আপনাদেরমধ্যে অনেকেই হয়তো এই প্রথমবার কচ্ছ-এর মাটিতে এসেছেন। এ ধরনের জাতীয় সম্মেলন নাথাকলে পাকিস্তান সীমান্তের এই ঊষর ভূমিতে আপনারা আসবেনই বা কেন! যিনি হিমালয়েরসুউচ্চ উপত্যকা থেকে এসেছেন তাঁর কাছে এই ঊষর মরু এক ধরনের অনুভূতি এনে দেবে।উত্তর-পূর্ব ভারতের সবুজ অরণ্যসঙ্কুল প্রদেশগুলি থেকে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের এইশুষ্ক মরু অঞ্চলের অভিজ্ঞতা আরেক রকম হবে। সেজন্যই আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই ভিন্নভিন্ন অনুভূতির সম্মিলনে এই চিন্তন শিবির একটি ইতিবাচক আবহ গড়ে তুলবে।
সবাইমিলে পাশাপাশি বসে নিজেদের কাজকে সঠিকভাবে বুঝে নেওয়া এবং তা সম্পাদনের পদ্ধতিনির্ণয় করা সরকারের একটি গুরুদায়িত্ব। এই পরিবর্তিত বিশ্বে আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছিআর কোথায় পৌঁছতে চাই, আমরা ইতিমধ্যে কতটা পৌঁছতে পেরেছি – এসব কিছুর মূল্যায়ন প্রতিনিয়তহওয়া উচিৎ। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ আমাদের দেশের সরকারের কাজের পদ্ধতি লাল ফিতের ফাঁসেবিলম্বিত হতে থাকে । সরকারের একটি দপ্তর থেকে অন্য দপ্তরে ফাইলচালাচালির সময় এমনকি, একই দপ্তরে এক টেবিল থেকে আরেকটি টেবিলে ফাইল পৌঁছতে অনেকসময় লেগে যায়। কখনও আমরা অবাক হয়ে দেখি যে একই সরকারের দুটি দপ্তর আদালতে পরস্পরেরবিরুদ্ধে উকিল মোতায়েন করে লড়াই করছেন। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে এভাবে উদারমন নিয়ে মুখোমুখী বসে কিভাবে সমস্যার সমাধান করা যায় সে চিন্তা করতে হবে। বিভাগআলাদা হলেও সমমনস্ক আধিকারিকরা থাকলে কাজে ভারসাম্য ও গতি আসে।
এখানেমূলতঃ চারটি মন্ত্রকের সচিবরা একত্রিত হয়েছেন। এই চারটি মন্ত্রকই পরস্পরের সঙ্গেকোন না কোনভাবে যুক্ত। আর এখানে যাঁরা এসেছেন প্রত্যেকেই তাঁর বিভাগের নেতৃত্বদেন, প্রত্যেকেই কর্ম বিশারদ। তাঁরা যদি নিজের রাজ্যে সমস্যাগুলিকে কিভাবে সমাধানকরেছেন, কিভাবে সমাধানের পথ খুঁজে নিয়েছেন, কী ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, তারঅভিজ্ঞতা পরস্পরকে জানান, তাহলেই দেখবেন অন্যদের সামনে অনেক নতুন পথ খুলে যাবে। এইতিনদিন ধরে আনুষ্ঠানিক আলোচনার পাশাপাশি চা বিরতির সময় কিংবা দ্বিপ্রাহরিক আহারেরসময় আপনাদের আলাপ-আলোচনাতেও অনেক নতুন পথ খুলে যাবে। এখন হয়তো আপনাদের গরম লাগছে,সন্ধ্যা হলেই এখানে জাঁকিয়ে ঠাণ্ডা পড়বে। এই বিপরীত প্রতিকূল পরিবেশে বাঁচার আনন্দঅল্প সময়ের জন্য হলেও আপনারা উপভোগ করুন। নিজের বিভাগের ঊর্ধ্বে উঠে,কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের ঊর্ধ্বে উঠে, সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নয়নের কথা ভেবেআপনারা পরস্পরকে জানুন, পরস্পরের অভিজ্ঞতাকে নিজেদের সমস্যা সমাধানে পাথেয় করেতুলুন। তবেই, কাশ্মীরের আধিকারিক আর কন্যাকুমারীর আধিকারিক একভাবে ভাবতে পারবেন। সবারমনে একটি কেন্দ্রীয় ভাবনা জেগে উঠবে। ভারতে এমন কোন সরকার নেই যারা ক্রীড়াক্ষেত্রেএগিয়ে যেতে চায় না। তাহলে আমরা এগোতে পারছি না কেন? আমাদের জনসংখ্যার বাহুল্যকেএবং তার সামর্থ্যকে আমরা কেন কাজে লাগাতে পারছি না? আমাদের দেশের ৮০ কোটি মানুষেরবয়স ৩৫ বছরের কম । অর্থাৎ, দেশের মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ মানুষ নতুনপ্রজন্মের। সেজন্য, কেন্দ্রীয় সরকার ও সকল রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত সরকারের মাথায়একটিই চিন্তা থাক উচিৎ এই যুবশক্তিকে আমরা কিভাবে কাজে লাগাতে পারি। এই শক্তি নিয়েআমরা দেশ এবং বিশ্বকে কী দিতে পারি। এখানে যাঁরা বসে রয়েছেন তাঁরাই প্রতিটিসরকারের নীতি নির্ধারক। আপনারা কী নীতি প্রণয়ন করবেন তার রোডম্যাপ আপনারা পরস্পরেরসাহায্য নিয়ে ছকে ফেলুন। বিগত শতাব্দীর অভিজ্ঞতার ভালো এবং খারাপ দিকগুলি নিয়েওসুচারুভাবে চিন্তাভাবনা করার প্রয়োজন রয়েছে। আর সেই চিন্তাভাবনা থেকেই আমাদেরমানবসম্পদ বিকাশের পরিকল্পনা গড়ে তোলা উচিৎ। বিশ্বের সামনে আমাদের যুবশক্তির পরিচয়কী হবে। আমাদের যুবশক্তিকে আমরা কিভাবে গড়ে তুলতে চাই, ভবিষ্যতে তাঁদের কী রূপেদেখতে চাই। আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ক্ষেত্রে পুরস্কার পেলে আমরা খুশি হই। কিন্তু নাপেলে আমরা ভাবি আগামীবার কী করলে আমাদের ছেলেমেয়েরা পুরস্কার জিতে আনতে পারবে।
আমরাসবাই যখন ছাত্রাবস্থায় ছিলাম, তখন দেখতাম যে পরীক্ষার আগে সবাই পড়ায় বেশি মন দিত।পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে ভাবতাম, এবার ভালো করে প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি, আগামীবারভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে পড়াশোনা করব। সকালে ভাবতাম রাতে পড়ব, আর রাতে ভাবতাম আজঘুমিয়ে নিই কাল সকালে পড়ব। দেখতে দেখতে প্রথম ত্রৈমাসিক পরীক্ষার সময় এসে যেত।পরীক্ষার পর গ্রীষ্মের ছুটির সময় আমরা ভাবতাম ছটিতে মজা করে নিই, তারপর স্কুলখুললেই আবার পড়া শুরু করব। এভাবেই দিনের পর দিন কেটে যেত। খেলাধূলার ক্ষেত্রেওআমাদের দেশের একই অবস্থা। সেজন্যই বলি, আমাদের এরকম সরকারি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতেহবে যাতে আমরা জেলাস্তরে, তহশিল স্তরে স্কুল-কলেজগুলির মধ্যে নিয়মিত প্রতিযোগিতারমাধ্যমে নতুন প্রতিভা অন্বেষণ করি। পরিকাঠামো গড়ে তুলি। তাহলেই দেখবেন অনেক নতুননতুন পরিবার তাদের ছেলেমেয়েদের ক্রীড়াক্ষেত্রে এগিয়ে দেওয়ার সাহস পাবে। ক্রিকেটেসাফল্য আমাদের দেশের অভিভাবকদের সেদিকে উৎসাহিত করেছে। এখন প্রত্যেক শহর ও গ্রামেরপ্রতিটি এলাকায় ক্রিকেট খেলা হয়। সেজন্যই আমাদের ক্রিকেট দলে বিশ্বমানেরখেলোয়াড়দের আমরা পাই। অন্যান্য খেলার ক্ষেত্রেও এই পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। প্রয়োজনেআমাদের নিয়মনীতি, আইনকানুন বদলাতে হতে পারে।
সারাপৃথিবীতেই খুব কম সরকার ক্রীড়াকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করে থাকে। অধিকাংশক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষ এর সঙ্গে যুক্ত থাকে আর, কর্পোরেট হাউজগুলি স্পনসরশিপ নিয়েএগিয়ে আসে। আমাদের দেশে সরকার যেহেতু এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে, আমাদের উচিৎসেই সুযোগের সদ্বব্যবহার করা। প্রত্যেক রাজ্যের উচিৎ তার রাজ্যের পরিবেশ ওপরিস্থিতি অনুযায়ী কোন কোন খেলাকে বেশি প্রাধান্য দেবে সেটা ভেবে নিয়েক্রীড়াক্ষেত্রে নানা প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া। এক রাজ্যের মধ্যেও বিভিন্ন জেলায়আলাদা আলাদা অগ্রাধিকার সাফল্য পেতে পারে। কোন জেলা হয়তো ফুটবলের ক্ষেত্রে এগিয়েরয়েছে, আবার অন্য কোন জেলা হয়তো ভলিবলের ক্ষেত্রে। কোথাও হয়তো তীরন্দাজিরজনপ্রিয়তা বেশি। এসব সম্ভাবনার কথা ম্যাপিং-এর মাধ্যমে আমাদের ক্রীড়া পরিকাঠামোকেউন্নত করতে হবে, প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণকে বিশ্বমানের করে তুলতে হবে।
আমাদেরযুবসম্প্রদায় কিভাবে দেশ গঠন হবেন। আমরা কী সে কথা কখনও ভেবে দেখেছি? প্রতিনিয়তসুস্থ যুক্তি-তর্ক, ইতিবাচক নেতৃত্বদানের ক্ষমতা, গ্রাম ও শহরের সমস্যাগুলি বুঝেনিয়ে কিভাবে আমাদের নবীন প্রজন্ম এগিয়ে আসবেন! যেমন আজ দেশে ডিজিটাল মুভমেন্ট চালুহয়েছে। আমাদের দেশের যুবসম্প্রদায় দ্রুত নতুন প্রযুক্তি রপ্ত করে নিচ্ছেন। সরকারিপরিকাঠামো যদি তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, বিভিন্ন শহর ও গ্রামগুলিরযুব সংগঠনগুলিকে সাহায্য করে, তাহলে তাঁরা নতুন কিছু করে দেখানোর সামর্থ্য রাখে।আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন, স্বচ্ছ ভারত অভিযানে এই যুবসম্প্রদায় কী ধরনের সক্রিয়অংশগ্রহণ করেছে। তাঁদের সৃষ্টিশীলতাকে আমরা যদি চ্যানেলাইজ করতে পারি, মোবিলাইজকরতে পারি তাহলে অনেক নতুন সুযোগ গড়ে উঠতে পারে।
আপনারালক্ষ্য করেছেন, স্বচ্ছ ভারত অভিযানে দেশের অনেক রেল স্টেশনকে সুন্দর করে তোলারলক্ষ্যে স্থানীয় চিত্রকার যুবকযুবতীরা স্টেশনের দেওয়াল ও ডিভাইডারগুলিতে নিজেদেরখরচে অসংখ্য চিত্র এঁকে দিয়েছেন। তাঁদের দিকে একটু সরকারি সাহায্য বা আনুকূল্যেরহাত বাড়িয়ে দেওয়া যায় তাহলে দেশের সকল স্টেশনকে আমরা সুন্দর করে তুলতে পারি।
আমাদেরএন সি সি-র ছেলেমেয়েরা রয়েছেন। সামাজিক জীবনে অনেক সাহসিকতাপূর্ণ কাজে এঁদের জুড়িনেই। ছুটির সময় তাঁদেরকে আরও উন্নতমানের বিপর্যয় মোকাবিলার প্রশিক্ষণ দিলে বিপদেরসময় তাঁরাই প্রাথমিকভাবে সকলের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারবে। আমাদের দেশেঅনেকেই ভাবেন, হোয়াইট কলার জব না পেলে জীবনটাই বৃথা। বাইরের দেশে পড়াশোনা করতেগিয়ে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা কিন্তু শনি-রবিবার বিভিন্ন হোটেলে নানারকম কাজ করে অর্থউপার্জন করে। সেখানে তাঁদের কোন লজ্জা হয় না, কারণ সেসব দেশে তাঁদের বয়সীছেলেমেয়েরা এভাবেই রোজগার করে থাকে। তাহলে দেশের মধ্যে শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাবাড়িয়ে তুলতে আমাদের অসুবিধা কোথায়? পিপাসা পেলে নিজের হাতে জল গড়িয়ে খেতে অসুবিধাকোথায়? এই সংস্কার, পরম্পরা আমরা কিভাবে গড়ে তুলব? আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যঅমূল্য। সেই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে হলে নিজেদের মনেআস্থা গড়ে তুলতে হবে। আমরা নিজের হাতে কাজ না করে সেই আস্থাই অর্জন করতে পারছি না।প্রত্যেক দেশই তাদের পূর্বপুরুষ, তাদের পুরনো ঐতিহ্য, সংস্কৃতি নিয়ে গর্ব করে।আমরা যদি নিজেদের অতীত নিয়ে গর্ব করতে না শিখি তাহলে আমরা বিশ্বের সামনে কী তুলেধরব? আমাদের যা আছে তার প্রতি গর্বভাবকে আমাদের শিক্ষার অংশ করে তুলতে হবে। আমাদেরনবীন প্রজন্মকে এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে ঋদ্ধ করে তুলতে হবে। এ কাজের জন্য কেবলদেশের শিল্পী-সাহিত্যিকদেরদিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। সমাজের প্রত্যেকটি মানুষকেইএগিয়ে আসতে হবে।
বিশ্বেরঅনেক উন্নত দেশ কৃত্রিম বিনোদনের নানা ব্যবস্থা গড়ে তুলেপ্রযুক্তি ব্যবহার করেতাদের দেশে পর্যটক আকর্ষণ করে। কিন্তু আমাদের দেশে পাঁচ হাজার বছরের পুরনো দর্শনীয়অনেক কিছু রয়েছে। কিন্তু আমাদের মনে এগুলি সম্পর্কে গর্বের অনুভূতি যতক্ষণ না গড়েতুলতে পারব, ততক্ষণ আমরা অন্য দেশের পর্যটক আকর্ষণ করতে পারব না।
বিশ্বেরসামনে আমাদের দেশের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে তুলে ধরতে হবে। আমাদেরতাজমহল, আমাদের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, শাস্ত্রীয় বাদ্য, আমাদের হাজার হাজার বছর পুরনোরাগ-রাগিনী, আমাদের খাদ্য বৈচিত্র্য, পোশাক বৈচিত্র্য – এগুলির ঐতিহ্যকে বিশ্বেরসামনে তুলে ধরতে হবে। আমাদের দেশ এমন নয় যে এক প্রান্তে পিজ্জা হাট থাকলে, ২হাজার কিলোমিটার দূরে অন্য প্রান্তেও তেমনই পিজ্জা হাট থাকবে। দক্ষিণ ভারতেরখাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে উত্তর ভারতের, পূর্ব ভারতের খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে পশ্চিমভারতের অনেক অনেক বৈচিত্র্য। হিমাচলের সোলান-কে আমরা বলি মাশরুম সিটি। তেমনই,গুজরাট সুরাটকে বলি সিল্ক সিটি। এই দুটি শহরের পর্যটন আকর্ষণ ভিন্ন হবে। তারস্পেশাল ব্র্যান্ডিং সযত্নে গড়ে তুলতে হবে। তবেই আমরা সাফল্য পাব।
আজ গোটা পৃথিবীতে পর্যটন ব্যবসার সমৃদ্ধিদ্রুতগতিতে বাড়ছে। সারা পৃথিবীতেই মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তের সংখ্যাক্রমবর্ধমান। এই মানুষরাই ঘরের বাইরে বেড়িয়ে অর্থ ব্যয় করতে পারেন। ভারতের মতোদেশে উচিৎ তাঁদের জন্য পর্যটনে আকর্ষণ বৃদ্ধি করা। বিশ্বের যেসব দেশ থেকে সবচেয়েবেশি পর্যটক ঘুরতে বের হন, তাঁদের চাহিদা নিয়ে আমাদের চর্চা করা উচিৎ, তাঁদেরসুখ-সুবিধা সম্পর্কিত তথ্য আমাদের কাছে থাকা উচিৎ। এ ধরনের ৫০টি দেশের পর্যটকদেরপর্যটন আকর্ষণবিন্দু কী কী, সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে নথি গড়ে তুলতে হবে। তারপরতাঁদের চাহিদা অনুযায়ী, আমাদের ঐতিহ্যশালী পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে চালু পরিষেবাগুলিরকী ধরনের উন্নতির প্রয়োজন, নতুন কী কী পরিষেবা যুক্ত করতে হবে, তা খতিয়ে দেখেপরিকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। সারা পৃথিবীতেই পর্যটকদের মধ্যে পক্ষী প্রেমিকদেরসংখ্যা সর্বাধিক। তঁরা যেখানে যান, মাসাধিককাল ক্যামেরা সঙ্গী করে পড়ে থাকেন।একেকটি পাখির পেছনে ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন ক্যামেরা তাক্ করে তাঁরা অজস্রছবি তোলেন, ভিডিও তৈরি করেন। তাঁদের সম্পর্কে কোনও পরিসংখ্যান কি আমাদের কাছেরয়েছে? তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার মতো পাখিদের বিস্তারিত বিবরণ ও অবস্থান সংক্রান্ততথ্য কি আমাদের কাছে রয়েছে?
আমরা কী পক্ষী প্রেমিক পর্যটকদের জন্যওয়েবসাইটে তথ্য আপলোড করে জানাতে পারি যে, দেশের কোন্ রাজ্যের কোন্ কোন্ অঞ্চলেগেলে কী কী পাখির কোন্ কোন্ প্রজাতি দেখতে পাওয়া যাবে? ঐ অঞ্চলগুলিকে পক্ষীপ্রেমিকদের পর্যটন গন্তব্য করে তুলতে কেমন পরিকাঠামো উন্নয়ন চাই? আমরা কী এমনলক্ষ্যনির্দিষ্ট উন্নয়নের পথে এগোতে পারি? তা হলে, তুলনামূলকভাবে অনেক কম খরচেঅধিক সুফল পাব।
আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে, যাঁরা এখনইএসে পৌঁছেছেন, তাঁরা হয়তো দেখননি, কিন্তু যাঁরা গতকাল এসেছেন কিংবা আজ ভোরেপৌঁছেছেন, তাঁরা হয়তো অনুভব করেছেন, এই ঊষরভূমিতেও কত বড় পর্যটন গন্তব্য গড়ে তোলাসম্ভব! এই তিনদিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন এখানে করার পেছনে প্রধান উদ্দেশ্য হ ’ ল, আপনাদের মতো অভিজ্ঞ মানুষদের সরেজমিনে দেখানো কিভাবে একটি উপেক্ষিতকান্তার মরুভূমিকে বিশ্ব মানের পর্যটন কেন্দ্র করে গড়ে তোলা যায়! এমনকি, কচ্ছেরবাসিন্দারাও এতদিন উপলব্ধি করেননি যে, আমাদের কাছে একটি বিশাল শ্বেতবর্ণ মরুভূমিরয়েছে। ‘ কচ্ছ রণোৎসব ’ শুরু হওয়ার পর যখন দেখতে দেখতে এই একটি জেলা প্রতি বছর প্রায় পাঁচ হাজারকোটি টাকার ব্যবসা করে – তখন সবার টনক নড়ে।এই অঞ্চলে হস্তশিল্পের উৎপাদন ও বিক্রি বৃদ্ধি পায়। এখন দেখুন, একটি ব্যবস্থাসঠিকভাবে গড়ে তুলতে পারলে, তা বিশ্বের পর্যটকদের কিভাবে আকর্ষণ করতে পারে। আপনারানিজের চোখে দেখে যান।
আমরা লক্ষ্য করেছি যে, আমাদের পর্যটনগন্তব্য রয়েছে কিন্তু সেগুলিতে কোন্ কোন্ ভাষায় দিকনির্দেশক বোর্ড লাগানো হবেতাঁর সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেই, পরিকল্পনাও নেই।
যেমন গোয়াতে রাশিয়া থেকে পর্যটক বেশি এলে,সেখানকার দিকনির্দেশক বোর্ডগুলিতে রাশিয়ান ভাষা ব্যবহার করা উচিৎ। সেখানকার গাইড ও যানচালকদের রাশিয়ান ভাষা শেখারচেষ্টা করা উচিৎ, যাতে তাঁরা ভাঙা ভাঙা রাশিয়ান ভাষা হলেও বলতে পারেন।কুলুমানালিতে ইউরোপের যেসব দেশ থেকে বেশি পর্যটক আসেন, সেসব দেশের ভাষায়দিকনির্দেশক বোর্ড বসানো উচিৎ। শুধু তাই নয়, পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে পর্যটক-বান্ধবপরিবেশ গড়ে তওলার চেষ্টা করতে হবে।
আপনারা কচ্ছের যে জায়গায় রয়েছেন, এখানথেকে ২০০-২৫০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ধৌলাভিরা নামক একটি প্রাচীন নগরী। এই নগরীমহেঞ্জোদরো সভ্যতার সমসাময়িক। সেখানে গেলে দেখবেন, ৫০০ মিটার দূরে ডাইনে বা বামেঅমুক জায়গা রয়েছে – এ ধরনের দিকনির্দেশ থাকলে পর্যটকদেরসুবিধা হয়। আজ থেকে ৫ হাজার বছর পূর্বে ধৌলাভিরায় হয়তো অনেক পর্যটক আসতেন।
সেজন্যধৌলাবিরার বাইরে দিকনির্দেশ ব্যবস্থা রয়েছে। এটিকেই বিশ্বের সর্বপ্রাচীনদিকনির্দেশ ব্যবস্থা বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আমরা কি এই দিকনির্দেশকবোর্ডগুলিকে আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের করে তুলতে পারি?
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পর্যটনকে উন্নত করতেহলে আমাদের ভাষা ও সাহিত্যকেও গুরুত্ব দিতে হবে। যে যে অঞ্চলে যে যে পর্যটনকেন্দ্রগুলি রয়েছে, সেখানকার স্থানীয় ভাষা প্রত্যেক পর্যটককে সেখানো সম্ভব নয়।সেজন্য আমাদের উচিৎ, প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্র সম্পর্কে যত ধরনের প্রশ্ন আসতে পারে,সেগুলি ভেবে নিয়ে তার যথাযথ উত্তর বিস্তারিতভাবে পর্যটন ওয়েবসাইটগুলিতে আপলোড করা।
আমরা যদি ভেবে নিই যে, আমরা পর্যটনকেঅগ্রাধিকার নেব, তা হলে অবশ্যই তা করতে পারবো। যেখানে পর্যটক-বান্ধব পরিকাঠামোনেই, সেখানে পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
এখানে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকেরআধিকারিকরা বসে রয়েছেন, প্রত্যেক রাজ্যের উচ্চ আধিকারিকরাও রয়েছেন। আপনারা নিজেদেরমধ্যে আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করে নিন যে, কোন্ রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা এক বছরের জন্যঅন্য একটি রাজ্যে বেড়াতে যাবে, সে রাজ্যের গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াবে, কোন্ক্লাসের ছেলেমেয়েরা যাবে, দশম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা গেলে তাদের জন্য এক রকমব্যবস্থা হবে আর পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা গেলে অন্য রকম ব্যবস্থা করা হবে।তাদের সঙ্গে যে শিক্ষকরা যাবেন, দেখতে হবে যেন তাঁরা পর্যটনের ক্ষেত্রে উৎসাহী হনএবং আগে থেকেই ঐসব অঞ্চল ঘুরে না থাকেন। তা হলে, তাঁরা ছাত্রছাত্রীদের ঘুরেদেখানোর ক্ষেত্রে ফাঁকি দেবেন না।
আমাদের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সঙ্গেকেন্দ্র ও রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রকগুলির সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। আপনাররাজ্যে এ ধরনের ১০টি পর্যটন কেন্দ্রকে যদি অগ্রাধিকার দিতে চান, তা সবাই মিলেসিদ্ধান্ত নিন এবং পরিকল্পনামাফিক কাজ করুন। সবার আগে আপনার রাজ্যের নিজস্ব যতসংস্থান রয়েছে, সেগুলিকে আগে উন্নত করুন ও ব্যবহার করুন। রাজ্যেরবিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে দেখা করে কথা বলুন যে, আগামী পাঁচ বছরে তাঁদেরছাত্রছাত্রীদের রাজ্যের কোন্ কোন্ অঞ্চলে ঘুরতে পাঠাবে। এতে আপনাদের বিনিয়োগ করাঅর্থ রাজ্যের পর্যটন উন্নয়নের কাজে লাগবে।
মনে করুন, প্রতিদিন কলেজ পড়ুয়ারা ১০টি বাসব্যবহার করে যদি কোনও গ্রামে বেড়াতে যেতে শুরু করে তখন গ্রামের মানুষরা নিজে থেকেইএই ছাত্ররা যা পছন্দ করে, সেরকম খাবার-দাবারের দোকান খুলবেন। ধীরে ধীরে ঐ অঞ্চলনিজে থেকেই উন্নত হয়ে উঠবে। সেজন্যই যে কোনও পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়নের জন্য আগেনিজের রাজ্যের ছাত্রছাত্রী ও পর্যটকদের উৎসাহিত করতে হবে। এভাবে ঐ পর্যটন কেন্দ্রেরপরিকাঠামোর উন্নয়ন হলে ধীরে ধীরে ভিন রাজ্যের ছাত্রছাত্রী ও পর্যটকরা আসবেন। ক্রমেবিদেশ থেকেও পর্যটকরা আসতে শুরু করবেন।
আমরা যখন এই কচ্ছ ’ কে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে শুরু করেছি, প্রথমেই গুজরাটেরবিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছে। বড় জোর মুম্বাই থেকে কিছু মানুষঘুরতে আসতেন কিন্তু আজ অনলাইন বুকিং-এর মাধ্যমে এখানকার অনেক হোটেলের ঘর এক বছরআগে থেকেই বুক হয়ে যায়। আমাদের দেশে এত ঐতিহ্যশালী পর্যটন কেন্দ্র থাকা সত্ত্বেওদুর্ভাগ্যজনকভাবে গাইডদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য মানবসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের পক্ষথেকে কোনও কোর্স চালু নেই। যে পর্যটন কেন্দ্রগুলি রাজ্য তথা দেশের অর্থ ভাণ্ডারেবিপুল অর্থের যোগান দেয়, সেখানকার নবীন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের বিশেষ পর্যটন-নির্ভরনানা পেশার প্রশিক্ষণ কেন দেওয়া হবে না? কোর্স চালু করে দেখুন, প্রতিযোগিতা বেড়েযাবে। তাদের জন্য বিশেষ পোশাক তৈরি হবে। প্রত্যেক রাজ্য সরকার ঠিক করে দিক, সেরাজ্যের ঐতিহ্যের সঙ্গে খাপ খাওয়া নির্দিষ্ট কোনও পোশাক পরেই গাইডরা কাজ করতেপারবেন, তাঁদের কাছে সরকারের খাতায় নিবন্ধীকৃত পরিচয়পত্র থাকবে। পরিষেবা ক্ষেত্রেপেশাদারিত্ব না এলে আমরা পর্যটনকে উন্নত করতে পারব না।
ভারতে দু ’ ধরনের পর্যটক রয়েছেন। প্রথমত, তীর্থযাত্রী; প্রত্যেক সন্তান ভাবে তাঁরমা-বাবাকে কোনও একদিন নিয়ে গিয়ে গঙ্গা স্নান করাবেন, চার ধাম যাত্রা করাবেন। অনেকমা-বাবার মানত থাকে যে, ছেলেমেয়ে নানা ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা পেলে তাঁরা অমুক মন্দিরেগিয়ে শিব ঠাকুর কিংবা গণেশ ঠাকুরের পুজো দেবেন। এই যাত্রীরা পর্যটন ক্ষেত্রে কোনওউন্নয়ন না হলেও ঐ পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে যাবেন। যত কষ্টই হোক তাঁরা সহ্য করবেন।
এ ধরনের যাত্রীদের জন্য তীর্থস্থানগুলিতে১২৫ কোটি মানুষের একটি স্থায়ী বাজার রয়েছে। আমরা যদি সেই জনপ্রিয় তীর্থস্থানগুলিরপরিকাঠামোর উন্নয়ন করি, তা হলে সেগুলিতে গোটা বিশ্বের পর্যটকরাও আসবেন।
দ্বিতীয় ধরনের পর্যটকরা বিদেশ থেকে আসেন।তাঁরা ভারতকে দেখতে আসেন। তাঁদের জন্য সমুদ্র-সৈকত পর্যটন, অভিযান পর্যটন, ক্রীড়াপর্যটন, পর্বতারোহন পর্যটন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। পাশাপশি, অনেক বিদেশি পর্যটকআসেন, যাঁরা শুধু ঐতিহাসিক স্থানগুলি দেখতে চান, যেমন – তাজমহল, কুতুবমিনার ইত্যাদি। আমাদের ভাবতে হবে যে, কী করলে এই দু ’ ধরনের বিদেশি পর্যটকদের জন্য আমাদের পর্যটন কেন্দ্রগুলির পরিকাঠামোউন্নয়ন হবে।
এখানে আপনারা একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন ‘ এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত ’ । এইএকটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার অত্যন্ত প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের কারও ছেলে যদি ফরাসীভাষা জানেন, তা হলে আমরা বুক ফুলিয়ে প্রতিবেশীদের তা বলি, কারও সন্তান স্প্যানিশজানলে তা নিয়ে গর্ব করি। কিন্তু আমাদের মতো বহু ভাষাভাষী দেশের এক প্রান্তেরছেলেমেয়েদের অন্য প্রান্তের ভাষা শেখার জন্য উৎসাহ জোগাই না। দেশের পর্যটনকে উন্নতকরতে হলে কিন্তু এক্ষেত্রে আগে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এমন পরিবেশ গড়ে তুলতে হবেযাতে হরিয়াণার একটি ছেলে তেলেগু শিখতে চায়, কিম্বা গুজরাটের একটি ছেলে মালয়ালমশিখতে চাইবে এক রাজ্যের ছেলেমেয়েরা অন্য রাজ্যের ভাষা শিখলে তাঁদের নিয়ে বাবা-মা ওপ্রতিবেশীরা গর্ব করবে।
আমারা যদি দেশের ঐতিহ্য নিয়ে গর্বিত নাহতে পারি, যে দেশে ১০০টিরও বেশি ভাষা রয়েছে, ১৭০০রও বেশি কথ্য ভাষা রয়েছে, সেদেশকত ধনী। এই মহান ঐতিহ্যের সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে যুক্ত করার ভাবনা কেন আমরা ভাবিনা! ভারত এত বড় দেশ, আমাদের আগামী প্রজন্মকে এই দেশের নানা ভাষা, নানা মত নানাপরিধান ও নানা সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্য সম্পর্কে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। এইনবীন প্রজন্মকে এভাবে দেশ সম্পর্কে অবগত করানোর ইচ্ছে নিয়ে সর্দার বল্লভভাইপ্যাটেলের জন্মজয়ন্তী দিবসে আমরা এই ‘ এক ভারত, শ্রেষ্ঠভারত ’ প্রকল্প শুরু করেছি। গোড়ায় দেশের দুটি রাজ্যপরস্পরের সঙ্গে মউ স্বাক্ষর করে পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়নের রূপরেখা তৈরি করে।যেমন এখন হরিয়ানার সঙ্গে তেলাঙ্গানার মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। সারা বছর ধরে হরিয়ানারনবীন প্রজন্মের পর্যটকরা তেলাঙ্গানায় যাবে আর তেলাঙ্গানার ছাত্রছাত্রী ও নবযুবক-যুবতীরা হরিয়ানায় আসবে। হরিয়ানার ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলো শিখবে। আর হরিয়ানারছেলেমেয়েরা শিখবে তেলাঙ্গানার ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলো। হরিয়ানায় তেলেগু সিনেমার ফিল্মফেস্টিবল হবে, নাট্যোৎসব হবে। একই রকমভাবে তেলাঙ্গানাতেও হরিয়ানায় নির্মিত সিনেমাও নাটক দেখানো হবে। হরিয়ানার ছেলেমেয়েরা এক বছরে ১০০টি বহু ব্যবহৃত তেলেগু বাক্যশিখবে। তেলাঙ্গানার ছেলেমেয়েরা ১০০টি হিন্দিবাক্য শিখবে।
আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন, প্রত্যেকরাজ্যেই এমনকিছু মানুষ আছেন, যাঁরা অনায়াসে ভিন রাজ্যের ভাষা শিখে নিতে পারেন।তাঁরা তামিলনাডু থেকে বেড়াতে এলে ‘ ভানক্কম ’ সম্বোধন করে কথা বলতে শুরু করেন। এই মানুষেরা প্রত্যেক রাজ্যে এইপ্রকল্পের পথপ্রদর্শক হতে পারেন। আমি চাই, আরও বেশি বেশি রাজ্য এই ‘ এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত ’ প্রকল্পেঅংশগ্রহণের জন্য এগিয়ে আসুন। কেন্দ্রীয় সরকারের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক,সংস্কৃতি মন্ত্রক এবং পর্যটন মন্ত্রক এক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করতে পারে।
আমাদের বিদেশ মন্ত্রক সারা পৃথিবীতেছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রবাসী ভারতীয় ছেলেমেয়েদের জন্য একটি ক্যুইজ প্রতিযোগিতা শুরুকরেছে। যাঁরা দুই-তিন প্রজন্ম ধরে ভারতের বাইরে রয়েছেন, তাঁদের নবীন প্রজন্মেরছেলেমেয়েরা জানেন না যে ভারত কী! একটি পাঁচ হাজার বছরের পুরনো সভ্যতা থেকে পঁচহাজার বছর ধরেই পৃথিবীর সমস্ত অঞ্চলে মানুষ গিয়ে সেখানে থেকে গিয়েছেন বা বসতিস্থাপন করেছেন। এই ক্যুইজ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে ভারত সম্পর্কে নতুনআগ্রহ তৈরি হয়েছে গত ২ অক্টোবর সেই প্রতিযোগিতার প্রথম পুরস্কার বিতরণী উৎসবঅত্যন্ত সফল হয়েছে।
আমাদের দেশে এমনই রাজ্যগুলি দেশের নানাপ্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সেই রাজ্যের মানুষদের পরবর্তী প্রজন্মেরসন্তান-সন্তদিদের জন্য এ ধরনের ক্যুইজ প্রতিযোগিতা শুরু করতে পারে। আবার, দুটিরাজ্য পরস্পরের সঙ্গে মউ স্বাক্ষর করে এ ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু করতে পারে। মনেকরুন, গুজরটের সঙ্গে ছত্তিশগড়ের এ ধরনের মউ স্বাক্ষর হলে ছত্তিশগড়ের ছেলেমেয়েরাগুজরাট সম্পর্কে ৫ হাজারটি প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য পড়াশুনা করবে, তেমনইগুজরাটের ছেলেমেয়েরা ছত্তিশগড় সম্পর্কে ৫ হাজারটি প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্যপড়াশুনা করবে। কোন্ রাজ্যে কতগুলি জেলা রয়েছে, কত জাতি-উপজাতি, ভাষা, খাদ্যাভাস ওপরিধানের বৈচিত্র্য রয়েছে, সে সম্পর্কে জানতে পারলে দেখবেন, সহজভাবেই জাতীয় ঐক্যমজবুত হবে। ছেলেমেয়েদের মনে অন্যান্য রাজ্য সম্পর্কে জানার আগ্রহও বাড়বে। ক্যুইজছাড়াও বক্তৃতা ও রচনা প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা যেতে পারে।
এভাবেই ১৫ আগস্ট ও ২৬ জানুয়ারিতে একরাজ্যের পুলিশ বাহিনীকে অন্য রাজ্যে প্যারেড করতে পাঠান। দেখবেন, আপনাদের পুলিশবাহিনী কত নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন। এদেশের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যকে তাঁরাবুঝতে পারবেন, আনন্দ পাবেন।
হরিয়ানার স্কুল পড়ুয়ারা তেলাঙ্গানায় গিয়ে৫টি তেলেগু গান গাইতে শিখে আসবে, তখন সে ও তার পরিবারের লোকজন কেমন আনন্দ পাবেন।পর্যটনের উন্নয়নের পাশাপাশি এতে আমাদের যুবশক্তির চৈতন্য উদয় হবে। দেশের ঐক্য অটুটথাকলে ভারতকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে। আপনারা এখানে তিনদিন ধরেচিন্তাভাবনা ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ভাবুন এ রকম ছোট ছোট বিষয় নিয়ে কাজ করে কিভাবেবড় পরিবর্তন আনা যায়। এখানে বিশেষ করে মন্ত্রিপরিষদের যে সদস্যরা এসেছেন, আশা করি,তাঁরাও নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা সবাইকে বলবেন, অন্যদের অভিজ্ঞতার কথাও মনোযোগ দিয়েশুনবেন। আপনারা যে ঊষরমরুতে বসে এই আলাপ-আলোচনা করছেন, সেখানকার মটির সঙ্গে আমারঅত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, সন্ধ্যায় যখন আপনারামরুভূমি ঘুরতে যাবেন, নিজেদের নিরাপত্তারক্ষীদের কোথাও দাঁড় করিয়ে একা ২৫-৫০ পাএগিয়ে কিছুক্ষণ একাকী দাড়িয়ে থাকুন, মরুভূমির বিরাট রূপকে দেখুন, স্বচ্ছ নীলআকাশকে দেখুন, সাদা বালির সমুদ্র দেখুন – জীবনে এরকম সুযোগখুব কম পাবেন। হ্যাঁ বন্ধুরা, শুধুই উচ্চ পদাধিকারীদের সঙ্গে বসে আড্ডা মারলেআপনারা এই অতুলনীয় অনুভূতি নিয়ে ফিরতে পারবেন না, অন্তত ১৫-২০ মিনিট নিজের জন্যরাখুন। আজ থেকে মাত্র ১০ বছর আগে যে অঞ্চলে পৌঁছতে মরুভূমিতে তিন-চার ঘন্টা যাত্রাকরতে হতো, আজ আপনারা মাত্র পঞ্চাশ-ষাট মিনিটে সেখানে পৌঁছে গেছেন।
গুজরাটের ভয়ানক ভূমিকম্পের পর থেকে ঐরাজ্য কত উন্নতি করেছে, তা আপনারা দেখুন। এখন আপনারা ভারতের সর্বশেষ গ্রামে বসেআছেন। এরপর আর কোনও জনবসতি নেই। ওখানে বসে আপনারা ভারতের পর্যটন উন্নয়ন, নবীনপ্রজন্মের কর্মসংস্থান ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ভাবনাচিন্তার মাধ্যমে ভারতের ভবিষ্যৎ আরওগৌরবময় করে তোলার পক্ষে কোনও সংকল্প গ্রহণ করবেন।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ওখানে বসে আপনারা যে সিদ্ধান্তনেবেন তা আগামীদিনে নীতি-নির্ধারণে অনেক বড় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। আপনাদেরঅনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আগামী ২-৩ দিন ধরে আপনারা কোন্ কোন্ বিষয় নিয়ে আলোচনাকরেন আর কী কী সিদ্ধান্ত নেবেন – তা জানার জন্য আমিগভীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
পর্যটনের সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতেআপনাদের এই চিন্তাভাবনা ও পরিশ্রম দ্বারা যেন সরকার ও জনগণ উপকৃত হয় – আপনাদের কাছে আমার এই প্রত্যাশা। আমার নিজেরও জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বাড়বে।
সেজন্যই আগামী তিন দিনে আপনাদেরআলাপ-আলোচনার মন্থন থেকে যে অমৃত উৎসারিত হবে, তা পান করার জন্য আমি অপেক্ষায়রয়েছি। আমি বিজয় রূপানীজি এবং তাঁর টিমকে কৃতজ্ঞতা জানাই। তাঁরাই সকল অভ্যাগতদেরজন্য এই পর্যটন ঋতুতে যথাযোগ্য তাবু ইত্যাদির ব্যবস্থা করেছেন। এতে হয়তো আপনাদেরঅনেক আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যে পড়তে হয়েছে। কিন্তু ভাবুন, সারা দেশের সংশ্লিষ্টআধিকারিকরা এসেছেন, তাঁরা ফিরে গিয়ে আপনাদের রণোৎসবের প্রচার তো করবেনই। এরফলে,তাঁদের প্রত্যেকের পক্ষ থেকে প্রতি বছর ৫০-৬০ জন পর্যটক পাঠাবেন। এতে আপনাদেরউৎসবে বিনিয়োগ সম্ভাবনা বাড়বে। গুজরাট সরকারকেও এজন্য অভিনন্দন জানাই।
ধন্যবাদ।