শ্রী বিনীত জৈন,

ভারত ও বিদেশ থেকে আগত বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ –

আপনাদের সবাইকে সুপ্রভাত জানাই।

গ্লোবাল বিজনেস সামিটে আবার উপস্থিত থাকতে পেরে আমি আনন্দিত।

প্রথমেই একটি ব্যবসায়িক শীর্ষ বৈঠকের মূল সুর হিসাবে ‘সামাজিক’ শব্দটি ব্যবহারের জন্য আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই।

এছাড়া, আপনাদের এই বৈঠকের মূল সুরের দ্বিতীয় শব্দ হিসেবে ‘ধারাবাহিক উন্নয়ন’কে বেছে নেওয়া এবং কিভাবে উন্নয়নকে ধারাবাহিক করে তোলার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে আপনাদের আলোচনার জন্য আমি অত্যন্ত আনন্দিত।

অন্যদিকে, বৈঠকের মূল সুরের তৃতীয় শব্দ হিসেবে যখন আপনারা ‘কর্মক্ষমতার পরিধি বৃদ্ধি’র কথা বলেন, তখন আমার দৃঢ় প্রতীতি হয় যে, আপনারা প্রকৃতই ভারতের জন্য সমস্যা সমাধানের বিষয়ে কথা বলছেন।

বন্ধুগণ,

২০১৩ সালের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ২০১৪ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত দেশকে কোন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়াতে হয়েছিল তা আপনাদের থেকে আর ভালো কে জানে! ব্যাপক হারে মুদ্রাস্ফীতি দেশের প্রতিটি পরিবারকে আঘাত করছিল। চলতি খাতে ক্রমবর্ধমান ঘাটতি এবং উচ্চহারে রাজকোষ ঘাটতির ফলে দেশের ব্যাপক স্তরে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা আঘাত করতে উদ্যত হয়েছিল।

এই সব সূচকগুলি এক অন্ধকারাচ্ছন্ন ভবিষ্যতের ইঙ্গিত করছিল।

সমগ্র দেশ সম্পূর্ণ নীতি-পঙ্গুতার মুখে দাঁড়িয়েছিল।

এর ফলে, আমাদের অর্থনীতি যেখানে পৌঁছনো দরকার, সেখানে পৌঁছতে পারছিল না।

আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী ভঙ্গুর পাঁচটি দেশ গোষ্ঠীর এই সদস্যরা অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছিল।

সর্বত্র এক ধরণের আত্মসমর্পণের ধারণা যেন পেয়ে বসেছিল।

বন্ধুগণ,

এরকম এক পটভূমিকায় আমাদের সরকার দেশের মানুষের সেবা করার ব্রত নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল এবং আজ দেশের পরিস্থিতিতে সুস্পষ্ট পরিবর্তন নজরে পড়ছে।

২০১৪ সালের পর হতাশার জায়গা নিয়েছে এক নতুন আশা।

প্রতিবন্ধকতার জায়গা নিয়েছে আশাবাদ।

এবং

বিভিন্ন ইস্যুর পরিবর্তে এসেছে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ।

২০১৪ সাল থেকে ভারত প্রায় সমস্ত আন্তর্জাতিক সূচকের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি ঘটিয়েছে।

এথেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, ভারতে পরিবর্তন সূচিত হচ্ছে এবং ভারত সম্বন্ধে বিশ্বের ধারণাতেও পরিবর্তন এসেছে।

আমি জানি, কিছু মানুষ আছেন যাঁরা এই দ্রুত উন্নয়ন পছন্দ করছেন না।

তাঁদের বক্তব্য হচ্ছে, বিভিন্ন সূচকে ভারতের অবস্থানের উন্নতি আসলে কাগজে-কলমে উন্নতির কথা বলে, কিন্তু বাস্তবে কোন কিছুই পরিবর্তন হয়নি।

আমার মনে হয়, এটা সত্যের অপলাপ।

বিভিন্ন সূচকে ভারতের অবস্থানকে সাধারণত উন্নতির বিলম্বিত সংকেত হিসাবে ধরা হয়।

পরিবর্তনটা প্রথম হয় বাস্তবে এবং কিছু সময় পর সূচকের অবস্থানে তার প্রতিফলন ঘটে।

এই ‘সহজে ব্যবসার সুবিধা’র সূচকের কথাই ধরা যাক।

আমাদের অবস্থান গত চার বছরে বিশ্ব সূচকে ১৪২ থেকে উঠে ৭৭ হয়েছে, যা এক ঐতিহাসিক ঘটনা।

কিন্তু সূচকে এই পরিবর্তনের আগেই, বাস্তবে পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে।

বর্তমানে ব্যবসা শুরু করার জন্য নির্মাণ কার্যের অনুমতি দেওয়া হয় দ্রুততার সঙ্গে। এছাড়া, বিদ্যুতের সংযোগ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে অনুমোদনও আসে দ্রুততার সঙ্গে।

এমনকি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য আইন মেনে চলার সুবিধা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।

বর্তমানে ৪০ লক্ষ টাকার লেনদেন পর্যন্ত কোন ব্যবসার জন্য জিএসটি-তে নথিভুক্ত করার প্রয়োজন হয় না।

বর্তমানে ৪০ লক্ষ টাকা লেনদেন পর্যন্ত কোন ব্যবসার জন্য আয়কর দিতে হয় না।

বর্তমানে ১.৫ কোটি টাকা পর্যন্ত লেনদেনযুক্ত যে কোন ব্যবসায় ‘কম্পোজিট স্কিম’-এর জন্য যোগ্যতা অর্জন করে এবং অতি সামান্য কর দিতে হয়।

একইভাবে, বিশ্বব্যাপী পর্যটনে প্রতিযোগিতার সূচকের ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান ২০১৩ সালের ৬৫ থেকে ২০১৭-য় ৪০ হয়েছে।

ভারতে বিদেশি পর্যটক আগমনের সংখ্যা প্রায় ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। অনুমোদিত হোটেলের সংখ্যাও প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

পর্যটন ক্ষেত্র থেকে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের পরিমাণও ২০১৩-১৭-র মধ্যে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

অনুরূপভাবে, বিশ্বব্যাপী উদ্ভাবন সূচকেও ভারতের অবস্থান ২০১৪ সালের ৭৬ থেকে ২০১৮ সালে ৫৭ হয়েছে।

উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে অগ্রগতি, এর মাধ্যমে প্রতীয়মান হচ্ছে।

সংস্কৃতি ক্ষেত্রেও উন্নয়ন চোখে পড়ছে।

দেশে পেটেন্ট এবং ট্রেডমার্কের জন্য আবেদনের সংখ্যাও বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বন্ধুগণ,

এইসব পরিবর্তন আসলে এক নতুন শৈলীর প্রশাসনের জন্যই সম্ভব হচ্ছে এবং এগুলি নানাভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে।

২০১৪ সাল থেকে পরিবর্তনের এক আকর্ষণীয় নমুনা আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই।

আমরা বিভিন্ন ধরণের প্রতিযোগিতা দেখতে পাচ্ছি।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকের মধ্যে প্রতিযোগিতা।

রাজ্যগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা।

উন্নয়নের জন্য প্রতিযোগিতা।

লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রতিযোগিতা।

আজ ভারত প্রথমে ১০০ শতাংশ পরিচ্ছন্নতার লক্ষ্য অর্জন করবে, নাকি ১০০ শতাংশ বৈদ্যুতিকীকরণের লক্ষ্য অর্জন করবে, তাই নিয়ে প্রতিযোগিতা।

প্রথমে সমস্ত গ্রাম ও জনপদে সড়ক সংযোগ স্থাপিত হবে, নাকি সমস্ত পরিবারে গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হবে, সে বিষয়ে প্রতিযোগিতা।

কোন রাজ্য কত বেশি লগ্নি আকর্ষণ করবে তাই নিয়ে প্রতিযোগিতা।

কোন রাজ্য দরিদ্র মানুষের জন্য দ্রুতগতিতে কত বেশি সংখ্যক গৃহ নির্মাণ করবে তাই নিয়ে প্রতিযোগিতা।

কোন উন্নয়নকামী জেলা দ্রুতগতিতে উন্নতির লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে তাই নিয়ে প্রতিযোগিতা।

২০১৪ সালের আগে আমরা এক ধরণের প্রতিযোগিতার কথা শুনতাম। তবে, সেই প্রতিযোগিতা ছিল অন্যরকম।

মন্ত্রকগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা।

ব্যক্তির মধ্যে প্রতিযোগিতা।

দুর্নীতি নিয়ে প্রতিযোগিতা।

কাজে বিলম্ব নিয়ে প্রতিযোগিতা।

কে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি করতে পারবে, তাই নিয়ে প্রতিযোগিতা।

কে দ্রুততম গতিতে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে, তাই নিয়ে প্রতিযোগিতা।

কে সবচেয়ে অভিনব কায়দায় দুর্নীতি করতে পারবে, তাই নিয়ে প্রতিযোগিতা।

কে কয়লা কিংবা স্পেকট্রামের নিলাম থেকে টাকা কামাতে পারবে, তাই নিয়ে প্রতিযোগিতা।

কমনওয়েল্‌থ গেম্‌স থেকে বেশি টাকা পাওয়া যাবে, নাকি প্রতিরক্ষা চুক্তি থেকে বেশি টাকা কামানো যাবে, তাই নিয়ে প্রতিযোগিতা।

আমরা এসব দেখেছি এবং এটাও জেনেছি, এই ধরণের প্রতিযোগিতায় কারা যুক্ত ছিল।

আমি কোন ধরণের প্রতিযোগিতা আপনারা পছন্দ করবেন, তা স্থির করার ভার আপনাদের হাতেই ছেড়ে দিতে চাই।

বন্ধুগণ,

দশকের পর দশক ধরে এমন কথা বলা হত যে কিছু বিষয় ভারতে করা একেবারেই অসম্ভব।

২০১৪ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের দেশ যে উন্নতি অর্জন করেছে, তা থেকে আমার দৃঢ় প্রতীতি হয় যে, ১৩০ কোটি ভারতবাসীর এই দেশে কোন কিছুই অসম্ভব নয়।

অসম্ভব হল সম্ভব।

এটা বলা হত যে ভারতকে পরিচ্ছন্ন করে তোলা অসম্ভব, কিন্তু ভারতের মানুষ এই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলছেন।

এটা বলা হত, ভারতে দুর্নীতিমুক্ত সরকার চালানো অসম্ভব। কিন্তু ভারতের মানুষ এই অসম্ভবকেও সম্ভব করে তুলছেন।

এটাও বলা হত যে, মানুষকে তাঁদের ন্যায্য পাওনা দেওয়ার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্র থেকে দুর্নীতি দূর করাও অসম্ভব। কিন্তু ভারতের মানুষ তাও সম্ভব করে তুলেছে।

দরিদ্র মানুষের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার অসম্ভব বলে একসময়ে মনে করা হত। কিন্তু ভারতের মানুষ সেই অসম্ভবকেও সম্ভব করেছে।

এক সময়ে এটা বলা হত যে নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিজস্ব ক্ষমতা প্রয়োগ এবং খামখেয়ালিপনা দূর করা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু ভারতের মানুষ এই অসম্ভবকেও সম্ভব করেছে।

এটা বলা হত, ভারতে অর্থনৈতিক সংস্কার অসম্ভব। কিন্তু মানুষ তাও সম্ভব করেছে।

এটা বলা হত, সরকার একইসঙ্গে আর্থিক বৃদ্ধি এবং দরিদ্র মানুষদের পক্ষে থাকতে পারে না। কিন্তু মানুষ এই অসম্ভবকেও সম্ভব করেছে।

আমাকে এটাও বলা হয়েছে যে, এরকম এক ধারণা আছে, উন্নয়নশীল অর্থনীতি মুদ্রাস্ফীতির সমস্যা এড়িয়ে কোনদিন দীর্ঘ সময়ের জন্য উচ্চতর হারে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারে না।

১৯৯১ সালের পর, অর্থাৎ, উদারীকরণ-পরবর্তী সময়ে আমাদের দেশে প্রায় সব সরকারকেই এই সমস্যার মুখোমুখী দাঁড়াতে হয়েছে – যাকে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, স্বল্প সময়ের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির দরুণ অর্থনীতির ‘তেতে ওঠা’।

এর ফলেই, আমরা কখনই সুষম ও উচ্চহারে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারিনি।

আপনাদের হয়তো মনে থাকতে পারে যে, ১৯৯১-৯৬ পর্যন্ত আমাদের সরকার চলাকালীন অর্থনৈতিক বৃদ্ধির গড় হার ছিল ৫ শতাংশ। কিন্তু একইসঙ্গে, মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ১০ শতাংশেরও বেশি।

২০০৯-১৪, অর্থাৎ, আমাদের সরকার গঠনের অব্যবহিত আগেই দেশে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির গড় হার ছিল ৬.৫ শতাংশ। কিন্তু গড় মুদ্রাস্ফীতির হার দুই অঙ্ক ছাড়িয়ে যেত।

বন্ধুগণ,

২০১৪-১৯ পর্যন্ত দেশে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির গড় হার দাঁড়িয়েছে ৭.৪ শতাংশ এবং মুদ্রাস্ফীতির গড় হার দাঁড়িয়েছে ৪.৫ শতাংশেরও কম।

ভারতীয় অর্থনীতির উদারীকরণ পর্বের পর, এটাই হবে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির গড় হারের সর্বোচ্চ মান এবং যে কোন সরকারের আমলে মুদ্রাস্ফীতির সর্বনিম্ন হার।

এইসব পরিবর্তন এবং সংস্কারের ফলে আমাদের অর্থনীতি এক নতুন রূপান্তরের পথে এগিয়ে চলেছে।

ভারতীয় অর্থনীতি তার আর্থিক সম্পদ প্রসারিত করতে সক্ষম হয়েছে।

এখন আর ভারতের অর্থনীতি লগ্নির প্রয়োজনে ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ঋণের ওপর নির্ভরশীল নয়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, পুঁজি বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের কথা।

২০১১-১২ থেকে ২০১৩-১৪ – এই সময়কালে, অর্থাৎ, বর্তমান সরকারের তিন বছর আগে,

ইক্যুইটির মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থের পরিমাণ ছিল বছরে প্রায় ১৪,০০০ কোটি টাকা।

গত চার বছরে এই ক্ষেত্রে সংগৃহীত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে বছরে ৪৩,০০০ কোটি টাকা।

এই পরিমাণ আগের থেকে তিনগুণেরও বেশি।

২০১১-১৪ পর্যন্ত ‘বিকল্প লগ্নি তহবিল’–এর মাধ্যমে যে অর্থ বাজার থেকে সংগৃহীত হয়েছে, তার পরিমাণ ছিল ৪,০০০ কোটি টাকারও কম।

আমাদের সরকার অর্থনীতিতে পুঁজি সংগ্রহের নতুন এই উৎসকে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।

এখন আপনারা তার সুফল দেখতে পাচ্ছেন।

২০১৪-১৮ পর্যন্ত চার বছরে ‘বিকল্প লগ্নি তহবিল’–এর মাধ্যমে আমাদের দেশে মোট সংগৃহীত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮১,০০০ কোটি টাকা।

যা প্রায় আগের থেকে ২০ গুণের সমতুল।

অনুরূপভাবে, আমরা যদি কর্পোরেট বন্ডের প্রাইভেট প্লেসমেন্টের কথা ভাবি,

তাহলে দেখা যাবে, ২০১১-১৪ সালের মধ্যে এই খাতে সংগৃহীত অর্থের গড় পরিমাণ ছিল প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা, অর্থাৎ, প্রায় ৪,০০০ কোটি ডলারের সমতুল।

বর্তমানে এই ক্ষেত্রে গত চার বছরে সংগৃহীত অর্থের গড় পরিমাণ ৫ লক্ষ ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে, যা প্রায় ৭,৫০০ কোটি ডলারের সমতুল।

এক্ষেত্রে আগের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটেছে।

এসব কিছু থেকেই ভারতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে আস্থার পরিবেশের বিষয়টি বোঝা যায়।

বর্তমানে শুধু এই আস্থার পরিবেশ যে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে তাই নয়, বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রেও এই আস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

ভারতের ওপর আস্থার এই পরিবেশ অব্যাহত আছে। আগেকার দিনে শুধুমাত্র নির্বাচন-পূর্ববর্তী সময়ে এই প্রবণতা দেখা যেত।

গত চার বছরে আমাদের দেশে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২০১৪ সালের আগের সাত বছরের সমান।

এইসব কিছু অর্জন করতে ভারতকে রূপান্তরের জন্য সংস্কারের প্রয়োজন।

দেউলিয়া বিধি, জিএসটি, রিয়েল এস্টেট আইন-এর মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের ফলে আমাদের দেশে উচ্চতর হারে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির এক জোরদার ভিত গড়ে উঠেছে।

চার বছর আগে কে বিশ্বাস করত যে ঋণ খেলাপি ব্যক্তি বা সংস্থা প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা (প্রায় ৪,০০০ কোটি ডলার) আর্থিক ঋণদাতাদের কাছে ফিরিয়ে দেবে।

দেউলিয়া বিধির প্রত্যক্ষ প্রভাবেই এই ঘটনা ঘটেছে।

এর ফলে, আরও সুদক্ষভাবে আর্থিক সহায়সম্পদ বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ করার সুবিধা হবে।

আমরা যখন অর্থনীতির পাইপলাইনের কাজের দিকে নজর দিয়েছি, তখন মনে রাখতে হবে, বহু বছরের পর বছর ধরে এই কাজটি উপেক্ষিত থেকেছে। তাই, আমরা ‘ধীরে চলো, কাজ চলছে’র মতো সাবধানতা সূচক বোর্ড না লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

আমাদের দেশের সমাজের বৃহত্তর অংশের কল্যাণের লক্ষ্যে আমরা এইসব সংস্কারের কাজ একটুও না থেমে চালিয়েছি।

বন্ধুগণ,

ভারত ১৩০ কোটি মানুষের আশার দেশ এবং এ দেশের উন্নয়নের জন্য কেবলমাত্র একটি দৃষ্টিভঙ্গি কখনই সম্ভব নয়।

নতুন ভারতের জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সমাজের সব শ্রেণীর মানুষের জন্য, সে জাতি, ধর্ম, ভাষা এবং শ্রেণী নিরপেক্ষভাবে স্থির হয়েছে।

আমরা এক নতুন ভারত সৃষ্টির জন্য কঠোর পরিশ্রম করে চলেছি, যা ১৩০ কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন পূরণ করবে।

নতুন ভারতের জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে একদিকে যেমন ভবিষ্যতের কথা আছে, অন্যদিকে অতীতের সমস্যা সমাধানের কথাও আছে।

তাই আজ ভারত যখন তার দ্রুততম ট্রেন নির্মাণ করেছে, একইসঙ্গে ভারতের সমস্ত প্রহরীবিহীন লেভেল ক্রসিংও তুলে দেওয়া হয়েছে।

আজ ভারত যখন দ্রুতগতিতে আইআইটি এবং এইম্‌স নির্মাণ করে চলেছে, একইসঙ্গে দেশের সমস্ত বিদ্যালয়ে শৌচাগার নির্মাণের ব্যবস্থাও করেছে।

আজ ভারত যখন দেশে ১০০টি স্মার্ট শহর গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে, একইসঙ্গে দেশের ১০০টি উন্নয়নকামী জেলার দ্রুত উন্নয়ন করার উদ্যোগও নিশ্চিত করেছে।

আজ ভারত যেমন বিদ্যুতের রপ্তানিকারক হয়ে উঠেছে, একইসঙ্গে স্বাধীনতার পর থেকে অন্ধকারে থাকা কোটি কোটি পরিবারের প্রত্যেকটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।

আজ যখন ভারত মঙ্গল গ্রহে মহাকাশ যান পাঠানোর কথা ভাবছে, একইসঙ্গে, প্রত্যেক নাগরিকের মাথার ওপর যাতে ছাদ থাকে সে ব্যবস্থাও করেছে।

আজ ভারত যখন বিশ্বের দ্রুততম বৃদ্ধিশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে, একইসঙ্গে, সবচেয়ে দ্রুতগতিতে দারিদ্র্য দূরীকরণেরও উদ্যোগ নিয়েছে।

বন্ধুগণ,

আমরা বর্তমানে ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ মানসিকতা থেকে সরে এসেছি।

‘এ’ হল এড়িয়ে চলা,

‘বি’ হচ্ছে কবর দেওয়া, এবং

‘সি’ হচ্ছে বিভ্রান্ত করা।

কোন ইস্যুকে এড়িয়ে না গিয়ে আমরা সেই ইস্যুর মোকাবিলা করেছি।

কোন বিষয়কে কবর না দিয়ে, আমরা তাকে খুঁড়ে বের করেছি এবং মানুষকে জানিয়েছি।

এবং

সমগ্র ব্যবস্থাকে বিভ্রান্তির মুখে না ফেলে আমরা দেখিয়েছি যে সব কিছুরই সমাধান সম্ভব।

এই কাজ আমাদের বুকে আস্থা যুগিয়েছে। সামাজিক ক্ষেত্রে আরও সদর্থক ব্যবস্থা গ্রহণে অনুপ্রাণিত করেছে।

আমরা প্রতি বছর ৬,০০০ কোটি টাকা নগদ সুবিধা প্রদান করে ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক শ্রেণীর ১২ কোটি কৃষকের কাছে পৌঁছনোর উদ্যোগ নিয়েছি। এর ফলে, আগামী ১০ বছরে আমাদের কৃষকদের ৭.৫ লক্ষ কোটি টাকা (বা ১০,০০০ কোটি ডলার) প্রদান করা হবে।

আমাদের অসংগঠিত ক্ষেত্রে কোটি কোটি শ্রমিকের জন্য আমরা একটি পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে চলেছি।

আমাদের এই সরকারের বৃদ্ধির ইঞ্জিনটি দুটি সমান্তরাল লাইনে এগিয়ে চলেছে। এর মধ্যে একটি সমস্ত বঞ্চিত মানুষের জন্য সামাজিক পরিকাঠামো দেওয়ার কাজ করছে।

এবং অন্যটি সবার জন্য বিশেষ করে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণের জন্য বস্তুগত পরিকাঠামো নির্মাণের কাজ করছে।

অতীতে যা ঘটেছে তাতে আমাদের কোন হাত ছিল না, কিন্তু ভবিষ্যতে যা ঘটবে তা পুরোটাই আমাদের হাতে।

আমাদের প্রায়ই খেদোক্তি করতে হয় যে অতীত দিনে আমরা শিল্প বিপ্লব করতে পারিনি। কিন্তু এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে ভারত চতুর্থ প্রজন্মের শিল্প বিপ্লবের ক্ষেত্রে এক সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছে।

এক্ষেত্রে আমাদের অবদানের মাত্রা বিশ্বকে অবাক করবে।

আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, প্রথম তিনটি পর্যায়ের শিল্প বিপ্লবে ভারত তেমন কিছু করতে পা পারলেও এই সময়ে ভারত যে শুধুমাত্র চতুর্থ পর্যায়ের শিল্প বিপ্লবের বাসে চড়েছে তাই নয়, তার চালকের ভূমিকা নিয়েছে।

উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি এই অগ্রবর্তী উদ্যোগের ভিত হিসাবে কাজ করবে।

ডিজিটাল ইন্ডিয়া, স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া, মেক-ইন-ইন্ডিয়া এবং ইনোভেট ইন্ডিয়া-র মতো আমাদের উদ্যোগের ফলে সুফল পাওয়া যাচ্ছে।

আপনারা কি জানেন যে, ২০১৩-১৪-র মধ্যে যেখানে আমাদের দেশে প্রায় ৪,০০০ পেটেন্ট দেওয়া হয়েছিল, ২০১৭-১৮-র মধ্যে এই পেটেন্টের সংখ্যা বেড়ে ১৩,০০০ ছাড়িয়ে গেছে।

এক্ষেত্রে বৃদ্ধি হয়েছে তিনগুণ।

অনুরূপভাবে, আপনারা কি জানেন যে আমাদের দেশে ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা ২০১৩-১৪-র ৬৮,০০০ থেকে ২০১৬-১৭-য় বেড়ে হয়েছে ২.৫ লক্ষ।

এক্ষেত্রে বৃদ্ধি হয়েছে প্রায় চারগুণ।

আপনারা হয়তো শুনে সুখী হবেন যে, ভারতে আজ যে সংখ্যায় স্টার্ট-আপ নথিভুক্ত হয়েছে, তার ৪৪ শতাংশ দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্তরের শহর থেকে এসেছে।

সারা দেশে শত শত ‘অটল টিঙ্কারিং ল্যাব’ কাজ শুরু করেছে এবং উদ্ভাবনের এক পরিবেশকে লালনপালন করা হচ্ছে।

আমাদের ছাত্রছাত্রীরা যাতে ভবিষ্যতের উদ্ভাবক হয়ে উঠতে পারেন, এই কর্মসূচি তার ভিত্তি স্থাপন করবে।

আমি এটা জেনে অত্যন্ত চমৎকৃত হয়েছি যে, সাপুড়ে জনগোষ্ঠীর এক কিশোরী কম্পিউটারের মাউস নিয়ে খেলা করছেন এবং ডিজিটাল ইন্ডিয়া কর্মসূচিতে দারুণভাবে যুক্ত হয়েছেন।

একইসঙ্গে, এটা দেখা আমার খুব ভালো লাগে যে আমাদের গ্রামের যুবকরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্যের জন্য ওয়াইফাই এবং ডিজিটাল যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছেন।

আমাদের দেশের ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে প্রভেদ ঘুচিয়ে চলেছে প্রযুক্তি।

এইসব কাহিনী ভারতের ইতিহাসের নতুন অধ্যয় রচনা করছে।

বন্ধুগণ,

জনসাধারণের সহায়তা এবং অংশীদারিত্বে ২০১৪ সালের পর থেকে ভারত দ্রুত অগ্রগতি ঘটিয়ে চলেছে।

জন-ভাগিদারী ছাড়া এই কাজ কোনভাবেই সম্ভব হত না।

এইসব অভিজ্ঞতায় আমাদের বুকে এই আস্থা যোগায় যে আমদের দেশ তার সব নাগরিকের জন্য এগিয়ে চলার, সমৃদ্ধ হওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ দিতে পারবে।

আমরা ভারতকে ১০ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অপেক্ষা করছি।

আমরা ভারতকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অপেক্ষা করছি।

আমরা ভারতকে অগণিত স্টার্ট-আপের দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আগ্রহী।

আমরা সারা বিশ্বে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎসের দিকে অগ্রগতির ক্ষেত্রে নেতৃত্বদানের জন্য অপেক্ষা করছি।

আমরা আমাদের জনসাধারণকে শক্তি নিরাপত্তা দিতে চাই।

আমরা আমাদের আমদানি-নির্ভরতা কমাতে চাই।

আমরা বিদ্যুৎচালিত যানবাহন এবং বিদ্যুৎ সংরক্ষণ যন্ত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রথম স্থান দখল করতে চাই।

মনে এই সমস্ত ইচ্ছা নিয়ে আমরা নতুন ভারতের স্বপ্নের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করি।

ধন্যবাদ।

আপনাদের অজস্র ধন্যবাদ।

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
Bad loans decline: Banks’ gross NPA ratio declines to 13-year low of 2.5% at September end, says RBI report

Media Coverage

Bad loans decline: Banks’ gross NPA ratio declines to 13-year low of 2.5% at September end, says RBI report
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
Prime Minister condoles passing away of former Prime Minister Dr. Manmohan Singh
December 26, 2024
India mourns the loss of one of its most distinguished leaders, Dr. Manmohan Singh Ji: PM
He served in various government positions as well, including as Finance Minister, leaving a strong imprint on our economic policy over the years: PM
As our Prime Minister, he made extensive efforts to improve people’s lives: PM

The Prime Minister, Shri Narendra Modi has condoled the passing away of former Prime Minister, Dr. Manmohan Singh. "India mourns the loss of one of its most distinguished leaders, Dr. Manmohan Singh Ji," Shri Modi stated. Prime Minister, Shri Narendra Modi remarked that Dr. Manmohan Singh rose from humble origins to become a respected economist. As our Prime Minister, Dr. Manmohan Singh made extensive efforts to improve people’s lives.

The Prime Minister posted on X:

India mourns the loss of one of its most distinguished leaders, Dr. Manmohan Singh Ji. Rising from humble origins, he rose to become a respected economist. He served in various government positions as well, including as Finance Minister, leaving a strong imprint on our economic policy over the years. His interventions in Parliament were also insightful. As our Prime Minister, he made extensive efforts to improve people’s lives.

“Dr. Manmohan Singh Ji and I interacted regularly when he was PM and I was the CM of Gujarat. We would have extensive deliberations on various subjects relating to governance. His wisdom and humility were always visible.

In this hour of grief, my thoughts are with the family of Dr. Manmohan Singh Ji, his friends and countless admirers. Om Shanti."