ঝাড়খন্ডের রাজ্যপাল শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মুজি, রাজ্যের প্রাণবন্ত জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী রঘুবর দাস, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদে আমার সহকর্মী শ্রী জগৎ প্রসাদ নাড্ডা, আমার সহকর্মী এই রাজ্যের ভূমিপুত্র শ্রী সুদর্শনপ্রসাদ ভগৎজি,আমার সহকর্মী জয়ন্ত সিনহাজি,নীতি আয়োগের সদস্য ডক্টর বি.কে.পাল,রাজ্যসরকারের মন্ত্রী রামচন্দ্র চন্দ্রমুখী,সংসদে আমার সহযোগী শ্রী রামটহল চৌধুরীজি, বিধায়ক শ্রী রামকুমার পাহনজি, এখানে উপস্থিত সকল বিশিষ্ট মানুষজন এবং বিশাল সংখ্যায় আগত ঝাড়খন্ডনিবাসী আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা।
বন্ধুগণ, আজ আমরা সবাই সেই বিশেষ উপলক্ষের সাক্ষী থাকতে চলেছি,যা আগামী দিনে মানবতার সবচেয়ে বড় সেবা হিসেবে নির্ধারিত হতে চলেছে। আজ আমি এখানে শুধুমাত্র ঝাড়খন্ডের বিকাশের প্রক্রিয়াকে গতিশীল করার জন্যই নয়, বরং গোটা দেশের জন্য আমাদের ঋষি-মুনিগণ যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, যা নাকি প্রত্যেক পরিবারেরই স্বপ্ন হয়ে থাকে, আমাদের মুনি-ঋষিরা স্বপ্ন দেখেছিলেন, ‘সর্ব ভবন্তু সুখিনা,সর্ব সন্তু নিরাময়ঃ!’ আমাদের এই বহু শতাব্দী প্রাচীন শপথকে এই শতাব্দিতেই বাস্তবায়িত করতে হবে, আর এজন্যই এর এক মহামূল্যবান সূচনা হতে চলেছে।
সমাজের শেষ পংক্তিতে যে মানুষটি দাঁড়িয়ে আছেন, সেই গরিব থেকে গরিবতর মানুষের জন্য চিকিৎসার সুব্যবস্থা করা যায়, তেমন স্বপ্নপূরণের জন্য এক বিশাল বড় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বিরসামুন্ডার এই মাটিতে গ্রহণ করা হচ্ছে।
আজ গোটা দেশের নজর রাঁচির দিকে নিবদ্ধ। দেশের ৪০০-রও বেশি জেলাতে এমনই বড়সড় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেখানকার সমস্ত মানুষ রাঁচির এই গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশের দিকে তাকিয়ে আছেন। এরপর তাঁরাও এই কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
আজ এখানে আমার দু’টো মেডিক্যাল কলেজের সূচনা করারও সুযোগ হয়েছে। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, স্বাধীনতার ৭০ বছরে তিনটে মেডিক্যাল কলেজে সাড়ে তিনশো পড়ুয়া আর বিগত চার বছরে আটটি মেডিক্যাল কলেজে ১২০০ পড়ুয়া। কাজ কি করে হয়, কত ব্যাপক মাত্রায় হতে পারে, কত গতিতে হতে পারে, এর উদাহরণ খোঁজার জন্য অন্য কোথাও যেতে হবে বলে আমি বিশ্বাস করি না।
ভাই ও বোনেরা,
আয়ুষ্মান ভারতের সংকল্প নিয়ে প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা আজ থেকে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্পকে প্রত্যেকেই নিজের নিজের কল্পনানুযায়ী নাম দিচ্ছেন। কেউ একে মোদী কেয়ার বলছেন, কেউ আবার গরিবদের প্রকল্প নাম দিয়েছেন। কিন্তু আমার জন্য এটি দেশের দরিদ্র নারায়ণের সেবার একটি সুবর্ণ সুযোগ। আমার মতে, এর থেকে ভালো করে কোনও মতেই গরিব মানুষের সেবা করা সম্ভব নয়।
দেশের ৫০ কোটিরও বেশি মানুষকে বছরে ৫ লক্ষেরও বেশি স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রদানকারী এই প্রকল্প বিশ্বের এ ধরণের সর্ববৃহৎ প্রকল্প। গোটা দুনিয়ায় সরকারি অর্থে এর চেয়ে বড় কোনও প্রকল্প আর নেই।
এই প্রকল্পে উপকৃতদের সংখ্যা, আমরা এখানে বসে কল্পনাও করতে পারবো না; গোটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭-২৮টি দেশের মোট জনসংখ্যার থেকে বেশি মানুষ ভারতে এই প্রকল্প দ্বারা উপকৃত হবেন।
গোটা আমেরিকার জনসংখ্যা, গোটা কানাডা ও মেক্সিকোর মিলিত জনসংখ্যার সমান সংখ্যক মানুষকে এই আয়ুষ্মান ভারত যোজনার মাধ্যমে আরোগ্য প্রদান করা হবে।
আর সেজন্য একটু আগেই আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রী নাড্ডাজি বলছিলেন যে, বিশ্বে সবচেয়ে নামী স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিনগুলিতে প্রশংসা করে লেখা হয়েছে যে, ভারত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য প্রকল্প চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার মাধ্যমে দেশে দরিদ্র জনগণের স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসতে চলেছে।
আমি বিশ্বাস করি, আগামীদিনে বিশ্বের চিকিৎসা ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্প সম্পর্কে যাঁরা চিন্তাভাবনা করেন, আরোগ্য ও অর্থনীতির সমন্বয়ে নিরাময় এবং আধুনিক ব্যবস্থা নিয়ে যাঁরা ভাবেন, সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের পরিবর্তন আনতে পারলে সমাজ জীবনে এর কী কী প্রভাব পরিলক্ষিত হবে; তেমন সমাজ বিজ্ঞানী, স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদরা এই আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পকে তাঁদের পাঠ্যক্রমের বিষয় করে তুলবে। তাঁদের ভাবতে হবে, এই ভিত্তিতে তাঁদের দেশের পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী কেমন মডেল গড়ে তোলা উচিৎ!
এই প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করতে যারা কাজ করে চলেছেন, তাদের সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাই। এটা সহজ কাজ ছিল না, ছ’মাসের মধ্যে এত বড় প্রকল্প; এর পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত নানা পর্যায়ে আপনারা উৎকর্ষের পরিচয় দিয়েছেন। সুশাসন একেই বলে! দলবদ্ধভাবে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ৫০ কোটি মানুষ ও ১৩ হাজার হাসপাতালকে যুক্ত করে এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে আপনারা অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন।
সেজন্য আমি আজ সর্বসমক্ষে ১২৫ কোটি ভারতবাসীর সামনে গোটা টিমকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, এই টিম এখন পূর্ণ শক্তি দিয়ে অধিক সমর্পণ ভাব নিয়ে কাজ করে যাবে। কারণ, এতদিন শুধু প্রধানমন্ত্রী তাদের পেছনে পড়ে ছিল কিন্ত এখন ৫০ কোটি দরিদ্র মানুষের আশীর্বাদ তাদের সম্বল। আর যখন ৫০ কোটি গরিব মানুষের আশীর্বাদ কোনও টিমের সঙ্গে থাকে, যে কোনও গ্রামের আশা কর্মীরাও সর্বান্তকরণে এই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সদা তৎপর থাকবেন – এটা আমার বিশ্বাস।
বন্ধুগণ, গরিবদের নিরাময়ের এই সুরক্ষা কবচ জাতির উদ্দেশে সমর্পণ করে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি যে, প্রকল্প খুবই ভালো এবং প্রত্যেকের জন্য হলেও কেউ হাসপাতাল উদ্বোধন করতে এসে কি বলতে পারেন যে, আপনাদের হাসপাতাল সবসময়ে ভরে থাকুক! কেউ বলতে পারেন না। আমি উদ্বোধন করতে গিয়ে সবসময় বলি, আপনাদের হাসপাতাল সবসময়ে খালি থাকুক।
আজ আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প উদ্বোধন করার সময় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করবো যে আমার দেশের কোনও গরিব কিম্বা তাঁর পরিবারের সামনে যেন এমন সংকট না আসে যাতে তাঁদের এই প্রকল্পের সাহায্যে কোনও হাসপাতালে যেতে হয়। আমি ঈশ্বরের কাছে সকলের উত্তম স্বাস্থ্যের প্রার্থনা করি। কিন্তু এহেন দুর্ভাগ্যের শিকার হয়ে এহেন সংকটের সম্মুখীন হলে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ আপনাদের সেবায় হাজির।
সেরকম কঠিন সময়ে যে কোনও ধনী মানুষ যে ধরণের চিকিৎসা পরিষেবা পেতে পারেন, আমার দেশের গরিবদেরও এখন সেই পরিষেবা পাওয়া উচিৎ। যে প্রকল্প আজ থেকে চালু হ’ল, এত বড় প্রকল্পের ‘ট্রায়াল রান’ও প্রয়োজন ছিল। প্রযুক্তি কিভাবে কাজ করবে, আরোগ্য মিত্র রূপে যাঁরা কাজ করবেন, তাঁরা ঠিক মতো প্রযুক্তির ব্যবহার করতে পারছেন কি না, হাসপাতালগুলি আগে যেভাবে কাজ করতো, সেই ব্যবস্থায় কাঙ্খিত পরিবর্তন এসছে কি না – সেসব খতিয়ে দেখার জন্য দেশের ভিন্ন ভিন্ন জেলায় বিগত কয়েক দিন ধরে এই পরীক্ষামূলক কাজ চলছিল। এর সাফল্য থেকে আমার বিশ্বাস আরও জোরালো হয়েছে যে, এই অভিযান সঠিক অর্থে দেশের দরিদ্র জনগণকে স্বাস্থ্যের অধিকার প্রদানে সক্ষম হবে।
বন্ধুগণ, আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সঙ্গে একটি বিশেষ মাত্রা যুক্ত হয়েছে। বিগত ১৪ এপ্রিল ছত্তিশগড়ের বস্তারের আরণ্যক গ্রামগুলিতে যখন এর প্রথম পর্যায় শুরু হয়েছিল, আরোগ্য কেন্দ্র উদ্বোধন হয়েছিল, দিনটি ছিল বাবাসাহেব আম্বেদকরের জন্মজয়ন্তী। আর আজ দ্বিতীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়টি শুরু করা হ’ল ২৫ সেপ্টেম্বর তারিখে পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্মজয়ন্তীকে মাথায় রেখে। আজ রবিবার বলে আমার সুবিধা মতো আমরা এই প্রকল্প দু’দিন আগেই শুরু করেছি। কিন্তু আজও জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। আজ ভারতীয় চৈতন্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রবক্তা রাষ্ট্রকবি দিনকরের জন্মদিন।
আর সেজন্য এই মহাপুরুষদের আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে সমাজে সমস্ত রকম ভেদভাব দূর করার জন্য যাঁরা সারা জীবন গরিবদের জন্য ভেবেছেন, গরিবদের জন্য বেঁচেছেন, দরিদ্র মানুষের গরিমা রক্ষায় সারা জীবন সংঘর্ষ করেছেন। আজ সেই মহাপুরুষদের স্মরণ করে জাতির উদ্দেশে এই প্রকল্প উৎসর্গ করছি।
দেশে উন্নত চিকিৎসা যেন শুধু কিছু মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থাকে, সবাই যেন উন্নত চিকিৎসা পান – এই ভাবনা থেকেই আজ জাতির উদ্দেশে এই প্রকল্প উৎসর্গ করছি।
ভাই ও বোনেরা, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই আমরা ‘গরিবি হটাও’ শ্লোগান শুনে আসছি। গরিবদের নামে মালা জপতে জপতে যারা গরিবদের চোখে ধুলো দিয়ে গেছেন, তাঁরা যদি আজ থেকে ৩০-৪০-৫০ বছর আগে গরিবদের নামে রাজনীতি করার বদলে তাঁদের ক্ষমতায়নে জোর দিতেন, তা হলে আজ দেশের এই দশা হ’ত না। দেশকে এখনও অনেক মৌলিক ভুলের মাশুল গুনতে হচ্ছে। তাঁরা ভাবতেন যে, গরিবদের বিনামূল্যে কিছু পাইয়ে দিলেই তাঁরা সন্তুষ্ট থাকবেন। কিন্তু আসলে দরিদ্র মানুষ যেমন আত্মাভিমানী হন, তা পরিমাপ করার মতো কোনও দাড়িপাল্লা ঐ তথাকথিত দরিদ্রদরদীদের ছিল না।
আমি গরিব ঘরের সন্তান। দারিদ্র্যের যন্ত্রণা আমি বুঝি। গরিবদের আত্মসম্মানও আমি বুঝি। সেই আত্মসম্মানই আমাকে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শক্তি দেয়। কিন্তু তাঁরা কখনও গরিবদের আত্মসম্মানের কথা ভাবেননি, সেজন্য প্রত্যেক নির্বাচনে পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি করে গেছেন। আমরা এই রোগের গোড়ায় গিয়েছি। সেজন্য দেশ দারিদ্র্য মুক্তির পথে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। বিগত দিনে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা বলেছে যে, গত দু-তিন বছরের মধ্যে ভারতের ৫ কোটি পরিবার অতি দরিদ্র পরিস্থিতি থেকে উপরে উঠে এসেছে।
ভাই ও বোনেরা, গরিব মানুষের ক্ষমতায়নের মাধ্যমেই আমরা এই সাফল্য পেয়েছি। গরিব মানুষ মাথার ওপর ছাদ পেলে তাঁর জীবনের চিন্তাভাবনা বদলায়। গরিব মা রান্নার গ্যাসের সংযোগ পেলে জীবনে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অন্যের সমকক্ষ হওয়ার জন্য এগিয়ে যেতে পারেন। গরিব মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুললে তাঁর আত্মসম্মান বৃদ্ধি পায়। অর্থ সাশ্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। গরিব মানুষের টিকাকরণ হলে, পোষণ মিশন সফল হলে, গরিব মায়েরা ক্ষমতায়নের পথে এগিয়ে যান।
আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন, সম্প্রতি যে এশিয়ান গেমস্ হয়ে গেল, সেখানে ভারতের হয়ে পুরষ্কার কারা এনেছেন? স্বর্ণপদক কারা এনেছেন? সাম্প্রতিক অতীতে ভারতকে যাঁরা নতুন নতুন সম্মানজনক সাফল্য এনে দিয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই গ্রামের গরিব ঘরে বড় হয়ে ওঠা, অপুষ্টির সঙ্গে লড়াই করা যুবক-যুবতীরা।
গরিবের ক্ষমতাকে উপলব্ধি করতে হবে। সেজন্য আমাদের প্রত্যেক প্রকল্প গরিব মানুষের ক্ষমতায়নের জন্য রচিত। দেশের আরেকটি বড় পরিবর্তন এসেছে। এতদিন দেশের সমস্ত নীতি ভোট ব্যাঙ্কের দিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক ভিত্তিতে প্রণয়ন করা হয়েছে। যে জাতি বা সম্প্রদায় নির্বাচনে জেতার গ্যারান্টি দিতে পারে, তাঁদের জন্য সুবিধা দেওয়ার কথা ভাবা হ’ত। ক্ষেত্রীয় উন্নয়ন, সামাজিক পরিবর্তন এবং সাম্প্রদায়িক সঙ্কট থেকে মুক্তির কথা না ভেবে পূর্ববর্তী সরকারগুলি শুধুই ভোটের রাজনীতি করে সমাজকে বিভাজনের মাধ্যমে লুঠমার চালিয়েছে।
আমরা সেই পথ পরিহার করেছি। আমরা চাই না যে দেশ আর কখনও সেই পথে ফিরে আসুক। আমাদের মন্ত্র হ’ল – ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’। আয়ুষ্মান ভারতের ক্ষেত্রে কোনও জাতি, সম্প্রদায়, উঁচু-নীচু ভেদভাব মানা হবে না। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, অঞ্চল, সম্প্রদায়, বিশ্বাস নির্বিশেষে সবকা সাথ, সবকা বিকাশ। কেউ ঈশ্বরকে মানেন কি মানেন না, মন্দির, মসজিদ, গুরদ্বোয়ারা কিংবা গির্জায় প্রার্থনা করতে যান, প্রত্যেকের জন্যই আয়ুষ্মান ভারত যোজনা।
বন্ধুগণ, এই প্রকল্প কতটা ব্যাপক, তা অনুমান করা যায় এই উদাহরণ দিয়ে যে, ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনী, লিভার ও ডায়াবেটিস সহ ১,৩০০টিরও বেশি রোগের চিকিৎসা এই প্রকল্পে সামিল করা হয়েছে। শুধু সরকারি হাসপাতাল নয়, বেসরকারি হাসপাতালেও তাঁরা এই চিকিৎসা পরিষেবা পাবেন। ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার খরচ প্রদান করা হবে। এর মধ্যে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ভর্তির খরচ, অপারেশনের খরচ, ওষুধপত্রের খরচ এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জামের খরচও সামিল করা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, সারা দেশের প্রত্যেক মানুষ যেন সমান মানের চিকিৎসা পান – সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাউকে যেন চিকিৎসার জন্য দরজায় দরজায় ঘুরতে না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে। সবকিছু প্রযুক্তির মাধ্যমে সুনিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কোনও সঙ্কলটগ্রস্ত মানুষ যেন এই প্রকল্প থেকে বাদ না পড়েন, সেজন্য নিরন্তর সমীক্ষা জারি রয়েছে।
এই প্রকল্পে আপনাদের কোনও প্রকার নথিভুক্তিকরণের প্রয়োজন নেই। আপনারা যে ই-কার্ড পাচ্ছেন, সেটাই যথেষ্ট। সেখানেই আপনাদের সমস্ত তথ্য থাকবে – এজন্য কোনও আবেদন-নিবেদনের প্রয়োজন নেই।
এছাড়া একটা টেলিফোন নম্বর এবং আমি বিশ্বাস করি তা আপনাদের মনে রাখা জরুরি। আমি সমস্ত গরিব পরিবারের প্রতি অনুরোধ জনাব আপনারা এই নম্বরটা অবশ্যই মনে করে রাখবেন,১৪৫৫৫ ওয়ান ফোর ট্রিপল ফাইভ, এই নম্বর থেকে আপনি জানতে পারবেন এই যোজনায় আপনার নাম আছে কি নেই, আপনার পরিবারের নাম আছে কি নেই। আপনার সমস্যা, কি সুবিধে পাবেন,এই সমস্ত কিছু কাছাকাছি কমন সার্ভিস সেন্টার, আজ দেশে তিন লক্ষ কমন সার্ভিস সেন্টার আছে, এই তিন লক্ষ কমন সার্ভিস সেন্টারের কোনও একটির জন্য আপনাকেও দু’তিন কিলোমিটারের বেশি যেতে হবে না|সেখানে গিয়ে আপনি তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।
বন্ধুরা, এই ব্যবস্থাপনার সঙ্গেই আরও দু’রকম বড় সহায়ক পেয়ে যাবেন, প্রথমতঃ আপনার গ্রামের আশা ও এ এন এম বোন এবং দ্বিতীয়তঃ প্রত্যেক হাসপাতালে আপনাদের সাহায্য করতে নিয়োজিত থাকবে প্রধানমন্ত্রী আরোগ্য মিত্র। এই প্রধানমন্ত্রী আরোগ্য মিত্র আপনার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে থেকে শুরু করে চিকিৎসার পর পর্যন্ত আপনাকে যোজনার সুবিধে পাইয়ে দিতে পুরোপুরি সাহায্য করে যাবে|দেশকে আয়ুষ্মান করে তোলার জন্য এই নিবেদিত প্রাণ বন্ধু আপনাকে ঠিকঠাক তথ্য যোগাবেন।
বন্ধুগণ, আয়ুষ্মান ভারতের এই অভিযান প্রকৃত অর্থে একতাবদ্ধ ভারতে সবার জন্য একই ধরনের চিকিৎসার ভাবনাকে মজবুত করবে|যে রাজ্য এই যোজনার সঙ্গে যুক্ত হবে, সেখানকার বাসিন্দারা যদি অন্য রাজ্যে যান, তবে সেখানে পর্যন্ত হঠাৎ প্রয়োজন পড়লে, এই যোজনার সুবিধে সেখানেও পেতে পারেন।
এখন পর্যন্ত এই যোজনায় গোটা দেশের ১৩ হাজারেরও বেশি হাসপাতাল আমাদের সহযোগী হয়েছে। আগামী দিনে আরও হাসপাতাল এর আওতায় এসে যাবে|শুধু তা-ই নয়, যে হাসপাতাল ভালো পরিষেবা দেবে,বিশেষ করে গ্রামের হাসপাতালে, তাদের সরকার থেকেও সহায়তা করা হবে।
ভাই ও বোনেরা, আয়ুষ্মান ভারত যোজনার লক্ষ্য আর্থিক সুবিধে দেওয়া তো বটেই, সঙ্গে এমন ব্যবস্থাও দাঁড় করানো,যাতে ঘরের কাছেই আপনার জন্য উত্তম চিকিৎসার সুবিধে করে দেওয়া যায়।
বন্ধুরা, আজ এখানে দশটি ওয়েলনেস সেন্টারের শুভসূচনা হয়েছে। এখন ঝাড়খন্ডে প্রায় চল্লিশটি এমন সেন্টার কাজ করছে, আর গোটা দেশে এই সংখ্যাটা প্রায় দু’আড়াই হাজারে পৌঁছে গেছে। আগামী চার বছরে দেশে এমন দেড়লক্ষ স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
ভাই ও বোনেরা,এই হেলথ ও ওয়েলনেস সেন্টারগুলি আয়ুষ্মান ভারত কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই সেন্টারে ছোটখাটো অসুখের চিকিৎসা তো হবেই, সঙ্গে ঔষধও পাওয়া যাবে। এখানে বিনাখরচে অনেকগুলো পরীক্ষা–নিরীক্ষা করানোরও ব্যবস্থা থাকবে। এরফলে কঠিন অসুখের লক্ষণও আগে থেকে ধরা পড়লে চিকিৎসার সাহায্য পাওয়া যাবে।
বন্ধুগণ, সরকার দেশের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রটিকে শুধরানোর জন্য একটি সংহত পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। প্রত্যেক সিদ্ধান্ত ও নীতি পরস্পরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। একদিকে সরকার সুলভ স্বাস্থ্য পরিষেবার দিকে নজর দিচ্ছে। পাশাপাশি, প্রতিরোধী স্বাস্থ্য পরিষেবার দিকেও লক্ষ্য রাখছিল। যোগাভ্যাস, স্বচ্ছ ভারত অভিযান, উন্মুক্ত স্থানে মলমুত্র বন্ধ করার জন্য অভিযান – এই সমস্ত কিছুর মাধ্যমে কঠিন রোগের কারণগুলি উৎস থেকে নির্মূল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আপনারা সম্প্রতি হয়তো একটি রিপোর্টে জেনেছেন যে, স্বচ্ছ ভারত মিশনের ফলে ৩ লক্ষ শিশুর জীবন বাঁচানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। নবজাত শিশু ও প্রসূতি মায়েদের জীবন রক্ষার পরিসংখ্যান দ্রুত মৃত্যু থেকে জীবনের পথে এগিয়ে চলেছে।
সরকার রাষ্ট্রীয় পোষণ মিশন অভিযানের মাধ্যমে অপুষ্টি দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে। স্বাস্থ্য পরিষেবায় মানবসম্পদ বৃদ্ধির মাধ্যমে স্বাস্থ্য কর্মীদের সংখ্যা বাড়িয়ে আগামী তিন বছরে প্রায় আড়াই হাজার উৎকৃষ্ট মানের হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে। এর মধ্যে অধিকাংশই টয়ার-২ এবং টায়ার-৩ শহরগুলিতে গড়ে উঠবে। ফলে মধ্যবিত্ত যুবক-যুবতীদের নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ গড়ে উঠবে।
শুধু তাই নয়, গোটা প্রক্রিয়ায় স্বাস্থ্য পরিষেবার পাশাপাশি, বিমা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা, কল সেন্টার, ব্যবস্থাপনা, ঔষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদন ইত্যাদি অনেক ক্ষেত্রে লক্ষ-কোটি কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা গড়ে উঠেছে। প্যারা-মেডিকেল স্টাফ থেকে শুরু করে প্রশিক্ষিত চিকিৎসকদের চাহিদা দেশে অনেক বৃদ্ধি পেতে চলেছে। পাশাপাশি, স্বাস্থ্য ক্ষেত্র সংশ্লিষ্ট অনেক স্টার্ট আপ উদ্যোগও গড়ে উঠবে। লক্ষ লক্ষ চিকিৎসক, সেবিকা, অন্যান্য চিকিৎসা কর্মী এবং হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট কর্মীর কর্মসংস্থান হবে। অর্থাৎ দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের জন্য অনেক বড় কর্মসংস্থানের সুযোগ এটা।
দেশের প্রতিটি গ্রাম, আধা শহর এবং টিয়ার-১ ও টিয়ার -২ শহরগুলির স্বাস্থ্য পরিকাঠামো শক্তিশালী করার জন্য সরকার নিরন্তর কাজ করে চলেছে। বিগত চার বছরে দেশে ১৪টি নতুন এইম্স হসপিটাল মঞ্জুর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সুরক্ষা যোজনার মাধ্যমে প্রত্যেক রাজ্যে ন্যূনতম একটি এইম্স গড়ে তোলার কথা ভাবা হচ্ছে। পাশাপাশি, একই সময়ে ৮২টি নতুন সরকারি মেডিকেল কলেজ চালু করার কাজ চলছে। প্রতি ৩/৪টি সংসদীয় ক্ষেত্রে ন্যূনতম একটি করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গড়ে তোলার কাজ চলছে।
আজ এখানেও তেমনই ৬০০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগে কোডোরমা ও চাইবাসায় দুটি ৪০০ শয্যাসম্পন্ন মেডিকেল কলেজের শিলান্যাস করা হয়েছে।
ভাই ও বোনেরা, বিগত চার বছরে সারা দেশে ২৫ হাজারেরও বেশি আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট চিকিৎসক আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সরকার চায়, আগামী ৪-৫ বছরে সরকার দেশে ১ লক্ষ নতুন চিকিৎসক হোক।
বন্ধুগণ, দীনদয়াল উপাধ্যায়জী বলতেন যে, শিক্ষার মতোই স্বাস্থ্যের পেছনে যে খরচ করা হয়, তাকে খরচ না বলে বিনিয়োগ বলা উচিৎ। ভালো শিক্ষা ও দক্ষতার অভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়ন যেমন সম্ভব নয়, তেমনই অসুস্থ ও অপুষ্ট নাগরিক দিয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র নির্মাণ সম্ভব নয়।
বন্ধুগণ, আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির প্রচেষ্টায়, আরোগ্য মিত্র, আশা, এএনএম বোনেদের সহযোগিতায়, প্রত্যেক চিকিৎসক, সেবিকা, স্বাস্থ্য কর্মী এবং পরিষেবা প্রদানকারীদের সমর্পিত ভাবনার সমন্বয়ে আমরা এই প্রকল্পকে সফল করে তুলতে পারব। একটি সুস্থ দেশ গড়ে তুলতে পারব। নতুন ভারত সুস্থ, শক্তিশালী হয়ে উঠবে। আপনারা সবাই সুস্থ ও দীর্ঘায়ু হবেন।
এই আশা নিয়ে আজ রাঁচির মাটি থেকে, ভগবান বিরসামুন্ডার মাটি থেকে ১২৫ কোটি দেশবাসীর চরণে প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা সমর্পণ করছি।
আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ভারতমাতা কি – জয়।
ভারতমাতা কি – জয়।
ভারতমাতা কি – জয়।
আমি বলব আয়ুষ্মান, আপনারা বলবেন ভারত
আয়ুষ্মান – ভারত
আয়ুষ্মান – ভারত
আয়ুষ্মান – ভারত
আয়ুষ্মান – ভারত
আয়ুষ্মান – ভারত
অনেক অনেক ধন্যবাদ।