বন্ধুগণ, সর্বপ্রথম আমি আপনাদেরকে ইংরাজি ২০২০ সালের শুভেচ্ছা জানাই। এই বছর আপনাদের জীবনে সমৃদ্ধি বয়ে নিয়ে আসুক এবং আপনাদের গবেষণাগারগুলি আরও উৎপাদনক্ষম হোক। আমি বিশেষভাবে আনন্দিত যে, নতুন বছর এবং নতুন দশকে আমার প্রথম অনুষ্ঠানটি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এই অনুষ্ঠানটি হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে যে শহরটি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সঙ্গে জড়িত। শেষবার আমি যখন বেঙ্গালুরুতে এসেছিলাম তখন গোটা দেশের দৃষ্টি চন্দ্রযান-২-এর ওপর নিবদ্ধ ছিল। সেই সময় যেভাবে আমাদের জাতি বিজ্ঞান, মহাকাশ গবেষণা এবং আমাদের বিজ্ঞানীদের ক্ষমতাকে নিয়ে গর্ব অনুভব করেছে তা সবসময়ই আমার মনে থাকবে।
বন্ধুগণ, উদ্যান নগরী বেঙ্গালুরু নতুন উদ্যোগের আদর্শ জায়গা। সারা বিশ্ব এখানে উদ্ভাবনের জন্য আসে। এই শহরে গবেষণা ও উন্নয়নের এমন এক পরিবেশ গড়ে উঠেছে যার সঙ্গে প্রতিটি বিজ্ঞানী, উদ্ভাবক, ইঞ্জিনিয়ার যুক্ত হতে চায়। কিন্তু তাঁদের এই চাওয়া কি শুধু নিজের উন্নতি বা নিজের কেরিয়ারের কথা ভেবে? না। তাঁরা এই স্বপ্ন দেখেন দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছা থেকে। নিজের উন্নতির সঙ্গে দেশের উন্নতিকে যুক্ত করার ভাবনা থেকে।
আর তাই, আমরা যখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ২০২০ সালকে এক ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে স্বাগত জানাচ্ছি, আমরা আমাদের স্বপ্ন পূরণের দিকে আরও একধাপ এগিয়ে যাচ্ছি।
বন্ধুগণ,
আমাকে জানানো হয়েছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন প্রকাশনায় আন্তর্জাতিক স্তরে ভারত তৃতীয় স্থানে পৌঁছেছে। সারা বিশ্বে যেখানে ৪ শতাংশ হারে এই বৃদ্ধি হয়েছে, ভারতের ক্ষেত্রে তার পরিমাণ ১০ শতাংশ। আমি আরও জেনে আনন্দিত হয়েছি যে, উদ্ভাবন সূচকে ভারত এগিয়ে ৫২তম স্থানে পৌঁছেছে। বিগত ৫০ বছরের তুলনায় সর্বশেষ পাঁচ বছরে আমরা যে কর্মসূচিগুলি গ্রহণ করেছি তার মাধ্যমে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে আরও অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। এই কারণে আমি আমাদের বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানাচ্ছি।
বন্ধুগণ,
ভারতের উন্নয়ন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। ভারতীয় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বিপ্লব আনার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এই দেশের তরুণ বিজ্ঞানীদের উদ্দেশে আমার বার্তা হল ‘উদ্ভাবন, ধৈর্য, উৎপাদন এবং সমৃদ্ধি’র মন্ত্রে এগিয়ে চলুন। এই চারটি পদক্ষেপের মাধ্যমে আমাদের দেশের উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে। আমরা যদি উদ্ভাবন করি তাহলে আমরা স্বত্ত্বাধিকার হব, আর তার ফলে আমাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া আরও মসৃণ হবে এবং আমরা যখন এই উৎপাদিত সামগ্রী আমাদের দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দেব, তাঁরাও সমৃদ্ধ হবেন। আমাদের ‘নতুন ভারত’-এর দিশা হল জনগণের জন্য এবং জনগণের দ্বারা উদ্ভাবন।
বন্ধুগণ, নতুন ভারতের প্রযুক্তিও দরকার আবার যুক্তিসম্মত চিন্তাধারারও প্রয়োজন যার ফলে, নতুন দিশায় আমাদের সামাজিক এবং আর্থিক জীবন বিকশিত হবে। আমার সবসময়ই মনে হয় যে, ভারতের সমাজে কাজ করার ক্ষেত্রে, সাম্য আনার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আর যখন বিজ্ঞান ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকাশ হচ্ছে, দেশে স্মার্ট ফোন তৈরি হচ্ছে, সস্তায় তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তখন এক শ্রেণীর মধ্যে এই সুবিধাগুলি কুক্ষিগত থাকার ব্যাপারটিও শেষ হচ্ছে। এর থেকে আজ অত্যন্ত সাধারণ নাগরিকের মনে এই বিশ্বাস জন্মাচ্ছে যে তাঁরা আলাদা নন। সরকারের সঙ্গে তাঁদের সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হচ্ছে। তাঁদের কথা সরাসরি সরকারের কাছে পৌঁছচ্ছে। এই পরিবর্তনটিকেই আমাদের উৎসাহিত করতে হবে, আরও শক্তিশালী করতে হবে।
বন্ধুগণ, এখন আমি গ্রামোন্নয়নে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভূমিকার বিষয়ে কিছু কথা বলব। বিগত পাঁচ বছরে গ্রামোন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশের সাধারণ নাগরিকেরও উপকার হয়েছে। স্বচ্ছ ভারত অভিযান থেকে শুরু করে আয়ুষ্মান ভারত, বিশ্বের সবথেকে বড় প্রকল্প যা আজ সফলভাবে রূপায়িত হয়েছে তার পিছনে প্রযুক্তি এবং সুপ্রশাসনের ভূমিকাই সবথেকে বেশি।
বন্ধুগণ, আজ দেশে প্রশাসনের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার আগে কখনও হয়নি। গতকালই আমাদের সরকার দেশের ৬ কোটি কৃষককে একসঙ্গে পিএম-কিষান সম্মান নিধির অর্থ হস্তান্তরিত করেছে যা একটি রেকর্ড। কিভাবে এটি সম্ভব হল? আধার প্রযুক্তির সহায়তায়।
বন্ধুগণ,
যেভাবে দেশের প্রতিটি গ্রামে গরিব পরিবারগুলির কাছে শৌচালয় পৌঁছনো সম্ভব হয়েছে, বিদ্যুৎ পৌঁছনো সম্ভব হয়েছে তার মূল কারণ প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির মাধ্যমেই সরকার ৮ কোটি গরিব বোনকে সনাক্ত করতে পেরেছে যাঁদের জীবন কাঠের ধোঁয়ায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল। প্রযুক্তির মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। একইসঙ্গে, নতুন নতুন সরবরাহ কেন্দ্র কম সময়ের মধ্যে গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। আজ গ্রামে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাস্তা তৈরি হচ্ছে, প্রযুক্তির মাধ্যমে দরিদ্রদের জন্য ২ কোটিরও বেশি বাড়ি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। জিও-ট্যাগিং এবং ডেটা সায়েন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আসছে। যথাযথ নজরদারির ফলে প্রকল্প এবং তার সুবিধাভোগীদের মধ্যে ব্যবধান ঘোচানো সম্ভব হয়েছে। নির্দিষ্ট সময় কাজ শেষ করার ফলে অর্থের সাশ্রয় হয়েছে এবং নতুন নতুন প্রকল্পের পরিকল্পনার বিষয়ে যে সমস্যাগুলি তৈরি হত তার অবসান ঘটেছে।
বন্ধুগণ, ‘ইজ অফ ডুয়িং সায়েন্স’ নিশ্চিত করতে আমরা প্রয়াস অব্যাহত রাখব এবং লাল ফিঁতের সমস্যা কমাতে যথাযথ তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করব। কৃষকরা দালালদের দয়া-দাক্ষিণ্য ছাড়াই তাঁদের ফসল সরাসরি বাজারে বিক্রি করতে পারছেন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে গ্রামীণ জীবনে ডিজিটালাইজেশন, ই-কমার্স, ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং এবং মোবাইল ব্যাঙ্কিং পরিষেবার সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে। আজ আবহাওয়ার পূর্বাভাস কৃষকরা বিভিন্ন ই-গভর্ন্যান্স ব্যবস্থার মাধ্যমে সহজেই পাচ্ছেন।
বন্ধুগণ, ভারতের উন্নয়নে বিশেষ করে, গ্রামের উন্নয়নে প্রযুক্তির প্রয়োগ আরও ব্যাপকভাবে করতে হবে। আগামী দশকে দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর প্রশাসন নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করবে। বিশেষ করে, কৃষিক্ষেত্রে ব্যয় কমানো এবং উৎপাদিত সামগ্রী উপভোক্তার কাছে পৌঁছনোর লক্ষ্যে প্রযুক্তির মাধ্যমে সরবরাহের একটি চেন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার বিশেষ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। গ্রামই এর ফলে সবথেকে বেশি সরাসরি উপকৃত হবে এবং গ্রামীণ অর্থ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। আপনাদের সকলের জ্ঞাতার্থে জানাই গ্রামে প্রত্যেক বাড়িতে জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ‘জল জীবন মিশন’ নামে একটি বিরাট বড় প্রকল্প শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের সবথেকে বড় শক্তি প্রযুক্তি। আর এখন আপনাদের দায়িত্ব হল জলকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলার লক্ষ্যে সস্তা এবং কার্যকর একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা। এক্ষেত্রে জল প্রশাসন আপনাদের জন্য একটি নতুন ক্ষেত্র হিসেবে উঠে আসবে। বাড়িতে ব্যবহৃত জল খেতে সেচের কাজে ব্যবহারের উপযুক্ত করার জন্য সস্তা ও কার্যকর উপায় আপনাদের খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের এমন বীজ তৈরি করতে হবে যা পুষ্টিতে ভরপুর হবে অথচ চাষের কাজে জলের ব্যবহারও কমবে। সারা দেশে আজ যে সয়েল হেল্থ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে, চাষের কাজে এর ব্যবহার কিভাবে করা যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল এই সাপ্লাই চেনে আমাদের কৃষকদের যে ক্ষতি হয়, তার থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির অনুসন্ধান অত্যন্ত জরুরি।
বন্ধুগণ,
আগামীদিনে গ্রামীণ অর্থ ব্যবস্থার উন্নতিতে আমাদের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আসুন, এখন আমরা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বিষয়ে কথা বলি। দেশকে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের থেকে মুক্তি দেওয়ার সঙ্কল্প আমরা গ্রহণ করেছি যার মাধ্যমে আমারা আমাদের পরিবেশ, পশু, মাছ ও মাটিকে বাঁচাতে পারি। কিন্তু প্লাস্টিকের মতো সস্তা ও টেঁকসই বিকল্প কিছু তো আপনাদের খুঁজে বের করতে হবে। ধাতুই হোক, মাটি বা তন্তু – প্লাস্টিকের বিকল্প আপনাদের গবেষণাগার থেকেই বের করতে হবে। প্লাস্টিকের বর্জ্যের সঙ্গে বৈদ্যুতিন সামগ্রীর বর্জ্য থেকে ধাতু নিঃসরণ করে তার পুনর্ব্যবহারের বিষয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তির সন্ধান অত্যন্ত জরুরি।
আপনারা যে সমাধানই আমাদের দেবেন, আমাদের ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগী, কুম্ভকার, ছুতোর তার মাধ্যমেই পণ্য তৈরি করে তা বাজারজাত করবে। এর ফলে, পরিবেশ বাঁচবে। একইসঙ্গে ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগেরও উন্নতি হবে।
বন্ধুগণ,
পরিবেশ-বান্ধব, সার্কুলার ও সুস্থায়ী অর্থনীতির জন্য গ্রামের আর্থিক পরিস্থিতির অনুকূল নতুন উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি। ফসলের অবশিষ্টাংশ এবং বাড়ির বর্জ্য পদার্থের থেকে পরিবেশ দূষণ একটি বড় সমস্যা। এই বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। ২০২২ সালের মধ্যে তেলের ব্যবহার ১০ শতাংশ কম করা আমাদের লক্ষ্য। জৈব জ্বালানি, জৈব প্রযুক্তি এবং ইথানল তৈরির ক্ষেত্রে উদ্যোগ স্থাপনের বিশেষ সম্ভাবনা রয়েছে।
এই শিল্পগুলির বিষয়ে আরও গবেষণার জন্য আমাদের উৎসাহ দিতে হবে। এর সঙ্গে যাঁরা কাজ করবেন, তাঁদের খবরগুলি আমাদের প্রচার করতে হবে। মনে রাখবেন, ভারতের অর্থনীতিকে ৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত করতে হলে আপনাদের সকলের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
বন্ধুগণ, কৃষিকাজে প্রযুক্তির ব্যবহারে বিপ্লব আনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানোর সমস্যাটির একটি কৃষক-কেন্দ্রিক সমাধান কি আমরা খুঁজে পেতে পারি? নিঃসরণ কমিয়ে শক্তির যথাযথ ব্যবহারের লক্ষ্যে আমরা কি আমাদের ইঁটভাটাগুলির জন্য নতুন নকশা তৈরি করতে পারি? দেশ জুড়ে বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহের লক্ষ্যে আমাদের আরও ভালো এবং কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। বছরের পর বছর ধরে কলকারখানা থেকে যে বর্জ্য বেরিয়ে আমাদের মাটি এবং ভূগর্ভস্থ জলস্তরকে ধ্বংস করছে, সেটিকে কিভাবে আটকানো যায়?
বন্ধুগণ,
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই যে চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত যন্ত্রপাতিগুলি ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির মাধ্যমে তৈরি করে আমাদের জনগণের কাছে তার সুফল পৌঁছে দিতে হবে।
মহাত্মা গান্ধী একবার বলেছিলেন, “স্বাস্থ্যই প্রকৃত সম্পদ, সোনা বা রূপো নয়।” সুস্বাস্থ্যের লক্ষ্যে আমাদের কিছু প্রথাগত প্রজ্ঞার ব্যবহার করলেই চলবে না, আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়াতে হবে এবং সমসাময়িক জৈব-চিকিৎসার ক্ষেত্রে গবেষণার ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।
নিপা, ইবোলা ইত্যাদির মতো সংক্রমণযোগ্য ব্যাধিগুলির হাত থেকে জনগণকে বাঁচানোর লক্ষ্যে আমাদের ভাবনাচিন্তা করতে হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা নির্মূল করার লক্ষ্যে আমাদের নিরন্তর প্রয়াস চালাতে হবে। আন্তর্জাতিক স্তরে টিকা সরবরাহের ক্ষেত্রে ভারত প্রথম সারিতে রয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জৈব-উৎপাদন শিল্প হাব ভারতে গড়ে তুলতে আমাদের উদ্যোগী হতে হবে। সঠিক নীতি গ্রহণ এবং উদ্ভাবনী গবেষণা, মানবসম্পদ ও শিল্পোদ্যোগের মাধ্যমেই এই লক্ষ্যে পৌঁছনো সম্ভব।
বন্ধুগণ,
সুস্থায়ী ও পরিবেশ-বান্ধব বিদ্যুৎ মজুত করা এবং তা সরবরাহ করার ক্ষেত্রে ভারতকে একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে গ্রিড ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, কারণ আমরা পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি বন্টনের পরিমাণ বৃদ্ধি করছি। এর জন্য নতুন ধরনের ব্যাটারির প্রয়োজন যেগুলি ক্রান্তিয় জলবায়ুতে শত শত গিগাওয়াট স্কেলের বিদ্যুৎ সঞ্চয়ের লক্ষ্যে সহজলভ্য, পরিবেশ-বান্ধব সামগ্রী দিয়ে তৈরি করতে হবে।
বন্ধুগণ, জলবায়ুর যথাযথ পূর্বাভাসে ব্যাপক সামাজিক ও আর্থিক উপকার হয়। গ্রীষ্মকালীন ঘূর্নিঝড়ের ক্ষেত্রে বিশেষ করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং সতর্কীকরণের বিষয়ে যথেষ্ট উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর ফলে, প্রাণহানি কমেছে। মহাকাশ অভিযানে আমাদের সাফল্য এখন সমুদ্রের গভীরেও প্রতিফলিত হচ্ছে। মহাসাগর থেকে প্রাপ্ত জল, শক্তি, খাদ্য এবং খনিজ পদার্থের বিষয়ে আমাদের অনুসন্ধান করে তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলতে হবে। এ কাজে গভীর জলে স্বয়ংক্রিয় যানবাহন, সমুদ্রে খনিজ উত্তোলন এবং মনুষ্যচালিত যন্ত্রপাতির উন্নয়নের প্রয়োজন। আমি তাই আশা করি, ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রক যে ‘ডিপ ওশন মিশন’-এর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তা এই উদ্যোগগুলির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে।
বন্ধুগণ,
আমি বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে জেনেছি যে গতিশীল শক্তির ক্ষমতা এতটাই যে তা একটি পাহাড়কে নাড়িয়ে দিতে পারে। আমরা কি গতিবিজ্ঞান তৈরি করতে পারি? একটু কল্পনা করুন যে, প্রাসঙ্গিক প্রযুক্তি, উদ্ভাবন, নতুন উদ্যোগ এবং শিল্পের মাধ্যমে আমাদের সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক সম্ভাবনাকে আমরা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগালে তার কি ব্যাপক প্রভাব পড়বে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই প্রবল গতিকে বশীভূত করে আমরা কি নতুন ভারতের সুযোগগুলিকে যুক্ত করার ক্ষেত্রে তা চালনা করতে পারি না?
বন্ধুগণ,
সরকার এবং জনগণের মধ্যে প্রযুক্তি সেতুবন্ধনের কাজ করে। প্রযুক্তির দ্রুত এবং প্রকৃত বিকাশের মাধ্যমে প্রকৃত লক্ষ্যে পৌঁছনো সম্ভব। প্রযুক্তি পক্ষপাতদুষ্ট হয় না। এই কারণেই মানুষের চিন্তাভাবনা এবং আধুনিক প্রযুক্তির মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করলে অভূতপূর্ণ ফলাফল পাওয়া সম্ভব। আমার পুরো বিশ্বাস, নতুন বছর এবং নতুন দশকে নতুন ভারতের নতুন মনোভাব, চিন্তাভাবনা আমরা একযোগে আরও দৃঢ় করতে পারব। আরও একবার আপনাদের সকলকে, পুরো বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়কে এবং আপনাদের পরিবারকে নতুন বছরের শুভ কামনা। অনেক অনেক ধন্যবাদ!