এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, স্বাধীনতার ৭০ বছর পরেও ১৮ হাজারেরও বেশি গ্রাম অন্ধকারে রয়ে গেছে: প্রধানমন্ত্রী মোদী
২০০৫ সালে ইউপিএ সরকার ২০০৯ সালের মধ্যে দেশের প্রত্যেক গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। শুধু তাই নয় তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের সভাপতি এর থেকে এক ধাপ এগিয়ে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতায়নের কথা বলেছিলেন। কিন্তু তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি পূরণ করেননি:: প্রধানমন্ত্রী
আমি লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রদত্ত ভাষণে বলেছিলাম যে, দেশের প্রত্যেক গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে। আর পরদিন থেকেই আমরা বিন্দুমাত্র দেরী না করে এই লক্ষ্যে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে: প্রধানমন্ত্রী
যে ১৮ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি, সেগুলির মধ্যে প্রায় ১৪,৫০০টি গ্রাম দেশের পূর্বভাগে অবস্থিত। আমরা পরিবর্তন করেছি এটা: প্রধানমন্ত্রী মোদী
আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
আমার দেশের সেই ১৮ হাজার গ্রামের বন্ধুদের সঙ্গে আজ সাক্ষাতের সৌভাগ্য হল, যাঁদের গ্রামে প্রথমবার বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। শতাব্দীর পর শতাব্দীকাল তাঁরা অন্ধকারে কাটিয়েছেন, আর কখনও কল্পনাও করেননি যে তাঁদের গ্রামে কোনও দিন বিদ্যুৎ সংযোগ-স্থাপিতহবে। আজা আমার জন্য অত্যন্ত খুশির কথা যে, আপনাদের আনন্দে সামিল হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। আপনাদের মুখের হাসি গ্রামে বিদ্যুৎ আসার পর জীবনে আসা পরিবর্তন আমার কাছে একটি বড় প্রাপ্তি। যাঁরা জন্ম থেকেই বিদ্যুতের আলোতে বড় হয়েছেন, যাঁরা কখনও রাতের অন্ধকার দেখেননি – তাঁরা জানেনই না যে অন্ধকার দূর করার মানে কী? রাতে নিজের বাড়িতে কিংবা গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকার মাহাত্ম্য তাঁদের বোঝানো যাবে না। উপনিষদে বলা হয়েছে – ‘তমসো মা জ্যোতির্গময়’।। অর্থাৎ, অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে চল।
বলা যেতে পারে যে, ঐ গ্রামগুলির জীবন এখন আলোকিত হয়েছে। আমাদের সবার হাতেই দিনে ২৪ ঘন্টা থাকে। আমার হাতেও ২৪ ঘন্টা, আপনার হাতেও ২৪ ঘন্টা। প্রত্যেক ব্যক্তি চায় যে, সময়ের সদ্ব্যবহার হোক। যার মাধ্যমে আমরা নিজেকে, পরিবারকে এবং সমাজ ও রাষ্ট্রকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে পারি। কিন্তু আপনার ২৪ ঘন্টা থেকে নৈমিত্তিক ১০-১২ ঘন্টা সময় যদি সরিয়ে নেওয়া হয়, তা হলে আপনি বাকি ১২-১৪ ঘন্টার মধ্যে ততটা কাজই কি করতে পারবেন? আপনার মনে প্রশ্ন উঠতে পারে যে, মোদী কী বলছে? কারও জীবনে প্রতিদিনকার ২৪ ঘন্টা থেকে ১০-১২ ঘন্টা কি করে সরিয়ে নেওয়া যায়! আমার কথা আপনাদের কাছে যতই অলীক বলে মনে হোক না কেন, দেশে দূরদূরান্তে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে ১৮ হাজার গ্রামে লক্ষ লক্ষ পরিবারের এই অবস্থাই ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার এত বছর পর সেই গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ না পৌঁছনোর ফলে, সেখানকার মানুষের জীবন সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে থেকে গিয়েছিল। সূর্যের আলোই তাঁদের জীবনে কাজের সময় ঠিক করে দিত। ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা, রান্না করা, খাওয়া এবং বাড়ির যত কাজ রয়েছে!আমি ভেবে অবাক হই যে, কেন পূর্ববর্তী সরকারগুলি এই অন্ধকারে ডুবে থাকা হাজার হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পারেনি। তাঁরা প্রত্যেকেই ঐ গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ পৌঁছনোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁরা সেই প্রতিশ্রুতি পালন করতে পারেননি কেন? আসলে কোনও চেষ্টাই হয়নি। ২০০৫ সালে অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ১৩ বছর আগে শ্রদ্ধেয় মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তখন তিনি ২০০৯ সালের মধ্যে দেশের প্রত্যেক গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তাঁর থেকেও এক পা এগিয়ে কংগ্রেস দলের তৎকালীন অধ্যক্ষ ২০০৯ সালের মধ্যে দেশের প্রত্যেক বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যাঁরা নিজেদের অত্যন্ত সচেতন এবং জনহিতকারী বলে মনে করেন, তাঁরা যদি প্রতিশ্রুত ২০০৯ সালের মধ্যে ঐ গ্রামগুলিতে একবারও গিয়ে জিজ্ঞাসা করতেন, সুশীল সমাজের সঙ্গে কথা বলে রিপোর্ট তৈরি করতেন, তা হলে হয়তো ২০০৯ সালের জায়গায় ২০১০ কিংবা ২০১১ সালের মধ্যে তাঁদের প্রতিশ্রুতি পালন সম্ভব হ’ত। কিন্তু দুঃখের বিষয় তাঁদের প্রতিশ্রুতিকে কেউ আমল না দেওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিশ্রুতি পূরণ সম্ভব হয়নি। আর আজ আমরা যখন নিজেদের প্রতিশ্রুতি পালনে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা চালাই, তখন তাঁরা এর মধ্যে ত্রুটি খোঁজেন। আমি মনে করি, এটাই গণতন্ত্রের শক্তি। আমরা লাগাতার ভালো কিছু করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি আর যেখানেই কিছু ত্রুটি থেকে যায়, আপনারা যথাসময়ে সেগুলি তুলে ধরলে আমরা দ্রুত সেগুলি শুধরানোর চেষ্টা করতে পারি। এভাবে আপনারা ও আমরা মিলেমিশে কাজ করলে ভালো পরিণাম আসতে বাধ্য।
২০১৫ সালের ১৫ আগস্ট আমি লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রদত্ত ভাষণে বলেছিলাম যে, আমাদের লক্ষ্য আগামী ১ হাজার দিনের মধ্যে দেশের প্রত্যেক গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া। আর পরদিন থেকেই সরকার বিন্দুমাত্র দেরী না করে এই লক্ষ্যে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কোনরকম ভেদভাবকে প্রশ্রয় না দিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম- দেশের প্রত্যেক অঞ্চলের বিদ্যুৎরহিত গ্রামগুলিতে পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রাম জ্যোতি যোজনার মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছনোর কাজ নিরন্তর চলতে থাকে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীন ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পর্কিত সমস্ত বিষয় সামিল করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রত্যন্ত গ্রাম ও শহরের বস্তিগুলিতে বৈদ্যুতিকীকরণের পাশাপাশি, সরবরাহ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা এবং কৃষকদের বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য স্বতন্ত্র ফিডার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। দেশের ছোট-বড় নির্বিশেষে সকল গ্রাম ও বস্তিতে এই প্রকল্পের মাধ্যমে বৈদ্যুতিকীকরণের কাজ নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে চলেছে।
জনসংখ্যা যতই হোক না কেন, দেশের ছোট-বড় নির্বিশেষে সকল গ্রাম ও বস্তি যাতে বঞ্চিত না থেকে যায়, তা সুনিশ্চিত করতে যেখানে যেখানে গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করা সম্ভব নয়, সেই অঞ্চলগুলিতে অফগ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২৮ এপ্রিল, ২০১৮ তারিখটি ভারতের উন্নয়ন যাত্রায় একটি ঐতিহাসিক দিন হিসাবে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। সেদিন দেশের সর্বশেষ বিদ্যুৎ বঞ্চিত গ্রাম মণিপুরের লাইসাঙ্গ-কে পাওয়ার গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। সেই দিনটি প্রত্যেক ভারতবাসীর জন্য একটি গর্বের দিন। আজ আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আজকের এই বার্তালাপ সেই লাইসাঙ্গ গ্রামের অধিবাসীদের সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমে শুরু করতে যাচ্ছি। সবার আগে তাঁদের কথাই শুনব। এই গ্রামটি মণিপুরের সেনাপতি জেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম
আমার প্রিয় দেশবাসী দেখুন, এতক্ষণ আমরা নানারকম অভিজ্ঞতার কথা শুনে বুঝলাম কিভাবে বিদ্যুৎ আসায় সাধারণ মানুষের জীবন সহজ হয়েছে। যে ১৮ হাজার গ্রামে আমাদের বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে হয়েছে, সেগুলির অধিকাংশই ছিল প্রত্যন্ত এলাকায়। যেমন – পার্বত্য অঞ্চলের তুষারশুভ্র পাহাড়ি এলাকায়, ঘন অরণ্যবেষ্টিত কিংবা সন্ত্রাসবাদী নকশাল প্রভাবিত অশান্ত অঞ্চল – এই গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া খুব একটা সহজ কাজ ছিল না। এই গ্রামগুলিতে যাতায়াতের কোনও সুবিধা ছিল না, অনেক গ্রামে তো আবার ৩-৪ দিন পায়ে হেঁটে পৌঁছতে হ’ত। ঘোড়া কিংবা খচ্চরের পিঠে এমনকি মালপত্র কাঁধে নিয়ে নৌকায় চড়ে পৌঁছতে হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের ৩৫টি গ্রাম এবং অরুণাচল প্রদেশের ১৬টি গ্রামে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে সরঞ্জাম পৌঁছে দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। আমি মানি যে, একাজে আমাদের তেমন কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু দেশের একাজে অভিজ্ঞ প্রত্যেক ব্যক্তি ও সুবিধাভোগী জনগণের অভিজ্ঞতার যোগ ফল আর বিদ্যুৎ বিভাগের ছোট-বড় সকল কর্মচারীদের দিন-রাতের পরিশ্রম সুফলদায়ক হয়েছে। কাঁধে করে লাইটপোস্ট নিয়ে যাওয়া সহজ কাজ নয়। যে ইলেক্ট্রিশিয়ান, টেকনিশিয়ান ও দিন মজুরেরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে ভারতের প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছেন, তাঁদের সকলকে আমি অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই।
আমরা যখন মুম্বাইয়ের কথা বলি, বড় বড় আকাশচুম্বী অট্টালিকা ও আলোর মালায় ভেসে যাওয়া শহর ও সড়কমালা আমাদের চোখে ভাসে। কিন্তু মুম্বাই থেকে একটু দূরেই এলিফেন্টা দ্বীপ একটি বড় পর্যটন ক্ষেত্র। এলিফেন্টার গুহাগুলি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসাবে ঘোষিত। প্রায় প্রতিদিন দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক সেখানে যান। আমি শুনে অবাক হলাম যে, মুম্বাইয়ের মতো মহানগরের এতো কাছে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ঘোষিত পর্যটন স্থল এলিফেন্টা দ্বীপের গ্রামগুলিতে স্বাধীনতার এত বছর পরও বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। এ বিষয়ে কোনও খবরের কাগজে পড়িনি কেন, কোনও টিভি চ্যানেলেও দেখায়নি কেন? ঐ গ্রামগুলির অন্ধকার নিইয়ে কারও কোনও মাথাব্যথা ছিল না। হ্যাঁ, এখন আমরা ঐ গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়ার পর সমালোচনা হচ্ছে যে, অমুক অমুক জায়গায় কাজ হয়নি। এই সমালোচনাটা যদি আগেও হ’ত, তা হলে স্বাধীনতার পর ৭০ বছর দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পর্যটন গন্তব্য এলিফেন্টা দ্বীপের গ্রামগুলির মানুষদের এত অন্ধকারে কাটাতে হ’ত না। সমুদ্রের নীচ দিয়ে কেবল বিছিয়ে সেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ায় আজ ঐ দ্বীপের গ্রামগুলি আলোকিত হয়েছে। সদিচ্ছা ও স্পষ্ট নীতি নিয়ে কাজ করলে যে কোনও কঠিন লক্ষ্য পূরণ করা যায়।
চলুন, দেশের অন্যত্র যাই। সবার আগে ঝাড়খন্ড দেখি ……..
ভাই ও বোনেরা, দেখুন, আগের সরকারগুলি দেশের পূর্বভাগের উন্নয়নকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। এই অঞ্চলগুলির জনগণ উন্নয়ন ও বিভিন্ন পরিষেবা থেকে বঞ্চিত ছিল। শুধু বিদ্যুতায়নের উদাহরণ দিয়েই আমার এই মন্তব্যকে প্রমাণ করতে পারি। আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব নেওয়া পর্যন্ত যে ১৮ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি, সেগুলির মধ্যে ১৪ হাজার ৫৮২টি বা প্রায় ১৫ হাজার গ্রাম দেশের পূর্বভাগে অবস্থিত। সেগুলির মধ্যে ৫ হাজার ৭৯০টি অর্থাৎ প্রায় ৬ হাজার গ্রাম উত্তর-পূর্ব ভারতে অবস্থিত। আপনারা দেখুন, আপনাদের টিভির পর্দায় মানচিত্রটির দিকে তাকিয়ে দেখুন। যেখানে যেখানে লাল অক্ষরে টাইপ করা রয়েছে, সেই সকল অঞ্চল অন্ধকারে ডুবে ছিল। দেশের সরকার যদি সকলের জন্য সকলের জন্য সমানভাবে ভাবত, তা হলে কি দেশের একটা দিক এরকম অন্ধকারে ডুবে থাকত? আসলে ঐ অঞ্চলগুলি জনসংখ্যার ঘনত্ব কম, সংসদে তাঁদের প্রতিনিধিও কম। সেজন্য সেইসব অঞ্চলের জন্য কাজ করে তেমন লাভ হবে না ভেবে কেন্দ্রীয় সরকার ঐ অঞ্চলগুলিকে বঞ্চিত করেছে। এসব দেখে আমি শুরু থেকেই ভেবেছি যে, ভারতের উন্নয়নে ভারসাম্য আনতে দেশের পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পূর্বাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া সমাজের উন্নয়নের গতি তীব্র করলে তবেই সারা দেশে ভারসাম্য আনা যাবে।
আমরা সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর এই মনোভাব নিয়েই সমস্ত প্রকল্প রচনা করেছি। পূর্ব ভারত ও উত্তর-পূর্ব ভারতকে দেশের উন্নয়নের মূল ধারার সঙ্গে যুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করতে শুরু করেছি। এর জন্য সবার আগে প্রয়োজন ছিল প্রত্যেক গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া। আর আমি আজ অত্যন্ত আনন্দিত যে, শুধু পূর্ব ভারত নয়, আজ সারা দেশের প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। বিদ্যুৎ গ্রামে এলে জীবনে কি পরিবর্তন আসে, তা আপনাদের থেকে ভালো কে জানেন! আমি সারা দেশ থেকে অনেক মানুষের চিঠি পাই। আপনাদের চিঠি পড়ে আপনাদের অনুভব ও অভিজ্ঞতার কথা জেনে আমি অনেক কিছু শিখি।
এখন গ্রামের মানুষের সময়ে অন্ধকারের অধিকার ঘটিয়ে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন সূর্যাস্তের সময়ে শুধু সূর্যই অস্ত যায়, তাঁদের দিন অস্ত যায় না। ছেলেমেয়েরা সূর্যাস্তের পরও বাল্বের আলোয় পড়াশুনা করতে পারে। গ্রামের মহিলাদের আগে দুপুর বেলায় ঘেমে কাজ করতে হ’ত। এখন তাঁরা সন্ধ্যার পরও রান্না করতে পারেন। গ্রামের হাট-বাজারও এখন অনেক রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। মোবাইল ফোন চার্জ করার জন্য অনেক দূর হেঁটে গিয়ে কোনও দোকান খুঁজতে হয় না। যাঁরা জম্মু ও কাশ্মীর থেকে আমাদের সঙ্গে রয়েছেন, যেখানে বছরে বেশ কয়েক মাস সমস্ত জিনিসই হেলিকপ্টারে পাঠাতে হয়, সেই ভাই-বোনদের কথা শুনতে চাই ……..
যে লক্ষ লক্ষ মানুষ আজ আমাদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, তাঁরা বুঝতে পারছেন যে, উন্নয়ন হলে জীবন কতটা প্রভাবিত হয়। দেশের প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে বলে আমরা খুশি হয়েছি ঠিকই, কিন্তু এতে আমরা সন্তুষ্ট হয়নি। এখন আরেক পা এগিয়ে পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের অন্ত্যোদয় স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য আমাদের সরকার দেশের প্রত্যেক বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার সংকল্প নিয়েছে। আর সেই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী সহজ বিজলি হর ঘর যোজনা বা সংক্ষেপে সৌভাগ্য যোজনার কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে অবশিষ্ট সকল বাড়িতে, তা সে গ্রাম কিংবা শহর যেখানেই হোক না কেন, বিদ্যুৎ পৌঁছানোর কাজ শুরু হয়েছে। সেজন্য আমরা ৪ কোটি দরিদ্র পরিবারে বিদ্যুৎ পৌঁছনোর লক্ষ্য নির্ধারণ করে মিশন মোডে কাজ করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যেই ৮০-৯০ লক্ষ বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। দরিদ্র পরিবারের ক্ষেত্রে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে আর সক্ষম পরিবারের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ৫০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এই ৫০০ টাকা বিদ্যুৎ সংযোগের পর ১০টি সহজ কিস্তিতে জমা দেওয়া যাবে। প্রত্যেক বাড়িতে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার জন্য গ্রামে গ্রামে ক্যাম্প বসিয়ে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে তৎক্ষণাৎ সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে নতুন আবেদনপত্র মঞ্জুর করে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে।
প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলগুলিতে বিদ্যুৎ পৌঁছনোর জন্য সৌর বিদ্যুতের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ শুধুই আলো উৎপাদন করে না, তা মানুষের আত্মবিশ্বাসও বাড়িয়ে দেয়। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রেও প্রাণশক্তি যোগায়। গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়ায় তা শুধু সূর্যাস্তের পর অন্ধকার মেটায়নি এই আলো গ্রামবাসীর জীবনে উন্নয়নের প্রাণশক্তি ভরে দিয়েছে। আপনারা আজ যে ভাষায় কথা বলছেন, যে পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা সারা দেশকে শোনালেন, তা সেই প্রাণশক্তিরই প্রকাশমাত্র। এখন সংসদ অধিবেশন চলছে, সময়ের অভাবে আমি আর কিছু গ্রামে পৌঁছব আর কিছু গ্রামকে নমস্কার জানাব। বস্তারকে নমস্কার। আলিরাজপুর-কে নমস্কার। সীহোর-কে নমস্কার। নবপাড়া-কে নমস্কার। সীতাপুরকে নমস্কার। এখন বিদ্যুৎ পৌঁছনোয় আপনারা অনেকেই নিয়মিত টিভি দেখছেন। খবরের কাগজ পড়ার পাশাপাশি টিভির দৌলতে আমাদের বিরোধী নেতাদের ভাষণ শোনার সৌভাগ্য হচ্ছে। তাঁরা আপনাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছেন যে, কতগুলি বাড়িতে এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। এভাবে তাঁরা আমাদের কোনও খামতিকে দেখাচ্ছেন না, তাঁরা বিগত ৭০ বছরের সমস্ত সরকারের খামতিকে তুলে ধরছেন, সেজন্য তাঁদের ধন্যবাদ। এই সমালোচনা আমাদেরকে লক্ষ্য করে করলেও এটা আসলে তাদেরই আত্মসমালোচনা। আমরা তাঁদের অপূর্ণ কাজ বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালাচ্ছি মাত্র।
এখনও যে ৪ কোটি পরিবারে বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি, সেই বাড়িতে কি আগে বিদ্যুৎ ছিল? ঐ গ্রামগুলিতে কি আগে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল যে মোদী সরকার এসে কেটে দিয়েছে! আগে তো কিছু ছিলই না। আমরাই সেইসব গ্রামে প্রথম বিদ্যুতের খুঁটি পুঁতেছি, তার বিছিয়েছি, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছনোর চেষ্টা করছি। সেজন্য আজ যাঁরা সমালোচনা করছেন তাঁদেরকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়। কিন্তু যাঁরা পরিশ্রম করে এই কাজ নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই সম্পন্ন করেছেন, সেই অসংখ্য মানুষদের পরিশ্রমকে আপনারা অপমান করতে পারেন না। মোদীকে যত বকতে চান বকে দিন, কিন্তু তাঁদের মনে হতাশা সৃষ্টি করবেন না। এত প্রতিকূলতা জয় করে যাঁরা দেশের প্রত্যেক গ্রামের প্রতিটি পরিবারের মুখে হাসি ফোটাচ্ছেন, তাঁদের সম্মান করতে শিখুন, তাঁদের জন্য গর্ব করুন – তাহলে তাঁদের কাজ করার ইচ্ছে বাড়বে, তাঁরা আরও উৎসাহ পাবেন। সমস্যা গোনা আমাদের কাজ নয়, সমস্যা থেকে দেশবাসীর মুক্তি পথ খোঁজা ও সমস্যার সমাধান করা আমাদের কাজ।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, ঈশ্বর আমাদের সকলকে শক্তি যোগাবেন। আমরা সৎ উদ্দেশ্যে কাজ করে চলেছি। আপনাদের প্রতি আমার মনে এত ভালোবাসা রয়েছে যে, আপনাদের জন্য যতই করি না কেন, তা যথেষ্ট নয়। আমরা এই কাজ চালিয়ে যাব। অবশেষে, আমি আপনাদের একটি ভিডিও দেখাতে চাই, এই ভিডিওটি দেখার পরই আমরা আজকের বার্তালাপ সম্পূর্ণ করব।