হিমাচল প্রদেশের রাজ্যপাল বঙ্গারু দত্তাত্রেয়জী, মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুরজী, সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাংজী, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহযোগী প্রহ্লাদ প্যাটেলজী, অনুরাগ ঠাকুরজী, নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান ডঃ রাজীব কুমারজী, সংযুক্ত আরব আমীরশাহীর ভারতে নিযুক্ত রাজদূত ডঃ আহমেদ আলবানা, শিল্প জগতের রথী-মহারথীগণ, এখানে উপস্থিত অন্যান্য সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ এবং আমার প্রিয় বন্ধুগণ,
ধরমশালায় গ্লোবাল ইনভেস্টর্স শীর্ষ সম্মেলন!!! এটা কল্পনা নয়, বাস্তব, অভূতপূর্ব, অসাধারণ –আপনাদের সকলকে অভিনন্দন। এটা হিমাচল প্রদেশের একটি বার্তা, গোটা দেশের জন্য, সমগ্র বিশ্বের জন্য যে, আমরা এখন কোমর বেঁধেছি।
আজ হিমাচল বলছে, হ্যাঁ, আমরা এখন মঞ্চে অবতীর্ণ!!! সেজন্য সবার আগে আমি হিমাচল প্রদেশের সরকার, জয়রামজী এবং তাঁর টিমকে মা জ্বালাজীর সান্নিধ্যে এই আয়োজনের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুগণ, আজ আমরা সবাই এমন স্থানে একত্রিত হয়েছি, যেখানকার প্রতিটি মৃত্তিকা কণায় শক্তির বাস। এখানে এসে একটি নতুন প্রাণশক্তি পাওয়া যায়। দেবী-দেবতা, ঋষি-তপস্বীরা এই স্থানকে দিব্যতায় পরিপূর্ণ করে তলার পাশাপাশি, প্রাকৃতিক সম্পন্নতার আশীর্বাদও দিয়েছেন। এই আবহে আপনাদের মতো সম্পদ সৃষ্টিকারীদের স্বাগত জানিয়ে আমার আনন্দ হচ্ছে।
ভাই ও বোনেরা, আগে এ ধরনের বিনিয়োগকারী শীর্ষ সম্মেলন দেশের কয়েকটি বিশেষ রাজ্যে হ’ত। এখানে অনেক বন্ধু রয়েছেন, যাঁরা আগের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত। কিন্তু এখন পরিস্থিতি যে বদলাচ্ছে, তার সাক্ষী হ’ল আজ হিমাচলের এই শহরে শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন। এখন বাণিজ্যকে আকর্ষণ করার জন্য, বিনিয়োগকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য রাজ্যগুলির মধ্যে একটি নতুন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।
বন্ধুগণ, কয়েক দশক আগে আমাদের দেশে এমন অবস্থা ছিল যে, কোন্ রাজ্য বেশি চ্যারিটি করবে, কারা বেশি ইনসেনটিভ দেবে, কারা কর মকুব করবে, কারা বিদ্যুতের বিল মকুব করবে, কারা সস্তায় জমি বিক্রি করবে – এই প্রতিযোগিতা চলতো। আমাদের অভিজ্ঞতা বলে এই ধরনের প্রতিযোগিতা থেকে তেমন কোনও ফলপ্রসূ পরিণাম পাওয়া যায়নি। তখন বিনিয়োগকারীরাও অপেক্ষা করতেন যে, কোন্ রাজ্য বেশি কর ছাড় দেবে। সেজন্য বিনিয়োগকারীরাও অনেক রাজ্যে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে টালবাহান করতেন। তাঁদের মনে হ’ত যে, ৫ শতাংশ ছাড় নিয়ে কেন যাব! ভবিষ্যতে ১০ কিংবা ১৫ শতাংশ ছাড় পেতে পারি।
কিন্তু বন্ধুগণ, আমি আনন্দিত যে, বিগত কয়েক বছরে এই পরিস্থিতিতে সার্বিক পরিবর্তন এসেছে। এখন রাজ্য সরকারগুলি বুঝতে পারছে যে, ছাড়ের প্রতিযোগিতায় নামলে রাজ্যের ভালো হবে না, শিল্পেরও ভালো হবে না।
বন্ধুগণ, বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রয়োজন হ’ল উপযুক্ত বাস্তু-ব্যবস্থা, ইন্সপেক্টর রাজ থেকে মুক্তি, প্রতিটি পদক্ষেপে সরকারের পার্মিট রাজের শিকার যেন না হতে হয়। এখন রাজ্য সরকারগুলি এই বাস্তু ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আসছে, ব্যবস্থা সরল করছে, আইনে পরিবর্তন আনছে, অপ্রয়োজনীয় আইন বাতিল করছে, রাজ্যগুলির মধ্যে এই স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা যত বৃদ্ধি পাবে, আমাদের শিল্পোদ্যোগও বিশ্ব মঞ্চে প্রতিযোগিতার জন্য আরও সামর্থ্যবান হয়ে উঠবে।
অন্যান্য শিল্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এর দ্বারা রাজ্যগুলি লাভবান হবে, রাজ্যবাসী তথা দেশবাসী উপকৃত হবেন এবং ভারত দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে।
বন্ধুগণ, শিল্প জগতও এ ধরনের স্বচ্ছ কালিমামুক্ত ব্যবস্থা পছন্দ করে। অপ্রয়োজনীয় নিয়ম-কানুন সরকারের অত্যাধিক নাকগলানো শিল্পের অগ্রগতিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, হিমাচল প্রদেশ সরকারও এই ভাবনা নিয়েই ইনসেন্টিভের পথে না হেঁটে সঠিক পথে কাজ করছে। এখানে সিঙ্গল উইন্ডো ক্লিয়ারেন্সের ব্যবস্থা, জমি প্রদানের স্বচ্ছ প্রক্রিয়া এবং ক্ষেত্র বিশেষে নির্দিষ্ট শিল্পোদ্যোগের নীতি – এই পদক্ষেপগুলির মাধ্যমে এখানকার বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশকে বাণিজ্য-বান্ধব করে তুলেছে।
বন্ধুগণ, এখানে শিল্প জগতের বড় বড় রথী-মহারথীরা এসেছেন। আপনারা সবাই ভালোভাবেই বোঝেন যে, কোম্পানির ভিন্ন ভিন্ন ইউনিট যখন ভালো ফল দেয়, তখন কোম্পানির মোট উৎপাদন নিজে থেকেই বৃদ্ধি পায়। সেজন্য যখন রাজ্যগুলিতে ভালো কিছু হয়, এর প্রভাব প্রত্যক্ষভাবে দেশের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করে। হিমাচলের মতো অনেক রাজ্যে এই সক্রিয় পরিবর্তনের জন্যই আজ বিশ্ব বাণিজ্যে ভারতের পরিচয় আগের তুলনায় অনেক বেশি বাণিজ্য-বান্ধব গন্তব্য হিসাবে গড়ে উঠেছে।
বন্ধুগণ, আজ ভারতের উন্নয়নে শকট নতুন ভাবনা, নতুন দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে চার চাকার ওপর এগিয়ে চলেছে। প্রথম চাকাটি হ’ল সমাজের, যা উচ্চাকাঙ্খী। দ্বিতীয় চাকাটি হ’ল সরকারের, যা নতুন ভারতের জন্য উৎসাহ-বর্ধক। তৃতীয় চাকাটি হ’ল শিল্পোদ্যোগের, যা সাহসী এবং চতুর্থ চাকা হ’ল জ্ঞানের, যা পরস্পরের সঙ্গে বিনিময়যোগ্য। এভাবেই এই চারটি চাকার ওপর আমরা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছি।
আজ সরকার যে সিদ্ধান্তই নিচ্ছে, তা ভারতের কল্যাণে এই দেশের সমাজের আকাঙ্খা অনুসারে নিচ্ছে। আজ সরকার গরিবের গৃহ, স্বাস্থ্য ও দক্ষতাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। পাশাপাশি, বিনিয়োগ এবং স্ব-রোজগারকে জোর দিচ্ছে।
আজ পরিষেবা প্রদানের গুরুত্ব যতটা, বাণিজ্যিক আবহ সংস্কারের গুরুত্বও ততটাই। ফলস্বরূপ, ২০১৪ থেকে ২০১৯ – এর মধ্যে ভারত বিশ্বে ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস র্যাঙ্কিং – এ ৭৯ ধাপ এগিয়ে এসেছে। এবারও আমরা বিশ্বের ১০টি শ্রেষ্ঠ প্রদর্শনকারীর অন্যতম। প্রত্যেক বছর আমরা একটি নতুন প্যারামিটারে দ্রুতগতিতে সংস্কার-সাধন করছি। গত বছর আমরা ১০টির মধ্যে ৬টি নির্দেশক ক্ষেত্রে উন্নতি করার সাফল্য পেয়েছি। এবার ইনসলভেন্সির ক্ষেত্রে ভারত অনেকটাই এগিয়ে গেছে। এই ক্যাটাগরিতে আমরা ৫০ ধাপেরও বেশি উন্নতি করেছি।
বন্ধুগণ, এই র্যাঙ্কিং – এ উন্নতি করার মানে শুধু পরিসংখ্যানের বদল নয়, এই র্যাঙ্কিং – এ উন্নতি করার মানে হ’ল – আমাদের সরকার তৃণমূল স্তরে গিয়ে মাটির প্রয়োজন বুঝে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, নীতি প্রণয়ন করছে। এখানে যাঁরা বসে আছেন, তাঁরা জানেন যে, আগে কিভাবে অনুমতির জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হ’ত কত দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হ’ত।
বন্ধুগণ, এটা শুধুই র্যাঙ্কিং – এর উন্নতি নয়, এটা ভারতে বাণিজ্য করার পদ্ধতিতে একটি বিপ্লব। আর এই বিপ্লবে বছর খানেকের মধ্যেই আমরা নতুন মাত্রা যোগ করেছি। আমরা অর্থনীতির ভিত্তিকে দুর্বল হতে দিইনি বলেই আজকের আন্তর্জাতিক পরিদৃশ্যে ভারত নিজস্ব ক্ষমতায় দাঁড়িয়ে আছে।
আমরা ম্যাক্রো ইকনোমিক্সের ক্ষেত্রে নিজেদের দায়বদ্ধতা নিরন্তর জারি রেখেছি এবং ফিসক্যাল ডিসিপ্লিনকে নিয়ম-নিষ্ঠভাবে পালন করছি। আজ যখন গ্লোবাল ইকনোমিক অ্যাক্টিভিটি ৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, ভারত সেখানে ৫ শতাংশেরও বেশি গতিতে এগিয়ে চলেছে। সম্প্রতি যে রিপোর্ট এসেছে, তা দেখে মনে হচ্ছে, ভারত আগামী মাসগুলিতে আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে।
বন্ধুগণ, আমাদের ইচ্ছাশক্তি সৎ ও সংবেদনশীল। আমাদের সিদ্ধান্ত দৃঢ় এবং ইচ্ছাশক্তিও। কেউ কল্পনাও করতে পারছিলেন না যে, ভারত কখনও জিএসটি চালু করবে। কিন্তু আমরা করে দেখিয়েছি। দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থায় এলে ভারতে কোম্পানিগুলির সামনে কোনও নিষ্ক্রমণ পথ ছিল না।
আজ ইনসলভেন্সি অ্যান্ড ব্যাঙ্করাপ্সি কোড (আইবিসি) শুধু বাস্তব নয়, প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ কোটি আটকে থাকা টাকা ফিরিয়ে আনার কারণ হয়ে উঠেছে। দেশে ব্যাঙ্কিং রিফর্মও অনেক বছর ধরে থেমে ছিল। এই লক্ষ্যেও আমাদের দ্রুতগতিতে প্রবল সাহসের সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। গতকাল সন্ধ্যাতেই আমরা দেশের মধ্যবিত্তদের কথা মাথায় রেখে ক্যাবিনেট বৈঠকে একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর ফলে, সাড়ে চার লক্ষেরও বেশি পরিবার বছর বছরের পর বছর ধরে অসম্পূর্ণ থাকা নিজেদের গৃহ নির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। আর এই দায়বদ্ধতা থেকেই এখন আমরা দেশকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি।
আমাদের সরকার সরকারি প্রক্রিয়াগুলির ডি-বটল নেকিং – জোর দিচ্ছে, আন্তঃর্বিভাগীয় সমন্বয় বাড়াচ্ছে, সময়সীমার মধ্যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আমাদের প্রচেষ্টা কর ব্যবস্থাকে প্রতিযোগিতামূলক ও স্বচ্ছ করে তোলা। এই প্রক্রিয়ায় কর্পোরেট ট্যাক্সকে যুক্ত করার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ ভারত বিশ্বে ন্যূনতম কর্পোরেট ট্যাক্স ব্যবস্থার অন্যতম দেশে। এ বছর অক্টোবরের পর যত নতুন দেশীয় কোম্পানি খুলেছে, তাদের জন্য সরকার কর্পোরেট ট্যাক্স কমিয়ে মাত্র ১৫ শতাংশ করে দিয়েছে।
বন্ধুগণ, গত মাসেই ই-অ্যাসেসমেন্ট স্কিম চালু হয়েছে। অর্থাৎ কর ব্যবস্থায় এখন হিউম্যান ইন্টারফেস ন্যূনতম করে দেওয়া হয়েছে। ফলে, স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে এবং কর সংক্রান্ত মামলাগুলি দ্রুত নিষ্পত্তি হবে।
বন্ধুগণ, ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের লক্ষ্য শুধু সরকারের নয়, এই লক্ষ্য দেশের প্রত্যেক রাজ্যের সহযোগিতার মাধ্যমেই পূরণ করা সম্ভব। আমাদের দেশে প্রত্যেক রাজ্যে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। প্রত্যেক রাজ্যের প্রতিটি জেলায় অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। রাজ্য সরকারগুলি এই সম্ভাবনাগুলিকে যত বেশি লাভজনক অবস্থাতে নিয়ে যেতে পারবে, আমাদের সরকার, শিল্প জগৎ, ক্ষুদ্র শিল্প এবং পরিষেবা ক্ষেত্রগুলি ততদ্রুত লাভবান হবে।
ভাই ও বোনেরা, সম্ভাবনা যখন নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়, তখন দক্ষতা বাড়ে। এই দক্ষতাই উন্নয়নের মূল অনুঘটক। অর্থাৎ জেলা, রাজ্য ও দেশের উন্নয়নের মধ্যে অভ্যন্তরীণ যোগ রয়েছে। আমি আপনাদের আরেকটি উদাহরণ দিতে চাই। এই উদাহরণে আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিং-ও আছে আবার সম্ভাবনাও আছে। আর হিমাচলের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজ আমরা পর্যটন ক্ষেত্রে যে র্যাঙ্কিং – এ পৌঁছেছি, তার দ্বারা হিমাচল প্রদেশে সরাসরি লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বন্ধুগণ, ২০১৩ সালে ভারত ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের ভ্রমণ ও পর্যটন প্রতিযোগিতামূলক সূচকে ৬৫ নম্বর স্থানে ছিল। আর আজ আমরা ৩৪ নম্বর স্থানে পৌঁছেছি। এই পরিবর্তন কিভাবে সম্ভব হয়েছে! পাঁচ বছর আগে ভারতে বছরে প্রায় ৭০-৭৫ লক্ষ বিদেশি পর্যটক আসতেন। গত বছর ১ কোটিরও বেশি বিদেশি পর্যটক ভারতে এসেছেন। এই বৃদ্ধি কিভাবে সম্ভব হয়েছে?
বন্ধুগণ, ২০১৪ সালে ভারতে পর্যটন ক্ষেত্র থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকা বিদেশি মুদ্রা উপার্জন করেছিল। গত বছর এই উপার্জন বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছে গেছে। এই পরিবর্তন কিভাবে এসেছে।
বন্ধুগণ, আমরা পর্যটন ক্ষেত্রে সম্ভাবনাকে অনুভব করেছি। ভ্রমণ ও পর্যটন ক্ষেত্রে নীতি পরিবর্তন করেছি। কয়েক ডজন নতুন দেশকে ই-ভিসার সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। ফলস্বরূপ, সম্পূর্ণ দৃশ্যটাই বদলে গেছে, র্যাঙ্কিং-ও বদলেছে।
বন্ধুগণ, আজ ভারতে পর্যটনকে একটি প্যাকেজের মতো করে প্রোমট করা হচ্ছে। প্রকৃতি, অভিযান পর্যটন, আধ্যাত্মিক পর্যটন, স্বাস্থ্য পর্যটন, পরিবেশ পর্যটনের মতো সবরকম পর্যটনে জোর দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে হিমাচল সম্ভাবনায় ভরপুর। আজ এখানে এত ভালো কর্মসূচির আয়োজন হয়েছে, সেজন্য কনফারেন্স পর্যটনের সম্ভাবনাও আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। আমরা যদি এই সম্ভাবনাকে বুঝতে পারি, তা হলে উন্নয়নে আর বেশি দেরী নেই।
বন্ধুগণ, এখানে আজ যে কফি টেবিল বুক প্রকাশিত হয়েছে, যে সিনেমা দেখানো হয়েছে – তা হিমাচলের সম্ভাবনাকে বিস্তারিত করেছে। আমার মনে আছে, যখন আমি সোলান যেতাম, তখন অনেক সাইনবোর্ড দেখতে পেতাম – মাশরুম সিটিতে আপনাকে স্বাগত জানাই। তেমন লাহৌল – স্পিতিতে আলু, কুলু-তে শল, কাংরার তৈলচিত্র বিখ্যাত। কিন্তু যাঁরা বাইরে থেকে আসেন, তাঁরা এগুলি সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন না। প্রত্যেক জেলার পরিচয় প্রদানকারী এই বিখ্যাত জিনিসগুলিকে কিভাবে প্রোমোট করা যেতে পারে, তা নিয়ে নতুনভাবে ভাবার প্রয়োজন রয়েছে। সেজন্য আমি এটাও বলবো যে, হিমাচলের সম্ভাবনা এখন অহল্যাসম।
এখন ভাবুন হিমাচলে আইআইটি আছে, আইআইআইটি আছে, এনআইটি আছে, সিআইপিইটি আছে, আইআইএফটি নির্মাণের কাজ চলছে। সেজন্য এই রাজ্যে প্রযুক্তি বিস্তারের সম্ভাবনা রয়েছে। এই রাজ্যের আপেল, ন্যাশপাতি, তালের মতো ফল ছাড়াও টমেটো, গুচ্ছি, মাশরুম এবং সিমলা লঙ্কার মতো সব্জির চাহিদা রয়েছে। সেজন্য এই রাজ্যে খাদ্য, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চাষ ও ঔষধি ক্ষেত্রের অত্যন্ত সম্ভাবনা রয়েছে।
বন্ধুগণ, এই রাজ্যে পারম্পরিকভাবে জৈব চাষ হয়। দেশের এমন কোনও ঔষধ কোম্পানি সম্ভবত নেই, যাদের হিমাচলে কোনও ঔষধ নির্মাণ কারখানা নেই। এক্ষেত্রে এই শিল্প সম্প্রসারণের সম্ভাবনাও প্রচুর।
আমি মনে করি, এই অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও হিমাচলে একটি অভাব ছিল। এই অভাবটি হ’ল – উন্নত পরিকাঠামো এবং সরকারই প্রক্রিয়ার সরলীকরণে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার এক জোট হয়ে এই অভাব পূরণের জন্য চেষ্টা করছে। যখন থেকে এখানে জয়রামজীর টিম কাজ করার সুযোগ পেয়েছে, তখন থেকে এই প্রক্রিয়া আরও দ্রুত হয়েছে।
আজ হিমাচলের পরিকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট অনেক প্রকল্প দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। জলশক্তির পাশাপাশি, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির বিকল্প উৎস থেকে শুরু করে সড়ক, রেল এবং আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। আমাকে বলা হয়েছে যে, উড়ান যোজনার মাধ্যমে হিমাচল প্রদেশে হেলিট্যাক্সি পরিষেবা শুরু হয়েছে, যা সিমলা ধরমশালা, কুলু এবং চন্ডীগড়ের মধ্যে নিয়মিত চলছে।
এছাড়া, কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে জাতীয় মহাসড়ক সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। রোহতাং সূড়ঙ্গের কাজ সম্পূর্ণ হলে লাহৌল স্পিতি থেকে শুরু করে লাদাখ পর্যন্ত উপকৃত হবে। তেমনই, নাঙ্গাল বাঁধ – তলওয়াড়া রেল লাইন, চন্ডীগড় – বদ্দী রেলপথ, ঊনা – হামিরপুর রেলপথ এবং ভানুপল্লী – বিলাসপুর – বেরি রেলপথের কাজ সম্পূর্ণ হলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা সংযোজন হবে। আগামী কয়েক বছরে দেশে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে দেশে ১০০ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমেও হিমাচল লাভবান হবে।
বন্ধুগণ, আজ প্রকৃত অর্থে হিমাচল ভারতের উন্নয়নযাত্রায় নতুন আলোকপাতের জন্য প্রস্তুত। এই বিশ্বাসের পেছনে হিমাচল সম্পর্কে আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। হিমাচল আজ বাণিজ্যের জন্য প্রতিটি জরুরি শর্ত পূরণে সক্ষম। বাণিজ্যের জন্য চাই শান্তি, যা সর্বদাই হিমাচলের শক্তি। বৈচিত্র্যকে মেনে নেওয়া সমাজ চাই, যা হিমাচলে সর্বদাই রয়েছে। এখানকার ভৌগোলিক এবং ভাষাগত বৈচিত্র্যও সুবিদিত। এই রাজ্যের মানুষ সবাই পরস্পরের কথ্যভাষা না বুঝলেও তাঁদের মধ্যে আন্তরিক সদ্ভাব দেখার মতো!
হিমাচল দেশের সেই রাজ্যগুলির অন্যতম, যেখানে শিক্ষার হার উন্নত। এই রাজ্যের কোণায় কোণায় এখন ব্যবসায়ীদের দেখা যায়। তাঁরা সরকারের অপেক্ষা করেন না, নিজেদের সম্পদ দিয়েই কাজ শুরু করে ফেলেন। এই রাজ্যের মানুষের মনে একটি স্বাভাবিক শিল্পোদ্যোগী ভাবনা রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা এর দ্বারা উপকৃত হন।
শুধু তাই নয়, দেশের নিরাপত্তা ক্ষেত্রে হিমাচল প্রদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই রাজ্যে এমন কোনও পরিবার নেই, যাঁদের কোনও সদস্য নিরাপত্তা বাহিনীতে কাজ করেন না। এই রাজ্যের যে কোনও গ্রামে গিয়ে বসলে বুঝতে পারবেন যে, সেই গ্রামে একটি মিনি ভারত রয়েছে। আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এই কথাগুলি বলছি। অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকের সংখ্যার নিরিখে হিমাচল প্রদেশের অনেক অভিজ্ঞ ও দক্ষ লোকবল রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রে এই প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ অনেক কাজে লাগতে পারে।
বন্ধুগণ, হিমাচলের এই জনবৈচিত্র্যের সম্ভাবনা আপনাদের বড় সম্পদ। এই রাজ্যের সরল নীতি অনেক বড় পরিবর্তনের মাধ্যম হয়ে উঠবে। আপনারা যখন এই রাজ্যের যুবসম্প্রদায়কে কাজ করার সুযোগ দেবেন, তাঁদের প্রতিভাকে কাজে লাগাবেন, তখন আপনাদের মুনাফা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে।
অবশেষে, আপনাদের সবাইকে আরেকবার এই শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি আজ এখানে অতিথি নই, আমাকে একরকম হিমাচলী বলা যেতে পারে, সেজন্য বাইরে থেকে যাঁরা এসেছেন, প্রত্যেকেই আমার অতিথি। আর আমি আপনাদেরকে আশ্বস্ত করতে পারি যে, হিমাচলের মাটিতে নিজেদের ভাগ্য পরীক্ষা করুন, হিমাচল আপনাদের আশীর্বাদ দিতে থাকবে, আপনারা ফুল্ললিত-প্রস্ফুটিত হবেন। অনেক অনেক উন্নতি করবেন। হিমাচল এগিয়ে যাবে, ভারত এগোবে, আপনারাও এগোবেন। এই বিশ্বাস নিয়ে আপনাদের সবাইকে আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানিয়ে রাজ্য সরকারকে এই সুন্দর আয়োজনের জন্য অনেক অনেক সাধুবাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য সম্পূর্ণ করছি।