নমস্কার!
মেলিন্ডা ও বিল গেটস, আমার মন্ত্রিসভার সহকর্মী ডঃ হর্ষ বর্ধন, সারা বিশ্বের প্রতিনিধিবৃন্দ, বৈজ্ঞানিকগণ, উদ্ভাবকগণ, গবেষকবৃন্দ, ছাত্রছাত্রীরা, বন্ধুগণ, আমার খুব ভালো লাগছে ষোড়শ গ্র্যান্ড চ্যালেঞ্জেস-এর বার্ষিক সভায় আপনাদের মধ্যে উপস্থিত হওয়ার সুযোগ পেয়ে।
ভারতে এই সভাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এটি ভার্চ্যুয়ালি আয়োজন করা হয়েছে। এখন প্রযুক্তির ক্ষমতা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যার ফলে বিশ্ব জুড়ে মহামারীও আমাদের আলাদা করতে পারেনি। এই অনুষ্ঠান নির্দিষ্ট সময় অনুসারেই হচ্ছে। এর মাধ্যমে গ্র্যান্ড চ্যালেঞ্জেস সম্প্রদায়ের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রতিফলিত হচ্ছে যে, উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে আপনাদের অঙ্গীকার।
বন্ধুগণ,
সমাজের ভবিষ্যৎ তৈরি হবে বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগের বিষয়টি স্বল্পমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখলে চলবে না। অনেক আগে থেকেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করতে হবে। এর মাধ্যমে আমরা সঠিক সময়ে গবেষণার সুবিধা পাব। একইসঙ্গে, এই উদ্ভাবনের কাজকর্মেও সহযোগিতা ও গণ-অংশগ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। বিজ্ঞানকে কখনই অন্ধকার ঘরে আটকে রেখে সমৃদ্ধ করা যায় না। এই গ্র্যান্ড চ্যালেঞ্জেস কর্মসূচি এই দর্শনটিকেই খুব ভালো করে বুঝিয়েছে। এই অনুষ্ঠানের গুরুত্ব অপরিসীম।
বিগত ১৫ বছর ধরে আপনারা বিশ্বের নানা দেশের সঙ্গে একজোট হয়েছেন। আলোচনার বিষয়বস্তুগুলি ছিল বৈচিত্র্যময়। আপনারা বিশ্বের উজ্জ্বল মেধাগুলিকে এক জায়গায় নিয়ে এসে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য, কৃষি, পুষ্টি, ওয়াশ – জল, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যবিধির মতো সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেছেন। এ ধরনের আরও অনেক প্রশংসনীয় উদ্যোগ আপনারা গ্রহণ করেছেন।
বন্ধুগণ,
একসঙ্গে কাজ করার গুরুত্ব আসলে কতটা, বিশ্ব জুড়ে এই মহামারী আমাদের তা উপলব্ধি করতে শিখিয়েছে । অসুখ কোনও ভৌগোলিক গণ্ডীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। বিশ্বাস, জাতি, লিঙ্গ বা বর্ণ – অসুখ তার বৈষম্য করে না। অসুখের প্রসঙ্গে আমি বলব, শুধুমাত্র বর্তমান এই মহামারীর ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিই নয়, পৃথিবীতে সংক্রমণ ও সংক্রমণহীন অনেক অসুখ রয়েছে যেগুলি জনসাধারণকে, বিশেষ করে উজ্জ্বল তরুণ সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
বন্ধুগণ,
ভারতে আমাদের শক্তিশালী ও প্রাণবন্ত বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় রয়েছেন। আমাদের বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করার ভালো প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। এঁরা হলেন আমাদের দেশের সম্পদ, বিশেষ করে বিগত কয়েক মাস ধরে আমরা যখন কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াই করছি, তখন এঁরা নানা আশ্চর্যজনক জিনিস আমাদের কাছে হাজির করে তাঁদের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন। রোগ প্রতিহত করা থেকে নানা বিষয়ে ক্ষমতা বৃদ্ধি – এর মধ্যে সব বিষয়ই রয়েছে।
বন্ধুগণ,
ভারতের আয়তন ও বৈচিত্র্য সবসময়ই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কৌতুহলি করে তোলে। আমাদের দেশের জনসংখ্যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার প্রায় চারগুণ। আমাদের অনেক রাজ্যের জনসংখ্যা ইউরোপের এক একটি দেশের সমান। কিন্তু, জনশক্তি এবং জন-উদ্যোগের মাধ্যমে ভারত কোভিড-১৯-এর মৃত্যুর হারকে যথেষ্ট কম রাখতে পেরেছে। আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রতিদিন সংক্রমণের হার কমছে। ভারতে আরোগ্য লাভের হার সবথেকে বেশি – ৮৮ শতাংশ। এর কারণ, ভারত হল সেই কয়টি দেশের মধ্যে একটি দেশ যেখানে নমনীয় লকডাউন পালন করা হয়েছে যখন এ দেশে সংক্রমণের সংখ্যা ছিল মাত্র কয়েকশ'। ভারত মাস্কের ব্যবহার করার ওপর জোর দিয়েছে। ভারতে সক্রিয়ভাবে সংক্রমিতদের সংস্পর্শে কারা এসেছেন তাঁদের চিহ্নিত করা হয়েছে, র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং জিন বিন্যাস সম্পর্কে ভারতে সিআরআইএসপিআর প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে।
বন্ধুগণ,
কোভিডের টিকা উদ্ভাবনে ভারত প্রথম সারিতে রয়েছে। ৩০টির বেশি টিকা আমাদের দেশে উদ্ভাবনের কাজ চলছে। এদের মধ্যে তিনটি টিকা চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আমরা কিন্তু এখানেই থেমে থাকিনি। ভারত টিকাকরণ প্রকল্পের বিষয়ে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। ডিজিটাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে, ডিজিটাল হেলথ আইডি-র সাহায্যে আমাদের নাগরিকদের টিকাকরণ নিশ্চিত করা হবে।
বন্ধুগণ,
কোভিড ছাড়াও কম খরচে ভারত উন্নত ওষুধ এবং টিকা তৈরির ক্ষমতা প্রমাণ করেছে। বিশ্বের টিকাকরণ কর্মসূচির ৬০ শতাংশের বেশি টিকা আমাদের দেশে তৈরি হয়। আমরা আমাদের 'ইন্দ্রধনুষ' টিকা কর্মসূচিতে দেশীয় প্রযুক্তিতে উদ্ভাবিত রোটা ভাইরাস টিকা যুক্ত করেছি। দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার এবং দৃঢ় অংশীদারিত্বের এটি একটি আদর্শ উদাহরণ। গেটস ফাউন্ডেশন এই বিশেষ উদ্যোগে অংশীদার হয়েছে। ভারতের অভিজ্ঞতা এবং গবেষক-মেধার সাহায্যে আমরা আন্তর্জাতিক স্তরে স্বাস্থ্য পরিষেবার কেন্দ্র হয়ে ওঠার জন্য উদ্যোগী হয়েছি। আমরা এই ক্ষেত্রে অন্য দেশগুলির ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করতে চাই।
বন্ধুগণ,
গত ছয় বছরে আপনারা অনেক উদ্ভাবন দেখেছেন যার মাধ্যমে উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সুবিধা হয়েছে। যেমন ধরুন, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা। পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে অগ্রগতি। আরও শৌচাগার নির্মাণ। এর ফলে কাদের সুবিধা হয়েছে? দরিদ্র এবং পিছিয়ে পড়া মানুষরা উপকৃত হয়েছেন। রোগ-ব্যাধি হ্রাস পেয়েছে। মহিলাদের যথেষ্ট সুবিধা হয়েছে।
বন্ধুগণ,
এখন আমরা বাড়ি বাড়ি পাইপের মাধ্যমে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া নিশ্চিত করতে চাইছি। এর ফলে রোগ-ব্যাধি কমে যাওয়া আরও নিশ্চিত হবে। আমরা, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে আরও বেশি মেডিকেল কলেজ তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছি। এর ফলে যুব সম্প্রদায়ের কাছে আরও সুযোগ তৈরি হবে। আমাদের গ্রামগুলিতে আরও ভালো স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যাবে। আমরা বিশ্বের সবথেকে বড় স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্পের সূচনা করেছি এবং সকলে যাতে এর সুযোগ পান, তা নিশ্চিত করছি।
বন্ধুগণ,
আমাদের এই সমন্বিত উদ্যোগ ব্যক্তিবিশেষের ক্ষমতায়ন এবং সঙ্ঘবদ্ধ কল্যাণের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। গেটস ফাউন্ডেশন এবং অন্যান্য সংগঠনগুলি দারুণ কাজ করছে। আগামী তিনদিন এখানে আপনারা বিভিন্ন বিষিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা করবেন, আমি সেই আশাই করি। আমি চাইব এই গ্র্যান্ড চ্যালেঞ্জেস প্ল্যাটফর্ম থেকে অনেক উৎসাহব্যঞ্জক সমাধান বেরিয়ে আসুক। এই উদ্যোগ জনকল্যাণমুখী উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করুক। আমাদের যুব সম্প্রদায় এখান থেকে অনেক সুযোগ পান যার মাধ্যমে তাঁদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হবে। আরও একবার আমি উদ্যোক্তাদের আমাকে আমন্ত্রণ জানানোয় ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ধন্যবাদ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।