আমার মন্ত্রী পরিষদের সঙ্গী শ্রী জে পি নাড্ডা, শ্রী অশ্বিনী চৌবে, শ্রীমতী অনুপ্রিয়া প্যাটেল এবং এই মঞ্চে উপস্থিত শ্রী রণদীপ গুলেরিয়া, শ্রী আই এস ঝা, ডঃ রাজেশ শর্মা এবং সকল সম্মানিত ব্যক্তিগণ।
দিল্লির বাসিন্দাদের চিকিৎসা, চিকিৎসার জন্য দিল্লিতে আসা দেশের সকল প্রান্তের মানুষের জন্য আজ একটি বিশেষ দিন। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আজ দেশের গরিব, নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষের জীবনের সমস্যাসঙ্কুল পরিস্থিতির মোকাবিলায় বিভিন্ন কঠিন রোগের বিরুদ্ধে রোগী ও তাঁর আত্মীয়স্বজনদের সহায়তার জন্য কয়েকটি নতুন পরিকাঠামো গড়ে উঠছে। একটু আগেই এখানে প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করা হয়েছে। ফলে, দিল্লিতে দেশের দুটি বড় হাসপাতাল এইম্স এবং সফদরজং হাসপাতালে প্রায় ১ হাজার ৮০০-রও বেশি শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বন্ধুগণ, এইম্স-এর চাপ কমাতে দিল্লিতে এর সবকটি ক্যাম্পাসে ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আজ ৩০০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগে নির্মীয়মান ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর এইজিং’-এরও শিলান্যাস হয়েছে। এটি ২০০ শয্যাবিশিষ্ট হবে। আগামী দেড়-দু’বছরে এটির নির্মাণ সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখানে প্রবীণ নাগরিকদের সমস্ত আধুনিক পরিষেবা প্রদান করা হবে। এখানে বৃদ্ধাবস্থা বিষয়ক বিজ্ঞান অনুসন্ধান কেন্দ্রও থাকবে, যেখানে বৃদ্ধাবস্থার নানা সমস্যা নিয়ে গবেষণার ব্যবস্থাও থাকবে। তাছাড়া, সফদরজং হাসপাতালেও ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগে হাসপাতালের বিভিন্ন পরিষেবাকে অত্যাধুনিক করে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে এখানে এমার্জেন্সি ব্লকে একটি সুপার স্পেশালিটি ব্লক গড়ে তুলে রাষ্ট্রকে সমর্পিত করা হবে। কেবলমাত্র মেডিকেল এমার্জেন্সির জন্য ৫০০ শয্যার নতুন ব্যবস্থা সফদরজং হাসপাতালকে দেশের সর্ববৃহৎ এমার্জেন্সি কেয়ার হাসপাতালে পরিণত করবে।
বন্ধুগণ, আজ যে ৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করা হ’ল, তার মধ্যে একটি হ’ল পাওয়ার গ্রিড বিশ্রাম সদন। সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালনের এটি একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সেখানে শুধু রোগী নয়, তাঁদের সঙ্গে আসা নিকটাত্মীয়রাও নানারকম পরিষেবা পাবেন।
বন্ধুগণ, সঠিক সময়ে চিকিৎসা জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু দিল্লির ট্রাফিক জ্যাম অনেক সময়ে এর প্রতিবন্ধক হয়ে ওঠে। বিশেষ করে, এইম্স-এর বিভিন্ন কেন্দ্র ও ক্যাম্পাসের মধ্যে রোগী ও চিকিৎসকদের যাতায়াত নিয়ে আগে অনেক সমস্যা ছিল। এইম্স-এর মুখ্য ভবন এবং জয়প্রকাশ নারায়ণ ট্রমা সেন্টারের মধ্যে এই সমস্যা এখন সমাধান করা গেছে। কিছুক্ষণ আগেই আমি প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ আন্ডার গ্রাউন্ড সুড়ঙ্গের উদ্বোধন করলাম।
বন্ধুগণ, ভারতের মতো বিশাল উন্নয়নশীল দেশের জন্য সুলভ, সুরক্ষিত এবং আধুনিক স্বাস্থ্য পরিষেবা সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব কত বড়, তা আপনারা ভালোভাবেই জানেন। বিগত চার বছরে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবাকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার একের পর এক নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে গরীব ও মধ্যবিত্তদের যাতে উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য অসহায়ভাবে যাতে ঘুরে না বেড়াতে হয়, অনাবশ্যক খরচ না করতে হয় – তা সুনিশ্চিত করতে রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে মিলেমিশে সারা দেশে আধুনিক স্বাস্থ্য পরিষেবা পরিকাঠামো গড়ে তুলছে। ফলে, দেশে সরকারি হাসপাতালে শিশু জন্মের হার বেড়েছে। গর্ভবতী মহিলা এবং নবজাত শিশুদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, টিকাকরণের জন্য ৫টি নতুন ভ্যাক্সিন যুক্ত করে মা ও শিশুদের মৃত্যুর হার অভূতপূর্ব হ্রাস করতে পেরেছে। এই প্রচেষ্টাগুলি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এজেন্সি দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে।
বন্ধুগণ, বড় শহরগুলিতে যে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো রয়েছে, সেগুলি সুদৃঢ় করার পাশাপাশি সমমানের পরিষেবা টিয়ার-২ এবং টিয়ার-৩ শহরগুলিতে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেজন্য সরকার দুই ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রথমত, চালু হাসপাতালগুলিকে অধিক পরিষেবা যুক্ত করা। দ্বিতীয়ত, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া।
বন্ধুগণ, স্বাধীনতার পর ৭০ বছরে দেশে যতগুলি এইম্স স্বীকৃত বা নির্মিত হয়েছিল, বিগত চার বছরে তারচেয়ে অধিক সমমানের হাসপাতাল মঞ্জুর করা হয়েছে। দেশে ১৩টি নতুন এইম্স তৈরির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮টির নির্মাণকার্য ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। এছাড়া, সারা দেশে ১৫টি মেডিকেল কলেজকে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে রূপান্তরিত করার কাজ এগিয়ে চলেছে।
বন্ধুগণ, নতুন ভারতের জন্য এমন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে, যেখানে উন্নতমানের পর্যাপ্ত হাসপাতাল ও যথেষ্ট শয্যা, ভালো পরিষেবা আর শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক দল থাকবে। এই লক্ষ্য মাথায় রেখে চিকিৎসা শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন সুযোগ গড়ে তোলা হচ্ছে। আমাদের সরকার ৫৮টি জেলা হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজ রূপে উন্নীত করছে। এবারের বাজেটেই ২৪টি নতুন মেডিকেল কলেজ গড়ে তোলার ঘোষণা করেছে। সরকারের প্রচেষ্টা হ’ল প্রতি তিনটি সংসদীয় ক্ষেত্রে নিদেনপক্ষে একটি মেডিক্যাল কলেজ যেন থাকে! বিগত চার বছরে দেশে প্রায় ২৫ হাজার নতুন আন্ডার গ্র্যাজুয়েট বা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট চিকিৎসক পঠন-পাঠনের জন্য আসন সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার ছাত্র ভর্তি প্রক্রিয়াকেও আর স্বচ্ছ করার কাজ করেছে।
বন্ধুগণ, বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টা শুধু হাসপাতাল নির্মাণ, রোগের চিকিৎসা এবং আধুনিক পরিষেবার মধ্যেই সীমিত নয়, কম খরচে প্রত্যেক নাগরিকের চিকিৎসা সুনিশ্চিত করা, অসুস্থ হওয়ার কারণগুলি বিনাশের প্রচেষ্টা; স্বাস্থ্য মন্ত্রকের আওতার বাইরে বেরিয়েও কাজ করার চেষ্টা হয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্য পরিকল্পনার সঙ্গে এখন গ্রামীণ বিকাশ মন্ত্রক, স্বচ্ছতা ও পানীয় জল মন্ত্রক, মহিলা ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রক এবং আয়ুষ মন্ত্রকও যুক্ত হয়েছে। এগুলি সবই আমাদের পারম্পরিক স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলির ক্ষমতায়ন করছে।
সরকারি পরিকল্পনার নক্শা তৈরির সময়ে অসুস্থতা ও দারিদ্র্যের মধ্যে সম্পর্ককে মাথায় রাখা হয়েছে। দারিদ্র্যের একটি বড় কারণ অসুস্থতাও। সেজন্য রোগ প্রতিরোধ করলে অনেক ক্ষেত্রে দারিদ্র্য প্রতিরোধ করা যায়। এই লক্ষ্যে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। স্বচ্ছ ভারত অভিযানের মাধ্যমে শৌচালয় নির্মাণ, মিশন ইন্দ্রধনুষের মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক অঞ্চলগুলিতে টিকাকরণ, রাষ্ট্রীয় পোষণ অভিযান ও আয়ুষ্মান ভারতের মতো অনেক উচ্চাভিলাষী প্রকল্প দরিদ্র পরিবারগুলির চিকিৎসার খরচ হ্রাস করার কাজ করছে। রোগ প্রতিরোধক কিংবা সুলভ স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে দেশে এখন যে হারে কাজ হচ্ছে, তা সম্ভবত আগে কখনও হয়নি।
জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রকল্প বা আয়ুষ্মান ভারতও এই লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশে প্রায় দেড় লক্ষ পঞ্চায়েত বা সমস্ত বড় পঞ্চায়েতে একটি করে ‘হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার’ স্থাপনের কাজ চলছে। ভবিষ্যতে এই কেন্দ্রগুলিতে রোগ চিহ্নিৎকরণের জন্য গবেষণাগার এবং উপাচারের জন্য আধুনিক পরিষেবা প্রদান করা হবে। এর দ্বারা গ্রাম ও আধা-শহরের মানুষেরা অনেক উপকৃত হবেন। পাশাপাশি, গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের ভালো হাসপাতালে বিনামূল্যে কঠিন রোগের চিকিৎসার সুবিধা দিতে বছরে পরিবার পিছু ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ করার কাজ চলছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রায় সকলের সঙ্গে সহমত গড়ে উঠেছে, অতি শীঘ্রই আমরা বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প বাস্তব রূপ দিতে যাচ্ছি।
বন্ধুগণ, এই প্রকল্প শুধু গরিবদের জীবনদান করবে এমনটা নয়, চিকিৎসা ক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব সুযোগ সৃষ্টিকারী নতুন বিপ্লব আনবে। এই প্রকল্পের ফলে আগামীদিনগুলিতে সুনিশ্চিতভাবেই দেশের অসংখ্য গ্রাম ও ছোট শহরগুলিতে নতুন নতুন উন্নত পরিষেবা যুক্ত হাসপাতাল নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে। কারণ, খরচের ভয়ে যাঁরা বাধ্য না হলে হাসপাতালে যেতে চান না, বিমা কোম্পানির টাকায় চিকিৎসা হলে তাঁরা যে কোনও রোগের ক্ষেত্রেই হাসপাতালে যাবেন। আর রোগী হাসপাতালে এলে, তাঁর চিকিৎসার খরচ পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকলে হাসপতাল কর্তৃপক্ষ এবং চিকিৎসকরা তৎপরতার সঙ্গে কাজ করবেন। ফলে দেশে এমন ব্যবস্থা গড়ে উঠতে চলেছে যেখানে মানবসম্পদ উন্নয়ন, দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য সচেতন সমাজ রূপে আমরা এক নতুন যুগে প্রবেশ করতে চলেছি। আর এক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ তো বাড়বেই। আমরা জানি যে, প্রত্যেক চিকিৎসকের সঙ্গে কত জন স্বাস্থ্য কর্মী সহায়কের কাজ করেন, তবেই একজন চিকিৎসক সঠিকভাবে তাঁর পারদর্শিতা দেখাতে পারেন। এ থেকেই ভারতে ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনার কথা আন্দাজ করা যায়। হ্যাঁ, আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবার জন্য তখন মানুষকে আর আজকের মতো বড় শহরে ছুটতে হবে না।
বন্ধুগণ, বিগত চার বছরে সুলভ স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে সরকার যেসব প্রকল্পে কাজ করেছে, সেগুলি কতটা কার্যকর হয়েছে, তা জানার জন্য আমি এ মাসের গোড়ার দিকে সারা দেশের সুবিধাভোগীদের সঙ্গে প্রযুক্তির মাধ্যমে সরাসরি বার্তালাপের আয়োজন করেছিলাম। প্রায় ৩ লক্ষ কেন্দ্রে বসে থাকা কমপক্ষে ৩০-৪০ লক্ষ মানুষ আমার সঙ্গে এই বার্তালাপে অংশগ্রহণ করেছেন। সেই বার্তালাপ থেকে একটা জিনিস স্পষ্ট হয়েছে যে, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও গরিবদের চিকিৎসার খরচ গত চার বছরে কমেছে। কারণটা আপনারা জানেন যে, সরকার প্রায় ১ হাজার ১০০টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ করেছে। ফলে, সারা দেশের সুবিধাভোগীদের ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি সাশ্রয় হয়েছে। একটি প্রকল্পের ফলস্বরূপ এক বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়! সারা দেশে ৩ হাজার ৬০০টিরও বেশি জনঔষধি কেন্দ্র চালু হয়েছে। সেই কেন্দ্রগুলিতে ৭০০-টিরও বেশি ওষুধ এবং ১৫০টিরও বেশি শল্য চিকিৎসার সরঞ্জাম কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া প্রায় ৭৫-৮০ লক্ষ রোগী অমৃত স্টোর্সগুলি থেকে ৫০ শতাংশ কম দামে ওষুধ পেয়েছেন। আজ স্টেন্ট এবং হাঁটু প্রতিস্থাপনের খরচ কমানোর ফলে দেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
জিএসটি চালু হওয়ার ফলেও অনেক ওষুধের দাম কমেছে। দেশের প্রায় প্রত্যেক জেলায় ডায়ালিসিস কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে গরিবদের বিনামূল্যে ডায়ালিসিসের পরিষেবা দেওয়া হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইতিমধ্যে আড়াই লক্ষ রোগী লাভবান হয়েছেন। আগে গরিবদের বিনামূল্যে ডায়ালিসিসের জন্য ১০০-২০০ কিলোমিটার দূরে যেতে হ’ত। এখন আর এত দূর যেতে হয় না। ফলে, ডায়ালিসিসের প্রত্যেক সেশনে তাঁদের প্রায় ১,৫০০-২,০০০ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বিনামূল্যে ২৫ লক্ষ ডায়ালিসিস সেশন সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া, প্রতিরোধক স্বাস্থ্য পরিষেবায় যোগ এক নতুন পরিচয় নিয়ে জনমনে ভাস্বর হয়ে উঠেছে। আগে যোগীদের নিয়ে বিদ্রুপ করা হ’ত। কিন্তু আজ গোটা বিশ্বে যোগের সম্মান বৃদ্ধি হয়েছে। আমি একথা বলব না যে, যোগ কোনও ভোগীকে যোগী বানিয়ে দেবে। কিন্তু এটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, যোগ ভোগীকেও রোগী হতে দেবে না। আজ যোগ গোটা পৃথিবীতে গণআন্দোলনে পরিণত হয়েছে। কিছুদিন আগেই আমরা দেখেছি, কিভাবে গোটা বিশ্ব ২১ জুন তারিখে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালন করেছে। আর আমাকে বলা হয়েছে যে, এই এইম্স হাসপাতালগুলিতেও যোগ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সমস্ত চিকিৎসক বন্ধুরাও এখন যোগাসন করেছেন। আমি খুশি হয়েছি।
বন্ধুগণ, এই সরকারের লক্ষ্য হ’ল দেশের প্রত্যেক নাগরিকের কাছে স্বাস্থ্য পরিষেবাকে পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া এটা সম্ভব নয়। আজ যখন দেশ নতুন ভারতের সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তখন স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষদেরও নতুন সংকল্প স্থির করতে হবে। ২০২২ সালে যখন স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ হবে, আমি একজন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী হিসাবে সংকল্প গ্রহণ করছি যে, ২০২২ সালের আগে নিজের দায়িত্বের বাইরে গিয়ে এমন কিছু করব, যাতে দেশে স্বাস্থ্য পরিষেবার পরিবেশ বদলে যায়। সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে দেশকে যক্ষ্মা মুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। যক্ষ্মা রোগীদের পুষ্টির প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে প্রতি মাসে তাঁদেরকে ৫০০ টাকা করে আর্থিক অনুদান দেওয়া হচ্ছে।
বন্ধুগণ, ২০৩০ সালকে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলি যক্ষ্মা মুক্তির জন্য কাজ করছে। আমরা এই কাজ ২০২৫ সালের মধ্যেই সম্পন্ন করার কথা ঘোষণা করেছি। সারা পৃথিবী আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে যে আমরা কেমন করে এটা করব! আমার দেশের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের ওপর আস্থা আছে। তাঁদের সামর্থ্যকে আমি বিশ্বাস করি। সেজন্য এত সহজেই আমি এই চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। তেমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হ’ল মা ও শিশুর মৃত্যু হার রোধ করা। আমি আগেই বলেছি যে, ভারত বিগত চার বছরে এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। কিন্তু মা ও শিশুর মৃত্যুর হারকে আরও কমিয়ে আনতে আমাদের প্রত্যেককে আরও সচেষ্ট হতে হবে। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষিত মাতৃত্ব অভিযান, প্রধানমন্ত্রী মাতৃত্ব বন্দনা যোজনা এবং রাষ্ট্রীয় পোষণ অভিযান প্রকল্পগুলি মিশন মোড-এ কাজ করছে। একে আমরা গণআন্দোলনে পরিণত করতে চাই।
বন্ধুগণ, আজ দেশে এমন একটি দুর্নীতি বিরোধী আবহ গড়ে উঠেছে যে, অধিকাংশ মানুষ সৎভাবে রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য নিজেদের দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসছেন। প্রত্যেকের এমন মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে যে, কর আমরা দিই তার প্রতিটি পয়সা যেন দেশের কল্যাণে খরচ হয়। এই বিশ্বাসের পরিণাম আমরা সমাজের প্রতিটি স্তরে দেখতে পাচ্ছি। আপনাদের হয়তো মনে আছে যে, আমরা সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করার পরই প্রথম স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার প্রাকার থেকে আমি সম্পন্ন মানুষদের রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছিলাম। আমার সেই সামান্য আহ্বানে দেশের ২৫ কোটি পরিবার রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি ত্যাগ করেছে। অবিশ্বাস্য ব্যাপার! এদেশে কেউ কিছু ছাড়তে পারেন – এটাই অনেকে ভাবতে পারেন না। এটাই দেশের শক্তি। একই রকমভাবে আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে, বিগত ৮-৯ মাসে ৪২ লক্ষ প্রবীণ নাগরিক রেলযাত্রায় তাঁদের জন্য যে ভর্তুকি দেওয়া হয়, সেই সুবিধা গ্রহণ করেননি। সেজন্য তাঁরা কোনও ঢাকঢোল পেটাননি, কোথাও আবেদনও করেননি। আমিও এ ব্যাপারে আগে কখনও বলিনি। শুধু একটি ফর্মে লেখা ছিল – আমার দেশের প্রবীণ নাগরিকরা নীরবে সেই ফর্ম ভরে রেলযাত্রায় ভর্তুকি ত্যাগ করেছেন। এটা কম কথা নয়। এ থেকেই প্রমাণ হয় যে দেশে কেমন আবহ গড়ে উঠেছে! তেমনই আমি একবার দেশের চিকিৎসকদের অনুরোধ করেছিলাম যে, প্রত্যেক মাসের ৯ তারিখে কোনও গর্ভবতী মা যদি আপনার কাছে আসেন, তা হলে তাঁকে বিনা পয়সায় চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিন। আজ আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে বলছি যে, দেশের হাজার হাজার চিকিৎসক আমার এই আবেদনে সাড়া দিয়ে তাঁদের চেম্বারের সামনে বোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন, সেখানে বড় বড় করে লিখে দিয়েছেন – প্রত্যেক মাসের ৯ তারিখ এখানে বিনামূল্যে গর্ভবতী মহিলাদের চিকিৎসা করা হয়। ইতিমধ্যেই অসংখ্য বোন এর দ্বারা উপকৃত হয়েছেন। আমি চাই, যাঁরা এরকম পরিষেবা শুরু করেননি, সেই চিকিৎসক বন্ধুরাও এগিয়ে আসুন। প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষিত মাতৃত্ব অভিযানের মাধ্যমে ইতিমধ্যে দেশে ১ কোটি ২৫ লক্ষ গর্ভবতী মহিলাদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। এই অভিযানে অংশগ্রহণের জন্য আমি চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা কর্মীদের কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি চাই যে, এই অভিযানকে আপনাদের সেবার মনোভাব একটি নতুন রাষ্ট্রীয় স্বরাজ অভিযান গড়ে তুলুক। আমরাও একটা কর্মসূচি চালু করেছি। এগুলির কথা ইলেকট্রনিক মিডিয়া দেখায় না, খবরের কাগজও ছাপে না। আমরা ১৭ হাজার গ্রামকে বেছে নিয়ে গ্রাম স্বরাজ অভিযান শুরু করেছি। এর মধ্যে ৭টি বিষয়ে আমরা ১০০ ভাগ করতে চেয়েছি। এর একটি হ’ল টিকাকরণ। আপনারা শুনলে খুশি হবেন যে, আমরা ইতিমধ্যেই ঐ ১৭ হাজার গ্রামে সাফল্যের সঙ্গে ১০০ শতাংশ টিকাকরণ সম্পন্ন করেছি। এখন আমরা ঠিক করেছি যে, গত বছর ১৫ আগস্ট পর্যন্ত যে ১১৫টি জেলাকে উচ্চাভিলাষী জেলা ঘোষণা করা হয়েছে, সেগুলি যেহেতু রাজ্যের গড় উন্নয়নের মাপকাঠি থেকে পিছিয়ে, আমরা সেগুলির উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। সেই ১১৫টি জেলার ৪৫ হাজার গ্রামেই দেশের ৪০ শতাংশ গ্রামীণ মানুষ থাকেন। এখন সেই জেলাগুলিতে এমনই ৭টি বিষয় বেছে নিয়েছি, যা ১০০ শতাংশ পূর্ণ করতে হবে। তার মধ্যেও একটি হ’ল টিকাকরণ। অর্থাৎ স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা সারা দেশে যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাজ করছেন, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আপনাদের এই উদ্যোগের ফলেই দেশে টিকাকরণ বৃদ্ধির গতি ৬ শতাংশে পৌঁছে গেছে। ৬ শতাংশ শুনলে খুব একটা কিছু মনে হয় না। কিন্তু দেশে ২০১৪ সালের আগে এই বৃদ্ধির হার ১ শতাংশ-ও ছিল না। আপনাদের দৃঢ় সংকল্প ও ঝাঁপিয়ে পড়ে কাজ করার তাগিদ দেশকে সম্পূর্ণ টিকাকরণের লক্ষ্য পূরণের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই সাফল্য দেশে ১০০ শতাংশ সুস্থ পরিবার গড়ে তুলতে বড় ভূমিকা পালন করবে।
বন্ধুগণ, সুস্থ পরিবারই সুস্থ সমাজ গড়ে তোলে আর একটি সুস্থ সমাজই সুস্থ দেশ গড়ে তুলতে পারে। আমাদের সকলের কাঁধে, বিশেষ করে, আপনাদের ওপর দেশের স্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্ব রয়েছে। সেজন্য রাষ্ট্রপতি মহোদয়ও আপনাদের রাষ্ট্র নির্মাণের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বলে আখ্যা দিয়েছেন। আসুন, সরকারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ‘সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ সর্বে সন্তু নিরাময়াঃ সর্বে ভদ্রানি পশ্যন্তু। মা কশ্চিত দুঃখ ভাগ্ভবেৎ’।। এমন নিরাময় দেশ গড়ে তোলার সংকল্প নতুন ভারতে সিদ্ধ করতে আপনারা এগিয়ে আসুন। আজ এখানে দিল্লি তথা দেশবাসীর জন্য যে সমস্ত পরিষেবা চালু হ’ল কিম্বা যে প্রকল্পগুলির শিলান্যাস হ’ল, তার জন্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিভাগকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই কাজগুলি সম্পূর্ণ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। কারণ, আমাদের সরকারের মূল নীতি হ’ল যে কাজে আমরা হাত দেব – তা যেন সম্পূর্ণ করতে পারি। আমাদের দেশে সংসদে রেল বাজেট এবং অন্যান্য বাজেটে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হ’ত, সেগুলি যথাসময়ে পালন না করে সংসদের পবিত্রতাকে সঙ্কটের মধ্যে ফেলে দেওয়া হচ্ছিল। এ রকম প্রায় ১,৫০০ প্রতিশ্রুতি পালন অসম্পূর্ণ ছিল। এর সিংহভাগই রেলের ৩০-৫০ বছরের প্রতিশ্রুতি ছিল। আমরা সেই পথে হাঁটতে চাই না। আমরা পরিবর্তনের সংকল্প নিয়ে এসেছি। সকলের সাহায্য প্রার্থনা করতে এসেছি। আপনাদের সহযোগিতায় আমরা দেশের আশা-আকাঙ্খা পূর্ণ করার সংকল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমার প্রিয় বন্ধুগণ আপনারা এই সহযোগিতা অক্ষুণ্ণ রাখবেন।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।