নমস্কার!
আজকের অনুষ্ঠান আপনাদের অন্যরকম মনে হতে পারে, এবার বাজেটের পরেই, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে বাজেটের বিধান অনুযায়ী বিভিন্ন সেক্টরের সঙ্গে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে যাতে ১ এপ্রিল যখন নতুন বাজেট চালু হবে তখন সেদিন থেকেই সমস্ত প্রকল্পের কাজ শুরু হতে পারে, এগিয়ে যেতে পারে।
এবারের বাজেট আগের তুলনায় প্রায় এক মাস এগিয়ে আনা হয়েছে, তাই আমাদের কাছে এখনও দু মাস সময় হাতে রয়েছে, এবং এই সময়ের সবথেকে বেশি সুযোগ নিতে আমরা লাগাতার বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষের সঙ্গে আলোচনা করছি। কখনও পরিকাঠামো খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে, কখনও প্রতিরক্ষা খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে। আজ আমার স্বাস্থ্য খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছে।
এ বছর বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে নজিরবিহীন অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। এটা আমাদের পক্ষ থেকে দেশের নাগরিকদের উন্নততর স্বাস্থ্যসেবার প্রতিশ্রুতির প্রতীক। গত বছর দেশের জন্য, সারা বিশ্বের জন্য, সমগ্র মানবজাতির জন্য এবং বিশেষত স্বাস্থ্যখাতের জন্য অগ্নিপরীক্ষার মতো ছিল।
আমি খুশি যে আপনারা সকলে, দেশের স্বাস্থ্য ক্ষেত্র, আমরা সবাই এই অগ্নিপরীক্ষায় সফল হয়েছি। আমরা অনেক জীবন বাঁচাতে পেরেছি। কয়েক মাসের ভেতরেই ভারত যেভাবে দেশের মধ্যে ২৫০০ ল্যাবের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে, কয়েক ডজন পরীক্ষার থেকে আজ আমরা প্রায় ২১ কোটি পরীক্ষার মাইলফলকে পৌঁছতে পেরেছি, যা কেবল সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার মিলেমিশে কাজ করার ফলেই সম্ভব হয়েছে।
বন্ধুরা,
করোনা আমাদের এই শিক্ষা দিয়েছে যে আমাদের শুধু আজকেই মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করলে হবে না, ভবিষ্যতেও এধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য দেশকে তৈরি করতে হবে। সেজন্য স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত প্রতিটি ক্ষেত্রকে শক্তিশালী করে তোলা সমানভাবে প্রয়োজন। চিকিৎসা সরঞ্জাম থেকে ওষুধ পর্যন্ত, ভেন্টিলেটর থেকে টিকা পর্যন্ত, বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে নজরদারি পরিকাঠামো পর্যন্ত, চিকিৎসক থেকে এপিডেমিওলজিস্টস পর্যন্ত, আমাদের সবার দিকে মনোযোগ দিতে হবে যাতে ভবিষ্যতে যে কোনও স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের মুখে দেশ আরও ভালভাবে তৈরি থাকে।
প্রধানমন্ত্রী আত্মনির্ভর সুস্থ ভারত প্রকল্পের পেছনে মূলতঃ এই অনুপ্রেরণাই রয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে গবেষণা থেকে পরীক্ষা এবং চিকিৎসা পর্যন্ত দেশের মধ্যেই একটি আধুনিক বাস্তুতন্ত্র তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আত্মনির্ভর সুস্থ ভারত প্রকল্প প্রতি ক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে। ১৫ তম অর্থ কমিশন এর সুপারিশ গ্রহণ করার পরে, আমাদের যে স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলি। রয়েছে, তাদের পরিষেবা ব্যবস্থার জন্য ৭০ হাজার কোটি টাকারও বেশি দেওয়া হবে। অর্থাৎ, সরকারের লক্ষ্য শুধু স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ করাই নয়, দেশের সুদূর প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা প্রসারিত করাও। আমাদের এও মনে রাখতে হবে যে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যে বিনিয়োগ করা হচ্ছে, তা শুধু স্বাস্থ্যই নয়, কর্মসংস্থানের সুযোগও বৃদ্ধি করবে।
বন্ধুরা,
করোনার সময় ভারতের স্বাস্থ্য ক্ষেত্র নিজের যে শক্তি, যে অভিজ্ঞতা এবং যে ক্ষমতা দেখিয়েছে, তা গোটা বিশ্ব লক্ষ্য করেছে। আজ, সারা বিশ্বে ভারতের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের খ্যাতি এবং ভারতীয় স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের প্রতি ভরসা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। আমাদের এই ভরসাকে মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নিতে হবে। আসন্ন সময়ে, ভারতীয় চিকিৎসকদের চাহিদা সারাবিশ্বে আরও বাড়বে, এবং তার কারন এই ভরসা।
আগামী দিনে ভারতের নার্স, ভারতীয় প্যারামেডিক্যাল কর্মীদের চাহিদা সারাবিশ্বে বাড়তে চলেছে, আপনারা লিখে রাখুন। এই সময়ে ভারতীয় ওষুধ এবং ভারতীয় টিকাগুলি এক নতুন আস্থা অর্জন করেছে। তাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদার জন্যও আমাদের নিজেদের তৈরি করতে হবে। আমাদের চিকিৎসা শিক্ষাব্যবস্থার দিকেও স্বাভাবিকভাবে মানুষ মনোযোগ দেবে, তার ওপর ভরসা বাড়বে। আগামী দিনগুলিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ছাত্রদের ভারতে চিকিৎসা শিক্ষা পড়তে আসার সম্ভাবনা বাড়ছে। এবং আমাদের এতে উৎসাহ দেওয়া উচিত।
করোনার সময় আমরা ভেন্টিলেটর এবং অন্যান্য জিনিস তৈরির ক্ষেত্রেও দক্ষতা অর্জন করেছি। এই জিনিসপত্রের বৈশ্বিক চাহিদা পূরণ করতে ভারতকে দ্রুত কাজ করতে হবে। ভারত কী স্বপ্ন দেখতে পারে যে, সারা বিশ্বে যেই যেই আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতির প্রয়োজন তা কম দামে কীভাবে করা যায়? ভারত কীভাবে গ্লোবাল সাপ্লায়ার হিসেবে উঠে আসতে পারে? এবং সাশ্রয়ী মূল্যের ব্যবস্থা হলে, স্থির ব্যবস্থা হলে, ব্যবহারকারী-বান্ধব প্রযুক্তি হলে আমি বিশ্বাস করি যে ভারত বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে এবং বিশেষ করে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে তো অবশ্যই।
বন্ধুরা,
সরকারের তৈরি বাজেট অবশ্যই অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। তবে আমরা সকলেই মিলে কাজ করলে তবেই তা বাস্তবায়িত হবে।
বন্ধুরা,
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি আমাদের সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি আগের সরকারের চিন্তাভাবনার থেকে একটু আলাদা। এই বাজেটের পরে আপনিও হয়তো এই আলোচনা দেখছেন যেখানে স্বচ্ছতার কথা বলা হবে, পুষ্টির কথা হবে, সুস্থতার কথা হবে, আয়ুশের স্বাস্থ্য পরিকল্পনা থাকবে। এই সমস্ত বিষয়কে আমরা একটি সামগ্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এই ভাবনার জন্যই আগে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রকে সাধারণত বিভিন্ন ভাগ হিসেবে দেখা হতো এবং বিভিন্ন ভাগ হিসেবেই সামলানো হতো।
আমাদের সরকার স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের ধারাগুলিকে আলাদা করে না দেখে সামগ্রিক এবং এককেন্দ্রিকভাবে দেখার চেষ্টা করছে। সেজন্যে আমরা দেশে শুধু চিকিৎসাই নয়, সুস্বাস্থ্যের ওপর নজর করা শুরু করেছি। আমরা রোগ প্রতিরোধ থেকে রোগ নিরাময়ের জন্য এক সামগ্রিক দৃষ্টি নিয়ে চলছি। ভারতকে সুস্থ রাখতে আমরা ৪ টি ফ্রন্টে একসঙ্গে কাজ করছি।
প্রথম ফ্রন্ট হ'ল রোগ প্রতিরোধ করার, যার অর্থ হল অসুখের প্রতিরোধ এবং সুস্থতার প্রচার। স্বচ্ছ ভারত অভিযান হোক, যোগব্যায়ামের প্রতি মনোযোগ দেওয়া হোক, সঠিক পুষ্টি থেকে গর্ভবতী মহিলা ও শিশুদের সময়োপযোগী যত্ন এবং চিকিৎসা, বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহের প্রচেষ্টা, এধরনের সমস্ত পদক্ষেপ এই ফ্রন্টের অংশ।
দ্বিতীয় ফ্রন্ট হ'ল দরিদ্র থেকে দরিদ্রদের জন্য সস্তা এবং কার্যকরী চিকিৎসা পরিষেবা। আয়ুষ্মান ভারত যোজনা এবং প্রধানমন্ত্রীর জন ঔষধি কেন্দ্রের মতো প্রকল্পগুলো এই ফ্রন্টে একই কাজ করছে।
তৃতীয় ফ্রন্ট হ'ল স্বাস্থ্য পরিকাঠামো এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের সংখ্যা এবং গুণমান বৃদ্ধি করা। গত ৬বছর ধরে, এইমস এবং ওই মানের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে দেশের অন্যান্য রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রসারিত করা হচ্ছে। দেশে আরও বেশি করে মেডিকেল কলেজ গড়ে তোলার পেছনেও এই চিন্তাভাবনাই রয়েছে।
চতুর্থ ফ্রন্ট হ'ল, সমস্যা কাটিয়ে উঠতে আমাদের মিশন মোডে, লক্ষ্য ঠিক করে এবং সময়সীমার মধ্যে কাজ করতে হবে। মিশন ইন্দ্রধনুষকে দেশের আদিবাসী ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রসারিত করা হয়েছে।
সারা বিশ্ব ২০৩০র মধ্যে পৃথিবী থেকে টিবি নির্মূল করার সময়সীমা নির্ধারণ করেছে। ভারত টিবির বিরুদ্ধে লড়াই এবং দেশ থেকে টিবি নির্মূল করার জন্য ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করেছে। এবং আমি এই মুহুর্তে টিবির প্রতিও বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার জন্য বলব কারণ এই রোগও সংক্রমিত ব্যক্তির থুতুর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। টিবি প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও মাস্ক পরা, প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এরমধ্যে করোনার সময়ে আমাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, যা একভাবে ভারতের সাধারণ মানুষের কাছেও পৌঁছে গেছে, এখন আমরা টিবি ক্ষেত্রেও সেই একই পদ্ধতিতে আমাদের কাজ করলে, তাহলে আমাদের টিবির বিরুদ্ধে যে লড়াইটা করতে হবে, তা আমরা খুব সহজেই জিততে পারব। এবং সেজন্য করোনার অভিজ্ঞতা, করোনার কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে, এই রোগ প্রতিরোধ করতে ভারতের সাধারণ নাগরিকদের যে অবদান, সে সমস্ত জিনিস দেখে মনে করা হচ্ছে যে সেই একই পদ্ধতিতে আবশ্যিক সংশোধন করে, প্রয়োজনীয় সংযোজন- পরিবর্তন করে টিবির ক্ষেত্রে চালু করলে ২০২৫ এর মধ্যে আমরা টিবি মুক্ত ভারতের স্বপ্ন পূরণ করতে পারব।
আপনাদের মনে আছে হয়তো, আমাদের এখানে বিশেষত উত্তরপ্রদেশের গোরখপুর প্রভৃতি অঞ্চলে, যাকে পূর্বাঞ্চলও বলা হয় , সেই পূর্বাঞ্চলে প্রতি বছর মস্তিষ্কের জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার শিশু মর্মান্তিকভাবে মারা যেতো। সংসদেও এটা নিয়ে আলোচনা হতো। একবার তো এই বিষয়ে আলোচনার সময়, আমাদের উত্তর প্রদেশের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী যোগী জি এই শিশুমৃত্যুর ঘটনায় কেঁদে ফেলেন। তবে যখন থেকে তিনি সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, তিনি একরকম লক্ষ্য স্থির করে কর্মসূচি করেন। সবরকম প্রয়াস করেন। আজ আমরা বেশ ইতিবাচক ফল পাচ্ছি। আমরা মস্তিষ্কের জ্বরের সংক্রমণের প্রতিরোধের ওপর জোর দিয়েছি, চিকিৎসা পরিষেবা উন্নত করেছি এবং এখন তার প্রভাবও দেখা যাচ্ছে।
বন্ধুরা,
করোনার যুগে, আমাদের আয়ুষের সঙ্গে যুক্ত নেটওয়ার্ক দুর্দান্ত কাজ করেছে। আমাদের আয়ুষের পরিকাঠামো কেবল মানবসম্পদের ক্ষেত্রেই নয়, রোগ প্রতিরোধ এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রেও দেশের প্রচুর সাহায্য করেছে।
ভারতের ওষুধ এবং ভারতের টিকার পাশাপাশি, আমাদের মশলা, আমাদের পথ্যেরও যে বিশাল অবদান রয়েছে তা বিশ্ব আজ অনুভব করেছে। আমাদের পরম্পরাগত ওষুধও বিশ্বের মনে নিজের জায়গা করে নিয়েছে। যাঁরা পরম্পরাগত ওষধের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, এর উৎপাদনের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত রয়েছেন, যাঁরা আয়ুর্বেদিক পরম্পরার সঙ্গে পরিচিত; তাঁদের লক্ষ্যও বিশ্বব্যাপী হওয়া উচিত।
বিশ্ব যেভাবে সহজেই যোগাভ্যাসকে গ্রহণ করেছে, তা স্পষ্ট করে যে বিশ্ব সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবার দিকে এগোচ্ছে। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন স্বাস্থ্যসেবার প্রতি সারা বিশ্ব মনোযোগ দিয়েছে। ভারতের প্রচলিত ওষুধ সেক্ষেত্রে খুবই উপকারী হতে পারে। ভারতের যে পরম্পরাগত ওষধ রয়েছে, তা মূলত ভেষজ এবং সেজন্য বিশ্বে এর আকর্ষণ খুব দ্রুত বাড়তে পারে। ক্ষতি সম্পর্কে মানুষ নিশ্চিত যে এতে কোনও ক্ষতিকারক কিছুই নেই। আমরা কি এক্ষেত্রেও প্রয়াস করতে পারি? আমাদের স্বাস্থ্য বাজেট এবং এই ক্ষেত্রে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা কী একসঙ্গে কিছু করতে পারেন?
আমাদের জন্য এটা খুশির বিষয় এবং আয়ুর্বেদে পরম্পরাগত ওষুধে বিশ্বাসী সকল মানুষ এবং সর্বোপরি চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সকলের জন্য গর্বের বিষয় যে করোনার সময় আমাদের পরম্পরাগত ওষধগুলোর শক্তি দেখার পর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভারতে নিজেদের 'গ্লোবাল সেন্টার অফ ট্র্যাডিশনাল মেডিসিন' শুরু করতে চলেছে। ইতিমধ্যে তার ঘোষণা হয়ে গেছে। ভারত সরকারও এর প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। এই যে সম্মান আমরা পেয়েছি তা বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেওয়াও আমাদের দায়িত্ব।
বন্ধুরা,
এখন প্রবেশযোগ্যতা এবং সাশ্রয়যোগ্যতাকে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাওয়ার সময়। তাই স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে। ডিজিটাল স্বাস্থ্য দেশের সাধারণ নাগরিকদের সময়োপযোগী, প্রয়োজনীয় কার্যকর চিকিৎসা পরিষেবা দিতে সাহায্য করবে।
বন্ধুরা,
গত কয়েক বছরে আরও একটি দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর কাজ দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করা হয়েছে। আত্মনির্ভর ভারতের জন্য এই পরিবর্তনগুলো অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আজ, আমরা বিশ্বের এই ফার্মাসি, এই নিয়ে গর্বিত, কিন্তু আজও আমরা অনেক কাঁচামালের জন্য বিদেশের ওপর নির্ভরশীল। আমরা আগেই দেখেছি ওষুধ এবং চিকিৎসা সামগ্রীর কাঁচামালের জন্য বিদেশের ওপর নির্ভরতা, বিদেশের ভরসায় থাকা, আমাদের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের জন্য কত খারাপ অভিজ্ঞতা তৈরি করেছে। এটা ঠিক না। তাই দরিদ্রদের কাছে সস্তা ওষুধ ও সরঞ্জাম সরবরাহ করতে তারা বড় অসুবিধার সৃষ্টি করে। আমাদের এর একটা উপায় খুঁজে বের করতেই হবে। ভারতকে আমাদের এই ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর করে তুলতেই হবে। সেজন্য ইদানিং চারটি বিশেষ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। আপনারা নিশ্চয় পড়েছেন, বাজেটেও এর উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আওতায় দেশের মধ্যেই ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীর কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য প্রোডাক্ট লিঙ্কড ইনসেনটিভ দেওয়া হচ্ছে। তেমনিই ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী তৈরির জন্য মেগা পার্ক তৈরির ক্ষেত্রে ক্ষেত্রেও ভাল সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
দেশের শুধু 'লাস্ট মাইল স্বাস্থ্য অ্যাক্সেসের' প্রয়োজন নেই, ভারতের প্রতিটি কোণে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে, যেমন যখন আমাদের নির্বাচন হয় রিপোর্ট আসে, যেখানে একজন ভোটার থাকলেও সেখানে ভোটকেন্দ্র তৈরি করা হয়; আমি মনে করি স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে, এই দুই ক্ষেত্রে একজন নাগরিক থাকলেও আমরা পৌঁছে যাব। এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই আমাদের এগিয়ে যাওয়া উচিত এবং আমাদের এর ওপর জোর দিতে হবে। আমাদের সবরকম চেষ্টা করতে হবে। এবং তাই আমাদের সকল ক্ষেত্রে হেল্থ এক্সেসের ওপর জোর দিতে হবে।
দেশের সুস্থতা কেন্দ্রের প্রয়োজন, দেশের জন্য জেলা হাসপাতাল দরকার, দেশের দরকার ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট, দেশের প্রয়োজন স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের পরিকাঠামো, দেশের প্রয়োজন আধুনিক ল্যাব, দেশের প্রয়োজন টেলিমেডিসিন, আমাদের প্রতিটি স্তরে কাজ করতে হবে, প্রতিটি স্তরকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে দেশের মানুষ, তাঁরা দরিদ্র থেকে দরিদ্র হোক না কেন, তাঁরা যে প্রত্যন্ত অঞ্চলেই বাস করুন না কেন, তাঁরা যেন সর্বোত্তম সম্ভাব্য চিকিৎসা এবং যথাসময়ে চিকিৎসা পরিষেবা পান। এবং এরজন্য যখন কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার, স্থানীয় নগরপালিকা এবং দেশের বেসরকারি সংস্থাগুলো একসঙ্গে কাজ করবে, তখন এর আরও ভাল ফলাফল হবে।
বেসরকারি ক্ষেত্র, পিএম-জে তে অংশীদারিত্বের পাশাপাশি জন-স্বাস্থ্য পরীক্ষাগারগুলির নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পিপিপি মডেলের সাহায্য করতে পারে। কেন্দ্রীয় ডিজিটাল স্বাস্থ্য মিশন, নাগরিকদের ডিজিটাল স্বাস্থ্য রেকর্ড এবং অন্যান্য কাটিং এজ প্রযুক্তির সঙ্গে ও অংশীদারিত্ব থাকতে পারে।
আমি বিশ্বাসী যে আমরা একসঙ্গে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্বের পথ খুঁজে পাব, সুস্থ এবং সক্ষম ভারতের জন্য স্বনির্ভরতার সমাধান খুঁজে পাব। আমার আপনাদের কাছে অনুরোধ আছে, আমরা যে অংশীদারদের সঙ্গে এই বিষয়ে জ্ঞানী ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করছি , বাজেটে যা হওয়ার হয়েছে। হয়তো আপনাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল, যা এই বাজেটে নেই। তবে এটা শেষ বাজেট নয় ... পরবর্তী বাজেটে দেখতে পাবেন।
এবারের যে বাজেট তৈরি হয়েছে, আমরা আরও কত বেশি তাড়াতাড়ি এর বাস্তবিক রূপায়ণ করতে পারি, পরিষেবা কীভাবে উন্নত করতে পারি, কীভাবে সাধারণ মানুষের কাছে তা তাড়াতাড়ি পৌঁছে দিতে পারি। আমি চাই বাজেটের পরে আপনারা আজ ভারত সরকারের সঙ্গে কথা বলে আপনাদের অভিজ্ঞতা আলোচনা করুন, সংসদে তো আমরা আলোচনা করেই থাকি। প্রথমবার, আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে। বাজেটের আগে যখন আলোচনা হয় তখন পরামর্শ নেওয়া হয়। আমরা যখন বাজেটের পরে আলোচনা করি তখন তা সমাধানের জন্য হয়। এবং সেজন্য আসুন আমরা একসঙ্গে সমাধানগুলি সন্ধান করি, একসাথে আমরা খুব দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছি এবং আমরা সবাই একসাথে চলে যাই। সরকার এবং আপনিও আলাদা নন। আপনিও সরকার এবং আপনিও দেশের পক্ষে। আমরা সকলেই একসাথে দেশের জনগণের দরিদ্রতম লোকদের কথা মাথায় রেখে স্বাস্থ্য খাতে, একটি সুস্থ ভারতের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য এটিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। আপনারা সবাই সময় নিয়েছেন। আপনার গাইডেন্স খুব দরকারী হবে। আপনার সক্রিয় অংশগ্রহণ খুব দরকারী হবে।
এবং সেজন্য আসুন আমরা একসঙ্গে সমাধানগুলো সন্ধান করি, একসঙ্গে আমরা খুব দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাই এবং আমরা সবাই একসঙ্গে এগিয়ে চলি। সরকার এবং আপনারা আলাদা নন। সরকার আপনাদেরই এবং আপনারাও দেশের জন্যই। আমরা সকলেই একসঙ্গে দেশের জনগণের দরিদ্রতম ব্যক্তির কথা মাথায় রেখে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য, সুস্থ ভারতের জন্য এই পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যাব। আপনারা সবাই সময় বের করেছেন। আপনাদের পরামর্শ খুব দরকারী। আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ খুব কাজে আসবে।
আমি আবারও , আপনারা সময় বের করেছেন, সেজন্য আপনাদের কৃতজ্ঞতা জানাই, এবং আপনার মূল্যবান পরামর্শগুলো আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে খুব কার্যকর হবে। আপনারা পরামর্শ দেবেন, অংশীদারিত্ব করবেন, আপনারা প্রত্যাশা করবেন, দায়িত্বও নেবেন। এই বিশ্বাসের সঙ্গে
অনেক অনেক ধন্যবাদ!