মাননীয় রাষ্ট্রপতি ও আমার বন্ধু মুন জে-ইন মহোদয়, স্যামসাং-এর ভাইস চেয়ারম্যান জ্যায় ওয়াই লি, কোরিয়া ও ভারতের বাণিজ্য প্রতিনিধিবৃন্দ এবং সভায় উপস্থিত সকল শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিগণ,
আমারবন্ধুরাষ্ট্রপতিমুন জে-ইন– এরসঙ্গেনয়ডায় গড়ে ওঠা স্যামসাং-এর এই কারখানার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আসতে পেরে আমি খুব খুশি। এই মোবাইল ফোন নির্মান কারখানার নতুন ইউনিটটি নয়ডা তথা উত্তরপ্রদেশের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। এই নতুন ইউনিটের জন্যে আমি স্যামসাং টিমের সকলকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুগণ, ভারতকে নির্মানশিল্পের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক হাব গড়ে তোলার লক্ষ্যে আজকের এই অনুষ্ঠান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে গড়ে তোলা এই কারখানা শুধু ভারতে স্যামসাং-এর বাণিজ্যিক সম্পর্কগুলিকেই পোক্ত করবে না, ভারত এবং কোরিয়ার পারস্পরিক সম্পর্ককে নিবিড়তর করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। স্যামসাং-এর ‘গ্লোবাল আর এন্ড ডি হাব’ ভারতে অবস্থিত, আর এখন এই মেনুফ্যাকচারিং ফেসিলিটিও আমাদের গৌরব বৃদ্ধি করবে।
বন্ধুগণ, যখনই আমার ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মানুষদের সঙ্গে কথা হয়, আমি তাঁদেরকে একটি কথা প্রায়ই বলি, ভারতে হয়তো এমন কোনও মধ্যবিত্ত বাড়ি নেই, যাদের ঘরে কোনও কোরিয়ার জিনিস দেখা যাবে না! স্যামসাং কোম্পানি নিশ্চিতভাবেই ভারতীয় নাগরিকদের জীবনে নিজের বিশেষ স্থান করে দিয়েছে। বিশেষ করে ফোন, দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলা স্মার্ট ফোনের বাজারে আজ তাঁরা গোটা বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমার সঙ্গে যেদিন প্রথম স্যামসাং-এর শীর্ষকর্তাদের সাক্ষাৎ হয় , আমি তাঁদের ভারতে পণ্য উৎপাদনের পরামর্শ দিই। নয়ডাতে আজকের আয়োজন তারই পরিণাম। আজ ডিজিটাল প্রযুক্তি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে সরল ক্রে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আজ ভারতে প্রায় চল্লিশ কোটি স্মার্টফোন ব্যবহৃত হচ্ছে, ৩২ কোটি মানুষ ব্র্যান্ডেড স্মার্টফোন ব্যবহার করেন, অনেক কম মূল্যে ইন্টারনেট ডেটা পাওয়া যায়। ইতিমধ্যেই দেশের ল্কখাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতে অপ্টিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক পৌঁছে গেছে। এসব অগ্রগতি দেশে ডিজিটাল বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে।
বন্ধুগণ, শস্তায় মোবাইল ফোন, দ্রুতগতির ইন্টারনেট, শস্তা ডেটা থাকায় আজ দ্রুত এবং স্বচ্ছ পরিষেবা প্রদান সুনিশ্চিত হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জলের বিল জমা দেওয়া, স্কুল-কলেজে ভর্তি ও ফি জমা দেওয়া, প্রভিডেন্ড ফান্ড হোক কিম্বা পেনশন, প্রায় সমস্ত পরিষেবা অনলাইন পাওয়া যাচ্ছে। সারা দেশে চালু হওয়া প্রায় তিনলক্ষ কমন সার্ভিস সেন্টার গ্রামবাসীদের পরিষেবা প্রদানের কাজ করছে। অনেক শহরে বিনামূল্যে ওয়াই ফাই হটস্পট গরিব, মধ্যবিত্ত যুবকদের আকাঙ্খার নতুন উড়ানে সহায়ক হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, জিইএম বা গভর্নমেন্ট ই মার্কেট-এর মাধ্যমে সরকার সরাসরি উৎপাদকদের কাছ থেকে পণ্য কিনে নিচ্ছে। এতে মাঝারি ও ক্ষুদ্র স্বরোজগারীরা যেমন উপকৃত হয়েছেন, সরকারী ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বন্ধুগণ, এখন প্রতিদিন ডিজিটাল লেনদেন বাড়ছে। ভীম অ্যাপ এবং রুপে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন অনেক সহজ হয়েছে। এই জুন মাসেই ভীম অ্যাপের মাধ্যমে প্রায় ৪১হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। আজ ভীম অ্যাপ এবং রুপে নিয়ে শুধু দেশে নয়, সারা পৃথিবীতে আগ্রহ বাড়ছে। কিছুদিন আগে আমার এই দুটি পরিষেবা সিঙ্গাপুরেও উদ্বোধন করার সৌভাগ্য হয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে আজকের এই আয়োজন ভারতের নাগরিকদের ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার পাশাপাশি ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-র অভিযানকেও গতিপ্রদান করবে।
বন্ধুগণ, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-র প্রতি আমাদের আগ্রহ নিছকই একটি অর্থনৈতিক নীতির অংশ নয়, এটি কোরিয়ার মতো আমাদের অনেক মিত্রদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড়তর করার সংকল্পও বটে। এই স্যামসং এর মতো বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডকে নতুন সুযোগ প্রদানের পাশাপাশি বিশ্বের প্রত্যেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে খোলা আমন্ত্রণ যারা নতুন ভারতের নতুন এবং স্বচ্ছ ব্যবসায়ী সংস্কৃতির সুযোগ নিয়ে লাভবান হতে চান।
ভারতের অগ্রণী অর্থব্যবস্থা আর ক্রমবর্ধমান ‘নিও মিডল ক্লাস’ বা নব্য মধ্যবিত্তরা দেশকে বিনিয়োগের অসীম সম্ভাবনায় পরিপূর্ণ করে তুলেছে। আমি খুব খুশি যে, এই উদ্যোগটিকে সারা বিশ্ব স্বাগত জানিয়েছে, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। মোবাইল ফোন উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভারত আজ বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছে গেছে। বিগত চার বছরে দেশে কারখানার সংখ্যা বেড়েছে, মোবাইল ফোন নির্মাণকারী কারখানার সংখ্যা ২ থেকে বেড়ে ১২০টি হয়েছে, আর আনন্দের কথা হল, এর মধ্যে ৫০টিরও বেশি কারখানা খুলেছে এই নয়ডাতেই। এগুলিতে চার লক্ষেরও বেশি নবীন প্রজন্মের মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে স্যামসং কোম্পানির অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। সারা দেশে তারা সরাসরি ৭০হাজার মানুষকে কর্মসংস্থান দিয়েছে, এর মধ্যে ৫হাজার নয়ডাতেই কর্মসংস্থান হয়েছে। এই নতুন প্ল্যান্টে আরও হাজারখানেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আমাকে বলা হয়েছে যে, এখানে নির্মীয়মান ইউনিটটি কোম্পানির সর্ববৃহৎ মোবাইল ফোন নির্মান ইউনিটে পরিণত হবে। এখানে প্রতিমাসে প্রায় ১ কোটি ফোন নির্মিত হবে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল, এই ইউনিটে নির্মিত ফোনের ৩০শতাংশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হবে। এর ফলে নিশ্চিতভাবেই বিশ্ববাজারে তাঁদের আধিপত্য আরও শক্তিশালী হবে। অর্থাৎ কোরিয়ার প্রযুক্তি আর ভারতে নির্মাণ ও সফটওয়্যার সহযোগে আপনারা বিশ্ববাসীর জন্যে উন্নতমানের পণ্য নির্মাণ করবেন। এটাই আমাদের মিলিত শক্তি ও যৌথ দৃষ্টিভঙ্গী ।
আরেকবার স্যামসং-এর পুরো টিমকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আপনারা আজ আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছেন, সেজন্যে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।