আমি বলব – স্যর ছোটুরাম
আপনারা সবাই দু’বার করে বলবেন – অমর রহে অমর রহে।
স্যর ছোটুরাম – অমর রহে, অমর রহে।
স্যর ছোটুরাম – অমর রহে, অমর রহে।
স্যর ছোটুরাম – অমর রহে, অমর রহে।
স্যর ছোটুরাম – অমর রহে, অমর রহে।
সীমান্তে প্রহরারত দেশের বীর সেনানী, দেশের কোটি কোটি মানুষের জন্য পরিশ্রম করে ফসল উৎপাদনকারী কৃষক, আর আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ক্ষেত্রে দেশকে সর্বাধিক মেডেল এনে দেওয়া খেলোয়াড়দের রাজ্য হরিয়ানার মাটিকে আমি প্রণাম জানাই। দেশের নাম ও সম্মান বৃদ্ধিতে সম্মুখ সারিতে থাকা হরিয়ানাবাসীদের কোনও তুলনা হয় না।
মঞ্চে উপবিষ্ট হরিয়ানার মাননীয় রাজ্যপাল সত্যদেব নারায়ণ আর্যজি, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের সদস্য চৌধরী বীরেন্দ্র সিংজি, কৃষ্ণপাল গুর্জরজি, হরিয়ানার জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লালজি, জম্মু ও কাশ্মীরের মাননীয় রাজ্যপাল সৎপাল মালিকজি, হিমাচল প্রদেশের মাননীয় রাজ্যপাল এবং এই মাটির সন্তান আচার্য দেবব্রতজি, হরিয়ানা রাজ্যের মন্ত্রী আমার পুরনো বন্ধু ও ভাই ও পি ধনকড়জি, বিধায়ক সুভাষ বরালাজি এবং হরিয়ানার পাশাপাশি পাঞ্জাব ও রাজস্থান থেকে আগত আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা।
আমি আপনাদের দীনবন্ধু ছোটুরামের মর্মর মূর্তি উৎসর্গ করে অত্যন্ত আনন্দিত। এর থেকে বড় খুশির দিন আমার জন্য আর কী হতে পারে!
বন্ধুগণ, আমার সৌভাগ্য যে আজ সেই সাঁপলার মাটিতে দাঁড়িয়ে কৃষকদের অবিসংবেদী নেতা, কৃশকদের মসীহা, রহবরে আজম দীনবন্ধু চৌধরী ছোটুরামজি-র এত বড় ও শিল্প-সুষমামণ্ডিত মর্মর মূর্তির আবরণ উন্মোচন করতে পেরেছি। এখানে এই সভায় আসার আগে আমি চৌধরী ছোটুরামজি-র স্মৃতিতে নির্মিত সংগ্রহালয়টিও দেখে এসেছি। এখন এই সংগ্রহালয়ের পাশাপাশি এই সাঁপলার মাটিতে হরিয়ানার সর্ববৃহৎ সবচেয়ে উঁচু মূর্তি স্থাপনের ফলে এটি রোহতকের আরেকটি পরিচয় হয়ে উঠেছে। আর আমার সৌভাগ্য এই অক্টোবর মাসে কৃষকদের মসীহা স্য ছোটুরামের মূর্তি, হরিয়ানার বৃহত্তম মূর্তির আবরণ উন্মোচন করার সৌভাগ্য হয়েছে। আর আগামী ৩১শে অক্টোবর সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের জন্মদিবসে বিশ্বের সর্বোচ্চ মূর্তি উদ্বোধনের সৌভাগ্য হবে। এই দুই মহাপুরুষ-ই কৃষক ছিলেন। দেশের জন্য কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করে গেছেন। আরেকটি বিশেষ কথা হ’ল যে, এই বিশাল মূর্তির নির্মাতা একজন নবতিপর যুবক শিল্পী শ্রদ্ধেয় সুতার মহোদয়। এই বয়সে সদা তৎপর এই মহান শিল্পীই গুজরাটে সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের মূর্তি তৈরি করেছেন, বিশ্বের সর্বোচ্চ মূর্তি। আমি হরিয়ানা, রাজস্থান ও পাঞ্জাবের পাশাপাশি আমার গোটা দেশের সমস্ত সচেতন মানুষকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
ভাই ও বোনেরা, আমাদের দেশে নানা যুগে নানা কালে এমনসব মহাপুরুষেরা জন্মগ্রহণ করেছেন, যাঁরা নিজেদের সমগ্র জীবন শুধুই সমাজের সেবায় সমর্পিত করে দেশকে দিশা দেখানোর কাজ করে গেছেন। কোনও রকম দারিদ্র্য, অভাব, সমস্যা কিংবা প্রতিকূলতা তাঁদের গতি রোধ করতে পারেনি। তাঁরা সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সমাজকে শক্তিশালী করার জন্য নিজেকে সমর্পণ করেছেন। আমাদের প্রত্যেকের জন্য গর্বের বিষয় যে হরিয়ানার মাটিতেও এরকম এক মহাপুরুষ চৌধরী ছোটুরাম জন্ম গ্রহণ করেছিলেন।
চৌধরী ছোটুরামজি দেশের সেই সমাজ সংস্কারকদের অন্যতম, যিনি ভারত নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি কৃষক, মজুর, বঞ্চিত ও শোষিতদের হয়ে প্রতিবাদে মুখর হতেন। তিনি সমাজে বিভেদ সৃষ্টিকারী প্রত্যেক অপশক্তির বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছেন। কৃষি সংক্রান্ত নানা সমস্যা, কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জীবনে নানা বিপত্তিকে তিনি অনেক ঘনিষ্ঠভাবে দেখেছেন, হৃদয়ঙ্গম করেছেন এবং সেসব সমস্যার সমাধানের চেষ্টাও করে গেছেন।
বন্ধুগণ, আজ স্যর ছোটুরামজির আত্মা যেখানেই থাকুন না কেন, আজ সোনিপতে একটি আধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ রেল কোচ কারখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হতে দেখে খুশি হবেন।
প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে এই কারখানা গড়ে তোলা হবে। এই রেল কোচ কারখানায় প্রতি বছর ২৫০টি প্যাসেঞ্জার ট্রেনের কামরার মেরামত এবং আধুনিকীকরণ হবে। ফলে এক্ষেত্রে পরিষেবারত ট্রেনের কামরাগুলির মেরামত এবং আধুনিকীকরণের জন্য আর দূরবর্তী কোনও কারখানায় পাঠাতে হবে না।
ভাই ও বোনেরা, এই কারখানা শুধু সোনিপত নয়, হরিয়ানার শিল্পোন্নয়ন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। কোচ মেরামতির জন্য যেসব সরঞ্জামের প্রয়োজন, সেগুলি উৎপাদন ও সরবরাহের জন্য অনেক ছোট ছোট কারখানা ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে, অনেক নতুন নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হবে, স্থানীয় যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান হবে। হরিয়ানার ছোট ছোট শিল্পপতিরা সিট কভার, পাখা, বিদ্যুতের নানা সরঞ্জাম, কোচের আধুনিকীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহের সুযোগ পাবেন।
আপনারা ভাবুন, এই কোচ কারখানাকে কেন্দ্র করে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এই কারখানায় ইঞ্জিনিয়ার ও প্রযুক্তিবিদদের কাছ থেকে কাজ শিখে স্থানীয় যুবক-যুবতীদের দক্ষতা উন্নয়ন হবে। আগামীদিনে এই দক্ষতা বিশেষজ্ঞতায় উন্নীত হলে তাঁরা দেশের অন্যান্য অঞ্চলে গিয়ে পরিষেবা প্রদান করতে পারবেন, দেশ লাভবান হবে।
বন্ধুগণ, কয়েক বছর হরিয়ানায় কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। তখন এখানে দলের কাজ করার সময় প্রায় প্রতিদিনই কারও কাছে স্য ছোটুরাম সম্পর্কে, তাঁর মহানতার কথা শুনতাম। এই রোহতকের চৌধরী ছোটুরাম বলতেন যে, ‘কৃশকরা যেমন দারিদ্র্যের প্রতীক, তেমনই ইংরেজ সেনার অত্যাচারের বিরুদ্ধে পতাকা উত্তোলনকারী সৈনিকও বটে’। ছোটুরামজি এমনই উদ্দীপ্ত বক্তব্য রাখতেন।
বন্ধুগণ, আজ হরিয়ানায় এমন কোনও গ্রাম নেই, যে গ্রামের কোনও না কোনও সদস্য সেনাবাহিনীতে কাজ করেন না। দেশের সেনাবাহিনীতে যোগদানের মাধ্যমে দেশ সেবার প্রতি জনমানসে সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দীনবন্ধু ছোটুরামজির ভূমিকা সর্বাগ্রগণ্য। তিনি এ রাজ্যের কৃষকদের সেনাবাহিনীতে যোগদানের প্রেরণা যুগিয়েছেন। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় এখানকার অনেক সৈনিক বিশ্ব শান্তি স্থাপনের খাতিরে লড়াই করেছেন।
বন্ধুগণ, বেঁচে থাকতে তাঁরা স্বাধীন ভারত দেখে যেতে পারেননি, কিন্তু ভারতের সমস্যা সমাধানে তাঁরা জনগণের আশা-আকাঙ্খা এবং স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি সর্বদাই ইংরেজদের ‘ভাগ করে শাসন করো’ নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তাঁর ব্যক্তিত্ব কতটা প্রখর ছিল, তা সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের একটি মন্তব্য থেকেই বোঝা যায়। তিনি বলেছিলেন, ‘আজ চৌধরী ছোটুরামজি বেঁচে থাকলে বিভাজনের সময় এবং তার পরে বিভাজিত পাঞ্জাব নিয়ে আমাকে ভাবতে হ’ত না, ছোটুরামজি-ই সামলে নিতেন’! স্যর ছোটুরামের সামর্থ্য ও শক্তি নিয়ে সর্দার প্যাটেলের এই আস্থার জন্য প্রত্যেক হরিয়ানাবাসীর মনে তাঁর সম্পর্কে গর্ব হওয়া উচিৎ।
পশ্চিম ও উত্তর ভারতের একটা বড় অংশে তার প্রভাব এত ব্যাপক ছিল যে, ইংরেজ প্রশাসকরা তাঁর কোনও কথা মানতে অস্বীকার করার আগে একশোবার ভাবতে বাধ্য হতেন। ছৌধরী ছোটুরামজি এবং সেই সুদখোর ব্যবসায়ীর গল্পটি আমি কমপক্ষে ১০০ বার বলেছি। আপনারা সকলেই হয়তো শুনেছেন। ঐ ব্যবসায়ী তাঁকে ধার না দিয়ে পাটোয়ারি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ব্যবসায়ী জানতেন না যে, যাঁকে তিনি পাটোয়ারি হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন, তিনি একদিন অবিভক্ত পাঞ্জাবের হাজার হাজার পাটোয়ারির ভাগ্য নির্ণয় করবেন। শুধু সামর্থ্যের জোরে সংগ্রাম করে চৌধরী সাহেব একদিন পাঞ্জাবের অর্থমন্ত্রী হয়েছিলেন।
ভাই ও বোনেরা, অর্থমন্ত্রী হিসাবে তিনি পাঞ্জাব তথা দেশের কৃষক ও কৃষি মজুরদের স্বার্থ রক্ষার খাতিরে যে রাজস্ব-ব্যবস্থা এবং ফসল বিপণনের জন্য এমন আইন প্রণয়ন করেছিলেন যে, তা আজ পর্যন্ত আমাদের ব্যবস্থার অঙ্গ। চৌধরী সাহেবই কৃষকদের ঋণ সংক্রান্ত আইন, সহায়ক মূল্য সংক্রান্ত আইন কিংবা কৃষি-বাজার সংক্রান্ত আইনগুলির ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন।
আমাদের এটাও ভোলা উচিৎ নয় যে, এসব কাজ তিনি পরাধীন ভারতেই করতে পেরেছিলেন। তাঁর সামনে নানা প্রতিবন্ধকতা ছিল, কিন্তু তিনি শুধু কৃষকদের স্বার্থ ভেবে চুপ থাকেননি, কাজে পরিণত করে ছেড়েছেন! তিনি ‘অ্যাগ্রো-ইন্ডাস্ট্রি’ বা কৃষি-ভিত্তিক শিল্প সম্প্রসারণের পক্ষে ছিলেন। সেই সময়ে তিনি কুটির শিল্প, ক্ষুদ্র শিল্পকে শক্তিশালী করার দিকে জোর দিয়েছিলেন। তিনি দেশের শিল্পপতিদের প্রত্যেককে নিয়মিত কৃষি সংশ্লিষ্ট শিল্প স্থাপনে উৎসাহ যোগাতেন।
বন্ধুগণ, ছোটুরামের এই দূরদৃষ্টি দেখে চক্রবর্তী রাজা গোপালাচার্যজি বলেছিলেন, চৌধরী ছোটুরামজি শুধুই উঁচু লক্ষ্যস্থির করতে জানেন না, সেই লক্ষ্যগুলি কিভাবে বাস্তবায়িত করা যায়, সেই পথও তিনি ভালোভাবেই জানতেন।
ভাই ও বোনেরা, দেশে অনেকেই হয়তো জানেন না যে, এই ভাখরা বাঁধের পরিকল্পনার প্রাথমিক ভাবনা চৌধরীজিরই মস্তিষ্কপ্রসূত। তিনিই বিলাসপুরের রাজার সঙ্গে ভাখরা বাঁধের জন্য চুক্তিতে হস্তাক্ষর করেছিলেন। আমরা দেখেছি যে, এই দূরদর্শিতার সুফল আজও পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও রাজস্থানের মানুষ, এই তিন রাজ্যের কৃষকরা উপভোগ করছেন।
বন্ধুগণ, যিনি দেশের জন্য এত কিছু করেছেন, এত ব্যাপক সংস্কার করেছেন, এরকম দূরদৃষ্টির আলোকে সবাইকে পথ দেখিয়েছেন, তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত জানা ও বোঝার অধিকার প্রত্যেক দেশবাসীর রয়েছে। কখনও আমি একথা ভেবে অবাক হয়েছি যে, এত মহান ব্যক্তিত্বকে একটি ক্ষেত্রের পরিধিতে কেন সীমিত রাখা হয়েছে? আমার মতে, এতে চৌধরী সাহেবের ব্যক্তিত্বে কোনও প্রভাব পড়েনি, কিন্তু অনেক প্রজন্ম তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণে বঞ্চিত থেকে গেছেন।
ভাই ও বোনেরা, আমাদের সরকার দেশের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গকারী প্রত্যেক ব্যক্তির সম্মান বৃদ্ধির কাজ করছে। বিগত চার বছরে মহান ব্যক্তিত্বসমপন্ন মহাপুরুষদের সম্মান প্রদর্শনের পাশাপাশি তাঁদের প্রদর্শিত পথকে বিস্তারিত করার চেষ্টা করছে। কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সুদখোর মহাজনদের খপ্পড় থেকে উদ্ধার করতে তাঁদের জন্য ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জন ধন যোজনার মাধ্যমে হরিয়ানা প্রায় সাড়ে ছেষট্টি লক্ষ ভাই-বোনদের ব্যাঙ্কের খাতা খোলা হয়েছে। সরকার সমাবায় ব্যঙ্কগুলি থেকে ঋণ প্রদানের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করা হয়েছে। সম্প্রতি ইন্ডিয়া পোস্ট পেমেন্টস্ ব্যাঙ্কও চালু করা হয়েছে। ফলে, এখন আপনার গ্রামে বসেই ডাকপিওনের মাধ্যমে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা সুনিশ্চিত হয়েছে।
বন্ধুগণ, চৌধরী সাহেব যেরকম কৃষক ও কৃষি মজুরদের উত্থানের জন্য সম্পূর্ণতা নিয়ে ভেবেছেন, তেমনই আমাদের সরকারও বীজ সরবরাহ থেকে ফসলের বাজারীকরণ পর্যন্ত একটি শক্তিশালী ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। কৃষকরা যাতে তাঁদের উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য পান, নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে যাতে তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত থাকে, যথসময়ে আধুনিক বীজ পর্যাপ্ত পরিমাণ ইউরিয়া ও সেচের সুবিধা পান এবং মাটির স্বাস্থ্য সম্পর্কে জেনে সেই অনুযায়ী অনুকূল চাষের জন্য পা বাড়ান সেদিকে লক্ষ্য রেখে ইতিমধ্যেই দেশের প্রায় ৫০ লক্ষ কৃষক পরিবারকে ‘মৃত্তিকা স্বাস্থ্য কার্ড’ প্রদান করা হয়েছে। প্রায় সাড়ে ছয় লক্ষ কৃষক ইতিমধ্যেই ‘কিষাণ বিমা’ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। যেসব জায়গায় বিগত ৩০-৪০ বছর ধরে জল পৌঁছয়নি, আজ সেসব অঞ্চলের ফসলের ক্ষেতে জল পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, অনেক ক্ষেত্রে আমরা সাফল্য পেয়েছি। সম্প্রতি লখবার বাঁধ নির্মাণের জন্য ৬টি রাজ্যের মধ্যে ঐতিহাসিক চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। এর ফলে, হরিয়ানাও অনেক লাভবান হবেন।
বন্ধুগণ, আট-নয় দশক আগে চৌধরী সাহেব কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্য সুনিশ্চিত করতে ‘কৃষি উৎপাদন মান্ডি অধিনিয়ম’ প্রণয়ন করেছিলেন। আমাদের সরকারও ‘পি এম আশা’ অর্থাৎ ‘প্রধানমন্ত্রী অন্নদাতা আয় সংরক্ষণ অভিযান’ শুরু করেছে। এর মাধ্যমে এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে কৃষকরা বাজারে ফসলের দামের ক্ষেত্রে সহায়ক মূল্য থেকে কম পেলে রাজ্য সরকার থেকে ক্ষতি পূরণ পাওয়া যাবেদ। শুধু তাই নয়, আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে, কৃষকদের বিনিয়োগের ওপর ন্যূনতম ৫০ শতাংশ লাভ সুনিশ্চিত করা হবে, সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হয়েছে।
বন্ধুগণ, সরকার ধান, গম, আখ সহ ২১টি গুরুত্বপূর্ণ ফসলের সহায়ক মূল্য বৃদ্ধি করেছে। ধানের সহায়ক মূল্যে প্রতি ক্যুইন্টালে ২০০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখন এর দাম ১,৫৫০ টাকা ক্যুইন্টাল থেকে বাড়িয়ে ১,৭৫০ টাকা ক্যুইন্টাল করা হয়েছে। এরকম ভুট্টার ক্ষেত্রে ২৭৫ টাকা, সূর্যমুখীর ১,৩০০ টাকা আর বাজরার সহায়ক মূল্য প্রতি ক্যুইন্টালে ৫২৫ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
ভাই ও বোনেরা, ভাবুন – কত বছর ধরে আমাদের কৃশকরা এই দাবি জানিয়ে আসছিলেন। আমরা সরকারের দায়িত্ব পেয়ে তাঁদেরএই দীর্ঘকালীন দাবি পূরণ করেছি।
বন্ধুগণ, হরিয়ানার কৃষকদের আয় বৃদ্ধি সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি, তাঁদের এই র্ধিত আয় যাতে রোগের চিকিৎসায় খরচ না হয়ে যায়, সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হয়েছে।
আমি হরিয়ানাবাসীদের অভিনন্দন জানাই। আপনাদের রাজ্যেরই এক কন্যা ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্প থেকে প্রথম উপকৃত হয়েছেন। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, গত দু’সপ্তাহের মধ্যে দেশে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষের ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পের মাধ্যমে চিকিৎসা চলছে।
আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, হরিয়ানা ইতিমধ্যেই নিজেকে উন্মুক্ত স্থানে মলমূত্র ত্যাগ মুক্ত রাজ্য হিসাবে ঘোষণা করেছে। আমি রোহতক-কে বিশেষভাবে অভিনন্দন জানাব। কারণ, এখানকার মহর্ষি দয়ানন্দ বিশ্ববিদ্যালয় দেশে পরিচ্ছন্নতার র্যাঙ্কিং-এ শীর্শস্থান অর্জন করেছে।
বন্ধুগণ, আজ চৌধরী সাহেবের আত্মা যেখানেই থাকুন না কেন, তিনি হরিয়ানায় ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ অভিযানের সাফল্য দেখে খুশি হবেন। তিনি শুধু পরিবর্তনের জন্য আওয়াজ তুলেই ক্ষান্ত হননি, সমাজের মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য নিজের বাড়ি থেকেই সূত্রপাত করেন। মেয়েদের নিয়ে সমাজের নানা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে তিনি নানা সামাজিক চাপের বিরুদ্ধে নিজের দুই কন্যার পাশে শক্তভাবে দাঁড়িয়েছিলেন।
ভাই ও বোনেরা, আজ যখন হরিয়ানার ছোট ছোট গ্রামে জন্ম নেওয়া মেয়েরা নানা আন্তর্জাতিক ক্রীড়া মঞ্চে দেশের গৌরব বৃদ্ধি করছেন, হরিয়ানার ছেলেমেয়েরা ক্রীড়া ক্ষেত্রে ভারতকে বিশ্ব শক্তি করে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন, তখন মনে হয় যে, আমরা চৌধরী সাহেবের স্বপ্ন সাকার করার লক্ষ্যে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছি।
বন্ধুগণ, আজ হরিয়ানা দেশের উন্নয়নকে গতি প্রদান করছে। এই গতিকে নিরন্তর ত্বরান্বিত করার প্রক্রিয়া জারি রাখতে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। এটাই আমাদের জন্য চৌধরী ছোটুরামের বার্তা। সামাজিক সাম্য ও জাতীয় ঐক্যের জন্য সমর্পিত রাষ্ট্রপুরুষকে আমরা তখনই সত্যিকরের শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে পারব, যখন আমরা সবাই মিলে তাঁর স্বপ্নের ভারত গড়ে তুলব, নতুন ভারত গড়ব।
কিছুদিন পরই আপনারা হরিয়ানা দিবস পালন করবেন। সেজন্য আমি সমস্ত হরিয়ানাবাসীকে অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাই। আর আপনারা সবাই বিপুল সংখ্যায় এখানে স্যর ছোটুরামজিকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করতে এসেছেন, সেজন্য আপনাদের সকলকে হৃদয় থেকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।
ধন্যবাদ।