শ্রদ্ধেয়া সুমিত্রা তাইজি (জ্যেঠিমা), আমার মন্ত্রী পরিষদের সদস্য শ্রীআনন্দ কুমার, ডেপুটি স্পিকার শ্রী থাম্বিদুরাইজি, দেশের নানাপ্রান্ত থেকে আগত সকলরাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ মহোদয়, সমস্ত রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, সংসদ সদস্যএবং বিধায়করা,
আমি সবার আগে এই কর্মসূচি আয়জনের জন্য সুমিত্রাজির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেচাইব। আমাদের সাধারণ জীবনে যত অভিলাষ থাকে, তার মধ্যে তীর্থভ্রমণ অন্যতম, আমরাসেখানে বাবা-মা’কে নিয়ে যেতে চাই। আর যখন বড় তীর্থ ক্ষেত্রে যাই, সেখানে গিয়েজীবনে বা পরিবারের জন্য কিছু না কিছু করারসংকল্পও নিই। প্রত্যেকেই তীর্থ ক্ষেত্রে গিয়ে নিজের মতো করে সংকল্প গ্রহণ করেন।
আজ আপনারা নিছকই কোনও সাধারণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন না। কল্পনা করুন তো– আপনারা কোথায় বসে আছেন? এটা সেই সংসদ ভবন যেখানে আমি ২০১৪ সালের মে মাসেপ্রথমবার প্রবেশের সুযোগ পেয়েছি। তার আগে আমার সেন্ট্রাল হল দেখার সৌভাগ্য হয়নি।মুখ্যমন্ত্রীরা এখানে আসতে পারেন, মুখ্যমন্ত্রীদের এখানে আসতে কোনও বাধা নেই,কিন্তু আমার কখনও আসার সৌভাগ্য হয়নি। যেদিন দেশবাসী বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা সহকারেআমার দলকে জেতালো, তখন নেতা নির্বাচন উপলক্ষে প্রথমবার এই সেন্ট্রাল হল-এএসেছিলাম। এটা সেই সেন্ট্রাল হল, যেখানে সংবিধান সভার বিস্তারিত বৈঠক হয়েছিল, কয়েকবছর ধরে হয়েছিল। আপনারা যেখানে বসে আছেন, সেখানে কখনও হয়তো পণ্ডিত নেহরু বসেছেন,কখনও বাবাসাহেব আম্বেদকর বসেছেন, কখনও সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল বসেছেন, রাজাগোপালাচারী বসেছেন, ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ বসেছেন কিংবা হয়তো কমা মুন্সি বসেছেন।
অর্থাৎ দেশের সেই মহাপুরুষেরা, যাঁদের নাম শুনলেই আমাদের অন্তরে একটি নতুনপ্রেরণা সঞ্চারিত হয় – তাঁরা কখনও এখানে বসতেন, সংবিধান সভায় আলোচনা করতেন, সেইস্থানে আজ আপনারা বসে আছেন। এই ভাবনা নিজে থেকেই আমাদের মনে একটি পবিত্রতার ভাবএনে দেয়।
সংবিধান প্রণেতারা এবং বিশেষ করে বাবাসাহেব আম্বেদকর আমাদের সংবিধানকে একটিসামাজিক নথি রূপে বর্ণনা করেছেন। আর একথা সত্যি, বিশ্বে আমাদের সংবিধানেরবৈশিষ্ট্য শুধু তার ধারাগুলির জন্য নয়, অধিকারগুলির জন্য নয়, কর্মবিভাজনের কারণেনয়, কিন্তু শতাব্দীর পর শতাব্দীকাল ধরে যে কুসংস্কারগুলির করালগ্রাসে দেশআষ্টেপিষ্টে বাঁধা পড়েছিল, সেগুলি থেকে মুক্তি প্রদানের নানা প্রচেষ্টা থেকে,মন্থন থেকে যে অমৃত বেরিয়ে এসেছে, তা আমাদের সংবিধানে শব্দ রূপে স্থান পেয়েছে; তাহল সামাজিক ন্যায়ের পক্ষে শব্দাবলী। এখন আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে যে সামাজিক ন্যায়েরকথা আলোচনা করি, তা সমাজের অবস্থা পর্যন্তই সীমিত থাকে, প্রয়োজনও রয়েছে, কিন্তুকখনও এমনও মনে হয় যে সামাজিক ন্যায়ের আরেকটি দিকও রয়েছে।
আমাকে কেউ বলুন, একটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে, কিন্তু পাশের বাড়িতেবিদ্যুৎ নেই – ঐ বাড়িটিতেও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করাটা কি আমাদের সামাজিক দায়িত্ব?একটি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে, কিন্তু পাশের গ্রামে বিদ্যুৎ নেই – এক্ষেত্রেওপাশের গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়াটা কি সামাজিক ন্যায়ের পরিধির মধ্যে পড়ে না? একটিজেলা বেশ সম্পন্ন এবং অনেক এগিয়ে গেছে, কিন্তু পাশের পিছিয়ে পড়া জেলাটিকে এর সমানউন্নত করার দায়িত্ব কি আমাদের ওপর বর্তায় না? আর সেজন্য সামাজিক ন্যায়ের সিদ্ধান্তআমাদের সবাইকে এই দায়িত্ব নির্বাহের প্রেরণা যোগায়।
হতে পারে যে দেশ – যতটা সবার আকাঙ্খা ছিল – ততদূর এগোতে পারেনি কিন্তুআমাদের রাজ্যে পাঁচটি জেলা খুব উন্নত আর তিনটি যদি পিছিয়ে থাকে, তার মানে ঐ পাঁচটিজেলায় উন্নয়নের আলো পৌঁছে দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের তো আছেই, বাকি তিনটিকেও চেষ্টাকরলে সেই মাত্রায় পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে। রাজ্যের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে কয়েকটি জেলাঅগ্রগতি করার মানে হ’ল সেই রাজ্যে ততগুলি ক্ষেত্রে সার্বিক উন্নয়নের সম্ভাবনারয়েছে। শুধু যে জেলাগুলি পিছিয়ে রয়েছে, সেগুলিকে চিহ্নিত করে আগে সেগুলিকে এগিয়েনিয়ে যেতে হবে!
এদেশে আমাদের স্বভাব হ’ল স্কুলের ছাত্রদের মতো, ভূগোল দুর্বল হলে তারাভাবে, অঙ্কে এত জোর লাগাব যে ভূগোলে নাম্বার কম পেলেও অঙ্কের বাড়তি নম্বর দিয়েফার্স্ট ক্লাস সুনিশ্চিত করে নেবে! আমরা প্রত্যেকেই এভাবেই বড় হয়েছি! রাজ্যগুলিতেযখন কোনও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনও লক্ষ্য পূরণের কথা বলা হয়, কেন্দ্রীয় সরকারেওযখন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লক্ষ্য পূরণে চাপ আসে, তখন যাঁরা দ্রুত কাজ করতে পারেন,যাঁরা সারা বছর চাপ নিয়ে কাজ করেন, তাঁদেরকেই আরও চাপ দেওয়া হয় – করে দাও ভাই!পরিণাম স্বরূপ, যাঁরা ভালো কাজ করেন, তারাই আরও ভালো কাজ করার দক্ষতা অর্জন করতেপারেন, পরিসংখ্যান অনুসারে ফল ভালো হতে থাকে। কিন্তু যাঁরা পিছিয়ে ছিলেন, তাঁদেরকেকাজের সুযোগ না দেওয়ায়, তাঁরা আরও পিছিয়ে পড়তে থাকেন। আর সেজন্য কৌশলগতভাবে আমাদেরনিজেদের উন্নয়নের মডেলের ক্ষেত্রে আরও পুঙ্খানুপুঙ্খতার দিকে যাওয়া প্রয়োজন হয়েপড়েছে। আমরা রাজ্যগুলির পক্ষ থেকে দেখলে ভালো হয়েছে। এক প্রতিযোগিতামূলকসহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয়বাদের পরিবেশ গড়ে উঠেছে। আর আমি এই দৃশ্যকে সম্মানকরি। এই দৃশ্য যুক্তরাষ্ট্রীয়বাদের জলজ্যান্ত উদাহরণ – যেখানে সংসদ সদস্যরা রাজ্যবিধানসভার বিধায়কদের পাশে বসে তাঁদের নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করছেন,চিন্তাভাবনা করছেন। এই অবসরে যুক্তরাষ্ট্রীয়বাদ একটি নতুন মাত্রা পেয়েছে।
এই সহযোগিতামূলক যুক্তরাজ্যবাদের ফলিত প্রয়োগে এখন রাজ্যগুলির মধ্যে তুলনারপরিবেশ গড়ে উঠেছে আর কোনও রাজ্য পিছিয়ে থাকলে সমালোচনা হচ্ছে। তারাও তখন ভাবেন যে,না আমাদেরও এখন কিছু করতে হবে! এই আবহ সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু দেশ যা যা প্রত্যাশাকরে, সেসব প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে আমাদের সেই মাপকাঠির হিসাবে এবং সেই এককেরহিসাবে এগিয়ে যেতে হবে।
পরিচ্ছন্নতা অভিযান থেকে একটা অভিজ্ঞতা আমরা ইতিমধ্যেই অর্জন করেছি। যখনথেকে পরিচ্ছন্নতার ক্রমপর্যায় নির্ধারণ শুরু হয়েছে – নগরগুলির প্রতিযোগিতা,মহানগরগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, এই প্রতিযোগিতায় কোনও নগর পিছিয়ে পড়লেসেই নগরের মানুষই আওয়াজ দিতে থাকেন যে, ভাই কী হ’ল, অমুক নগর তো এগিয়ে গেছে, আমরাকেন অপরিচ্ছন্ন রয়ে গেছি? এই ভাবনা থেকে সারা দেশে একটি আন্দোলন গড়ে উঠেছে, একটিপ্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
ভেবে দেখছি, দেশ তো অনেক ক্ষেত্রেই ভালো উন্নতি করছে, তবুও দেশ কেন এগোচ্ছেনা? পরিস্থিতি কিভাবে বদলাবে? একবার মনে হয়, আমরা কেন সেই জেলাগুলিকে বেছে নেব না,যেগুলিতে সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী উন্নয়ন মানের পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে? অনেকক্ষেত্রেই ২০১১-র পরিসংখ্যান রয়েছে, তারপর আর পরিগণনা হয়নি, কিন্তু যে পরিসংখ্যানলিপিবদ্ধ রয়েছে তার ভিত্তিতেই পরিকল্পনার কাজ করা যেতে পারে। ন্যূনতম ৪৮টিপ্যারামিটার স্থির করে দেখা যেতে পারে যে, কোন্ কোন্ জেলা পিছিয়ে আছে? এভাবেদেখতে গিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা হয়, যে জেলাগুলি ৫-১০টি প্যারামিটারে পিছিয়ে, অধিকাংশক্ষেত্রেই সেগুলি অন্য প্যারামিটারেও পিছিয়ে আছে।
আমরা দেখছি যে, রাজ্যের মধ্যেই ১০টি জেলা পরিশ্রম করে এগিয়ে গেছে, যে ৫টি জেলা পিছিয়ে আছে, তারাঅগ্রগণ্য ১০টির কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করে এগিয়ে যাওয়ার বদলে সেগুলিকে পেছনে টানারপ্রচেষ্টা চালায়। আমরা তাদেরকে এই নীতি থেকে বের করে আনার চেষ্টা চালাচ্ছি। প্রায়এক বছর ধরে এদের জন্য হোমওয়ার্কের কাজ চলেছে। ভিন্ন ভিন্ন স্তরে আলোচনা, মিটিং,চিহ্নিতকরণের পর দেখা গেল যে – সারা দেশে এমন জেলার সংখ্যা ১১৫টি। সেই জেলাগুলিরজেলাশাসকদের দু’দিনের জন্য দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়। তাঁদেরকে নিয়ে দু’দিনেরকর্মশালা হয়, তাঁদের সমস্যাগুলি, প্রতিবন্ধকতাগুলি বোঝার চেষ্টা করা হয়।
এখন রাজনীতিতে আমাদের যেমন স্বভাব, সেখানে আপনি ও আমি আলাদা নই, সবাই এক।আমাদের স্বভাব হ’ল – প্রথমেই বাজেট বুঝতে চাই, টাকা কোথায়? কিন্তু যদি বোঝারচেষ্টা করি যে, বরাদ্দকৃত অর্থেই একটি জেলা এগিয়ে যেতে পারলে, সমপরিমাণ অর্থ ওপরিকাঠামো নিয়ে অন্যরা পিছিয়ে রইল কেন? অর্থাৎ অর্থ ও পরিকাঠামো এর মূল কারণ নয়,প্রশাসন এর জন্য দায়ী, নেতৃত্ব দায়ী, সমন্বয় দায়ী, কার্যকরী প্রয়োগ দায়ী, আরসেজন্য আমরা এই বিষয়গুলিকে কিভাবে বদলাব? এই বিষয় নিয়ে আমি সমস্ত জেলাশাসকদেরসঙ্গে আলোচনা করেছি, কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা তাঁদের সঙ্গেবসেছেন।
একটি বিষয় আমার মাথায় আসে, আমি কারও সমালোচনা করার জন্য বলছি না, কিন্তু আজএমন মানুষেরা একই সভাঘরে বসেছেন, তাঁদের সামনে আমি মন খুলে কথা বললে খারাপ কিছুহবে না। সাধারণত, জেলাশাসকদের বয়স হয় ২৭-২৮-৩০ বছরের কাছাকাছি। নবীন আইএএসঅফিসারেরা এমন বয়সেই সাধারণত জেলাশাসক হন। কিন্তু এই ১১৫টি চিহ্নিত জেলারজেলাশাসকদের দেখে আমি অবাক হই। তাঁদের ৮০ শতাংশেরই বয়স ৪০ বছরের বেশি, কারও কারওবয়স তো এমনকি ৪৫-ও ছিল।
এখন আমাকে বলুন, ৪০-৪৫ বছর বয়সী আধিকারিকরা বড় শহর থেকে দূরে কোনওপ্রান্তিক জেলায় থাকলে, তাঁদের মাথায় সবসময়েই বড় হয়ে ওঠা ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া,তাঁদের চাকরিবাকরির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা থাকবে কিনা! দ্বিতীয়ত, এরা অধিকাংশইযেহেতু স্টেট ক্যাডারের প্রোমোটি অফিসার, তাঁদেরকে ইচ্ছে করে পিছিয়ে পড়াজেলাগুলিতে দেওয়া হয়, কাজ চালিয়ে নেওয়ার জন্য। সমস্যা সেখান থেকেই শুরু হয়। আমরাসবাই মিলে যদি ঠিক করি যে, আগামী ৫ বছর ঐ ১১৫টি পিছিয়ে পড়া জেলায় নবীন জেলাশাসকদেরনিয়োগ করব, যাঁদের কাজ করার উৎসাহ ও উদ্দীপনা রয়েছে, যাঁরা প্রাণশক্তিতে ভরপুর;আপনারা দেখবেন যে, সবকিছু বদলাতে শুরু করবে।
আমি মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গেও কথা বলছি, অনুরোধ করছি যে, ঐ নবীনদের ওপর ভরসারেখে তাঁদের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিন। নাহলে সেই চিরাচরিত মনোভাবই চলতে থাকবে,এমন জেলায় বদলির খবর শুনেই সহকর্মী আধিকারিকরা বলেন, অমুক জেলায় পোস্টিং হয়েছে?তোর মৃত্যু আসন্ন। কী করবি? কোনও রাজনৈতিক দাদাকে চিনিস? তোকে কেন ওখানে ফেলে দিল?এই মানসিকতার শিকার হয়ে পড়েন।
একই পরিকাঠামো, মানবসম্পদ ও পুঁজি সম্বল করে একটি জেলায় টিকাকরণের কাজ খুবভালো হচ্ছে কিন্তু পাশের জেলায় হচ্ছে না কেন? কিসের অভাব? অভাবটা হ’ল কর্মোদ্দমের,যথাযথ পরিকল্পনার, জনগণের অংশগ্রহণের। অভাবটা হ’ল টিকাকরণ না হওয়া, টিকাকরণ নাহওয়ায় রোগের দরজা খুলে যায়, দরজা খুলে গেলে রোগগুলি ঢুকে পড়ে; আর সেগুলি একের পরএক ক্রমবর্ধমান হয়ে পড়ে।
স্কুলছুটের সমস্যা? শিক্ষক আছে? – আছে! অট্টালিকা আছে? – আছে! বাজেট আছে? –আছে! তবুও কোথাও স্কুলছুটের সমস্যা কম আর কোথাও বেশি কেন? আসলে বিষয়টা পরিকাঠামো ওঅর্থের যোগানে সীমাবদ্ধ নেই।
দ্বিতীয়ত, আপনারা হয়তো দেখেছেন যে, যেখানে আধিকারিকরা এবং স্থানীয় নেতৃত্বহাতে হাত মিলিয়ে ‘মিশন মোড’-এ নেতৃত্ব দিয়েছে, সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিতে পেরেছে;চোখের সামনেই কত বড় সাফল্য এসেছে!
গণঅংশীদারিত্ব এবং একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে – আমাদের পঞ্চায়েত প্রধান থেকেপঞ্চায়েত সদস্যরা, পৌরসভার প্রধান থেকে পৌর প্রতিনিধি, জেলা পঞ্চায়েত, তহশীলপঞ্চায়েত, এমনি যে যেভাবে জনপ্রতিনিধিত্বের সুযোগ পেয়েছেন, বিধায়ক হন কিংবা সাংসদ,যাঁর এলাকার মধ্যে এমনসব পিছিয়ে পড়া প্রত্যাশাময় জেলাগুলি রয়েছে, আমরা সবাই যদি সবদিকথেকে মিলেমিশে কাজ করি, জনগণের অংশীদারিত্ব অর্জনে সমর্থ হই, তা হলে দেখবেন,অতিদ্রুত পরিবর্তন আসতে শুরু করবে।
কখনও কখনও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানতে হয় যে পরিবর্তন আসে – কোনও একজনসুস্থসবল দৌড়ঝাঁপ করা মানুষ; যিনি ঠিকঠাক খাবার খান, পারিবারিক জীবন ঠিকঠাক,অন্যান্য সবকিছু ঠিক থাকা সত্ত্বেও ধীরে ধীরে তাঁর ওজন কম হতে থাকে। প্রথমে তিনিসবাইকে বলেন, নিজেও বিশ্বাস করেন যে, হয়তো ডায়েটিং করছেন বলে তাঁর ওজন কমছে, আগেরচেয়ে কিছুটা হাল্কা হয়েছেন!
তারপর, একদিন শারীরিক দুর্বলতা শুরু হলে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসককে দেখানো হলেতিনি রক্ত পরীক্ষা করিয়ে তার রিপোর্ট দেখে বলেন – মধুমেহ হয়েছে, ডায়াবেটিস! এতদিনেগিয়ে স্পষ্ট হয় যে, কেন সুস্থসবল শরীর ক্রমে ভেঙ্গে পড়ছিল। এবার ডাক্তারের পরামর্শঅনুযায়ী ওষুধ খাওয়া শুরু করলেও ডায়াবেটিস থাকবেই, একেবারে সেরে যাবে না, কিন্তুওষুধে নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়বে, অন্যান্য সমস্যাও শুধরাতে শুরু করবে।
আমি মনে করি যে, আমাদের ঐ ১১৫টি জেলারও একই অবস্থা। আমাদের খতিয়ে দেখতেহবে, কোন্ রোগে এগুলি এরকম দুর্বল হয়ে পড়েছে, সেই রোগগুলির চিকিৎসা করাতে হবে। তাহলেই দেখবেন কিভাবে পরিবর্তন আসতে শুরু করবে!
এই ১১৫টি জেলার মধ্যে ৩০-৩৫টিতে অতিবাম সন্ত্রাসবাদের উপদ্রব থাকায় আমি কেন্দ্রীয়স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে বলছি, যাতে এগুলির উন্নয়নে বিশেষ নজর দেওয়া হয়। কিন্তু বাকি৮০-৯০টি জেলায় এই ধরনের কোনও সমস্যা না থাকায় সেগুলির উন্নয়নযজ্ঞ আমরা আরও সহজে এগিয়েনিয়ে যেতে পারব! এখন এই জেলাগুলির উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার পরিকল্পনা কেমন হওয়াউচিৎ? জেলার মধ্যে একটি তহশীলে হয়তো টিকাকরণের কাজ খুব ভালো হয়েছে, অন্য একটিতহশীলে হয়তো স্কুলছুট ছাত্রছাত্রীদের আবার বিদ্যালয়ে ফেরানোর কাজে ইতিবাচক পরিবেশসৃষ্টি হওয়ায় সাফল্য এসেছে। কিন্তু অন্য যে ক্ষেত্রগুলিতে ভালো কাজ হয়নি, সেগুলিরক্ষেত্রেই বেশি জোর দিতে হবে।
একবার জোর দিয়ে দেখুন, তারপর দেখবেন আর এত পরিশ্রম করতে হচ্ছে না! এই ১১৫টিজেলার উন্নয়নে কার দুর্বলতা কতটা, সে সম্পর্কে আপনাদের সামনে নিতি আয়োগের কর্মীরা উপস্থাপনাদেবেন। আমি দু’দিন আগেই সকল মন্ত্রীদের সঙ্গে বসে এক প্রেজেন্টেশান দেখেছি। আমিবিগত ২০ বছর ধরে অনেক সরকারি প্রেজেন্টেশন দেখছি, কিন্তু এটি এত সঠিক, এত স্পষ্টআর একজন সাধারণ মানুষও বুঝতে পারবেন যে এই সমস্যার এরকম সমাধান হতে পারে! নিতিআয়োগের এত সুন্দর প্রেজেন্টেশানটি আমাদের দেখিয়েছেন শ্রী অমিতাভ কান্ত। এই উপস্থাপনাআমাকে উৎসাহী করে তুলছে, আপনাদেরকেও এটি দেখানো হবে।
এতে একটি বিষয় রয়েছে যে, আপনার এই জেলা, এই বিষয়ে আপনার রাজ্যের অন্যান্যজেলার গড় পরিস্থিতি থেকে এতটা পেছনে আর আপনার রাজ্যে যে জেলায় সবচাইতে ভালো কাজহয়েছে, তার থেকে আপনারা এতটা পিছিয়ে। এর চারটি মাপকাঠির নিরিখে একে বারবার দেখাহয়েছে। আপনাদেরও মনে হবে যে, আমার দেশের ২০০টি জেলা এগিয়ে যেতে পারলে আমার জেলাওএগিয়ে যেতে পারে। আমার দেশের সহস্রাধিক তহশীল এগিয়ে যেতে পারলে আমার তহশীলও এগিয়েযেতে পারে! আর একথা যদি মেনে চলি, এখানে সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতারা বসে আছেন!একটা সময় ছিল, যখন দেশে কট্টর পন্থার রাজনীতি, দিন-রাত রাজনীতি, আন্দোলনেররাজনীতি, বয়ানের রাজনীতি, সংঘর্ষের রাজনীতি অনেক প্রভাবশালী ছিল। এখন সময় বদলেছে,আপনি শাসকদলের হন কিংবা বিরোধী দলের, মানুষের জন্য কাজ করছেন কি করছেন না, সাধারণমানুষ সেদিকে নিয়মিত খবর রাখেন। আপনি কতবার লড়াই করেছেন, কতবার প্রশাসনে নেতৃত্বদিয়েছেন, কতবার জেলে গিয়েছেন, এসব কিছু ২০ বছর আগে আপনার রাজনৈতিক জীবনেগুরুত্বপূর্ণ ছিল! কিন্তু আজ পরিস্থিতি বদলে গেছে। যাঁরা বারবার ভোটে জিতে আসেন,তাঁরা কেমন করে আসেন, এটা বিশ্লেষণ করলে দেখবেন, তাঁদের জীবনে রাজনীতির বাইরে,শাসন-লড়াই থেকে আলাদা দু-একটা এমন জিনিস আছে, যা তাঁদেরকে চিহ্নিত করে। তিনি হয়তোনিয়মিত হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের দেখে আসেন বা অন্য বিশেষ কিছু করেন, যা দিয়েমানুষের সঙ্গে তাঁর নিবিড় আবেগের সম্পর্ক রয়েছে; সেই ছবি দিয়েই তাঁর বাকি রাজনীতিচলে।
আমাদের কট্টর রাজনীতি থেকে দূরে সরে আসতে হবে। একথা আমি বলি না, সমাজ বলছে।সমাজে যে সচেতনতা এসেছে, তাই আমাদেরকে এই দিকে পরিচালিত করতে চাইছে। জনগণ জানতেচান যে, তাঁদের দুঃখ-শোকে কে বা কারা তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন! তাঁদের জীবনেপরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে কারা তাঁদের পাশে থাকেন! এসব বিষয় আজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণহয়ে উঠেছে। আমরা নিজেদের এলাকায় কন্যাসন্তানদের শিক্ষা বিস্তারে ১০০ শতাংশ চেষ্টাচালাচ্ছি কিনা! আমরা নিজের চেষ্টায় একটি বিষয়ে পরিবর্তন আনতে পারলে, ব্যবস্থাও পরিবর্তিতহতে শুরু করবে।
কেউ বলবেন যে, ইন্দ্রধনুষ যোজনায়, টিকাকরণের তারিখে আমি ময়দানে থাকব,স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে নেব, আমার এলাকার অন্য সমাজকর্মীদেরও মাঠে নামতে উদ্বুদ্ধকরব, একত্রিত করব। ইন্দ্রধনুষ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা নিজের নিজের এলাকায়টিকাকরণের কাজ সম্পূর্ণ করব। আগে আমাদের দেশে প্রতি বছর ৩০ শতাংশ, ৪০ শতাংশ, ৫০শতাংশ টিকাকরণ হ’ত। এমনটা নয় যে সরকার খরচ করত না! বাজেট বরাদ্দও হ’ত। গুলাম নবীজিযখন স্বাস্থ্য মন্ত্রক দেখতেন, তখনও এই বাবদ যথেষ্ট বাজেট বরাদ্দ হ’ত। কিন্তুগণঅংশীদারিত্বের অভাবে কাজ আটকে যেত।
ইন্দ্রধনুষ যোজনা অনুসারে একটি বিশেষ প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে, এখন টিকাকরণপ্রায় ৭০-৭৫ শতাংশে পৌঁছেছে। কিন্তু আমরা কি একে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছে দিতেপারব? একবার ৯০ শতাংশে পৌঁছে গেলে ১০০ শতাংশ পৌঁছতে আর বেশি সময় ও পরিশ্রম লাগবেনা! এই টিকাকরণে আমরা সাফল্য পেলে গর্ভবতী মহিলা আর শিশুদের পোলিো মুক্ত করা যাবে,অন্যান্য বিপজ্জনক সব রোগ থেকেও মুক্তি প্রদান সম্ভব হবে।
ব্যবস্থা আছে, প্রকল্প আছে, বাজেট বরাদ্দও আছে। নতুন করে বাজেট বরাদ্দেরওপ্রয়োজন নেই। যেরকম অর্থের যোগান আছে, অন্যান্য যোগাড়যন্ত্র যেরকম আছে, প্রশিক্ষিতমানবসম্পদ যা আছে তাই দিয়ে ব্রত হিসাবে কাজ করলে উত্তম পরিণাম সাধন সম্ভব। এই একটিভূমিকার সঙ্গে এই ‘অভিলাষী’ জেলাগুলি, আমি ওদের ‘পশ্চাদপদ’ শব্দটি করতে মানা করছি,অন্যথা সেখান থেকেই পিছিয়ে পড়ার মানসিকতার সূত্রপাত ঘটে।
আপনারা হয়তো জানেন যে, আগে আমাদের দেশের রেলে তিনটি ক্লাস ছিল। ফার্স্ট,সেকেন্ড এবং থার্ড ক্লাস। কিন্তু আজ থেকে দু-তিন দশক আগে সরকার থার্ড ক্লাস বাতিলকরে দেয়। কামরাগুলিতে কোনও পরিবর্তন আসেনি, কিন্তু মানসিকতায় অনেক পরিবর্তন এসেছে।যে যাত্রী তৃতীয় শ্রেণীর কামরায় বসতেন, তাঁদের প্রতি একটা ঘৃণ্যভাব কাজ করত, আচ্ছাতিনি থার্ড ক্লাসে যাচ্ছেন? এখন সেই পরিবর্তন এসে গেছে। কামরা একই, বসার জায়গাএকই! সেজন্য আমরা ‘পশ্চাদপদ’ শব্দটা ব্যবহার করলেই, কেউ ভাবতে পারে, আমি তো অমুকপশ্চাদপদ জেলার বিধায়ক। আচ্ছা-আচ্ছা তুমিও পশ্চাদপদ? সেখান থেকেই শুরু হয়ে যায়।আমরা দেশে পশ্চাদপদদের মধ্যে প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে চাই না। আমরা অগ্রসরতারপ্রতিযোগিতা করাতে চাই। আর আমরা, আমাদের এই অঞ্চলগুলিকে, এই অঞ্চলগুলির উন্নয়ন এবংসামাজিক ন্যায়ের কাজকে এগিয়ে নিতে চাই। ঐ জেলার উন্নয়ন হলে সামাজিক ন্যায়েরঅধিকারও নিজে থেকেই প্রতিষ্ঠিত হবে।
আমার এলাকার সমস্ত শিশু যদি শিক্ষার আলো পায়, তবেই ঐ এলাকায় সামাজিক ন্যায়এক পা এগিয়ে যাবে। সামাজিক ন্যায়ের যে আদর্শ এই সভাগৃহে আমাদের সামনে আমাদেরমহাপুরুষরা উপস্থাপিত করেছেন, তাকে একটি নতুন রূপে – যাতে দ্বন্দ্বের সম্ভাবনাঅনেক কম – যেখানে ‘তুমি পেয়েছ, আমি পাইনি’ ধরনের অভিযোগের অবকাশ থাকবে না! এমনভাবেমানুষের কাছে তুলে ধরতে পারলে অনেক সুফল পেতে পারি!
সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এখানে উপস্থিত রয়েছেন। অভিলাষী অঞ্চলগুলিরবিধায়ক এবং সাংসদরা রয়েছেন। আপনারা মনস্থির করে নিন। আমি দেশের যে প্রান্তেই সফরেযাই, অভিলাষী জেলাগুলির আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলি। গত পরশু আমি ঝুনঝনু গিয়েছিলাম,সেখানে রাজস্থানের পাঁচটি আর পার্শ্ববর্তী হরিয়ানার একটি অভিলাষী জেলারআধিকারিকদের ডাকিয়ে এনেছি। তাঁদের সঙ্গে ৩০ মিনিট বসে তাঁদের কথা শুনেছি। তাঁদেরসমস্যার কথা শুনেছি। কেন করতে পারেননি ভাই? অমুক? ঠিক আছে, রাজনীতির নিজস্ব স্বভাবআছে – কিন্তু আপনারা চিন্তা করবেন না, আমি থাকব! কেউ সাহায্য করে না? আমি থাকবআপনাদের সঙ্গে। তাঁদের উৎসাহ দিয়েছি। সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলিকেও উৎসাহ দিয়েছি।
গণঅংশীদারিত্ব বাড়ান। আমরা ঐ এলাকার সমস্ত এনজিও-গুলিকে একত্রিত করতে পারি,স্থানীয় যুবসম্প্রদায়ের নানা গতিবিধিকে উৎসাহ যুগিয়ে তাদেরকেও দলে টানতে পারি। এইপরিস্থিতি বদলাতে হবে। আমাদের পরিকাঠামো আছে, মানবসম্পদ আছে, বাজেট বরাদ্দ আছে –তা হলে সুফল আসবে না কেন? আমাদেরকে মাঝের ব্যবধানটা ভরাট করতে হবে এবং আমরা তাকরবোই। তা হলেই দেখবেন শাসন-ব্যবস্থা নিজে থেকে ছুটতে শুরু করবে। কারণ, পরিণামদেখতে পেলে তাদেরও সাহস বেড়ে যাবে। এই ১১৫টি জেলার মধ্যে এমন কয়েকটি জেলা রয়েছে,যেগুলির নাম শুনলেই আপনারা চমকে উঠবেন, আরে এই জেলাও পশ্চাদপদ? ঐ জেলায় এত বড়শিল্পোন্নয়ন হয়েছে, তবুও পশ্চাদপদ? আসলে শিল্পোন্নয়নের কারণে ঐ জেলার এত নাম হয়েছেযে, স্বাস্থ্যবান মানুষের ডায়াবেটিস হওয়ার মতো আমরা পশ্চাদপদতা টের পাইনি।পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অন্যান্য প্যারামিটারগুলি পরিমাপ করতেই ঐ জেলার আসল অসুখ ধরা পড়েছে।অনেকের এটাও মনে হতে পারে যে, আমাদের জেলাকেও এভাবে চিহ্নিত করে কাজ হওয়া উচিৎছিল। আসলে আমরা ২০১১-র পরিসংখ্যান-ভিত্তিক কাজ করছি। নতুন পরিসংখ্যানের জন্য কাজশুরু হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরবর্তী পরিসংখ্যানও পেয়েছি। অনেক রাজ্য বর্তমানপরিস্থিতি অনুযায়ী অভিলাষী জেলা পরিবর্তনও করেছে।
এখন আসুন, আমরা সবাই মিলে এই কর্মযজ্ঞকে কোনও রকম রাজনৈতিক রঙে না রাঙিয়েএক বছর লাগাতার কাজ করি! আমি বেশি সময় চাইছি না! দেখবেন, এই এক বছর দলমতনির্বিশেষে সবাই মিলে হাতে হাত লাগিয়ে কাজ করলে আমরা এই জেলাগুলির সকল পরিসংখ্যানবদলে দিতে পারব! এই জেলাগুলির উন্নয়ন সুনিশ্চিত করতে পারলে দেশের সামগ্রিকউন্নয়নের ছবি বদলে যসাবে। ‘ইয়োর হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স’-এ আমরা এখন বিশ্বে১৩০-১৩১ স্থানে দাঁড়িয়ে।
আজ বিশ্বে ভারতকে নিয়ে যেভাবে আশা-আকাঙ্খা বৃদ্ধি পেয়েছে, আমরা যদি‘হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স’ (মানব উন্নয়ন সূচক)-এর নিরিখে উন্নয়ন করি সমগ্রবিশ্বের নিরিখে আমাদের স্থান অনেক উন্নত হবে। এই ১১৫টি জেলায় উন্নয়ন হলে দেশেরউন্নয়ন নিজ থেকেই অনেকটা এগিয়ে যাবে। অতিরিক্ত কিছু করতে হবে না।
এভাবে এগোতে পারলে আমাদের প্রকল্পগুলির কাজও ত্বরান্বিত হবে। মনরেগার মতোপ্রকল্পের উদ্দেশ্য হ’ল যেখানে রোজগার নেই, সেই অঞ্চলের গরিবদের রোজগারের ব্যবস্থাকরা। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, যে জেলাগুলিতে সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্য, সেগুলিতেইমনরেগার কাজ সবচেয়ে কম হয়েছে। যেখানে সমৃদ্ধি আছে, সেখানে মনরেগার কাজও বেশিহয়েছে। কারণ কি? যে রাজ্যে দক্ষ প্রশাসন রয়েছে তাদের প্রাকৃতিক লাভ মনরেগাতেওপ্রতিফলিত হয়েছে আর রাজ্য সমৃদ্ধতর হয়েছে। যেখানে দারিদ্র্য বেশি, শ্রমের প্রয়োজনবেশি, মনরেগার অর্থও বেশি খরচ হয়েছে কিন্তু প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে সেই অর্থগরিবদের হাতে পৌঁছয়নি।
বাস্তবে সমৃদ্ধ রাজ্যগুলিতে ন্যূনতম মনরেগার যাওয়া উচিৎ ছিল। দরিদ্ররাজ্যগুলিতে অধিক অর্থ বরাদ্দ করে সেই অর্থে পরিকাঠামো উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতেহ’ত। সুশাসন না থাকা একটি বড় সমস্যা, সুসমন্বয় না থাকা একটি বড় সমস্যা, লক্ষ্যস্থির না করে কাজ করা একটি বড় সমস্যা। এই তিনটি ক্ষেত্রে জোর দিলে অনেক বড় পরিণামলাভ সম্ভব হবে।
আমি আরেকবার সুমিত্রাজিকে অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই। একটি ইতিবাচক সমাগমেরমাধ্যমে, দু-দিনের আলাপ-আলোচনার মন্থনে, এই ১১৫টি জেলার ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যআপনি এই পবিত্র সভাকক্ষ বেছে নিয়েছেন। যেখানে সংবিধান সভা বসতো, যেখানে আমাদেরমহাপুরুষরা বসে চিন্তাভাবনা করতেন, রাষ্ট্রের জন্য স্বপ্ন দেখতেন; সেখানে বসে আজআপনারা যাঁরা দেশের ভবিষ্যতে নতুন মাত্রা যোগ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে চলেছেন –সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। এখানে এসে এই পুণ্য কাজে রত হওয়ার জন্য আপনাদের সবাইকেহৃদয় থেকে ধন্যবাদ জানাই।