




মাননীয়গণ, ভদ্রমহোদয়া ও ভদ্রমহোদয়গণ, নমস্কার!
গোলাপি নগরী জয়পুরে সাদর আমন্ত্রণ। এই অঞ্চল পরিচিত এর প্রাণবন্ত এবং উৎসাহী মানুষের জন্য।
বন্ধুগণ,
ইতিহাসে দেখা যায়, বাণিজ্যের ফলে ভাবনা-চিন্তা, সংস্কৃতি এবং প্রযুক্তির হস্তান্তর ঘটে। এতে মানুষ মানুষের কাছে আসে। বাণিজ্য এবং বিশ্বায়ন লক্ষ লক্ষ মানুষকে অতি দারিদ্র্য থেকে মুক্তিও দিয়েছে।
মহোদয়গণ,
আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি ভারতের অর্থনীতি নিয়ে বিশ্বের আশা এবং আস্থা তৈরি হয়েছে। ভারতকে দেখা হচ্ছে ঔদার্য, সুযোগ এবং সুবিধার মিলন ক্ষেত্র হিসেবে। গত ৯ বছরে ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠেছে। এটা আমাদের দীর্ঘস্থায়ী প্রয়াসের ফল। আমরা ২০১৪-য় ‘রিফর্ম, পারফর্ম এবং ট্রান্সফর্ম’-এর যাত্রা শুরু করি। আমরা প্রতিযোগিতামুখিনতা এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করেছি। আমরা ডিজিটাইজেশনের প্রসার ঘটিয়েছি, উৎসাহ দিয়েছি উদ্ভাবনে। আমরা তৈরি করেছি ফ্রেট করিডর এবং শিল্প তালুক। আমরা লালফিতে থেকে লাল কার্পেটে এগিয়ে গিয়েছি এবং উদারীকরণ করেছি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রের। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ এবং ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর মতো উদ্যোগ উৎপাদন শিল্পের বৃদ্ধি ঘটিয়েছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, আমরা নীতিতে স্থায়িত্ব এনেছি। আগামী কয়েক বছরে ভারতকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি করার লক্ষ্যে আমরা দায়বদ্ধ।
বন্ধুগণ,
অতিমারী থেকে ভূ-রাজনৈতিক সমস্যার মতো সাম্প্রতিক বিশ্বের সঙ্কটগুলি বিশ্বের অর্থনীতির পরীক্ষা নিয়েছে। জি-২০ভুক্ত দেশ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব আন্তর্জাতিক বাণিজ্য লগ্নিতে আস্থা ফিরিয়ে আনা। আমাদের দৃঢ় এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্তর্জাতিক মূল্যশৃঙ্খল গড়ে তুলতে হবে যা আগামীদিনে যে কোনো সমস্যার মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের প্রস্তাব, আন্তর্জাতিক মূল্যশৃঙ্খলের পরিমাপ করতে জেনেরিক ফ্রেমওয়ার্ক গড়ে তোলা জরুরি। এই কাঠামোর লক্ষ্য হবে ঝুঁকি হ্রাস, দৃঢ়তা বৃদ্ধি এবং লাভ-ক্ষতির সমীক্ষা করা।
মহোদয়গণ,
বাণিজ্যে প্রযুক্তির রূপান্তরকারী ক্ষমতা প্রশ্নাতীত। অনলাইন একক অপ্রত্যক্ষ কর – জিএসটি গৃহীত হওয়ায় ভারতে আন্তঃরাজ্য বাণিজ্য বৃদ্ধিতে একটিমাত্র আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টির সহায়ক হয়েছে। আমাদের সমন্বিত লজিস্টিক্স ইন্টারফেস প্ল্যাটফর্ম লজিস্টিক্সকে সুলভ করেছে এবং আরও স্বচ্ছ করেছে। আরও একটি মোড় ঘোরানো বিষয় হল – ‘ওপেন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল কমার্স’, যাতে আমাদের ডিজিটাল বাজার অর্থনীতির গণতন্ত্রীকরণ সম্ভব হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যেই এটা করেছি আমাদের ইউপিআই-এর মাধ্যমে। প্রক্রিয়ার ডিজিটাইজেশন এবং ই-কমার্সের ব্যবহারের ফলে বাজারের সুযোগ বৃদ্ধি হয়েছে। আমি খুশি যে আপনাদের গোষ্ঠী ‘হাই লেভেল প্রিন্সিপলস ফর দ্য ডিজিটালাইজেশন অফ ট্রেড ডকুমেন্টস’ নিয়ে কাজ করছে। এই নীতিগুলি দেশগুলির মধ্যে আন্তঃসীমান্ত ইলেক্ট্রনিক বাণিজ্য ব্যবস্থা এবং বাধ্যবাধকতার বোঝা কমানোর সহায়ক হবে। যেহেতু আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য ক্রমশ বাড়ছে, তার জন্য সমস্যাও সৃষ্টি হচ্ছে। সেজন্য আমাদের প্রয়োজন বড় এবং ছোট বিক্রেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় ভারসাম্য নিশ্চিত করা। উপভোক্তারা সঠিক মূল্যে পণ্য পাচ্ছেন কিনা এবং তাঁদের অভিযোগগুলি নিষ্পত্তির বিষয়টিও আমাদের দেখা প্রয়োজনীয়।
মহোদয়গণ,
ভারত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে মধ্যে রেখে বিধি-নির্ভর, মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, বহুমুখী বাণিজ্য ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে। দ্বাদশ ডব্লিউটিও মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে ভারত ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর উদ্বেগের কথাগুলি তুলে ধরেছিল। লক্ষ লক্ষ কৃষক এবং ছোট ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষার ব্যাপারে সহমত গড়ে তুলতে আমরা সক্ষম হয়েছিলাম। আমাদের আরও নজর দিতে হবে, এমএসএমই-গুলির প্রতি কারণ, বিশ্ব অর্থনীতিতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। কর্মসংস্থানের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই হয় এমএসএমই-তে, বিশ্ব জিডিপি-র ৫০ শতাংশই এমএসএমই-র অবদান। আমাদের নিরন্তর সমর্থনের প্রয়োজন আছে তাদের। এমএসএমই-গুলির স্বশক্তিকরণের অর্থ সামাজিক স্বশক্তিকরণ। আমাদের কাছে এমএসএমই-র অর্থ – ‘ম্যাক্সিমাম সাপোর্ট টু মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজেস’। ভারত, সরকারি ই-মার্কেটপ্লেস অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে এমএসএমই-কে যুক্ত করেছে। ‘জিরো ডিফেক্ট’ এবং পরিবেশের ওপর ‘জিরো এফেক্ট’-এর নীতি রূপায়ণের ক্ষেত্রে আমরা আমাদের এমএসএমই ক্ষেত্রের সঙ্গে কাজ করছি। ভারতের সভাপতিত্বে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং মূল্যশৃঙ্খলে তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত, ‘জয়পুর ইনিশিয়েটিভ টু ফস্টার সিমলেস ফ্লো অফ ইনফরমেশন টু এমএসএমইজ’ বাজারের সুযোগ এনে দেবে এবং বাণিজ্য সংক্রান্ত যথাযথ তথ্যগুলিও যোগাবে। আমি বিশ্বাস করি, গ্লোবাল ট্রেড হেল্প ডেস্কের উন্নতি করা গেলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এমএসএমই-দের যোগদান বাড়বে।
মহোদয়গণ,
এক পরিবার হিসেবে আমাদের সকলের দায়িত্ব আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং লগ্নি প্রক্রিয়ায় আস্থা ফিরিয়ে আনা। আমার বিশ্বাস, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে ক্রমশ আরও প্রতিনিধিত্বমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তুলতে ভবিষ্যতে আপনারা একযোগে কাজ করবেন। আপনাদের আলোচনার সাফল্যের জন্য আমার শুভেচ্ছা রইল। অনেক ধন্যবাদ!