এই বাজেট ১০০ বছরের ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের মধ্যে উন্নয়নের নতুন বিশ্বাস নিয়ে এসেছে। এই বাজেট অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জন্য অনেক নতুন সুযোগ তৈরি করবে। এই বাজেট ‘মোর ইনফ্রাস্ট্রাকচার, মোর ইনভেস্টমেন্ট, মোর গ্রোথ অ্যান্ড মোর জবস’ অর্থাৎ, আরও উন্নত পরিকাঠামো, আরও বেশি বিনিয়োগ, আরও প্রবৃদ্ধি এবং আরও অনেক অনেক কর্মসংস্থানের সম্ভাবনায় পরিপূর্ণ। এই বাজেটে আরও একটি নতুন ক্ষেত্র উন্মুক্ত হয়েছে আর তা হল ‘গ্রিন জবস’ বা পরিবেশ-বান্ধব পেশা। এই বাজেট তৎকালীন প্রয়োজনীয়তাগুলি তো সমাধান করেই, পাশাপাশি দেশের যুব সম্প্রদায়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যতকেও সুনিশ্চিত করে।
আমি গত কয়েক ঘন্টা ধরে দেখছি, যেভাবে এই বাজেটকে সমাজের প্রত্যেক ক্ষেত্রের মানুষ স্বাগত জানাচ্ছেন, সাধারণ মানুষের যে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া এসেছে, তা জনগণেশের সেবায় আমাদের উৎসাহ অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আধুনিকতার আবাহন, প্রযুক্তির আবাহন, যেমন কৃষকদের জন্য ড্রোন প্রযুক্তি, জনগণের জন্য বন্দে ভারত ট্রেন, ডিজিটাল কারেন্সি, ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে ডিজিটাল ইউনিটস গড়ে তোলা, ৫জি সার্ভিসেস রোল-আউট বা পরিষেবা চালু করা, ন্যাশনাল হেলথ-এর জন্য ডিজিটাল ইকো-সিস্টেম গড়ে তোলা – এইসব কিছুর লাভ আমাদের নবীন প্রজন্ম, আমাদের মধ্যবিত্ত জনগণ, গরীব, দলিত, পিছিয়ে পড়া সকল শ্রেণীর মানুষেরা পাবেন।
এই বাজেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা হল গরীবদের কল্যাণ। প্রত্যেক গরীবের কাছে পাকা ঘর থাকবে, প্রত্যেকের বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল আসবে, প্রত্যেকের বাড়িতে শৌচালয় থাকবে, রান্নার গ্যাসের সুবিধা থাকবে – এই সমস্ত বিষয়ে লক্ষ্য রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি, আধুনিক ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপরও ততটাই জোর দেওয়া হয়েছে। ভারতের যে পাহাড়ি এলাকা, হিমালয়ের পাদদেশের গোটা অঞ্চলে জীবন যেন সহজ হয়ে ওঠে, সেখান থেকে যেন মানুষ পালিয়ে না আসেন, সেদিকে লক্ষ্য রেখেও নতুন নতুন ঘোষণা করা হয়েছে। হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, জম্মু-কাশ্মীর, উত্তর-পূর্ব ভারত – এরকম হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত অঞ্চলগুলির জন্য প্রথমবার দেশে ‘পর্বতমালা যোজনা’ চালু করা হচ্ছে। এই যোজনা পাহাড়ি এলাকায় যাতায়াত ব্যবস্থা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিক পরিষেবা গড়ে তুলবে আর সেজন্য আমাদের দেশের যে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলি রয়েছে, বর্ডারে বর্ডারে যে গ্রামগুলি রয়েছে, সেগুলির ‘ভাইব্র্যান্ট’ হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। সেগুলির ‘ভাইব্র্যান্ট’ হওয়া দেশের নিরাপত্তার জন্যও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সেই গ্রামগুলি নিরাপদ হলে দেশের সুরক্ষা শক্তিশালী হবে।
ভারতের কোটি কোটি মানুষের আস্থা, মা গঙ্গার সাফাইয়ের পাশাপাশি কৃষকদের কল্যাণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ – এই রাজ্যগুলিতে গঙ্গা নদীর কিনারায় প্রাকৃতিক চাষকে উৎসাহ যোগানো হবে। এর ফলে, মা গঙ্গার পরিচ্ছন্নতার যে অভিযান, সেই অভিযান মা গঙ্গাকে কেমিক্যালমুক্ত করার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সহায়ক হবে।
বাজেটে এই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে যাতে কৃষি লাভজনক হয়ে ওঠে। এতে নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হয়, নতুন এগ্রিকালচার স্টার্ট-আপগুলি উৎসাহ দেওয়ার জন্য বিশেষ তহবিল থাকে অথবা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ উদ্যোগের জন্য নতুন প্যাকেজ – এগুলি কৃষকদের আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনেক সহায়ক হবে। ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে শস্য কেনার মাধ্যমে কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ২ লক্ষ ২৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি সরাসরি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
করোনাকালে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলিকে (এমএসএমই) সাহায্য আর সেগুলির নিরাপত্তার জন্য দেশের সরকার ক্রমাগত অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অনেক ধরনের সাহায্য তাদেরকে পৌঁছে দিয়েছে। এই বাজেটে ক্রেডিট গ্যারান্টিতে রেকর্ড বৃদ্ধির পাশাপাশি বেশ কিছু অন্য প্রকল্পও ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ক্যাপিটাল বাজেটের ৬৮ শতাংশ ডোমেস্টিক ইন্ডাস্ট্রি বা দেশীয় শিল্পের জন্য সংরক্ষিত করার ফলে ভারতের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলি সবচাইতে বেশি লাভবান হবে। এটি আত্মনির্ভরতার দিকে অনেক বড় শক্তিশালী পদক্ষেপ। ৭ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা পাবলিক ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমে অর্থনীতি নতুন গতি পাবে আর অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলির জন্য যেমন নতুন সুযোগ খুলবে, বৃহৎ শিল্পোদ্যোগগুলিও উপকৃত হবে।
আমি অর্থমন্ত্রী শ্রীমতী নির্মলা সীতারামনজি এবং তাঁর গোটা টিমকে এই জন-বান্ধব এবং প্রোগ্রেসিভ বাজেটের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।
আগামীকাল ভারতীয় জনতা পার্টি আমাকে সকাল ১১টায় বাজেট এবং আত্মনির্ভর ভারত নিয়ে কথা বলার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আগামীকাল ১১টায় আমি বাজেটের এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত কথা বলব। আজ এই যথেষ্ট। অনেক অনেক ধন্যবাদ!