মঞ্চে উপস্থিত সমস্ত মাননীয় ব্যক্তিবর্গ এবং আজকের এই পবিত্র দিবসে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমাগত প্রিয় ভক্ত ভাই ও বোনেরা।
শ্রী গুরু রবিদাসজির জয়ন্তী উপলক্ষে আপনাদের সবাইকে এবং সারা পৃথিবীতে তাঁর অনুগামীদের অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।
আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে গুরু রবিদাসের আশীর্বাদে নিজের প্রতিশ্রুতি পালনের জন্য আপনাদের মাঝে আরেকবার আসতে পেরেছি। ২০১৬ সালে আজকের দিনে এখানে প্রণাম জানিয়ে আপনাদের সঙ্গে পংক্তিভোজনেরসৌভাগ্য আমার হয়েছিল। তখনই আমি এই প্রাঙ্গণ এবং জন্মস্থানটির সৌন্দর্যায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। তারপর যখন উত্তরপ্রদেশে যোগীজির নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়েছিল, তখন তাঁকে একটি ব্যাপক প্রকল্প গড়ে তোলার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। আমি অত্যন্ত আনন্দিত, কয়েক দশক ধরে আপনারা যে দাবি জানিয়ে আসছিলেন, তা কোন সরকারই পূরণ করছিল না। আজ আমরা সেই দাবি পূরণের শুভ সূচনা করলাম।
সকল ভক্তজনকে জানাই, প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগে এই সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যায়নের প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে। সেজন্য বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখান পর্যন্ত যে সড়কটি রয়েছে, সেটির আধুনিকীকরণ করা হবে। পাশাপাশি, ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ আরেকটি সড়ক নির্মিত হবে। গুরু রবিদাসজির একটি ব্রোঞ্জের মূর্তি নির্মিত হবে। কমিউনিটি হল এবং অন্যান্য পর্যটক-বান্ধব পরিষেবা গড়ে উঠবে। অর্থাৎ, এই প্রকল্প সম্পূর্ণ হওয়ার পর এখানে যে লক্ষ লক্ষ ভক্ত ও পর্যটকরা আসবেন, তাঁরা সমস্ত সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
বন্ধুগণ, এখানকার সাংসদ হিসেবে সন্ত রবিদাসজির এই জন্মস্থানকে এভাবে সাজিয়ে তোলার সৌভাগ্য আমার হচ্ছে। ভারতের সামাজিক জীবনকে নতুন আলোকবর্তিকা প্রদর্শন এবং প্রেরণা যুগিয়েছে এই মাটি। সন্ত রবিদাসজির জীবন দর্শন অত্যন্ত সরল জীবনযাপনের পথ দেখায়। তিনি বলতেন,
“এয়সা চাহু রাজ মেঁ, যহাঁ মিলে সবন কো অন্ন,
ছোট-বড়ো সব সমান বসে, রবিদাস রহে প্রসন্ন।”
অর্থাৎ, গুরুজি এমন ভারতের কল্পনা করেছিলেন যেখানে কোনরকম ভেদভাব না রেখে সকলের মৌলিক প্রয়োজনগুলি পূরণের দিকে লক্ষ্য রাখা হবে।
বন্ধুগণ, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার বিগত সাড়ে চার বছরে সততার সঙ্গে এই ভাবনাগুলি নিয়ে এগিয়ে চলেছে। ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ এবং উন্নয়নের পঞ্চধারা, অর্থাৎ, ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা, যুবসম্প্রদায়ের কর্মসংস্থান, বয়স্কদের ঔষধি, কৃষকদের সেচের জল এবং প্রত্যেক মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা শোনা সুনিশ্চিত করার জন্য আমাদের সরকার নিয়মিত কাজ করে চলেছে। একটু পরেই আমি বেনারসে দুটো ক্যান্সার হাসপাতাল সহ অনেক স্বাস্থ্য পরিষেবার উদ্বোধন কিংবা শিলান্যাস করতে যাচ্ছি। তাছাড়া, বারাণসী এবং পূর্ব উত্তরপ্রদেশের জীবনকে সহজ করে তোলার অনেক প্রকল্প আজ এখান থেকে শুরু হবে। এই প্রকল্প দ্বারা সমাজের প্রত্যেক অংশের মানুষ উপকৃত হবেন।
ভাই ও বোনেরা, আমাদের সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপে শ্রী গুরু রবিদাসজির ভাবনার অনুকূল। গরিব পরিবারগুলিকে পাকা বাড়ি, প্রত্যেক বাড়িতে নিজস্ব শৌচালয়, প্রত্যেক পরিবারকে উজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস সংযোগ, বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ, পরিবারপিছু ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং গরিব ও মধ্যবিত্ত যুবসম্প্রদায়ের জন্য কোনরকম গ্যারান্টি ছাড়া ব্যাঙ্ক থেকে মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে ঋণ প্রদান, কৃষকদের প্রতিটি খেতে সেচের জল পৌঁছনো এবং এখন দেশের প্রায় ১২ কোটি গরিব কৃষক পরিবারকে প্রতি বছর সরাসরি ৬ হাজার টাকা অনুদান। যাঁরা চির বঞ্চিত ও উপেক্ষিত, তাঁদের পাশে এই সরকার সবসময় রয়েছে।
গুরুদেব বলতেন, জাতপাত, সম্প্রদায়ের ঊর্ধ্বে উঠে প্রত্যেক মানুষের সেবা করা উচিৎ। তিনি বলতেন –
“জাতি-জাতি মেঁ জাতি হ্যায়ঁ, জো কেতন কে পাত।
রৈদাস মনুষ না জুড় সকে, জব তক জাতি ন জাত। ”
অর্থাৎ, জাতি কলাপাতার মতো যেখানে পাতার ভেতরেও পাতা থাকে। সেজন্য যখন জাতির নামে ভেদভাব হয়, তখন সকল মানুষ পরস্পরের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে যুক্ত হতে পারে না, সামাজিক সদ্ভাবনা, ঐক্য ও সমতা গড়ে ওঠা সম্ভব হয়। বন্ধুগণ, গুরুর প্রদর্শিত এই পথে যদি সততার সঙ্গে আমরা কাজ করে যেতাম, তাহলে এতদিনে ভারত জাতপাতের নামে সমস্ত অত্যাচার থেকে মুক্ত হত। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ এমনটি হয়নি।
ভাই ও বোনেরা, নতুন ভারতে এই পরিস্থিতি পরিবর্তিত হবে। আমাদের নবীন বন্ধুরা যাঁরা ডিজিটাল ইন্ডিয়ায় প্রযুক্তির যুগে সামাজিক এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার অংশ হয়ে উঠবেন, তাঁরা সবাই মিলে এই পরিস্থিতি বদলে দেবেন। তাঁদের স্বার্থকে চিহ্নিত করতে হবে। যাঁরা শুধুই রাজনৈতিক স্বার্থে জাতপাতকে টিকিয়ে রাখতে চায়।
বন্ধুগণ, গুরু রবিদাস আমাদের আরেকটি সামাজিক ত্রুটির কথা বলেছেন, তা হল বেইমানি – অন্যের অধিকার হরণ করে নিজেদের স্বার্থরক্ষা। গুরুজি বলেছিলেন –
“শ্রম কউ ইসর জানি কেই, জউ পুজে হী দিন-রৈন।”
অর্থাৎ, সত্যিকারের শ্রমই ঈশ্বরের আসল রূপ। সততার সঙ্গে যে কাজ করা হয়, সেই রোজগার থেকেই জীবনে সুখ ও শান্তি পাওয়া যায়। বিগত সাড়ে চার বছর ধরে আমরা এই ভাবনাকেই রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংস্কারের মাধ্যমে বাস্তবায়িত করার পথে এগিয়ে চলেছি। বিমুদ্রাকরণ, বেনামি সম্পত্তির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ এবং কালো টাকা উপার্জনের পথ বন্ধ করার প্রচেষ্টাকে আমাদের ব্যবস্থার অংশ করে তুলেছি। ভারতে এসব চলে – এই মানসিকতা সমাপ্ত করতে চেয়েছি।
বন্ধুগণ, সন্ত রবিদাসের আশীর্বাদে নতুন ভারতে অসদুপায়ের কোন জায়গা নেই। যাঁরা সততার সঙ্গে, পরিশ্রম করে এগিয়ে যেতে চান, তাঁদের জন্য সরকার প্রত্যেক স্তরে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত। সম্প্রতি আপনারা দেখেছেন, যাঁরা সততার সঙ্গে কর দেন, তেমন কোটি কোটি মধ্যবিত্ত মানুষের ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করযোগ্য আয় থেকে কর তুলে দেওয়া হয়েছে। একদিকে, যারা জনগণের অর্থ লুন্ঠন করে তাদের সাজা দেওয়া হচ্ছে, আর অন্যদিকে সততাকে সম্মান জানানো হচ্ছে।
ভাই ও বোনেরা, আমরা ভাগ্যবান যে এ ধরণের গুরু, সাধু, ঋষি, মুনি এবং মণীষীদের আমরা পথপ্রদর্শক হিসেবে পেয়েছি। তাঁদের জ্ঞানের এই মহান পরম্পরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে যেভাবে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলেছে, আমাদের সরকার প্রতিনিয়ত সেই পথেই চলার চেষ্টা করছে। গত বছর মগহরে আমি নিজে সন্ত কবীরের পূণ্য স্মারকের আধারশিলা নিজে স্থাপন করেছি, সারনাথে ভগবান বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত পবিত্র স্থানকে সংরক্ষণ ও সৌন্দর্যায়নের কাজ করা হয়েছে, তেমনই গুরুনানক দেবের ৫৫০তম জন্মজয়ন্তী সমারোহ গোটা বিশ্বে ব্যাপকভাবে পালন করা হয়েছে।
ভাই ও বোনেরা, আমাদের দেশ ও সমাজের জন্য যাঁরা অবদান রেখে গেছেন, তাঁদেরকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে সম্মান জানানোর ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার এবং উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সরকার কাজ করে চলেছে। এই সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যই আমাদের শক্তি, আমাদের প্রেরণা। আপনাদের জীবনকে সহজ ও সরল করে তুলতে গুরু রবিদাসজির প্রদর্শিত পথকে আমরা আরও মসৃণ করে তুলবো। আরেকবার আপনাদের সবাইকে শ্রদ্ধেয় গুরু রবিদাসজির জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে তাঁর জন্মস্থান সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যায়ণের প্রকল্পের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। শ্রদ্ধেয় গুরু মহারাজজির চরণে প্রণাম জানিয়ে আমার বক্তব্য এখানেই সম্পূর্ণ করছি। অনেক অনেক ধন্যবাদ।