উত্তর প্রদেশের রাজ্যপাল শ্রদ্ধেয় রাম নায়েক মহোদয়, রাজ্যের যশস্বী পরিশ্রমী মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য মনোজ সিনহা, সংসদ সদস্য ও বিজেপি-র প্রদেশ অধ্যক্ষ মহেন্দ্রনাথ পাণ্ডে, জাপান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার শ্রী হিরেকা আসারি এবং আমার বেনারসের ভাই ও বোনেরা।
আমি সবার আগে দেশের গৌরব বৃদ্ধিকারী এক কন্যার কথা বলে শুরু করতে চাই। আপনারা দেখেছেন যে, আসামের নওগাঁও জেলার ডিমগামের একটি ছোট মেয়ে হিমা দাস কিভাবে আমাদের গর্বিত করেছেন। আপনারা টিভিতে দেখেছেন। আমি আজ বিশেষভাবে তাঁর জন্য একটি ট্যুইট করেছি। ঐ স্টেডিয়ামে ধারাভাষ্যকাররা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন, যখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের পেছনে ফেলে একটি ভারতীয় মেয়ে প্রত্যেক সেকেন্ডে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন ধারাভাষ্যকার যে উত্তেজনা নিয়ে ধারাবিবরণী দিচ্ছিলেন, তখন সমস্ত ভারতবাসীর বুক গর্বে ভরে গিয়েছিল। তারপর, হিমা দাস হাত বাড়িয়ে তেরঙ্গা পতাকার জন্য ছুটছিলেন। তেরঙ্গা পেতেই সেটি গায়ে জড়িয়ে নেন। জয়ের আনন্দে তেরঙ্গা পতাকা বাতাসে ওড়ানোর পাশাপাশি তিনি অসমীয়া গামছা গলায় জড়াতেও ভোলেননি। আর যখন তিনি মেডেল পাচ্ছিলেন, ভারতের তেরঙ্গা পতাকা উড়ছিল, আর জন গণ মন …… শুরু হ’ল তখন আপনারা সবাই দেখেছেন যে, ১৮ বছর বয়সী হিমার দু’চোখ থেকে গঙ্গা-যমুনার স্রোত দু’গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল। সেই অশ্রুধারা ভারতমায়ের প্রতি সমর্পিত ছিল। এই দৃশ্য ১২৫ কোটি ভারতবাসীকে একটি প্রেরণা ও প্রাণশক্তি প্রদান করে। ছোট্ট একটি গ্রামের ধানচাষী পরিবারের মেয়েটি ১৮ মাস আগেও জেলাস্তরে খেলতেন। আর আজ সারা পৃথিবীতে ভারতের নাম উজ্জ্বল করে এসেছেন। আমি হিমা দাসকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আপনাদেরকেও অনুরোধ করছি, করতালি দিয়ে হিমা দাস’কে অভিনন্দন জানান।
ভাই ও বোনেরা, বাবা ভোলেনাথের প্রিয় শ্রাবণ মাস শুরু হতে চলেছে। কিছুদিন পরই কাশীতে দেশ ও বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে শিবভক্তরা এসে মেলায় সামিল হবেন। এই উৎসবের প্রস্তুতি নতুন উদ্যমে শুরু হয়েছে। এই উৎসবের প্রস্তুতির মাঝে আমি সেই পরিবারগুলির যন্ত্রণা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতে চাই। যাঁরা বেনারসের দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন, সেই শোকার্ত পরিবারগুলির প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাই। অন্যের ব্যথা-যন্ত্রণা ভাগ করে নেওয়া, সহযোগিতা ও সৌহার্দ্যের ভাবনা কাশীর বিশেষ চরিত্র। ভোলেবাবার মতো সহজ-সরল বেনারসবাসীর মন এই সংস্কারগুলি ভুলে যায়নি। শতাব্দীর পর শতাব্দীকাল ধরে এগুলি দিয়েই তো আজকের বেনারস গড়ে উঠেছে। এর পৌরাণিক পরিচয়কে নতুন উচ্চতা দিতে কাশীকে একবিংশ শতাব্দীর প্রয়োজনীয়তা অনুসারে উন্নত করার প্রচেষ্টা আমরা গত চার বছর ধরে নিরন্তর জারি রেখেছি। নতুন ভারতের জন্য এক নতুন বেনারস নির্মিত হচ্ছে, যার আত্মা চিরপুরাতন কিন্তু শরীর নবীন। এর প্রতিটি কণায় সংস্কৃতি ও সংস্কার প্রোথিত থাকবে কিন্তু পরিষেবাগুলি হবে স্মার্ট। পরিবর্তিত বেনারসের এই চিত্র এখন সর্বক্ষেত্রে ফুটে উঠছে।
আজ সংবাদ মাধ্যম ও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে কাশীর সড়ক, চৌরাস্তা, গলি, ঘাট ও পুকুরগুলির ঝাঁ চকচকে চেহারা দেখে মন ভরে যায়। মাথার ওপর ঝুলে থাকা বিদ্যুতের তারের জঞ্জাল আর দেখা যায় না। অথচ, প্রতিটি সড়ক আলোয় স্নান করতে থাকে। রঙবেরং-এর আলোয় ফোয়ারার দৃশ্য মন ছুঁয়ে যায়। বন্ধুগণ, বিগত চার বছরে বেনারসে বেশ কয়েকটি ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগে নির্মিত প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে আর এই উন্নয়নযজ্ঞ চলতেই থাকবে। ২০১৪ সালের পর আমরা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলাম। রাজ্য সরকার বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজে অসহযোগিতা করছিল ও বাধা দিচ্ছিল। কিন্তু বছর খানেক আগে আপনারা বিপুল ভোটে লক্ষ্ণৌতে বিজেপি সরকার নির্বাচন করায় বেনারস তথা সমগ্র উত্তর প্রদেশে উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হয়েছে। সেই প্রক্রিয়া জারি রেখেই একটু আগে আমি প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে নির্মীয়মান কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেছি। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের ৩০টিরও বেশি প্রকল্পের মাধ্যমে এখানকার সড়কপথ, পরিবহণ ব্যবস্থা, পানীয় জল সরবরাহ, পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা, রান্নার গ্যাস, পরিচ্ছন্নতা এবং শহরের সৌন্দর্যায়ন আরও উন্নত হবে। এছাড়া, ইনকাম ট্যাক্স ট্রাইব্যুনালের সার্কিট বেঞ্চ ও কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের জন্য সিজিএইচএস ওয়েলনেস সেন্টার-এর পরিষেবা স্থানীয় জনগণের জীবনকে সহজ করবে।
ভাই ও বোনেরা, বেনারাসে আজ যে পরিবর্তন আসছে, তার দ্বারা পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিও লাভবান হচ্ছে। আজ এখানে ঐ গ্রামগুলিতে পানীয় জল সরবরাহের কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন হ’ল আমি সংশ্লিষ্ট কৃষক ভাই-বোনদের সেজন্য শুভেচ্ছা জানাতে চাই। এই সভার কাছেই আজ চালু হ’ল একটি ‘পেরিশেবল কার্গো কেন্দ্র’। আমার সৌভাগ্য যে এই প্রকল্পটির শিলান্যাস আমি করেছিলাম আর যথাসময়ে উদ্বোধন-ও করলাম। এই কার্গো সেন্টার এখানকার কৃষকদের জন্য ঈশ্বরের বরদান হয়ে উঠবে। আলু, মটর, টমেটোর মতো সব্জি খুব কম সময়েই নষ্ট হয়ে যায়। এখানে এই সকল সব্জির গুদামীকরণের যথাযথ ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন আর আপনাদের ফল-সব্জি পচে যাওয়ার ভয় থাকবে না। এখান থেকে রেল স্টেশনও ফলে সব্জি ও ফল দূরবর্তী শহরগুলিতে পাঠাতেও খুব একটা বেগ পেতে হবে না।
বন্ধুগণ, পরিবহণের মাধ্যমে রূপান্তরণের পথে বর্তমান সরকার তীব্রগতিতে এগিয়ে চলেছে। এক্ষেত্রে আমরা দেশের পূর্বভাগে উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। একটু আগেই আজমগড়ে দেশের সর্বাধিক লম্বা এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধনও এই দৃষ্টিকোণেরই অংশ। বন্ধুগণ, কাশী সর্বদাই মোক্ষদায়ী আর জীবনের খোঁজে এখানে মানুষের স্রোত সদা অব্যাহত। কিন্তু এখন স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের সাহায্যে জীবনের সঙ্কট মোচনের জন্য আপনাদের সহযোগিতায় এখানে অত্যাধুনিক চিকিৎসা হাব গড়ে তোলা হচ্ছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে বিখ্যাত বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি এইম্স-এর সঙ্গে একটি বিশ্বমানের স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার মউ স্বাক্ষর করেছে। বেনারসবাসীদের পাশাপাশি, বিভিন্ন কারণে বেনারসে আসা মানুষের জন্যও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য সড়ক ও রেল পরিষেবা উন্নত করা হয়েছে। আজ এখানকার ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন নতুন রূপ দেওয়ার কাজ চালু হয়েছে। বারানসী থেকে বালিয়া পর্যন্ত বৈদ্যুতিকরণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং আজ থেকে এই সেকশনে মেমো ট্রেন চালু হ’ল। একটু আগেই আমি সবুজ পতাকা দেখিয়ে ঐ মেমো ট্রেনের যাত্রা সূচনা করলাম। এখন থেকে সকালে ঐ ট্রেনে চেপে বালিয়া ও গাজিপুরের মানুষ এসে কাজ সেরে সন্ধ্যায় ফিরে যেতে পারবেন। তাঁদেরকে আর দূরগামী রেলের ভিড়ের ধাক্কা খেতে হবে না।
বন্ধুগণ, কাশীর ভক্তজন ও দেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যাঁরা ভোলেনাথের শরণে কাশী আসেন, তাঁদের জন্য উন্নত পরিষেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পঞ্চকোষি মার্গ প্রশস্তিকরণের কাজও আজ থেকে শুরু হ’ল। পাশাপাশি, এই শহরে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বসম্পন্ন অঞ্চলগুলিতে যাতায়াত ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য দু’ডজন সড়কপথ পুনর্নির্মিত হয়েছে। একটু আগেই সেগুলির উদ্বোধনের সৌভাগ্য আমার হ’ল।
ভাই ও বোনেরা, আমাদের নিরন্তর প্রচেষ্টায় কাশী এখন আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে অনেক বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। আজ এখানে ইন্টারন্যাশনাল কনভারশন সেন্টার রুদ্রাক্ষ – এর শিলান্যাস করা হয়েছে। দু’বছর আগে আমার পরম বন্ধু জাপানের প্রধানমন্ত্রী মিঃ শিনজো আবে আমার সঙ্গে এসে কাশীবাসী তথা ভারতবাসীকে এই উপহার দিয়েছিলেন। আগামী দেড়-দু’বছরের মধ্যে এই প্রকল্প সম্পূর্ণ হবে। আপনাদের সকলের পক্ষ থেকে এই উপহারের জন্য আমি জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।
বন্ধুগণ, আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আদিত্যনাথ যোগীর নেতৃত্বে উত্তরপ্রদেশ সরকার শুধু কাশী নয়, সমগ্র উত্তর প্রদেশে পর্যটনশিল্প উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। সেজন্যে পরিচ্ছন্নতা ও ঐতিহ্যসমূহের সৌন্দর্যায়ণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আপনারা যেভাবে স্বচ্ছ ভারত অভিযানকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। বন্ধুগণ, কাশীর মহত্ব ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব সংরক্ষণের জন্য আপনাদের অবদান অতুলনীয়।
কিন্তু আমাদের চার বছর আগের সেই সময়কে ভুলে যাওয়া উচিৎ নয়। যখন বারানসীর অস্তিত্ব সঙ্কটাকীর্ণ ছিল। চার দিকে নোংরা, আবর্জনা, খানা-খন্দময়, সড়ক, ভাঙাচোরা পার্ক, পুতিগন্ধময় নর্দমা, লাইট পোস্টগুলিতে ঝুলতে থাকা বিদ্যুতের তারের জঙ্গল, যানজটে হাসফাস করা শহর, বাবদপুরা এয়ারপোর্ট থেকে শহরে আসার সেই ভয়ানক পথটির কথা আমি ভুলতে পারি না। ঐ পথে চলতে গিয়ে মানুষের কত সমস্যা হয়েছে, কতজন সময় মতো বিমানবন্দরে পৌঁছতে পারেননি, গঙ্গা ঘাটগুলির কী দুর্দশা ছিল, তা আপনাদের ভোলার কথা নয়। পূর্ববর্তী সরকার এই সমস্ত ব্যবস্থা সম্পর্কে বেপরোয়া থাকায় গঙ্গা পরিণত হয়েছিল একটি বৃহৎ নর্দমায়। মানুষের কষ্ট যত বাড়ছিল, সরকারের ক্ষমতায় থাকা পরিবারগুলির সিন্দুক তত উপচে পড়ছিল। সেই পরিস্থিতি থেকে গঙ্গামা-কে উদ্ধার করতে আমাদের ঘাম ছুটে গেছে। আমরা বিচ্ছিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু দেখছি না। মা গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করতে শুধু বেনারস নয়, গঙ্গোত্রী থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত একসঙ্গে অভিযান শুরু করেছি। শুধু গঙ্গাবক্ষ পরিস্কার করাই নয়, পার্শ্ববর্তী শহর ও জনপদগুলির নোংরা ও আবর্জনা যাতে গঙ্গায় না পড়ে – সেই ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। সেজন্য ইতিমধ্যে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০টিরও বেশি প্রকল্প মঞ্জুর করা হয়েছে। একটু আগেই কয়েকটি পয়ঃপ্রণালী নির্মাণ ও প্রশস্তিকরণ প্রকল্পের শুভ সূচনা হ’ল। বন্ধুগণ, আগেও অনেক অর্থ ব্যয়ে পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা ও ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট গড়ে তোলা হয়েছিল। কিন্তু পূর্ববর্তী সরকারগুলির কর্মসংস্কৃতি এমন ছিল যে, এগুলি নির্মাণের উৎকর্ষ পরীক্ষা করা হয়নি। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই এগুলি বিকল হয়ে পুতিগন্ধময় হয়ে উঠত। এখন যে পয়ঃপ্রণালী ও ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হচ্ছে, সেগুলি মঞ্জুর করার সময়েই নিশ্চিত করা হয়েছে এগুলি যেন কমপক্ষে ১৫ বছর অক্ষত থাকে। ঠিকেদার সংস্থাগুলিকে কিস্তিতে টাকা দেওয়া হচ্ছে; ১৫ বছর পরই তাঁরা সম্পূর্ণ টাকা পাবে। এর মানে আমরা শুধুই কোনও ব্যবস্থা চালু করে ক্ষান্ত হই না, তার স্থায়িত্বের ব্যাপারেও সুনিশ্চিত হতে চাই। আমরা জানি যে, এরকম পাকা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সময় ও শ্রম বেশি লাগে। কিন্তু পরিণাম অনেক বেশি সুফলদায়ক হয়। আগামীদিনে সারা দেশের সঙ্গে বেনারসও এই সুফল পাবেন।
ভাই ও বোনেরা, এই সমস্ত কাজ বেনারসকে স্মার্টসিটিতে রূপান্তরিত করবে। এখানে যে ইন্টিগ্রেটেড কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার চালু হয়েছে, সেটি দ্রুতগতিতে কাজ করছে। এই ধরণের কন্ট্রোল সেন্টারগুলির মাধ্যমে আমরা সারা দেশের প্রশাসন ও গণপরিষেবাগুলি নিয়ন্ত্রণ করব। এরকম ১০টি প্রকল্প ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে। বন্ধুগণ, স্মার্টসিটি শুধুই শহরগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নের অভিযান নয়, এগুলি দেশকে একটি নতুন পরিচয় এনে দেবে। এগুলি ‘যুব ভারত, নতুন ভারত’-এর প্রতীক। এভাবে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ এবং ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ অভিযান দেশের সাধারণ মানুষের জীবনকে সুগম ও সরল করে তুলছে। এক্ষেত্রে আমাদের উত্তর প্রদেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। সেজন্য আমি আদিত্যনাথ যোগী ও তাঁর টিমকে শুভেচ্ছা জানাই। আপনাদের নতুন শিল্প নীতি গড়ে তোলা, বিনিয়োগের পরিবেশ ইতিমধ্যেই বিশ্ববাসীর নজর কাড়ছে। কিছুদিন আগে নয়ডায় স্যামসাং কোম্পানি ফোন নির্মাণে বিশ্বের বৃহত্তম কারখানা উদ্বোধনের সৌভাগ্য হয়েছে। এতে, কয়েক হাজার যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান হবে। আপনারা শুনে গর্বিত হবেন যে, গত চার বছরে দেশে মোবাইল ফোন নির্মাণকারী কারখানার সংখ্যা ২ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১২০ হয়েছে। এর মধ্যে ৫০টিরও বেশি আমাদের উত্তর প্রদেশে গড়ে উঠেছে। এই কারখানাগুলিতে ইতিমধ্যেই ৪ লক্ষেরও বেশি নবীন প্রজন্মের মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
বন্ধুগণ, ডিজিটাল ইন্ডিয়া অভিযানও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। আজ এখানে টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসের বিপিও উদ্বোধন হ’ল এই কেন্দ্রটি বেনারসের নবীন প্রজন্মের মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ নিয়ে আসবে। ভাই ও বোনেরা, সরকার মা ও বোনেদের স্বনির্ভরতাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে কোনও রকম গ্যারান্টি ছাড়া ঋণ প্রদান থেকে শুরু করে বিনামূল্যে রান্নার গ্যাসের সংযোগ ও সিলিন্ডার প্রদানের মাধ্যমে গরিব মা ও বোনেদের জীবনে পরিবর্তন এনেছে। সকলের কাছে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি পৌঁছে দিতে কাশীতে একটি বড় প্রকল্প চালু হয়েছে, তারই অংশ হিসাবে আজ এখানে ‘সিটি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটিং সিস্টেম’-এর উদ্বোধন হ’ল। এর জন্য এলাহাবাদ থেকে বেনারস পর্যন্ত পাইপলাইন পাতা হয়েছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, ইতিমধ্যেই বেনারসের ৮ হাজার বাড়িতে পাইপ লাইনের মাধ্যমে রান্নার গ্যাসের সংযোগ স্থাপিত হয়েছে এবং এই প্রকল্প অনুযায়ী ভবিষ্যতে ৪০ হাজারেরও বেশি পরিবারে রান্নার গ্যাস পৌঁছে দেওয়া হবে। বন্ধুগণ, পিনএনজি হোক কিংবা সিএনজি এই পরিকাঠামো পরিবর্তন শহরের প্রদূষণ মাত্রাকে নিঃসন্দেহে হ্রাস করবে। পাশাপাশি, যখন বেনারসে সমস্ত বাস, অটো রিক্শা প্রভৃতি গাড়ি সিএনজি-তে চলবে, তখন অনেক কর্মসংস্থানও হবে।
বন্ধুগণ, জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যখনই দেখা হয়, আর শুনেছি, যে কোনও ভারতবাসীর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়, তিনি মুক্ত কন্ঠে কাশীর প্রশংসা করেন। তিনি যখন আমার সঙ্গে এখানে এসেছিলেন, তখন আপনারা তাঁকে যে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন, তিনি আজও তা ভোলেননি। কিছুদিন আগে ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতিও আমার সঙ্গে এখানে এসে এরকম অভ্যর্থনা পেয়েছেন। আর নিজের দেশে ফিরে সবার কাছে এখানকার কথা বলেন – এটাই কাশীর পরম্পরা, এটাই কাশীর হৃদয়ের উষ্ণতা। এই কাশী গোটা বিশ্বে নিজের সুরভি ছড়িয়ে দিয়েছে। এই কাশীর আদর ও স্নেহ অতুলনীয়। আমার কাশীর ভাই ও বোনেরা, আপনারা এই অতুলনীয় আদর ও স্নেহ, প্রেম ও আতিথেয়তা প্রদর্শনের সুযোগ পাবেন, আগামী জানুয়ারি মাসের ২১ থেকে ২৩ তারিখ এই শহরে সারা পৃথিবী থেকে প্রবাসী ভারতীয়রা আসবেন। প্রবাসী ভারতীয় দিবসে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভারতীয় শিল্পপতি, রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্ট মানুষেরা আসবেন। এঁদের মধ্যে অনেকের পূর্বজরা ৩-৪ প্রজন্ম আগে বিদেশে চলে গিয়েছেন। এই বিশিষ্ট মানুষদের কাশীতে পদার্পণ আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। তাঁদের যথাযোগ্যভাবে স্বাগত জানানোর জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। শহরের প্রতিটি অঞ্চলে তাঁদের আতিথেয়তার পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, যাতে সারা পৃথিবীতে কাশীর গৌরব আরও ছড়িয়ে যায়। ২১ থেকে ২৩ জানুয়ারি এখানে প্রবাসী ভারতীয় দিবস উদযাপনের পর এই বিশিষ্ট মানুষেরা ২৪ তারিখ প্রয়াগরাজে কুম্ভ দর্শনে যাবেন। আর সেখান থেকে ২৬ জানুয়ারি দিল্লি পৌঁছবেন। আমি নিজেও একজন কাশীবাসী হিসেবে ২১শে জানুয়ারি আপনাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাঁদের অভ্যর্থনায় অংশগ্রহণ করব। এই কর্মসূচিতে সারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভারতীয়রা আসছেন। তাই এটি আমাদের প্রত্যেকের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
আমার কাশীর ভাই ও বোনেরা, আজ আপনাদের মাঝে এসে অনেকগুলি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাসের সৌভাগ্য হ’ল। আপনাদের ভোটে নির্বাচিত সাংসদ হিসাবে আমার দায়িত্ব হ’ল আপনাদের জন্য যথাসম্ভব পরিশ্রম করা। আর আমি এই দায়িত্ব যথাসম্ভব পালন করে যাচ্ছি। ভবিষ্যতেও করব। আমি আরেকবার আপনাদের অন্তর থেকে অভিনন্দন জানাই। আমার সঙ্গে মুক্ত কন্ঠে বলুন হর হর মহাদেব। অনেক অনেক ধন্যবাদ।