কেরলের রাজ্যপাল শ্রী আরিফ মহম্মদ খান, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী পিনারাই বিজয়ন, মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মী শ্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, প্রতিমন্ত্রী শ্রী মনসুখ মান্ডভিয়াজি, প্রতিমন্ত্রী শ্রী মুরলিধরনজি,
মঞ্চে উপস্থিত সমস্ত সম্মানীয় অতিথি,
বন্ধুরা
নমস্কারম কোচি। নমস্কারম কেরল। আরব সাগরের রানী প্রতিবারের মতোই অপূর্ব। আপনাদের সবার মধ্যে আসতে পেরে আমি আনন্দিত। আজ আমরা এখানে উন্নয়ন উদযাপন করতে জড়ো হয়েছি, কেরল এবং ভারতের উন্নয়ন। আজ যে প্রকল্পগুলির উদ্বোধন করা হয়েছে তা বিভিন্ন ক্ষেত্র জুড়ে প্রসারিত । এগুলো ভারতের অগ্রগতির গতিপথকে শক্তি জোগাবে।
বন্ধুরা
দু'বছর আগে আমি কোচি শোধনাগারে গিয়েছিলাম। এই শোধনাগার ভারতের অন্যতম আধুনিক শোধনাগারের মধ্যে অন্যতম । আজ আবার কোচি থেকে, আমরা জাতির উদ্দেশে কোচি রিফাইনারির প্রোপেলিন ডেরিভেটিভস পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্স উৎসর্গ করলাম । এই প্রকল্প আত্মনির্ভর ভারতের যাত্রা সুদৃঢ় করতে সাহায্য করবে। এই কমপ্লেক্সের মাধ্যমে, বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় করা সম্ভব হবে। বিভিন্ন শিল্প লাভবান হবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
বন্ধুরা
কোচি ব্যবসা ও বাণিজ্যের শহর। এই শহরের নাগরিকরা সময়ের মূল্য বোঝে। তাঁরা উন্নয়নের গুরুত্বও জানেন। সেজন্যেই, রো-রো ভেসেল্স বিশেষভাবে দেশের জন্য উৎসর্গ করা হয়েছে। সড়কপথে প্রায় ত্রিশ কিলোমিটারের দূরত্ব জলপথে মাত্র সাড়ে তিন কিলোমিটার হয়ে যায়। এর অর্থ হল, সুযোগ বৃদ্ধি, বাণিজ্য বৃদ্ধি, দক্ষতা বৃদ্ধি, এতে ভিড় কমবে, দূষণও কমবে। পরিবহন ক্ষেত্রে ব্যয়ও কমবে।
বন্ধুরা
পর্যটকরা কেরলের অন্যান্য অঞ্চলে যাওয়ার জন্য, কোচিকে শুধু ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করে, তা কিন্তু নয়। এখানকার সংস্কৃতি, খাদ্য, সমুদ্র সৈকত, বাজার, ঐতিহাসিক স্থান এবং আধ্যাত্মিক স্থানগুলি বেশ জনপ্রিয়। ভারত সরকার এখানে পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিকাঠামোর উন্নয়নের জন্য অনেক চেষ্টা চালাচ্ছে। কোচির আন্তর্জাতিক ক্রুজ টার্মিনাল 'সাগরিকার' উদ্বোধন তারই উদাহরণ। সাগরিকা ক্রুজ টার্মিনাল চালু হওয়ায় পর্যটকরা সুবিধা এবং স্বাচ্ছন্দ্য দুই-ই পাবেন। এখান থেকে এক লক্ষেরও বেশি ক্রুজ অতিথিকে পরিষেবা দেওয়া যাবে।
বন্ধুরা
আমি গত কয়েক মাস ধরে একটা বিষয় লক্ষ্য করছি যে বহু মানুষ আমাকে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের স্থানীয় ভ্রমণ সম্পর্কে লিখেছেন এবং ছবিও পাঠিয়েছেন। যেহেতু বিশ্ব জুড়ে মহামারির ফলে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ প্রভাবিত হয়েছে, তাই মানুষ কাছাকাছি জায়গায় বেড়াতে গেছেন । এটি আমাদের জন্য একটি বড় সুযোগ। একদিকে, এর অর্থ স্থানীয় পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ান অন্যদিকে, এটা আমাদের যুবসমাজ এবং আমাদের সংস্কৃতির মধ্যে সংযোগকে আরও দৃঢ় করে তুলবে। এতে অনেক কিছু দেখার, শেখার এবং জানার সুযোগ রয়েছে। আমি আমাদের তরুণ স্টার্টআপ বন্ধুদের অনুরোধ করছি পর্যটন সম্পর্কিত ক্ষেত্রে উদ্ভাবনমূলক কিছু করতে । আমি আপনাদের সকলকে এই সুযোগে যতটা সম্ভব কাছাকাছি জায়গায় ভ্রমণের জন্য অনুরোধ করছি। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে গত পাঁচ বছরে ভারতে পর্যটন খাতে বেশ উন্নতি হয়েছে। বিশ্ব পরযটন সূচকের র্যাঙ্কিংয়ে ভারত ৬৫ থেকে ৩৪তম স্থানে উঠে এসেছে । তবে, আরও অনেক কিছু করার আছে এবং আমি আত্মবিশ্বাসী যে আমরা আরও আরও উন্নতি করব।
বন্ধুরা
অর্থনৈতিক উন্নয়নের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হ'ল: দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ভবিষ্যতের প্রয়োজনের জন্য পরিকাঠামোর আধুনিকীকরণ। পরবর্তী দুটি উন্নয়ন প্রকল্প এই বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত । ‘বিজ্ঞান সাগর’, কোচি ডকের নতুন নলেজ ক্যাম্পাস। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের মানবসম্পদ উন্নয়নের মূলধনকে প্রসারিত করেছি। এই ক্যাম্পাসটি দক্ষতা বিকাশের গুরুত্বের প্রতিচ্ছবি। এটা বিশেষত যারা মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে আগ্রহী তাদের সাহায্য করবে। আগামী দিনে, এই বিষয়ের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে, এটা আমি মনে করি। এই ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা যুবকদের দোরগোড়ায় অনেক সুযোগ থাকবে। যেমনটা আমি আগেই বলেছি, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বরতমান ক্ষমতা বাড়ানো দরকার। এখানে আমরা সাউথ কোল বার্থের পুনর্গঠনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি। এটা সরবরাহের খরচ কমাবে এবং কার্গোর ক্ষমতা উন্নত করবে। ব্যবসার উন্নতির জন্য দুটোই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বন্ধুরা
আজ, পরিকাঠামোর সংজ্ঞা এবং সুযোগ দুই-ই বদলেছে। এটা শুধু ভাল রাস্তা, উন্নয়নমূলক কাজ এবং কয়েকটা শহরের মধ্যে যোগাযোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য প্রচুর পরিমাণে এবং শীর্ষ মানের পরিকাঠামোর কথা ভাবছি। জাতীয় পরিকাঠামো পাইপলাইনের মাধ্যমে, পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য একশো 'দশ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এতে উপকূলবর্তী অঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং পার্বত্য অঞ্চলগুলিতে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। আজ ভারত প্রতিটি গ্রামে ব্রড-ব্যান্ড সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করছে। তেমনি, ভারতের জলপথে অর্থনীতি বিকাশের ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই ক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং কাজের মধ্যে রয়েছে: আরও বেশি বন্দর। বর্তমান বন্দরগুলির পরিকাঠামোর উন্নয়ন। উপকূলীয় অঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপাদন , উপকূলবর্তী অঞ্চলে স্থিতিশীল উন্নয়ন, উপকূলবর্তী এলাকার মধ্যে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা । প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনা এই ধরণের প্রকল্পের মধ্যে একটি। এই প্রকল্প মৎস্যজীবীদের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করবে। এতে আরও ঋণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। মৎস্যজীবীদের কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। একইভাবে ভারতকে সমুদ্র সম্পদের থেকে উৎপাদিত খাদ্য রপ্তানির কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছে। আমি খুশি যে সামুদ্রিক শৈবাল চাষ জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। আমি মৎস্যক্ষেত্রকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলতে গবেষক এবং উদ্ভাবকদের এগিয়ে আসতে আহ্বান জানাচ্ছি। এটা আমাদের পরিশ্রমী মৎস্যজীবীদের উদ্দেশ্যে বড় শ্রদ্ধাঞ্জলি হবে।
বন্ধুরা
এই বছরের বাজেট কেরলের উন্নয়নের জন্য উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ এবং প্রকল্প ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে কোচি মেট্রোর পরবর্তী পর্ব রয়েছে। এই মেট্রো নেটওয়ার্ক সফলভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং প্রগতিশীল কাজ এবং পেশাদারিত্বের একটি ভাল উদাহরণ তৈরি করেছে।
বন্ধুরা
গত বছর মানবজাতিকে এক অভাবনীয় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। করোনার বিরুদ্ধে ১৩০ কোটি ভারতীয় উৎসাহিত হয়ে লড়াই চালিয়ে গেছে। সরকার বিশেষত উপসাগরীয় দেশগুলোয় প্রবাসী ভারতীয়দের প্রয়োজনের প্রতি সর্বদা সংবেদনশীল ছিল। উপসাগরীয় অঞ্চলে আমাদের প্রবাসী ভারতীয়দের জন্য আমরা গর্বিত। আমার আগের সফরগুলোয় বিশেষ করে সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী এবং বাহরিনে তাঁদের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ হয়েছিল। আমি তাঁদের সঙ্গে খেয়েছি , তাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় অংশ নিয়েছি । বন্দে ভারত মিশনের আওতায় পঞ্চাশ লক্ষেরও বেশি ভারতীয় স্বদেশে ফিরে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে কেরলের বাসিন্দা ছিলেন। এরকম সংবেদনশীল সময়ে তাঁদের সেবা করতে পেরে আমাদের সরকার সম্মানীত। গত কয়েক বছরে, বিভিন্ন উপসাগরীয় দেশগুলির সরকার সেখানকার কারাগারে দুঃখজনকভাবে বন্দী বহু ভারতীয়দের মুক্তি দিয়েছে। সরকার সবসময় এঁদের পক্ষে কথা বলবে। আমি বিভিন্ন উপসাগরীয় দেশগুলির সরকারদের এই বিষয়ে তাদের সংবেদনশীল উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই। উপসাগরীয় দেশগুলো আমার ব্যক্তিগত আবেদনে সাড়া দিয়েছিল এবং আমাদের সম্প্রদায়ের বিশেষ যত্ন নিয়েছিল। তারা এই অঞ্চলের ভারতীয়দের প্রত্যাবর্তনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সেই প্রক্রিয়াটি সহজ করার জন্য আমরা এয়ার বাবল সেট আপ করেছি। উপসাগরে কর্মরত ভারতীয়দের জানা উচিত যে তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে আমাদের সরকারের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
বন্ধুরা
আমরা আজ একটা ঐতিহাসিক মূহুর্তে রয়েছি। আমাদের আজকের কাজ আগামী বছরগুলিতে আমাদের অগ্রগতির গতিপথকে রূপ দেবে। প্রয়োজনে এগিয়ে এসে বিশ্বে অবদান রাখার ক্ষমতা ভারতের রয়েছে। আমাদের দেশবাসী দেখিয়েছেন যে সঠিক সুযোগ পেলে তাঁরা দারুণ কাজ করতে পারেন। আসুন আমরা সেই সুযোগগুলি তৈরি করার কাজ করি। একসঙ্গে, আমরা একটি আত্মনির্ভর ভারত তৈরি করতে সক্ষম হব। আবারও, কেরলের জনগণকে আজ যে উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে সেজন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি।
ধন্যবাদ। অনেক ধন্যবাদ.
ওরাইরাম নন্দী