মহামান্য
রাষ্ট্রপতি ঘনী
আপনার অসাধারণ বক্তব্যের জন্য আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। আপনার সঙ্গে উপস্থিত আফগানিস্তানের সমস্ত উর্ধ্বতন প্রতিনিধি,
বন্ধুগণ,
নমস্কার!
প্রথমত, আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি, আমার আসতে দেরি হল। আমাদের সংসদ অধিবেশন চলছে, সংসদে কর্মসূচির জন্য আমার সেখানে থাকা খুব জরুরি হয়ে পড়েছিল। আজ আমরা ভারত-আফগানিস্তানের বন্ধুত্বের দীর্ঘ রাস্তায় আরেকটি প্রস্তর স্থাপন করতে চলেছি। ভারত ও আফগানিস্তান কেবল ভৌগোলিকভাবেই নয় আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতিও একসঙ্গে জুড়ে রয়েছে, একে অপরের ওপর প্রভাব ফেলেছে। এই শতাব্দী প্রাচীন যোগাযোগগুলি আমাদের ভাষা, আমাদের খাদ্যাভ্যাস, আমাদের সঙ্গীত, আমাদের সাহিত্যে প্রতিফলিত হয়।
বন্ধুরা
সবাই জানেন যে নদী বিশ্বের বৃহত্তম সভ্যতার ধারক। নদীই আমাদের রাষ্ট্রকে, আমাদের সমাজকে জীবনদাতা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে। ভারতে আমরা আমাদের গঙ্গা নদীকে মায়ের মর্যাদা দিই এবং এর পুনরুজ্জীবনের জন্য আমরা আমাদের 'নমামি গঙ্গে' কর্মসূচি শুরু করেছি। নদীর জন্য এই সম্মান ভারত এবং আফগানিস্তানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। আমাদের ঋগ্বেদের 'নদী-স্তুতি-সুক্ত' আমাদের অঞ্চলে প্রবাহিত নদীর প্রশংসা করে। মৌলানা জালালউদ্দিন রুমী নদীর শক্তিশালী সভ্যতা সংযোগ সম্পর্কে বলেছেন, "তোমার মধ্যে যে নদী প্রবাহিত হয় সে আমার মধ্যেও প্রবাহিত হয়"।
বন্ধুগণ,
ভারত প্রায় গত দুই দশক ধরে আফগানিস্তানের উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অংশীদার। আফগানিস্তানে আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলি পরিকাঠামো, ক্ষমতা বৃদ্ধি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদির মতো অনেকগুলি ক্ষেত্রে ছড়িয়ে রয়েছে। এক দশক আগে, পুল-এ-খুমরি থেকে ট্রান্সমিশন লাইন তৈরি করার ফলে কাবুল শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ উন্নত হয়েছিল। ২১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ দেলারম-জারঞ্জ মহাসড়ক আফগানিস্তানের জন্য যোগাযোগের বিকল্প সরবরাহ করেছে। কয়েক বছর আগে নির্মিত 'মৈত্রী বাঁধ' দিয়ে হেরাতের বিদ্যুৎ ও সেচের ব্যবস্থা আরও জোরদার হয়েছিল। আফগানিস্তানের সংসদ গঠন গণতন্ত্রের প্রতি ভারত ও আফগানিস্তানের জনগণের ভালবাসার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্ত প্রকল্পের একটি মূল দিক হ'ল এরফলে ভারত ও আফগানিস্তানের বন্ধুত্ব, আমাদের পারস্পরিক অংশীদারিত্ব আরও অনেক মজবুত হয়েছে। করোনা অতিমারির লড়াইয়ে আমাদের মধ্যে সেই বন্ধুত্ব, সেই একই ঘনিষ্ঠতা দেখা গেছে। তা ওষুধ এবং পিপিই, বা ভারতে তৈরি টিকার সরবরাহ, আফগানিস্তানের প্রয়োজনীয়তা বরাবরই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং থাকবে। এ কারণেই আমি বলতে পারি যে আমরা আজ কাবুলে যে শাহতুত বাঁধ তৈরির চুক্তি স্বাক্ষর করছি, এর ভিত কেবল ইট এবং মর্টার দিয়ে নয়, ইন্দো-আফগান বন্ধুত্বের শক্তিতে তৈরি হবে। কাবুল শহরটি ভারতের মানুষের হৃদয়ে এবং মনের মধ্যে অবস্থিত। আপনি যেমন উল্লেখ করেছেন, বেশ কয়েকটি প্রজন্ম গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'কাবুলিওয়ালা' গল্পটি পড়ে বড় হয়েছেন। আর তাই আমি বিশেষভাবে খুশী যে শাহতুত বাঁধ প্রকল্পের ফলে কাবুল শহরের নাগরিকদের জন্য পানীয় জলের সুবিধা সরবরাহ করবে। পাশাপাশি কাবুল নদীর অববাহিকায় একটি সেচের নেটওয়ার্কও তৈরি করা হবে।
বন্ধুগণ,
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে আমি যখন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করতে কাবুলে এসেছিলাম, তখন আমি প্রতি আফগান পুরুষ, মহিলা এবং শিশুদের চোখে ভারতের জন্য অনেক ভালবাসা দেখেছিলাম। আফগানিস্তানে, আমি কখনও অনুভব করিনি যে আমি অন্য কারও বাড়িতে আছি, আমার মনে হয়েছিল 'খানা-এ-খুদ-আস্ত' এটা আমার নিজের বাড়ি! আমি বাদখশান থেকে নিমরোজ এবং হেরত থেকে কান্দাহার পর্যন্ত প্রতিটি আফগান ভাই এবং বোনকে আশ্বস্ত করতে চাই যে ভারত আপনাদের সঙ্গে রয়েছে। আপনাদের ধৈর্য, সাহস এবং সংকল্পের যাত্রার প্রতিটি পদক্ষেপে ভারত আপনাদের সঙ্গে থাকবে। কোনও বাহ্যিক শক্তি আফগানিস্তানের উন্নয়ন বা ভারত-আফগানিস্তানের বন্ধুত্বকে থামাতে পারবে না।
মহামান্য,
আমরা আফগানিস্তানে ক্রমবর্ধমান হিংসার ঘটনায় উদ্বিগ্ন। নিরীহ নাগরিক, সাংবাদিক ও কর্মীদের কাপুরুষোচিতভাবে হিংসার শিকার হতে হচ্ছে। আমরা অবিলম্বে হিংসার অবসানের আহ্বান জানিয়েছি এবং আমরা যুদ্ধবিরতি সমর্থন করছি। হিংসা শান্তির বিপরীত এবং দুটো একসঙ্গে চলতে পারে না। এক নিকট প্রতিবেশী এবং শক্তিশালী কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ভারত ও আফগানিস্তান উভয়ই তাদের অঞ্চলকে সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার মারাত্মক সঙ্কট থেকে মুক্ত দেখতে চায়।আফগানিস্তানের নেতৃত্বাধীন এবং আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ার ভারত সমর্থন করছে।
আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ ঐক্য জোরদার করা অত্যন্ত প্রয়োজন। আমি বিশ্বাস করি যে ঐক্যবদ্ধ আফগানিস্তান যে কোনও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারবে। আফগানিস্তানের সাফল্যে আমরা ভারত এবং পুরো অঞ্চলের সাফল্য বুঝতে পারি। আমরা আবারও একবার সমস্ত আফগান বন্ধুদের ভারতের বন্ধুত্বের পূর্ণ আশ্বাস দিয়েছি। ভারতের ওপর আপনাদের বিশ্বাসের জন্য আমি আন্তরিকভাবে আমার আফগান ভাই ও বোনদের কৃতজ্ঞতা জানাই।
তাশাক্কুর,
ধন্যবাদ.