মঞ্চে উপস্থিত আমার মন্ত্রীপরিষদের সহযোগী শ্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান জি, ড. হর্ষবর্ধন জি, প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চল থেকে এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত সকল মাননীয় ব্যক্তিবর্গ।
ভাই ও বোনেরা, ভবিষ্যতের ভারতের কল্যাণে সংকল্প নিয়ে কিভাবে বর্তমান ভারতে কাজ হচ্ছে, আজ আমরা সবাই তেমনি একটি কাজের সাক্ষী হতে চলেছি। পরবর্তী প্রজন্মের উপযোগী পরিকাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে আজকের এই কর্মসূচি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। নবম নিলাম ডাকের মাধ্যমে দেশের ১২৯টি জেলায় সিটি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক স্থাপন করার কাজ শুরু হল।তাছাড়া দশম নিলাম প্রক্রিয়ারও সূত্রপাত হল।
এই সূত্রপাত এজন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ যখন এই কাজ সম্পূর্ণ হবে, তার পরিণামও অনেক ব্যাপক হবে, বড় হবে। দশম নিলামির পর শুরু হওয়া কাজ যখন পূর্ণতার দিকে এগুবে ততদিনে দেশের চারশোটিরও বেশি জেলা সিটি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কের আওতায় এসে যাবে। আর আমাকে বলা হয়েছে যে দেশের প্রায় ৭০শতাংশ জনগণের জন্য এই পরিষেবার পথ খুলে যাবে। দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশের মানুষের জীবনকে সহজ করে তোলার ক্ষেত্রে এটি বড় ভূমিকা পালন করবে।
বন্ধুগণ, ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশের মাত্র ৬৬টি জেলা সিটি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছিল। আর আজ আমি যখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি, ইতিমধ্যেই দেশের ১৭৪টি জেলায় সিটি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। আগামী দুই-তিন বছরে চারশোরও বেশি জেলা সিটি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে।
এটা কোনও সামান্য পরিসংখ্যান নয়। আমাদের শহরগুলি বিগত চার বছরে গ্যাস ভিত্তিক অর্থনীতির দিকে কেমন জোর কদ্মে এগিয়েছে,এটা তারই প্রামাণ্য চিত্র তুলে ধরছে। ২০১৪ সালে দেশের প্রায় ২৫ লক্ষ বাড়িতে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সংযোগ ছিল। চার বছরে এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে! আজ যে শহরগুলিতে কাজ শুরু হয়েছে, এগুলির মাধ্যমে এই সংখ্যা দুই কোটিতে পৌঁছে যাঅয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তেমনি, ২৫বছর আগে দেশের তিনটি শহর দিল্লি, মুম্বাই এবং সুরাট – এই তিনটি শহরে প্রথম সিএনজি স্টেশন খুলেছিল। তখন থেকে ২০১৪-র মধ্যে দেশে মোট ৯৪৭টি সি.এন.জি স্টেশন কাজ করা শুরু করেছে। অর্থাৎ, গড়ে বছরে প্রায় ৪০টি করে সিএনজি স্টেশন খোলা হয়েছিল। এখন এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১,৪৭০-এরও বেশি হয়ে পড়েছে। এই গতিতে বৃদ্ধি পেলে আগামী এক দশকে দেশে মোট সিএনজি স্টেশনের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি হয়ে যাবে।
ভাই ও বোনেরা, কেন্দ্রীয় সরকারের চার বছরের আপ্রাণ চেষ্টায় এখন দেশে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যে সিটি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কের উন্নয়ন আগের তুলনায় আজ অনেক গুণ দ্রুত এগিয়ে চলতে পারে। এক্ষেত্রে উন্নয়নের প্রতিবন্ধক, ব্যবস্থার ঢিমেতেতাল, ডিস্ট্রিবিউটারদের বিভিন্ন সমস্যা আমরা এক এক করে দূর করার প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছি।
আমি যে সংস্কার, সম্পাদন ও রূপান্তরণের মন্ত্রের কথা বলি, সিটি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক তার বাস্তবায়নের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সরকার বিগত চার বছরে যে সমস্ত পদক্ষেপ নিয়েছে, যত সংস্কার করেছে, তা এক্ষেত্রে সম্পাদনকে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। আর, আমাদের রূপান্তরণের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার আবহ তৈরি করতে চলেছে।
বন্ধুগণ, ২০২২ সালে আমাদের স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ পূর্তি পালন করবে। আমরা ১৩০ কোটি দেশবাসী মিলেমিশে একটি উন্নত ভারত, নতুন ভারতের নির্মাণের কাজ করে চলেছি। একটি এমন ভারত যা আধুনিক প্রযুক্তি-নির্ভর এবং কালবাহ্য সমস্ত ব্যবস্থা মুক্ত। এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেশের শক্তি ক্ষেত্রের কায়াকল্প করে তোলা হচ্ছে।
এটা অত্যন্ত জরুরি কারণ, দেশে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক গতিবিধি শক্তির চাহিদাকে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। এজন্য সরকার গ্যাস-ভিত্তিক অর্থনীতির সমস্ত পর্যায়কে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। দেশে গ্যাস পরিকাঠামো শক্তিশালী করার জন্য এলএনজি টার্মিনালের সংখ্যা বৃদ্ধি, দেশব্যাপী গ্যাস গ্রিড এবং সিটি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক নিয়ে একযোগে কাজ করা হচ্ছে। তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের আমদানি ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পুরনো টার্মিনালগুলির আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে। নতুন এলএনজি টার্মিনালও নির্মাণ করা হচ্ছে।
১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে তামিলনাড়ুর এন্নোরে এবং ওড়িশার ধামরায় নতুন এলএনজি টার্মিনালের কাজ শেষ পর্যায়ে। এভাবে দেশে যত বেশি সম্ভব জেলায় প্রাকৃতিক পৌঁছনো যায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে প্রাকৃতিক গ্যাস গ্রিডের ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে।
এর মাধ্যমে জগদীশপুর-হলদিয়া এবং বোকারো-ধামরা পাইপলাইন প্রকল্পের কাজ চলছে। পাশাপাশি, উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যান্য ক্ষেত্রকে এই গ্যাস গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য এই প্রকল্পের বিস্তার বারাউনি থেকে গুয়াহাটি পর্যন্ত করা হচ্ছে। এই প্রকল্পগুলিতে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হবে।
এই প্রকল্পগুলি গোরক্ষপুর, বারাউনি এবং সিন্দ্রি – এই তিনটি সার কারখানাকেও নতুন প্রাণশক্তি পেতে সাহায্য করবে। সিকিম সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রতিটি রাজ্যকে এই গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করতে ৯,২০০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে ‘ইন্দ্রধনুষ গ্যাস গ্রিড’ নামক একটি যৌথ উদ্যোগ গড়ে তোলা হয়েছে।
বন্ধুগণ, যে বিনিয়োগকারীরা এক্ষেত্রে বিনিয়োগ করছেন, তাঁদের স্বার্থরক্ষার দিকেও নজর রাখা হচ্ছে। অন্তর্দেশীয় গ্যাসেরমূল্যকে আন্তর্জাতিক গ্যাস বাজারের সঙ্গে লিঙ্ক করার কাজ আগেই করা হয়েছে। অন্তর্দেশীয় স্তরে গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কোম্পানিগুলিকে দরাদরি এবং মূল্য নির্ধারণের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।
গ্যাসের মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য, গ্যাস গ্রিড সঞ্চালনের জন্য একটি ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট ট্র্যান্সপোর্ট সিস্টেম অপারেটর’-ও গড়ে তোলা হয়েছে। পাশাপাশি দেশে মুক্ত গ্যাস-বাজারের আবহ গড়ে তুলতে এই ক্ষেত্রের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সরকার ‘গ্যাস ট্রেডিং এক্সচেঞ্জ’ গড়ে তোলার কাজও করছে।
ভাই ও বোনেরা, এই প্রযুক্তিগত পর্যায়সমূহ এবং পরিসংখ্যানই আমাদের জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কারণ, এই প্রকল্পগুলির ইতিবাচক প্রভাব দেশে সামাজিক, আর্থিক এবং পরিবেশ-বান্ধব পরিবর্তন আনবে।
বন্ধুগণ, যখন কোথাও নতুন কোন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, তখন তার চারপাশের একটা বড় অঞ্চলে সামগ্রিক পরিবর্তন আসে। যেমন, কোন অঞ্চলে যদি একটি বড় হাসপাতাল খোলে, তার চারপাশে দেখতে দেখতে অনেক ওষুধের দোকান খুলবে। সেইসঙ্গে, ধাবা, রেস্তোরাঁ, চায়ের দোকান, ধর্মশালা, ছোট ছোট হোটেল, অটো ও ট্যাক্সি স্ট্যান্ড চালু হয়ে যাবে।
এভাবে যখন কোন শহরে গ্যাস পৌঁছয়, তখনও একটি নতুন সার্বিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। ঐ শহরে গ্যাস-ভিত্তিক অনেক ছোট-বড় শিল্প স্থাপন হয়। পাইপের মাধ্যমে সরাসরি মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গ্যাস পৌঁছলে জনগণের জীবনধারণ অনেক সহজ হয়। সেই পাইপ পাতার জন্য, সিএনজি বা পিএনজি নেটওয়ার্ক বিস্তারের জন্য হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ নবীন প্রজন্মের মানুষের কর্মসংস্থান হয়। ঐ শহরের অটোরিক্সা, ট্যাক্সি এবং অন্যান্য যানবাহনের জ্বালানির একটি আধুনিক বিকল্প গড়ে ওঠে। সেজন্য এখন দেশে যে গ্যাস পরিকাঠামো গড়ে তোলার প্রকল্প চালু রয়েছে, সেগুলি বাস্তবায়িত হলে দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
আজ নতুন নিলামের মাধ্যমে যে কাজ শুরু হচ্ছে, এতে সরাসরি ন্যূনতম ৩ লক্ষ নবীন প্রজন্মের মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তাছাড়া, এর চারপাশে যে ব্যবস্থাগুলি গড়ে উঠবে সেখানেও লক্ষ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে, বিশেষ করে, পূর্ব ভারত এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি এর দ্বারা অনেক বেশি উপকৃত হবে। একথা বলার উদ্দেশ্য হল, গ্যাস-ভিত্তিক ব্যবস্থাগুলি শুধু শিল্প নয়, সেই জেলাগুলির মানুষের জীবনধারণের মানও বদলে দেবে।
আগামী কয়েক বছরে ভারতের হাজার হাজার শহরে আপনারা এই পরিবর্তন দেখতে পাবেন। নিজেরাও এর অংশীদার হয়ে উঠবেন। আমরা নিজেদেরকে এক্ষেত্রে অত্যন্ত ভাগ্যবান বলে মনে করতে পারি, কারণ, আমাদের জীবৎকালেই এত বড় পরিবর্তন হতে দেখে যাচ্ছি। অন্যথা, আমার সেই সময়ের কথাও মনে আছে যখন দেশের সাধারণ মানুষ রান্নাঘরে গ্যাস সংযোগের জন্য সাংসদ, বিধায়কদের বাড়ির বাইরে সুপারিশের চিঠি লেখানোর জন্য লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন। মাত্র সাড়ে চার বছরে দেশ সেই পরিস্থিতি থেকে অনেক দূর এগিয়ে এসেছে।
আমি যদি বলি যে ২০১৪ সালে দেশের মানুষের শুধু সরকার পরিবর্তন করেনি, সরকারের কর্মশৈলী, কর্মসংস্কৃতি এবং প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের পদ্ধতি বদলে দিয়েছে, তাহলে ভুল হবে না।
আজ এই উপলক্ষে আপনাদের এক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত আরেকটি উদাহরণ দিচ্ছি। আমরা গ্যাস-ভিত্তিক অর্থনীতির কথা বলি। আমাদের এটা ভোলা উচিৎ নয় যে দেশে এলপিজি সংযোগ দেওয়ার কাজ ১৯৫৫ সালে শুরু হয়েছিল। তারপর থেকে ২০১৪ পর্যন্ত দেশে ১৩ কোটি এলপিজি সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। অর্থাৎ, ৬০ বছরে ১৩ কোটি সংযোগ। এই পরিসংখ্যান যদি আপনারা মনে রাখেন তাহলে বুঝতে পারবেন কিরকম পরিবর্তন এসেছে। একই ব্যবস্থা, একই আধিকারিক ও কর্মীরা এই পরিবর্তনের ফলে বিগত সাড়ে চার বছরে প্রায় ১২ কোটি এলপিজি সংযোগের ব্যবস্থা করেছে।
৬০ বছরে ১৩ কোটি, আর সাড়ে চার বছরে ১৩ কোটি। আগের গতিতে চলতে থাকলে আমাদের দেশে সব পরিবারে গ্যাস সংযোগ পেতে দুই প্রজন্ম লেগে যেত। অন্তর্দেশীয় গ্যাস কভারেজ ২০১৪ সালের আগে মাত্র ৫৫ শতাংশ ছিল। এখন সেটা বেড়ে প্রায় ৯০ শতাংশ হয়েছে। নিশ্চিতভাবেই এতে ‘উজ্জ্বলা যোজনা’র একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। ২০১৬-র ১লা মে চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ‘উজ্জ্বলা যোজনা’র মাধ্যমে প্রায় ৬ কোটি মহিলাকে বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। এই প্রকল্প দেশের গ্রামগুলিতে বসবাসকারী মানুষের জীবনশৈলী বদলে দিয়েছে।
এই নিলাম প্রক্রিয়ার মধ্যে, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের মাঝে আমাদের সেই মহিলাদের সম্পর্কে ভাবা উচিৎ যারা এতদিন কাঠের উনুনে চোখ লাল করে রান্না করতেন! নিজের স্বাস্থ্যের কথা না ভেবে পরিবারের ক্ষুধা নিবারণের জন্য দীর্ঘ সময় রান্নাঘরে ধোঁয়ার মধ্যে কাটাতেন। সেই মহিলারা গ্যাস-ভিত্তিক অর্থনীতির মানে না বুঝলেও দেশের গ্যাস-ভিত্তিক অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ তাঁদের জীবনকে অবশ্যই বদলে দিয়েছে।
ভাই ও বোনেরা, একটু আগেই আমি আপনাদের পরিবেশ দূষণ নিয়ে বলছিলাম। যে গ্যাস-ভিত্তিক অর্থনীতির দিকে আমরা এগিয়ে চলেছি তার একটা বড় এবং উন্নত প্রভাব আমাদের পরিবেশকে নির্মলতর করবে। যখন দেশে কয়েক হাজার নতুন সিএনজি স্টেশন হবে, শিল্প কারখানাগুলিতে বাধাহীনভাবে গ্যাসের যোগান সুনিশ্চিত করা যাবে, ট্যাক্সি, অটো ও অন্যান্য যানবাহনে গ্যাস ভরার জন্য অধিকাংশ জেলায় সহজেই সিএনজি পাওয়া যাবে, তখন পরিবেশ দূষণও অনেক কমে যাবে। এই সাফল্য ‘কপ-২১’-এর প্রতি ভারতের দায়বদ্ধতাকে আরও শক্তিশালী করবে। বিশ্ব পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে ভারতের অবদানকে আরও শক্তিশালী করবে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে এক্ষেত্রে ভারতের নেতৃত্বের গৌরব আরও বৃদ্ধি পাবে।
বন্ধুগণ, নির্মল শক্তির জন্য সরকারের প্রচেষ্টার বিস্তার অত্যন্ত ব্যাপক। আমাদের কৃষি ব্যবস্থায় যে বর্জ্য নিষ্কাশিত হয়, সেই জৈব বর্জ্য থেকে কম্প্রেস্ড বায়ো-গ্যাস উৎপাদনের লক্ষ্যেও সরকার একটি অভিযান শুরু করেছে। এই অভিযানের মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে দেশে প্রায় পাঁচ হাজার কম্প্রেস্ড বায়ো-গ্যাস প্রকল্প স্থাপন করা হবে।
এই প্রকল্পগুলি কৃষি অবশিষ্টাংশ জ্বালিয়ে কৃষকরা প্রতি বছর যে পরিবেশ দূষণ করে, সেই সমস্যার সমাধানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি, কৃষকদের আয় বৃদ্ধিতেও সহায়ক হবে। তাছাড়া, জৈব বর্জ্যকে জৈব জ্বালানিতে রূপান্তরণের জন্য দশ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে ১২টি আধুনিক জৈব তেল শোধনাগার গড়ে তোলার প্রকল্পও চালু হয়েছে। ইথানল ব্লেন্ডিং নিয়ে সরকার নীতিগত পরিবর্তন আনার ফলে ইথানল ব্লেন্ডিং-এর ক্ষেত্রেও রেকর্ড বৃদ্ধি হয়েছে।
২০১৪ সালে যখন দেশে প্রায় ১৪ কোটি লিটার ইথানল উৎপন্ন হত, বিগত চার বছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে চারগুণ হয়েছে। সরকারের লক্ষ্য এখন এই ইথানল ব্লেন্ডিং-কে ১০ শতাংশ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার। আগামী বছরের মধ্যে ইথানল ব্লেন্ডিং-এর পরিমাণ ২০১৪-র তুলনায় প্রায় আটগুণ হবে।
নির্মল শক্তি থেকে নির্মল পরিবেশের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে সরকার বিএস-৪ জ্বালানি থেকে সরাসরি বিএস-৬ জ্বালানির দিকে অগ্রসর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। টেলি-যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমরা টু-জি থেকে ফোর-জি, ফোর-জি থেকে ফাইভ-জি, কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা বিএস-৪ থেকে সরাসরি বিএস-৬-এ পৌঁছে গিয়েছি। তাছাড়া, এলইডি বাল্বের মূল্য কম হওয়ার ফলে দেশে প্রায় ৩২ কোটি এলইডি বাল্ব বিতরণের ফলে ৩ কোটি টনের থেকেও বেশি কার্বন-ডাইঅক্সাইড গ্যাসের নিষ্ক্রমণ হ্রাস পেয়েছে।
সরকার, ২০২২ সালের মধ্যে দেশে ১৭৫ গিগাওয়াট পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। এর মাধ্যমে ন্যূনতম ১০০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ সৌরশক্তি থেকে উৎপাদন করা হবে। আগামী চার বছরে সরকার কৃষকদের ২৮ লক্ষেরও বেশি সৌর-পাম্প বিতরণের অভিযান শুরু করেছে। দেশে গ্যাস-ভিত্তিক পরিকাঠামো বিকাশের পাশাপাশি সমস্ত প্রচেষ্টা ভারতের আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি পূরণে সহায়ক হবে।
একদিকে ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে নিজেদের কার্বন বিকিরণজাত দূষণকে ৩৩ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ কমিয়ে আনবে। আর দেশের ন্যূনতম ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎস থেকে আহরণ করবে।
ভাই ও বোনেরা, গ্যাস-ভিত্তিক অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন লক্ষ্য পূরণে কিংবা নির্মল শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্য পূরণের জন্য ভারত দায়বদ্ধ। আমরা শুধু নিজেদের জন্য নয়, সমগ্র মানবতার জন্য, আগামী প্রজন্মের জন্য এই সঙ্কল্প গ্রহণ করেছি এবং তা পূরণ করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
আমি আরেকবার আপনাদের সবাইকে, যে শহরগুলিতে সিটি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কের কাজ শুরু হচ্ছে, সেখানকার মানুষদের, দশম নিলামের সঙ্গে প্রতিনিধিদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার বক্তব্য সম্পূর্ণ করছি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।