেবীর আশীর্বাদে, আপনাদের সকলের পরিশ্রমে এই রাজ্যের উন্নয়ন নতুন সব উচ্চতা স্পর্শ করবেই, সিদ্ধি প্রাপ্তি হবেই।
ধন্যবাদ।