শ্রী আদি শঙ্করাচার্য সমাধির উদ্বোধন এবং শ্রী আদি শঙ্করাচার্যের মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী
কিছু অভিজ্ঞতা এতটাই অসাধারণ এবং অপার যে সেগুলি শব্দে প্রকাশ করা যায় না, বাবা কেদারনাথ ধামে এসে আমি এটাই অনুভব করি
আদি শঙ্করাচার্যের জীবন এতটাই অসাধারণ ছিল যে, তিনি সারা জীবন সাধারণ মানুষের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন
ভারতীয় দর্শন মানব কল্যাণের কথা বলে এবং এক সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে জীবনকে দেখে; এই শাশ্বত দৃষ্টিভঙ্গী সম্পর্কে সমাজকে সচেতন করতেই আদি শঙ্করাচার্য কাজ করেছেন
আমাদের আস্থার সংস্কৃতির ঐতিহ্য কেন্দ্রগুলিকে ঠিক যেভাবে দেখা উচিৎ, সেই মূল্যবোধ ও যোগ্য সম্মানের সঙ্গে দেখা হয়
ভগবান শ্রীরামের এক চমৎকার মন্দির অযোধ্যায় গড়ে উঠছে, অযোধ্যা তার গৌরব ফিরে পাচ্ছে
আজ ভারত নিজের জন্যই কঠিন লক্ষ্য ও সময়সীমা স্থির করে; আজ ভারতের কাছে এই সময়সীমা ও লক্ষ্য পূরণে দ্বিধাবোধের মানসিকতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়
উত্তরাখন্ডের মানুষের পূর্ণ আস্থা ও অপার সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় রেখে রাজ্য সরকার উত্তরাখন্ডের উন্নয়নে ‘মহাযজ্ঞে’ যুক্ত রয়েছে

জয় বাবা কেদার!

জয় বাবা কেদার!

জয় বাবা কেদার!

দৈবী আভায় সুসজ্জিত এই পবিত্র কর্মসূচিতে আমার সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত সমস্ত বরিষ্ঠ মহানুভব, এই পবিত্রভূমিতে পৌঁছেছেন যে শ্রদ্ধাবান ভক্তরা, আপনাদের সবাইকে আমার নমস্কার।

আজ সমস্ত মঠ, দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের সবগুলিতে, অনেক শিবালয়ে, অনেক শক্তিধামে, অনেক তীর্থক্ষেত্রে, দেশের গণ্যমান্য মহাপুরুষরা, পূজনীয় সন্ন্যাসীগণ, আচার্যগণ, পূজনীয় শঙ্করাচার্য পরম্পরার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত বরিষ্ঠ ঋষি-মনীষী, আর অনেক ভক্তরাও দেশের প্রত্যেক প্রান্ত থেকে আজ কেদারনাথের এই পবিত্রভূমির সঙ্গে, এই পবিত্র আবহের সঙ্গে সশরীরে নয়, কিন্তু আত্মিক রূপে, ভার্চুয়াল মাধ্যমে, প্রযুক্তির সাহায্যে, তাঁরা সেখান থেকে আমাকে আশীর্বাদ দিচ্ছেন। আপনারা সবাই আজ আদি শঙ্করাচার্যের সমাধির পুনঃস্থাপনের সাক্ষী হয়ে যাচ্ছেন। এটি ভারতের আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি এবং ব্যাপকতার অভিজ্ঞানস্বরূপ, একটি অত্যন্ত অলৌকিক দৃশ্য। আমাদের দেশ তো এত বিশাল, এখানে এত মহান ঋষি-পরম্পরা রয়েছে, সবাই বড় বড় তপস্বী, আজও ভারতের প্রত্যেক প্রান্তে আধ্যাত্মিক চেতনা জাগানোর কাজ করেন। এরকম অনেক সন্ন্যাসী আজ দেশের প্রত্যেক কোণায়, আর এখানেও আমাদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। কিন্তু সম্বোধনে, যদি আমি, শুধু তাঁদের নামোল্লেখ করতে চাই, তাহলে হয়তো এক সপ্তাহ সময়ও কম পড়বে। আর, একটি নাম ছাড়া পড়ে গেলে আমি হয়তো জীবনভর কোনও পাপের বোঝায় চাপা পড়বো। আমার ইচ্ছা থাকলেও আমি আজ এই সময়ে সকলের নাম উল্লেখ করতে পারছি না। কিন্তু তাঁদের সবাইকে সাদর প্রণাম জানাচ্ছি। তাঁরা যেখান থেকে এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, তাঁদের আশীর্বাদ, আমার অনেক বড় শক্তি। অনেক পবিত্র কাজ করার জন্য তাঁদের আশীর্বাদ আমাদের শক্তি জোগাবে – এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

আমাদের শাস্ত্রে বলা হয় –

“আবাহনম ন জানামি

ন জানামি বিসর্জনম,

পূজনম চৈব না

জানামি ক্ষমস্ব পরমেশ্বরঃ!”

সেইজন্য আমি হৃদয় থেকে এহেন সমস্ত পূজনীয় ব্যক্তির কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে এই পূণ্য অনুষ্ঠানে দেশের নানা প্রান্ত থেকে যুক্ত হওয়া শঙ্করাচার্য, ঋষিগণ, মহান সন্ন্যাসী পরম্পরার সমস্ত অনুসারী, আপনাদের সবাইকে এখান থেকেই প্রণাম জানিয়ে, আমি আপনাদের আশীর্বাদ চাইছি।

বন্ধুগণ,

আমাদের উপনিষদে আদি শঙ্করাচার্যজির রচনায় অনেক জায়গায় – নেতি, নেতিঃ! যখনই দেখবেন, নেতি, নেতিঃ। একটি ভাববিশ্ব। নেতি নেতিঃ বলে ভাবনার বিস্তার করা হয়েছে। রামচরিতমানসকেও যদি আমরা দেখি, তো সেখানেও এই কথা পুনরুচ্চারণ করা হয়েছে –

‘অবিগত অকথ অপার

নেতি-নেতি নিত নিগম কহ

নেতি-নেতি নিত নিগম কহ’

অর্থাৎ, কিছু অনুভব, এত অলৌকিক, এত অনন্ত হয় যে, সেগুলি শব্দের মাধ্যমে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। বাবা কেদারনাথের স্মরণে যখনই আসি, এখানকার প্রতিটি ধুলিকণার সঙ্গে জুড়ে যাই, এখানকার বাতাস, এই হিমালয়ের শৃঙ্গগুলি, এই বাবা কেদারের সান্নিধ্য, না জানি কেমন অনুভূতির দিকে টেনে নিয়ে যায়, তা প্রকাশের জন্য শব্দ আমার কাছে নেই। দীপাবলীর পবিত্র উৎসবে গতকাল আমি সীমান্তে আমাদের সৈনিকদের সঙ্গে ছিলাম। আজ তো এই সৈনিকদের ভূমিতে রয়েছি। আমি উৎসবের আনন্দ আমার দেশের বীর সৈনিকদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছি। দেশবাসীর ভালবাসার বার্তা, দেশবাসীর তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা, দেশবাসীর তাঁদের প্রতি আশীর্বাদ, ১৩০ কোটি মানুষের আশীর্বাদ নিয়ে আমি কাল সেনা জওয়ানদের কাছে গিয়েছিলাম। আর আজ আমার গোবর্ধন পুজোর দিন, গুজরাটের মানুষের জন্য তো আজ নববর্ষ, গোবর্ধন পুজোর দিনে কেদারনাথজির মন্দিরে দর্শন-পূজন করার সৌভাগ্য হয়েছে। বাবা কেদারের দর্শনের পাশাপাশি আমি আদি শঙ্করাচার্যজির সমাধিতে কিছু সময় কাটিয়েছি, সেই মুহূর্তটি দিব্য অনুভুতির মুহূর্ত ছিল। তাঁর সামনে বসতেই, আমি শঙ্করের চোখদুটি থেকে আমি তেজপুঞ্জ দেখতে পাই, সেই আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে, যা উন্নত ভারতের আস্থা জাগিয়ে তুলছে। শঙ্করাচার্যের সমাধি আর একবার, আরও বেশি দিব্য স্বরূপ নিয়ে আমাদের সকলের মাঝে রয়েছে। এর পাশাপাশি সরস্বতীর তটে ঘাট নির্মাণও সম্পন্ন হয়েছে। আর, মন্দাকিনীর উপর নির্মিত সেতুর মাধ্যমে গরুণচট্টির পথ ও সুগম হয়েছে। গরুণচট্টির সঙ্গে তো আমার বিশেষ সম্পর্ক ছিল, এখানেও দু’একজন পুরনো পরিচিত রয়েছেন। আপনাদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় আমার খুব ভাল লেগেছে। সাধুদের ভাষায় বলে ‘চলতা ভলা’ অর্থাৎ, অনেক পুরনো মানুষ এখন চলে গেছেন। অনেকে এই স্থান ছেড়ে চলে গেছেন, অনেকে এই ধরা ছেড়ে চলে গেছেন। এখন মন্দাকিনীর কিনারায় বন্যা থেকে সুরক্ষার জন্য যে দেওয়াল নির্মিত হয়েছে, এর ফলে ভক্তদের সফর এখন আরও সুরক্ষিত হবে। তীর্থ-পুরোহিতদের জন্য নবনির্মিত আবাসগুলিতে তাঁদের সমস্ত ঋতুতে থাকার সুবিধা হবে, ভগবান কেদারনাথের সেবা সরল হবে, সহজ হবে। আর আগে তো আমি দেখেছি, কখনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় এলে যাত্রীরা এখানে ফেঁসে যেতেন। তখন এখানকার পুরোহিতদের বাড়িতেই এক-একটি কামরায় এত মানুষ মাথা গুঁজে থাকতে বাধ্য হতেন, আর আমি দেখতাম, আমাদের এই পুরোহিতরা অনেক সময় নিজে বাইরে ঠাণ্ডায় ঠকঠক করে কাঁপছেন, কিন্তু যজমানদের অসুবিধার চিন্তা করছেন। এসব আমি দেখেছি, তাঁদের ভক্তিভাব দেখেছি। এখন তাঁরা এধরণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চলেছেন।

বন্ধুরা,

আজ এখানে যাত্রী পরিষেবা আর সুবিধা সংক্রান্ত কিছু প্রকল্পের শিলান্যাসও হয়েছে। পর্যটক পরিষেবা কেন্দ্রের নির্মাণ হোক, যাত্রী ও এই এলাকার মানুষের জন্য আধুনিক হাসপাতাল থেকে শুরু করে সমস্ত সুবিধাসম্পন্ন হাসপাতাল, রেন শেলটার - এই সমস্ত পরিষেবা ভক্তদের সেবার মাধ্যম হয়ে উঠবে। তাঁদের তীর্থযাত্রা এখন কষ্টমুক্ত, কেদারযুক্ত, জয় ভোলার চরণে লীন হওয়ায় মতো যাত্রীদের জন্য সুখকর অভিজ্ঞতা হবে।

বন্ধুগণ,

অনেক বছর আগে এখানে যে বিপর্যয় হয়েছিল, যে পরিমাণ লোকসান এখানে হয়েছিল, তা অকল্পনীয়। আমি মুখ্যমন্ত্রী তো গুজরাটের ছিলাম, কিন্তু নিজেকে আটকাতে পারিনি, আমি এখানে দৌড়ে চলে এসেছিলাম। আমি নিজের চোখে সেই ভয়ঙ্কর বিপর্যয়কে দেখেছি, মানুষের কষ্ট দেখেছি। সেই বিপর্যয়ের পর যারা এখানে আসতেন, তাঁরা ভাবতেন যে, এখন আমাদের কেদারধাম, এই কেদারপুরী আবার কখনও উঠে দাঁড়াতে পারবে কি? কিন্তু আমার ভেতরের আত্মা বলছিল যে, এখানে আগের থেকেও সুন্দরভাবে সব গড়ে উঠবে, আর আমার এই বিশ্বাস বাবা কেদারের কারণে হয়েছিল। আদি শঙ্করাচার্যের সাধনার ফলে হয়েছিল, ঋষি-মুণিদের তপস্যার ফলে হয়েছিল। এর পাশাপাশি আমার কচ্ছের ভূমিকম্পের পর পুনর্গঠনের অভিজ্ঞতা ছিল আর সেইজন্যে আমার বিশ্বাস ছিল, আর আজ সেই বিশ্বাসকে নিজের চোখের সামনে সাকার হতে দেখা, এর থেকে জীবনের সন্তোষ কী হতে পারে।

এটাকে আমি আমার সৌভাগ্য বলে মনে করি যে, বাবা কেদার, সন্ন্যাসীদের আশীর্বাদ, এই মাটির আশীর্বাদ, এই মাটি আর বাতাস কখনও আমাকে লালন পালন করেছে, এখানকার জন্যে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে, এর থেকে বড় জীবনের পুণ্য কি হতে পারে! এই আদিভূমিতে শাশ্বত ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার এই মেলবন্ধন, উন্নয়নের এই কাজ ভগবান শঙ্করের সহজ কৃপারই পরিণাম। এর জন্য ঈশ্বর ক্রেডিট নিতে পারে না, মানুষ ক্রেডিট নিতে পারে। ঈশ্বরের কৃপাই এই কৃতিত্বের অধিকারী। আমি এই পবিত্র প্রচেষ্টাগুলির জন্য উত্তরাখণ্ড সরকারের প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ নবীন মুখ্যমন্ত্রী ধামীজির আর এই প্রকল্পগুলির দায়িত্ব সম্পাদনকারী সবাইকে আজ হৃদয় থেকে ধন্যবাদ জানাই। যাঁরা প্রাণপণ চেষ্টা করে এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করেছেন, আমি জানি, এখানে তুষারপাতের মধ্যেও, সারা বছর এখানে কাজ করা কঠিন, অনেক কম সময় পাওয়া যায়, কিন্তু তুষারপাতের মধ্যেও আমাদের শ্রমিক বন্ধুরা, তাঁরা পাহাড়ের নয়, বাইরে থেকে এসেছেন, ঈশ্বরের কাজ ভেবে, তুষারপাত-বর্ষার মধ্যেও মাইনাস তাপমানেও তাঁরা কাজ ছেড়ে যেতেন না, কাজ করে যেতেন। তবেই এই কাজ সম্ভব হয়েছে। আমার মন এদিকে পড়ে থাকতো। সময়ে সময়ে আমি ড্রোনের মাধ্যমে, প্রযুক্তির মাধ্যমে, আমার দফতর থেকে প্রযুক্তির মাধ্যমে তদারকি করতাম, একপ্রকার ভার্চুয়াল সফর করতাম। ক্রমাগত আমি কেদারনাথে চলতে থাকা এই কাজের খুঁটিনাটি তদারকি করতাম। একমাস আগে কোথায় ছিলাম, একমাস পরে কতটা কাজ হয়েছে।

আমি কেদারনাথ মন্দিরের রাওয়াল এবং সমস্ত পূজারীদেরকেও কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ তাঁদের ইতিবাচক মনোভাবের কারণে, তাঁদের ইতিবাচক প্রচেষ্টার কারণে আর তাঁরা পরম্পরা অনুসরণের ক্ষেত্রে আমাদের যেভাবে দিশানির্দেশ করে গেছেন, এর ফলে আমরা একটি পুরনো ঐতিহ্যকে বাঁচাতে পেরেছি, আর আধুনিকও করে তুলতে পেরেছি। সেজন্যে আমি এই পূজারীদের আর রাওয়াল পরিবারগুলিকে হৃদয় থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।

বন্ধুরা,

আদি শঙ্করাচার্যজির বিষয়ে আমাদের বিদ্বানরা বলেছেন, শংকরাচার্যজির জন্য প্রত্যেক বিদ্বান বলেছেন – “শঙ্করো শঙ্কর সাক্ষাৎ!” অর্থাৎ, আচার্য শঙ্কর সাক্ষাৎ ভগবান শঙ্করেরই স্বরূপ ছিলেন। এই মহিমা, এই দেবত্ব, আপনারা জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে অনুভব করতে পারবেন, দেখতে পাবেন। তাঁর দিকে সামান্য তাকালেই সমস্ত স্মৃতি সামনে চলে আসে। ছোট বয়সে, বালক অবস্থাতেই অদ্ভূত বোধশক্তি, বালক বয়স থেকেই শাস্ত্রের প্রতি অনুরাগ, জ্ঞান-বিজ্ঞান নিয়ে তাঁর নিরন্তর ভাবনা! আর যে বয়সে একজন সাধারণ মানুষ, সাধারণভাবে নানা সাংসারিক বিষয় বুঝতে শুরু করে, যে বয়সে মানুষ সংসারকে নিয়ে সচেতন থাকে, সেই বয়সে বেদবেদান্তের গভীরতাকে, গূঢ়তাকে আনুষঙ্গিক বিবেচনা আর ব্যাখ্যা অবিরতভাবে করতেন! এগুলি শঙ্করের মনে সাক্ষাৎ শঙ্করেরই জাগরণ ছিল। এছাড়া আর কিছুই হতে পারে না।

বন্ধুরা,

এখানে আপনাদের মতো সংস্কৃত আর বেদজ্ঞ লোকেরা বসে আছেন, আমাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালিও যুক্ত রয়েছেন। আপনারা জানেন যে, শঙ্করের সংস্কৃত মানে অত্যন্ত সরল। এর মানে হল ‘শং করোতি সঃ শঙ্করঃ’ অর্থাৎ, যিনি কল্যাণ করেন, তিনিই শঙ্কর। এই কল্যাণকেও আচার্য শঙ্কর প্রত্যক্ষ প্রমাণ করে দিয়েছেন। তাঁর গোটা জীবন যত অসাধারণ ছিল, ততটাই তিনি জনসাধারণের কল্যাণের জন্য সমর্পিত ছিলেন। ভারত আর বিশ্বের কল্যাণের জন্য অহর্নিশ নিজের চেতনাকে সমর্পণ করতেন। যখন ভারত, রাগ-দ্বেষের জালে ফেঁসে নিজের ঐক্য হারাচ্ছিল, তখন না জানি কত দূরদর্শী ছিলেন, তখন শঙ্করাচার্য জি বলেন, -

“ন মে দ্বেষ রাগৌ, ন মে লোভ মোহৌ

মদো নৈব, মে নৈব, মাৎসর্য ভাবঃ”

অর্থাৎ, দ্বেষ, রাগ, লোভ, মোহ, ঈর্ষা, অহংকার এসব আমাদের স্বভাব নয়। যখন ভারতকে জাতি-পন্থার সীমার বাইরে দেখার, মানবজাতির শঙ্কা-আশঙ্কার উপরে উঠে দেখার প্রয়োজন ছিল, তখন তিনি সমাজের চেতনা জাগ্রত করতে বলেন। আদি শঙ্করাচার্য বলেন –

“ন মে মৃত্যু-শঙ্কা, ন মে জাতিভেদঃ’।

অর্থাৎ, নাশ-বিনাশের শঙ্কাগুলি, জাতপাতের বৈষম্য, এসব আমাদের পরম্পরার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই, পরম্পরার অংশ নয়। আমরা কী, আমাদের দর্শন আর ভাবনা কী, তা বলার জন্য আদি শংকরাচার্য বলেন, “চিদানন্দ রূপঃ শিবোঅহম শিবোঅহম, চিদানন্দরূপঃ শিবোঅহম শিবোঅহম” অর্থাৎ, আনন্দস্বরূপ শিব আমরাই। জীবত্বের মধ্যেই শিবত্ব আছে। আর, অদ্বৈতের সিদ্ধান্ত, কখনও অদ্বৈতের সিদ্ধান্ত বোঝাতে বড় বড় গ্রন্থের প্রয়োজন পড়ে। আমি এত বিদ্বান নই, আমি সরল ভাষায় সব কথা বুঝি, আমি একথা বলি, যেখানে দ্বৈত নেই, সেখানে অদ্বৈত আছেন। শঙ্করাচার্যজি ভারতের চেতনায় আবার প্রাণ সঞ্চার করেন, আর আমাদের নিজেদের আর্থিক পরমার্থিক উন্নতির মন্ত্র বলেন। একথা বলার জন্য আদি শঙ্করাচার্য বলেন, -

জ্ঞানবিহীনঃ, … দেখুন, জ্ঞানের উপাসনার মহিমাকে আমাদের দেশে কত গুরুত্ব দেওয়া হতো। তিনি বলেন -

“জ্ঞানবিহীনঃ সর্ব মতেন।

মুক্তিম ন ভজতি জন্ম শতেন।।”

অর্থাৎ, দুঃখ, কষ্ট আর সমস্যা থেকে আমাদের মুক্তির কেবল একটাই পথ আছে, আর সেটা হল জ্ঞান। ভারতের জ্ঞান-বিজ্ঞান আর দর্শন, যা চিরাচরিত ঐতিহ্য, তাকে আদি শঙ্করাচার্যজি পুনরুজ্জীবিত করেছেন, চেতনা ভরে দিয়েছেন।

বন্ধুরা,

একটা সময় ছিল যখন আধ্যাত্মকে, ধর্মকে কেবল পশ্চাদপদতার সঙ্গে জুড়ে, কিছু ভুল মর্যাদা ও কল্পনা জুড়ে, দেখা শুরু হয়েছিল। কিন্তু, ভারতীয় দর্শন তো মানব কল্যাণের কথা বলে, জীবনকে পূর্ণতার সঙ্গে হলিস্টিক অ্যাপ্রোচ নিয়ে, হলিস্টিক ওয়েতে দেখে। আদি শঙ্করাচার্যজি সমাজের এই সত্যের সঙ্গে পরিচিত করানোর কাজ করেছেন। তিনি পবিত্র মঠসমুহের স্থাপনা করেছেন, চার ধামের স্থাপনা করেছেন, দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের পুনর্জাগরণ করার কাজ করেছেন। তিনি সবকিছু ত্যাগ করে দেশ, সমাজ আর মানবতার জন্য বেঁচে থাকা একটি মজবুত পরম্পরা সৃষ্টি করেন। আজ তাঁর এই প্রতিষ্ঠান ভারত এবং ভারতীয়ত্বর একপ্রকার সম্বল ও পরিচয় হয়ে উঠেছে। আমাদের কাছে ধর্ম কি, ধর্ম আর জ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক কি? আর এইজন্যেই তো বলা হয়েছে, ‘অথাতো ব্রহ্ম জিজ্ঞাসা’। অথাতো ব্রহ্ম জিজ্ঞাসা-র মন্ত্রের দাতা উপনিষদীয় পরম্পরা কি, যা আমাদের পল-প্রতিপল প্রশ্ন করতে শেখায়। সেই জন্যেই কখনও বালক নচিকেতা যমের দরবারে গিয়ে যমের চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞাসা করেছিল। যমকে জিজ্ঞাসা করেছিল, মৃত্যু কাকে বলে বলুন?

প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা, জ্ঞান অর্জন করা, ‘অথাতো ব্রহ্ম জিজ্ঞাসা ভবঃ’। আমাদের এই ঐতিহ্যকে আমাদের মঠ হাজার হাজার বছর বাঁচিয়ে রেখেছে, তাকে সমৃদ্ধ করে চলেছে। সংস্কৃত হোক, সংস্কৃত ভাষায় বৈদিক গণিতের মতো বিজ্ঞান হোক, এইসব মঠে আমাদের শঙ্করাচার্য এই সবকিছুর সংরক্ষণ করে রেখেছেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম পথ দেখানোর কাজ করেছেন, এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আমি বুঝতে পারি, আজকের এই সময়ে আদি শঙ্করাচার্যজির সিদ্ধান্ত, আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়েও গিয়েছে।

বন্ধুরা,

আমাদের এখানে বহু শতাব্দী ধরেই চারধাম যাত্রার মহত্ব রয়েছে, দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের দর্শন, শক্তিপীঠগুলির দর্শন, অষ্টবিনায়কজির দর্শনের এই সমস্ত যাত্রার পরম্পরা, এই তীর্থযাত্রাকে আমাদের দেশে জীবনকালের অংশ মানা হতো। এই তীর্থযাত্রা কেবল পর্যটনের জন্যই নয়, কেবল ঘুরে বেড়ানো নয়। এগুলি ভারতকে যুক্ত করে, ভারতকে পরিচিত করানোর একটি সজীব পরম্পরা। আমাদের এখানে কারও কারও ইচ্ছা হলে, সে যেই হোক না কেন, তাঁর জীবনে অন্তত একবার চারধাম দেখা চাই, দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ অবশ্যই দর্শন করা চাই। মা গঙ্গায় একবার অবশ্যই ডুবস্নান করা চাই। আগে আমাদের শিশুদের শুরু থেকেই শেখানোর ঐতিহ্য ছিল –

“সৌরাষ্ট্রে সোমনাথম চ

শ্রীশৈলে মল্লিকার্জুনম”

এটা ছোটবেলাতেই শেখানো হতো। দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের এই মন্ত্র ঘরে বসে বসে বৃহৎ ভারতের সফর করিয়ে দিত। শৈশব থেকেই দেশের আলাদা আলাদা অংশের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে এক সহজ শিষ্টাচার তৈরি হত। এই আস্থা, এই ভাবনা পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত, উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত ভারতকে একটি সজীব এককে বদলে দেয়, জাতীয় একতার শক্তি বাড়ায়, ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর সুন্দর দর্শন করানো সহজ জীবনযাপনের অংশ ছিল। বাবা কেদারনাথের দর্শন করে একজন ভক্ত এক নতুন শক্তি নিয়ে ফিরে যেতেন।

বন্ধুরা,

আদি শঙ্করাচার্যের পরম্পরার এই চিন্তন আজ দেশের জন্য একটি প্রেরণা হিসাবে দেখা হয়। এখন আমাদের সাংস্কৃতিক পরম্পরাকে, আস্থার কেন্দ্রগুলিকে একই গৌরবের দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে, যেরকম দেখা উচিত ছিল। আজ অযোধ্যায় ভগবান শ্রীরামের সুন্দর মন্দির পূর্ণ গৌরবের সঙ্গে তৈরি হচ্ছে, অযোধ্যা তার গৌরব কয়েক শতাব্দী পর ফিরে পাচ্ছে। মাত্র দু দিন আগে অযোধ্যায় দীপোৎসবের সুন্দর আয়োজন, গোটা পৃথিবী দেখেছে। ভারতের প্রাচীন সাংস্কৃতিক স্বরূপ কেমন ছিল, আজ আমরা কল্পনা করতে পারি।

এই ভাবেই, উত্তরপ্রদেশে কাশীর কায়াকল্প হচ্ছে, বিশ্বনাথ ধামের কাজ অনেক দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে, পূর্ণতার পথে এগিয়ে চলেছে। বারাণসীতে সারনাথের কাছে কুশীনগর আর বুদ্ধগয়া পর্যন্ত বুদ্ধ সার্কিট আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য অত্যন্ত দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। ভগবান রামের সঙ্গে যুক্ত স্থানগুলিতে রাম সার্কিট বানানোর কাজ চলছে। মথুরা বৃন্দাবনেও উন্নয়নের পাশাপাশি সেখানকার পবিত্রতা নিয়ে সন্ন্যাসীদের ভাবনার কথাও মনে রাখা হচ্ছে। আধুনিকতার কথাও মাথায় রাখা হচ্ছে। এসব আজ এই জন্য হতে পারছে, কারণ, আজকের ভারত শঙ্করাচার্যের মতো মনীষীদের নির্দেশগুলির প্রতি শ্রদ্ধার ভাবনা থেকে, সেগুলির জন্য গৌরব অনুভব করে আগে এগিয়ে যাচ্ছে।

বন্ধুরা,

এই সময়ে আমাদের দেশে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন করা হচ্ছে। দেশ নিজের ভবিষ্যতের জন্য, নিজেদের পুনর্নিমাণের জন্য নতুন সংকল্প নিচ্ছে। অমৃত মহোৎসবের এই সংকল্পে আমরা আদি শঙ্করাচার্যজিকে এক বিরাট বড় প্রেরণা হিসাবে দেখছি। এখন দেশ নিজের জন্য বড় লক্ষ্য স্থির করছে। যখন দেশ নিজের জন্য বড় লক্ষ্য স্থির করে, কঠিন সময়, আর শুধু সময় নয়, কাজের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়, তখন কিছু মানুষ বলেন, এত কম সময়ে এইসব কাজ কি করে হবে! হবে, কি হবে না! কখনও কেউ কেউ জিজ্ঞাসা করেন, আদৌ কি হবে? তখন আমার ভেতর থেকে একটা আওয়াজ শুনতে পাই, ১৩০ কোটি ভারতবাসীর আওয়াজ শুনতে পাই। তখন আমি বলি, সময়ের সীমানায় আবদ্ধ থেকে শঙ্কিত থাকার স্বভাব এখন আর ভারতের নেই।

আপনারা দেখুন আদি শঙ্করাচার্যজিকে। তিনি তার অল্প বয়সে, ছোট বয়সে সংসার ছেড়ে সন্ন্যাসী হয়েছেন। কোথায় কেরালার কালড়ি, আর কোথায় কেদার, কোথা থেকে কোথায় এসেছেন। সন্ন্যাসী হয়েছেন, খুব কম বয়সেই এই পবিত্রভূমিতে তার শরীর এই মাটিতে বিলীন হয়ে গিয়েছে। তার এত কম আয়ুর মধ্যেই তিনি ভারতের ভুগোলকে চৈতন্য এনে দিয়েছেন, ভারতের জন্য নতুন ভবিষ্যৎ গড়ে দিয়েছেন। তিনি যে শিখা প্রজ্বলিত করেছেন, তা আজ ভারতকে গৌরবান্বিত করছে, আগামী হাজারও বছরে গৌরবান্বিত রাখবে।

এই ভাবেই স্বামী বিবেকানন্দজিকে দেখুন। স্বাধীনতা সংগ্রামে অনেক অনেক সেনানীদের দেখুন, এমন কত মহান আত্মা, মহৎ ব্যক্তিরা, এই দেশে জন্ম নিয়েছেন, যাঁরা সময়ের সীমাকে পার করে অল্প সময়ের মধ্যে, কত কত যুগকে প্রোথিত করেছেন। এই ভারত মহান ব্যক্তিদের প্রেরণায় চলে। আমরা শাশ্বতকে একপ্রকার স্বীকার করে, আমরা ক্রিয়াশীলতায় বিশ্বাস করি। এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে দেশ আজ এই অমৃতকালে আগে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এই সময়ে, আমি দেশবাসীর কাছে একটি অনুরোধ জানাতে চাই। স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত ঐতিহাসিক স্থানগুলিকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে, এমন পবিত্র স্থানগুলিকেও বেশি বেশি করে ঘুরতে যান, নতুন প্রজন্মের মানুষদের নিয়ে যান, পরিচিত করান, ভারতমাতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করান। হাজার বছরের মহান পরম্পরার চেতনা ও অনুভূতি তাঁদের মধ্যে সঞ্চারিত করান। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালনের এটাও একটা বড় উপায় হতে পারে। প্রত্যেক ভারতবাসীর মনে, দেশের প্রত্যেক কোণে কোণে, প্রত্যেক কাঁকরে কাঁকরে যাতে শঙ্করভাব জেগে উঠতে পারে! এজন্য এটা বেরিয়ে পড়ার সময়। যাঁরা পরাধীনতার শত শত বছরের সময়কালে আমাদের আস্থাকে বেঁধে রেখেছিলেন, কখনও আস্থাকে আঁচ লাগতে দেননি, দাসত্বের কালখণ্ডে এটা কোনও ছোট সেবা ছিল না। এখন স্বাধীনতার অমৃতকালে সেই মহান সেবাকে পূজা করা, তর্পণ করা, তপস্যা করা, সাধনা করা কি প্রত্যেক ভারতবাসীর কর্তব্য নয়? সেজন্য আমি বলি, একজন নাগরিক হিসাবে আমাদের এই স্থানগুলি দর্শন করা উচিত, এই স্থানগুলির মহিমা জানা উচিত, এই স্থানগুলিতে অবশ্যই যাওয়া উচিত।

বন্ধুরা,

দেবভূমির প্রতি অসীম শ্রদ্ধা পোষণ করে, এখানকার অসীম সম্ভাবনার প্রতি বিশ্বাস রেখে, আজ উত্তরাখণ্ডের সরকার বিকাশের মহাযজ্ঞে জুড়ে রয়েছে। সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে কাজ করছে। চারধাম সড়ক প্রকল্পে দ্রুত গতিতে কাজ হচ্ছে, চার ধামকে হাইওয়ে দিয়ে জোড়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে এখানে কেদারনাথজি পর্যন্ত শ্রদ্ধাবানরা যাতে কেবল কারের মাধ্যমে আসতে পারেন, সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। এখানে কাছেই হেমকুণ্ড সাহিবজিও আছে, হেমকুণ্ড সাহিবের দর্শন যাতে সহজ হয়, সেজন্য ওখানে রোপওয়ে বানানোর প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া ঋষিকেশ আর কর্ণপ্রয়াগকে রেলের দ্বারা যুক্ত করা হচ্ছে। এখনই মুখ্যমন্ত্রীজি বলছিলেন, পাহাড়ের মানুষের জন্য রেল দেখাও দুষ্কর ছিল। এখন রেল পৌঁছোচ্ছে।

দিল্লি দেরাদুন হাইওয়ে তৈরির পর দেরাদুন থেকে দিল্লি আসা যাওয়ার সময় আরও কম হয়ে যাবে। এই সব কাজে উত্তরাখণ্ডের, উত্তরাখণ্ডের পর্যটনের খুব বড় লাভ হবে। আর আমার এই কথাগুলি উত্তরাখণ্ডের মানুষ লিখে রাখুন, যে দ্রুতগতিতে উত্তরাখণ্ডে পরিকাঠামোর কাজ চলছে, গত ১০০ বছরে যত তীর্থযাত্রী এখানে এসেছেন, আগামী দশ বছরে তাঁর থেকে বেশি তীর্থযাত্রী এখানে আসবেন। আপনারা কল্পনা করতে পারেন, এখানকার অর্থনীতি কতটা শক্তিশালী হবে। একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশক এটা উত্তরাখণ্ডের দশক হবে, একথা লিখে রাখুন। আমি পবিত্র ধামে দাঁড়িয়ে একথা বলছি।

সাম্প্রতিককালে আমরা সবাই দেখেছি যে, কিভাবে চার ধাম যাত্রায় আসা ভক্তদের সংখ্যা নিত্য নিত্য রেকর্ড তৈরি করছে। কোভিড না হলে এই সংখ্যা না জানি কোথায় পৌঁছে যেতো। উত্তরাখণ্ডের কথা বলতে আমার আনন্দ হচ্ছে, বিশেষ করে মা ও বোনেদের কথা ভেবে বলছি, পাহাড়ের মা ও বোনেদের, একটি বিশেষ ধরণের সামর্থ্য থাকে, যেভাবে উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন ছোট ছোট গ্রামে প্রকৃতির কোলে হোম-স্টে নেটওয়ার্ক তৈরি হচ্ছে। শত শত হোম-স্টে তৈরি হচ্ছে। মা ও বোনেরা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন, এখানে আসা পর্যটকরাও হোম-স্টে-তে থাকা বেশি পছন্দ করছেন। কর্মসংস্থানও হচ্ছে। স্বাভিমান নিয়ে বাঁচার সুযোগও তৈরি হচ্ছে। এখানকার সরকার যেভাবে বিকাশের কাজে জুড়ে রয়েছে, এর আরেকটি লাভ হয়েছে।

এখানে অনেকে প্রায়ই বলেন, পাহাড়ের জল আর পাহাড়ের যৌবন কখনও পাহাড়ের কাজে লাগে না। আমি এই প্রবাদটিকে বদলেছি। এখন পাহাড়ের জল পাহাড়ের কাজে লাগবে, আর পাহাড়ের যৌবনও পাহাড়ের কাজে লাগবে। পলায়ন থামাতে হবে, একের পর এক যত পলায়ন হচ্ছে, আসুন নবযুবক বন্ধুরা, এই দশক আপনাদের, এই দশক উত্তরাখণ্ডের, এই দশক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের। বাবা কেদারের আশীর্বাদ আমাদের সঙ্গে আছে।

বন্ধুরা,

এই দেবভূমি, মাতৃভূমির রক্ষায় নিযুক্ত অনেক বীর ছেলে মেয়েদের জন্মস্থলও বটে। এখানকার কোনও ঘর, কোনও গ্রাম এমন নেই, যেখানে পরাক্রমের কোনও কাহিনীর পরিচয় পাওয়া যায় না। আজ দেশ যেভাবে নিজের সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণ করছে, তাকে আত্মনির্ভর বানাচ্ছে, তাতে আমাদের বীর সৈনিকদের শক্তি আরও বাড়ছে। আজ তাঁদের প্রয়োজন, তাঁদের প্রত্যাশার, তাঁদের পরিবারের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। আমাদেরই সরকার, ‘ওয়ান র‍্যাঙ্ক, ওয়ান পেনশন’–এর চার দশক পুরনো দাবি, গত শতাব্দীর দাবি, এই শতাব্দীতে আমি পূরণ করেছি। আমি খুশি যে, আমরা আমার দেশের সৈনিকদের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। এতে লাভ হয়েছে উত্তরাখণ্ডের হাজার হাজার পরিবারের। অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক পরিবারগুলি উপকৃত হয়েছে।

বন্ধুরা,

উত্তরাখণ্ড করোনার বিরুদ্ধে লড়াইতে যেভাবে অনুশাসন দেখিয়েছে, এটাও অভিনন্দনযোগ্য, প্রশংসনীয়। ভৌগোলিক সমস্যাগুলি অতিক্রম করে আজ উত্তরাখণ্ড, উত্তরাখণ্ডের জনগণ ১০০ শতাংশ সিঙ্গল ডোজের লক্ষ্য অর্জন করেছেন। এটাই উত্তরাখণ্ডের শক্তিকে তুলে ধরে, উত্তরাখণ্ডের ক্ষমতাকে দেখায়। যাঁরা পাহাড়ের সঙ্গে পরিচিত, তাঁরা জানেন, এই কাজ সহজ নয়। ঘন্টার পর ঘন্টা পায়ে হেঁটে চড়াই উৎরাই অতিক্রম করে পাহাড়ের গ্রামে গ্রামে গিয়ে চার-পাঁচটি পরিবারকে টিকা দিতে হয়েছে। সারা রাত পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। এতে কত কষ্ট হয় তা আমি অনুমান করতে পারি! তারপরও উত্তরাখণ্ড সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেছে, কারণ, রাজ্যের একেকজন নাগরিকের জীবন বাঁচাতে হবে। সেইজন্য মুখ্যমন্ত্রীজি আপনাকে, এবং আপনার টিমকে অভিনন্দন জানাই। আমার বিশ্বাস যে, যতটা উচ্চতায় উত্তরাখণ্ড আজ আছে, যতটা উচ্চতায় উত্তরাখণ্ড আজ রয়েছে তার থেকেও উচ্চতা অর্জন করবে।

বাবা কেদারের ভূমি থেকে, আপনাদের সকলের আশীর্বাদে, দেশের নানা প্রান্ত থেকে সন্ন্যাসী মহন্তদের, ঋষিদের, মুনিদের, আচার্যদের আশীর্বাদ নিয়ে আজ এই পবিত্র ভূমি থেকে অনেক সংকল্প গ্রহণ করে আমরা এগিয়ে চলেছি। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার সংকল্প প্রত্যেকেই নিন। দীপাবলির পর একটি নতুন উৎসাহ, একটি নতুন আলো, নতুন উদ্দীপনা, নতুন প্রাণশক্তি, আমাদের নতুন কিছু করার শক্তি জোগাক।

এই শুভকামনার সঙ্গে, আমি আরও একবার ভগবান কেদারনাথের চরণে, আদি শঙ্করাচার্যের চরণে, প্রণাম জানাই। আপনাদের সবাইকে আরেকবার দীপাবলির মহাপর্ব থেকে ছট পূজা পর্যন্ত অনেক উৎসব আসছে, আগামী এই উৎসবগুলির জন্য অনেক অনেক শুভকামনা। আমার সঙ্গে ভালবাসা নিয়ে বলুন, ভক্তি নিয়ে বলুন, প্রাণ উজাড় করে বলুন -

জয় কেদার !

জয় কেদার !

জয় কেদার !

ধন্যবাদ!  

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
PLI, Make in India schemes attracting foreign investors to India: CII

Media Coverage

PLI, Make in India schemes attracting foreign investors to India: CII
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
PM Modi visits the Indian Arrival Monument
November 21, 2024

Prime Minister visited the Indian Arrival monument at Monument Gardens in Georgetown today. He was accompanied by PM of Guyana Brig (Retd) Mark Phillips. An ensemble of Tassa Drums welcomed Prime Minister as he paid floral tribute at the Arrival Monument. Paying homage at the monument, Prime Minister recalled the struggle and sacrifices of Indian diaspora and their pivotal contribution to preserving and promoting Indian culture and tradition in Guyana. He planted a Bel Patra sapling at the monument.

The monument is a replica of the first ship which arrived in Guyana in 1838 bringing indentured migrants from India. It was gifted by India to the people of Guyana in 1991.