পাকিয়ং বিমানবন্দর উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে দেশ বিমানবন্দরের ক্ষেত্রে সেঞ্চুরিতে পৌঁছেছে: প্রধানমন্ত্রী মোদী
পাকিয়ং বিমানবন্দর সিকিমের যোগাযোগ ব্যবস্হাকে অনেকটাই সহজ করবে, পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি করবে, বাণিজ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে: প্রধানমন্ত্রী মোদী
বর্তমানে দেশের ১০০টি বিমানবন্দরের মধ্যে ৩৫টি বিগত চার বছরে চালু হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী মোদী

সিকিমের মাননীয় রাজ্যপাল গঙ্গাপ্রসাদজি, রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিংজি, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহকর্মী সুরেশ প্রভুজি, ডঃ জিতেন্দ্র সিংজি, এস এস আলুওয়ালিয়াজি, রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ কে এন রায়জি, রাজ্য সরকারের মন্ত্রী দর্জি শেরিং লেপচাজি এবং এখানে উপস্থিত অন্যান্য সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ ও আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা।

 

বন্ধুগণ, আমি বিগত তিন দিন ধরে ভারতের পূর্বাঞ্চলে সফর করছি। এই পূর্ব ভারত সফরে সার্বিক পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং মানবতার সেবার সঙ্গে যুক্ত অনেক বড় বড় প্রকল্প দেশকে সমর্পণ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে।

 

গতকাল ঝাড়খন্ডে প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার অন্তর্গত আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সূচনা করার পর বিকেলেই আমি সিকিমে চলে এসেছিলাম। আজ সকালে সিকিমের উদীয়মান সূর্য, শীতল বাতাস, পাহাড়ের অপরূপ প্রাকৃতিক শোভা দেশে অজান্তেই ক্যামেরায় হাত চলে গিয়েছিল। অনেক ছবি তুলেছি, এখানকার সৌন্দর্য অতুলনীয়। আমরা সকলেই সৌন্দর্যের কাঙাল। প্রকৃতি আপনাদের এত কিছু দিয়েছে, যা পাওয়ার জন্য অন্যরা এখানে ছুটে আসেন।

 

ভাই ও বোনেরা, পূর্ব ভারতে আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের গুরুত্ব আপনারা ভালোভাবে জানেন, দেশও জানে। পূর্ব ভারতে উত্তর-পূর্বের ভিন্ন গুরুত্ব রয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের এই সুন্দর রাজ্যে বসবাসকারী সবাইকে আমি প্রণাম জানাই। অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে সিকিমের জনগণকে রাজ্যের প্রথম পাকিয়াং বিমানবন্দর উপহার দিতে পেরে আমি গর্ববোধ করছি।

 

আজকের এই দিনটি সিকিমের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সিকিমের পাশাপাশি সমগ্র দেশবাসী আজ এই পাকিয়াং বিমানবন্দর উদ্বোধনের জন্য গর্ববোধ করবেন। ক্রিকেট মাঠে খেলোয়াড়রা যেমন সেঞ্চুরি করেন, আজ ভারতও বিমানবন্দরের ক্ষেত্রে সেঞ্চুরি হাকালো। আমাদের সিকিম ফুটবলের জন্য বিখ্যাত, কিন্তু দেশে এমন পরিবর্তন এসেছে যে, এই ফুটবল প্রেমী রাজ্যের ছেলেমেয়েরা আজ ক্রিকেটও খেলতে শুরু করেছে।

 

আমি গতকালই খবরের কাগজে পড়েছি যে, এখানকার ক্যাপ্টেন নীলেশ লামিছা সেঞ্চুরি করেছেন। আর আজ এই সিকিমের মাটিতে ভারত বিমানবন্দরের সংখ্যার ক্ষেত্রে সেঞ্চুরি করল।

 

ভাই ও বোনেরা, এই বিমানবন্দর আপনাদের জীবনকে আরও সহজ করে তুলতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এতদিন পর্যন্ত সিকিমে আসতে হলে আমাদের দেশের অন্য রাজ্য হয়ে আসতে হ’ত। নিজের রাজ্যে বিমানবন্দর না থাকার দুঃখ কেমন তা সিকিমের মানুষ খুব ভালোভাবেই জানেন।

 

পশ্চিমবঙ্গের বাগডোগরায় বিমান থেকে অবতরণের পর প্রায় ১২৫ কিলোমিটার উঁচু-নীচু, আকা-বাকা পথ পেরিয়ে গ্যাংটক পৌঁছতে ৫-৬ ঘন্টা লেগে যেত। কিন্তু এখন পাকিয়াং বিমানবন্দরে পৌঁছতে নিকটবর্তী কোনও বিমানবন্দর থেকে এক ঘন্টাও লাগবে না।

 

ভাই ও বোনেরা, এই বিমানবন্দর উদ্বোধনের ফলে সফরের সময় যেমন কমেছে। সরকারের চেষ্টা ছিল যাতে এখানে বিমানে আসার ভাড়াও সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে থাকে। সেজন্য এই বিমানবন্দরকে উড়ান যোজনার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। ফলে ২,৫০০ – ২,৬০০ টাকা ভাড়া দিয়ে এখানে পৌঁছনো যাবে।

 

সরকারের এই লক্ষ্য এবং প্রচেষ্টার ফলে আজ বিমানযাত্রা রেলের এয়ার কন্ডিশন ক্লাসে যাতায়াতের সমান ব্যয়ে সম্ভব হচ্ছে। আমরা ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি যে, ‘টাইম ইজ মানি’। বিমানে গেলে যে সময় বাঁচে, তার আর্থিক মূল্য চিন্তা করুন। সেজন্য আজ দেশের লক্ষ লক্ষ মধ্যবিত্ত পরিবারও আজ বিমান যাত্রায় সক্ষম হয়ে উঠেছেন।

বন্ধুগণ, সবে তো বিমানবন্দর শুরু হ’ল। আগামী দু-এক সপ্তাহের মধ্যে এখান থেক গুয়াহাটি এবং কলকাতায় যাতায়াতের জন্য নিয়মিত উড়ান শুরু হবে। আগামীদিনে দেশের রাজধানী ও অন্যান্য অংশের সঙ্গেও যোগাযোগের ব্যবস্থা করা হবে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গেও নিয়মিত বিমান পরিষেবা চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে।

 

বন্ধুগণ, পাকিয়াং বিমানবন্দরটিও খুব সুন্দরভাবে গড়ে উঠেছে। এটি আমাদের কারিগরি ও দক্ষতার প্রতীক। যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, তাঁরা বিগত তিন দিন ধরে এই বিমানবন্দরের ছবি দেখছেন। প্রকৃতির কোলে কিভাবে বিমান অবতরণ হচ্ছে – এই ভিডিওটি ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়েছে। উদ্বোধন আজ হলেও দেশ-বিদেশের মানুষ কিছুদিন আগে থেকেই এর জয়জয়কার শুরু করেছেন।

 

৫৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগে নির্মিত এই বিমানবন্দর আমাদের ইঞ্জিনিয়র ও কর্মীদের কর্মকুশলতার গৌরবময় অধ্যায়। কিভাবে পাহাড় কাটা হয়েছে, সেই মাটি ও পাথর দিয়ে কিভাবে খাদ ভরা হয়েছে, ভারী বৃষ্টির চ্যালেঞ্জ কিভাবে মোকাবিলা করা হয়েছে। এখন এমন ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে যে, পাহাড় থেকে নেমে আসা জলের ধারা বিমানবন্দরের নীচ দিয়ে অবলীলায় বেরিয়ে যাবে। সত্যিই এটি অদ্ভূত স্থাপত্যবিদ্যার নিদর্শন হয়ে উঠেছে।

 

আজ এই উপলক্ষে আমি এই বিমানবন্দরের পরিকল্পনা গ্রহণকারীদের থেকে শুরু করে নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত প্রকৌশলবিদ, কারিগর এবং শ্রমিকদের এই অসাধারণ সাফল্যের জন্য অনেক অনেক আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনারা সবাই সত্যিই উৎকৃষ্ট কাজ করে দেখিয়েছেন।

 

ভাই ও বোনেরা, সিকিম সহ উত্তর-পূর্ব ভারতে পরিকাঠামো এবং আবেগপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিস্তারিত করার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। বিগত চার বছরে আমি নিজে অনেকবার উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে আপনাদের সকলের আশীর্বাদ গ্রহণের জন্য এবং এখানকার উন্নয়ন যাত্রা সরেজমিনে দেখতে ও জানতে পৌঁছে গিয়েছি।

 

শুধু তাই নয়, প্রত্যেক সপ্তাহে কিংবা সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই কোনও না কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কোনও না কোনও রাজ্যে সফর করেছেন এবং সরেজমিনে দেখে উন্নয়ন যজ্ঞের হিসাব-নিকাশ করেছেন। এর পরিণাম কী হয়েছে, তা আপনারা নিজেরাই দেখতে পাচ্ছেন।

 

সিকিম, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম – এই সবকটি রাজ্যে স্বাধীনতার পর এই প্রথম অনেক কাজ শুরু হয়েছে। অনেক জায়গায় প্রথমবার বিমান কিংবা রেল পৌঁছেছে। অনেক জায়গায় বিদ্যুতের তারও এই প্রথম পৌঁছেছে।

 

এখন গোটা উত্ত্র-পূর্বাঞ্চলে জাতীয় সড়ক উন্নয়নের কাজ চলছে। গ্রামে গ্রামে পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। নদীগুলির ওপরে বড় বড় সেতু তৈরি হচ্ছে। ডিজিটাল ইন্ডিয়া কর্মসূচি সম্প্রসারিত হয়েছে। ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ – এর মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে যাওয়া আমাদের সরকার দেশের আঞ্চলিক ভারসাম্যহীনতা দূর করতে উত্তর-পূর্ব সহ সমগ্র পূর্ব ভারতকে দেশের উন্নয়ন যাত্রায় অগ্রাধিকার দিয়ে পূর্ণ উদ্যমে কাজ করে চলেছে; আমরা এর জন্য দায়বদ্ধ।

এই লক্ষ্য নিয়েই সিকিমকে নিজস্ব বিমানবন্দর উপহার দেওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা হয়েছিল। আপনারা সবাই জানেন যে, প্রায় ছয় দশক আগে একটি ছোট্ট বিমান এখান থেকে উড়েছিল কিন্তু তার পর থেকে এই বিমানবন্দরের জন্য এতদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে।

 

বন্ধুগণ, শুধু সিকিম নয়, অরুণাচল প্রদেশ সহ দেশের অনেক রাজ্যে গত চার বছরে নতুন নতুন বিমানবন্দর গড়ে উঠেছে। এই যে আমরা সেঞ্চুরি করলাম, আপনারা শুনলে অবাক হবেন যে, এর মধ্যে ৩৫টি বিমানবন্দর গত চার বছরে নির্মিত ও তার উদ্বোধন করা হয়েছে।

 

স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৪ পর্যন্ত দেশে দ্রুতগতিতে কাজ করার কথা বললে কী বোঝা যেত? চতুর্মুখী কাজ কিংবা নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা বলতে কী বোঝাতো? এই একটি উদাহরণ দিয়ে আমি বোঝাতে চাইছি যে, স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৬৭ বছরে দেশে বিমানবন্দরের সংখ্যা ছিল ৬৫টি। অর্থাৎ বছরে প্রায় ১টি, আর গত চার বছরে, বছরে প্রায় ৯টি। অর্থাৎ আমরা আগের তুলনায় নয় গুণ গতিতে কাজ করছি।

 

ভাই ও বোনেরা, আজ ভারত অন্তর্দেশীয় উড়ানের ক্ষেত্রে বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম বাজার হয়ে উঠেছে। ভারতে বিমান পরিষেবা প্রদানকারী কোম্পানিগুলি নতুন উৎসাহে নতুন নতুন বিমান কেনার জন্য বরাত দিচ্ছে। স্বাধীনতার পর বিগত ৭০ বছরে দেশে প্রায় ৪০০টি বিমান যাত্রী পরিবহণে রত ছিল। আর এখন বিমান পরিষেবা প্রদানকারী কোম্পানিগুলি বিগত এক বছরে ১ হাজারটি নতুন বিমান কেনার বরাত দিয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, আমার হাওয়াই চপ্পল পরিহিত সাধারণ মানুষকে বিমান যাত্রা করানোর স্বপ্ন আজ দ্রুতগতিতে বাস্তবায়িত হতে চলেছে।

 

ভাই ও বোনেরা, আপনাদের নিজস্ব বিমানবন্দর গড়ে ওঠার পর এখন এই রাজ্য থেকে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে যাতায়াতের সুবিধা বৃদ্ধির ফলে রাজ্যের আয়ও দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাবে। সিকিম এমনিতেই দেশি-বিদেশি পর্যটকদের প্রিয় গন্তব্য। প্রতি বছর এখানে রাজ্যের জনসংখ্যার চেয়ে বেশি পর্যটক আসেন। আমাকে বলা হয়েছে যে, বিমানবন্দর উদ্বোধনের আগেই প্রতি বছর এ রাজ্যের জনসংখ্যার দেড় গুণ মানুষ এই রাজ্যে ঘুরতে আসেন।

 

এখন এই বিমানবন্দর তৈরি হওয়ার পর নিশ্চিতভাবেই পর্যটকের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাবে। এবারের দুর্গা পূজা বা দীপাবলীতেই দেখবেন, সিকিমে কেমন পর্যটকের ঢল নামে।

 

এই বিমানবন্দর সিকিমের নবীন প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থানের নতুন দরজা খুলে দিয়েছে। ফলে এখানকার হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউস, ক্যাম্পিং সাইটস্‌, হোম স্টে, ট্যুরিস্ট গাইড এবং রেস্টুরেন্ট – সবাই অনেক লাভের মুখ দেখবে। আর পর্যটন এমনই ব্যবসা যা দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম ব্যক্তিকেও কর্মসংস্থান দেয়, মুগ-চানা বিক্রেতা, ফুল ও ফুলের চারা বিক্রেতা, অটোরিক্সা চালক, অতিথিশালার কর্মচারি ও চা বিক্রেতাদের রোজগার বৃদ্ধি পায়।

 

এখানে ভক্তদের জন্য পরিষেবা নির্মাণ খাতে ৪০কোটি টাকারও বেশি অর্থ মঞ্জুর করা হয়েছে। সিকিমের প্রকৃতিকে সুরক্ষিত ও সুজলা-সুফলা করে রাখার জন্য রাজ্য সরকারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বেশ কিছু প্রকল্প চালু করা হয়েছে।

 

‘কেন্দ্রীয় সরকার ন্যাশনাল রিভার কনজারভেশন প্ল্যান’ অনুযায়ী সিকিম-কে ৩৫০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ মঞ্জুর করেছে। এর মাধ্যমে যে ৯টি প্রকল্প মঞ্জুর হয়েছে, তার মধ্যে ৮টি গ্যাংটক ও সিমটমের জন্য। প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প রানীচু নদীকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করবে। তাছাড়া গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য প্রায় ১২৫ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ কোটি টাকারও বেশি ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারগুলিকে পাঠানো হয়েছে।

 

বন্ধুগণ, পরিবেশ, পরিবহণ এবং পর্যটন – এই তিনের মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সেজন্য সিকিমের জন্য শুধুই বিমান যোগাযোগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়নি, অন্যান্য পরিবহণ ব্যবস্থা উন্নয়নের কাজেও জোর দেওয়া হয়েছে। জাতীয় মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে সড়ক প্রশস্তিকরণের কাজ চলছে। এছাড়া, ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগে অনেক ছোট ছোট সড়কপথ নির্মাণ করা হচ্ছে কিংবা প্রশস্ত করা হচ্ছে।

 

সড়কপথের পাশাপাশি সিকিমে রেল যোগাযোগ আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। গ্যাংটক শহরকে ব্রডগেজ লাইন যুক্ত করার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।

 

সিকিমের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য এবং ট্রান্সমিশন লাইন নবীকরণের জন্য রাজ্য সরকারকে দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ প্রদান করা হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে যে, এ বছর ডিসেম্বর মাসের আগেই এই প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সিকিম দেশের মধ্যে অগ্রণী রাজ্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যে ৬টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

 

ভাই ও বোনেরা, সিকিম রাজ্য সরকার এবং বিশেষ করে সিকিমের কৃষকদের আমি অভিনন্দন জানাই যে, আপনারা রাজ্যকে ১০০ শতাংশ জৈব চাষের রাজ্য হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে দেশের মধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। শুধু তাই নয়, এক্ষেত্রে মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে বাজারের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। আর আজ যে বিমানবন্দর চালু হ’ল, আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে, অদূর ভবিষ্যতেই এখানকার ফুল ও ফল এক ঘন্টার মধ্যেই দিল্লি ও কলকাতার বাজারে পৌঁছে যাবে।

 

সিকিমের কৃষকরা যে ফুল উৎপাদন করেন, তা এখন ভারতের অসংখ্য ঈশ্বরের চরণে পৌঁছে যাবে। উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে সরকার মিশন অর্গানিক ভ্যালু ডেভেলপমেন্ট ফর নর্থ ইস্টার্ন রিজিয়ন নামক একটি বিশেষ প্রকল্প শুরু করেছে। এই খাতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।

 

বন্ধুগণ, জৈব ফসল শুধু আমাদের পরিবেশ নয়, আমাদের ধরিত্রী মা-কেও সুরক্ষিত করবে। অনেক রোগ থেকে মানবজাতিকে মুক্তি দেবে। আমাদের সরকারের সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার হ’ল জনগণের স্বাস্থ্য। গতকাল আমাকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলছিলেন যে, বিগত ১০ বছরে জৈব চাষের সাফল্যের সরাসরি পরিণাম এখন অনুভূত হচ্ছে। রাজ্যের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। আর আপনারা শুনলে অবাক হবেন যে, সিকিমে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের গড় আয়ু গত ১০ বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সিকিমের এই উদাহরণ ভারতবাসীকে রাসায়নিক সার থেকে মুক্তির পথ দেখাবে।

 

আমি জানি যে, সিকিমবাসী ‘স্বচ্ছতাই সেবা’ মন্ত্রকে জীবনের মূল মন্ত্র করে তুলেছেন। আপনাদের সকলের প্রচেষ্টায় জনমানসে যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে, তার ফলস্বরূপ ২০১৬ সালেই সিকিম দেশের মধ্যে সবার আগে খোলা মাঠে প্রাকৃতিক কর্ম মুক্ত রাজ্য হিসাবে নিজেদের ঘোষণা করেছে। শুধু তাই নয়, প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত রাজ্য হিসাবেও সিকিম দেশের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

 

ভাই ও বোনেরা, আমি আগেই বলেছি, গতকাল থেকে ভারতে বিশ্বের বৃহত্তম স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রকল্প ‘আয়ুষ্মান ভারত’ কার্যকরী হয়েছে। ফলে গোটা দেশের সঙ্গে সিকিমের গরিব পরিবারগুলিও যে কোনও সদস্যের কঠিন রোগের ক্ষেত্রে বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার সুবিধা পাবেন। আর এখানকার নাগরিক ভারতের যে কোনও প্রান্তে যে কোনও বড় হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার  সুবিধা পাবেন। অসুস্থ মানুষ যেখানেই চিকিৎসার জন্য যাবেন, তাঁর সঙ্গে সঙ্গে এই ‘আয়ুষ্মান ভারত’ সুরক্ষা কবচের মতো চলতে থাকবে।

 

বন্ধুগণ, বিগত চার বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকার সাধারণ মানুষের জীবন ধারণের মান উন্নত করার জন্যে অনেক প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে, সিকিমের মানুষও এগুলির দ্বারা উপকৃত হচ্ছেন। জন-ধন যোজনার মাধ্যমে এরাজ্যের প্রায় এক লক্ষ গরিব মানুষ প্রথমবার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। এ রাজ্যের প্রায় ৮০ হাজার ভাই-বোন মাসে ১ টাকা আর দৈনিক ৯০ পয়সা কিস্তিতে দুটি সুরক্ষা বিমা যোজনার গ্রাহক হয়েছেন।

 

উজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে সিকিমের প্রায় ৩৮ হাজার গরিব পরিবারের রান্নাঘরে বিনামূল্যে গ্যাস সংযোগ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।   

 

বন্ধুগণ, এই বিমানবন্দর চালু হওয়ার ফলে এখানে অনেক নতুন নতুন পরিষেবা গড়ে উঠবে, যা সিকিমের উন্নয়নকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে। আপনাদের সবাইকে রাজ্যের প্রথম বিমানবন্দরের জন্য আরেকবার অন্তর থেকে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই।

 

মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে অনেক বিষয় উল্লেখ করেছেন। এই সমস্ত বিষয়ে তাঁর সঙ্গে আমার নিয়মিত ব্যক্তিগত আলোচনা হয়। সেজন্য তাঁকে সর্বসমক্ষে আলাদাভাবে আমাকে বলার প্রয়োজন নেই। কিন্তু আমি আপনাকে আশ্বস্ত করছি যে, এই দেশকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে হলে সিকিমকেও উন্নত করতে হবে। সিকিমের জনসমাজে প্রত্যেক বর্গের প্রত্যেক ব্যক্তি, যুবক-যুবতীর স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার জন্য সমস্ত রকম চেষ্টা করা হবে।

 

এই বিশ্বাস নিয়ে আরেকবার আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা, অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই।

 

ধন্যবাদ।

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
PLI, Make in India schemes attracting foreign investors to India: CII

Media Coverage

PLI, Make in India schemes attracting foreign investors to India: CII
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
PM Modi addresses the Parliament of Guyana
November 21, 2024


Prime Minister Shri Narendra Modi addressed the National Assembly of the Parliament of Guyana today. He is the first Indian Prime Minister to do so. A special session of the Parliament was convened by Hon’ble Speaker Mr. Manzoor Nadir for the address.

In his address, Prime Minister recalled the longstanding historical ties between India and Guyana. He thanked the Guyanese people for the highest Honor of the country bestowed on him. He noted that in spite of the geographical distance between India and Guyana, shared heritage and democracy brought the two nations close together. Underlining the shared democratic ethos and common human-centric approach of the two countries, he noted that these values helped them to progress on an inclusive path.

Prime Minister noted that India’s mantra of ‘Humanity First’ inspires it to amplify the voice of the Global South, including at the recent G-20 Summit in Brazil. India, he further noted, wants to serve humanity as VIshwabandhu, a friend to the world, and this seminal thought has shaped its approach towards the global community where it gives equal importance to all nations-big or small.

Prime Minister called for giving primacy to women-led development to bring greater global progress and prosperity. He urged for greater exchanges between the two countries in the field of education and innovation so that the potential of the youth could be fully realized. Conveying India’s steadfast support to the Caribbean region, he thanked President Ali for hosting the 2nd India-CARICOM Summit. Underscoring India’s deep commitment to further strengthening India-Guyana historical ties, he stated that Guyana could become the bridge of opportunities between India and the Latin American continent. He concluded his address by quoting the great son of Guyana Mr. Chhedi Jagan who had said, "We have to learn from the past and improve our present and prepare a strong foundation for the future.” He invited Guyanese Parliamentarians to visit India.

Full address of Prime Minister may be seen here.