ইন্ডয়া টুডে গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং এডিটর ইন চিফ অরুণ পুরী মহোদয়,

 

আপনার গ্রুপের সমস্ত সাংবাদিক বন্ধু,

 

এই মুহূর্তে নিউজ রুমে কর্মরত সমস্ত সাংবাদিক,

 

আপনাদের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত স্ট্রিংগার্স,

 

এখানে উপস্থিত সমস্ত সম্মানীয় ব্যক্তিবর্গ ও আমার বন্ধুরা,

 

ইন্ডিয়া টুডে কনক্লেভের সঙ্গে যুক্ত সকলকে আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

 

আপনাদের গ্রুপ যেভাবে স্বচ্ছ ভারত মিশনে অংশগ্রহণ করে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছেন, সেজন্য আপনাদের সকলেরই ধন্যবাদপ্রাপ্য।

 

বন্ধুগণ, আমাকে অনুরোধ করা হয়েছে, দেশকে নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে আমি কী কী শিখেছি, সেসব অভিজ্ঞতার কথা বলতে।

 

২০১৪’র সাধারণ নির্বাচনের পর যখন দিল্লিতে এসেছিলাম, তখন সত্যি অনেক বিষয়ে কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না। কেন্দ্রীয় সরকার কিভাবে চলে, কোন্‌ কোন্‌ ব্যবস্থা কিভাবে পরিচালিত হয়, সে সম্পর্কে বিশেষ ধারণা ছিল না।

 

আমি মনে করি, এই না জানাটাই আমার জন্য আশীর্বাদ-স্বরূপ প্রতিপন্ন হয়েছে।

 

আমি যদি পুরনো ব্যবস্থার অংশ হতাম, তা হলে নির্বাচনের পর সেই পুরনো ধাঁচের খাঁচাতেই আবদ্ধ হয়ে যেতাম। কিন্তু এমনটি হয়নি।

 

বন্ধুগণ, আমার মনে পড়ে, ২০১৪’র নির্বাচনের আগে আপনাদের স্টুডিও-তেই একটি আলোচনায় বিশেষ কেউ বলেছিলেন, বিশ্বের কোথায় কী হচ্ছে সে সম্পর্কে মোদী অবগত নন। এক্ষেত্রে আমাদের বিদেশ নীতির কি হবে? কিন্তু আজ বিগত দিনের ঘটনাক্রমের মাধ্যমে আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে, ভারতের বিদেশ নীতির প্রভাব কতটা কার্যকরী!

 

দেখতে পেয়েছেন কিনা?

 

যাই হোক, আপনারা স্বীকার করেছেন।

 

বন্ধুগণ,

 

আজকের ভারত নতুন ভারত, পরিবর্তিত ভারত।

 

আমাদের প্রত্যেক বীর জওয়ানের রক্ত অমূল্য!

 

আগে কী হ’ত,  কত জওয়ানই না শহীদ হয়েছেন, কিন্তু প্রতিরোধমূলক কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কিন্তু এখন কেউ ভারতকে লালচোখ দেখানোর সাহস করতে পারে না। আমাদের সরকার রাষ্ট্রহিতে প্রত্যেক সিদ্ধান্ত গ্রহণে দায়বদ্ধ।

 

ভারত আজ একটি নতুন নীতি ও রীতি নিয়ে এগিয়ে চলেছে, তা আজ সমস্ত বিশ্ব বুঝতে পারছে।

 

বন্ধুগণ,

 

আজকের নতুন ভারত নির্ভীক এবং নির্ণায়ক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম। কারণ, আজ সরকার ১২৫ কোটি ভারতবাসীর সমর্থন ও বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে চলেছে।

 

ভারতবাসীর এই ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাই দেশের ভেতরে ও বাইরে কিছু দেশ বিরোধী মানুষের মনে ভয় সৃষ্টি করেছে।

 

আজকের পরিবেশে আমি বলব যে, এই ভয় খুব ভালো। যখন শত্রুদের মনে ভারতের পরাক্রম নিয়ে ভয় থাকে, তখন সেই ভয় দেশের জন্য ইতিবাচক।

 

সন্ত্রাসবাদীদের মনে যদি সৈনিকদের শৌর্য নিয়ে ভয় থাকে – সেই ভয় ভালো।

 

অর্থ তছরূপকারীদের মনে যদি আইন এবং তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হওয়ার ভয় থাকে – সেই ভয় ভালো।

মামার ধমকে যখন বড় বড় পরিবার ভয় পেতে শুরু করে – সেই ভয় ভালো।

 

ভ্রষ্ঠ নেতাদের মনে যখন জেলে যাওয়ার ভয় থাকে – সেই ভয় ভালো।

 

দুর্নীতিবাজরা যখন আইনকে ভয় পেতে শুরু করে – সেই ভয় ভালো।

 

বন্ধুগণ,

 

স্বাধীনতার পর থেকে অনেক দশক ধরে দেশবাসী অনেক অত্যাচার সহ্য করেছে।

 

এখন এই নতুন ভারত নিজেদের সামর্থ্য, কর্মশক্তি এবং সম্পদের ভরসা করে এগিয়ে চলেছে, নিজেদের বুনিয়াদী দুর্বলতাগুলি দূর করার পাশাপাশি, নিজেদের সমস্যাগুলি সমাধানের চেষ্টা করছে।

 

কিন্তু বন্ধুগণ,

 

এই এগিয়ে যাওয়া ভারতের সঙ্গে আরেকটি সমস্যা এসে দাঁড়িয়েছে, সেটি হ’ল – নিজের দেশের বিরোধিতা করা এবং দেশ নিয়ে মজা করে আত্মসন্তুষ্টি লাভ করা।

 

আমি অবাক হয়েছি, যখন সারা দেশ আমাদের সেনাবাহিনীর কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছে, তখন কেউ কেউ সেনাবাহিনীর প্রতিই সন্দেহ প্রকাশ করছে।

 

একদিকে আজ গোটা বিশ্ব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের সঙ্গ দিচ্ছে আর অন্যদিকে কিছু দল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে।

 

তাদের এসব বক্তব্য ও তাদের লেখা নিবন্ধগুলি পাকিস্তানি সংসদ ভবন, রেডিও ও টেলিভিশন চ্যানেলে ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে।

 

এই বিরোধীরা মোদীর বিরোধিতা করতে করতে দেশের বিরোধিতায় অবতীর্ণ হয়ে দেশকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

 

আমি আজ এই মঞ্চ থেকে এই ধরণের ব্যক্তিদের জিজঙেস করতে চাই যে, আমাদের সামর্থ্য নিয়ে আপনাদের আস্থা রয়েছে নাকি আপনারা সন্দেহ করেন?

 

নাকি আপনারা তাদেরকে বিশ্বাস করেন, যারা আমাদের মাটিতে সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহ যোগাচ্ছে।

 

ভাই ও বোনেরা, আমি এমন প্রতিটি ব্যক্তি ও দলকে বলতে চাই যে, মোদী আসবে ও চলে যাবে। কিন্তু ভারত, সর্বদাই থাকবে। সেজন্য তাদের প্রতি আমার অনুরোধ, দয়া করে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য, নিজেদের অহঙ্কার রক্ষার্থে দেশের নিরাপত্তা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ছেড়ে দিন। ভারতকে দুর্বল করার প্রক্রিয়া আপনারা বন্ধ করুন।

 

বন্ধুগণ,

 

দেশ আজ রাফাল বিমানের অভাব অনুভব করেছে। আজ ভারতবাসী সমস্বরে বলছেন যে, আমাদের কাছে রাফাল থাকলে কত ভালোই না হ’ত! আগে রাফাল নিয়ে নিহিত স্বার্থের কারণে আর এখন রাজনীতির কারণে দেশের অনেক লোকসান হয়েছে।

 

আমি এই বিরোধিদের স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, মোদীর বিরোধ যত খুশি করুন, আমাদের প্রকল্পগুলিতে কোনও ত্রুটি থাকলে, সেগুলির সমালোচনা করুন। সেগুলির প্রভাব কতটা ইতিবাচক, তা নিয়ে সমালোচনা করুন, কিন্তু দেশের নিরাপত্তা নিয়ে, দেশের হিতে বিরোধিতা করবেন না।

 

আপনারা মনে রাখবেন যে, মোদী বিরোধের এই জেদের ফলে মাসুদ আজহার এবং হাফিজ সৈয়দের মতো সন্ত্রাসের মাথাদের যাতে কোনও সুবিধা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।

 

বন্ধুগণ, যাঁরা অনেক বছর ধরে দেশের শাসন ক্ষমতায় ছিলেন, তাঁদের দুটি জিনিসের প্রতি আগ্রহ ছিল, তা হ’ল – চুক্তি আর ভিক্ষা বিতরণ। এই চুক্তি আর ভিক্ষা বিতরণের সংস্কৃতি আমাদের দেশের উন্নয়ন যাত্রাকে ব্যহত করেছে।

 

এই মনোভাবের সবচেয়ে বড় শিকার হলেন দেশের সৈনিক ও কৃষকরা। সৈনিকরা কিভাবে এর শিকার, তা নিয়ে আগে বলব।

 

যাঁরা অনেক বছর ধরে দেশের শাসন ক্ষমতায় ছিলেন, তাঁরা নিজ নিজ শাসনকালে এত বেশি প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত কেলেঙ্কারিতে কেন জড়িত?

 

তাঁরা মিলিটারি জীপ ক্রয় সংক্রান্ত কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে অস্ত্র কেলেঙ্কারি, ডুবো জাহাজ কেলেঙ্কারি এবং হেলিকপ্টার কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছেন। এসব কারণে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রটি  ভীষণ রকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 

যথাসময়ে সঠিক চুক্তি সম্পাদিত না হওয়ায় প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়া ব্যবহত হয়েছে।

 

এই প্রতিটি চুক্তিতে কারা জড়িত ছিলেন? কারা প্রত্যেক চুক্তির দালালদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, সে সম্পর্কে এখন গোটা দেশ জানে।

আর দিল্লির লুটেরারা অবশ্যই জানে।

 

বন্ধুগণ,

 

এটা সবাই জানেন যে, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী নিয়মিত বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটের প্রয়োজন। ২০০৯ সালে আমাদের সেনাবাহিনী সরকারের কাছে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটের প্রয়োজন জানিয়েছিল।

 

আপনারা জেনে লজ্জিত হবেন যে, ২০০৯ থেকে ২০১৪’র মধ্যে একটিও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট কেনা হয়নি।

 

আমরা শাসন ক্ষমতায় এসে ২ লক্ষ ৩০ হাজার বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট কিনেছি। আমরা এই ক্রয় প্রক্রিয়াকে দালালমুক্ত করেছি। বর্তমান সরকার কোনও দুর্নীতকে সহ্য করবে না।

 

আর এখন আমি ভিক্ষা বন্টন নিয়ে কথা বলব। যাঁরা এত বছর ক্ষমতায় ছিলেন, তাঁরা ভিক্ষা বন্টন পছন্দ করতেন। সেই ভিক্ষা বন্টনের লক্ষ্য দরিদ্রদের ক্ষমতায়ন ছিল না। সেই ভিক্ষা এমনভাবেই বন্টিত হ’ত, যাতে গরিবরা গরিবই থেকে যান আর তাঁদের রাজনৈতিক প্রভূদের দয়ায় বেঁচে থাকেন।

 

এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হ’ল কৃষি ঋণ মকুবের প্রক্রিয়া।

 

কোনও অর্থনীতিবিদ বা নীতি বিশেষজ্ঞ বলেন না যে, ঋণ মকুবের মাধ্যমে আমাদের কৃষি সংক্রান্ত কোনও সমস্যার সমাধান সম্ভব। এটি কাটা ঘায়ে মলম লাগানোর বেশি আর কিছুই হতে পারে না।

 

প্রত্যেক ১০ বছরে ইউপিএ একবার করে কৃষি ঋণ মকুবের ব্যবস্থা করেছে। তাঁদের সম্পূর্ণ শাসনকালে এ ধরণের কোনও পদক্ষেপ না নিয়ে নির্বাচনের আগেই কৃষি ঋণ মকুব করেছে। কিন্তু তাঁদের এই ঋণ মকুব বাস্তবসম্মত ছিল না। এর দ্বারা ২০ শতাংশের কম কৃষকরাই উপকৃত হয়েছেন। তবুও তাঁরা এই কৃষি ঋণের জোরে নির্বাচনে জেতার চেষ্টা করেছে।

 

আমরা ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টিকে গ্রহণ করেছি। কৃষকদের উন্নয়নে আমরা পিএম – কিষাণ সম্মাননিধি নামক একটি সংহত ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি। এই ব্যবস্থা কোনও চুক্তি কিংবা ভিক্ষা বন্টন প্রক্রিয়া নয়। দেশের ১২ কোটি কৃষকদের তিন কিস্তিতে ৬ হাজার টাকা দেওয়া হবে। গত পয়লা ফেব্রুয়ারি এই প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি এটি চালু হয়েছে। আমরা ২৪ দিন ধরে দিবারাত্র কাজ করে এটি চালু করেছি।

 

আগে হলে এতটা সময় লাগতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সমাধানেই। সেটি হ’ল – এই অনুদান পরিবারের কোন্‌ সদস্যের নামে চালু হবে।

ঋণ মকুবের মতো হলেও পিএম – কিষাণ সম্মাননিধি একটি দীর্ঘ মেয়াদী সহায়ক ব্যবস্থা।

 

আগেই আমরা বেশ কয়েকটি প্রকল্পের মাধ্যমে এর ভিত্তি তৈরি করেছিলাম। যেমন – মৃত্তিকা স্বাস্থ্য কার্ড, পিএম কৃষি সিঞ্চাই যোজনা এবং ই-ন্যাম – এগুলির কোনোটাই ভিক্ষা বিতরণ নয়। এগুলি প্রত্যেকটাই কৃষকদের আয় ২০২২ সালের মধ্যে দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে দীর্ঘ মেয়াদী পদক্ষেপ।

 

এই এনডিএ সরকারের আমলেই কৃষকদের সম্মান জানাতে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পূর্ববর্তী সরকারের আমলে এই ন্যূনতম সহায়ক মূল্য সংক্রান্ত ফাইলটি প্রায় সাত বছর ধরে লালফিতের ফাঁসে আটকে ছিল।

 

আসলে ১০ শতাংশ ‘কমিশন’ নিয়ে কাজ করতেন আর আমরা ১০০ শতাংশ ‘মিশন’ নিয়ে কাজ করি। সেজন্যই সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে।

 

বন্ধুগণ,

 

তাঁদের ৫৫ বছরের শাসনের তুলনায় আমাদের ৫৫ মাসের শাসনে দৃষ্টিভঙ্গীগত পার্থক্য রয়েছে। তাঁদের ছিল ‘টোকেন অ্যাপ্রোচ’ আর আমাদের হ’ল ‘টোটাল অ্যাপ্রোচ’। প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁরা কেমন ‘টোকেন’ দেওয়ার পক্ষপাতি ছিলেন, তা আমি একটু ব্যাখ্যা করে বোঝাতে চাই।

 

স্বাধীনতার পর থেকেই দেশের শাসন ক্ষমতায় থাকা দলে একটি জনপ্রিয় শ্লোগান ছিল – গরিবি হটাও! কিন্তু এই দারিদ্র্য কিভাবে অপসারিত হবে, তা নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল না আর কোনও উদ্যোগও ছিল না। কিন্তু তাঁরা দেশের কোণায় কোণায় আওয়াজ তুলে গেছেন – গরিবি হটাও, গরিবি হটাও।

 

তাঁরা জানতেন যে, দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য আপামর জনগণের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিকরণের প্রয়োজন রয়েছে। সেজন্য তাঁরা একটি ‘টোকেন’ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন, সেটি হ’ল – ব্যাঙ্ক রাষ্ট্রায়ত্তকরণ।

 

গরিবদের নামে তাঁরা এই ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্তকৃত ব্যাঙ্কগুলির দরজা আদৌ গরিবদের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন তাঁরা বোধ করেননি।

 

প্রাক্তন সৈনিকদের ৪০ বছরের পুরনো দাবি মেনে ২০১৪ সালে সর্বশেষ বাজেটে ‘এক পদ, এক পেনশন’ প্রথা চালু করার ক্ষেত্রেও তাঁরা ৫০০ কোটি টাকার একটি ‘টোকেন’ তহবিল গঠন করেছিলেন। কিন্তু তাঁরা জানতেন যে, এই টাকায় কখনই ‘এক পদ, এক পেনশন’ ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হবে না। কিন্তু নির্বাচন এগিয়ে আসছিল যে!

 

২০১৪ সালের আগে তাঁদের নির্বাচনী কর্মসূচির অন্যতম দফা ছিল পরিবার পিছু বার্ষিক গ্যাস সিলিন্ডার ৯টি থেকে বাড়িয়ে ১২টি করা।

 

কল্পনা করুন, এত বড় রাজনৈতিক দল, যারা পরিবার পিছু বার্ষিক গ্যাস সিলিন্ডারের সংখ্যা হ্রাস করে ৯টিতে সীমাবদ্ধ রেখেছিল, তারা নির্বাচনে জিতলে বার্ষিক ১২টি সিলিন্ডার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।

 

এই ধরণের ‘টোকেন’ প্রদান প্রথা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। কাজ করতে হলে সামগ্রিকতার সঙ্গে করতে হবে। সেজন্য আমরা ১০০ শতাংশ সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়ে সমস্ত উদ্যোগ গ্রহণ করি।

 

জন ধন – সকলের জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিকরণ।

 

সবার জন্য বাড়ি – ২০২২ সালের মধ্যে প্রত্যেক ভারতীয়র মাথার ওপর ছাদ সুনিশ্চিত করা। আমরা সেই লক্ষ্যে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছি। ইউপিএ সরকারের শেষ পাঁচ বছরে গৃহহীনদের জন্য ২৫ লক্ষ গৃহ নির্মিত হয়েছিল। আর আমরা ইতিমধ্যেই দেড় কোটি গৃহ নির্মাণ করেছি।

 

সকলের জন্য স্বাস্থ্য – আয়ুষ্মান ভারত – সুলভ স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে কোনও ভারতবাসী যেন বঞ্চিত না হন, সেদিকে লক্ষ্য রেখে এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ৫০ কোটি ভারতবাসী উপকৃত হবেন।

 

এক পদ, এক পেনশন – ইউপিএ সরকার নির্ধারিত ৫০০ কোটির অপ্রতুল তহবিল থেকে অনেক বেশি প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করে এনডিএ সরকার এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করেছে।

 

উজ্জ্বলা যোজনা – আমাদের পূর্বসূরীরা বছরে পরিবার পিছু রান্নার গ্যাসের ৯টি সিলিন্ডার দেবেন না ১২টি দেবেন, তা নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন। আমরা কোটি কোটি পরিবারকে ধোঁয়ামুক্ত রান্নাঘর উপহার দিতে রাত-দিন পরিশ্রম করেছি।

 

সকলের জন্য বিদ্যুৎ – প্রত্যেক গ্রাম ও প্রতিটি পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ সুনিশ্চিত করার জন্য আমরা কাজ করে চলেছি। স্বাধীনতার ৭০ বছর পরও যে ১৮ হাজার গ্রামের মানুষ সন্ধ্যার পর অন্ধকারে বসবাস করতেন, সেগুলিতে ইতিমধ্যেই ১০০ শতাংশ বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আর এখন আমরা প্রত্যেক বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কাজকে অগ্রাধিকার দিয়েছি।

 

সুতরাং আপনারা বুঝতে পারছেন যে, আমরা অনেক বেশি গতি ও অধিকমাত্রায় কাজ করছি। সবকিছুই যেন সবার জন্য হয়, হাতে গোনা কয়েকজনের জন্য নয়।

 

‘টোকেন’ ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের কাছে উন্নয়নের সুফল পৌঁছে দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ রূপান্তরণের পথে আমরা কাজ করে চলেছি।

 

বন্ধুগণ,

 

‘আজ তক’ ভালো প্রশ্নের জন্য সুপরিচিত।

 

কিন্তু আজ আমি ‘আজ তক’ – এর এই মঞ্চ থেকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই।

 

এতদিন পর্যন্ত দেশের কোটি কোটি মানুষ কেন উন্মুক্ত স্থানে শৌচকর্ম করতে বাধ্য ছিলেন?

 

এতদিন পর্যন্ত দেশের সরকার দিব্যাঙ্গদের প্রতি কেন সহানুভূতি ছিল না?

 

এতদিন পর্যন্ত গঙ্গার জল কেন দূষণমুক্ত হয়নি?

 

এতদিন পর্যন্ত উত্তর-পূর্ব ভারতকে কেন উপেক্ষা করা হয়েছে?

 

এতদিন পর্যন্ত আমাদের সেনাবাহিনীর মহান বীরদের স্মৃতিতে কোনও জাতীয় যুদ্ধ স্মারক কেন ছিল না?

 

এতদিন পর্যন্ত আমাদের পরাক্রমী শহীদ পুলিশকর্মীদের স্মৃতিতে কোনও জাতীয় পুলিশ স্মারক কেন ছিল না?

 

এতদিন পর্যন্ত আজাদ হিন্দ ফৌজ সরকারের স্মৃতিতে লালকেল্লায় কেন ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা উত্তোলিত হয়নি?

 

‘আজ তক’ – এর এই মঞ্চকে আমি যদি এ ধরণের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে থাকি, তা হলে কয়েক ঘন্টা ধরে বিশেষ বুলেটিন প্রচারিত হতে পারে। এই প্রশ্নগুলি নিয়ে আপনারা ‘হল্লা বোল’ করুন কিংবা না করুন, কোনও ধারাবাহিক চালু করুন কিংবা না করুন – এটাই সত্য যে, এত বছর ধরে দেশে গরিব, পীড়িত, শোষিত ও বঞ্চিতদের ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তিকরণের কোনও সার্থক প্রচেষ্টা হয়নি।

 

কিন্তু আমি এখানে প্রশ্ন করতে আসিনি। আপনারা কোনও প্রশ্ন না করলেও আমি এখানে জবাব দিতেই এসেছি যে, আমরা কতটা করতে পেরেছি আর কী করে যাচ্ছি!

 

আপনারা নিজেদের ‘সব থেকে ক্ষিপ্র’ বলেন – এটাই আপনাদের ট্যাগ লাইন। সেজন্য আমি ভেবেছি, আজ আমিও নিজের সরকার কতটা ‘ক্ষিপ্র’ সে সম্পর্কে বলব।

 

আজ আমরা সর্বাধিক দ্রুতগতিতে ভারত থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণ করছি।

 

আজ আমরা সর্বাধিক দ্রুতগতিতে ক্রমবর্ধমান বড় অর্থনীতির দেশ।

 

১৯৯১ সাল থেকে হিসাব করলে বিগত পাঁচ বছরে আমরা সর্বাধিক দ্রুতগতিতে জিডিপি বৃদ্ধি করতে পেরেছি।

 

১৯৯১ সাল থেকে হিসাব করলে বিগত পাঁচ বছরে আমরা সর্বাধিক দ্রুতগতিতে দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি হ্রাস করতে পেরেছি।

 

আজ আমরা সর্বাধিক দ্রুতগতিতে সড়ক নির্মাণ করছি।

 

আজ আমরা সর্বাধিক দ্রুতগতিতে রেলপথ উন্নয়নের কাজ করছি।

 

আজ আমরা সর্বাধিক দ্রুতগতিতে গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ করছি।

 

আজ আমরা সর্বাধিক দ্রুতগতিতে মোবাইল ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট স্থাপনের কাজ করছি।

 

আজ আমরা সর্বাধিক দ্রুতগতিতে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক বিস্তারের কাজ করছি।

 

আজ আমরা সর্বাধিক দ্রুতগতিতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আনতে সক্ষম হয়েছি।

 

আজ আমরা সর্বাধিক দ্রুতগতিতে পরিচ্ছন্নতার পরিধি বৃদ্ধি করতে পেরেছি।

 

অর্থাৎ, আপনাদের ট্যাগ লাইন ‘সর্বাধিক দ্রুতগতি’র মতো আমাদের সরকারের জীবনরেখা হ’ল – সর্বাধিক দ্রুতগতি।

 

ভাই ও বোনেরা, ২০১৩ সালে যখন আপনাদের অনুষ্ঠানে এসেছিলাম, তখন আপনাদের দুই বন্ধুর গল্প শুনিয়েছিলাম। গল্পটা ছিল, একবার দু’জন বন্ধু জঙ্গলে ঘুরতে গেছে, ঘুরতে ঘুরতে তারা ঘন জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। ভয়ানক জন্তু-জানোয়ারের হাত থেকে নিজেদের জীবন রক্ষার জন্য তারা নিজেদের কাছে অনেক ধরণের বন্দুক রেখেছিল।

 

কিন্তু তারা যখন পায়ে হেঁটে ঘন জঙ্গলে পৌঁছয়, তখন একটি বাঘ তাদের সামনে চলে আসে।

 

এখন তারা কী করবে? বন্দুক তো গাড়িতে ফেলে এসেছে! এমন পরিস্থিতিতে তারা এই ভয়ানক সমস্যার সম্মুখীন হবে কেমন করে? পালিয়ে যাবে কোথায়?

 

কিন্তু তাদের মধ্যে একজনের মনে পড়ে যে তার পকেটে বন্দুকের লাইসেন্স আছে। সে বন্দুকের লাইসেন্সটা পকেট থেকে বের করে বাঘকে দেখিয়ে বলে এই দ্যাখ – আমার কাছে বন্দুকের লাইসেন্স আছে।

 

বন্ধুগণ, আমি যখন আপনাদের এই কাহিনী শুনিয়েছিলাম, তখন দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থা এরকমই ছিল।

 

আগের সরকার অনেক আইন প্রণয়ন করেছে ঠিকই। কিন্তু কোনোটাই বাস্তবায়িত করেনি।

 

আমরা সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর আইনের পাশাপাশি, বাস্তবায়নকেও গুরুত্ব দিয়েছি। তখনকার সঙ্গে বর্তমান সময়ের পার্থক্য কতটা, তা আরও কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে চাই।

 

বন্ধুগণ, ১৯৮৮ সালে বেনামী সম্পত্তি আইন পাশ করা হয়েছিল। কিন্তু সেটি বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই আইন বাস্তবায়িত করেছি এবং হাজার হাজার কোটি টাকার বেনামী সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছি।

 

পূর্ববর্তী সরকার অনেক ঢাক-ঢোল পিটিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা আইন পাশ করেছিল। কিন্তু আমরা সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর দেখি যে, দেশের মাত্র ১১টি রাজ্যে এই আইনের আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে। আমরা দেশের প্রত্যেক রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে এই আইন বাস্তবায়িত করেছি। আর সুনিশ্চিত করেছি, যাতে দেশের প্রত্যেক মানুষ এর দ্বারা উপকৃত হন।

 

আগেও একই সরকারি আধিকারিকরা ছিলেন, একই ফাইল ও একই দপ্তর ছিল। কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গীর পার্থক্যের ফলে কাজ হ’ত ঢিমেতালে।

 

আমরা দ্রুত কাজ করায় জোর দিয়েছি এবং দেশ কেমন গতিতে উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে, তা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন।

 

বন্ধুগণ,

 

২০১৪ – ২০১৯ মাত্র পাঁচ বছর সময়। কিন্তু আপনারা যদি আমাদের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার রেলপথে ছুটতে ছুটতে সরকারের কাজের বিশ্লেষণ করেন, তা হলে মনে হবে আপনারা যেন উন্নয়নের কয়েক দশকের যাত্রাপথ অতিক্রম করেছেন।

 

আমি যখন এসব কথা দৃঢ়তার সঙ্গে বলি, তার পেছনে আমার সরকারের পাঁচ বছরের কঠিন পরিশ্রম এবং ১২৫ কোটি ভারতবাসীর আশীর্বাদ ও অংশীদারিত্ব রয়েছে।

 

২০১৪ – ২০১৯ দেশের জনগণের প্রয়োজন মেটানোর সময় ছিল। কিন্তু ২০১৯ – এর পর জনগণের আকাঙ্খার বাস্তবায়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

 

২০১৪ – ২০১৯ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের বাড়িতে বুনিয়াদী প্রয়োজন মেটানোর সময় ছিল। কিন্তু ২০১৯ – এর পর দ্রুতগতিতে উন্নয়নের জন্য ডানা মেলতে হবে।

 

এই যে ২০১৪ – ২০১৯ পর্যন্ত আমাদের যাত্রা তার গতিপথ ২০১৯ – এ বদলে দেওয়া একটি স্বপ্নের গল্প রচনা; নিরাশা থেকে আশার শিখরে পৌঁছনোর গল্প সংকল্প থেকে সিদ্ধির পথে যাওয়ার গল্প!

 

বন্ধুগণ, আমরা বইয়ে পড়েছি, একবিংশ শতাব্দী ভারতের শতাব্দী হবে। বিগত পাঁচ বছরে আমরা অনেক পরিশ্রম করে দেশের ভিত্তি শক্তিশালী করার কাজ করেছি। এই ভিত্তির উপরই নতুন ভারতের অত্যাধুনিক সুরম্য অট্টালিকা গড়ে উঠবে।

 

আজ আমি সম্পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে বলতে পারছি, হ্যাঁ, একবিংশ শতাব্দী ভারতের শতাব্দী হবে।

 

এই বিশ্বাস নিয়েই আমি নিজের বক্তব্য সম্পূর্ণ করছি।

 

আপনারা আমাকে ইন্ডিয়া টুডে কনক্লেভে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, নিজের বক্তব্য তুলে ধরার সুযোগ দিয়েছেন – সেজন্য আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 

 

 

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
Modi blends diplomacy with India’s cultural showcase

Media Coverage

Modi blends diplomacy with India’s cultural showcase
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
সোশ্যাল মিডিয়া কর্নার 23 নভেম্বর 2024
November 23, 2024

PM Modi’s Transformative Leadership Shaping India's Rising Global Stature