বিপুল সংখ্যায় আগত আমার দমনের প্রিয় ভাই ও বোনেরা।
দমনের ইতিহাসে সম্ভবত এত বড় জনপ্লাবন আগে কখনও আসেনি, দমন ও দিউ-র উন্নয়নেপ্রায় ১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পও সম্ভবত আগে কখনও বাস্তবায়িত হয়নি।
ভাই ও বোনেরা, দমন ও দিউ, দাদরা ও নগর হাভেলির সমগ্র অঞ্চলে যেন আজকালউন্নয়নের নতুন আবহ গড়ে উঠেছে। আজ দমন একভাবে ক্ষুদ্র ভারতে রূপান্তরিত হয়েছে।ভারতের এমন কোনও রাজ্য নেই, যেখানকার ন্যূনতম দু-পাঁচটি পরিবার দমনে থাকেন না!সেজন্য এখানেও দিল্লি ও মুম্বাইয়ের মতো মহানাগরিক সমাজ জীবনে বৈচিত্র্য ও বহুত্ব,সৌভ্রাতৃত্ববোধ ও আপনত্ব রয়েছে। আজ বিমানবন্দর থেকে এখানে আসার পথে গোটা রাস্তায়পথের দু-পাশে বহু ভাষাভাষী মানুষদের দেখছিলাম, যেন ভারতের প্রতিটি প্রান্ত উৎসাহ ওউদ্দীপনায় টইটম্বুর।
ভাই ও বোনেরা,
দমনে পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সচেতনতা আর বিপুল সংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণে সাফাইঅভিযান দমনকে সুন্দরতর করেছে, এখানকার পর্যটন আকর্ষণ বাড়িয়েছে। পরিচ্ছন্নতাপর্যটকদের টানে। পর্যটন বৃদ্ধি পেলে মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ে। আজ দমন হেলিকপ্টারপরিষেবার মাধ্যমেও দিউ-র সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। সেজন্য দক্ষিণ ভারত থেকে যাঁরা তীর্থযাত্রায় সোমনাথ যেতে চান, গিরের সিংহ দেখতে চান, তাঁরা দমন আসবেন আর হেলিকপ্টারেযাবেন। দেখবেন, দমনের উন্নয়ন কিভাবে হয়। আর আজ দিউ-র সঙ্গে আমেদাবাদকে যুক্ত করাহয়েছে।
ভাই ও বোনেরা, আমাকে বলা হয়েছে যে, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে দমনইতিমধ্যেই ওডিএফ, ওপেন ডিফিকেশন ফ্রি বা প্রকাশ্যে মলত্যাগমুক্ত হিসাবে ঘোষিতহয়েছে। এখানে ২০০০-এরও বেশি শৌচাগার নির্মিত হয়েছে। এই কাজের জন্য আমি প্রশাসন এবংএখানকার সচেতন নাগরিকদের হৃদয় থেকে অনেক শুভেচ্ছা জানাই। খোলা জায়গায় মলত্যাগমুক্ত করার এই অভিযানকে আমি এক প্রকার মাতৃ সম্মান আন্দোলন বা নারী সম্মান আন্দোলনবলে থাকি।
একবার উত্তর প্রদেশে আমার লোকসভা নির্বাচনী ক্ষেত্রে শৌচাগার নির্মাণঅভিযানে অংশগ্রহণ করে অনুভব করি যে উত্তর প্রদেশ সরকার কত ভালো কাজ করছেন। তাঁরানবনির্মিত শৌচাগারগুলির নামকরণ করেছেন ইজ্জত ঘর। আমি অনুভব করি, শৌচাগার তোবাস্তবে আমাদের ইজ্জত ঘরই। বিশেষ করে, আমাদের মা ও বোনেদের সম্ভ্রম রক্ষার জন্যশৌচাগার থাকা অত্যন্ত জরুরি। আজ আপনারা সেই কাজটিও করে দিয়েছেন।
দমনে একটি সবুজ আন্দোলন শুরু হয়েছে – পরিচ্ছন্নতা অভিযান, ই-রিক্শা,সিএনজি ট্যাক্সি! আর এখন আপনারা দমনে একটি নতুন দৃশ্য দেখবেন – দমনে এবার মেয়েরাই-রিক্শা চালাবেন। এতে পরিবেশ দূষণ বহুলাংশে হ্রাস পাবে। আর দমনের মতোশান্তিপ্রিয় শান্ত অঞ্চলে, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে মা ও বোনেরা ই-রিক্শা চালালেযাত্রীদের মনে মা ও বোনেদের প্রতি সম্মান বাড়বে, তাঁদের একটি নতুন পরিচয় গড়ে উঠবে।
এই সিএনজি এবং ই-রিক্শা ছাড়াও দমনে ‘সবুজ আন্দোলন’-এর অন্তর্গত ‘এলইডিরূপান্তর অভিযান’ চালিয়ে এই ছোট অঞ্চলে ইতিমধ্যেই ৪০ হাজার এলইডি বাল্ব বিতরণ করাহয়েছে। ফলে, গত এক বছরে দমনবাসী মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তদের বিদ্যুৎ বিলে প্রায় ৭কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এখন থেকে প্রতি বছর এই সাশ্রয় হবে।
আমি মনে করি, এখানে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন প্রকল্পসমূহ রূপায়িত হয়েছে ও হচ্ছে।আজও আমাদের দেশে কারখানার শ্রমিকদের জীবনকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাঁরাকারখানায় আসেন, কাজ করেন, কিন্তু কোথায় থাকেন, কী খান, তাঁরা সম্মানের জীবনযাপন করতেপারেন কি না – সেদিকে কেউ লক্ষ্য রাখেন না। দমন একটি শিল্পনগরী। দেশে সমস্তপ্রান্ত থেকে শ্রমিকরা এখানে আসেন। এক একটি ছোট কামরায় ১৫-২০ জন থাকেন। তাঁরা যখনডিউটিতে যান, আরেক দল ডিউটি থেকে ফিরে তাঁদের জায়গায় ঘুমিয়ে পড়েন। তাঁরা ডিউটিথেকে ফিরলে অন্যরা আবার ডিউটিতে যান। এভাবে পর্যায়ক্রমে শিফ্ট ব্যবস্থা চলে।
আমি শ্রী প্রফুল্ল ভাই প্যাটেলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই, কারণ – তিনিসরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সুন্দর মডেল বানিয়ে দমনের শ্রমিকদের জন্যউন্নত আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলেছেন। আজ সেই আবাসন প্রকল্পের উদ্বোধন হচ্ছে। এরফলে,শ্রমিকদের জীবনে পরিবর্তন আসবে। যে শিল্পপতিরা তাঁদের কারখানার শ্রমিকদের স্বার্থেসরকারের সঙ্গে এই অংশীদারিত্বে এগিয়ে এসেছেন, আমি তাঁদের আশ্বস্ত করছি যে, এইশ্রমিক ভাই-বোনেরা ভালো মাথা গোঁজার ঠাঁই পেলে, দু’বেলা পেট ভরে খেতে পেলে সমস্তশক্তি আপনার কারখানার উৎপাদন বৃদ্ধিতে নিয়োগ করবেন। উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশিউৎপাদিত পণ্যের উৎকর্ষও বৃদ্ধি পাবে।
এখানে অধিকাংশ শ্রমিক ভাই-বোনেরা যেহেতু গ্রামে বাবা-মা, পরিবার-পরিজনদেরছেড়ে এসে একা থাকেন, দীর্ঘ সময় কারখানায় কাজের পর সস্তায় যা পান গোগ্রাসে খেয়ে এসেঘুমাতে যান। তাঁদের জন্য এবার সার্বজনিক আহারের ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। সেখানেখাদ্যের উৎকর্ষ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকবে! আমার দৃঢ় বিশ্বাস, শ্রমিকরা ভালোখাদ্য পেলে ঘরে গিয়ে নিজের বিছানায় শান্তিতে ঘুমোতে পারলে, সকালে পরিচ্ছন্নস্বতন্ত্র শৌচালয়ে প্রাতকৃত্যাদি সেরে ভালোভাবে স্নান করে কাজে যেতে পারলে উৎপাদনও উৎকর্ষ বৃদ্ধি পাবেই।
আজও আমাদের দেশের সমস্ত শহরে ১০০ শতাংশ পরিশোধিত জল সরবরাহের ব্যবস্থা করাসম্ভব হয়নি। কিন্তু আমাকে বলা হয়েছে যে, দমন ‘ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’-এরমাধ্যমে নাগরিকরা পানযোগ্য পরিশোধিত জল পান।
আমাদের দেশে শিশু মৃত্যুর হার কমাতে, অপুষ্টি থেকে মুক্তি পেতে কেন্দ্রীয়সরকারের পক্ষ থেকে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়। কিন্তু আজ দমনে একটি অভিনব উদ্যোগেরসূত্রপাত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১৪-১৮ বছর বয়সী মেয়েদের,গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের এবং ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের উপযোগী পুষ্টিবর্ধক খাবারেরকিট তাঁদের হাতে প্রতি মাসে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। আজ আমার কিছুপরিবারের হাতে এই কিট তুলে দেওয়ার সৌভাগ্য হইয়েছে।
আশা করি, যে পরিবারগুলি এই সুবিধা পাচ্ছেন, তাঁরা এই অজুহাতে আগে যাখাওয়াতেন, তা আনা বন্ধ করে দেবেন না। তাঁরা আগে যা খেতেন ও খাওয়াতেন এই কিটেরখাবার তার অতিরিক্ত। তবেই আপনার বাড়ির ১৪-১৮ বছরের কন্যাটির অপুষ্টি দূর হবে ওশরীরের সুষম বিকাশ হবে। তবেই বিয়ের পর সে মা হলে সুস্থ ও সবল শিশু জন্ম দেবে। যেদেশের শিশুরা সুস্থ ও সবল হয়, সেই দেশও তত শক্তিশালী হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমেতেমনি শক্তিশালী দেশ গঠনের কাজ শুরু হচ্ছে।
ভাই ও বোনেরা, দিউ ইতিমধ্যেই স্মার্টসিটির স্বীকৃতি পেয়েছে। ফলে, দিউ-তেঅনেক নতুন প্রকল্প গড়ে উঠছে। এখানে আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন ছিল। সেটাবাস্তবায়নের কাজ শুরু হ’ল। এই বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠলে এখানকার ছাত্রছাত্রীদের আরউচ্চ শিক্ষার জন্য সুরাট-নর্মদায় যেতে হবে না।
এখানকার সাংসদ শ্রী প্রফুল্ল ভাই প্যাটেলের উদ্যোগে দমনের মৎস্য শিকারীভাই-বোনেদের জন্য কেরোসিনে প্রযোজ্য ভ্যাট ১০০ শতাংশ মকুব করা হয়েছে। কিন্তু আমিএখানকার মৎস্যজীবী ভাই-বোনেদের পাশাপাশি প্রফুল্লভাই প্যাটেল-কেও বলব – এখানেইথেমে থাকবেন না! এখন কেন্দ্রীয় সরকার ‘নীল বিপ্লব’-এর মাধ্যমে মৎস্য শিকারী ভাই ওবোনেদের দূরগামী নৌকা প্রদানের পদক্ষেপ নিয়েছে। আপনারা পাঁচ থেকে দশ জন মৎস্যশিকারী একসঙ্গে ব্যাঙ্ক থেকে এই বাবদ ঋণ চাইছে দেয় ঋণে সরকারের পক্ষ থেকে ছাড়দেওয়া হয়েছে। আপনারা সেই দূরগামী অত্যাধুনিক বড় নৌকা নিয়ে গভীর সমুদ্রে গেলে কমসময়ে বেশি মাছ ধরে উপকূলে ফিরতে পারবেন। এখন অগভীর সমুদ্রে ১২ ঘন্টা পরিশ্রম করেযতটা সাফল্য পান, এখন দু-ঘন্টাতেই সেই সাফল্য পাবেন।
আমি চাই যে, দমন প্রশাসন সমুদ্রতটে বসবাসকারী মৎস্যজীবী পরিবারের জন্য সমুদ্রগুটিকাচাষের বিশেষ প্রকল্প গড়ে তুলুক। এই গুটিকা নোনাজলেই ভালো ফলন হয়। সেই গুটিকাগুলিআমাদের ফসলের ক্ষেতে উন্নতমানের সার হিসাবে প্রয়োগ করলে সার্বিক ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিপাবে। আমি চাই যে, প্রফুল্লভাই এই উদ্যোগের নেতৃত্ব দিন, আর দেশের সামনে একটি নতুনমডেল প্রস্তুত করুন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, দিউ ও দমনে এই প্রকল্প অত্যন্ত সফল হবে।
ভাই ও বোনেরা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ডিজিটাল যোগাযোগ বৃদ্ধি, এলইডিবাল্ব লাগানোর অভিযান, সড়কপথ ও সেতু নির্মাণ ছাড়াও সমুদ্রপথে দিউ-র যোগাযোগব্যবস্থা আরও উন্নত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি আমরা। এখন যে পথ আপনারা ১৫-১৬ ঘন্টায়অতিক্রম করেন, তখন আধ ঘন্টা-এক ঘন্টায় তা পারবেন! কল্পনা করুন, কত সময় ও অর্থসাশ্রয় হবে! সাধারণ মানুষের কত লাভ হবে!
ভাই ও বোনেরা, দমন উন্নয়নের নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে, আমাদের দিউ-দমন, সিলবাসথেকে শুরু করে গোটা অঞ্চল দেশের সামনে মডেল হয়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস। আজ আপনারাবিপুল সংখ্যায় এসে যেভাবে আমাকে ভালোবাসা দিয়েছেন, আশীর্বাদ করেছেন – সেজন্য হৃদয়থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
ধন্যবাদ।