মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়া, যে ধৈর্য্য নিয়ে আপনি আজ সভা পরিচালনা করেছেন, সেজন্য আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। এই অনাস্থা প্রস্তাব আমাদের গণতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ শক্তির পরিচায়ক। টিডিপি এই অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করলেও আরও অনেক মাননীয় সংসদ সদস্য এই প্রস্তাবের সমর্থনে বক্তব্য রেখেছেন। কিন্তু তারচেয়েও বেশি মাননীয় সদস্য এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। আমি আপনাদের সবার কাছে অনুরোধ জানাই যে, আপনারা সবাই সর্বসম্মতিক্রমে এই প্রস্তাব খারিজ করুন, আর ৩০ বছর পর সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনে গঠিত এই সরকার যে গতিতে কাজ করছে, তার প্রতি আরেকবার আস্থা প্রকাশ করুন।
এমনিতে আমি মনে করি যে, প্রস্তাবকারীরা আমাদেরকে নিজেদের বক্তব্য রাখার একটি ভালো সুযোগ করে দিয়েছেন। কিন্তু দেশ এই দৃশ্য দেখলো যে, দেশের উন্নয়নের প্রতি কেমন নেতিবাচকভাবে বিরোধিতা করা হয়েছে। কিছু মানুষকে এমনভাবে নেতিবাচক রাজনীতি ঘিরে রেখেছে যে, তাঁদের সকলের আসল রূপ জনগণের সামনে ফুটে উঠেছে। অনেকের মনে এই প্রশ্নেরই জবাব নেই যে অনাস্থা প্রস্তাব কেন? এই প্রস্তাবের প্রতি যে সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন নেই তা আগে থেকেই জানা ছিল। তা সত্ত্বেও সরকার ফেলে দেওয়ার জন্য এত উৎসাহ দেখে আমি অবাক হয়েছি, তা হলে আবার ৪৮ ঘন্টা থামিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন কিসের? এই প্রস্তাব নিয়ে এত জরুরি-ভিত্তিক আলোচনা না হলে কি আকাশ বিদীর্ণ হ’ত, ভূমিকম্প হ’ত? আপনাদের যদি আলোচনার জন্য প্রস্তুতি না থাকতো, তা হলে প্রস্তাব আনলেন কেন? আসলে এই টালবাহানার প্রচেষ্টা থেকে প্রমাণিত হয় যে, তাঁরা নিজেরা কত কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।
যে নৌকায় মাঝি নেই, পাল নেই, অনুকূল বাতাস নেই, নৌকাটিও ভাঙা – কিভাবে আপনারা সফর করবেন!
কখনও মনে হচ্ছিল, তাঁদের ভাষণে অজ্ঞানতার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠছে আর তাঁদের অঙ্গভঙ্গীতে মেকি আত্মবিশ্বাস। তাঁদের এই কাজে টেনে এনেছে ঠুনকো অহঙ্কার। মোদী হটাও! আমি আজ সকালে তাঁদের উৎসাহ দেখে অবাক হয়েছি, তখনও আলোচনা শুরু হয়নি, পক্ষে-বিপক্ষে মতদান হয়নি, জয়-পরাজয়ের ঘোষণা তো দূরের কথা; সকালে সভায় পৌঁছেই তাঁরা ওঠো ওঠো রব তুলেছিলেন। এখানে কেউ কাউকে ওঠাতে পারেন না, বসাতেও পারেন না। ১২৫ কোটি ভারতবাসী বসাতে পারেন, তাঁরাই ওঠাতে পারেন।
গণতন্ত্রে জনগণের ওপর ভরসা থাকা উচিৎ, এত তাড়াহুড়ো কিসের …… আর অহঙ্কার থেকেই কেউ বলতে পারেন যে, আমরা দাঁড়িয়ে থাকতে পারি আর প্রধানমন্ত্রী ১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না!
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়া, আমি দাঁড়িয়েই আছি আর বিগত চার বছর ধরে আমরা যে কাজ করেছি, তার সমস্ত দায়িত্বও নিচ্ছি। আমাদের ভাবনাচিন্তা তাঁদের থেকে আলাদা। আমরা তো শিখেছি – সার-সার কো গহি রহৈ, থোথা দেই ওড়ায়ে। আমি আপনাদের কথার সার গ্রহণ করার জন্য অনেক চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু আজ কোনও সার খুঁজে পাইনি। দাঁড়ার আঘাতে অহঙ্কার থেকে স্পষ্ট হয় যে, ২০১৯-এ আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না। যাঁরা জনগণের ওপর আস্থা রাখেন না আর নিজেদেরকেই ভাগ্যবিধাতা বলে মনে করেন, তাঁদের মুখ থেকেই এরকম শব্দাবলী শোনা যায়।
গণতন্ত্রে জনগণই ভাগ্যবিধাতা। গণতান্ত্রিক পদ্ধতির ওপর আস্থা রাখা জরুরি। ২০১৯-এ কংগ্রেস যদি সবচেয়ে বড় দল রূপে নির্বাচিত হয়ে আসে, তা হলে আমি প্রধানমন্ত্রী হব কিন্তু অন্যরা যে অনেক আশা নিয়ে বসে আছেন, তাঁদের কী হবে – তা নিয়ে দ্বিধা আছে। মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়া, এই অনাস্থা প্রস্তাব সরকারের প্রতি সংসদ সদস্যদের আস্থার পরীক্ষা নয়, এটি কংগ্রেসের তথাকথিত সহযোগী দলগুলির আস্থার পরীক্ষা। আমিও প্রধানমন্ত্রী হব – এই স্বপ্নকে কতজন সমর্থন করেন, তা দেখার জন্য এই অনাস্থা প্রস্তাব। আর এই প্রস্তাবের আড়ালে যাঁদেরকে একত্রিত করার প্রচেষ্টা চলছে, তাঁদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার দুশ্চিন্তাও রয়েছে। একজন মোদীকে হটাতে যাঁর সঙ্গে কখনও মুখ দেখাদেখি ছিল না, যাঁদের সঙ্গে কোনও দিন হাত মেলানো হয়নি – এরকম সব বিপরীত ধারার লোকজনকে একত্রিত করার প্রচেষ্টা চলছে।
আমি কংগ্রেসের বন্ধুদের বিনীত পরামর্শ দিচ্ছি, এরপরও যদি আপনাদের সম্ভাব্য সঙ্গীদের পরীক্ষা নিতে হয়, তা হলে অবশ্যই নিন, কিন্তু সেজন্য অনাস্থা প্রস্তাবের বাহানা কেন? আগে সম্ভাব্য সঙ্গীদের বিশ্বাস করতে শিখুন। আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থনেই এখানে বসে আছি। ১২৫ কোটি ভারতবাসীর আশীর্বাদ আমাদের ওপর রয়েছে। নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য যে দেশবাসী আপনাদের ওপর আস্থা রেখেছেন – তাঁদেরকেও কী বিশ্বাস করবেন না! আমরা কোনও রকম ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি না করে ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ মন্ত্র নিয়ে কাজ করে চলেছি। বিগত চার বছর ধরে গরিব মানুষের জন্য কাজ করছি। যে ১৮ হাজার গ্রামে আমরা এই চার বছরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি, তার মধ্যে ১৫ হাজার পূর্ব ভারতে এবং ৫ হাজার গ্রাম শুধু উত্তর-পূর্ব ভারতে ছিল, পূর্ববর্তী সরকারগুলি চাইলে সেই গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পারত। মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়া, কল্পনা করুন, সেই গ্রামগুলিতে কারা থাকেন। আমাদের আদিবাসী, দলিত, পীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত এবং অরণ্যবাসী মানুষেরা থাকেন। কিন্তু ভোট ব্যাঙ্কের অঙ্ক অনুযায়ী তাঁরা অগ্রাধিকার পাননি বলেই সেইসব গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। গোটা পূর্ব ভারতের উন্নয়নই ভারসাম্যহীন ছিল। এভাবে তাঁরা গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন। আমরা শুধু ঐ গ্রামগুলিতেই বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি আমরা যোগাযোগের প্রতিটি পথকে উন্নত করতে তীব্র গতিতে কাজ করছি।
আজ থেকে প্রায় তিন দশকে আগে গরিবদের নামে ব্যাঙ্ক রাষ্ট্রীয়করণ হয়েছিল। কিন্তু আমরা সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার আগে পর্যন্ত দেশের অধিকাংশ গরিবের জন্য ব্যাঙ্কের দরজা খোলেনি, কিন্তু চাইলে তাঁরা পারতেন। আমরা এসে প্রায় ৩২ কোটি জন ধন অ্যাকাউন্ট খোলার কাজ করেছি। আজ ঐ অ্যাকাউন্টগুলিতে গরিবদের জমানো টাকার পরিমাণ ৮০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আমরা মা ও বোনেদের সম্মানের জন্য ৮ কোটি শৌচালয় নির্মাণ করেছি – এ কাজও পূর্ববর্তী সরকারগুলি করতে পারত। উজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে সাড়ে চার কোটি গরিব মা ও বোনেদের বিনামূল্যে রান্নার গ্যাসের সংযোগ প্রদানের মাধ্যমে ধোঁয়ামুক্ত জীবন এবং উন্নত স্বাস্থ্যের পরিবেশ গড়ে তুলেছি। তাঁরা তো লোকসভা নির্বাচনের আগে জনগণকে ৯টা সিলিন্ডার দেবেন নাকি ১২টা সিলিন্ডার দেবেন – তাই ঠিক করতে পারছিলেন না। একটি আন্তর্জাতিক রিপোর্ট অনুসারে বিগত দু’বছরে ৫ কোটি দেশবাসী ভীষণ দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হয়েছেন। ২০ কোটি গরিব মানুষ দিন প্রতি ৯০ পয়সা এবং মাসে ১ টাকা কিস্তি জমা দিয়ে বিমা নিরাপত্তা পেয়েছেন। আগামী দিনে আয়ুষ্মান ভারত যোজনার মাধ্যমে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পরিবারের যে কোনও সদস্যের চিকিৎসার খরচ বিমা সংস্থাগুলির মাধ্যমে পাওয়ার ব্যবস্থা সরকার করেছে। তাঁরা এসব কথা বিশ্বাস করেন না। আমরা কৃষকদের আয় ২০২২ সালের মধ্যে দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছি – একথা তাঁরা বিশ্বাস করেন না। আমরা বীজ থেকে বাজার পর্যন্ত সম্পূর্ণ ব্যবস্থা সংস্কার করে তুলছি – একথা তাঁরা বিশ্বাস করেন না। ৮০ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ করে ৯৯টি তাঁদের আমলে শুরু হয়ে থমকে থাকা সেচ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করছি, ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটির কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে এবং উদ্বোধনও হয়েছে – একথা তাঁরা বিশ্বাস করেন না। আমরা ১৫ কোটি কৃষককে মৃত্তিকা স্বাস্থ্য কার্ড পৌঁছে দিয়ে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি – একথা তাঁরা বিশ্বাস করেন না। ইউরিয়াতে নিমের প্রলেপের কাজ, যা তাঁরা কিছুটা শুরু করে ছেড়ে দিয়েছিলেন। আমরা দায়িত্ব নিয়ে বুঝতে পারি যে, সম্পূর্ণ নিমের প্রলেপ না দেওয়া হলে দুর্নীতি দূরীকরণ সম্ভব নয়। আমরা সেজনয ১০০ শতাংশ নিমের প্রলেপ সুনিশ্চিত করি। ফলে, দেশের কৃষকরা উপকৃত হয়েছেন, দেশে ইউরিয়া সঙ্কট দূর হয়েছে – একথা তাঁরা বিশ্বাস করেন না। আমরা শুধু প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার মাধ্যমে কৃষকদের আশ্বাস প্রদানের কাজ করিনি, শুধুই কিস্তি কম করিনি, আমরা বিমার পরিধিও বৃদ্ধি করেছি। উদাহরণ স্বরূপ, ২০১৬-১৭’য় কৃষকরা প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বিমার কিস্তি জমা দিয়েছেন আর এই সময়কালের মধ্যে তাঁরা বিপদের সময়ে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিমার দাবির মূল্য তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে গেছে। অর্থাৎ যে পরিমাণ বিমার কিস্তি কৃষকরা দিয়েছেন, তার তিন গুণ দাবির টাকা তাঁরা ফিরে পেয়েছেন – একথা তাঁরা বিশ্বাস করেন না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়া, আমরা যখন সরকারের দায়িত্ব নিয়েছি, তখন ৩০০-৪৫০ টাকা দিয়ে একেকটি এলইডি বাল্ব কিনতে হ’ত। আজ এর দাম ৪০-৪৫ টাকা এবং ইতিমধ্যে সারা দেশে ১০০ কোটি এলইডি বাল্ব বিক্রি হয়েছে। শুধু তাই নয়, ৫০০-রও বেশি নগর প্রশাসন ৬২ লক্ষেরও বেশি এলইডি রাস্তার আলো লাগিয়েছে। ফলে তাঁদের বার্ষিক খরচে অনেক সাশ্রয় হয়েছে।
তাঁদের সময়ে সারা দেশে দুটি মাত্র মোবাইল নির্মাণ কারখানা ছিল। আজ দেশে ১২০টি মোবাইল নির্মাণ কারখানা স্থাপিত হয়েছে – একথা তাঁরা বিশ্বাস করেন না। আগে শিক্ষিত নবযুবকদের স্বরোজগারের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের হাতে একটি শংসাপত্র ধরিয়ে দেওয়া হতো, আর তাঁরা কর্মসংস্থানের জন্য দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়াতেন। আমরা দায়িত্ব নিয়ে মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে ১৩ কোটি যুবক-যুবতীকে কোনও রকম ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি ছাড়া ঋণের ব্যবস্থা করেছি। এমন ইতিবাচক পরিবেশ গড়ে তুলতে পেরেছি যে, ইতিমধ্যেই নবীনদের চালু করা ১০ হাজারেরও বেশি স্টার্ট আপ কোম্পানি উৎপাদন শুরু করেছে এবং দেশকে ইনোভেটিভ ইন্ডিয়ায় পরিণত করার সহায়ক হয়ে উঠেছে। একটা সময় ছিল যখন আমরা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসঙ্গ তুললে সংসদে বসে থাকা মহাপণ্ডিতরা বলে উঠতেন আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ লেখাপড়া জানেন না। এদেশে ডিজিটাল লেনদেন চলতে পারে না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়া, যারা দেশের জনগণকে এত অবমূল্যায়ন করতেন, তাঁদেরকে জনগণ সমুচিত জবাব দিয়েছেন। শুধু ভীম অ্যাপ এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আজ দেশের জনগণ মাসে ৪১ হাজার কোটি টাকার লেনদেন করেন – একথা বিরোধী বন্ধুরা বিশ্বাস করেন না। ভারত গত চার বছরে গ্লোবাল কমপিটিটিভ ইন্ডেক্স-এ ৩১ ধাপ এগিয়েছে, ইনোভেশন ইন্ডেক্স-এ ২৪ ধাপ এগিয়েছে, ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস-এ উন্নতির ফলে সরকার দেশে ব্যবসার খরচ কমাতে পেরেছে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ থেকে শুরু করে জিএসটি-র সাফল্য – একথা বিরোধী বন্ধুরা বিশ্বাস করেন না। ভারত নিজের আর্থিক উন্নতির মাধ্যমে গোটা দুনিয়ার আর্থিক বৃদ্ধিকে শক্তিশালী করেছে। বড় অর্থ ব্যবস্থাগুলির মধ্যে সর্বাধিক দ্রুতগতিতে উন্নয়নশীল অর্থ ব্যবস্থা রূপে ভারত এখন ৬ নম্বরে। এই সাফল্য সরকারের নয়, ১২৫ কোটি ভারতবাসীর পরিশ্রমের ফসল। সেজন্য গর্ব করা উচিৎ।
ভারত আজ ৫ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থ ব্যবস্থার লক্ষ্যে তীব্রগতিতে এগিয়ে চলেছে। আমরা কালো টাকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি আর এই লড়াই চলতেই থাকবে। আমি জানি, এজন্য অনেকের কত অসুবিধা হচ্ছে। বিমুদ্রাকরণের ফলে তাঁদের যে ক্ষতি হয়েছে, সেই ক্ষত এখনও যে রয়েছে, তা তাঁদের স্বভাবেই পরিস্ফুট। আমরা প্রযুক্তির মাধ্যমে ৯০ হাজার কোটি রাজকোষের টাকা, যা ঘুরপথে অন্যত্র চলে যেত, এই টাকা আমরা সাশ্রয় করতে পেরেছি। আড়াই লক্ষেরও বেশি ভুতুড়ে কোম্পানিকে আমরা বাজেয়াপ্ত করেছি। আরও ২ লক্ষের বেশি কোম্পানিকে আমরা নজরে রেখেছি। যে কোনও দিন তাঁদের বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করার সম্ভাবনা রয়েছে। কাদের সাহায্যে এই কোম্পানিগুলির জন্ম, কাদের আনুকূল্যে এগুলির বাড়বাড়ন্ত? বেনামী সম্পত্তি আইন সংসদে পাস করানো হয়েছিল, কিন্তু ২০ বছর ধরে কেন সেটাকে নোটিফাই করা হয়নি? আমরা দায়িত্ব পাবার পর এই বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করি আর আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে বলছি যে, ইতিমধ্যেই সাড়ে চার হাজার কোটি টাকারও বেশি সম্পত্তি আমরা বেনামী ঘোষণা করতে পেরেছি। দেশবাসী, বিশ্ববাসী এবং বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সমীক্ষা সংস্থাগুলি এই তথ্যগুলি বিশ্বাস করে; কিন্তু এসব বিরোধী বন্ধুরা বিশ্বাস করেন না।
কিন্তু যাঁরা নিজেদেরই বিশ্বাস করেন না, তাঁরা আমাদের কিভাবে বিশ্বাস করবেন! এই ধরণের মানসিকতাসম্পন্ন মানুষদের সম্পর্কে আমাদের শাস্ত্রে খুব সুন্দরভাবে বলা হয়েছে, ‘ধারা নৈব পতন্তি চাতক মুখে মেঘস্য কিং দোষণম্’ অর্থাৎ চাতক পাখির মুখে বৃষ্টির ফোটা সরাসরি না পড়লে মেঘের কী দোষ?
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়া, কংগ্রেসের বন্ধুরা নিজেদেরই বিশ্বাস করেন না। তাঁরা অবিশ্বাস-আবৃত, তাঁদের কর্মপদ্ধতি অবিশ্বাসময়, অবিশ্বাস তাঁদের সাংস্কৃতিক জীবনশৈলীর অঙ্গ। তাঁরা স্বচ্ছ ভারত যোজনার সাফল্যে বিশ্বাস করেন না। আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের সাফল্যে বিশ্বাস করেন না। দেশের প্রধান বিচারপতিকে কিংবা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক’কে বিশ্বাস করেন না। কাজেই অর্থ ব্যবস্থার কোনও পরিসংখ্যানকেই বিশ্বাস না করা স্বাভাবিক। দেশের বাইরে ভারতের পাসপোর্টের শক্তি কতটা বৃদ্ধি পেয়েছে, আন্তর্জাতিক মঞ্চগুলিতে ভারতের গৌরব কতটা বেড়েছে – এসব বিরোধী বন্ধুরা বিশ্বাস করেন না। তাঁরা নির্বাচন কমিশন এবং ইভিএম-কে বিশ্বাস করেন না। কেন? কারণ তাঁরা নিজেদের ওপর বিশ্বাস হারিয়েছেন। যখন হাতে গোণা কয়েকজন মানুষ দেশকে নিজেদের সম্পত্তি ভাবতেন, তাঁদের সমস্ত বিশেষ অধিকার জনতার আস্থা হারিয়ে অনধিকারে পর্যবসিত হওয়ায় তাঁরা নিজেদের পাশাপাসি সবকিছুর প্রতি বিশ্বাস হারিয়েছেন। যে যে পদ্ধতিতে দেশ দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছিল, সেইসব পারম্পরিক প্রক্রিয়াকে বন্ধ করে দেওয়ায় তাঁদের অসুবিধা হওয়া স্বাভাবিক। যখন দুর্নীতি থেকে রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে, তখন কষ্ট হওয়া স্বাভাবিক, কোর্ট-কাছাড়িতে গিয়ে তাঁদেরকেও যখন কাঠগড়ায় গিয়ে দাঁড়াতে হয়েছে – কষ্ট হওয়া স্বাভাবিক।
আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, এখানে এসব বিষয় যেভাবে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, শিবভক্তির কথা বলা হয়েছে, আমি তো ভগবান শিবের কাছে প্রার্থনা করি যে, আর ১২৫ কোটি ভারতবাসীর কাছেও প্রার্থনা করি যে, আপনাদের এত শক্তি দিক যে ২০২৪ সালেও আপনারা যেন আবার অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারেন। এখানে ডোকলাম প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হয়েছে। আমি মনে করি যে, কোনও বিষয়ে না জেনে কথা বললে কখনও বিপদে পড়তে হয়। বিশেষ করে, যেখানে ব্যক্তির ক্ষতির চেয়ে দেশের ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি। সেজন্য এসব বিষয় নিয়ে কথা সংযতভাবে বলা উচিৎ। তাঁদের মনে থাকা উচিৎ যখন সারা দেশ ও সরকারের প্রতিনিধিরা নিজের নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে প্রতিপালন করছিলেন, তখন কে ডোকলাম প্রসঙ্গ নিয়ে সরাসরি চীনের রাজদূতের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। প্রথমে তো এই বসার কথা অস্বীকারও করেছিলেন, আবার পরে স্বীকারও করেছেন। কোনও সিনেমার স্ক্রিপ্টের মতো নাটকীয়ভাবে কাজ চলছিল। এইসব সংবেদনশীল বিষয়ে স্বচ্ছতা থাকার প্রয়োজন ছিল না কি?
এখানে রাফেল বিতর্ক প্রসঙ্গ এসেছে। আমি কল্পনাও করতে পারি না যে, সত্যকে এইভাবে বিকৃতভাবে পেশ করা যায়। বারংবার চিৎকার করে দেশকে বিভ্রান্ত করা যায়। দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে এভাবে ছেলেখেলা করা দেশবাসী কখনো ক্ষমা করবেন না। এটা কত দুঃখের বিষয় যে, এই সংসদে যে আরোপ লাগানো হয়েছে, তা দুটি দেশকে বিবৃতি দিয়ে খারিজ করতে হয়েছে। এরকম শিশুসুলভ ব্যবহার কি দায়িত্ব জ্ঞানহীনতার পরিচয় নয়। যে দল এত বছর ক্ষমতায় ছিল, তার বর্তমান অধ্যক্ষ কোনও রকম প্রমাণ ছাড়াই এভাবে চিৎকার করবেন! এজন্য দেশবাসী আপনাদের ক্ষমতাচ্যুত করেছেন। নিজদের এবার সংশোধন করুন। আপনারা যে স্তরে রাজনীতি করেন, তা দেশের ভালো করতে পারে না। মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়া, আমি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, এই সমঝোতা দুটি দেশের মধ্যে হয়েছে, এটি কোনও বাণিজ্যিক সংস্থার মধ্যে সমঝোতা নয়। দুটি দায়িত্বশীল সরকারের মধ্যে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা সুনির্দিষ্ট করে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। আমার বিনীত অনুরোধ, এই জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সংবেদনশীল বিষয়ে এ ধরণের শিশুসুলভ বয়ান দেওয়া থেকে সংযত থাকুন।
আর শ্রদ্ধেয় নামী নেতার প্রতি আমার প্রার্থনা, দেশের সেনাধ্যক্ষের প্রতি শব্দ প্রয়োগে সংযত থাকুন। কারণ, আজও সীমান্তে দেশের যত সেনা মোতায়েন রয়েছেন, যত অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক রয়েছেন, তাঁরা আপনার ভাষা শুনে কতটা কষ্ট পেয়েছেন, তা আপনি এই সভায় বসে কল্পনাও করতে পারবেন না। যাঁরা দেশের জন্য আত্মবলিদানে সর্বদা প্রস্তুত থাকেন, তাঁদের পরাক্রমকে মর্যাদা দেওয়ার সামর্থ্য যদি নাও থাকে, তবুও আপনি ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’কে ‘জুমলা’ স্ট্রাইক বলতে পারেন না। এটা দেশবাসী কখনও ক্ষমা করবেন না। গালি দিতে হলে মোদীকে দিন। যাঁরা দেশের জন্য আত্মবলিদানে সর্বদা প্রস্তুত থাকেন তাঁদেরকে গালি দেবেন না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়া, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কংগ্রেস এই অবিশ্বাসের আবহ তৈরি করেছে। দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে অনাস্থা প্রস্তাবের মতো সাংবিধানিক রক্ষাকবচের অপব্যবহার করেছে। আমি খবরের কাগজে পড়েছি যে, অনাস্থা প্রস্তাবের স্বীকৃতির পর পরই বিবৃতি দিয়েছেন, কে বলে আমাদের সংখ্যাধিক্য নেই – অহঙ্কার দেখুন। আমি এই সভাকে মনে করাতে চাই যে, ১৯৯৯ সালে রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে দাবি করা হয়েছিল যে, তাঁদের কাছে ২৭২ জন সাংসদ রয়েছেন এবং আরও কয়েকজন সমর্থন করবেন। মাত্র এক ভোটে অটলজির নেতৃত্বাধীন সরকারকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের ২৭২-এর দাবি অন্তঃসার শূন্য প্রমাণিত হয় আর ১৩ মাসের মধ্যে দেশকে আরেকবার সাধারণ নির্বাচনের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। এভাবেই একটি স্থির জনাদেশকে অস্থির করার খেলা তাঁরা খেলেছিলেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করার কায়দা কংগ্রেসের জানা আছে। ১৯৭৯ সালে কৃষক নেতা চৌধুরী চরণ সিং-কে তাঁরা প্রথমে সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছিলেন এবং তারপর সমর্থন তুলে নিয়েছিলেন। এত বড় একজন কৃষক নেতাকে এভাবে অপমান করা হয়েছিল। একই পদ্ধতিতে তাঁরা শ্রদ্ধেয় চন্দ্রশেখরজিকে ধোঁকা দিয়েছিল। ১৯৯৭সালে এই ফর্মুলাতেই প্রথমে শ্রদ্ধেয় দেবগৌড়াজিকে অপমান করা হয়েছিল, তারপর ইন্দ্রকুমার গুজরালকে ধোঁকা দিয়েছিল। শ্রদ্ধেয় দেবগৌড়াজি কিম্বা মুলায়ম সিংজিকে জিজ্ঞেস করলে জানা যাবে কংগ্রেস তাঁদের সঙ্গে আরও কত বিশ্বাসভঙ্গের কাজ করেছে! গরিব নিম্নবর্গের মধ্য থেকে উঠে আসা এরকম অনেক সরলমতি শ্রদ্ধেয় নেতার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আর বারংবার দেশকে অস্থিরতায় ঠেলে দেওয়ার পাপ করেছে। কিভাবে কংগ্রেস নিজের সরকার বাঁচাতে দু’বার সমর্থন কেনার চেষ্টা করেছে – ভোটের বদলে নোটের এই খেলার কথা কে না জানেন! আজ এখানে আরেকটি কথা বলা হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী আমার চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারেন না। মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়া, এটা ঠিকই তাঁর চোখে চোখ রেখে কথা বলার আমি কে? গরিব মায়ের সন্তান, পিছিয়ে পড়া জাতির ছেলে, আমি কোথায় আপনার চোখে চোখ রাখব! আপনি তো নামী মানুষ আর আমি হলাম কাজের মানুষ। আপনার চোখে চোখ রাখার হিম্মত আমার নেই। মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়া, ইতিহাস সাক্ষী আছে, সুভাষ চন্দ্র বোস নামী মানুষদের চোখে চোখ রেখে কথা বলতেন বলে, তাঁর সঙ্গে কী হয়েছে! সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, মুরারজি ভাই দেশাই, জয়প্রকাশ নারায়ণ, চৌধরী চরণ সিং, চন্দ্রশেখর কিংবা প্রণব মুখার্জি চোখে চোখ রেখে কথা বলতে গিয়ে কিভাবে প্রতারিত হয়েছেন, ইতিহাস তার সাক্ষী। মাননীয় শরদ পাওয়ার এখনও সক্রিয় রাজনীতিতে আছেন, তিনিও চোখে চোখ রেখে কথা বলার খেসারত দিচ্ছেন। এইসব ঐতিহাসিক সত্যের কথা আমি বিস্তারিত বলতে পারি। কিভাবে চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস দেখালে অপমানিত হতে হয়, কিভাবে ঠোকর মেরে বের করে দেওয়া হয়। একটি মহান পরিবারের এই ইতিহাস এদেশে অজ্ঞাত নয়। সেজন্য আমার মতো কাজের লোক তাঁর মতো নামী লোকের চোখে চোখ রাখার সাহস করি না। তাঁর চোখের কারসাজি টিভিতে গোটা দেশ দেখছে। কিভাবে চোখ খুলছেন, কিভাবে চোখ বন্ধ করছেন – এই চোখের খেলা!
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়া, কিন্তু চোখে চোখ রেখে আজ একটি সত্যকে বারবার বিকৃত করা হয়েছে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, জিএসটি-র আওতায় পেট্রোলিয়ামকে কেন আনা হয়নি? আমি জিজ্ঞেস করতে চাই, একটি পরিবারের ইতিহাসের বাইরেও তো কংগ্রেসের ইতিহাস আছে। আপনার কি মনে নেই যে, জিএসটি-র খসড়া যখন তৈরি হচ্ছিল, তখন আপনাদের ইউপিএ সরকারই পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্যগুলিকে জিএসটি-র আওতার বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আপনি কি এটাও জানেন না? আজ এখানে এটাও বলা হয়েছে যে, আপনি চৌকিদার নন, অংশীদার। মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়া, আমি গর্বের সঙ্গে বলতে চাই যে, আমরা চৌকিদারও আবার অংশীদারও। কিন্তু আপনাদের মতো সওদাগর নই, ঠিকাদার নই। আমরা অংশীদার, দেশের গরিবদের দুঃখের অংশীদার, দেশের কৃষকদের যন্ত্রণার অংশীদার, দেশের নবীন প্রজন্মের স্বপ্নের অংশীদার, দেশকে উন্নয়নের নতুন পথে নিয়ে যাওয়া শ্রমজীবী মজুরদের অংশীদার আমরা আছি এবং থাকব। কিন্তু আমরা সওদার নই, ঠিকাদারও নই।
কংগ্রেসের একটি-ই মন্ত্র, হয় আমরা থাকব, না হলে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করব। দেশকে গুজবের সাম্রাজ্যে পরিণত করব। তাঁরা যখনই ক্ষমতার বাইরে থেকেছেন, এমনটাই করেছেন। ওদিকেও ভুক্তভোগীরা বসে আছেন – এসব সবাই জানেন।
গুজব ছড়ানো হয়, মিথ্যা প্রচার করা হয়। আজকের যুগে গুজব ছড়ানোর জন্য প্রযুক্তিও রয়েছে। যেমন গুজব ছড়ানো হয়েছিল, দেশ থেকে সরকার সংরক্ষণ তুলে দিচ্ছে। দলিতদের ওপর অত্যাচার প্রতিরোধী আইন তুলে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে তাঁরা দেশকে হিংসার আগুনে নিক্ষেপ করতে চায়। মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়া, এদের রাজনীতি হ’ল দলিত, পীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত এবং গরিবদের ইমোশনাল ব্ল্যাক মেলিং-এর রাজনীতি। শ্রমিক ও কৃষকদের দুঃখ-দুর্দশার কথা না ভেবে, তাঁদের সমস্যার সমাধান না খুঁজে তাঁরা সর্বদাই নির্বাচনে জেতার শর্টকাট খোঁজেন। ফলস্বরূপ, দেশের একটা বড় অংশ ক্ষমতায়ন থেকে বঞ্চুত থেকে গেছে। যারা বারবার তাদেরই দলের মহান নেতা বাবাসাহেব আম্বেদকরের ভাষা ও পোশাক নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করেছে, আজ তারাই বাবাসাহেব আম্বেদকরের নামকীর্তন করছেন। যাঁরা বারবার সংবিধানের ৩৫৬ ধারার অপব্যবহার করেছেন, তাঁরা আমাদেরকে গণতন্ত্রের শিক্ষা দিতে এলে হাসি পায়। নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধার জন্য ১৯৮০, ১৯৯১, ১৯৯৮, ১৯৯৯ সালে দেশকে অকাল সাধারণ নির্বাচনের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। একটি পরিবারের স্বপ্ন ও আকাঙ্খা পূরণের জন্য দেশের গণতন্ত্রকেও বিপদে ফেলতা তাঁরা পিছ পা হননি। যাঁদের এমন মানসিকতা, যাঁদের মনে এত অহংকার, তাঁরা আমাদের মতো মানুষদের কিভাবে মেনে নেবেন! সেজন্য আমাদের পছন্দ না করাটাই স্বাভাবিক।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়া, কংগ্রেস পার্টি মাটি থেকে সরে গেছে। এখন তাঁদের মনোভাব হ’ল আমরা তো ডুবেছি বন্ধু তোমাদেরও নিয়ে ডুববো। কিন্তু আমি এই অর্থ আর অনর্থের মাঝে বারবার জড়িয়ে পড়ি। যাঁরা নিজেদের অনেক বিদ্বান বলে মনে করেন, নিজেদের জ্ঞান নিয়ে যাঁদের অহঙ্কার, তাঁদের একজনের উক্তি আমি আপনাদের শোনাতে চাই –
“কংগ্রেস পার্টি নানা রাজ্যে কেন ও কিভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। আমি এমন এক রাজ্য থেকে উঠে এসেছি, যেখানে এই দলের প্রভুত্ব সমাপ্ত হয়ে গেছে, কংগ্রেস কেন একথা বুঝতে পারে না যে, ক্ষমতা এখন আর উচ্চ বর্গের হাতে নেই। গণতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী, গ্রাম দেহাতের দরিদ্র, নিম্নবর্গের সম্পত্তিহীন মানুষের হাতে ক্ষমতা পৌঁছে গেছে। যেভাবে যেভাবে ক্ষমতা সমাজের নীচু স্তরে পৌঁছেছে, সেভাবেই অনেক রাজ্যে কংগ্রেসের প্রভাব হ্রাস পেয়েছে”। এই স্মরণযোগ্য উক্তিটি ১৯৯৭ সালের ১১ এপ্রিল শ্রদ্ধেয় দেবগৌড়ার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রস্তাবের ভাষণে সেই সময়ে অর্থ আর অনর্থের মাঝে জড়িয়ে পড়া আপনাদের মহাপণ্ডিত মহারথি নেতা শ্রী চিদাম্বরম বলেছিলেন। আমার ওপাশে বসে থাকা অনেকে আজও তাঁর এই বক্তব্যের মর্ম বুঝতে পারেননি।
১৮ বছর আগে মননীয় অটল বিহারী বাজেপেয়ী সরকার তিনটি নতুন রাজ্য গঠন করেছিলেন। উত্তরাখন্ড, ঝাড়খন্ড এবং ছত্তিশগড় – কোনও রকম ঝগড়া, বিবাদ, টানাপোড়েন ছাড়াই সংশ্লিষ্ট সকলে একসঙ্গে বসে কথাবার্তার মাধ্যমে পথ খুঁজে বের করা হয়েছিল। এটা সকলেই জানেন, এই তিনটি রাজ্য অত্যন্ত শান্তির সঙ্গে উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে এবং দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠেছে। কিন্তু আপনারা রাজনৈতিক লাভের জন্য অন্ধ্রপ্রদেশের জনগণকে অন্ধকারে রেখে অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশে রাজ্যসভার দরজা বন্ধ করে অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানা বিভাজন করেছেন। সেই সময়ে আমি বলেছিলাম, তেলেগু আমার মা। তেলেগু অস্মিতাকে আহত করা উচিৎ নয়। কিন্তু তাঁরা সদ্যজাতকে বাঁচাতে মা-কে মেরে ফেললো। তেলেগু অস্মিতার পুনরুজ্জীবন আমাদের সকলের দায়িত্ব। আজও আমি মনে করি যে, ২০১৪ সালে আপনাদের দুর্দশার পেছনে এটা একটা বড় কারণ। আপনারা ভেবেছিলেন, এক দলের সঙ্গ ছাড়লে আরেকদলের সাহায্য পাবেন। কিন্তু জনগণ ক্ষুব্ধ থাকায় আপনারা কোনও পক্ষেরই সমর্থন পাননি। এটা আপনাদের জন্য নতুন নয়। আপনারা তো ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের সমস্যা থেকেই এখনও দেশকে মুক্ত করতে পারেননি। আপনারা যদি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিভাজন করতেন, তা হলে আজ এইদিন দেখতে হ’ত না। সেই সময়ে চন্দ্রবাবু নাইডু আর আমাদের তেলেঙ্গার মুখ্যমন্ত্রী কে সি আর এই বিভাজন নিয়ে কেমন সমস্যায় পড়েছিলেন, তা আমার আজও মনে আছে। তাঁদের সমস্যার সমাধান করতে কখনও রাজ্যপাল, কখনও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর আমাকেও বসতে হয়েছে। সেই সময়ে টিডিপির সমস্ত শক্তি তেলেঙ্গানার বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হ’ত। তাঁদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। কিন্তু সেই সময়ে টিআরএস প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়ে নিজের রাজ্যের উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন আর কতটা এগিয়েছেন, সে সম্পর্কে আপনারা জানেন। উভয় রাজ্যের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ আজও চলছে। এনডিএ সরকার দায়িত্ব নিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানার উন্নয়নযাত্রা অব্যাহত রাখার বিষয়টি সুনিশ্চিত করেছে। আমরা যেসব পদক্ষেপ নিয়েছি, তার কিছু মিডিয়া রিপোর্ট আমার এখনও মনে আছে। এই সভারই একজন টিডিপি-র মাননীয় সদস্য সংবাদ মাধ্যমে বলেছিলেন যে, এনডিএ সরকার স্পেশাল ক্যাটাগরি স্ট্যাটাস থেকেও অনেক ভালো প্যাকেজ দিয়েছে। অর্থ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, কমিশন ‘স্পেশাল ও জেনারেল ক্যাটাগরি’ রাজ্যগুলির মধ্যে পার্থক্য সমাপ্ত করে দিয়েছে। কমিশন শুধু উত্তর-পূর্ব এবং ‘হিল স্টেট’গুলির জন্য একটি নতুন ক্যাটাগরি সৃষ্টি করেছে। এই প্রক্রিয়ায় কমিশন লক্ষ্য রেখেছে অন্যান্য রাজ্যগুলির লোকসান না হয়। এনডিএ সরকার অন্ধ্রপ্রদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্খাকে সম্মান করে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে, চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশের বাইরে আমরা যেতে পারি না। অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য একটি নতুন ‘স্পেশাল অ্যাসিস্ট্যান্স প্যাকেজ’ রচিত হয়েছে, যার দ্বারা তাঁরা ততটাই আর্থিক সহায়তা পাবেন, যতটা ‘স্পেশাল ক্যাটাগরি স্ট্যাটাস’ অনুযায়ী পাওয়া যেতে পারে। ২০১৬ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর এই সিদ্ধান্ত কার্যকরি হয়। ২০১৬ সালের ৪ঠা নভেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং এই প্যাকেজ স্বীকার করে অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। আমরা নিজেদের দায়বদ্ধতা অনুসারে বাস্তবায়নের কাজ করে যেতে থাকি। কিন্তু পরবর্তীকালে নিজেদের বিফলতা ঢাকতে টিডিপি ইউ টার্ন নিল।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়া, টিডিপি যখন এনডিএ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখন আমি চন্দ্রবাবুকে ফোন করে বলেছিলাম, আপনারা ওয়াইএসআর-এর জালে পা জড়াচ্ছেন। কোনওভাবেই এই প্রতিযোগিতা থেকে আপনারা বাঁচতে পারবেন না। আজ আমি দেখছি তাঁদের সেই ঝগড়া চালু রয়েছে, ফল ভুগছে এই সভা। অন্ধ্রপ্রদেশের জনগণও এই খেলা দেখতে পাচ্ছেন। নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, সমস্ত প্রশংসা সমালোচনায় বদলে যাচ্ছে। যে কোনও বিশেষ অনুদান বা প্যাকেজ দিলে তার প্রভাব অন্যান্য ক্ষেত্রেও পড়ে। এই সভাতেই তিন বছর আগে শ্রদ্ধেয় বীরপ্পা মৈলি বলেছিলেন, “আপনারা কিভাবে দুটি রাজ্যেকে দু’রকম সুযোগ-সুবিধা কিভাবে দিতে পারেন? এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনারা আইন প্রণয়নকারী হিসাবে ভেদাভেদ করতে পারেন না”।
আজ আমি এই সভার মাধ্যমে অন্ধ্রপ্রদেশের জনগণকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, এনডিএ-র নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার অন্ধ্রপ্রদেশের জনগণের কল্যাণে যতটা সম্ভব সাহায্য করতে পিছ পা হবে না। অন্ধ্রের ভালো হলে দেশের ভালো হবে – এটাই আমাদের ভাবনা। আমাদের কাজ করার পদ্ধতি হ’ল সমস্যার সমাধান করে এগিয়ে যাওয়া। দশকের পর দশক ধরে অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের ‘এক পদ, এক পেনশন’ দাবি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। জিএসটি-ও কত বছর ধরে ঝুলে ছিল, তা আপনারা জানেন। আর এখানে বলা হয়েছে যে, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ঝুলিয়ে রেখেছে। আমি এই সভাকে সত্যিটা বলতে চাই যে, তখন যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা সকলেই জানেন, আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে যেসব চিঠি লিখেছিলাম, সেগুলিও অক্ষত আছে। আমি সে সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে লিখেছিলাম যে, জিএসটি-তে রাজ্যগুলির স্বার্থ না দেখে এটিকে কার্যকর করতে পারবেন না। রাজ্যগুলি যেসব প্রশ্ন তুলেছে, তাঁদের সঙ্গে বসে সেগুলির সমাধান করুন। কিন্তু তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার এতই অহঙ্কারী ছিল যে, তারা রাজ্য সরকারগুলির বক্তব্য শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল না। সেই সময় বিজেপি ছাড়াও অন্যান্য দলের মুখ্যমন্ত্রীরা এমনকি কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীরা আমার সঙ্গে দেখা হলে বলতেন, আমরা তো বলতে পারব না, মোদীজি আপনি বলুন, তা হলে রাজ্যগুলির উপকার হবে। তাঁদের অসহয়তা অনুভব করে আমি সরব হয়েছিলাম। আর তারপর যখন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলাম, তখন মুখ্যমন্ত্রীর অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছিল। ফলস্বরূপ, আমরা প্রথমেই রাজ্যগুলির স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জিএসটি-কে বাস্তবায়িত করি। আপনাদের অহঙ্কার প্রতিবন্ধক না হলে, যথাসময়ে রাজ্যগুলির সমস্যা বুঝলে পাঁচ বছর আগেই জিএসটির বাস্তবায়ন হ’ত।
কালোটাকা উদ্ধারের জন্য সুপ্রিম কোর্ট এসআইটি গড়ার উপদেশ দিয়েছিল। কারা এই এসআইটি গড়ার প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে রেখেছিল? বেনামী সম্পত্তি আইন কারা ঝুলিয়ে রেখেছিল? আপনারা ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। এনডিএ সরকার খরিফ ফসলে কৃষকের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বিনিয়োগের ১৫০ শতাংশ করার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এটি কারা ঝুলিয়ে রেখেছিল? এই রিপোর্ট আপনাদের কাছে এসেছিল ২০০৬ সালে। তখন থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত আপনারাই সরকারে ছিলেন। ৮ বছর ধরে এই রিপোর্টের কথা আপনাদের মাথায় আসেনি। ২০০৭ সালে ইউপিএ সরকার যখন জাতীয় কৃষি নীতি ঘোষণা করে, সেখানে ‘৫০ শতাংশ’ অনুল্লিখিত ছিল। তারপরও ৭ বছর কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল কিন্তু আপনারা শুধু ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বিষয়টি নিয়ে কথা বলে গেছেন, জনগণ ও কৃষককে মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে গেছেন।
আরেকটি কথা আমি এখানে বলতে চাই, যা দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৪ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর অনেকেই আমাদের বলেছিলেন যে, দেশের অর্থনীতি নিইয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন। আমরাও ভেবেছিলাম, শ্বেতপত্র প্রকাশ করব। কিন্তু আমরা এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে গিয়ে অবাক হয়ে যাই। অর্থনীতির কী দূরাবস্থা ছিল। এই পরিস্থিতির সূত্রপাত ২০০৮ সালে হয়েছিল। ২০০৯ সালে সাধারণ নির্বাচনের আগে কংগ্রেস ভেবেছিল, যতটা সম্ভব ব্যাঙ্কগুলিকে লুঠ করতে হবে। তারা ২০০৯ সালে আবার ক্ষমতায় আসার পর সেই অভ্যাস আর বদলাতে পারে না। আর তলে তলে ব্যাঙ্কগুলির লুঠ চলতে থাকে। একটি পরিসংখ্যান যদি আমি এই সভায় পেশ করি, তা হলে মাননীয় সদস্যরা চমকে উঠবেন। স্বাধীনতার পর ৬০ বছরে আমাদের দেশের ব্যাঙ্কগুলি যত টাকা ঋণ দিয়েছে, তার পরিমাণ ছিল ১৮ লক্ষ কোটি টাকা। আর পরবর্তী ৬ বছরে অর্থাৎ ২০০৮ থেকে ২০১৪-র মধ্যে মোট প্রদত্ত ঋণের পরিমাণ হয়ে ওঠে ৫২ লক্ষ কোটি টাকা। তার মানে ৬০ বছরে ব্যাঙ্কগুলি যত ঋণ দিয়েছিল, শেষ ছয় বছরে তার প্রায় দ্বিগুণ ঋণ দিয়েছে। বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং তো অনেক পরে এসেছে। কংগ্রেসের নেতারা এতটাই বুদ্ধিমান যে, ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং আসার আগেই তাঁরা ভারতে ফোন ব্যাঙ্কিং শুরু করে দিয়েছিলেন। এর পদ্ধতি কি ছিল? কোনও প্রমাণপত্র দেখার প্রয়োজন নেই, টেলিফোন এলো ঋণ দিয়ে দাও। ঋণের টাকা পরিশোধের সময় হলে তাঁকে আরেকটি ঋণ দাও। সেটি পরিশোধের আগে তৃতীয় ঋণ দাও। এভাবে মাছের তেলে মাছ ভাজার কুচক্র ব্যাঙ্কগুলিকে অশোধিত ঋণের বিশাল জালে জড়িয়ে দিয়েছে। এই অশোধিত ঋণের জাল ভারতের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় ল্যান্ড মাইনের মতো পাতা হয়েছিল। আমরা স্বচ্ছতা বজায় রেখে তদন্ত শুরু করি। তদন্তকারীরা কেঁচো খুঁড়তেই বড় বড় সাপ বেরিয়ে আসে। অশোধিত ঋণ বৃদ্ধির আরেকটি বড় কারণ হ’ল ইউপিএ সরকারের কয়েকটি সিদ্ধান্ত যার ফলে দেশে ক্যাপিটাল গুডস-এর আমদানি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বৃদ্ধি হয়েছিল। আপনারা শুনে অবাক হবেন যে, এই ক্যাপিটাল গুডস্-এর আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ার মূল্যে ছিল কাস্টম্স ডিউটি হ্রাস পাওয়া। এই সমস্ত আমদানি ফাইনান্সিং ব্যাঙ্কগুলির ঋণের মাধ্যমে করা হয়েছিল। দেশে ক্যাপিটাল গুডস্-এর উৎপাদনে এর প্রতিকূল প্রভাব পড়ে। ব্যাঙ্কগুলির ল্যান্ডিং ছাড়াই প্রোজেক্ট অ্যাসেসমেন্ট ছাড়াই ক্লিয়ারেন্স নেওয়া হয়। এমনকি, অনেক প্রোজেক্টে ব্যাঙ্কগুলি ইক্যুইটির বিনিময়ে ঋণ দিয়েছে। এই প্রক্রিয়াকে সহজ করার জন্য আমদানি এবং প্রোজেক্ট রচনায় কাস্টমস্ ডিউটি বা কর হ্রাস করা হয়। অন্যদিকে, সরকারি ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার জন্য কয়েকটি নতুন কর আইন প্রণয়ন করা হয়। ফলে, কর রাজকোষে আসতো না। এই করের ফলে সমস্ত প্রোজেক্ট ক্লিয়ারেন্স বিলম্বিত হয়। ব্যাঙ্কগুলির ঋণ ঝুলে থাকে আর অশোধিত ঋণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। আজ বারবার এই অশোধিত ঋণের করুণাবস্থা উত্থাপিত হওয়ায় বাধ্য হয়ে এই সভার মাধ্যমে জনগণের সামনে এই তথ্যগুলি তুলে ধরতে হ’ল।
আমরা সরকারে দায়িত্ব নিয়ে সততার সঙ্গে সমস্ত ব্যাঙ্কের খাতায় অশোধিত ঋণগুলিকে চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অন্যদিকে, ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সংস্কার আনার জন্য বেশ কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত আনা হয়েছে, যা আগামীদিনগুলিতে ভারতীয় অর্থ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে। ৫০ কোটি টাকার বেশি সমস্ত অশোধিত অ্যাকাউন্টের সমীক্ষা করা হয়েছে। এগুলির মধ্যে ‘উইলফুল ডিফল্টার্স’ এবং প্রতারণার সম্ভাবনা চিহ্নিত করা হচ্ছে। ব্যাঙ্কের ‘স্ট্রেস অ্যাসেটস্ ম্যানেজমেন্ট’-এর জন্য একটি নতুন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। ব্যাঙ্কগুলির রি-ক্যাপিটালাইজেশনের জন্য ২ লক্ষ ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে। আমরা সরকারে এসে ‘ইনসলভেন্সি’ আর ‘ব্যাঙ্কক্রপ্সি’ কোড চালু করেছি। এর মাধ্যমে ‘টপ টুয়েল্ভ ডিফল্ডার্স’রাই মোট অশোধিত ঋণের ২৫ শতাংশের সমান। এই মামলা ‘ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইব্যুনাল’ দ্বারা দায়ের হয়েছে। এই ১২টি বড় মামলায় প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা আটকে আছে। মাত্র এক বছরের এগুলির মধ্যে তিনটি বড় মামলা থেকে আমাদের সরকার প্রায় ৫৫ শতাংশ ‘রিকভারি’ পেয়েছে। তেমনই মোট ১২টি মামলা থেকে প্রায় ৪৫ শতাংশ রিকভারি সম্ভব হয়েছে। এ থেকে মুক্তি পাবার জন্য গতকালই লোকসভায় ‘ফিউজিটিক ইকনোমিক অফেন্ডার বিল’ পাস হয়েছে। ব্যাঙ্কের অশোধিত ঋণকারীদের এখন দেশের আইন থেকে নিজেদের রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আর এর মাধ্যমে অশোধিত ঋণের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আনা যাবে। ২০১৪ সালে এনডিএ সরকার ক্ষমতায় না এলে যেভাবে কংগ্রেস সরকার চালাচ্ছিল, দেশ এতদিনে অনেক বড় সঙ্কটের মুখোমুখী হ’ত।
আমি এই সভার মাধ্যমে দেশবাসীকে বলতে চাই যে, পূর্ববর্তী সরকার দেশে ‘স্পেশাল ফরেন কারেন্সি নন রেসিডেন্স ডিপোসিট’-এর প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলারের ঋণ আমাদের কাঁধে রেখে গেছে। কিন্তু আপনারা শুনলে খুশি হবেন আমরা ইতিমধ্যেই এই ঋণের টাকা ফেরৎ দিয়েছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়া, দেশে গ্রাম স্বরাজ অভিযান এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে মহাত্মা গান্ধীর স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে আমরা ১৫ আগস্টের মধ্যে ৬৫ হাজার গ্রামে সকলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, প্রত্যেক পরিবারে রান্নার গ্যাস সংযোগ, প্রত্যেক বাড়িতে বিদ্যুৎ, প্রত্যেক মা ও শিশুর টিকাকরণ, সকলের জন্য বিমা সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা আর প্রত্যেক বাড়িতে এলইডি বাল্ব সুনিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দেশের ১১৫টি জেলায় এই ৬৫ হাজার গ্রাম অবস্থিত। পূর্ববর্তী সরকারগুলির ভুল নীতির ফলে এই গ্রামগুলি আস্থা হারিয়ে দেশের বাকি অংশ থেকে অনেক পিছিয়ে পড়েছিল। আমরা দায়িত্ব নিয়ে তাঁদের জীবনে নতুন বিশ্বাস প্রদান করেছি। নতুন ভারতের ব্যবস্থাপনা হবে স্মার্ট ও সুদূরপ্রসারী। আমরা স্কুল-কলেজে অটল টিঙ্কারিং ল্যাব, দক্ষ ভারত, খেলো ইন্ডিয়া অভিযানের মাধ্যমে প্রতিভা চিহ্নিতকরণের অভিযান শুরু করেছি। মহিলাদের জীবনে প্রত্যেক পর্যায়ের দিকে লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন প্রকল্প রচনা করা হয়েছে। আজ গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে, দেশে ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটি-তে প্রথমবার দু’জন মহিলা দায়িত্ব পেয়েছেন। দু’জন মহিলা মন্ত্রী সমস্ত সিদ্ধান্তে অংশীদার হন। আমাদের সময়েই বিমান বাহিনীতে ফাইটার পাইলট নিয়োগ করা হয়েছে। তিন তালাকের বিরুদ্ধে যে মুসলমান বোনেরা লড়াই করছেন, তাঁদের পাশে সরকার দাঁড়িয়েছে। ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ দেশের গ্রামে গণআন্দোলনে পরিণত হয়েছে। অনেক জেলায় মেয়েদের জন্মের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় হিংসা ও অত্যাচারকে মেনে নেওয়া যায় না। এ ধরণের ঘটনায় যে কোনও ভারতীয়র মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক ও মানবতার মূল ভাবনার প্রতিকূল। রাজ্য সরকারগুলি এই হিংসা ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।
আমি আজ এই সভার মাধ্যমে সমস্ত রাজ্য সরকারগুলির কাছে অনুরোধ জানাব যে, যে কোনও হিংসার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন। দেশে একবিংশ শতাব্দীর স্বপ্ন পূরণের জন্য ভারতমালা প্রকল্পের মাধ্যমে গোটা দেশে মহাসড়কের জাল বিছানো হচ্ছে। সাগরমালা প্রকল্পের মাধ্যমে সমস্ত তটবর্তী অঞ্চল এবং বন্দরগুলির মধ্যে যাতায়াত ব্যবস্থা প্রশস্ত করা হচ্ছে। টিয়ার-২ এবং টিয়ার-৩ সিটিগুলির মধ্যে বিমান যোগাযোগ স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলেছে। দেশের শহরগুলিতে মেট্রোরেলের ব্যাপক বিস্তারের কাজ চলছে। দেশে প্রত্যেক পঞ্চায়েতে ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার জন্য কত দ্রুতগতিতে কাজ হচ্ছে দেশবাসী তার সাক্ষী। গ্রাম থেকে শুরু করে মহানগর পর্যন্ত গরিব ও মধ্যবিত্তদের জীবনে বড় পরিবর্তন এসেছে। পূর্ববর্তী সরকারের তুলনায় আমরা সকল ক্ষেত্রে কাজের গতি বৃদ্ধি করেছি। সড়ক নির্মাণ, রেল লাইন বৈদ্যুতিকীকরণ, দেশের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি, নতুন নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, আইআইটি, আইআইএম স্থাপন এবং মেডিকেল আসন সংখ্যা বৃদ্ধি – সকল ক্ষেত্রেই আপনারা যে আমলা কর্মচারীদের নিয়ে কাজ করছিলেন, তাঁদেরকে নিয়েই আমরা এই পরিবর্তন আনতে পেরেছি। কারণ, আমরা দেশের সামর্থ্য পুনরুজ্জীবনের মাধ্যমে নতুন প্রাণশক্তি জাগিয়ে তুলতে পেরেছি।
দেশে কর্মসংস্থান নিয়ে অনেক ভ্রম সৃষ্টি করা হচ্ছে। এভাবে দেশের নবীন প্রজন্মকে হতাশায় ডুবিয়ে দিয়ে রাজনীতি করা পাপ নয় কি! সংগঠিত ক্ষেত্রে রোজগার বৃদ্ধির মাপার পদ্ধতি হ’ল এমপ্লয়ি প্রভিডেন্ট ফান্ডে কতজনের নাম নিবন্ধীকৃত হয়েছে সেদিকে লক্ষ্য রাখা। সেপ্টেম্বর, ২০১৭ থেকে মে, ২০১৮ – শুধু এই ৯ মাসে প্রায় ৪৫ লক্ষ নতুন নেট সাবস্ক্রাইবার ইপিএফ-এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭৭ শতাংশের বয়স ২৮ বছরের নীচে। সংগঠিত ক্ষেত্রে নিউ পেনশন স্কিমে বিগত ৯ মাসে ৫ লক্ষ ৬৮ হাজারেরও বেশি নাম নিবন্ধীকৃত হয়েছে। এই দুটি সংখ্যা যোগ দিলে গত ৯ মাসেই ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। বিগত এক বছরে এই সংখ্যা ৭০ লক্ষেরও বেশি হবে। এই ৭০ লক্ষের মধ্যে ইএসআইসি-র পরিসংখ্যান যুক্ত করা হয়নি। কারণ, তাঁদের এখন আধার লিঙ্কিং-এর কাজ চলছে। এছাড়া, দেশে যত পেশাদার সংস্থা রয়েছে, যেগুলিতে নবীনরা ডিগ্রি পাওয়ার পর নাম নিবন্ধীকৃত করে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আর্কিটেক্ট, উকিল, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কোম্পানি সেক্রেটারিদের স্বতন্ত্র ইন্সটিটিউট রয়েছে। এই ইন্সটিটিউটগুলির পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৬-১৭’য় প্রায় ১৭ হাজার নতুন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ৫ হাজারেরও বেশি নতুন কোম্পানি চালু করেছেন। একটি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট সংস্থায় যদি ২০ জনের কর্মসংস্থান হয়, তাহলে এই নতুন কোম্পানিগুলিতে ১ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রতি বছর দেশে ৮০ হাজারেরও বেশি স্নাতকোত্তর চিকিৎসক, দন্ত-শল্য চিকিৎসক এবং আয়ুষ চিকিৎসক পাস করে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছেন। এদের মধ্যে ৬০ শতাংশও যদি নিজস্ব চেম্বার খোলেন আর সেখানে ৫ জনের কর্মসংস্থান হয়, তা হলে ২ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়। ২০১৭ সালে প্রায় ৮০ হাজার আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট উকিল পাস করেছেন, তাঁদের মধ্যে যদি ৬০ শতাংশ নিজস্ব প্যাক্টিস শুরু করে থাকেন আর ২-৩ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে থাকেন, তা হলে তারাও প্রায় ২ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান দিয়েছেন। ২০১৭ সালে এই তিনটে পেশায় ৬ লক্ষ নতুন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। অসংগঠিত ক্ষেত্রের কথা যদি বলি, তা হলে শুধু পরিবহণ ক্ষেত্রেই অসংখ্য কর্মসংস্থান হয়েছে। গত বছর ৭ লক্ষ ৬০ হাজার বাণিজ্যিক গাড়ি বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ যদি পুরনো গাড়ির বদলে নতুন গাড়ি নামানো হয়ে থাকে, তা হলেও ৫ লক্ষ ৭০ হাজার নতুন গাড়ি পন্য পরিবহণের কাজে যুক্ত হয়েছে। প্রতিটি গাড়ি যদি দু’জন মানুষেরও কর্মসংস্থান দিয়ে থাকে, তাহলে কমপক্ষে ১১ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। যাত্রী গাড়ির ক্ষেত্রে বিক্রি হয়েছে ২৫ লক্ষ ৪০ হাজার নতুন গাড়ি। হিসাব করে দেখবেন, এগুলির মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ ৫ লক্ষ পুরনো গাড়ির বদলে নতুন গাড়ি পথে নেমে থাকলে অতিরিক্ত নতুন গাড়িগুলিতে ৫ লক্ষ নতুন চালকের কর্মসংস্থান হয়েছে। একইভাবে গত বছর ২ লক্ষ ৫৫ হাজার অটো রিক্শা বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে ১০ শতাংশ যদি পুরনো গাড়ির বদলে নেমে থাকে, আর অটো চালকরা যেহেতু শিফট্-এ কাজ করেন তাই প্রত্যেক ২টো অটো রিক্শায় ৩ জনের কর্মসংস্থান হয়। এর মানে অটো রিক্শায় ৩ লক্ষ ৪০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। সব মিলিয়ে পরিবহণ ক্ষেত্রে এই তিনটি বাহন থেকে গত এক বছরে ২০ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে।
ইপিএফ, এনপিএস এবং পেশাদার পরিবহণ ক্ষেত্র জুড়ে এক বছরে ১ কোটিরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। একটি স্বাধীন সংস্থার সমীক্ষা অনুসরণ করে আমি এই পরিসংখ্যান প্রস্তুত করলাম। আমি সরকারি পরিসংখ্যান পেশ করিনি। সেজন্য আমার অনুরোধ কোনও তথ্য ছাড়া সত্যকে বিকৃত করে দেশকে বিভ্রান্ত করবেন না। আজ দেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আগামী ৫ বছরে ১২৫ কোটি ভারতবাসীর ৮৫ শতাংশ যাদের বয়স ৩০ বছরের নীচে, তারাই দেশের ভবিষ্যৎ নির্ণয় করবে। নতুন ভারত দেশের নতুন আশা ও আকাঙ্খার ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে সম্ভাবনা, সুযোগ এবং স্থিরতাকে অনন্ত বিশ্বাসের পর্যায়ে পৌঁছে দেবে। সেখানে সমাজের কোনও অংশের মানুষ কাউকে অবিশ্বাস করবে না। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমাদের পরিবর্তমান আন্তর্জাতিক পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়া, এই অনাস্থা প্রস্তাবে যাঁরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন, প্রত্যেকের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। আরেকবার অন্ধ্রপ্রদেশের জনগণকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, আপনাদের কল্যাণে এনডিএ সরকার কোনও খামতি রাখবে না। দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা প্রত্যেকেই বদ্ধপরিকর। আমি আরেকবার আপনাদের ২০২৪ সালে এরকমই আমাদের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে আমার বক্তব্য সম্পূর্ণ করছি আর এই সভার সমস্ত সভাসদদের অনুরোধ জানাচ্ছি যে আপনারা এই অনাস্থা প্রস্তাবকে সর্বসম্মতিক্রমে খারিজ করে দিন। আমাকে বক্তব্য রাখার সময় দেওয়ার জন্য আপনাদের অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই।
ধন্যবাদ।