আজ যে ১ লক্ষ মানুষ তাঁদের নিজস্ব বাড়ির মালিকানাপত্র বা প্রপারটি কার্ড পেলেন, যাঁরা নিজেদের কার্ড ডাউনলোড করেছেন, তাঁদের আমি অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আজ যখন আপনারা নিজেদের পরিবারের সঙ্গে বসবেন। একসঙ্গে রাতের খাবার খাবেন, তখন আমি জানি যে, আগে হয়তো কোনও দিন এত আনন্দ হয়নি, যতটা আজ হবে। আপনারা নিজেদের ছেলেমেয়েদের গর্বের সাথে বলতে পারবেন, দেখো, এখন আমরা প্রত্যয়ের সঙ্গে বলতে পারবো যে, এটা আমাদের সম্পত্তি। পুরুষানুক্রমে তোমাদের বংশধররা এই সম্পত্তির মালিক হবে। আমাদের পূর্বজদের দলিল ছিল না, আজ দলিল পাওয়ায় আমাদের শক্তি বেড়ে গেল। আজকের সন্ধ্যা আপনাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের সন্ধ্যা। নতুন নতুন স্বপ্ন বোনার সন্ধ্যা এবং নতুন নতুন স্বপ্ন নিয়ে সন্তান-সন্ততিদের সঙ্গে কথা বলার সন্ধ্যা। আজ আপনারা যে অধিকার পেলেন, সেজন্য আপনাদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। এই অধিকার, এই দলিল আপনাদের বাড়ির মালিকানা নিশ্চিত করলো। এই বাড়ি এখন থেকে আপনারাই ব্যবহার করবেন, কিংবা আর কিছু যদি করতে চান, সেই সিদ্ধান্তও আপনারাই নেবেন। সরকার কোনও হস্তক্ষেপ করবে না এবং প্রতিবেশীরাও করতে পারবেন না।
এই প্রকল্প আমাদের দেশের গ্রামে গ্রামে ঐতিহাসিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। আমরা সবাই আজ এই ঘটনার সাক্ষী।
আজ এই কর্মসূচিতে উপস্থিত আমার মন্ত্রিসভার সহকর্মী শ্রী নরেন্দ্র সিং তোমরজী, হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী শ্রী মনোহর লালজী, উপ-মুখ্যমন্ত্রী শ্রী দুষ্মন্ত চৌটালাজী, উত্তরাখন্ডের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াতজী, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী যোগী আদিত্যনাথজী, মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী শিবরাজ সিং চৌহানজী, বিভিন্ন রাজ্যের মন্ত্রীগণ – এই স্বামীত্ব যোজনার অন্যান্য সুবিধাভোগী বন্ধুরাও আজ আমাদের মধ্যে উপস্থিত রয়েছেন। আর নরেন্দ্র সিংজী যেভাবে বলছিলেন, ১ কোটি ২৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ, যাঁরা নিজেদের নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন এবং আজ এই কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, অর্থাৎ আজ এই ভার্চ্যুয়াল মিটিং – এ এত অসংখ্য গ্রামের মানুষের যুক্ত হওয়া এই স্বামীত্ব যোজনা কতটা আকর্ষণীয়, কতটা শক্তিশালী এবং কতটা গুরুত্বপূর্ণ তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
আজ দেশ আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের অন্তর্গত আরেকটি বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করলো। স্বামীত্ব যোজনা গ্রামে বসবাসকারী আমাদের ভাই-বোনদের আত্মনির্ভর করে তুলতে অত্যন্ত সহায়ক হবে। আজ হরিয়ানা, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, উত্তরাখন্ড এবং উত্তর প্রদেশের হাজার হাজার পরিবারকে তাঁদের বাড়ির আইনসম্মত দলিল প্রদান করা হ’ল। আগামী ৩-৪ বছরে দেশের প্রতিটি গ্রামে প্রত্যেক বাড়িকে এই প্রপার্টি কার্ড প্রদানে চেষ্টা করা হবে।
আর বন্ধুগণ, আজকের দিনটি ভারতের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজ দেশের দু’জন মহান সন্তানের জন্মজয়ন্তী। একজন ভারতরত্ন লোকনায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণ আর দ্বিতীয় জন ভারতরত্ন নানাজী দেশমুখ। এই দুই মহাপুরুষের জন্মদিনটাই শুধু একই দিনে পড়েনি, তাঁরা উভয়েই দুর্নীতির বিরুদ্ধে, দেশে সততার স্বার্থে, গরিব মানুষ ও গ্রামের কল্যাণের জন্য একই রকম ভাবতেন – উভয়ের আদর্শ ও প্রচেষ্টা একই রকম ছিল।
জয়প্রকাশ বাবু যখন পূর্ণ স্বাধীনতার আহ্বান জানিয়েছিলেন, বিহারের মাটি থেকে যে আওয়াজ উঠেছিল, তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ নানাজী দেশমুখ করে গেছেন। জয়প্রকাশ বাবুর প্রেরণায় নানাজী দেশমুখ গ্রামে গ্রামে কাজ করেছেন। কী অদ্ভূত সংযোগ, গ্রাম ও গরিবের আওয়াজকে শক্তিশালী করে তুলতে জয়প্রকাশ বাবু ও নানাজীর জীবনের সংকল্প ছিল একই।
আমি কোথাও পড়েছি, যখন ডঃ কালাম চিত্রকূটে নানাজী দেশমুখের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, নানাজী তাঁকে বলেন, তাঁর চারপাশের কয়েক ডজন গ্রামে কারও বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর নেই। এতগুলি গ্রামের মানুষ মামলা-মোকদ্দোমা থেকে মুক্ত। নানাজীর মতে, গ্রামের মানুষ যদি পারস্পরিক বিবাদেই মজে থাকেন, তা হলে গ্রামের উন্নয়ন বা সমাজের উন্নয়ন হয় না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই স্বামীত্ব যোজনা আমাদের গ্রামগুলির অনেক বিবাদ সনাক্ত করার ক্ষেত্রে বড় মাধ্যম হয়ে উঠবে।
বন্ধুগণ, সারা বিশ্বে বড় বড় বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলেন, জমি ও বাড়ির মালিকাণার অধিকারই দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে। যখন আমাদের সম্পত্তির রেকর্ড থাকে, যখন অধিকার সুনিশ্চিত থাকে,– তখন নাগরিকদের জীবনও সুরক্ষিত থাকে। আর নাগরিকদের আত্মবিশ্বাস কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। সম্পত্তির রেকর্ড থাকলে মানুষ বিনিয়োগের জন্য – নতুন নতুন সাহসে বুক বেঁধে অর্থ উপার্জনের নতুন পথ অবলম্বন করে।
সম্পত্তির রেকর্ড থাকলে সহজে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাওয়া যায়। স্বরোজগারের পথ খোলে। কিন্তু সমস্যা হ’ল – আজকের পৃথিবীতে তিন ভাগের এক ভাগ জনসংখ্যার কাছেই আইনসম্মত সম্পত্তির রেকর্ড রয়েছে। গোটা বিশ্বে দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের কাছে কোনও রেকর্ড নেই। তাই, ভারতের মতো বিকাশশীল দেশের জনগণের কাছে সম্পত্তির রেকর্ড থাকা অত্যন্ত জরুরি। যাঁদের অনেক বয়স হয়েছে, লেখাপড়া জানেন না, অনেক কষ্ট করে জীবনযাপন করেন, তাঁরাও এখন হাতে সম্পত্তির মালিকানার দলিল পেয়ে এক নতুন বিশ্বাস নিয়ে জীবন শুরু করতে পারবেন।
এই ভাবনা নিয়েই দেশের পীড়িত-শোষিত-বঞ্চিত গ্রামবাসী সকলের ভালোর জন্য এত ভালো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। স্বামীত্ব যোজনার মাধ্যমে পাওয়া এই প্রপার্টি কার্ড নিয়ে গ্রামের মানুষ কোনও বিবাদ ছাড়াই নিজেদের সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন। প্রপার্টি কার্ড পাওয়ার পর গ্রামের মানুষ এখন বাড়িতে বাড়িতে জবর-দখলের আশঙ্কা থেকে মুক্ত হয়ে যাবেন। প্রপার্টি কার্ড দিয়ে আপনারা গ্রামে বসেই সহজে ব্যাঙ্কের ঋণ পেয়ে যাবেন।
বন্ধুগণ, আজ আমাদের গ্রামের নবীন প্রজন্ম নিজেদের শক্তিতে কিছু করতে চান। আত্মবিশ্বাস নিয়ে আত্মনির্ভর হয়ে উঠতে চান। কিন্তু নিজের বাড়িতে থেকেও নিজের জমি থাকতেও তাঁদের দলিল ছিল না বলে, অন্যরা তাঁদের কথা শুনতে রাজি ছিলেন না এবং তাঁরা ঋণ পেতেন না। এখন এই স্বামীত্ব যোজনার মাধ্যমে প্রপার্টি কার্ড দেখিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পেতে পারবেন।
বন্ধুগণ, এই স্বামীত্ব পত্রের আরেকটি লাভ, এটি গ্রামে একটি নতুন ব্যবস্থা গড়ে তুলবে। ড্রোনের মতো নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে যেভাবে ম্যাপিং ও সার্ভে করা হচ্ছে, এর ফলে প্রত্যেক গ্রামের সঠিক ল্যান্ড রেকর্ডও তৈরি হয়ে যাচ্ছে। আমি যখন প্রকল্পের শুরুতে আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলছিলাম, তখন তাঁরা বলেন, গ্রামে জমি মাপার জন্য তাঁরা যখন ড্রোন চালাতেন, তখন গ্রামের মানুষ খুব উৎসাহ নিয়ে গ্রামের চলমান ছবি দেখতে ভিড় করতেন। তাঁদের বলতেন, পুরো গ্রামের ছবি দেখান। আকাশ থেকে আমাদের গ্রাম দেখতে কেমন লাগে, উপর থেকে আমাদের গ্রাম দেখতে কত সুন্দর, আর তারপর তো গ্রামবাসীদের গ্রামের ছবি দেখানো একটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে ওঠে। আর তাঁরা গ্রামবাসীদের চোখে গ্রামের প্রতি ভালোবাসা জেগে উঠতে দেখতেন।
ভাই ও বোনেরা, এতদিন পর্যন্ত অধিকাংশ গ্রামের স্কুল, হাসপাতাল, বাজার কিংবা অন্যান্য সরকারি পরিষেবা কিভাবে বাস্তবায়িত করা হতো ? জমির নিরিখে এই সমস্ত কাজের হিসেব-নিকেশ করা খুব জরুরি ছিল। সরকারি বাবু কিংবা গ্রাম প্রধান আর যাঁর পকেটে জোর আছে – এরকম মানুষরা এতদিন যা খুশি করিয়ে নিতে পারতো। এখন আর এসব চলবে না। এখন সবকিছুর নকশা কাগজে তৈরি হয়ে গেছে। সরকারের কাছে সঠিক ল্যান্ড রেকর্ড থাকায় এখন গ্রামের সমস্ত উন্নয়নের কাজ অত্যন্ত সহজ হয়ে উঠেছে।
বন্ধুগণ, বিগত ৬ বছরে আমরা পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থাকে ক্ষমতায়িত করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। স্বামীত্ব যোজনা এই প্রচেষ্টাকে আরও মজবুত করবে। পরিকল্পনা পর্যায় থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন ও তদারকির দায়িত্ব গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে রয়েছে। এখন গ্রামের মানুষ নিজেরাই ঠিক করবেন, তাঁদের গ্রামের উন্নয়নের জন্য কী কী জরুরি, কোন সমস্যাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং কোন সমস্যার সমাধান কিভাবে করতে হবে!
পঞ্চায়েতের কাজকর্ম সব এখন অনলাইন করে দেওয়া হচ্ছে। পঞ্চায়েত উন্নয়নের কাজের ক্ষেত্রে জিও ট্যাগিং অনিবার্য করে দেওয়া হয়েছে। গ্রামে যদি একটা কুঁয়ো খনন করা হয়, আমার অফিসে বসেও জানতে পারবো যে কিভাবে কুঁয়োটি তৈরি হয়েছে। এটাই প্রযুক্তির মজা। এখন থেকে শৌচালয়, স্কুল, জলের ব্যবস্থা, বাঁধ নির্মাণ – সবকিছুরই জিও ট্যাগিং হবে। ফলে, মাঝখান থেকে টাকা-পয়সা চোট যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এখন দেখাতে হবে আর যিনি চান, তিনি দেখে নিতে পারবেন।
বন্ধুগণ, স্বামীত্ব যোজনার মাধ্যমে আমাদের নগরপালিকা ও নগর নিগমের মতো গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতেও সুব্যবস্থিত পদ্ধতিতে গ্রামের উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা সহজ হবে। ফলে, সমস্ত সরকারি পরিষেবা এবং অন্যান্য সহায়তা গ্রামগুলিকে সম্পদশালী করে তুলবে। তাই, গ্রামবাসীদের হাতে যে দলিলগুলি পৌঁছেছে, সেগুলি গ্রাম পঞ্চায়েতকে শক্তিশালী করে তুলতে অনেক সাহায্য করবে।
বন্ধুগণ, অনেকেই বলেন, ভারতের আত্মা গ্রামে থাকে। কিন্তু সত্য এটাই যে, ভারতের গ্রামগুলিকে অবহেলায়-অযত্নে ফেলে রাখা হয়েছিল। শৌচালয়, বিদ্যুৎ-এর সমস্যা সবচেয়ে বেশি কোথায় ছিল? – গ্রামে! একবিংশ শতাব্দীতেও অষ্টাদশ শতাব্দীর মতো করে গ্রামবাসীদের থাকতে হ’ত, কাঠ কয়লার উনুনে ধোঁয়ার মধ্যে রান্না করতে গ্রামের মা ও বোনেরা; তাঁদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের অবস্থা সবচেয়ে বেশি করুণ ছিল। এত বছর ধরে ক্ষমতায় থেকে, বড় বড় কথা বলে গেছেন। অথচ, তাঁরা গ্রামের গরিবদের জন্য কিছুই করেননি। আমি এমন করতে পারবো না। আপনাদের আশীর্বাদে যতটা সম্ভব আপনাদের জন্য, গ্রাম ও গরিবদের জন্য করতে পারবো, পীড়িত-শোষিত-বঞ্চিতদের জন্য করতে পারবো। যাতে তাঁদের কারও ওপর নির্ভর না করতে হয়। অন্যের ইচ্ছার দাস হয়ে না বাঁচতে হয়।
বন্ধুগণ, বিগত ৬ বছর ধরে এরকম পুরনো সমস্ত সমস্যা দূর করার জন্য একের পর এক কাজ শুরু করেছি। আর গ্রামে গ্রামে গরিবদের বাড়ি অবধি পৌঁছে দিয়েছি। আজ দেশে কোনও রকম বৈষম্য ছাড়াই সকলের উন্নয়ন হচ্ছে, সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রকল্পগুলি মানুষের উপকারে লাগছে।
এই স্বামীত্ব যোজনার মতো প্রকল্প যদি আগে তৈরি হ’ত ….. এটা ঠিক তখন তাঁরা ড্রোনের সাহায্য পেতেন না ….. কিন্তু গ্রামবাসীদের সঙ্গে বসে মিলেমিশে পথ তো তৈরি করা যেত! কিন্তু তা হয়নি। এটা হলে দালাল ও ঘুষখোররা আগেই দূর হ’ত। এখন আমরা নতুন প্রকল্প, নতুন প্রযুক্তি নিয়ে এসেছি। আগে জমির মানচিত্র তৈরিতে দালালদের নজরদারিতে হ’ত, আর এখন ড্রোনের নজরদারিতে হচ্ছে। ড্রোন যা দেখবে, সেই অনুযায়ী দলিল তৈরি হবে।
বন্ধুগণ, ভারতের গ্রামগুলি এবং গ্রামবাসীদের জন্য যত কাজ বিগত ৬ বছরে করা হয়েছে, তত কাজ স্বাধীনতার পর ৬ দশক ধরেও হয়নি। ৬ দশক ধরে গ্রামের কোটি কোটি মানুষ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে বঞ্চিত ছিলেন। কোটি কোটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। কোটি কোটি পরিবার শৌচাগার থেকে বঞ্চিত ছিল। এখন প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, প্রত্যেক বাড়িতে বিদ্যুৎ এবং শৌচালয় নির্মিত হয়েছে।
বন্ধুগণ, অনেক দশক পর্যন্ত গ্রামের গরিবরা রান্নার গ্যাসের কথা চিন্তাও করতে পারতেন না। আজ গরিবদের ঘরে ঘরে রান্নার গ্যাসের সংযোগ পৌঁছে গেছে। অনেক দশক ধরে গ্রামের কোটি কোটি পরিবারের নিজস্ব বাড়ি ছিল না। এখন প্রায় ২ কোটি গরিব পরিবার পাকা বাড়ি পেয়েছে। আর যাঁরা এখনও পাননি, তাঁদের যত দ্রুত সম্ভব পাকা বাড়ি দেওয়ার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। অনেক দশক ধরে গ্রামের বাড়িতে নলের মাধ্যমে জলের কথা কেউ ভাবতেও পারতেন না। মা-বোনদের ৩-৪ কিলোমিটার হেঁটে মাথায় করে জল নিয়ে আসতে হ’ত। এখন প্রত্যেকের বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে গেছে। আর দেশে আরও ১৫ কোটি বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছনোর কাজ করে যাচ্ছে – জল জীবন মিশন।
দেশের প্রত্যেক গ্রামে অপ্টিকাল ফাইবার পৌঁছে দেওয়ার একটি বড় অভিযান দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। বিদ্যুতের অপ্রতুলতা নিয়ে আগে মানুষের অভিযোগ ছিল। আর এখন মানুষ মোবাইল ফোনের কানেকশন ঠিক মতো না পেলে অভিযোগ করেন; এই সমস্যার সমাধান অপ্টিকাল ফাইরবারের মাধ্যমে হবে।
বন্ধুগণ, যেখানে দারিদ্র ও অভাব ছিল, সেখানে বড় বড় শক্তির প্রভাব এবং তাঁদের চাপ মানুষের জীবন পর্যুদস্ত করে রেখেছিল। আজ গ্রাম ও গরিবকে অভাবে রেখে নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়া – এটা ইতিহাস! আমরা গরিবদের অভাব থেকে মুক্তির অভিযান চালাচ্ছি।
ভাই ও বোনেরা, অনেকের মনে হচ্ছে, গ্রামের মানুষ গরিব, কৃষক, আদিবাসীদের ক্ষমতায়ণ হয়ে গেলে তাঁদেরকে কে চিনবেন? তাঁদের দোকান চলবে না। কারা তাঁদের হাত-পা ধরবেন, মাথা নত করবেন। সেজন্য তাঁরা চান যে, গ্রামের সমস্যাগুলি বজায় থাকুক, তাঁরা আগের মতোই থামিয়ে রাখা, ঝুলিয়ে রাখা, বিভ্রান্ত করার স্বভাব থেকে মুক্ত হতে পারছেন না।
সম্প্রতি আমরা কৃষি ক্ষেত্রে যে ঐতিহাসিক সংস্কার এনেছি, সেজন্য তাঁরা ভীষণ ক্ষেপে গেছেন। কৃষকদের স্বার্থে তাঁরা উত্তেজিত নন। দেশবাসী এখন তাঁদের সমস্যা বুঝতে পারছেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে দালাল-ঘুষখোর-দুর্নীতিবাজদের মাধ্যমে যে একটা মায়াজাল সৃষ্টি করে রেখেছিলেন, দেশের মানুষ সেই মায়াজাল ছিঁড়ে তাঁদের ক্ষমতার প্রাসাদ ধ্বসিয়ে দিচ্ছেন। কোটি কোটি ভারতবাসীর কর্মঠ হাতগুলি এখন ভারতের নবনির্মাণে ব্যস্ত। এই সময়ে এই লুন্ঠনকারীদের মুখোশ খুলে যাচ্ছে। সেজন্য আজকাল তাঁরা সবকিছু নিয়ে বিরোধিতা করছেন। তাঁদের গরিব, গ্রাম কিংবা দেশ নিয়ে কোনও মাথা ব্যথা নেই। যে কোনও ভালো কাজেরই তাঁরা বিরোধিতা করছেন। তাঁরা দেশের উন্নয়ন থামিয়ে দিতে চান। তাঁরা দেশের গ্রামগুলিকে আত্মনির্ভর হতে দিতে চান না। তাঁরা গরিব, কৃষক ও শ্রমিক ভাই-বোনদের আত্মনির্ভরতার বিরোধী। আজ আমরা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেড় গুণ করে দেখিয়েছি। এটা তাঁরা কোনও দিনই করেননি।
ক্ষুদ্র চাষী, পশুপালক, মৎস্যজীবীদের কিষাণ ক্রেডিট কার্ড দেওয়ার ফলে তাঁদের কালো টাকা রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ইউরিয়া নিম কোটিং হওয়ার ফলে অনেক অবৈধ ব্যবসা ও রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। সেজন্য তাঁদের এত সমস্যা। কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পৌঁছনোয় তাঁরা অসন্তুষ্ট। কৃষক ও ক্ষেত মজুরদের জন্য বিমা ও পেনশন পরিষেবা চালু হওয়ায় যাঁরা অসন্তুষ্ট – তাঁরাই আজ কৃষি সংস্কার নিয়ে বিরোধিতা করছেন। কিন্তু কৃষকরা তাঁদের সঙ্গে যেতে রাজি নন, কৃষকরা তাঁদের চিনে গেছেন।
বন্ধুগণ, দালাল, ঘুষখোর, কমিশনবাজদের সমর্থনে রাজনীতি করা মানুষেরা যতই চাক, যত স্বপ্নই দেখুক, যত গুজবই ছড়াক – দেশ কিন্তু আর ভ্রমিত হবে না, থেমে থাকবে না। দেশবাসী দৃঢ় প্রত্যয়ে গ্রাম ও গরিবকে আত্মনির্ভর করে তুলতে এগিয়ে যাবে। ভারতের সামর্থ্যকে বিশ্ববাসীর সঙ্গে পরিচিত করাবে।
এই সংকল্প থেকে সিদ্ধির পথে স্বামীত্ব যোজনার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর সেজন্য আজ যে ১ লক্ষ পরিবার এত কম সময়ে স্বামীত্ব যোজনায় উপকৃত হয়েছেন, তাঁদের পক্ষ থেকে আমি বিশেষভাবে নরেন্দ্র সিংজী এবং তাঁর গোটা টিমকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। তাঁরা এত কম সময়ে এত বড় কাজ করেছেন। এই লকডাউনের সময় গ্রামে গ্রামে গিয়ে এত বড় কাজ করা সহজ ছিল না। তাঁদের যতই অভিনন্দন জানাই না কেন, তা কম পড়বে।
আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই সরকারের ছোট-বড় কর্মীরা যে গতিতে কাজ করছেন, আমার মনে হয় না, সারা দেশে এই প্রপার্টি কার্ড চালু করতে ৪ বছর লাগবে। কারণ, এত বড় কাজ যখন আমি এপ্রিলে এ বিষয়ে আলোচনা করছিলাম, তখন যে লক্ষ্য রাখা হয়েছিল, তার চেয়ে ঢের বেশি তাঁরা করে দিয়েছেন। সেজন্য নরেন্দ্র সিংজীর পুরো টিম এবং তাঁর বিভাগের প্রত্যেক কর্মচারী অনেক অনেক ধন্যবাদের পাত্র। পাশাপাশি, আজ যাঁরা উপকৃত হয়েছেন, স্বামীত্বের অধিকারী হয়েছেন, আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ হয়েছেন, আপনাদের মুখের হাসি আমাকে সবচেয়ে বেশি আনন্দ দেয়। আপনাদের আনন্দই আমাকে আনন্দ দেয়। আপনাদের জীবনে ভবিষ্যতের স্বপ্ন সাকার করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমার স্বপ্নগুলিও বাস্তবায়িত হতে দেখতে পাচ্ছি।
সেজন্য ভাই ও বোনেরা, আপনারা যতটা খুশি, তার চেয়েও বেশি খুশি আমি। কারণ, আমার ১ লক্ষ পরিবার আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান নিয়ে, নিজেদের সম্পত্তির দলিল সঙ্গে নিয়ে মাথা উঁচু করে চলবেন। আর এই সুযোগ আমাদের সামনে এসেছে প্রিয় নেতা জয়প্রকাশ ও নানাজী দেশমুখের জন্মদিনে। এর থেকে বড় আনন্দ আর কী হতে পারে!
আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। কিন্তু এখন আমরা সারা দেশে করোনার বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। করোনা প্রতিরোধে প্রত্যেকেই যেন মাস্ক পরে থাকেন, ২ গজের দূরত্ব বজায় রাখেন, বারবার সাবান দিয়ে হাতে ধোবেন। নিজেরাও অসুস্থ হবেন না, পরিবারের কাউকে অসুস্থ হতে দেবেন না। আপনার গ্রামে যেন কোনও রোগ না ঢুকতে পারে। সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, আপনারা জানেন যে, এই রোগের কোনও ওষুধ বিশ্ববাসীর হাতে আসেনি।
আপনারা আমার পরিবারের মানুষ। সেজন্য আপনাদের সবাইকে অনুরোধ জানাই, “ওষুধ নয় যতক্ষণ, ঢিলে দিও না ততক্ষণ” – এই মন্ত্র ভুলবেন না। ভালোভাবে চিন্তা করুন। এই বিশ্বাস নিয়ে আরেকবার এই আনন্দের মুহূর্তে – স্বপ্নের মুহূর্তে – লক্ষ পরিবারের সংকল্প বাস্তবায়নের মুহূর্তে অনেক অনেক শুভ কামনা জানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।