আমার সঙ্গে সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে বলুন, জয় জয় কেদার!
দেবভূমি উত্তরাখন্ডের সকল ভাই-বোনকে আমার সাদর নমস্কার। কামনা করি, যাতেসবার ওপর বাবা কেদারনাথের আশীর্বাদ বর্ষিত হতে থাকে।
গতকাল সারা দেশে ও বিশ্বের সর্বত্র পবিত্র দীপাবলি উৎসব পালিত হয়েছে। এইপবিত্র উৎসব উপলক্ষে দেশ বিশ্বের সর্বত্র বসবাসকারী আমার সমস্ত বন্ধু ও বোনেদের এইপবিত্র মাটি থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
গুজরাটের মতো কয়েকটি রাজ্যে আজ নববর্ষ শুরু হয়েছে। সেসব রাজ্যের অধিবাসীদেরএবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা সেসব রাজ্যের প্রবাসী বন্ধু ও বোনেদের নতুন বছরেরঅভিনন্দন, শুভ নববর্ষ। আরেকবার বাবা আমাকে ডেকেছেন। আরেকবার বাবার আকর্ষণে তাঁরচরণে এসে উপস্থিত হয়েছি। আজ আবার পুরনো পরিচিতদের সঙ্গে দেখা হ’ল। তাঁরা আমারসম্পর্কে যা কিছু শুনেছেন, সেসব আবার মনে করাচ্ছিলেন।
একটা সময় ছিল, এই গরুড়চট্টিতে জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বছর অতিবাহিত করার সৌভাগ্য হয়েছে। এই মাটিতেইভবঘুরে সন্ন্যাসীর জীবন কাটিয়েছি। কিন্তু হয়তো বাবা কেদারনাথের ইচ্ছে ছিল না যেআমি তাঁর চরণে সময় কাটাই আর তাই বাবা আমাকে ফেরৎ পাঠিয়ে দেন। আর বাবার ইচ্ছেতেই,শুধু বাবা নয়, দেশের ১২৫ কোটি বাবার সেবাকেই ব্রত করে নিয়েছি। আমাদের মণীষীরাবলেছেন, জনসেবাই প্রভুর সেবা। আর সেজন্য আমার জন্য ১২৫ কোটি দেশবাসীর সেবাইঈশ্বরের সেবা, এটাই বদ্রী বিশালের সেবা, এটাই মন্দাকিনীর সেবা, এটাই মা গঙ্গারসেবা। আর সেজন্য আজ আরেকবার সংকল্পবদ্ধ হয়ে, এখান থেকে নতুন শক্তি অর্জন করে,ভোলেবাবার আশীর্বাদ নিয়ে পবিত্র মনে দৃঢ়সংকল্প নিয়ে ২০২২ সালে ভারতের স্বাধীনতার৭৫ বছর পূর্তির আগেই ভারত’কে বিশ্বে সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছে দিতে চাই। বাবারআশীর্বাদে প্রত্যেক ভারতীয়র মনে সেই চেতনা জাগবে। প্রত্যেক ভারতীয় সেই সংকল্পসিদ্ধ করতে প্রাণপনে চেষ্টা করবে।
এই সংকল্প নিয়ে আমি সবার আগে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত এই অঞ্চলেবিপর্যয়ের সময় স্থানীয় এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নিহত পর্যটকদের আত্মারপ্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই। দেশের প্রত্যেক প্রান্তের মানুষ এখানে ছিলেন। আমি তখন একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, অন্যরাজ্যে নাক গলানোর আমার কোনও অধিকার ছিল না। কিন্তু সেই সময় আমার মনের স্বাভাবিকসংবেদনশীলতা থেকেই পৌঁছে গিয়েছিলাম, নিজেকে আটকাতে পারিনি। ভালো করেছি না খারাপকরেছি তা ইতিহাস বিচার করবে!
সেই সময়ে আমি এই রাজ্যের সরকারের কাছে আবেদন জানাই যাতে, সেই পীড়িতদেরত্রাণ ও পুনর্বাসনে এবং কেদারনাথের পুনর্নির্মাণের কাজ আমাদের দেওয়া হয়। ঘরেরমধ্যে আমার সঙ্গে কথা বলে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী রাজি হলেন, এই রাজ্যের সমস্ত উচ্চপদাধিকারী আধিকারিকরা রাজি হলেন; আমিও ঘর থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে আমারসংকল্পের কথা ঘোষণা করে দিলাম! সেই খবর টিভিতে প্রচার হতেই দিল্লিতে ঝড় উঠে যায়।গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী কেদারনাথেও ত্রাণ ও পুনর্বাসনের দায়িত্ব নেবে – এটা তাঁরামেনে নিতে পারেননি। এক ঘন্টার মধ্যেই রাজ্য সরকারের ওপর এমন চাপ আসে যে রাজ্যসরকারকে অতিরিক্ত ঘোষণা করতে হয় যে, আমাদের গুজরাটের সাহায্যের প্রয়োজন নেই, আমরাইকরে নেব! আমি ভাবলাম, কী আর করব, দিল্লিতে বসে থাকা বড় বড় মানুষের সমস্যা হলে আমিকী করব! আমি সরে গেলাম। কিন্তু হয়তো বাবারই ইচ্ছে ছিল যে, একাজ বাবার এই ছেলেরহাতেই হওয়ার ছিল।
আর যখন উত্তরাখন্ডের মানুষের প্রবল সমর্থনে এই রাজ্যে ভারতীয় জনতা পার্টিরসরকার হ’ল, তখন আমার বিশ্বাস পাকা হয় যে, এটাই বাবার ইচ্ছা, এই কাজ আমাকেই করতেহবে; আর কপাট খোলার আগেই এখানে পৌঁছে গেছি, আর বাবার শ্রীচরণে আরেকবার নিজেকেনিবেদন করেছি। কেদারনাথের প্রকৃতি ও পরিবেশের অনুকূল এমন ভবন পুনর্নির্মাণেরপ্রকল্প আজ শিলান্যাস হ’ল। এখানকার পুরোহিতদের জন্য কেমন থাকার জায়গা হবে,পণ্ডিতরা যে সমস্যায় ভুগছেন, সেগুলি থেকে কিভাবে মুক্ত হবেন – এসব ভাবনাকেকেন্দ্রে রেখে পুনর্নির্মাণের নক্শা বানানো হয়েছে। আমি নিজে নিয়মিত বৈঠকে উপস্থিতথেকেছি, নক্শা থেকে স্থাপত্যকলা সবকিছু ভালোভাবে খতিয়ে দেখে এই উন্নয়নের প্রকল্পগড়ে তোলা হয়েছে।
এখন পুরোহিতের জন্য যে বাড়ি তৈরি হবে, সেগুলি এক প্রকার ‘থ্রি ইন ওয়ান’হবে। নীচে তীর্থযাত্রীদের জন্য থাকার সুবন্দোবস্ত আর উপরতলায় পুরোহিত নিজে থাকবেনআর তাঁর যত যজমান আসবেন, যত অতিথি আসবেন, তাঁদের থাকার বন্দোবস্ত করতে পারবেন।সবকটা বাড়িতেই ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ আর জলের ব্যবস্থা থাকবে, পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থাথাকবে। এই সড়কটিকে অনেক প্রশস্ত করা হবে; আর তারপর পুরোহিতদের জন্য স্বতন্ত্রব্যবস্থা করা হবে।
অনেক বেশি তীর্থযাত্রী এলে পুজোর প্রসাদ, তীর্থ ক্ষেত্রের নানা সামগ্রীযাতে কিনতে পারেন সে ব্যবস্থা করা হবে। ডাকঘর, ব্যাঙ্ক, টেলিফোন, কম্প্যুটার ওইন্টারনেটের ব্যবস্থা করা হবে।
এখানে আজ এক প্রকার বলতে গেলে পাঁচটি প্রকল্পের সূচনা হচ্ছে। প্রথমত – আমিযেমন বললাম, গোটা রাস্তাটা প্রশস্ত করা, আরসিসি দিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে নির্মাণ করাহবে। তীর্থযাত্রীরা যখন আসতে শুরু করবেন, মন্দস্বর মন্দাকিনীর তট থেকে সেই সঙ্গীতওশুনে ভক্তিতে আপ্লুত হয়ে এদিকে পা বাড়াবেন।
মন্দাকিনী ঘাট এবং ‘রিটেইনিং ওয়াল’-এর নির্মাণও এমনভাবে করা হবে, যাতেপর্যটকরা সেগুলির ওপর বসে বহতা নদীর কলকল স্বর শুনতে পান। প্রশস্ত অ্যাপ্রোচ রোডেরকথা আগেই বলেছি, এই পথের দু’পাশে এমন আলোর ব্যবস্থা করা হবে, যাতে দু’পাশেরজনশক্তির অনুভব পর্যটকদের রোমাঞ্চিত করে।
একইভাবে, মা সরস্বতীর ‘রিটেইনিং ওয়াল’-এর নির্মাণও করা হবে। এজন্যও অনেকটাকা খরচ হবে!
আরেকটি শ্রদ্ধার বিষয়, আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে করেলের কাগড়িতেজন্মগ্রহণ করে এক বালক সাত বছর বয়সে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। হিমাচল ও কাশ্মীর থেকেকন্যাকুমারী পর্যন্ত পদব্রজে ঘোরেন। প্রত্যেক্ ভূ-ভাগের মাটি দিয়ে নিজের কপালেতিলক কেটে একদিন তিনি কেদার পৌঁছোন, আর এখানেই বাকি জীবন অতিবাহিত করেন। সেইমহাপুরুষ আদি শঙ্করাচার্য, যাঁর দর্শন বিগত আড়াই হাজার বছর ধরে ভারত তথা বিশ্বকেপ্রভাবিত করে যাচ্ছে, এই দুর্বিপাকে তাঁর সমাধিস্থল বিনষ্ট হয়ে গেছে। আমরা এটিরপুনর্নির্মাণ করব। এর নক্শা কেমন হবে, সেটা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আমি শ্রদ্ধা ওবাস্তুকলাকে আমন্ত্রণ জানাই, যাতে এমন একটি সমাধিস্থলকে আমরা পুনর্নির্মাণ করতেপারি, যেটিকে কেদারতীর্থ থেকে আলাদা না মনে হয়, কিন্তু সেটির কাছে গেলেতীর্থযাত্রীরা আদি শঙ্করাচার্যের মহান তপস্যাকে অনুভব করেন, আধ্যাত্মিক অনুভবে ঋদ্ধহন – আজ সেটিরও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হবে।
আমি জানি অনেক টাকা খরচ হবে। কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, ভারতেরতীর্থযাত্রীরা শ্রদ্ধাবনত হয়ে যদি ঠিক করেন, তা হলে যেরকম পুনর্নির্মাণের কথা ভাবাহচ্ছে, সেরকম পুনর্নির্মাণ করতে দেশ কখনো পিছিয়ে থাকবে না! আমি দেশের রাজ্যসরকারগুলির কাছেও আবেদন রাখব, শিল্পপতিদের কাছেও আবেদন রাখব যে, আপনাদের ‘কর্পোরেটসোস্যাল রেসপন্সিবিলিটি ফান্ড’ থেকে হাত বাড়িয়ে দিন, ব্যবসায়ীদেরও পাশে দাঁড়ানোরজন্য অনুরোধ জানাব।
আমি জেএসডব্ল্যু’র কাছে কৃতজ্ঞ, তারা প্রারম্ভিক দায়িত্ব পালনের উদ্যোগ নিয়েছেন।কিন্তু আমার নানা স্বপ্ন, নতুন নতুন বিষয় যুক্ত করা, তার বাস্তবায়নের জন্য আরওসিএসআর-এর অবদান রাখতে আহ্বান জানাব।
এখানে যখন এত অর্থের প্রয়োজন, এত পরিকাঠামো নির্মাণের কাজ, এতে পরিবেশসুরক্ষার সমস্ত নিয়ম মেনেই কাজ হবে। স্থানীয় রুচি, প্রকৃতি, প্রবৃত্তি অনুসারেইপুনর্নির্মাণ করা হবে। এতে আধুনিকতার ছাপ অবশ্যই থাকবে, কিন্তু শতাব্দীর পরশতাব্দীকাল ধরে কেদারে বিরাজমান আত্মাকে যাতে অনুভব করা যায়, সেরকমভাবেইপুনর্নির্মাণ করা হয়।
কপাট উন্মোচনের সময় আমি যখন এখানে এসেছিলাম, দেশকে একটি বার্তা পৌঁছে দিতেচেয়েছিলাম যে, ঐ বিপর্যয়ের ছায়া থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। না হলে, আমরা ঘরথেকে বেরিয়ে আসার আগেই ভাবতে বসব, না জানি যেতে পারব কি না, থাকা-খাওয়ারসুবন্দোবস্ত হয়েছে কি না! সেজন্য যাত্রীদের সংখ্যা কমে গিয়েছিল। কিন্তু আমি খুশিযে, এবার এত কম সময়ের মধ্যে সাড়ে চার লক্ষেরও বেশি যাত্রী বাবার চরণস্পর্শ করতেএসেছেন। ইতিমধ্যেই এই যাত্রায় পুণঃপ্রাণসঞ্চার হয়েছে। আর সেজন্য দেখবেন, আগামী বছর১০ লক্ষের কম তীর্থযাত্রী আসবেন না – লিখে রাখতে পারেন! কারণ মানুষের মনে আস্থাফিরেছে, বার্তা পৌঁছে গেছে, টিভির পর্দায় আজকের অনুষ্ঠান থেকেও অনেকে জানবেন!সেজন্য দেখবেন, আগামী বছর কপাট উন্মোচনের সময়ই যখন যাত্রা শুরু হবে, দেখবেন কতমানুষ আসবেন! আরেকবার উত্তরাখন্ড, আমাদের দেবভূমি, আমাদের বীরভূমির বীরমাতাদেরশ্রদ্ধা জানাতেও অসংখ্য মানুষ আসবেন।
আমাদের দেশে হিমালয়ের অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। উন্নয়নের এত সম্ভাবনা আরহিমালয়ের প্রতিটি ভূ-ভাগের একটি স্বতন্ত্র চেতনা রয়েছে। শ্রীনগরে গেলে হিমালয়েরএরকম অনুভূতি, মা বৈষ্ণোদেবীর মানালীর আলাদা অনুভূতি, উত্তরাখন্ডের হিমালয়ের কোলেএরকম দিব্য চেতনা, আবার দার্জিলিং কিংবা সিকিম গেলে অন্যরকম অনুভূতি হয়। আপনারাকল্পনা করতে পারেন যে, একই হিমালয়, একই বাতাস, একই বরফ, কিন্তু ভিন্ন ভিন্নভূ-ভাগে ভিন্ন অনুভূতি মানুষের মনে সঞ্চারিত হয়।
আমি হিমালয়ের কোলে অনেক বছর ধরে ঘুরে বেরিয়েছি। প্রতিটি অঞ্চলের চেতনাকেআলাদাভাবে অনুভব করেছি। সেজন্য নিজের অনুভূতির কথা বলছি। জানি না বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারেএই অনুভূতিগুলিকে আলাদাভাবে মাপা যাবে কি না! কিন্তু আমি হিমালয়কে যেভাবে অনুভবকরেছি তা বিশ্ব পর্যটকদের বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলীর জন্য, বনসম্পদের অন্বেষণেজীবনভর কাটিয়ে দেওয়ার মতো উন্মুক্ত। যাঁরা নানারকম জড়ি-বুটি এবং ভেষজ ওষধিতেআগ্রহী – সবাইকে হিমালয় হাত বাড়িয়ে ডাকছে। এখানকার গ্রামের সাধারণ মানুষও অনেকভেষজ ওষুধের ব্যবহার জানেন। বিষাক্ত কোনও কিছু দংশন করলে গ্রামের মানুষ এমন সবগাছের পাতা খুঁজে এনে লাগিয়ে দেন যে, কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্বালাযন্ত্রণা কমে যায়।ঈশ্বর সব ব্যবস্থা করে রেখেছেন। একথা মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় সরকার দেরাদুনে দেশেরপ্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে গবেষণার জন্য একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে।
আমাদের হিমালয়ের কোলে জৈব চাষের মাধ্যমে উৎপাদিত ফসল গোটা বিশ্বে রপ্তানিকরার সামর্থ্য রয়েছে, সম্ভাবনা রয়েছে। সিকিম, দেশের একটি ছোট রাজ্য। জনসংখ্যা ৬-৭লক্ষ মাত্র। কিন্তু প্রতি বছর ১২-১৫ লক্ষ পর্যটকের সমাগম হয়। ঐ রাজ্যে যাতায়াতেরপথও দুর্গম, বিমানবন্দরও নেই। এখন আমরা ঐ রাজ্যে বিমানবন্দর বানাচ্ছি, কিছুদিন পরইসেটা তৈরি হয়ে যাবে। এতসব অভাব সত্ত্বেও সিকিমে এত পর্যটক আসেন। সিকিম গোটারাজ্যকে জৈব চাষের রাজ্যে রূপান্তরিত করেছে।
১০-১২ বছর ধরে লাগাতার আন্তর্জাতিক মাপকাঠি মেনে কাজ করে গেছে। যখন সুখেরমুখ দেখছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, হিমালয়ের কোলে দেশের যতগুলি রাজ্য রয়েছে প্রতিটিরাজ্যই চাষের ক্ষেত্রে কীটনাশক স্প্রে করা বন্ধ করুক, ১০-১২ বছর কষ্ট করার পর দেখবেন,এখন যে ফলন বিক্রি করে ১ টাকা পাওয়া যায়, জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত একই ফলনের জন্য তখনবিদেশি মুদ্রায় ১ ডলার পাওয়া যাবে, এটাই জৈব চাষের শক্তি।
আমি উত্তরাখন্ডকে আমন্ত্রণ জানাই। উত্তরাখন্ডের সরকারকে অনুরোধ,উত্তরাখন্ডের আধিকারিকদের অনুরোধ করছি, চেষ্টা করে দেখুন। ২০২২ সালের মধ্যেউত্তরাখন্ডকে সম্পূর্ণ জৈব রাজ্য গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে কাজ শুরু করুন। শংসাপত্র পেতেহয়তো আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে বছর দশেক লেগে যাবে! কিন্তু একবার সিদ্ধান্ত নিয়েজনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলে জন-জাগৃতি আসবে, সবকিছু বদলে যাবে! আপনারা কল্পনাকরতে পারেন, আজ গোটা বিশ্ব পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য সুরক্ষার পথে এগিয়ে চলেছে। এইঅভিযান সারা পৃথিবীকে কীটনাশক মুক্ত ফসল উৎপাদনে উৎসাহিত করলে মানুষ ক্রমে ১০০শতাংশ জৈব চাষের দিকে ঝুঁকলে মানবতার কত বড় কল্যাণ হবে। হিমালয়ের এই শক্তিকেনিজেদের কল্যাণে পর্যবসিত করতে হবে।
পর্যটনের ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। দেখতে হবে যাতে, এর আধ্যাত্মিকসামর্থ্যের গায়ে সামান্য আঁচড়ও না লাগে! পাশাপাশি পর্যটনকে আরও উন্নত করা যেতেপারে। নতুন নতুন ক্ষেত্র বিকশিত করতে হবে। প্রকৃতির সুরক্ষা সুনিশ্চিত করে,পরিবেশের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করে, পরমাত্মার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কাজ করে যেতে হবে।
আমাদের দেশের পাহাড়ে একটি পুরনো লোককথা আছে, পাহাড়ের একটা স্বভাব হ’ল যে,পাহাড়ের যৌবন আর পাহাড়ের জল-পাহাড়ের কোনও কাজে লাগে না! আমরা এই লোককথাকেপরিবর্তনের চেষ্টা করছি। পাহাড়ের যৌবন এবং জল যাতে পাহাড়ের কাজে লাগে তা সুনিশ্চিতকরার চেষ্টা করছি। ঐ জল দিয়ে পাহাড়েই যাতে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়, সেই জলে ‘জলক্রীড়া’ এবং ‘অভিযান পর্যটন’-এর ব্যবস্থা করলে আমাদের পাহাড়গুলিতে অভিযাত্রীপর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে যুবসম্প্রদায়েরজলক্রীড়ায় পারদর্শী পর্যটকরা এলে আমাদের পাহাড়ের অনেক ছেলেমেয়েও একটিপ্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে দ্রুত সাফল্য অর্জন করতে পারবে। জলক্রীড়া ব্যবস্থাপনাথেকে শুরু করে গাইডের কাজে পারদর্শিতা বৃদ্ধি পাবে। তখন কর্মসংস্থানের অন্বেষণে যেযুবক-যুবতীদের সমতলে যেতে হয়, তাঁদের মধ্যে অনেকের পাহাড়েই কর্মসংস্থান হবে। এইচিন্তা মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
উত্তরাখন্ডের নবনির্বাচিত সরকারও এত কম সময়ে গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্তনিয়েছে, উদ্যোগ নিয়েছে যে, আজ উন্নয়ন এক নতুন উচ্চতার দিকে এগিয়ে চলেছে। একটি নতুনআত্মবিশ্বাসের আবহ গড়ে উঠেছে।
উত্তরাখন্ডের অনেক বেশি সামর্থ্য রয়েছে। নিয়মানুবর্তিতা এখানকার মানুষেরশিরা-ধমনীতে প্রবাহিত। এমন কোনও পরিবার নেই, যে পরিবার থেকে কেউ সেনাবাহিনীতে যাননি। এমন কোনও গ্রাম নেই, যেখানে ২৫০-৩০০ প্রাক্তন সৈনিক থাকেন না। যে রাজ্য থেকেদেশ এত সৈনিক পায়, সে রাজ্যের মানুষের চরিত্রে নিয়মানুবর্তিতা যে প্রশংসনীয় হবে,তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তীর্থযাত্রী এবং অন্যান্য পর্যটকদের জন্যওনিয়মানুবর্তিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই শক্তিকে তুলে ধরে পরিচিত করানোর জন্যআমাদের পরিকল্পনা গড়ে তুলতে হবে। আমাদের রাজ্যে ভূতপূর্ব সৈনিকদের অভিজ্ঞতাকে কাজেলাগিয়ে পর্যটকদের মনে নতুন বিশ্বাস গড়ে তুলতে আমরা নানারকম ব্যবস্থা গড়ে তোলারপরিকল্পনা নিয়েছি। অনেক সম্ভাবনা রয়েছে, সেসব সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করেউত্তরাখন্ডের উন্নয়ন করতে চাইছি, যাতে এটি দেশের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ কেন্দ্র হয়েওঠে, আর তীর্থযাত্রী, পর্যটক, অভিযাত্রী, প্রকৃতি-প্রেমিক, গবেষক ও আবিষ্কারকদেরআকর্ষণ করে উত্তরাখন্ড।
আমি আপনাদের সবাইকে আমন্ত্রণ জানাই। আসুন, এই দীপাবলি উৎসবের দিনগুলিতে,নববর্ষের প্রারম্ভিক দিনগুলিতে পুরনো হিসাবের খাতা বন্ধ করে নতুন খাতা শুরু করারদিনে আমরা একটি নতুন উন্নয়নের হিসাবের খাতা শুরু করি। তবেই আমরা এই উন্নয়নকে নতুনউচ্চতায় পৌঁছে দিতে পারব। আমি আজও বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছি, রাজ্য সরকার সেগুলিনিয়ে পুনর্বিচার করবে। দু-এক মাস পর আবার আসব। এই অঞ্চলে যা যা করার কথা ভেবেছি,সেগুলি বাস্তবায়নে জোর দেব। কিন্তু পরিবেশের সুরক্ষা আমাদের সকলের দায়িত্ব। আমরাপরিবেশকে রক্ষা করলে নিশ্চিত যে পরিবেশও আমাদের রক্ষা করবে।
ইতিহাস সাক্ষী আছে যে, শতাব্দীর পর শতাব্দীকাল ধরে যখনই মানুষ পরিবেশ ওপ্রকৃতির সুরক্ষায় যত্নবান হয়েছেন, তখন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও হ্রাস পেয়েছে। ভারতেরসংস্কৃতি আমাদের সেই শক্তি প্রদান করে।
আমরা একটা অভিযান শুরু করেছি। কাঠের উনুন থেকে মা ও বোনেদের মুক্তি দিয়েগাছ কাটার প্রয়োজন হ্রাস করে প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে দরিদ্র থেকেদরিদ্রতর পরিবারে রান্নার গ্যাসের সংযোগ প্রদান করেছি। এভাবে আমরা পরিবেশ সুরক্ষারখাতিরে উত্তরাখন্ড সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার মিলিত অভিযান চালিয়ে অনেক সাফল্যপেয়েছি।
দ্বিতীয় অভিযান শুরু করেছি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। ভারতেআজও ৪ কোটি এমন পরিবার রয়েছেন, যাঁদের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। আজও তাঁরা অষ্টাদশকিংবা উনবিংশ শতাব্দীর মতো জীবনযাপনে অভ্যস্ত। এখন আপনারা বলুন, এই একবিংশশতাব্দীতে স্বাধীন দেশের দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম পরিবারে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে হবে কি,হবে না! আজও অনেক গরিবকে গম পিষিয়ে আটা করাতে ১০ কিলোমিটার হাঁটতে হয়। তাঁরা যদিনিজের গ্রামেই এই কাজটি করাতে পারেন, নিজের গ্রামেই বিদ্যুৎ-চালিত চাকতি থাকে, আরসেখানেই যদি তাঁরা গম বা বাজরা পিষিয়ে আটা করাতে পারেন, তা হলে অনেক পরিশ্রম, সময়ও অর্থের সাশ্রয় হয়। এই সাশ্রয়ের কথা ভেবে আমরা প্রধানমন্ত্রী সৌভাগ্য যোজনা নামেঅবশিষ্ট ৪ কোটি পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার অভিযান শুরু করেছি। এদের মধ্যে উত্তরাখন্ডেরওকয়েক হাজার পরিবার রয়েছে।
আমি উত্তরাখন্ড সরকারকে আহ্বান জানাই যে, কেন্দ্রীয় সরকারের এই অভিযানেআপনারাও সামিল হন। আমরা চাই যে, সংশ্লিষ্ট প্রতিটি রাজ্যের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাবগড়ে উঠুক। কোন্ রাজ্য সবার আগে সৌভাগ্য যোজনা বাস্তবায়িত করতে পারল, কোন্ রাজ্যেসবার আগে প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা সফল হ’ল, কোন্ রাজ্য সবার আগে পর্যটনেসাফল্য পেল! আমি বিশেষ করে হিমালয় সন্নিহিত রাজ্যগুলিকে আহ্বান জানাচ্ছি যে,আপনারা স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করুন, আর এভাবে নিজের রাজ্য তথা দেশেরউন্নয়নকে নতুন গতি প্রদান করুন।
গ্রামে গ্রামে শৌচালয় নির্মাণের সাফল্যের জন্য আমি উত্তরাখন্ডকে অভিনন্দনজানাই। এখন আর এই রাজ্যে কোনও গ্রামের মানুষকে খোলা মাঠে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতেযেতে হয় না। শহরগুলিতেও দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে চলেছে। আমার বিশ্বাস, কিছুদিনেরমধ্যেই উত্তরাখন্ড খোলা মাঠে প্রাকৃতিক কর্ম মুক্ত রাজ্য হিসাবে ঘোষিত হবে।
ইতিমধ্যেই আপনারা উন্নয়নে যে গতি এনেছেন, তার জন্য অভিনন্দন জানাই। কিন্তুআমি এই প্রক্রিয়াকে যুদ্ধকালীন তৎপরতার রূপ দিতে চাই। শহরেও যেন কাউকে বাধ্য হয়েপ্রাকৃতিক কর্ম সমাপনে উন্মুক্ত স্থানে না যেতে হয়। কিছুদিন আগেই উত্তর প্রদেশগিয়েছিলাম। সে রাজ্যে যোগীজির নেতৃত্বাধীন সরকার বড় অভিযান শুরু করেছে। তারাইতিমধ্যেই শৌচালয়ের নাম বদলে রেখেছে ‘ইজ্জত ঘর’।
আমি মনে করি, যে মা-বোনদের বাধ্য হয়ে উন্মুক্ত স্থানে প্রকৃতির ডাকে সাড়াদিতে যেতে হয়, তাঁরা হাড়ে হাড়ে বোঝেন ‘ইজ্জত ঘর’ শব্দটির ব্যঞ্জনা। মা-বোনেদেরসম্ভ্রম রক্ষায় শৌচালয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সম্প্রতি ইউনিসেফ-এরপ্রতিনিধিরা ভারতের নানা প্রান্তে ১০ হাজার গ্রামে সমীক্ষা চালিয়ে রিপোর্ট দিয়েছেনযে, যেসব বাড়িতে শৌচাগার নেই, সচেতনতার অভাবে তাঁদের পরিবারে যে অপরিচ্ছন্নতাজনিতঅসুখ-বিসুখ হয়; কোনও শিশু অসুস্থ হলে মা’কে তার পেছনে অনেকটা সময় দিতে হয়, বাবাঅসুস্থ হলে ছেলের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়, ‘দিন আনি দিন খাই’ পরিবারে সকল সদস্যকেইতখন উপোস করে থাকতে হয় – এসব কিছু বিচার করে তাঁরা দেখেছেন যে, শৌচালয় না থাকলেপরিবার পিছু অসুস্থতার পেছনে বার্ষিক ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। আপনারা ভাবুন, একটিদরিদ্র পরিবারে বছরে ৫০ হাজার টাকা সাশ্রয় হলে পরিবারটি কতটা স্বচ্ছল হতে পারে!
একটি শৌচালয় জীবন বদলে দিতে পারে। সেজন্য সারা দেশের মানুষের সহযোগে যতটাশ্রদ্ধা নিয়ে আমরা বাবা কেদারনাথের ধাম পুনর্নির্মাণ করাচ্ছি, ততটাই শ্রদ্ধা নিয়েদেশের গরিবদের জন্য শৌচালয় নির্মাণের অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছি। এভাবেই দেশ এগিয়েযাবে – এই মনোভাব নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
আমি আরেকবার উত্তরাখন্ড সরকারকে অভিনন্দন জানাই, ধন্যবাদ জানাই। আর সারাদেশ থেকে যাঁরা চার ধাম তীর্থযাত্রায় বেরিয়ে এখানে এসে পৌঁছেছেন, তাঁরা জানেন যে,আমরা এই চার ধামের মধ্যে সংযোগ রক্ষার জন্য আধুনিক সড়কপথ নির্মাণের কাজ শুরুকরেছি।
এখন এই কেদারনাথের এরকম পুনর্নির্মাণ হবে, যাতে আমার-আপনার কেদারনাথ হয়েউঠবে ‘ভব্য’ এবং ‘দিব্য’। উত্তম প্রেরণাস্থল হয়ে উঠবে এই ১২৫ কোটি মানুষের শ্রদ্ধাকেন্দ্রটি। এদেশের প্রতিটি সন্তান স্বপ্ন দেখেন যে, বৃদ্ধ বাবা-মা’কে কখনো না কখনোচার ধাম তীর্থ করাব।
আজ বর্তমান সরকার দেশবাসীর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।উত্তরাখন্ডের মাটিতে এই কর্মযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হলেও এটি গড়ে উঠছে ভারতের নানা প্রান্তথেকে তীর্থ করতে আসা প্রত্যেক দেশবাসীর জন্য। আজ আপনাদের সামনে এই কর্মযজ্ঞেরআনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।
আপনাদের সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আরেকবার বাবা ভোলানাথকে প্রণাম জানাই।আপনাদের অনুরোধ আমার সঙ্গে মুষ্টিবদ্ধভাবে হাত তুলে সকলে সমস্বরে সর্বশক্তি দিয়েবলুন – জয় জয় বাবা ভোলে, জয় জয় বাবা ভোলে, জয় জয় বাবা ভোলে, জয় জয় বাবা ভোলে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।