নমস্কার!
আপনাদের পরামর্শ এ বছরের বাজেটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আর আপনারাও যখন বাজেট দেখেছেন, সবার মনে নিশ্চয়ই একথা উদয় হয়েছে যে এবার আপনাদের পরামর্শ, আপনাদের ভাবনা-চিন্তাই এই বাজেটে প্রতিফলিত করার প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হয়েছে। সে কাজটা তো হয়ে গেল। আর তারপর আজকের এই বার্তালাপ ...। এই বার্তালাপে কৃষি সংস্কার এবং বাজেটের সুবিধাগুলিকে আমরা কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাব, দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাব, যাতে তা প্রান্তিক কৃষকের উপকারে লাগে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পৌঁছয়, অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সবাই মিলেমিশে কিভাবে তা বাস্তবায়িত করব, তা হয়ে উঠবে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের যথার্থ নিদর্শন, কেন্দ্র এবং রাজ্যের সংহত উদ্যোগের যথার্থ নিদর্শন … - এমনটাই আজ আমরা আজকের আলোচনা থেকে নির্ধারিত করতে চাই।
এই ওয়েবিনারে কৃষি, ডেয়ারি, মৎস্যচাষের মতো নানা ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন। সরকারি, বেসরকারি এবং সমবায় ক্ষেত্রের বন্ধুরা রয়েছেন ... আজ আমরা অনেকের ভাবনা থেকে উপকৃত হব। এখানে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিকে অর্থ জোগানো ব্যাঙ্কগুলির প্রতিনিধিরাও রয়েছেন।
আপনারা সবাই আত্মনির্ভর ভারতের জন্য প্রয়োজনীয় আত্মনির্ভর গ্রামীণ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আমি কিছুক্ষণ আগে সংসদে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলেছি, কিভাবে দেশের ক্ষুদ্র চাষিদের কথা মাথায় রেখে সরকার বিগত বছরগুলিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ক্ষুদ্র কৃষকদের সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি, আর এঁদের সশক্তিকরণ, এই ক্ষুদ্র কৃষকদের ক্ষমতায়নই ভারতীয় কৃষিকে অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে অনেক ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। শুধু তাই নয়, গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকাশক্তিও হয়ে উঠবে।
আমি নিজের কথা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আগে বাজেটে কৃষির জন্য কী কী করা হয়েছে, তার কিছু হাইলাইটস আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। আমি জানি যে আপনারা সবাই এই বিষয়গুলির সঙ্গে পরিচিত। সরকার এবার কৃষির ‘ক্রেডিট টার্গেট’ বাড়িয়ে ১৬ লক্ষ ৫০ কোটি টাকা করে দিয়েছে। এগুলির মধ্যে পশুপালন, ডেয়ারি এবং মৎস্যচাষকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। গ্রামীণ পরিকাঠামো তহবিলকেও বাড়িয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র সেচ তহবিলেরও অর্থ বরাদ্দ দ্বিগুণ করে দেওয়া হয়েছে। ‘অপারেশন গ্রিনস’ প্রকল্পের পরিধি বাড়িয়ে এখন ২২টি পচনশীল পণ্য পর্যন্ত করে দেওয়া হয়েছে। দেশের আরও ১ হাজারটি মান্ডিকে ই-ন্যামের সঙ্গে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সমস্ত সিদ্ধান্তে সরকারের ভাবনার ঝলক দেখা যায়, সরকারের ইচ্ছা অনুভূত হয়, আর পাশাপাশি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিও জানা যায়। আর এই সমস্ত প্রস্তাব আপনাদের সকলের সঙ্গে আলোচনাতেই উঠে এসেছিল, যাকে আমরা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছি। ক্রমবর্ধমান কৃষি উৎপাদনের মাঝে একবিংশ শতাব্দীতে ভারতে ‘পোস্ট হার্ভেস্ট’ বিপ্লব কিংবা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ বিপ্লব এবং মূল্য সংযোজনের প্রয়োজন রয়েছে। যদি এসব পদক্ষেপ ২-৩ দশক আগে নেওয়া হত, তাহলে দেশের জন্য খুব ভালো হত। এখন যে সময় নষ্ট হয়েছে, পেরিয়ে গেছে তার ক্ষতিপূরণ তো আমাদের করতেই হবে, পাশাপাশি আগামীদিনের জন্যও আমাদের প্রস্তুতিকে, আমাদের দ্রুততাকে বাড়াতে হবে।
বন্ধুগণ,
আমরা যদি ডেয়ারি ক্ষেত্রের দিকে তাকাই তাহলে দেখব, এই ক্ষেত্রটি অন্যদের থেকে অনেক শক্তিশালী কারণ অনেক দশক আগেই এক্ষেত্রে প্রক্রিয়াকরণকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিস্তারিত করা হয়েছে। আজ আমাদের কৃষির প্রতিটি ক্ষেত্র যেমন শস্য, সব্জি, ফল, মৎস্যচাষে প্রক্রিয়াকরণকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, আর প্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থাকেও সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। কৃষকরা যেন নিজের গ্রামের পাশেই উন্নত সংরক্ষণের আধুনিক ব্যবস্থা পান, সেজন্য ফসলের খেত থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াকরণ কারখানা পর্যন্ত পৌঁছনোর ব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে। প্রক্রিয়াকরণ কারখানাগুলির ‘হ্যান্ড হোল্ডিং’ ফার্মার প্রোডিউসার অর্গানাইজেশন (এফপিও)-গুলি মিলেমিশে সম্পাদন করুক। আর আমরা সবাই এটা জানি যে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ বিপ্লবের জন্য দেশের কৃষকদের পাশাপাশি দেশের সরকারি-বেসরকারি ও সমবায় ক্ষেত্রকেও সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে সঠিক লক্ষ্যে এগিয়ে আসতে হবে।
বন্ধুগণ,
আজ এটা সময়ের চাহিদা, দেশের কৃষকরা যাতে তাঁদের উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করার ক্ষেত্রে বেশি বিকল্প পান। কৃষকদের শুধুই কাঁচা ফসল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখার লোকসান দেশ প্রত্যক্ষ করছে। আমাদের দেশের কৃষিক্ষেত্রকে প্রক্রিয়াকরণজাত খাদ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে ছড়িয়ে দিতে হবে। আমাদের গ্রামের কাছেই কৃষি-ভিত্তিক শিল্প ক্লাস্টারগুলির সংখ্যা বাড়াতে হবে যাতে গ্রামের মানুষের গ্রামের মধ্যেই কৃষি-সংশ্লিষ্ট কোনও উপায় থেকে কর্মসংস্থান হয়। অর্গ্যানিক ক্লাস্টার, এক্সপোর্ট ক্লাস্টারগুলিরও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা হবে। গ্রাম থেকে কৃষি-ভিত্তিক পণ্য যাতে সহজে শহরের দিকে যায়, আর শহরগুলি থেকে অন্যান্য শিল্পজাত পণ্য সহজে গ্রামে আসে ; এমন পরিস্থিতি গড়ে তোলার দিকে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এখনও দেশে লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানা চলছে। কিন্তু সেগুলির বিস্তার, সেগুলির সামর্থ্য বৃদ্ধিই আজ সময়ের চাহিদা। ‘এক জেলা এক পণ্য’ – এই প্রকল্প কিভাবে আমাদের পণ্যগুলিকে বিশ্বের বাজারে পৌঁছে দেবে তা সুনিশ্চিত করতে আমাদের সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বন্ধুগণ,
শুধু কৃষি নয়, আমাদের দেশে মৎস্যচাষের ক্ষেত্রেও প্রক্রিয়াকরণের অনেক বড় সুযোগ রয়েছে। আমরা বিশ্বের বৃহত্তম মৎস্য উৎপাদক এবং রপ্তানিকারকদের অন্যতম হলেও প্রক্রিয়াকরণজাত মৎস্যের আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের উপস্থিতি অত্যন্ত সীমিত। ভারতের মাছ পূর্ব এশিয়া হয়ে প্রক্রিয়াকরণজাত খাদ্য হিসেবে বিদেশি বাজারে পৌঁছয়। এই পরিস্থিতি আমাদের বদলাতেই হবে।
বন্ধুগণ,
সেজন্য জরুরি সংস্কারগুলি ছাড়াও প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা উৎপাদন-সংশ্লিষ্ট উৎসাহ ভাতার প্রকল্পও সরকার চালু করেছে। আমাদের শিল্প জগৎ এর দ্বারা লাভবান হতে পারে। ‘রেডি টু ইট, রেডি টু কুক’ – ফল, সব্জি থেকে শুরু করে সি-ফুড, মোজ্জারেলা চিজ – এরকম অনেক পণ্যকে উৎসাহ জোগানো হচ্ছে। কোভিড-উত্তর সময়ে দেশ ও বিদেশে এ ধরনের বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা কতটা বেড়ে গেছে তা আপনারা আমার থেকে বেশি জানেন।
বন্ধুগণ,
‘অপারেশন গ্রিনস’ প্রকল্পের মাধ্যমে কিষাণ রেলের জন্য সমস্ত ফল ও সব্জি পরিবহণের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। কিষাণ রেলও আজ দেশের কোল্ড স্টোরেজ নেটওয়ার্কের শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এই কিষাণ রেল ক্ষুদ্র কৃষক ও মৎস্যজীবীদের বড় বাজার এবং অধিক চাহিদাসম্পন্ন বাজারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সফল হচ্ছে। বিগত ছয় মাসের মধ্যেই প্রায় ২৭৫টি কিষাণ রেল চালানো হয়েছে। আর সেগুলির মাধ্যমে প্রায় ১ লক্ষ মেট্রিক টন ফল এবং সব্জি পরিবাহিত হয়েছে। এটি ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য অনেক বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে তো বটেই, পাশাপাশি উপভোক্তা এবং শিল্পোদ্যোগগুলিও এর দ্বারা লাভবান হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
সারা দেশে জেলায় জেলায় উৎপন্ন ফল-সব্জিগুলির প্রক্রিয়াকরণের জন্য সেই জেলাগুলিতেই ক্লাস্টার গড়ে তোলার জন্য জোর দেওয়া হচ্ছে। এভাবে আত্মনির্ভর অভিযানের মাধ্যমে ‘প্রধানমন্ত্রী সুক্ষ্ম খাদ্য প্রোসংস্করণ উদ্যম উন্নয়ন’ প্রকল্পের মাধ্যমে কয়েক লক্ষ ক্ষুদ্র খাদ্য ও প্রক্রিয়াকরণ কারখানাগুলিকে সাহায্য করা হচ্ছে। সেজন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো থেকে শুরু করে কারখানা স্থাপন পর্যন্ত আপনাদের অংশীদারিত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বন্ধুগণ,
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের পাশাপাশি আমাদের ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র কৃষকরা কিভাবে আধুনিক প্রযুক্তি দ্বারা উপকৃত হতে পারেন সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। দেশের ক্ষুদ্র কৃষক, ট্র্যাক্টর, ফসলের অবশিষ্টাংশ ব্যবস্থাপনার মেশিন কিংবা অন্যান্য উন্নত মেশিন ব্যবহার করতে পারেন না। সেজন্য ট্র্যাক্টর এবং অন্যান্য আধুনিক মেশিন শেয়ার করার একটি প্রতিষ্ঠানগত, সুলভ এবং কার্যকর বিকল্প কি কৃষকদের দেওয়া যেতে পারে? আজ যখন যে কোনও বিমান সংস্থা তাদের প্রয়োজনে ঘন্টার পর ঘন্টা সময়ের জন্য অন্য সংস্থা থেকে বিমান ভাড়া করতে পারে, তখন কৃষকদের জন্যও কি এ ধরনের ব্যবস্থা দেশে গড়ে উঠতে পারে না?
কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য মান্ডি পৌঁছনোর জন্য ট্রাক এগ্রিগেটর্স-এর প্রয়োগ করোনাকালে অনেক হয়েছে। কৃষকরা এই ব্যবস্থা পছন্দও করেছেন। কৃষি খেত থেকে মান্ডি কিংবা কারখানা পর্যন্ত, খেত থেকে কিষাণ রেল পর্যন্ত এই পরিবহণ ব্যবস্থা সুচারুভাবে গড়ে তুলতে আমাদের আরও কাজ করতে হবে। কৃষি সংক্রান্ত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মাটি পরীক্ষা। বিগত বছরগুলিতে কেন্দ্রীয় সরকার কোটি কোটি কৃষকদের মৃত্তিকা স্বাস্থ্য কার্ড দিয়েছে। এখন আমাদের দেশে মৃত্তিকা স্বাস্থ্য কার্ডের মাধ্যমে মাটি পরীক্ষার পরিষেবা গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দিতে হবে। রক্ত পরীক্ষার জন্য যেমন ল্যাবরেটরি হয়, সেগুলির একটা নেটওয়ার্ক থাকে, তেমনই নেটওয়ার্ক আমাদের মৃত্তিকা পরীক্ষার জন্যও গড়ে তুলতে হবে। আর এক্ষেত্রে বেসরকারি ক্ষেত্র বেশি মাত্রায় যুক্ত হতে পারে। আর একবার যদি এই মৃত্তিকা পরীক্ষার নেটওয়ার্ক তৈরি করে ফেলতে পারি, তাহলে দেখবেন আমাদের কৃষকদের মাটি পরীক্ষার অভ্যাস গড়ে উঠবে। তাঁরা প্রত্যেকেই নিজের নিজের ফসলের খেতের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হবেন, আর সেই নিরিখে তাঁদের সিদ্ধান্তে অনেক বড় পরিবর্তন আসবে। দেশের কৃষকরা যত বেশি তাঁদের মাটির স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন, তত ভালোভাবে তাঁরা ফসল উৎপাদন বাড়াতে পারবেন।
বন্ধুগণ,
কৃষিক্ষেত্রে গবেষণা ও উন্নয়ন থেকে শুরু করে অধিকাংশ অবদান সরকারি ক্ষেত্রেরই। এখন সময় এসেছে যে এই ক্ষেত্রে বেসরকারি ক্ষেত্রও তার অংশীদারিত্ব বাড়ায়। গবেষণা ও উন্নয়নের প্রসঙ্গ যখন ওঠে তখন শুধুই বীজ নিয়ে গবেষণা ও উন্নয়নে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। আমি ফলন সংক্রান্ত সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক বাস্তু ব্যবস্থার কথা বলছি। সংহত দৃষ্টিভঙ্গি চাই, সম্পূর্ণ উৎপাদন চক্র নিয়ে গবেষণা ও উন্নয়ন চাই। আমাদের কৃষকদের এমন বিকল্পের সন্ধান দিতে হবে, যাতে তাঁরা শুধুই গম আর চাল উৎপাদনে সীমাবদ্ধ না থাকেন, যাতে জৈব ফসল থেকে শুরু করে স্যালাডের জন্য প্রয়োজনীয় সব্জি উৎপাদন ও আরও অন্যান্য ফসল ও শাকসব্জি উৎপাদন নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা আমরা করতে পারি! এভাবে আমি আপনাদের বাজরার ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের নানা উপায় বের করার পরামর্শ দেব। বাজরা জাতীয় ফসলের জন্য ভারতে এক ধরনের জমি অত্যন্ত উপযোগী। সেই জমিগুলিতে অল্প জলেও বেশি ফসল উৎপন্ন হয়। বাজরা জাতীয় ফসলের চাহিদা আগে থেকেই সারা পৃথিবীতে ছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণের পর ‘ইমিউনিটি বুস্টার’ হিসেবে বাজরা জাতীয় ফসলের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়েছে। এদিকে কৃষকদের উৎসাহিত করাও খাদ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পপতিদের অনেক বড় দায়িত্ব।
বন্ধুগণ,
সমুদ্রগুটিকা এবং মৌ-চাষজাত মোমের ব্যবহার আমাদের দেশে ধীরে ধীরে বাড়ছে। মধুর চাহিদা তো সারা পৃথিবীতেই ক্রমবর্ধমান। আমাদের দেশের কৃষকরাও এখন মৌ-পালনে অত্যন্ত আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এই সুযোগে সমুদ্রতটে সমুদ্রগুটিকার চাষ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে মৌ-পালন আর মৌ-পালনজাত মোমের বাজারে পণ্য পৌঁছানোও সময়ের চাহিদা। আমাদের দেশে সমুদ্রগুটিকা চাষের অনন্ত সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ আমাদের অনেক বড় সমুদ্রতট রয়েছে। সমুদ্রগুটিকা চাষের মাধ্যমে আমাদের মৎস্যজীবীরাও রোজগারের একটা বড় বিকল্প উপায় পাবেন। এভাবে আমরা যেহেতু মধু-বাণিজ্যেও উন্নতি করছি, আমাদের মৌ-পালনজাত মোমের ব্যবসায়েও অংশীদারিত্ব বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাদের অধিক অবদান রাখতে হবে। আজ যখন আপনারা সারাদিন আলোচনা করবেন, তখন এই বিষয়গুলি নিয়ে অনেক ভালো ভালো উপায় নিশ্চয়ই উঠে আসবে।
বেসরকারি ক্ষেত্রের অংশীদারিত্ব বৃদ্ধিতেই স্বাভাবিকভাবে কৃষকদের ভরসা বাড়বে। আমাদের দেশে চুক্তি চাষ দীর্ঘকাল ধরেই কোনও না কোন রূপে চালু রয়েছে। আমাদের চেষ্টা করা উচিৎ যাতে এই চুক্তি চাষ নিছকই একটি বাণিজ্য না হয়ে ওঠে, এর মাধ্যমে দেশের মাটির প্রতি আমাদের দায়িত্বও আমরা পালন করি। আমাদের কৃষকদের এমন প্রযুক্তি, এমন বীজ সরবরাহ করি যা জমির জন্যও স্বাস্থ্যকর হবে আর ফলনের ক্ষেত্রে পুষ্টির পরিমাণ বেশি হবে।
বন্ধুগণ,
দেশের কৃষিতে সেচ থেকে শুরু করে শস্য বপন, ফসল কাটা এবং বিক্রির মাধ্যমে রোজগার পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে যাতে প্রযুক্তির মাধ্যমে পূর্ণ সমাধানের ব্যবস্থা করা যায়, সেজন্য আমাদের মিলেমিশে চেষ্টা করতে হবে। আমাদের কৃষিক্ষেত্র-সংশ্লিষ্ট স্টার্ট-আপগুলিকে উৎসাহ জোগাতে হবে, নবীন প্রজন্মকে বেশি করে যুক্ত করতে হবে। করোনার সময়ে আমরা দেখেছি কিভাবে অনেক স্টার্ট-আপ ফল ও সব্জি মানুষের বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে। আর এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে অধিকাংশ স্টার্ট-আপ দেশের নবীন প্রজন্মের শিল্পোদ্যোগীরাই শুরু করেছেন। আমাদের লাগাতার তাঁদের উৎসাহ জুগিয়ে যেতে হবে। এই উৎসাহদান আপনাদের মতো বন্ধুদের সক্রিয় অংশীদারিত্ব ছাড়া সম্ভব নয়। কৃষকদের ঋণ, বীজ, সার এবং বাজার – এই প্রাথমিক প্রয়োজনগুলি যথাসময়ে মেটাতে হবে।
বিগত বছরগুলিতে কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের পরিধি আমরা ছোট কৃষক থেকে ক্ষুদ্র কৃষক পর্যন্ত, পশুপালক থেকে মৎস্যজীবি পর্যন্ত বিস্তারিত করেছি। আমরা অভিযান শুরু করে বিগত এক বছরে ১ কোটি ৮০ লক্ষেরও বেশি কৃষককে ‘কিষাণ ক্রেডিট কার্ড’ দিয়েছি। ঋণের ব্যবস্থাও ৬-৭ বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণ থেকেও বেশি করা হয়েছে। এই ঋণ যাতে কৃষকদের কাছে সময়মতো পৌঁছয় তা সুনিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। সেজন্য গ্রামীণ পরিকাঠামোতে যথাসময়ে অর্থের জোগানের ক্ষেত্রে আপনাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১ লক্ষ কোটি টাকার পরিকাঠামো নির্মাণ তহবিলের বাস্তবায়নও উৎসাহবর্ধক। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ক্রয় থেকে শুরু সংরক্ষণ পর্যন্ত গোটা শৃঙ্খলের আধুনিকীকরণ উৎসাহিত হবে। এবারের বাজেটে তো সারা দেশের সমস্ত এপিএমসি-গুলিকেও এই তহবিলের মাধ্যমে সাহায্যের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশে যে ১০ হাজার এফপিও তৈরি করা হচ্ছে সেগুলির মাধ্যমে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী সমবায় ব্যবস্থা গড়ে উঠছে।
বন্ধুগণ,
এই সংগঠিত প্রচেষ্টাকে আমরা কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাব এই বিষয়ে আপনাদের পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে আপনাদের অভিজ্ঞতা, আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সরকারের ভাবনা, সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির মিলন, সরকারি ব্যবস্থার সঙ্গে আপনাদের শক্তির মিলনের মাধ্যমে আমাদের দেশের কৃষিক্ষেতে পরিবর্তন আনতে হবে। এই বার্তালাপের সময় আপনারা যত পরামর্শ দেবেন তা ভারতের কৃষির স্বার্থে, ভারতের গ্রামীণ অর্থনীতির স্বার্থে আপনাদের দিক থেকে যত পরামর্শ আসবে সেগুলি সরকারকে খুব সাহায্য করবে।
আপনাদের কী পরিকল্পনা, সরকার এবং আপনারা মিলে কিভাবে কাজ করবেন; এক্ষেত্রেও আপনারা সবাই খোলা মনে আলোচনা করুন। আপনাদের মনে যত ভাবনার উদয় হবে - সেগুলি বলুন। হ্যাঁ, আপনাদের যদি মনে হয় বাজেটে এমনটি না হলেও ভালো হত, অন্যরকম কিছু হলে ভালো হত, সেগুলিও বলুন। এটা আমাদের শেষ বাজেট নয়। এরপরও আমরা আরও বাজেট নিয়ে আসব। আপনারা আমাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন, সেজন্য আমরা প্রচেষ্টা জারি রাখব। এবার যা কিছু বাজেটে এসেছে, সেগুলি আগামী এক বছরে কিভাবে বাস্তবায়িত করতে হবে, কত দ্রুত বাস্তবায়িত করা যাবে যাতে অধিকাংশ মানুষ এর দ্বারা লাভবান হন, সেই লক্ষ্যটি আজকের বার্তালাপে গুরুত্ব পাবে। এভাবে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করলেই দেশ লাভবান হবে। আমি চাই, আপনারা খোলা মনে আলোচনা করে আমাদের কৃষিক্ষেত্র, আমাদের কৃষক, আমাদের নীল অর্থনীতি, আমাদের শ্বেত বিপ্লবের ক্ষেত্রকে আরও শক্তিশালী করে তুলুন। আরেকবার আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই।
ধন্যবাদ!