মঞ্চে উপস্থিত ডালমিয়া ভারত গ্রুপের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ভাই ডালমিয়া, ‘ইয়োথ ফর ডেভেলাপমেন্ট’ এর মেন্টর মৃত্যুঞ্জয় সিংহ মহোদয়, অধ্যক্ষ ভাই প্রফুল্ল নিগম, রুরাল অ্যাচিভার শ্রী চেতরাম পাওয়ার, এখানে উপস্থিত অন্যান্য সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ এবং আমার প্রিয় নবীন বন্ধুগণ।
এখানে আমি এই উদ্যোগের সমর্থনকারী সারা দেশের কয়েকজন সফল মানুষকে সম্মান জানাতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে করছি। একটি গ্রন্থাগার চালু করা হয়েছে। আর ‘গ্রাম ভারত’ নিয়ে একটি শ্বেতপত্রও জারি করা হয়েছে। আমি আনন্দিত যে আপনারা সবাই গোটা দেশের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে, সেই প্রয়োজনগুলিকে অগ্রাধিকার দিয়ে নিজেদের প্রকল্পগুলি রচনা করেছেন। আপনারা সবাই এখন পর্যন্ত যে সাফল্য পেয়েছেন, তাঁর জন্যে আপনাদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। এই প্রচেষ্টা ও সাফল্যগাথা আপনাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হোক।
বন্ধুগণ, এই সময় দেশ পরিবর্তনের এক গুরুত্বপূর্ণ কালখণ্ড অতিক্রম করছে। গত চারবছর ধরে আপনারাও হয়তো অনুভব করেছেন যে দেশ একবিংশ শতাব্দীর নতুন উচ্চতা স্পর্শ করার জন্য এগিয়ে চলেছে। চারবছরে দেশের গৌরব বৃদ্ধি পেয়েছে, ১২৫ কোটি ভারতবাসী এখন বিশ্বপর্যায়ে নানাভাবে নিজেদের মুখ উজ্জ্বল করছে।
বন্ধুগণ, সেদিন আর নেই যখন অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভারতকে ‘ভঙ্গুরতম পাঁচ’টি দেশের অন্যতম বলে গণ্য করা হতো! আজ, আমরা বিশ্বের দ্রুততম বিকাশমান অর্থনীতির দেশ। ১২৫কোটিভারতবাসীর শক্তিতে বলীয়ান এই দেশ এখন আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে। একটি সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত রেকর্ড পরিমাণ কম সময়ে দারিদ্র্য দূরীকরণে সাফল্য পেয়েছে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, গত দু’বছরে ভারত ৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যসীমার উপরে টেনে তুলতে পেরেছে। এই অসাধ্য সাধন কারা করেছে? দেশের সাধারণ মানুষের আন্তরিক প্রচেষ্টাতেই এটা সম্ভব হয়েছে। সরকার শুধু ইতিবাচক পরিবেশ অ সুযোগ সুবিধা প্রদানের কাজ করেছে। কিন্তু দেশের যুবসম্প্রদায় সেই সুযোগগুলির সদ্ব্যবহারের পাশাপাশি নিজেরাও অনেক নতুন নতুন সুযোগ তৈরি করেছে। আমাদের নতুন ভারত কোনোরকম ফাঁকিবাজি বরদাস্ত করে না।
বন্ধুগণ, নতুন ভারতের সম্পদ হল ১২৫ কোটি ভারতবাসী, কিন্তু এর ভিত্তি হল যুব ভারত। যুবসম্প্রদায় এমন শক্তি, যা পুরনো ব্যবস্থার কর্মপ্রণালী, পুরনো আদব-কায়দা এবং পুরনো ভাবনার ভারমুক্ত। এই নবীন প্রজন্মই সকল ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য প্রেরণা জুগিয়েছে। এই যুবসম্প্রদায়ই আজ উন্নত ভারতের পরিচয় গড়ে তুলছে। কিছু মানুষ পরিবর্তনের জন্য ঋতু পরিবর্তনের অপেক্ষা করেন – কিছু মানুষ পরিবর্তনের সংকল্প নিয়ে ঋতুকে বদলে দেন। আপনারা সেই অপেক্ষার দলে নেই, আপনারা ঋতু পরিবর্তনকারী যুবসম্প্রদায়। কারণ, আপনাদের রয়েছে পরিবর্তন উপযোগী মন, কিছু করে দেখানোর জন্যে ঋতু নয় – মন চাই, ইচ্ছাশক্তি চাই। আজ দেশে এই অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়েই যুবসম্প্রদায় রাষ্ট্রনির্মাণের কাজে লেগে পড়েছে।
বন্ধুগণ, আজকের ভারত ছোট কিছু করেনা। যুবসম্প্রদায়ের আকাঙ্খা ওশক্তি অনুসারে ভারত বড় বড় কাজ করে যা রূপান্তরণমুখী। দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের স্বাস্থ্যসুরক্ষার স্বার্থে ৩ কোটি শিশুকে টিকাকরণ একটি বড় কাজ। কারা এই অসাধারণ কাজ করেছে? নবীন প্রজন্মের চিকিৎসকদের নেতৃত্বে, সেবিকা এবং সহায়ক কর্মীরাই স্বচ্ছাসেবকদের সঙ্গে নিয়ে এই কাজ করেছে। গত চার বছরে ১.৭৫ লক্ষ কিমি গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ একটি বড় কাজ। কারা বানিয়েছে? দেশের নবীন কর্মচারী ও শ্রমিকরা। গত চারবছরে দেশের ১৮হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এখন আমরা প্রত্যেক বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌছনোর অভিযান চালাচ্ছি। ২০১৭-র অক্টোবর থেকেপ্রত্যেক বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌছনোর অভিযান শুরু করে ইতিমধ্যেই আমরা ৮৫ লক্ষ বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পেরেছি। কারা তাঁদের সহনাগরিকদের বাড়ির অন্ধকার দূর করার কাজ করেছে? নবীন ইলেক্ট্রিশিয়ান ও প্রযুক্তিবিদরা। কারা ৪ কোটি ৬৫ লক্ষ বাড়িতে বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস সংযোগ পৌঁছে দিয়েছে? দেশের যুবসম্প্রদায়। আর এসব কাজ তাঁরা নিজেদের স্বার্থে করেনি। প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র মহিলাদের সাহায্যের জন্যে করেছে। গত চার বছরে এক কোটিরও বেশি গৃহহীনকে গৃহনির্মাণ করে তাঁদের হস্তান্তর করা হয়েছে। কারা করেছে? নবীন ইঞ্জিনীয়ার, রাজমিস্ত্রী ও শ্রমিকরা করেছে। সেজন্যেই বলছিলাম যে আজকের ভারত ছোট কিছু করে না, বড় বড় কাজ করে, আর এটা সম্ভব হয় আরেকটি বড় সংখ্যার কারণে, তা হল আজ ভারতে ৩৫ বছর থেকে কম বয়সী ৮০ কোটি দেশবাসী রয়েছে।
যে দেশে এত অপার যুবশক্তি, তাঁকে দেখে যে কারও ঈর্ষা হওয়া স্বাভাবিক। সেজন্যে আমি মনে করি যে আপনারা এই কর্মসূচির সঠিক শিরোনাম বেছেছেন – ‘এবার আমাদের পালা!’ এই ‘আমাদের’ বলতে যেমন কিছু ব্যক্তিকে বোঝায়, তেমন গোটা দেশকেও বোঝায়। বন্ধুগণ, একটা সময় ছিল, যখন শুধু রাজ পরিবারগুলিই শাসন ক্ষমতায় থাকতো। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর, বাবাসাহেব আম্বেদকর আমাদের নতুন সংবিধান উপহার দেওয়ার পরও, গণতান্ত্রিক দেশে নতুন ধরণের রাজপরিবার জন্ম নিয়েছে, স্বাধীন ভারতের রাজনীতিতে তাঁরা তিন প্রজন্ম ধরে রাজত্ব করেছে। প্রশাসন কিছু পরিবারের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। কিন্তু আজ পরিস্থিতি বদলেছে। রাষ্ট্রপতি মহোদয়, উপরাষ্ট্রপতি মহোদয়, এবং আমি নিজে গ্রামীণ পরিবেশ থেকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হতে হতে এতদূর পৌঁছুতে পেরেছি। এটাই প্রমাণ করে যে দেশের জনমনে পরিবর্তন এসেছে। আমার এই বক্তব্য শুধু এই তিনটি পদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। আপনারা বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের দেখুন। যোগী আদিত্যনাথ, ত্রিপুরার বিপ্লব দেব, উত্তরাখণ্ডের ত্রিবেন্দ্রনাথ সিংহ রাওয়াত, মধ্যপ্রদেশের শিবরাজ সিংহ চৌহান, বিহারে নীতিশ কুমার, হরিয়ানায় মনোহর লাল, ঝাড়খণ্ডে রঘুবর দাস – এঁরা সবাই সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। সাধারণ মানুষের জন্যে কাজ করতে করতে তাঁরা এই অব্দি এসেছেন। তাঁরা আজও অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করেন আর গরিব মানুষের সমস্যার প্রতিই অধিক সংবেদনশীল থাকেন। তাঁরা নিজেদের জীবন যুবসম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে তাঁদের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণের স্বার্থে কাজ করতে করতে এগিয়েছেন বলেই তাঁরা জানেন, নতুন ভারতের নবীন প্রজন্ম কী চায়!
আমার নবীন বন্ধুরা, এটা কি পরিবর্তন নয়? আমি মনে করি এটিই আমাদের গণতন্ত্রের সবচাইতে বড় ইতিবাচক পুঁজি ও সংকেত যা এখন শুধু রাজনীতি নয়, সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে। গ্রামাঞ্চল ও ছোট শহরগুলি থেকে আইএএস, আইপিএস পাশ করে প্রশাসনের দায়িত্বে আসা নবীনদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। কাজেই এখন গ্রাম ও ছোট শহরগুলির বড় স্বপ্নগুলিও বাস্তবায়িত হবে। খেলাধুলার ক্ষেত্রে, পড়াশুনার ক্ষেত্রেও এই পরিবর্তন আপনারা লক্ষ্য করে থাকবেন। এখন মাধ্যমিক কিম্বা উচ্চমাধ্যমিকে শুধু বড় শহরের বড় স্কুলগুলির ছাত্রছাত্রীই নয়, গ্রাম ও ছোট শহরের সরকারি স্কুলের ছেলেমেয়েরাও শীর্ষস্থান অর্জন করছে। এটাই পরিবর্তন!
বন্ধুগণ, কয়েকদিন আগেই আসামের এক ১৮ বর্ষীয়া কৃষককন্যা গোটা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আমি হিমা দাসের কথা বলছি। তাঁর দৌড়ে আপনারা নতুন ভারতের শক্তির ঝলক দেখতে পাবেন। এরকম অনেকেই এখন বিভিন্ন খেলায় মেডেল আনছেন, নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়ছেন। তাঁরা সমস্ত প্রতিকূলতা জয় করে দৃঢ় প্রত্যয়ে অনন্য উচ্চতা অতিক্রম করছেন। ইতিমধ্যেই ব্যাডমিন্টন, শ্যুটিং ও ভারোত্তলনের মতো অনেক খেলায় আমাদের দেশের গ্রাম ও ছোট ছোট শহর থেকে উঠে আসা নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের নবীন খেলোয়াড়রা শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় দিয়েছেন। যুব ভারত মনে করে, ‘সবকিছু সম্ভব, সবকিছুই জয় করা যায়’।এই মনোভাবই ভারতের উন্নয়নের চালিকাশক্তি।
আজ আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে যুবসম্প্রদায়ের মনে নতুন আত্মবিশ্বাস সঞ্চারিত হয়েছে। সুযোগের ক্ষেত্রে সাম্য, স্বচ্ছ দুর্নীতিমুক্ত ব্যবস্থা, যথাযথ প্রতিভা চিহ্নিতকরণ, দক্ষ ভারত অভিযান, স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া, স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া, খেলো ইন্ডিয়া, ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র মতো অনেক প্রচেষ্টা নতুন ভারতের বুনিয়াদকে শক্তিশালী করে তুলছে। দেশের প্রয়োজন বুঝে প্রকল্প রচিত হচ্ছে। নবীন প্রজন্ম, ব্যবসায়ী, মহিলা, কৃষক, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের ছোট ছোট সমস্যা দূর করার জন্যে, তাঁদের জীবনকে সহজ করার কাজ করা হচ্ছে।
বন্ধুগণ, ভারতে সড়ক পরিকাঠামো উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে আমরা ভারতমালা ও সাগরমালা প্রকল্প শুরু করেছি। ভারতমালার মাধ্যমে হাজার হাজার কিমি মহাসড়ক নির্মান আর সাগরমালার মাধ্যমে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলির মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী
কয়েক হাজার কিমি তটবর্তী সড়ক নির্মান করা হচ্ছে। দেশে গণ পরিষেবায় ব্যাপক ডিজিটাইজেশন সুনিশ্চিত করতে জেএএম ট্রিনিটি, ক্রমবর্ধমান দুর্নীতিমুক্ত ডিজিটাল লেনদেনের জন্য ভিম অ্যাপ, সারা দেশে অভিন্ন ও সরল করব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে জিএসটি, গরিব, নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের যাতায়াতের জন্য উড়ান প্রকল্পের জন্য বিমান পরিষেবা চালু করেছি। দেশের যুবসম্প্রদায়ের কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা উন্নয়ন সুনিশ্চিত করতে দক্ষ ভারত প্রকল্প শুরু করা হয়েছে। দেশের গ্রামগুলিকে ইতিমধ্যেই ২.৭ লক্ষ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার পেতে ১ লক্ষেরও বেশি পঞ্চায়েতকে আইওয়ে দ্বারা যুক্ত করা হয়েছে। দেশে স্বনির্ভর প্রকল্পগুলিকে উৎসাহ প্রদান করতে মুদ্রা প্রকল্প ও স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া চালু করা হয়েছে। গরিব, নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা ভেবে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প চালু করার পথে আমরা অনেকটা এগিয়ে গেছি। আজ দেশে আপনারা অনেক সহজেই কোনও স্টার্ট আপ বিজনেস নথিভুক্ত করতে পারেন। সরকারি দপ্তরগুলির জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্টার্ট আপগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এভাবেই আমরা নতুন ভারতের স্বপ্ন সফল করার পথে এগিয়ে চলেছি।
বন্ধুগণ, নতুন নতুন ভাবনা ও উদ্ভাবন সর্বদাই ভারতের সাধারণ জীবনযাপনের অংশ ছিল। যুবসম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে এই শক্তিকে রাষ্ট্রনির্মাণে যাতে সর্বাধিক প্রয়োগ করা যায়, তার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা হচ্ছে। নবীন প্রজন্মের আশা-আকাঙ্খা এবং অসীম ক্ষমতাকেই সরকার উদ্ভাবন ও গবেষণার ক্ষেত্রে উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে দেশের কাজে লাগাতে চায়। সেজন্য বিদ্যালয় স্তর থেকেই উদ্ভাবনের আবহ গড়ে তোলার জন্য স্কুল-কলেজগুলিতে উদ্ভাবন অভিযান শুরু করা হয়েছে। ছাত্রদের বিজ্ঞান মনস্কতা বৃদ্ধি এবং তাদের সৃষ্টিশীলতাকে সঠিক মঞ্চ প্রদানের জন্য সারা দেশে ২ হাজার ৪০০-রও বেশি অটল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন প্রকল্পকে মঞ্জুর করা হয়েছে। এই গবেষণাগারগুলিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করানো হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের উদ্ভাবনকে বাস্তবায়িত করতে স্মার্ট ইন্ডিয়া হ্যাকাথন-এর মতো কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে নবীন প্রজন্মকে দেশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করা হয়েছে। এই পথে চলতে চলতে এই ছেলেমেয়েরা ভবিষ্যতে স্টার্ট আপ দুনিয়ায় প্রবেশ করবে।
আমরা দেখেছি যে, কালো টাকা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের যে কোনও পদক্ষেপ এবং জিএসটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ নমুনা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য এগিয়ে এসেছিলেন। এটাই পরিবর্তিত পরিবেশের প্রমাণ। আমার মনে আছে, যখন ডিজিটাল লেনদেন শুরু করার কথা হচ্ছিল, তখন কিভাবে দেশের বড় বড় দিগ্গজরা বলছিলেন যে, ভারতের মতো গরিব দেশে ডিজিটাল লেনদেন সফল হতে পারে না। কিন্তু আমাদের যুবসম্প্রদায় তাঁদের এই ধারণাকে ভ্রান্ত বলে প্রমাণ করেছে। তাদেরই উৎসাহ ও উদ্দীপনায় দেশে রেকর্ড পরিমাণ লেনদেন হয়।
বন্ধুগণ, আমাদের উদ্দেশ্যই হ’ল উন্নয়ন, আমরা জনগণের আশা-আকাঙ্খার ওপর সংবেদনশীল। সেজন্য প্রয়োজন ছিল সরলীকরন। আমরা লালফিতের ফাঁস মুক্ত করা ও নীতি সরলীকরণের মাধ্যমেই দেশে রেকর্ড পরিমাণ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আনতে পেরেছি, অনেক বেশি শিল্প স্থাপন ও কর্মসংস্থান করতে পেরেছি। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাওয়ায় যুবসম্প্রদায়ের ক্ষমতায়ন হয়েছে ও তাঁদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হয়েছে। প্রত্যেক নাগরিকের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হলে দেশের ভবিষ্যত ও বিশ্ব মঞ্চে ভারতের মুখ উজ্জ্বল হবে।
বন্ধুগণ, আমরা এমন প্রজন্মের মানুষ যাঁদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ ও আত্মবলিদানের সৌভাগ্য হয়নি। কিন্তু রাষ্ট্রনির্মাণের জন্য কোনও কিছু করে বাঁচার সুযোগ অবশ্যই হয়েছে। ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে, স্বাধীনতা সংগ্রামেও দেশের যুবসম্প্রদায়ই সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাঁদের উৎসাহ ও অদম্য সাহসই স্বাধীনতা সংগ্রামে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেছে। আজ নতুন ভারতের জন্য আপনাদের সেরকম এগিয়ে আসতে হবে। আপনারা সবাই মিলে এমন নতুন ভারত গড়ে তুলবেন, যার স্বপ্ন আমাদের আত্মবলিদানকারী স্বাধীনতা সংগ্রামীরা দেখে গেছেন।
বন্ধুগণ, নতুন ভারত হচ্ছে সেই দেশ, যেখানে আপনারা নিজেদের সুনামকে ওপরে তুলে ধরবেন। পারিবারিক নাম ও ক্ষমতা থেকে সেই দেশে আপনাদের ভাবনা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। সমস্ত বাধা-বিপত্তিকে জয় করে সকলের জন্য সুযোগ তৈরি হবে। লক্ষ-কোটি মানুষের আকাঙ্খা পূরণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, হাতে গোনা কয়েকজনের উন্নতির বদলে সকলের জন্য উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করা, যে দেশে সবকিছু সরকারি হওয়ার বদলে সরকার সকলের হয়ে উঠবে।
যেখানে নির্বোধ ঘৃণার স্থান নেবে আশার শক্তি।
যেখানে জনগণকে তাঁদের ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়ার বদলে ১২৫ কোটি ভারতবাসী নিজেদের ভবিষ্যৎ রচনা করবে – এটাই আমাদের নতুন ভারত।
বন্ধুগণ, আপনারা ভারতের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। দেশ চায় আপনাদের সহযোগিতা, শুধু শোনার জন্য নয়, আমাদের পরামর্শ দেওয়ার মতো, আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার মতো যুবসম্প্রদায় চাই।
আপনারা সফল হলে দেশ সফল হবে। আপনাদের সংকল্প সিদ্ধ হলে দেশের সংকল্প সিদ্ধ হবে। সেজন্য আরেকবার আপনাদের এই অসাধারণ উদ্যোগের জন্য ‘ইয়ুথ ফর ডেভেলপমেন্ট’-এর গোটা টিমকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। যাঁরা আজ সম্মানিত হলেন, তাঁদেরকে বিশেষভাবে অভিনন্দন জানাই। কারণ, তাঁদের প্রতিটি কাজ নিয়ে এখন সারা দেশে আলোচনা হবে। তাঁদের কাজ নিজের ও অন্যদের জন্য প্রেরণা যোগাবে। আর আমি মনে করি, শব্দ থেকে কৃতির শক্তি বেশি। আপনারা এমন কর্মযোগী, যাঁরা দূরদূরান্তের গ্রাম ও বস্তিগুলির মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। যে কাজ হাতে নিয়েছেন, তা সম্পূর্ণ করে দেখিয়েছেন। তারই ফলস্বরূপ আজ আপনারা সম্মানিত হয়েছেন। আর ‘স্বাংতঃ সুখায়’ – এর প্রেরণা আধ্যাত্মিক শক্তির চেয়েও অনেক গুণ বেশি হয়। এই স্থিতি অর্জনের জন্য আমি সেই সম্মানিত নবীনদের হৃদয় থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।