মহামান্যইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী শ্রীযুক্ত বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, শ্রীমতী সারানেতানিয়াহু, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বিজয় রুপানি, উপ-মুখ্যমন্ত্রী শ্রী নীতিনপ্যাটেল, আইক্রিয়েটের সঙ্গে যুক্ত সকল বুদ্ধিজীবী, উদ্ভাবক, রিসার্চ স্কলার,আধিকারিকবৃন্দ এবং এখানে উপস্থিত নবীন প্রজন্মের বন্ধুগণ, ভাই ও বোনেরা,
আমিআনন্দিত যে আজ ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দেশের নবীন উদ্ভাবকদের সমর্পিতএই সংস্থার উদ্বোধন হচ্ছে। আমি শ্রদ্ধেয় নেতানিয়াহু’র কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। তিনিগুজরাট আসার আমন্ত্রণ স্বীকার করেছেন আর সস্ত্রীক এসেছেন। এই অনুষ্ঠানে আসার আগেআমরা সাবরমতী আশ্রম গিয়েছিলাম, সেখানে পূজনীয় বাপুজিকে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগপেয়েছি। ঘুড়ি ওড়ানোর সুযোগও হয়েছে।
গতবছর আমি যখন ইজরায়েল গিয়েছিলাম, তখনই ভেবেছিলাম যে এই সংস্থার ইজরায়েলের সঙ্গেসম্পর্ক সুদৃঢ় করা উচিৎ। আর তখন থেকেই আমি আমার বন্ধু মিঃ নেতানিয়াহু’র ভারত আসারঅপেক্ষা করছিলাম। আমি খুশি যে তিনি শুধু গুজরাট আসেননি, আজ আমরা তাঁর উপস্থিতিতেএই সংস্থার ক্যাম্পাসটিও উদ্বোধন করেছি। আমি শ্রী নেতানিয়াহু আর তাঁর সঙ্গে আসাপ্রতিনিধিদলের অন্যান্য সদস্যদের আরেকবার স্বাগত জানাই, তাঁদের প্রতি আমারকৃতজ্ঞতা জানাই।
আজযখন আমরা ‘আইক্রিয়েট’ উদ্বোধন করছি, সে সময় আমি স্বর্গীয় প্রফেসর এনভি ভসানিকেওস্মরণ করতে চাইব। আমার খুব ভালো মনে আছে যে, এখানে যখন ‘আইক্রিয়েট’-এর কল্পনা করাহয়েছিল, একে মূর্তরূপ দেওয়ার প্রাথমিক দায়িত্ব প্রফেসর ভসানির কাঁধে ন্যস্তহয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তিনি অসুস্থ হয়ে দীর্ঘকাল অজ্ঞান অবস্থায় কাটিয়েএকদিন আমাদের ছেড়ে চলে যান। তাঁর প্রাথমিক প্রয়াস এত সুপরিকল্পিত ছিল যে,পরবর্তীকালে তাঁর যোগ্য উত্তরসূরী আজ একে বাস্তব রূপ প্রদান করেছেন।
কৃষকএকটি ছোট্ট চারা পোঁতেন, লালন-পালন করে বড় করেন, তবেই পরবর্তী কয়েক প্রজন্ম সেইবিশাল বৃক্ষের ফল পেতে থাকেন। তা দেখে সেই কৃষকের আত্মা যেখানেই থাকুক না কেন,নিশ্চিতভাবেই আনন্দিত হন। আজ ‘আইক্রিয়েট’-এর উদ্বোধন সমারোহ আমাদের সবাইকে সেইআনন্দ দিচ্ছে যে একটি বীজ আমরা বপন করেছিলাম, তা আজ বটবৃক্ষের মতো বড় হয়ে উঠেছে।
জন্মেরসময়ই কোনও প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব ভালোভাবে আঁকা যায় না। আমরা সবাই জানি যে, শুধুভারত নয়, আজ বিশ্বের সর্বত্র ‘ফার্মাসিউটিক্যাল’ ক্ষেত্রে গুজরাটের নাম রয়েছে,গুজরাটিদের খ্যাতি রয়েছে। কিন্তু অনেক কম মানুষই হয়তো এর প্রেক্ষাপট জানেন। আজথেকে ৫০-৬০ বছর আগে আমেদাবাদের কয়েকজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষের প্রচেষ্টায় একটিফার্মেসি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল; সেটাই ছিল দেশের প্রথম ফার্মেসি কলেজ। ঐ কলেজআমেদাবাদ তথা গোটা গুজরাটে ফার্মেসি ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী বাস্তুতন্ত্র গড়েতুলেছে। আমরা ‘আইক্রিয়েট’ থেকেও একই রকম প্রত্যাশা রাখি। এখান থেকে পাশ করার পরযুবক-যুবতীরা যেন উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে সারা পৃথিবীতে ভারতের নাম উজ্জ্বল করে।
আমারমনে আছে যে, কয়ক বছর আগে ‘আইক্রিয়েট’ প্রকল্পের শিলান্যাস করার সময় আমি বলেছিলামযে, এই প্রকল্পের সঙ্গে আমি ইজরায়েলকে জুড়তে চাই। ইজরায়েলের অভিজ্ঞতা, সেদেশেরস্টার্ট আপ আবহের ্সুফল যেন এই সংস্থা তথা এদেশের নবীন প্রজন্ম পায়, একথা মাথায়রেখেই বলছি যে, ইজরায়েলের প্রযুক্তি এবং সৃষ্টিশীলতা গোটা বিশ্বকে প্রভাবিত করে।ভারতের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে যুক্ত হলে ইজরায়েলের অভিজ্ঞতাথেকে ভারতীয় উদ্ভাবকরাও লাভবান হতে পারবেন।
জলসংরক্ষণ, কৃষি উৎপাদন, কৃষিজাত দ্রব্যাদির দীর্ঘসময় ধরে সংরক্ষণ, খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ, মরু অঞ্চল এবং ঊষর ভূমিতে চাষবাস, সাইবার সুরক্ষা ইত্যাদি বিভিন্নবিষয়ে ভারত এবং ইজরায়েল যৌথভাবে কাজ করতে পারে।
বন্ধুগণ,ইজরায়েলের বন্ধুরা বিশ্ববাসীর সামনে প্রমাণ করে দিয়েছে যে, দেশে আকার নয়,দেশবাসিদের সংকল্পই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
একবারআমার ইজরায়েলের পূর্ব রাষ্ট্রপতি এবং মহান প্রজ্ঞাবান শ্রদ্ধেয় শিমোন পেরেজেরসঙ্গে সাক্ষাতের সৌভাগ্য হয়েছিল। তিনি বলতেন, “আমরা প্রমাণ করব যে, আবিষ্কারেরকোনও সীমা-পরিসীমা নেই। আবিষ্কার দেশের সঙ্গে দেশের আর মানুষের সঙ্গে মানুষের ভাববিনিময়কেসহজ করে”। তাঁর এই কথা আজ ১০০ শতাংশ সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। ভারত ও ইজরায়েল’কে কাছেআনার ক্ষেত্রে উদ্ভাবন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
ভাইও বোনেরা, শ্রদ্ধেয় শিমোন পেরেজের বলা আরেকটি কথা আমি উদ্ধৃত করতে চাই। তিনিবলতেন, “যত বড় স্বপ্ন দেখবেন, ফলাফল তত বেশি রঙিন হবে”। ইজরায়েলের এই ভাবনা নোবেলপুরস্কারের সঙ্গে ইজরায়েলের রসায়নকে শক্তিশালী করেছে। এর প্রমাণ হ’ল ইজরায়েলেরবৈজ্ঞানিকরা ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন!
ভাইও বোনেরা, প্রখ্যাত বৈজ্ঞানিক অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের একটি বিখ্যাত উক্তি হ’ল –“কল্পনা হ’ল জ্ঞানের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ”। এই কল্পনা – এই স্বপ্নগুলিই আমাদেরনতুন সাফল্যের উচ্চতায় পৌঁছে দিতে পারে। এই স্বপ্নগুলিকে কখনও মরতে দেওয়া চলবে না।এই স্বপ্নগুলি থমকে যেতে দেবেন না! শিশুদের আগ্রহকে পোষন করার দায়িত্ব আমাদেরসকলের। লজ্জা, আবিষ্কারের শত্রু। আপনারা চারপাশের শিশুদের মনোযোগ দিয়ে দেখুন।আপনারা যদি তাদেরকে বলেন যে, তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যাওয়া উচিৎ! তারা জিজ্ঞাসা করবে, কেনঘুমানো উচিৎ? আপনি যদি বলেন যে, আমার এই সঙ্গীত পছন্দ! তা হলে তৎক্ষণাৎ জানতেচাইবে, আপনি কেন এই সঙ্গীত পছন্দ করেন? একবার অঙ্কের এক ক্লাসে মাস্টারমশাইবোঝালেন যে, তিনটি ফল যদি তিনজনকে সমানভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়, তা হলে প্রত্যেকেএকটি করে পাবে, ছয়টি ফল যদি ছয় জনকে দেওয়া হয়, তা হলে তারাও একটি করে পাবে! অর্থাৎযতজন ছাত্র ততগুলি ফল থাকলে প্রত্যেকে একটি করে ফল পাবে। তখন একজন ছাত্র উঠেদাঁড়িয়ে শিক্ষকের চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, যদি ফলের সংখ্যা শূন্য হয় আরছাত্র সংখ্যাও শূন্য তা হলেও কি প্রত্যেক ছাত্র একটি করে ফল পাবে? শিক্ষক মশাইপ্রশ্ন শুনে অবাক হয়ে তাকান, অন্য ছাত্ররা হাসতে শুরু করে। আপনারা শুনলে খুশি হবেনযে, ঐ শিক্ষার্থী আর কেউ নয়, ভবিষ্যতে গণিতের মহান পণ্ডিত হয়ে ওঠা শ্রীনিবাসরামানুজম স্বয়ং। আর তাঁর ঐ একটি প্রশ্নই গণিতের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নকে স্পষ্টকরে তোলেন যে, শূন্যকে শূন্য দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল এক হয় কি না!
আমাদেরযুবকদের প্রাণশক্তি আছে, উৎসাহও আছে। তাদের চাই, স্বাভাবিক প্রেরণা, সামান্যপথপ্রদর্শন, নেটওয়ার্ক যোগাযোগ, প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা। এইসব বিষয়গুলি তাদেরআবিষ্কারের সঙ্গে যুক্ত হলে বড় বড় পরিণাম নিশ্চিত হয়। আজ আমরা দেশের সম্পূর্ণব্যবস্থাকেই উদ্ভাবন-বান্ধব করে গড়ে তোলার কাজ করছি। আমাদের মন্ত্র হ’ল – আগ্রহথেকে জন্মাক ইচ্ছে, ইচ্ছের শক্তি থেকেই অঙ্কুরিত হোক নানা বুদ্ধি, সেসব বুদ্ধিরশক্তি থেকে হোক উদ্ভাবন, আর উদ্ভাবনের জোয়ারে গড়ে উঠুক আমাদের নতুন ভারত।
বন্ধুগণ,প্রত্যেক ব্যক্তির মনে, প্রত্যেক নবীনের মনে কিছু না কিছু করার, উদ্ভাবনমূলক কিছুকরার ইচ্ছে থাকে। তাঁদের মনে ভাবনা জাগে আর মিলিয়ে যায়। যে ভাবনাগুলি জাগে সেগুলিআমাদের সম্পত্তি। কিন্তু সেই ভাবনাগুলি এমনি মিলিয়ে যাওয়া, হারিয়ে যাওয়া, কোনওমাটি স্পর্শ না করাকে আমি সমাজ, সরকার ও ব্যবস্থার দুর্বলতা মনে করি। আমি এইব্যবস্থায় পরিবর্তন আনছি। নবীনদের ভাবনা যেন এমনি মিলিয়ে না যায়, সেটা দেখা আমাদেরসকলের দায়িত্ব। নবীনরা যাতে নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে পারে, নিজেদের ক্ষমতারপরিচয় গোটা বিশ্বকে দিতে পারে তেমন সাহায্যকারী সংস্থা গড়ে তোলা, সরকার ও সমাজেরদায়িত্ব। এই ভাবনা থেকেই এই ‘আইক্রিয়েট’-এর জন্ম।
আমিআনন্দিত যে, ‘আইক্রিয়েট’ দেশের নবীন প্রজন্মকে তাঁদের স্বপ্ন পূরণে, তাঁদেরউদ্ভাবনী ধারনাগুলিকে সাকার করতে বড় সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। আমি যখন‘আইক্রিয়েট’-এর উদ্ভাবিত পণ্যসমূহ সম্পর্কে জেনেছি, দেখেছি; খুবই আনন্দ পেয়েছি।আমাকে বলা হয়েছে যে, ‘বায়ো স্ক্যান লেবার’ আড্ডা, ‘স্পেকট্রামস্ পার্ট’,‘আইকন’-এর মতো অনেক উদ্ভাবন, ‘আইক্রিয়েট’-এর সাহায্যে সম্ভব হয়েছে আর সাফল্যেরপ্রথম শর্ত হয় – সাহস। যাঁরা সাহস করতে পারেন, তাঁরা যে কোনও সিদ্ধান্ত নিতেপারেন। আপনারা আমার সঙ্গে সহমত তো? আমার কথা সমর্থন করেন তো নবীন বন্ধুরা? সাহস নাথাকলে মানুষ সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। ‘আইক্রিয়েট’-এর মাধ্যমে উদ্ভাবনকারী সাহসীযুবকদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
প্রচলিতসংস্কৃতি আর উদ্ভাবনের মধ্যে সর্বদাই টানাপোড়েন চলতে থাকে। যখনই কেউ নতুন কিছুকরতে চান, তখন এক ধরনের মানুষেরা তাঁকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করতে থাকে, বিরোধ করে!অধিকাংশ মানুষ কালিদাসের ‘মেঘদূত’ আর ‘শকুন্তলা’ সম্পর্কে তো জানেন কিন্তু খুব কমমানুষই জানেন যে, কালিদাস তাঁর লেখা মালবিকাগ্নিমিত্রম-এ প্রচলিত সংস্কৃত আরউদ্ভাবন নিয়ে একটি মজাদার কথা বলেছিলেন।
পুরাণমিৎয়েব না সাধু সর্বং ন চপি কাব্যং নওয়মিৎয়োয়দয়ম্।
সন্তঃ পরীক্ষয়ানয়তরদ্ভজন্তে মূঢ়ঃ পরপ্রভয়য়নেয়বুদ্ধিঃ।।
অর্থাৎকোনও জিনিস পুরনো হলেই যে সেটা ভালো হবে তা জরুরি নয়। তেমনই কোনও কিছু নতুন হলেইযে তা খারাপ হবে – তা ঠিক নয়! বুদ্ধিমান ব্যক্তি প্রতিটি জিনিসকে গুণের নিরিখেমাপে আর মূর্খরা অন্যদের মন্তব্য শুনে নিজের সিদ্ধান্ত নেয়। কত শত বছর আগে কালিদাসপ্রচলিত সংস্কৃতি আর উদ্ভাবনের মাঝের টানাপোড়েনের সমাধান করে গেছেন।
বন্ধুগণ,আমাদের বৈজ্ঞানিকদের এমন ক্ষমতা রয়েছে, যত টাকায় হলিউডে একটি কল্পবিজ্ঞানের সিনেমাতৈরি হয়, তার থেকেও কম টাকায় বাস্তবে সত্যিকরের মঙ্গলযান তাঁরা মঙ্গলগ্রহে পৌঁছেদিয়েছেন। এই চারদিন আগেই ইসরো মহাকাশযান উৎক্ষেপণে সেঞ্চুরি করেছে। এই সাফল্য এমনিআসে না। এর পেছনে রয়েছে আত্মোৎসর্গ, পরিশ্রম; যে স্বপ্নের উড়ান চাই, সেইপ্রাণশক্তি ভারতীয় যুবকদের মনে ভরপুর রয়েছে – এটা আমি দিন-রাত অনুভব করি।
ভাইও বোনেরা, আপনারা লক্ষ্য করেছেন, ‘আইক্রিয়েট’-এর ‘আই’টিকে ইংরেজি ‘স্মল লেটার’-এরাখা হয়েছে; এর পেছনে একটা কারণ আছে। বন্ধুগণ, সৃষ্টিশীলতার সবচেয়ে বড় বাধা আসে এই‘আই’ বড় হয়ে গেলে। সৃষ্টিশীলতার সঙ্গে ‘আই’ ‘ক্যাপিটাল লেটার’-এ থাকার মনে হ’লঅহম্ আর অহংকার বাধা সৃষ্টি করবেই। সেজন্য গোড়া থেকেই এখানে সৃষ্টিশীলতাকে অহ্মআর অহংকার থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে আরেকটি কথা অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ ছিল। সৃষ্টিশীলতার গোড়াপত্তন ‘স্মল আই’ দিয়ে হলেও স্বপ্ন ‘ক্যাপিটালআই’ অর্থাৎ ‘ইনডিভিজ্যুয়াল’ থেকে শুরু করে ‘ইন্ডিয়া’ পর্যন্ত পৌঁছানো। আমাদেরলক্ষ্য ছিল ‘স্মল আই’ থেকে ‘ক্যাপিটাল আই’ পর্যন্ত অনেক বড় উল্লম্ফন। এক ব্যক্তিথেকে শুরু করে গোটা ভারতে ছড়িয়ে পড়া।
আজকেরপ্রয়োজন হ’ল যে, আমাদের নবীন প্রজন্ম দেশের সামনে দাঁড়ানো সমস্যাগুলি থেকে মুক্তিরজন্য উদ্ভাবন করুক। কার্যকরি উদ্ভাবন চাই। সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের মানকে কিভাবেন্যূনতম অর্থ ব্যয়ে উন্নত করা যায়, তা নিয়ে গবেষণা করে উদ্ভাবন চাই। ম্যালেরিয়াবিপদ হয়ে উঠলে ন্যূনতম টাকা খরচ করে কিভাবে গরিব পরিবারগুলিকে তা থেকে মুক্তিদেওয়া যায়, সে সম্পর্কে পথ খুঁজে বের করতে হবে! যক্ষ্মা সীকল সেল-এর বিপদ থেকেকিভাবে তাঁদের রক্ষা করব, তাঁদের পরিবেশকে কিভাবে সুলভে আবর্জনামুক্ত করব? খাদ্যথেকে উৎপাদিত বর্জ্য, কৃষি উৎপাদনের বর্জ্যগুলিকে কিভাবে অল্প খরচে সম্পদেরূপান্তরিত করা যায় – এ ধরনের সমস্যাগুলির সমাধানের পথ খুঁজতে উদ্ভাবন চাই।
আজদেশে বড় মাত্রায় ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ চলছে। এ বিষয়ে উদ্ভাবনের পাশাপাশি স্বরোজগারআর প্রযুক্তিগত উন্নয়নের স্বার্থে দেশে এই ধরনের ভাবনা আর ‘আইক্রিয়েট’-এর মতোউৎসর্গীকৃত সংস্থা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
একথা ভেবেই কেন্দ্রীয় স্তরে ‘স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া’, ‘স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া’,‘মুদ্রা যোজনা’র মতো অনেক প্রকল্প চালু করা হয়েছে। ‘অটল ইনোভেশন মিশন’ বাবদ সরকারসারা দেশে ২ হাজার ৪০০’রও বেশি ‘অটল টিংকারিং ল্যাবস্’ স্থাপনের প্রস্তাব মঞ্জুরকরেছে। বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনাকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যেএবং আধুনিক পদ্ধতিতে হাতে-কলমে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সারা দেশে এভাবে একটি নতুনমঞ্চ গড়ে উঠবে।
গতবছর আমার ইজরায়েল সফরের সময় আমরা চল্লিশ মিলিয়ন আমেরিকান ডলারের একটি তহবিল গড়েতুলেছি, যা ভারত এবং ইজরায়েলের একটি যৌথ উদ্যোগে উভয় দেশের মেধাকে প্রযুক্তিউদ্ভাবনের লক্ষ্যে নতুন কিছু করার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। এই যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমেখাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, জল, স্বাস্থ্য পরিষেবা তথা শক্তি ক্ষেত্রে বিশেষ জোর দেওয়াহবে। আমরা ‘উদ্ভাবন সেতু’রও পরিকল্পনা করেছি, যার মাধ্যমে উভয় দেশের ‘স্টার্টআপ’গুলির মধ্যে বিনিময় চালু হবে।
আমিখুশি যে, এই প্রক্রিয়ায় ‘ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ’-এর মাধ্যমে কয়েকজন বিজেতা নির্বাচিতহয়েছেন। আজ তাঁদের হাতে ‘স্টার্ট আপ অ্যাওয়ার্ড’ও তুলে দেওয়া হয়েছে। একটু আগেইদেখেছেন যে, ইজরায়েলের টিম এবং ভারতীয় টিমের সদস্যরা মঞ্চে এসেছিলেন।ইন্ডিয়া-ইজরায়েল ইনোভেশন ব্রিজ একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। আগামী দিনে এই অনলাইনপ্ল্যাটফর্ম উভয় দেশের ‘স্টার্ট আপ’ কোম্পানিগুলির মধ্যে বড় সংযোগের মাধ্যমে হয়েউঠবে।
দু’দিনআগে যখন দিল্লিতে উভয় দেশের সিইও-দের বৈঠক হচ্ছিল, সেখানেও আমি এই প্রয়াসকেসমর্থনের আবেদন রেখেছি। বন্ধুগণ, ভারতের অপরিসীম সামুদ্রিক শক্তি রয়েছে। আমাদেরসমুদ্রতট ৭ হাজার ৫০০ কিলোমিটার থেকে বেশি দীর্ঘ, ১ হাজার ৩০০-রও বেশি আমাদেরসমুদ্র দ্বীপ রয়েছে। বেশ কিছু দ্বীপ রয়েছে, যেগুলির আয়তন সিঙ্গাপুরের চেয়েও বড়।প্রায় ২৫ লক্ষ বর্গ কিলোমিটারের একটি এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন রয়েছে – এটি আমাদেরএমন একটি শক্তি যা অতুলনীয়। দেশের উন্নয়নে এই শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুননতুন উদ্ভাবনের প্রয়োজন রয়েছে। এর উদ্ভাবনগুলি নীল বিপ্লবে নতুন প্রাণশক্তি সঞ্চারকরবে।। আমাদের মৎস্যজীবী ভাই-বোনদের জীবন বদলে দেবে।
আমিইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই যে, তিনি গত বছর আমার ইজরায়েল সফরের সময়তিনি আমাকে সমুদ্রের জল পরিশুদ্ধ করে ব্যবহার করার যন্ত্র দেখিয়েছিলেন। তিনি নিজেগাড়ি চালিয়ে সেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, তেমনি একটি যন্ত্র আজ তিনি সঙ্গেকরে নিয়ে এসেছেন, একটু আগেই আপনারা এর লাইভ ডেমো বড় পর্দায় দেখছিলেন। বনাসকাঠাজেলায় সীমান্তবর্তী একটি গ্রামে এই নতুন পদ্ধতি কাজে লাগানো হয়েছে। এরফলে, বিএসএফপোস্টে মোতায়েন সুরক্ষা কর্মী এবংত পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলির মানুষ তো বিশুদ্ধপানীয় জল পাবেনই, ভারতে এ ধরনের প্রযুক্তি পরীক্ষার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
ভাইও বোনেরা, আপনাদেরকে আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, কৃষিতে ইজরায়েলের সহযোগিতায়নির্মীয়মান ২৮টি উৎকর্ষ কেন্দ্র-র মধ্যে ২৫টি ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে। এদেরমাধ্যমে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং, তথ্য এবং জেনেটিক রিসোর্স বিনিময়ে সুবিধা হচ্ছে।এগুলির মধ্যে তিনটি উৎকর্ষ কেন্দ্র আমাদের গুজরাটে স্থাপিত হয়েছে। এই অনুষ্ঠানেরপর আমি আর ইজরায়েলের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী প্রান্তিক তালুক, সাবরকন্ঠ জেলার ভদরাড়গ্রামে যাব। সেখানেও কৃষিতে সেন্টার অফ এক্সেলেন্স গড়ে উঠেছে। সেখান থেকে ভিডিওকনফারেন্স-এর মাধ্যমে কচ্ছ-এর খজুর-এ গড়ে ওঠা গবেষণা কেন্দ্রের সঙ্গেও কথা বলতেপারব। ভদরাড় কেন্দ্র থেকে গুজরাটের কৃষকদের একটি নতুন সব্জির চারা বিতরণ করাহচ্ছে। ঐ কেন্দ্রে ১০ হাজার কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে আর ২৫ হাজারেরও বেশিকৃষক ইতিমধ্যে ঐ কেন্দ্র ঘুরে দেখে গেছেন। বেশ কয়েকজন কৃষককে ইজরায়েলে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণদেওয়া হয়েছে। ভারত ও ইজরায়েলের মধ্যে এই সহযোগিতা, এই পারস্পরিক উন্নয়নের ভাবনা,উভয় দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
একবিংশশতাব্দীতে উভয় দেশের এই বন্ধুত্ব মানবতার ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় লিখবে।বন্ধুগণ, পরস্পরের সংস্কৃতিকে সম্মান, পরস্পরের পরম্পরাকে সম্মান আমাদের সম্পর্ককেসর্বদা সুদৃঢ় করতে থাকবে। যত কম সংখ্যাতেই হোক না কেন, আমেদাবাদ ও পার্শ্ববর্তীঅঞ্চলে ইহুদিরা শান্তিতে বসবাদ করেন। তাঁরা গুজরাটের ইতিহাসের সঙ্গে, সংস্কৃতিরসঙ্গে মিলেমিশে গেছেন। গুজরাটের ইহুদিরা দেশের অন্যান্য প্রান্তে এমনকি ইজরায়েলেনিজেদের কাজকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ভারত এবং ইজরায়েলের পারস্পরিক সম্পর্ক আরওবৃদ্ধি পাক, আরও সুদৃঢ় হোক, এই কামনা নিয়ে আমি নিজের বক্তব্য সম্পূর্ণ করতে চাই।‘আইক্রিয়েট’কে সফল করে তুলতে যাঁরা সহযোগিতা করেছেন, তাঁদেরকে আমি বিশেষভাবেধন্যবাদ জানাই।
শ্রীনারায়ণ মূর্তি মহোদয়, শ্রী দিলীপ সিংঘভি সহ অনেক জ্ঞানী মানুষেরা এই ‘আইক্রিয়েট’গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, নিজেদের বহু মূল্য সময় দিয়েছেন। আমিআশা করি যে, এই সংস্থায় যে উদ্ভাবনের আবহ গড়ে উঠবে, তা গোটা দেশের নবীন প্রজন্মেরক্ষমতায়নে অনেক বড় ভূমিকা পালন করবে। আর আমি ইজরায়েলের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবংতাঁর স্ত্রী শ্রীমতী সারাকে অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই। তাঁরা আমার ভালো বন্ধু,আমাদের এই বন্ধুত্ব দু’দেশের বন্ধুত্বে একটি নতুন শক্তি রূপে মাত্রান্বিত হয়েউঠছে। আজ তিনি ভারতের জন্য যে বিশেষ উপহার এনেছেন, সেই উপহার দেশের সাধারণ মানুষেরহৃদয়কে স্পর্শ করবে। সেজন্য আমি হৃদয় থেকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই।
আমিআরেকবার উপস্থিত সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই আর ‘আইক্রিয়েট’কে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। ধন্যবাদ।