দেশের নানাপ্রান্ত থেকে সমাগত সকল নবীন বন্ধুরা,
গণতন্ত্রের পবিত্র উৎসবে দেশের নানাপ্রান্ত থেকে সমাগতএন সি সি ক্যাডেটরা গনতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন। ভারতের ঐক্যেরপ্রতি আমাদের আনুগত্য, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের সামর্থ্যের অনুভূতি, দেশ এবংদুনিয়া আপনাদের মাধ্যমে উপলব্ধি করেছে। আমি আপনাদের সবাইকে অন্তর থেকে অনেক অনেকশুভেচ্ছা জানাই। আশা করি, ভারতের সুনাগরিক হিসেবে, আগামী দিনগুলিতেও আপনি নিজেরব্যক্তিগত জীবনে এবং জাতীয় জীবনে মানবতার উচ্চ আদর্শগুলির প্রতি এমনই আনুগত্য, এমনইসমর্পণের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাবেন, যার ফলে বিশ্বে ভারতের একটি অনন্য পরিচয় গড়েতোলার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
এন সি সি ক্যাডেটরা কেবল ইউনিফর্ম পরে না, কেবল প্যারেডকরা আর ক্যাম্পে থাকার অভিজ্ঞতা অর্জন করে না, এন সি সি’র মাধ্যমে একটি Sense of Mission -এর বীজরোপণ হয়। আমাদের মনে একটি অন্যতর জীবনযাপনের লক্ষ্যে, আমাদেরসংস্কারগুলিকে সামূহিক সংস্কারে পর্যবসিত করার কালখন্ড হয়ে ওঠে। ভারতের বৈচিত্র্য,ভারতের অন্তঃসলিলা শক্তি ও বিরাট সামর্থ্যের পরিচয় পাই। বিশ্ববাসী অবাক হয়ে ভাবেন –এ কেমন দেশ, ১৫০০-এরও বেশি কথ্যভাষা, ১০০টির বেশি ভাষা, প্রত্যেক ২০ ক্রোশেকথ্যভাষায় পরিবর্তন আসে, বেশভূষা ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন অনুভব করা যায়। কিন্তুআমরা একসূত্রে বাঁধা। কাশ্মীরে হিমালয়ে আঘাত লাগলে কন্যাকুমারীর দু’চোখ বেয়ে অশ্রুগড়িয়ে পড়ে। দেশের যে কোনও প্রান্তে ভাল কিছু হলে সারা দেশ গর্ববোধ করে। এই জাতীয়একাত্মবোধ যে কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করে, যে কোনও সমস্যারমুখোমুখি হতে সাহস যোগায়। নিজেদের পৌরুষ আর পরাক্রমের মাধ্যমে সেই সমস্যা নিরসনেরচেষ্টা করেন।
এটাই আমাদের দেশের নিজস্ব শক্তি। কোনও দেশরাজা-মহারাজাদের দিয়ে গড়ে ওঠে না, শাসকরা গড়ে তোলেন না, সরকার গড়ে তোলে না। দেশগড়ে তোলেন সাধারণ মানুষ, শিক্ষক, কৃষক, মজুর, বৈজ্ঞানিক, জ্ঞানী মানুষ, আচার্য এবংসাধু-সন্ন্যাসীরা। সকলের সমবেত তপস্যার সম্মিলিত অর্জনে একটা দেশ মহান হয়ে ওঠে।আমরা সৌভাগ্যবান যে হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্যশালী এমন একটি দেশে জন্মগ্রহণ করেছি।এখন এদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদেরকেও ছোট ছোট দায়িত্ব পালন করতে হবে। সেই দায়িত্বপ্রতিপালনের জন্য যেসব সংস্কার চাই, প্রশিক্ষণ চাই, অভিজ্ঞতা চাই – সব আমরা এন সিসি’র মাধ্যমে পেয়েছি।
আমিও সৌভাগ্যবান, ছোট বেলায় এন সি সি ক্যাডেট রূপে এই Sense of Mission, এই অনুভূতি নিজের মধ্যে জারিত করার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু আমি আপনাদের মতোতেজস্বী ক্যাডেট হয়ে উঠতে পারিনি, সেজন্য দিল্লিতে এসে প্যারেড করার জন্যনির্বাচিত হইনি। আপনাদের দেখে সেজন্য গর্ববোধ করছি, ছোট বেলায় আমি যা ছিলাম, তারথেকে আপনারা কয়েকগুণ এগিয়ে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ভবিষ্যতে আপনারা আমার থেকে অনেকবেশি সাফল্য পাবেন। আপনাদের হাতে দেশে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিন্ত ও নিরাপদ থাকবে।
এন সি সি ক্যাডেটরা পরিচ্ছন্নতা অভিযানকে জীবনেরমূলমন্ত্র করে নিয়েছে। যে সংগঠনে ১৩ লক্ষেরও বেশি ক্যাডেট রয়েছে, তাঁদেরসুনিয়ন্ত্রিত শৃঙ্খলাবদ্ধ পরিচ্ছন্নতার অভিযান অন্যদেরও প্রেরণা জুগিয়েছে।পাশাপাশি, দেশের একজন সুনাগরিক হিসেবে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে, প্রতিবেশী ওবন্ধুবান্ধবদের পরিচ্ছন্নতার প্রতি সচেতন করার ক্ষেত্রে অনুঘটক হয়ে ওঠার অবকাশআপনাদের রয়েছে। আগামী ২০১৯ সালে মহাত্মা গান্ধীর ১৫০তম জন্মজয়ন্তীতে সারা দেশ যেনঅপরিচ্ছন্নতাকে ঘৃণা করে, পরিচ্ছন্নতাকে ভালবাসে, সকলে দায়িত্ব নিয়ে পরিবেশকেপরিচ্ছন্ন রাখে এটা দেখার দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে। দেশের সকল প্রান্তে এন সিসি’র ক্যাডেটরা তাঁদের সততা, সচেতনতা, প্রশিক্ষণকে পাথেয় করে মহা উৎসাহে এইপরিচ্ছন্নতার আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যান।
ভারতীয়রা দ্রুততার সঙ্গে যে কোনও উন্নত প্রযুক্তিকে আপনকরে নিতে পারেন। বিশেষ করে নবীন প্রজন্ম। এদেশের সকল ১৮ বছর উত্তীর্ণ ব্যক্তির যেন‘আধার’ কার্ড থাকে, যার মধ্যে নিজস্ব নাম্বারের পাশাপাশি বায়োমেট্রিক পরিচয় পাওয়াযায়। এই বিশিষ্ট পরিচয়ই এখন আমাদের সকল প্রকল্পের ভিত্তি হিসেবে পরিগণিত হয়ে উঠতেপারে।
সম্প্রতি ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দেওয়াহচ্ছে, সেজন্য অভিযান শুরু হয়েছে। এন সি সি ক্যাডেটরা এই অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।নোট ছাপাতে, ছাপার পর সেই নোটগুলি দেশের সকল গ্রামের ডাকঘর ও ব্যাঙ্কগুলিতে পৌঁছেদিতে লক্ষ কোটি টাকা পরিবহণ খরচ যোগাতে হয়। প্রতিটি এ টি এম সামলাতে পাঁচজননিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করতে হয়। আমরা যত ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবস্থাকে আপন করে নিতেপারব, তত বেশি অহেতুক খরচ বাঁচাতে পারব। সেই টাকা উন্নয়নের খাতে খরচ করা যাবে,গৃহহীনকে বাড়ি বানিয়ে দেওয়া, দরিদ্রদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা, চিকিৎসার ব্যবস্থাকরা, গরিব শিশুদের ভাল সংস্কার শেখানোর কাজে ব্যবহার করা যাবে।
আপনাদের ফোনে বাবাসাহেব আম্বেদকরের নামে শুরু করা BHIM app ডাউনলোড করুন, আর এর মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেনে অভ্যস্ত হয়ে উঠুন। আপনাদেরএলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দোকানদারদের এই লেনদেনের পদ্ধতি শেখান। শুধু এটুকু করতেপারলেই আপনারা দেশের অনেক বড় সেবা করবেন। ভারতের প্রত্যেক নাগরিককে ডিজিটাললেনদেনে অভ্যস্ত করে তুলুন। পরিবর্তিত যুগে বিশ্বের আধুনিক প্রযুক্তি-চালিত সমাজেপর্যবসিত আধুনিক ভারত এক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকতে পারে না। যে দেশে ৬৫ শতাংশ জনসংখ্যারবয়স ৩৫ বছরের নীচে, DemographicDividend –এর নামে আমরা বিশ্বে বুক ফুলিয়ে, চোখে চোখ মিলিয়ে কথাবলি, সে দেশের ৮০ কোটি নবীন প্রজন্মের মানুষ যদি একবার ভেবে নেয় যে অর্থ ব্যবস্থায়এক বড় পরিবর্তনসাধনের কর্মযজ্ঞে আমরাও যোগ দেব, তা হলে প্রধানমন্ত্রী কিংবাঅর্থমন্ত্রীর থেকে বড় কাজ ভারতের নবীন প্রজন্মই করে ফেলতে পারে। পরিবর্তন আনতেপারে। এন সি সি এই দায়িত্বপালনে এগিয়ে এসেছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তাঁরা এই কাজে সফলহবেন।
এন সি সি’র ক্যাডেটরা দেশভক্ত হন। শৃঙ্খলাপরায়নতা তাঁদেরবৈশিষ্ট্য। তাঁদের স্বভাব মিলেমিশে কাজ করা। পায়ে পা মিলিয়ে চলা, কাঁধে কাঁধমিলিয়ে চলা কিন্তু মিলেমিশে চিন্তাভাবনা করেই পা বাড়ানো আর সাফল্যের উচ্চতা স্পর্শকরা এন সি সি’র বৈশিষ্ট্য। সেজন্য আজ সমাজের প্রতি ভালবাসা ও দেশাত্মবোধেসদাজাগ্রত থাকতে হবে। ‘রাষ্ট্রম জাগ্রয়ম বয়ম্ : ’। নিরন্তরসচেতন সদাসতর্ক থাকতে হবে। আমদের প্রতিবেশী কোনও যুবক যেন অর্থের লোভে বা অন্যকোনও কারণে ভুল পথে না চলে যায়, যে পথ তার ও তার পরিবারের সর্বনাশ ডেকে আনবে। সেপথে যেন সে না চলে যায় তা দেখতে হবে। কেউ যেন সমাজের বোঝা না হয়ে ওঠে। আমরা সচেতনথাকলে আমাদের প্রতিবেশী বন্ধুদেরও এন সি সি’তে যোগদানের প্রেরণা যোগাব। আর তাসম্ভব না হলে যে Senseof Mission আমরা পেয়েছি, জীবনের লক্ষ্যকে আমরা যেভাবে জেনেছি তাই অন্যদেরমধ্যেও সঞ্চারিত করতে হবে, যাতে তারাও আমাদের পথে, দেশ গঠনের উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়েআসেন।
প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে এসে আপনারা এই কয়দিনে অনেককিছু শিখেছেন। অনেক বন্ধু পেয়েছেন। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তকে জানা ও বোঝার সুযোগপেয়েছেন। অনেক ভাল ভাল স্মৃতি নিয়ে বাড়ি ফিরবেন। আপনাদের স্কুল-কলেজের সহপাঠীরাঅপেক্ষা করছেন, কবে আপনারা অভিজ্ঞতার গল্প শোনাবেন! আপনারা হয়তো ইতিমধ্যেই মোবাইলফোনে ফটো তুলে অনেক ছবি তাঁদের পাঠিয়েছেন, শেয়ার করেছেন! আপনাদের বন্ধুরা মনোযোগদিয়ে টেলিভিশনে আপনাদের প্যারেড দেখেছেন। যে যার বন্ধুকে, নিজের গ্রামের ছেলেটিকে,নিজের স্কুলের ছাত্রটিকে খুঁজেছেন। গোটা ভারতের প্রত্যেক প্রান্তের মানুষের নজরছিল আপনাদের প্যারেডে। এটা কম গর্বের কথা নয়! কত বড় আনন্দের মুহূর্ত সেগুলি! এইসবস্মৃতির অমূল্য সম্পদ নিয়ে আপনারা বাড়ি ফিরে যাবেন। এগুলি কখনও ভুলে যাবেন না।এগুলি সামনে রাখবেন। এই শুভচিন্তা যত ডালপালা গজাবে, আপনাদের জীবনও তত উজ্জ্বলহবে। এর সৌরভ আপনার জীবনে প্রকট হবে, যা আপনার চারপাশের মানুষজনকে পুলকে ভরিয়েদেবে।
আপনাদের সবাইকে আমার অন্তর থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছাজানাই। আজ যে ক্যাডেটরা পুরস্কার পেয়েছেন সেই বিজেতাদেরও অন্তর থেকে অভিনন্দন জানাই।এন সি সি’কে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ।