দেশ বিদেশের সম্মানিত অতিথিবৃন্দ, নমস্কার !
‘রাইজে’ সামাজিক ক্ষমতায়ণের লক্ষ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃত্রিম মেধার জন্য সম্মেলনে আপনাদের স্বাগত। কৃত্রিম মেধার ওপর আলোচনায় উৎসাহদানের এটি বড় একটি উদ্যোগ। প্রযুক্তি এবং মানুষের ক্ষমতায়ণ সংক্রান্ত বিষয়গুলি এখানে যথাযথভাবে আপনারা আলোচনা করবেন। প্রযুক্তি আমাদের কর্মক্ষেত্রের পরিবর্তন এনেছে। এর মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তি বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলায় আমাদের সাহায্য করেছে। আমি নিশ্চিত যে সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং কৃত্রিম মেধার মেলবন্ধনের সঙ্গে মানবিক স্পর্শ যুক্ত হলে কৃত্রিম মেধা এর মাধ্যমে সমৃদ্ধ হবে।
বন্ধুগণ,
মানুষের বৌদ্ধিক ক্ষমতার প্রকাশ হল কৃত্রিম মেধা। মানুষের মতো যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তিকে চিন্তা করার ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। আজ, এইসব যন্ত্রপাতি এবং প্রযুক্তি শেখার এবং ভাবার ক্ষমতা অর্জন করছে। এরকমই একটি বিকাশশীল প্রযুক্তি হল কৃত্রিম মেধা। মানুষের সঙ্গে কৃত্রিম মেধা একযোগে কাজ করলে আমাদের গ্রহের অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলা যাবে।
বন্ধুগণ,
ইতিহাসের প্রতিটি পর্বে ভারত বিশ্বকে জ্ঞান ও বিদ্যাচর্চার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে। বর্তমান যুগে তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রেও ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। প্রযুক্তির প্রথম সারির কয়েকজন উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব ভারতের। আন্তর্জাতিক স্তরে তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের চালিকাশক্তি হিসেবে ভারত নিজের ভূমিকাকে প্রমাণ করেছে। আমরা বিশ্বের কাছে ডিজিটাল ব্যবস্থায় শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করবো।
বন্ধুগণ,
ভারতে আমরা দেখেছি প্রযুক্তি দক্ষতা এবং পরিষেবা সরবরাহের মানোন্নয়ন ঘটায়। আমাদের দেশে বিশ্বের বৃহত্তম অনন্য পরিচিতি ব্যবস্থা- আধার রয়েছে। আমাদের দেশে বিশ্বের সবথেকে উদ্ভাবনমূলক ডিজিটাল পদ্ধতিতে আর্থিক লেনদেনের ব্যবস্থা-ইউপিআই আছে। এগুলির সাহায্যে বিভিন্ন ডিজিটাল পরিষেবা ব্যবহার করা যায়, এর মাধ্যমে দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষদের জন্য সরাসরি অর্থ হস্তান্তর প্রক্রিয়ার মতো আর্থিক পরিষেবাগুলি পরিচালনা করা যায়। মহামারীর সময়ে আমরা দেখেছি কিভাবে ভারতের ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা থাকায় সুবিধা হয়েছে। আমরা সাহায্যের জন্য দ্রুততার সঙ্গে দক্ষভাবে জনসাধারণের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি। ভারত তার অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ককে দ্রুত বৃদ্ধি করছে। প্রতিটি গ্রামকে উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থায় যুক্ত করাই এর উদ্দেশ্য।
বন্ধুগণ,
এখন আমরা ভারতকে কৃত্রিম মেধার জন্য আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এই বিষয় নিয়ে অনেক ভারতীয় ইতিমধ্যেই কাজ করছেন। আমি আশা করবো ভবিষ্যতে আরও অনেকে এই বিষয়ে কাজ করবেন। দলবদ্ধভাবে কাজ করা, আস্থা, সহযোগিতা, দায়িত্ববোধ ও সমন্বয়- এগুলির সাহায্যে এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে।
বন্ধুগণ,
ভারত সম্প্রতি ২০২০র জাতীয় শিক্ষানীতি গ্রহণ করেছে। এই শিক্ষানীতিতে প্রযুক্তি ভিত্তিক শিক্ষাদান ও দক্ষতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ভাষা এবং উপভাষায় বৈদ্যুতিন পদ্ধতিতে পাঠক্রম তৈরি করা হয়েছে। কৃত্রিম মেধার ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং-এর মাধ্যমে এই পুরো ক্ষেত্রের সুবিধা পাওয়া যাবে। আমরা এ বছর এপ্রিল মাসে যুব সম্প্রদায়ের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃত্রিম মেধা কর্মসূচি শুরু করেছি। এই কর্মসূচিতে স্কুলের ১১ হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী মূল পাঠক্রম সম্পূর্ণ করেছে। এরা এখন কৃত্রিম মেধার ওপর তাদের প্রকল্প তৈরি করছে।
বন্ধুগণ,
ন্যাশনাল এডুকেশনাল টেকনোলজি ফোরাম গঠন করা হবে। ডিজিটাল পরিকাঠামো, ডিজিটাল বিষয়বস্তু এবং ক্ষমতা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে বৈদ্যুতিন শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। শিক্ষার্থীদের হাতেকলমে শেখানোর জন্য ভার্চুয়াল পরীক্ষাগার তৈরি করা হচ্ছে। উদ্ভাবন এবং শিল্পোদ্যোগের সংস্কৃতিকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য আমরা অটল ইনোভেশন মিশন চালু করেছি। এর মধ্য দিয়ে আমরা জনসাধারণের সুবিধার জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগুলির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছি।
বন্ধুগণ,
এই প্রসঙ্গে আমি কৃত্রিম মেধার ওপর জাতীয় কর্মসূচির বিষয়ে কিছু বলতে চাই। সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে কৃত্রিম মেধার যথাযথ ব্যবস্থা এর মাধ্যমে নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সকলের সাহায্যে এটিকে বাস্তবায়িত করা হবে। রাইজে এই বিষয় নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করার একটি আদর্শ প্ল্যাটফর্ম হতে পারে। আমি আপনাদের সকলকে এই বিষয়গুলিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
বন্ধুগণ,
আমি সম্মানিত শ্রোতা দর্শকদের কাছে কয়েকটি সমস্যার কথা তুলে ধরতে চাই। আমরা কি আমাদের সম্পদ সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্য কৃত্রিম মেধাকে কাজে লাগাতে পারি ? কোন কোন জায়গায় সম্পদ অবহেলায় পরে থাকে। আবার কোথাও কোথাও সম্পদের ঘাটতি দেখা যায়। আমরা কি এই সম্পদগুলিকে সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্য সেগুলিকে কার্যকরভাবে ছড়িয়ে দিতে পারি ? আমরা কি আমাদের নাগরিকদের তাদের দরজায় বিভিন্ন পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে তাদের খুশি করতে পারি?
বন্ধুগণ,
ভবিষ্যৎ হল তরুণদের। আর প্রতিটি তরুণ কিছু ভূমিকা পালন করতে চায়। প্রত্যেক শিশুর নিজস্ব মেধা, দক্ষতা ও অনন্য ক্ষমতা রয়েছে। কখনও-কখনও দেখা যায় সঠিক লোক ভুল জায়গায় পৌঁছে গেছেন।
আমাদের এমন কিছু করতে হবে যাতে এর পরিবর্তন ঘটে। যখন শিশুরা বেড়ে ওঠে তখন তারা নিজেদের সম্পর্কে কি ভাবে? তাদের মা-বাবা, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং বন্ধুবান্ধবরা কি তাদের ভালোভাবে খেয়াল করে? শৈশব থেকে তাদের প্রতি নজর দেওয়া শুরু করে তাদের বেড়ে ওঠা পর্যন্ত খেয়াল রাখতে হয়। এবং সব বিষয়গুলির তথ্য সঞ্চয় করে রাখা প্রয়োজন। এর ফলে একটি শিশু আসলে ঠিক কি চায় সেটি খুঁজে নিতে তাকে সাহায্য করা যায়। এই পর্যবেক্ষণগুলি তরুণ-তরুণীদের পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। আমরা কি এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি যাতে প্রতিটি শিশুর উৎসাহের বিষয়ে একটি বিশ্লেষণাত্মক প্রতিবেদন তৈরি করা যায়। এর ফলে অনেক ছেলেমেয়ের কাছে নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হয়। এই ধরণের মানব সম্পদ শনাক্তকরণের মধ্য দিয়ে সরকারি স্তরে এবং ব্যবসা ক্ষেত্রে দীর্ঘকালীন লাভ পাওয়া যেতে পারে।
বন্ধুগণ,
কৃষি, স্বাস্থ্য ক্ষেত্র, শহরাঞ্চলের জন্য উন্নত পরিকাঠামো, যানজট কমানো, পয়ঃনিষ্কাশী ব্যবস্থার উন্নতি এবং বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে গ্রিড স্থাপনার মতো কাজে কৃত্রিম মেধা বড় ভূমিকা নিতে পারে। আমাদের বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্থাপনাকেও এটি শক্তিশালী করতে পারে। এমনকি জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যার সমাধানও এর মাধ্যমে করা যায়।
বন্ধুগণ,
আমাদের গ্রহে অনেক ভাষা রয়েছে। ভারতেও আমাদের অনেক ভাষা এবং উপভাষা আছে। এই বৈচিত্র্য আমাদের উন্নত সমাজ গড়তে সাহায্য করে। এইমাত্র প্রফেসার রাজ রেড্ডি প্রস্তাব দিলেন যে কৃত্রিম মেধার ব্যবহার করে ভাষাগত ক্ষেত্রে যে সব বাধা বিপত্তি দেখা যায়, সেই সমস্যার সমাধান কেন করতে পারব না। আসুন আমরা খুব সহজ-সরল এবং কার্যকরভাবে চিন্তা করি কেমন করে কৃত্রিম মেধার সাহায্যে ভিন্নভাবে সক্ষম বোন ও ভাইদের সাহায্য করা যেতে পারে।
বন্ধুগণ,
জ্ঞান ভাগ করে নেওয়ার ক্ষেত্রে কৃত্রিম মেধাকে কি ব্যবহার করা যেতে পারে? জ্ঞান, তথ্য ও দক্ষতা সহজেই ক্ষমতায়ণের কাজে ব্যবহার করা যায়।
বন্ধুগণ,
কিভাবে কৃত্রিম মেধা ব্যবহার করতে হবে তারজন্য আমাদের সর্বাত্মক দায়িত্ববোধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য অ্যালগোরিদমের পারদর্শিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে দায়বদ্ধতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের রাষ্ট্র বর্হিভূত বিভিন্ন সংস্থা কৃত্রিম মেধাকে যেভাবে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে তার থেকে বিশ্বকে রক্ষা করতে হবে।
বন্ধুগণ,
আমরা যখন কৃত্রিম মেধা নিয়ে আলোচনা করি তখন মানুষের সৃজনশীলতা এবং আবেগের বিষয়টি আমাদের কাছে সবথেকে বড় শক্তি হয়ে দাঁড়ায়। যন্ত্রের থেকে এই কারণেই মানুষ এগিয়ে। অত্যন্ত স্বপ্রতিভ কৃত্রিম মেধাও আমাদের বুদ্ধি এবং আবেগকে না মেশান পর্যন্ত মানবজাতির বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারেনা। যন্ত্রের থেকে কিভাবে মানুষের বুদ্ধিকে বেশি কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে আমাদের ভাবনা-চিন্তা করতে হবে। এর মাধ্যমে কৃত্রিম মেধার থেকে মানুষের মেধা যাতে কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। কিভাবে কৃত্রিম মেধা মানুষকে তার ক্ষমতাবৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে আমাদের সেটি নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করতে হবে। আমি এই প্রসঙ্গে আবারও বলতে চাই কৃত্রিম মেধা প্রতিটি মানুষের অনন্য সম্ভাবনাকে প্রকাশ করতে সাহায্য করে। এর সাহায্য সমাজে মানুষ আরও বেশি করে অবদান রাখতে পারবেন।
বন্ধুগণ,
এখানে রাইজে ২০২০তে আমরা বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় চিন্তাবিদদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মঞ্চ তৈরি করেছি। আসুন কৃত্রিম মেধার সুবিধে গ্রহণের জন্য আমরা ভাবনার আদান-প্রদান করি ও একটি অভিন্ন কর্মসূচির রূপরেখা তৈরি করি। এটি গুরুত্বপূর্ণ যে আমাদের সকলকে অংশীদার হয়ে একযোগে কাজ করতে হবে। সমস্ত অংশগ্রহণকারীরা এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করার ফলে এটি বাস্তবিকই একটি আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আপনাদের সকলের অংশগ্রহণের জন্য আমি ধন্যবাদ জানাই। এই সম্মেলনের সাফল্য কামনা করি। আমি নিশ্চিত দায়িত্বশীলভাবে কৃত্রিম মেধার প্রয়োগের জন্য আগামী চারদিন যে আলোচনা হবে তার থেকে একটি রূপরেখা তৈরি হবে। এই রূপরেখা মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটাতে ও বিশ্বজুডে মানুষ জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। আপনাদের সকলের জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইলো।
ধন্যবাদ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।