আজ সবার আগে আপনারা সবাই আমার সঙ্গে শ্লোগান দেবেন। আমি বলব সর্দারপ্যাটেল, আপনারা বলবেন অমর রহে অমর রহে।
সর্দার প্যাটেল, অমর রহে, অমর রহে।
সর্দার প্যাটেল, অমর রহে, অমর রহে।
সর্দার প্যাটেল, অমর রহে, অমর রহে।
আজ সারা দেশসর্দার সাহেবের জন্মজয়ন্তী পালন করছে। আজ যে ভারতে আমরা বসবাস করি, আমাদেরত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকার নীচে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, আটক থেকে কটক, হিমালয়থেকে সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত মহান দেশটি আমরা দেখছি, তাকে বর্তমান রূপ দেওয়ারকৃতিত্ব সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের। ইংরেজরা দেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় এমন ষড়যন্ত্ররচেছিল যে, তারা চলে যেতেই দেশ ৫০০টিরও বেশি ছোট ছোট খন্ডে বিভাজিত হয়ে যেত।ছোট-বড় দেশীয় রাজা-রাজড়ারা নিজেদের মধ্যে লড়াই করতেন, দেশে রক্তের নদী বয়ে যেত । কিন্তু এই লৌহপুরুষ সর্দার প্যাটেল যিনি স্বাধীনতাসংগ্রামে গান্ধীজীর সঙ্গে ছায়ার মতো থেকে জন-আন্দোলনকে জাগিয়ে রেখেছিলেন,গান্ধীজীরপ্রত্যেক ভাবনাকে জনশক্তি প্রদান করার চেষ্টা করেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে ইংরেজদেরব্যতিব্যস্ত করার সামর্থ্য সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল দেখিয়েছিলেন। আর দেশ স্বাধীনহওয়ার পর তিনি ভারতকে খন্ড-বিখন্ড করে দেওয়ার ষড়যন্ত্রকে বানচাল করে দিয়ে অধিকাংশদেশীয় রাজা, নিজাম, ও সুলতানদের ভারতেযোগদানে রাজি করাতে পেরেছিলেন।
আজ আমাদের দেশেকাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী হিমসাগর ট্রেন চলে। এটি আমাদের দেশে সবচেয়ে দীর্ঘযাত্রাপথ অতিক্রম করে। হিমালয়ের কোল থেকে যাত্রা শুরু করে কন্যাকুমারীর সাগরেরকাছে পৌঁছে যায়। এই ট্রেনে যাত্রার সময় আমাদের অনেক রাজ্য পার হয়ে যেতে হয়। কিন্তুসেজন্য কোনও রাজ্য থেকে পারমিট কিংবা ভিসা নিতে হয় না। কোনও রাজ্যকে আলাদা করে করদিতে হয় না। একবার কাশ্মীর থেকে ট্রেনে উঠলে অনায়াসে কন্যাকুমারী পর্যন্ত চলেযাওয়া যায়। আপনারা ভেবে দেখুন, সেদিন সর্দার সাহেব দেশীয় রাজাদের বুঝিয়ে এবংপ্রয়োজনে কঠোরভাবে ভারতে যোগ দিতে না বললে আজ এই নিরুপদ্রব যাত্রা সম্ভব হতো না।
ভাই ও বোনেরা, আপনারাবলুন, ভারতকে শক্তিশালী হতে হবে কি না? বিশ্ববাসীকে এদেশের পরাক্রম সম্পর্কে সচেতনকরা উচিৎ কি না? ভাই ও বোনেরা, এই স্বপ্ন ১২৫ কোটি ভারতবাসীর স্বপ্ন। এখানে আমারসামনেই একটি ছোট ভারত দাঁড়িয়ে আছে । দেশের প্রায় প্রত্যেক ভাষাভাষী মানুষ এখানে উপস্থিত। আপনাদের সকলের স্বপ্নশক্তিশালী ভারত, সমৃদ্ধ ভারত, সামর্থ্যবান ভারত। কিন্তু ভাই ও বোনেরা, এই স্বপ্নসাকার করার প্রথম শর্ত হ’ল দেশে ঐক্য থাকতে হবে। সম্প্রদায়ের নামে, জাতপাতের নামে,বিকৃত উঁচু-নীচু ভেদাভেদের নামে, ধনী ওগরিবের মাঝে, গ্রাম ও শহরের মাঝে বিভেদ থাকলে এদেশের ঐক্য সম্ভব নয়।
সেজন্য আমারপ্রিয় ভাই ও বোনেরা, সর্দার সাহেব নিজের মেধা, রাজনৈতিক সদ্বিচ্ছা, বুদ্ধি ওসামর্থ্য দিয়ে যে ঐক্যবদ্ধ ভারতের জন্ম দিয়ে গেছেন – সর্দার প্যাটেলেরজন্মজয়ন্তীতে প্রত্যেক ভারতীয়কে দেশভক্তির ভাবনা নিয়ে সেই ঐক্য দৃঢ় করার দায়িত্ব পালনকরতে হবে। আজও এই দেশকে টুকরো টুকরো করে দেওয়ার জন্য, দেশের মধ্যে অন্তর্বিরোধকরার জন্য অনেক অপশক্তি কাজ করছে। এহেন সময়ে আমাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। যে সকলউপাদান আমাদের ঐক্যকে সুনিশ্চিত করে বারবার সেগুলিকে স্মরণ করতে হবে। ভারতমাতারগলায় ১২৫ কোটি ভারতীয়র মনের শ্রদ্ধাঞ্জলি মালা হয়ে বিরাজমান। সেই মালার প্রতিটিফুলকে একসূত্রে বেঁধে রাখে আমাদের দেশীয় চেতনা। আমাদের দেশাত্মবোধের সুতো দিয়ে ১২৫কোটি হৃদয়কে, ১২৫ কোটি মস্তিষ্ককে মা ভারতীর মালায় গেঁথে রাখতে হবে। এই ১২৫ কোটিফুলের সুগন্ধই হ’ল আমাদের দেশভক্তি। এই সৌরভই আমাদের প্রতি মুহূর্তে প্রেরণাযোগাবে, সচেতন ও সতর্ক রাখবে।
আমার প্রিয়নবীন প্রজন্মের বন্ধুরা, আজ ৩১ অক্টোবর দিল্লির মাটিতে দেশবাসী কেন্দ্রীয় সরকারেরপক্ষ থেকে একটি বহুমূল্য উপহার পেতে চলেছেন। আর কিছুক্ষণ পরই আমি দিল্লিতে সর্দারসাহেবের জীবন নিয়ে গড়ে তোলা একটি ডিজিটাল মিউজিয়াম উদ্বোধন করব। আপনাদের সবাইকেঅনুরোধ, আপনাদের ব্যস্ত সময় থেকে একটি দিন বের করে, কমপক্ষে ঘন্টা দুয়েক সময় বেরকরে সেখানে আসুন, ঐ ডিজিটাল মিউজিয়ামে এতকিছু রয়েছে যে সেগুলি ভালোভাবে দেখতেপ্রায় এক সপ্তাহ লেগে যাবে। এতকিছু রয়েছে, যেগুলি ভালোভাবে বুঝতে হবে এবং জানতেহবে। প্রগতি ময়দানের কাছেই স্থায়ী রূপে এই ডিজিটাল মিউজিয়াম গড়ে উঠেছে।
স্বাধীনতার এতবছর পর, সর্দার সাহেবের পরলোক গমনের এত বছর পর আজ দিল্লিতে সর্দার সাহেবকে নিয়ে এতবড় মিউজিয়াম গড়ে উঠেছে। এই কাজ ৪০-৫০-৬০ বছর আগে হওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু কেন হয়নিজানি না! যাঁরা করেননি তাঁদের কাছে ইতিহাস জবাব চাইবে। আমরা তো কেবল কিছু করেযাওয়ার ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।
আজ আমি সেইপ্রকল্পে সর্দার সাহেবের ঐক্যের মন্ত্রকে প্রত্যেকের জীবনের সহজ স্বভাব করে গড়েতোলার জন্য একটি নতুন প্রকল্প ঘোষণা করতে চলেছি, সেটি হ’ল ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’।দেশের ঐক্যকে সুদৃঢ় করার জন্য আজ আমি ভারতবাসীকে এই প্রকল্প উৎসর্গ করব। এই‘ঐক্যের জন্য দৌড়’ আজ থেকে শুরু হয়ে এক সপ্তাহ ধরে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে আয়োজনকরা হয়েছে। আমি দেশের সকল নাগরিককে এই দৌড়ে অংশগ্রহণ করার জন্য আবেদন রাখছি। আমরাকখনও যেন সর্দার প্যাটেলকে ভুলে না যাই, তাঁর ঐক্যের মন্ত্রকে ভুলে না যাই, আমরাযে ভারত গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখি তার প্রথম শর্ত হ’ল দেশের ঐক্য, প্রত্যেক মনেরঐক্য, প্রত্যেক মনে একটি সংকল্প আমাদের ভারতকে সকল দেশের সেরা করে তুলতে হবে। আমিআরেকবার আপনাদের সকলকে বিপুল সংখ্যায় দীপাবলির উৎসবের মাঝে এখানে এসে উপস্থিতহওয়ার জন্য অভিনন্দন জানাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ।