ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী,
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী,
নাইজেরিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী,
ইন্দোনেশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী,
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠনের মহানির্দেশক,
মঞ্চে উপস্থিত অন্যান্য সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ,
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত অতিথিগণ,
ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ,
“যক্ষ্মা অবসান” সূচক শীর্ষ বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য আপনারা সবাই ভারতেএসেছেন। এজন্য আমি আপনাদের সবার কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ এবং হৃদয় থেকে আপনাদের সবাইকেস্বাগত জানাই।
বন্ধুগণ,
টিউবারক্যুলোসিস – যক্ষ্মাকে এখন থেকে প্রায় ২৫ বছর আগেই বিশ্ব স্বাস্থ্যসংগঠন উপদ্রুত ঘোষণা করেছিল। তখন থেকে ভিন্ন ভিন্ন দেশে যক্ষ্মা নিবারণের স্বার্থেনানা রকম প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে। নিশ্চিতভাবেই আমরা সবাই দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এসেছি।যক্ষ্মা নিবারণে ব্যাপক হারে কাজ হয়েছে কিন্তু, বাস্তব হল এটাই যে, যক্ষ্মানিবারণে আমরা আজও সম্পূর্ণভাবে সফল হতে পারিনি।
বন্ধুগণ,
আমি মনে করি, যখন কোন কাজ ১০-২০ বছর ধরে করা হচ্ছে, আর তার ফল তেমনটাআসেনি যেমন আশা করা হয়েছিল, তখন আমাদের কর্মপদ্ধতি পরিবর্তন করে দেখা উচিৎ। যেভাবেএতদিন কাজ করা হচ্ছিল, যে পদ্ধতিতে প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত করা হচ্ছিল, সেগুলিকেবিশ্লেষণ করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আর পুরনো প্রক্রিয়াগুলিকে বিশ্লেষণ করলেই নতুনকর্মপদ্ধতির পথ উন্মোচিত হয়।
আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে এই ভাবনা নিয়ে ভারতের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চল, আর,‘স্টপ টিবিপার্টনারশিপ’ মিলিতভাবে এশিয়া, আফ্রিকা এবং বিশ্বের অনেক দেশের প্রতিনিধিদের আজ একমঞ্চে নিয়ে এসেছে। এ বছর সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের গুরুত্বপূর্ণবৈঠকও হতে চলেছে। এই বৈঠকের পূর্ববর্তী প্রস্তুতি হিসেবে আজকের এই আয়োজন সমগ্রমানবতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি আশা করি যে ‘দিল্লি যক্ষ্মা অবসান শীর্ষসম্মেলন’ যক্ষ্মাকে পৃথিবী থেকে চিরতরে মুছে দেওয়ার লক্ষ্যে একটি মাইলফলক সম্মেলনহিসেবে চিহ্নিত হবে।
বন্ধুগণ,
সম্প্রতি এই লক্ষ্যে ভারতে একটি উদ্যোগের বর্ষপূর্তি হয়েছে। গত বছর বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার আয়োজনে ‘২০৩০ সালের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যক্ষ্মা অবসানেকর্মপদ্ধতির দিল্লি আহ্বান’ প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে স্বীকৃত হয়েছিল। এইপ্রস্তাবের পর যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে যক্ষ্মা অবসানেঅত্যন্ত ইতিবাচক উদ্যোগ রূপে প্রমাণিত হয়েছে। যক্ষ্মা যেভাবে মানুষের জীবনেসামাজিক স্বাস্থ্য ও দেশের অর্থ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে, তা লক্ষ্য করে এখননির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যক্ষ্মা থেকে মুক্তি পাওয়া নিতান্ত প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। ভারতেএমনিতেই সংক্রামক রোগগুলির থেকেও যক্ষ্মার প্রভাব বেশি, আর এর শিকার সবচাইতে বেশিহয় গরিব মানুষ। সেজন্য যক্ষ্মার অবসানে প্রতিটি পদক্ষেপ সরাসরি গরিবদের জীবনেরসঙ্গে জুড়ে থাকে।
বন্ধুগণ,
সারা পৃথিবীতে যক্ষ্মা অবসানের জন্য ২০৩০ সালকে লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে।কিন্তু আজ আমি এই মঞ্চ থেকে ঘোষণা করছি যে ভারত ২০৩০ থেকে পাঁচ বছর আগে, অর্থাৎ২০২৫ সালের মধ্যে নিজের দেশে যক্ষ্মা অবসানের লক্ষ্য স্থির করেছে। আমাদের সরকারএকটি নতুন কর্মপদ্ধতি ঠিক করে ভারতে যক্ষ্মা অবসানের কাজে উঠে-পড়ে লেগেছে।কেন্দ্রীয় সরকারের এই নতুন কৌশলগত উদ্যোগের কিছু ঝলক একটু আগেই আপনাদের সামনেপরিবেশিত হয়েছে। যক্ষ্মা অবসান আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে জবাবদিহি করেআমাদের সরকার সবাইকে মিলেমিশে কাজ করার প্রেরণা যোগাচ্ছে।
ভাই ও বোনেরা,
ভারতে ২০২৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা অবসানের জন্য যে জাতীয় কৌশলগত পরিকল্পনাগড়ে তোলা হয়েছিল, তা এখন সম্পূর্ণরূপে সক্রিয়। এই খাতে সকল প্রকল্পের জন্য সরকারনিরন্তর বাজেটে অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করছে। এ বছর অসুস্থদের পুষ্টি বৃদ্ধির জন্য বছরেঅতিরিক্ত ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অসুস্থরা যাতে পুষ্টিকরখাদ্য কিনতে সমস্যায় না পড়েন, সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি আর্থিক অনুদানতাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দেওয়া হচ্ছে। যক্ষ্মা রোগীদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করারজন্য এবং আক্রান্ত রোগীদের সম্পর্কে সঠিক সময়ে জানার জন্য, যে ওষুধ তাঁদের দেওয়াহচ্ছে, সেগুলি কার্যকরি কিনা তা বোঝার জন্য, কোন ব্যক্তির যক্ষ্মা ড্রাগরেসিস্ট্যান্ট কিনা তা বোঝার জন্য সরকার ব্যাপক হারে কাজ করছে। প্রত্যেক যক্ষ্মারোগীকে প্রথম সুযোগেই শ্রেষ্ঠ চিকিৎসাদানের সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার এই প্রকল্পগুলিতেবেসরকারি চিকিৎসা পরিষেবাকেও যুক্ত করছে। তাছাড়া, আমরা নতুন প্রযুক্তির ও নতুননতুন উদ্ভাবনকেও গুরুত্ব দিচ্ছি। ইন্টারনেট অফ থিঙ্গ্স-এর ভিত্তিতে স্টেট অফ দ্যআর্ট ইনফরমেশন কমিউনিকেশন প্রযুক্তি ব্যবস্থা এবং তার সঙ্গে যুক্ত মঞ্চ গড়ে তোলাহচ্ছে। কর্মসূচী ব্যবস্থাপনার জন্য, রোগের ওপর নজরদারির জন্য, চিকিৎসা তদারকিরমাধ্যমে ভ্রাম্যমান নিরাময় সমাধানের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
আমরা ডিজিটাল এক্স-রে রিডিং-এর জন্য দেশে আনবিক রোগ নির্ণয় যন্ত্রও গড়েতুলেছি। কৃত্রিম মেধা-নির্ভর এই যন্ত্রকে ‘ট্রু ন্যাট’ নাম দেওয়া হয়েছে। এই যন্ত্র‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ ভাবনাকে অগ্রাধিকার দেয়। যক্ষ্মা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়, যেমন টিকাকরণ,উন্নত ওষুধ, রোগ নির্ণয় পদ্ধতি এবং প্রয়োগ – এই সমস্ত ক্ষেত্রকে শক্তিশালী করারজন্য ‘ইন্ডিয়া টিবি রিসার্চ কনসর্টিয়াম’ স্থাপন করা হয়েছে।
ভারতকে যক্ষ্মামুক্ত করতে রাজ্য সরকারগুলিকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতেহবে। সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ভাবনাকে শক্তিশালী করে এই মিশনে রাজ্যসরকারগুলিকে নিজের সঙ্গে নিয়ে চলার জন্য আমি নিজে দেশের সকল মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠিলিখে এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছি। এখানে এই অধিবেশনে দেশেররাজ্যগুলি থেকে যে সম্মানিত মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট পদাধিকারীরা এসেছেন, তাঁরা সকলেই এইটিম ইন্ডিয়ার অংশ, যারা ভারতকে যক্ষ্মামুক্ত করতে দৃঢ় সঙ্কল্পবদ্ধ।
বন্ধুগণ,
যক্ষ্মা অবসানের এই অভিযান ভারতে হোক কিংবা অন্য যে কোন দেশে, অগ্রণীযক্ষ্মা চিকিৎসক এবং কর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়। তার সঙ্গে যাঁরাযক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার পর নিয়মিত ওষুধ খান, আর যক্ষ্মাকে হারিয়ে তবেই থামেন,তাঁরাও প্রশংসার পাত্র। যক্ষ্মা রোগীরা নিজের ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে যেভাবে এই রোগকেজয় করেন, তা তাঁদের জীবনে অন্য কাজের ক্ষেত্রেও প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। আমার দৃঢ়বিশ্বাস যে, রোগীদের ইচ্ছাশক্তি আর আমাদের সঙ্কল্পবদ্ধ যক্ষ্মা কর্মীদের সহযোগিতায়ভারতের পাশাপাশি বিশ্বের প্রতিটি দেশ নিজেদের লক্ষ্য পূরণে সফল হবে। এখানেস্বাস্থ্য বিভাগের যত কর্মী ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন, তাঁদেরকে আমি একাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য আহ্বান জানাব কারণ, ভারতে যক্ষ্মা অবসানের লক্ষ্য ২০৩০ নয়,২০২৫। সঠিক রণনীতি নিয়ে যথাযথভাবে তৃণমূল স্তরে সেই নীতিগুলিকে বাস্তবায়িত করলেআমরা এই লক্ষ্য পূরণে সফল হবই।
বন্ধুগণ,
যথাসম্ভব বেশি মানুষকে এই আন্দোলনে যুক্ত করে স্থানীয় স্তরে সচেতনতাবৃদ্ধির মাধ্যমে যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি, চিকিৎসা, অর্থাৎ বহু ক্ষেত্রীয়ব্যবস্থার মাধ্যমে আমরা নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারি। সেজন্য সরকার আর প্রশাসনকেপ্রতিটি স্তরে পঞ্চায়েত, পৌরসভা, জেলা প্রশাসন, রাজ্য সরকার – সকলকেই নিজের নিজেরস্তরে যক্ষ্মামুক্ত গ্রাম, পঞ্চায়েত, জেলা কিংবা রাজ্য গড়ে তুলতে সম্পূর্ণ শক্তিপ্রয়োগ করতে হবে।
বন্ধুগণ,
২০২৫ সালের মধ্যে ভারতকে যক্ষ্মামুক্ত করার লক্ষ্য অনেকের কাছে মুশকিলবলে মনে হতে পারে। কিন্তু এটা অসম্ভব নয়। গত চার বছর ধরে আমাদের সরকার যেভাবে নতুনকর্মপদ্ধতি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে, তাতে এই লক্ষ্য পূরণ সম্ভব।
ভাই ও বোনেরা,
আমরা এই সমস্যাগুলিকে টুকরো টুকরো করে দেখি না। যখন একটি সামগ্রিকদৃষ্টিকোণ থেকে এই সমস্যাগুলি সমাধানের প্রচেষ্টা চালানো হয়, তখন তার ফল অবশ্যইপাওয়া যায়। আমি বিস্তারিত আলোচনায় যেতে চাই না, কিন্তু আপনাদের এখানকার টিকাকরণকর্মসূচি বলতে চাই। ভারতে ৩০-৩৫ বছর ধরে টিকাকরণ অভিযান চলছে। তা সত্ত্বেও ২০১৪সালের মধ্যে আমরা সম্পূর্ণ টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারিনি। যে গতিতেটিকাকরণের পরিধি বেড়ে গেছে, এরকমই চলতে থাকলে ভারতের সম্পূর্ণ টিকাকরণের লক্ষ্যেপৌঁছতে ৪০ বছর লেগে যেত।
বন্ধুগণ,
আমাদের টিকাকরণকভারেজ কেবলই বছরে ১ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। কিন্তু গততিন-সাড়ে তিন বছরে এই কভারেজ বছরে ৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে আগামীবছর আমরা৯০ শতাংশ টিকাকরণেরলক্ষ্যপূরণে সফল হব। অন্যান্য দেশ থেকে আগত আমাদের বন্ধুরা হয়তোঅবাক হচ্ছেন যে, এটা কেমন করে সফল হল?
বন্ধুগণ,
একটু আগে আমি যে নতুন কর্মপদ্ধতির কথা বলেছিলাম, তার সফল প্রয়োগেই এটাসম্ভব হয়েছে। আমরা আগে দেশের সেই জেলা, সেই ক্ষেত্রগুলিকে চিহ্নিত করেছি যেগুলিবছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা টিকাকরণের আওতার বাইরে ছিল। সেই ক্ষেত্রগুলিকে লক্ষ্যকরে আমরা ‘মিশন ইন্দ্রধনুষ’ শুরু করি,টিকাকরণের ক্ষেত্রে নতুন ওষুধ চালু করি, আরতৃণমূল স্তরে গিয়ে কাজ করি। আজ সবাই এর সুফল দেখতে পাচ্ছেন।
বন্ধুগণ,
এমনই নতুন ভাবনা নিয়ে আমাদের সরকার ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’-এর জন্যও কাজকরছে। এর ফলস্বরূপ, ২০১৪ সালে দেশের গ্রামাঞ্চলে স্বচ্ছতার পরিমাণ প্রায় ৪০ শতাংশছিল। এখন তা বৃদ্ধি পেয়ে ৮০ শতাংশে পৌঁছে গেছে। এত কম সময়ে আমরা দ্বিগুণ সাফল্যপেয়েছি। আমরা অত্যন্ত দ্রুত অক্টোবর, ২০১৯-এর মধ্যে ভারতকে উন্মুক্ত স্থানেপ্রাকৃতিক কাজকর্ম মুক্ত করার পথে এগিয়ে চলেছি। এই দুটি উদাহরণ আমি আজ এইআন্তর্জাতিক মঞ্চে এজন্য দিচ্ছি কারণ, আমি চাই প্রত্যেক দেশই এরকম কঠিন সঙ্কল্পনিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লে তবেই লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হবে। হ্যাঁ, তার জন্য প্রথম প্রয়োজন হললক্ষ্য স্থির করা। যখন লক্ষ্যই স্থির নেই, গতিও থাকবে না,লক্ষ্যেও পৌঁছতে পারবেননা।
বন্ধুগণ,
এই সাহস নিয়ে এভাবে নির্দিষ্ট লক্ষ্য আর রণনীতি নিয়ে কাজ করে আমার দৃঢ়বিশ্বাস ভারতও ২০২৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা মুক্তির সঙ্কল্প বাস্তবায়নে সফল হবে।বন্ধুগণ, আপনারা সবাই স্বাস্থ্য পরিষেবায় বিশারদ। আপনারা খুব ভালভাবেই বোঝেন যেকোন অসুখকে নিরাময় করতে বহু ক্ষেত্রীয় নিযুক্তির প্রয়োজন হয়। যক্ষ্মার ক্ষেত্রেআমি ওষুধ, চিকিৎসা তদারকি, গবেষণা, পুষ্টিকর খাদ্যের জন্য আর্থিক সহায়তা – এরকমঅনেক উদ্যোগ সম্পর্কে আপনাদের বলেছি। কিন্তু পাশাপাশি ভারতে আরও এমন কিছু কাজহচ্ছে যা দেশ থেকে যক্ষ্মা দূরীকরণে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তার মধ্যেএকটি হল ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’ যার সম্পর্কে আমি বিস্তারিত বলেছি, তেমনই কেন্দ্রীয়সরকারের ‘উজ্জ্বলা’ যোজনাও যক্ষ্মা নিবারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এইপ্রকল্প অনুসারে, সরকার ৮ কোটি গরিব মহিলাকে বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস সংযোগ প্রদানেরকাজ করছে। বাড়িতে এলপিজি আসার পর মহিলারা, তাঁদের ছেলে-মেয়েরা এবং পরিবারেরঅন্যান্য সদস্যরা কাঠ কয়লার ধোঁয়া থেকে মুক্ত হচ্ছেন এবং পাশাপাশি যক্ষ্মার বিপদওকমছে। চারদিন আগে আন্তর্জাতিক মহিলা দিবসে আমাদের সরকার জাতীয় স্তরে ‘পুষ্টিমিশন’ও শুরু করেছে। এই মিশনের উদ্দেশ্য কেবল মানুষকে পুষ্টিকর খাদ্য প্রদান নয়,আমাদের লক্ষ্য সেই খাদ্যশৃঙ্খল গড়ে তোলা, যার মাধ্যমে অপুষ্টির সম্ভাবনা ন্যূনতমহয়।
বন্ধুগণ,
এ বছর বাজেটে ভারত বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রকল্প শুরু করারঘোষণা করেছে। এই প্রকল্পটি হল ‘আয়ুষ্মান ভারত’, অর্থাৎ ভারত দীর্ঘজীবী হোক। এরমাধ্যমে আমাদের সরকার দেশে প্রাথমিক, মধ্যবর্তী এবং উচ্চতম সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আরওশক্তিশালী করবে। সরকার, সারা দেশে ১.৫ লক্ষ হেল্থ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার স্থাপনকরছে। এই ওয়েলনেস সেন্টারগুলি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাজ করবে এবং সেখানে রোগনির্ণয় পরিষেবাও থাকবে। পাশাপাশি, সাধারণ মানুষকে সুলভে ওষুধও দেওয়া হবে। তাছাড়া,১০ কোটি গরিব পরিবারকে কঠিন রোগের চিকিৎসার জন্য প্রতি বছর ৫ লক্ষ টাকা স্বাস্থ্যবিমা নিশ্চয়তাও দেওয়া হবে।
ভাই ও বোনেরা,
আমাদের ভারতীয় দর্শন এবং ভারতীয় পুরাতন বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য নিয়ে অত্যন্তস্পষ্ট কথা বলেছে –
সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ,
সর্বে সন্তু নিরাময়াঃ,
সর্বে ভদ্রানি পশ্যন্তু, মা কশ্চিদুঃখভাগ্যবেৎ।
অর্থাৎ,
সবাই সুখী থাকুক,
সবাই রোগমুক্ত থাকুক,
সবাই পবিত্র দর্শন করুক, কেউ যেন দুঃখ ভোগ না করে।
এই দর্শনের ফলেই ভারতভূমিতে আয়ুর্বেদ এবং যোগ-এর মতো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিরজন্ম হয়েছিল। হাজার হাজার বছর ধরে এই পদ্ধতিগুলি ভারতীয় জনমানসকে প্রভাবিত করেছে।কিউরেটিভ, প্রোমোটিভ এবং প্রিভেন্টিভ স্বাস্থ্য পরিষেবার এই পদ্ধতিগুলি এখনআন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাচ্ছে। আমাদের সরকারও পুরনো ভারতীয় পদ্ধতি এবং আধুনিকচিকিৎসা পদ্ধতিকে একসঙ্গে চালু রেখেছে। আমি আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রককে অনুরোধ করব যেযক্ষ্মা নিরাময়ে আয়ুর্বেদ ক্ষেত্রে গবেষণার মাধ্যমে এর পরিধি বৃদ্ধি করা হোক। এরসুফল আমাদের বন্ধু দেশগুলিকেও জানানো হোক। ‘সকলের সঙ্গে সকলের উন্নয়ন’ – আমাদের এইমন্ত্র কোন আঞ্চলিক সীমায় আবদ্ধ নেই। যক্ষ্মামুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য ভারতপ্রত্যেক দেশের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আনন্দের সঙ্গে চলতে চায়। যক্ষ্মারবিরুদ্ধে লড়াইয়ে যে কোন দেশে প্রাথমিক ওষুধ, পণ্য এবং প্রযুক্তিগত সাহায্য প্রয়োজনহলে, আমরা অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে তাদের পাশে দাঁড়াব।
বন্ধুগণ,
আমাদের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, কোন প্রকল্প সফল না অসফল তানির্ভর করে এর মাধ্যমে সর্বশেষ প্রান্তিক মানুষটির কতটা লাভ হল তার ওপর। আমাদেরসরকার সেই সর্বশেষ প্রান্তিক মানুষটির বেঁচে থাকাকে সহজতর করে তোলার জন্য আমাদেরপ্রতিটি প্রকল্পকে কার্যকর করতে সঙ্কল্পবদ্ধ।
আজ এই সুযোগে আমি প্রত্যেক ব্যক্তি, সরকার, সংস্থা ও সমাজের প্রত্যেক শ্রেণীরপ্রতিনিধিকে এই সঙ্কল্প গ্রহণের অনুরোধ জানাব যে যক্ষ্মা নিরাময়কে সর্বশেষপ্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে যক্ষ্মামুক্ত ভারত গঠনে সক্রিয়ভূমিকা পালন করুন।
যক্ষ্মামুক্ত ভারতের সঙ্কল্প, যক্ষ্মামুক্ত পৃথিবীর সঙ্কল্প বাস্তবায়নেএগিয়ে আসুন।
এই বিরাট লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলার সঙ্কল্প গ্রহণের জন্য অনেক অনেকশুভেচ্ছা জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি। আপনাদের সবাইকে এই অধিবেশনে অংশগ্রহণেরজন্য আরেকবার অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই। ধন্যবাদ।