বন্ধুগণ, এটি ২০১৮ সালের প্রারম্ভিককাল। আমি আপনাদের সবাইকে অনেক অনেকশুভেচ্ছা জানাই। এই ভবনের এটি প্রথম বড় অনুষ্ঠান। বিগত ৭ ডিসেম্বর, ২০১৭’তে আমি এইবাড়িটিকে জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেছিলাম। যে মহাপুরুষের নামের সঙ্গে এই ভবন যুক্ত,আমাদের প্রত্যাশা যে তাঁর দর্শন নিয়ে বিশ্বময় ভাবনাচিন্তা হবে। বাবাসাহেবেরনামাঙ্কিত এই ভবনে আয়োজিত যে কোনও অনুষ্ঠানের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় কারণ তিনি সারাজীবন সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন।
তাঁর নেতৃত্বে রচিত আমাদের সংবিধানও এই প্রত্যাশা পূরণের জন্য একটি কাঠামোপ্রদান করেছে। এখন সামাজিক ন্যায় শুধুই একটি সামাজিক ব্যবস্থার মধ্যেই সীমিত থাকেনা। ক্ষেত্র বিশেষেরও পিছিয়ে পরে থাকা একটি অন ্যায়ের ফল বলেই আমি মনে করি। কোনওগ্রাম পিছিয়ে পড়লে যে শুধু ঐ নির্দিষ্ট গ্রামটিই একটি সত্ত্বা সমষ্টির মধ্যেপিছিয়ে পড়ে – এমনটি নয়। সেই গ্রামের বাসিন্দারা সমস্ত সুযোগ-সুবিধা, তাঁদেরঅধিকার, সবকিছুই অন্যায়ের শিকার হয়। আর সেজন্য এই ১১৫টি জেলার উন্নয়ন, সেইবাবাসাহেব আম্বেদকরের সামাজিক ন্যায়ের অঙ্গীকারের একটি বিশাল ব্যবস্থাগতসমাধান-সাধনের প্রয়াসের অংশ হয়ে উঠবে। আর সেই অর্থে এই ভবনেপ্রথম অনুষ্ঠানটি আমার মতে একটি অত্যন্ত শুভ সংকেত বহন করছে।
আপনারা দু-তিন দিন ধরে আলাপ-আলোচনা করছেন। অভিজ্ঞতার নিরিখে আমি বলতে পারিযে, আমাদের দেশে যদি একবার আমরা দৃঢ়সংকল্প গ্রহণ করে কোনও কাজ শুরু করি; সে কাজেঅবশ্যই সাফল্য আসে। দেশে সমস্ত ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ হওয়ার পরও ৩০ কোটিরও বেশি মানুষেরকাছে এই ব্যবস্থা অধরা থেকে গিয়েছিল। কিন্তু একবার দেশবাসী সিদ্ধান্ত নিলেন যে,আগে যা হয়েছে, যেমন চলেছে – তা আর চলবে না! তখনই জন ধন অ্যাকাউন্ট খোলার অভিযানশুরু হলে সেটি ক্রমে গণআন্দোলনে পর্যবসিত হয় আর দেশের অন্তিম প্রান্তে বসে থাকামানুষটিও নিজেকে দেশের অর্থ ব্যবস্থার মূলস্রোতের অংশ বলে ভাবতে শুরু করেন। এটি এইদেশ, এই সরকারের কর্মচারীবৃন্দ এবং দেশের ব্যাঙ্কগুলি নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেইবাস্তবায়িত করে দেখান।
আমরা তো দীর্ঘকাল ধরেই সারা দেশের সমস্ত মানুষকে শৌচাগার ব্যবহারের কথা বলেআসছি, অনেক প্রকল্প তৈরি হয়েছে, বাজেট বরাদ্দ হয়েছে, রিপোর্ট হ’ত, কাজে অগ্রগতিওহ’ত। আপনারা যদি বলতেন, গতকাল অব্দি এই পরিসংখ্যান ছিল, আজ এতটা কাজ হয়েছে, তা হলেএই ভেবে আপনারা খুশি হতেন যে আগে আমরা বছরে পাঁচ পা এগোতাম, এখন বছরে ছয় পাএগিয়েছি, সাত পা গিয়েছি। এভাবে আমাদের খুশি করার পদ্ধতিও হয়তো গড়ে তোলা হয়েছিল। আমরাসমাধান খোঁজার পথও অত্যন্ত সাধারণ পদ্ধতিতেই খুঁজে নিতাম। আর এই সমস্যাপ্রত্যেকবার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ত। মেয়েরা কেন স্কুলছুট হয়? কারণ, বিদ্যালয়েশৌচাগার নেই। অধিকাংশ মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ কী? কারণ, শৌচাগার নেই। আমরাদৃঢ় সংকল্প নিলাম যে এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে, সবাইকে সংবেদনশীল করে তুলতেহবে, সচেতনতা বাড়াতে হবে। আমরা দেখলাম যে, এই টিমই সাধারণত সারা বছরে যত কাজ করে,একই ব্যবস্থা, একই আইন মেনে তাঁরাই এর অনেক গুণ কাজ করে দেখিয়েছে। ৪ লক্ষেরও বেশিবিদ্যালয়ে শৌচাগার নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়েছে, আর যথাসময়ে তদারকি হয়েছে। প্রত্যেকেছবি তুলে আপলোড করেছেন, যাতে যে কেউ চাইলে দেখতে পারেন। এই দেশের, এই সরকারিব্যবস্থাই এত অল্প সময়ে এই অসাধ্যসাধন করে দেখিয়েছে।
আমরা ঠিক করলাম যে, ১ হাজার দিনের মধ্যে দেশের যে ১৮ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎপৌঁছয়নি, সেই গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেব। তার আগে যখন সংশ্লিষ্টউচ্চ-আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলছিলাম, তখন তাঁরা বলছিলেন যে, এতগুলি গ্রামে বিদ্যুৎপৌঁছতে ৫-৭ বছর তো লাগবেই। কিন্তু যখন আমি তাঁদের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলাম যে,১ হাজার দিনের মধ্যেই ঐ ১৮ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে হবে, তাঁরা সেইচ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করে একই ব্যবস্থা, আইনকানুন, একই ফাইল চালাচালির প্রক্রিয়া, একই পরম্পরা, একই প্রযুক্তি ওপদ্ধতি অবলম্বন করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ঐ টিম নিয়েই ১৮ হাজার গ্রামে সাফল্যেরসঙ্গে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছেন।
মাটি পরীক্ষা নতুন বিষয় ছিল। দেশের অধিকাংশ কৃষক এই সুবিধা সম্পর্কে অবগতছিলেন না। কিন্তু আমরা দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করলাম যে, প্রত্যেক কৃষকের কাছে মৃত্তিকাস্বাস্থ্য কার্ড তুলে দেবই। সেই কার্ডে তাঁদের ক্ষেতের মৃত্তিকার গুণাগুনবিশ্লেষণের ফলাফল লেখা থাকবে। একই ব্যবস্থা, একই টিমের সদস্যরা দৃঢ় সংকল্প নিয়েপূর্ণ উদ্যমে কাজ করছেন, আর আমাকে বলা হয়েছে যে, তাঁরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেইলক্ষ্য পূরণে সক্ষম হবেন।
আমি একথা বলার জন্য এই উদাহরণগুলি দিচ্ছি যে, আমরা অসীম ক্ষমতার অধিকারী।আমরা অপার সম্ভাবনার যুগে এই ব্যবস্থার নেতৃত্ব দিচ্ছি। আর আমরাই অসংখ্য সুযোগেরজন্ম দিয়ে অনেক অপ্রতীম সিদ্ধির জন্মদাতাও হয়ে উঠতে পারি। আমি স্বয়ং আপনাদের মাঝেথাকতে থাকতে অনুভব করছি ও শিখছি আর আমার বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়ে উঠছে। এভাবেই অনেকস্থগিত কাজ বাস্তবায়িত করার কথা ভেবেছি। আপনাদের কাছে ইচ্ছা প্রকাশ করেছি। তারপরইআপনাদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে যে, আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে কাজটি করে ফেলতেপারব! ‘ইজ অফ ডুইং বিজনেস’-এ ভারত এতটা পিছিয়ে ছিল, একথা শুনে কিংবা পড়ে ক্ষমতাসীনকোনও সরকারের কাণ্ডারী চিন্তিত হননি, ব্যথিত হননি – এটা আমি বিশ্বাস করি না।প্রত্যেকেই চিন্তিত ছিলেন আর প্রত্যেকেই নিজের মতো করে সমাধানের চেষ্টাও নিশ্চয়ইকরেছেন। বিশ্ববাসীর নজরে আমরা কতদিন পিছিয়ে থাকব। একথা ঠিক যে, বর্তমানআন্তর্জাতিক পরিস্থিতি অনুসারে আমাদের বিদেশনীতি নির্ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে।সেখানে কোনও ব্যক্তি বা দলের পছন্দ মতো করে এগোলে চলবে না। এভাবে দেশের স্বার্থমাথায় রেখে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে অগ্রগতি ঘটানোর ইতিবাচক ফল হিসাবে যে পরিবেশ গড়েউঠেছে, ভারতের প্রতি যে আকর্ষণ সৃষ্টি হয়েছে, সেই আকর্ষণ দেশের পক্ষে লাভদায়ক হয়েউঠছে, সুযোগে পরিবর্তিত হচ্ছে।
সেই বিশ্বাস থেকেই ‘ইজ অফ ডুইং বিজনেস’-এর জন্য আমাদের ত্রুটিগুলিকেচিহ্নিত করেছি। কোন্ কোন্ রাস্তা খুলতে পারে, তা বুঝতে ছোট কর্মশালা করেছি।পদ্ধতিগতভাবে এক পা, দু পা, তিন পা করে এগিয়েছি। সমস্ত মুখ্যমন্ত্রীদের আমন্ত্রণজানিয়ে তাঁদের সঙ্গে একে একে কথা বলেছি, বোঝাপড়া বাড়িয়েছি। সমস্ত রাজ্যেরমুখ্যসচিব, মুখ্য আধিকারিকদের ডেকে তাঁদের সঙ্গেও বোঝাপড়া তৈরি করেছি। তাঁদেরবাস্তবায়নে নানা সমস্যার খুঁটিনাটি জেনে কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগীয়কর্তা ও আধিকারিকদের সঙ্গে বসে সমাধানের পথ খুঁজেছি। অনেক হোমওয়ার্ক করে সমাধানেররাস্তা পেয়েছি। এর ফলস্বরূপ, বিশ্বে ‘ইজ অফ ডুইং বিজনেস’-এর তালিকায় ২০১৪ সালের১৪২ নম্বর জায়গা থেকে শুরু করে, ২০১৭’তে ১০০ নম্বরে পৌঁছে গেছি। ৪২ স্থান এগিয়েযাওয়ার, এই উল্লম্ফনের সাফল্য কাদের? কোনও খবরের কাগজে সম্পাদকীয় লেখার মাধ্যমে এইসাফল্য আসেনি। কোনও টিভির পর্দায় নেতার ছবি দেখিয়ে কিংবা কোনও নেতার আকর্ষকবক্তৃতা শুনিয়ে এই সাফল্য আসেনি। এই সাফল্য এসেছে আপনাদের প্রচেষ্টায়। আপনাদেরপরিশ্রম, কর্মোদ্যম ও একনিষ্ঠতার মাধ্যমে। আর এরফলে আমার মনে একটি বিশ্বাস পোক্তহয়েছে যে, আমরা যদি সমস্যার শিকড়ে গিয়ে পথ খুঁজি ….. আর একথা ঠিক যে উপর থেকেচাপিয়ে দেওয়া জিনিস জীবিত থাকলেও তাতে প্রাণ থাকে না। আর প্রাণ না থাকলে তার কোনওপরিচিতি গড়ে ওঠে না, তা থেকে কোনও সুফলও পাওয়া যায় না।
আপনারাই সেইসব মানুষ, যাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, আপনারা যে পথে চলছেন, সেই পথদিয়ে পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা ১৫-২০ বছর আগে গিয়েছেন, ২৫ বছর আগে তাঁরাসেপথে হেঁটেছেন। আর আজ তো বিশ্ব অনেক বদলে গেছে। আজ প্রত্যাশাগুলিও বদলে গেছে,ভাবনা বদলেছে, ব্যবস্থাও বদলেছে। এসব কথা আপনারা খুব ভালোভাবে জানেন। কারণ, আপনারাপ্রতিদিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। সমাধানের উপায় খুঁজতে ছটফট করছেন। যেসবস্বপ্ন নিয়ে মুসৌরির অ্যাকাডেমিতে পা রেখেছিলেন, এখন সেগুলি বাস্তবায়িত করার সুযোগখুঁজছেন। কারণ, আপনারা জানেন যে, এখন যদি কাজ না করতে পারেন, ৫-৭ বছর পর দায়িত্ববদলে যাবে, তখন ক্ষমতা বাড়লেও কাজ করার শক্তিই হয়তো থাকবে না।
আমি বলব যে, আজ আপনার ভাবনাগুলিকে বাস্তব রূপ দেওয়ার সবচেয়ে বড় সুযোগএসেছে। আপনি কী ভাবছেন? আপনাদের অভিজ্ঞতা কী বলে? রোডম্যাপ আঁকার সময় আপনাদেরনিজস্ব অনুভবে কোন্ বিষয়গুলি অগ্রাধিকার পাচ্ছে, তা আমি আপনাদের ‘প্রেজেন্টেশন’-এদেখতে পাচ্ছিলাম। আমি অনুভব করছিলাম যে, আপনারা বিষয়টি কত গভীরে গিয়ে বুঝেছেন।বাজেট ঠিক আছে, অন্য সব কিছুই ঠিক আছে, কিন্তু সমস্যাটা কোথায় – সেটার অন্বেষণেআপনারা সফল হলেই পথ খুলে যাবে!
আজ আমি দেখছিলাম যে, আপনাদের ‘প্রেজেন্টেশন’গুলিতে পরিচ্ছন্ন চিন্তার ছাপরয়েছে। আমি এটাও অনুভব করছিলাম যে, সিদ্ধান্তের প্রতি বিশ্বস্ততা আপনাদেরআত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। আর আমি বক্তাদের পাশাপাশি শ্রোতাদের চোখমুখেও প্রভাবিতহওয়ার ঔজ্জ্বল্য দেখেছি। স্লাইডের পাশাপাশি পাশে দাঁড়ানো মানুষদের চোখেও কাজ করারদীপ্তি দেখেছি। আমার চোখের সামনে ‘নতুন ভারত’ দৃশ্যমান হয়ে উঠছিল।
সেজন্য এই সামগ্রিকতার মনোভাবকেই আমরা সবাই মিলে এগিয়ে নিয়ে যাব। এখনমানুষের স্বভাব যেমন …., আমি সার্বজনিক জীবনে কাজকরে এসেছি, সংগঠনের কাজেই আমার জীবনের অধিকাংশ কেটেছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলছি,মানুষের স্বভাবই হ’ল যে, সবচেয়ে সহজ কাজটি সে সবার আগে করে।
স্কুলে পড়ার সময় শিক্ষক মশাই এটা শিখিয়েছেন যে, সহজ প্রশ্নের উত্তরগুলি আগেলিখতে হয়। কঠিনগুলি তারপর চেষ্টা করতে হয়। আর সেজন্য আমাদের মানসিক গড়নটাই এমন হয়েযায় যে আমরা শুধু সহজ কাজটাই করতে ভালোবাসি। সহজ কাজ করতে করতে হঠাৎ কোনওপ্রতিস্পর্ধার মুখোমুখি হলে আমরা স্থবির হয়ে পড়ি। আর সেজন্যই ব্যক্তি থেকে শুরুকরে সরকারি দপ্তর পর্যন্ত সরল কাজ করার প্রতি প্রবণতা বেশি। এখানে যে বড় বড়আধিকারিকরা বসে আছেন, তাঁদেরকে যদি বলা হয় যে, সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে কৃষিতে এতটালক্ষ্য পূরণ করতে হবে, ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে কিংবা সামগ্রিক শিল্পক্ষেত্রে এতটা লক্ষ্য পূরণ করতে হবে – তা হলে দেখবেন, অধিকাংশই বিচলিত হয়ে পড়বেন।যাঁদের নেতৃত্বে ভাল ফলাফলের রেকর্ড রয়েছে, তাঁদের উচ্চ প্রশংসা করে, তাঁরা বিষয়টিতাঁদের দিকেই ঠেলে দেবেন। অবশেষে, তাঁদের সাফল্যই অন্যদের তুলনামূলক কম সাফল্যেরসঙ্গে যুক্ত হয়ে গড়ে মাঝারি মাপের জাতীয় সাফল্যে রূপান্তরিত হবে। এভাবে যাঁরা ভালকাজ করতে পারেন, তাঁদেরকেই চাপ দিয়ে কাজ করানোর কৌশল আপনাদের অনেকেই খুব ভালোভাবেরপ্ত করে নিয়েছেন। আর সেজন্যই আমাদের জাতীয় পর্যায়ের লক্ষ্য পূরণের পরিসংখ্যানসবসময়েই মাঝারি মানের হয়।
আমি যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, গোড়ার দিকে এতটা সফল হইনি। যোজনা কমিশনেরবিচারে আমাদের নম্বর অনেক পেছনে থাকত। কিন্তু আপনাদের সঙ্গে কাজ করতে করতেই আমিব্যাপারটা বুঝে গেলাম। সেজন্যে প্রতিবছর জানুয়ারি মাস থেকেই আমি নিয়মিত লক্ষ্যরাখতাম যে কত তারিখে বাজেটের টাকা খরচ করা হয়নি, খরচের ক্ষেত্রে কী কী অসুবিধা হয়েথাকতে পারে! যারা খরচ করার ক্ষেত্রে দ্বিধা করছেন, তাঁদের কাছে আধিকারিকদের পাঠিয়েআমি বিষয়টি খতিয়ে দেখার চেষ্টা করতাম। শুরুর দিকে আমি তেমন সাফল্য না পেলেও, পরেরদিকে অনেক গিঁট খুলতে সক্ষম হলাম। কারণ, যারা ভাল কাজ করেন ও করাতে পারেন, অর্থাৎযেখানে সুশাসন থাকে, সেখানে কাজ করার অভ্যাসও গড়ে ওঠে। আমি মনে করি যে, গতানুগতিকচিন্তা প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মিষ্টি চায়ে দু-চামচ আরও চিনি মেশালে খুবএকটা পার্থক্য হয় না। কিন্তু যে চায়ে চিনি থাকে না, সেখানে চিনি পৌঁছে দিতে পারলেসেই চা যিনি পান করবেন, তাঁর পাশাপাশি যিনি পরিবেশন করবেন তাঁর সকালটাও অত্যন্তমধুর হয়ে উঠতে পারে।
সেজন্য যে ১৫০টি জেলাকে আমরা উন্নয়নের জন্য বেছে নিয়েছি, চেষ্টা করেছি যাতেপ্রত্যেক রাজ্যের ন্যূনতম একটি জেলাকে এর মধ্যে রাখা হয়। কোনও রাজ্য যতই উন্নত হোকনা কেন, সেখানেও কোনও কোনও এলাকা পিছিয়ে পড়ে থাকে। আর সেই পিছিয়ে পড়া ব্যাপরটামানসিকভাবে সকলকে দুর্বল করে দেয় যে কোনও আধিকারিকের সেই জেলায় বদলি হলে তিনি নিজেও অন্যরাও চিন্তায় পড়ে যান। কবে তিনি সেই জেলা থেকে আবার অন্য জেলায় বদলি হবেন,সেই প্রচেষ্টাই তাঁর কাজের চেয়ে বেশি বড় হয়ে ওঠে। ফলে জেলার উন্নতি আর হয় না। যেশিক্ষকের সেই জেলায় বদলি হয় তিনিও যে কোনওভাবে চলে আসতে চান। সেই জেলায় কোনওদপ্তরে কাজে ফাঁকি দেওয়ার জন্য কাউকে শাস্তি দিতে গিয়ে তার উপরওয়ালা ভাবেন যে তাকেআর কোথায় পাঠানো যাবে! এভাবে উভয় পক্ষই নিস্ফল সময় কাটাতে থাকেন।
যাঁরা উন্নয়নের বিজ্ঞানকে জানেন, তাঁরা একটা কথা বোঝেন যে, উন্নয়ন একটিনিয়মিত প্রক্রিয়া। একটি সীমার পর উন্নয়ন থেমে থাকলে নিষ্ক্রিয়তা উন্নয়নের গ্রাফকেনীচের দিকে ঠেলে দেয়। পরিস্থিতি সামলানোর জন্য তখন অনেক বেশি শক্তি প্রয়োগ করতেহয়। সেজন্য কোনও একটি জায়গার উন্নয়নকে এমন চরম সীমায় পৌঁছে দেওয়া উচিৎ নয় যে, ঐরাজ্যের বাকি অঞ্চলগুলি এর থেকে অনেক পেছনে থেকে যাবে; তা হলে সেই রাজ্য কখনওউন্নত হতে পারবে না।
আমি জানি যে, আপনারা অনেকেই নিজেদের মতো করে এই সমস্যাগুলি থেকে মুক্তির পথখুঁজেছেন। অনেক কৌশল গড়ে তুলেছেন। প্রত্যেক জেলার সমস্যা এক রকম নয়। ভারতবৈচিত্র্যময় দেশ, প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা ও সুযোগও রয়েছে। কিন্তু যেখানে এই৫টি অথবা ৬টি পরিসংখ্যান আপনাদের সার্বিক গ্রাফকে অবনমিত করে তোলে, সেসব ক্ষেত্রেলক্ষ্য নির্দিষ্ট করে সকলে মিলে জোর দিয়ে সেই গ্রাফকে ওপরে তোলা যায় না!
এটা এজন্য জরুরি কারণ আপনি যত উৎসাহ নিয়েই কাজ করুন না কেন, যত ঐকান্তিকপ্রচেষ্টাই চালান না কেন, আপনার দপ্তরে বেশ কিছু লোক এমন পাবেন, যাঁরা বলবেন যে,সাহেব এখানে কিছু হবে না, আপনি নতুন এসেছেন, জানেন না! সেই মহাজ্ঞানী ব্যক্তিদেরমানসিকতা পরিবর্তনের জন্য সাফল্যের গল্প থাকা প্রয়োজনীয়। এই সাফল্যের গল্প তাঁদেরও অন্যদের আত্মবিশ্বাসের মাত্রাকে গড়ে তোলে। তারমানে এই সাহেবের নেতৃত্বে এটা হতেপারে।
সেজন্য আপনাদের প্রথম কৌশল হওয়া উচিৎ, হতাশার গহ্ববরে নিমজ্জিত ব্যবস্থাকেকেমন করে একটি ইতিবাচক ব্যবস্থায় পরিবর্তিত করবেন। এই সাফল্য পাওয়ার জন্য একটিপদ্ধতি হ’ল কোনও একটি অসফল ক্ষেত্রে অধিক জোর দিয়ে সেখানকার গ্রাফকে উপরে তুলেধরুন, আর তাঁদেরকে বলুন যে, দেখুন ভাই আপনারাই এই সাফল্য এনেছেন। তারমানে আপনারাকরতে পারেন।
আরেকটি বিষয় এখানে উঠে এসেছে, যা এতটা সরল নয়। তা হল গণআন্দোলন। এমনি মুখেবললেই গণআন্দোলন শুরু হয়ে যায় না। যেখানে হতাশা গ্রাস করে আছে, সেখানে জনআন্দোলনগড়ে তুলতে কিছু সম্ভাবনার স্ফুলিঙ্গ বিন্দু খুঁজে নিতে হয়। কিন্তু ইতিবাচক কাজকরার জন্য আপনাদের আগে একটি ‘কোর টিম’কে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। তাঁদের সঙ্গে ওতাঁদের মধ্যে মানসিক বোঝাপড়া অত্যন্ত জরুরি। ধীরে ধীরে প্রথম স্তর, দ্বিতীয় স্তর…… ষষ্ঠ ও সপ্তম স্তর, যেভাবে আপনি চাইছেন, তাঁরাও যেন সেভাবেই ভাবেন, সেরকমটিম গড়ে তুলতে পারলে আপনি ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার জন্য অনেকটাই এগিয়ে যাবেন। এইযে গত দু’দিন ধরে আমরা কর্মশালা করছি, সেটা আসলে কী? কেন্দ্রীয় সরকার দেশেজেলাস্তরে যে ধরনের উন্নয়ন করতে চায়, তা মাথায় রেখে আপনাদের সঙ্গে মতবিনিময় ওপারস্পরিক বোঝাপড়া গড়ে তোলা। এক পক্ষ দুই পা এগিয়ে গেলে, অন্য পক্ষকেও দুই কদমএগিয়ে আসতে হবে। তবেই কোথাও না কোথাও সঙ্গম বিন্দু গড়ে উঠবে। সঙ্গম বিন্দু গড়েউঠলে তবেই গণআন্দোলনের প্রেক্ষিতও গড়ে তোলা যাবে।
এই দু’দিনের কর্মশালা আপনাদেরকে জ্ঞান বিতরণের জন্য আয়োজন করা হয়নি। এখানেযাঁরা বক্তব্য রাখছেন, তাঁরাই সব জানেন, আর আপনারা কিছু জানেন না – এমনটি নয়।তাঁরা আপনাদের আহামরি কিছু শেখাতেও পারবেন না। আপনাদের যে অভিজ্ঞতা, সম্যকপরিস্থিতি সম্পর্কে আপনারা যতটা অবহিত, তা ক্ষমতার উচ্চ অলিন্দে বসে থাকাপদাধিকারিরা বুঝবেন এবং নীতি প্রণয়নের সময়, ব্যূহ রচনার সময় এই বিষয়গুলিকে মাথায়রাখবেন।
আর সেজন্য এই কর্মশালার নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে। আপনারা ফিরে গিয়ে কি একেকটিতহশিল ধরে এরকম কর্মশালার আয়োজন করতে পারবেন? এরকমই একেকটি ভাবনাচিন্তা বিনিময়েরক্ষেত্র যদি স্থানীয় স্তরে গড়ে তুলতে পারেন, তাঁদের কাছ থেকে জানতে পারেন যে,প্রত্যেকের ক্ষমতা কতটা! আপনাদের মধ্যে কেউ কেউ এই কাজটি আগেই করে থাকেন, তা হলেএবার ফিরে গিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা তাঁদের সঙ্গে বিনিময় করুন। আপনি তাঁদেরকে নিয়ে কতটাকরতে পারেন, সে সম্পর্কে অসংখ্য মানুষকে যতক্ষণ অবহিত না করাতে পারেন, ততক্ষণ এইপ্রক্রিয়ার আনন্দ বুঝতে পারবেন না। সাফল্যই আমাদের আনন্দের দিকে ঠেলে দেয়।
মনে করুন, এক ভদ্রলোক একটি ঘরে থাকেন, তাঁর দরজায় একটি ফুটো করে তিনি একটিহাত বের করে চেঁচাতে থাকেন যে, আপনারা আমার সঙ্গে করমর্দন করুন, দেখবেন যে, অনেকেইলাইনে দাঁড়িয়ে তাঁর সঙ্গে করমর্দন করছেন। একবার দৃশ্যটা কল্পনা করুন! কিন্তু যদিআপনাদের বলা হয় যে, ঐ ঘরে শচিন তেন্ডুলকর রয়েছেন, আর এটা তাঁর হাত, তা হলে দেখবেন,হঠাৎ-ই পরিস্থিতি কেমন বদলে গেছে। আপনি নিজে চোখে দেখেননি, শুধু অন্যের কাছেশুনেছেন, তথ্যের অনেক শক্তি থাকে মশাই। যাঁর কাছ থেকে কোনও কাজ নিতে চান, সে যদিজানেন যে পরিণাম কী, তা হলে কাজে উৎসাহ বৃদ্ধি পায়। তাঁকে যদি বলা হয় যে, তোমারনাতিপুতিরা এই কাজ দেখে কত গর্ববোধ করবে, তা হলে দেখবেন, সে কাজ আরও মজবুত করেকরার আগ্রহ তাঁদের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে।
আপনারা যতক্ষণ মানুষকে যুক্ত করার ‘সিস্টেমেটিক স্কিম’ না গড়ে তুলবেন,ততক্ষণ গণঅংশীদারিত্ব সম্ভব নয়। স্বচ্ছ ভারত অভিযানের ক্ষেত্রে সংবাদ মাধ্যমঅত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা নিয়েছিল, তার একটা প্রভাব রয়েছে। ওপর থেকে নীচ পর্যন্তআপনারা এতে নিজেদের নিয়মিত যুক্ত রেখেছেন। এর প্রাকৃতিক প্রভাব প্রত্যেক ব্যক্তিকেপরিচ্ছন্নতা ক্ষেত্রে অবদান রাখতে প্রেরণা জুগিয়েছে, গর্বিত করেছে। এক্ষেত্রেআপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে, সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে দেশের ছোট ছোটছেলেমেয়েরা। তারাই এক প্রকার পরিচ্ছন্নতার দূত হিসাবে কাজ করেছে।
বাড়িতেও ঠাকুরদা ঠিক জায়গায় নোংরা না ফেললে আজ কনিষ্ঠতম সদস্যটি বলে ওঠেযে, এরকম যেখানে সেখানে নোংরা ফেলবেন না, মোদীজী বারণ করেছেন! এটাই বার্তার শক্তি,বার্তা পরিবর্তন আনে। আমরা সমাজের পুষ্টিহীনতা নিয়ে আলোচনা করবো, নাকি পুষ্টি নিয়েআলোচনা করবো! পিছিয়ে পড়া জেলা বলবো, নাকি উচ্চাকাঙ্খী জেলা বলবো? ইতিবাচক শব্দব্যবহার করলেই দেখবেন, মানসিকতায় পার্থক্য গড়ে উঠছে!
সেজন্যেই আগে আমাদের শব্দমালাকে ইতিবাচক করে তুলতে হবে। ইতিবাচক শব্দমালাইতিবাচক ভাবনাচিন্তার কারণ হয়ে ওঠে। মুম্বাইয়ে আমার এক অগ্রজ বন্ধু ছিলেন, যারসঙ্গে দেখা হলে, কেমন আছো? জিজ্ঞেস করলেই তিনি দশ মিনিট ধরে তাঁর নিদ্রাহীনতারসমস্যা, এবং আরও নানা সমস্যার কথা বলতেন। একবার আমরা কয়েকজন পরিচিত বন্ধু তাঁরসঙ্গে দেখা হতেই বলতে শুরু করি, বাহ, বাহ্ তোমাকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে,স্বাস্থ্যও ভালো মনে হচ্ছে!
আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম যে, তাঁর চেহারায় এক আশ্চর্য দ্যুতি, পুরনোদুঃখভাব যেন উধাও! এরপর থেকে আমরা তাঁর সঙ্গে এভাবেই কথা বলতে থাকি আর তাঁর দেখাহতেই নিজের দুঃখের কথা বলার অভ্যাস ত্যাগ করাতে সক্ষম হই।
সেজন্য আমাদের অপুষ্টি নিয়ে আলোচনা না করে পুষ্টি বৃদ্ধির কথা আলোচনা করাউচিৎ। এই পুষ্টি বৃদ্ধি শব্দটি দেখবেন আপনাদের লক্ষ্য পূরণে অনেক বেশি কার্যকরিহয়ে উঠবে। আশা কর্মী দিদিরা এখনকার থেকে অনেক বেশি উৎসাহ নিয়ে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বেন।কারণ, এখন থেকে তাঁরা অপুষ্টি দূর করবেন না, তাঁরা পুষ্টি বৃদ্ধি করবেন। আপনারএলাকায় পুষ্টি বৃদ্ধি নিয়ে কবিতা লেখার প্রতিযোগিতা আয়োজন করুন। আপনারা হয়তোভাবছেন যে, কবিতা লিখলে কি পেট ভরবে? কিন্তু আয়োজন করেই দেখুন। আপনার এলাকায়বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষকদের বলুন যে, পুষ্টি বৃদ্ধি নিয়ে শিশুদের মধ্যে কবিতা রচনাপ্রতিযোগিতা, নাটক প্রতিযোগিতা চালু করতে। আমার মনে পড়ে, একবার একটি অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্রে গিয়ে ১৫ মিনিটের একটি নাটক দেখেছিলাম। তাতে ছোট ছোট বাচ্চারা কেউ টমেটো,কেউ গাজর, কেউ ফুলকপি সেজে এসেছিল। যে গাজর সেজেছিল, সে যখন মঞ্চে গিয়ে বলে আমিএকটি গাজর, আমাকে খেলে এই উপকার হয়, তখন উপস্থিত সমস্ত বাচ্চাদের মাথায় ঢুকে যায়যে গাজর খাওয়া উচিৎ। আগে যে বাচ্চাটি সাধাসাধি করলেও গাজর খেত না সে এখন মায়েরপেছন পেছন ঘুরতে থাকে। এভাবেই গণআন্দোলন শুরু করা যায়। আমরা সাধারণ মানুষের মধ্যেভালো শ্লোগান প্রতিযোগিতা শুরু করে তাঁদেরকে এই আন্দোলনে যুক্ত করতে পারি। তখনইদেখবেন, এই আন্দোলন সত্যি সত্যিই পুষ্টি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
আপনারা সেসব এলাকার সম্পন্ন মানুষদের সঙ্গে গিয়ে দেখা করুন। তাঁদেরকে বলুনযে, আপনার বাড়ির কোনও সদস্যের জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী কিংবা মৃত্যু বার্ষিকীতেরান্না করা খাবার নিয়ে অঙ্গনওয়াড়ির ছেলেমেয়েদের কাছে গিয়ে নিজে বিতরণ করুন। দেখবেনযে, ৪০-৫০টি শিশুকে নিজের হাতে পরিবেশন করে খাইয়ে তাঁরা এত আনন্দ পাবেন যে, এটাইপ্রথা হয়ে দাঁড়াবে। আর সারা বছরে আপনারাও ঐ শিশুদের ৭০-৮০ দিনের মধ্যাহ্ন ভোজনেরবরাদ্দ বাঁচিয়ে সেই অর্থ দিয়ে অন্যদিনগুলিতে আরও ভালো পুষ্টি প্রদান করতে পারছেন। এতেদেখবেন স্কুলছুটও কমবে। অঙ্গনওয়াড়ি ছেলেমেয়েদের মাসে একদিন নিকটবর্তী কোনও মন্দির,ধর্মস্থল, নদীর পারে কিংবা বাগানে ঘুরতে নিয়ে গেলে কিংবা ঐ এলাকার প্রাথমিকবিদ্যালয়ে ঘুরতে নিয়ে গিয়ে সেই বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের একসঙ্গে মধ্যাহ্নভোজনেরব্যবস্থা করলে, তাদের সঙ্গে খেলাধূলার ব্যবস্থা করলে, তাদের ভবিষ্যতে বিদ্যালয়েযাওয়ার ঝোঁক বাড়বে।
আপনারা হয়তো জানেন যে, আমি একটা ছোট কর্মসূচি শুরু করেছিলাম। যে কোনওবিশ্ববিদ্যালয়ে আমাকে সমাবর্তনে আমন্ত্রণ জানালে আমি তাদেরকে বলি, একটি শর্তেআসবো, আমার সঙ্গে ৫০ জন বিশেষ অতিথি থাকবেন। তাঁদের সামনের সারিতে বসতে দিতে হবে।আর প্রধানমন্ত্রী এরকম বললে কে আর না করবেন! কিন্তু শুরুতে অনেকে হয়তো ভাবতেন যে,প্রধানমন্ত্রী হয়তো বিজেপির কর্মকর্তাদের নিয়ে যাবেন। কিন্তু যখন বলতাম যে, অমুকঅমুক সরকারি স্কুলে যে গরিব ছেলেমেয়েরা পড়ে, সেরকম ৫০টি শিশুকে আপনারা সমাবর্তনেপ্রেক্ষাগৃহের সামনের সারিতে নিয়ে বসাবেন, তখন তাঁরা অবাক হয়ে যেতেন। আমি সমাবর্তনঅনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে দেখতাম, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্রছাত্রীরা গাউন পরেমাথায় টুপি পরে শংসাপত্র নেওয়ার জন্য মঞ্চে উঠে আসে, তখন ঐ সামনের সারিতে বসে থাকাছেলেমেয়েদের চোখ কেমন উৎসাহে চক্চক্ করে ওঠে। অনেক বড় ভাষণ যে কাজ করতে পারে না,ঐ পরিবেশের সাক্ষী হয়ে ঐ গরিব ছেলেমেয়েদের মনে তারচেয়ে অনেক বেশি উচ্চাকাঙ্খা জেগেওঠে।
উচ্চাকাঙ্খী জেলাগুলির ক্ষেত্রে এটা অত্যন্ত জরুরি, ঐ জেলার সাধারণ মানুষেরপ্রত্যাশাকে চিহ্নিত করা, তাঁদের মনে উচ্চাকাঙ্খা জাগিয়ে তোলা। সাধারণ মানুষেরপ্রত্যাশা পূরণের ইচ্ছাকে জাগিয়ে তুলতে পারলেই গণঅংশীদারিত্বের মাধ্যমে উন্নয়নেরলক্ষ্য পূরণ সহজ হয়।
আমাদের যত প্রকল্প রয়েছে, সেগুলি সম্পর্কে গণসচেতনতা বাড়াতে এলাকারবিদ্যাল্যগুলির শিক্ষকদের বলুন, প্রতিদিন সকালে যখন প্রার্থনা হয় তাঁরা যেনছাত্রদেরকে আগে থেকে বলে দেন কবে কে পুষ্টি বৃদ্ধি নিয়ে বলবে, কে স্বাস্থ্য নিয়েবলবে। প্রতিদিন ১০ মিনিট কোনও না কোনও ছাত্রছাত্রী যদি এসব বিষয়ে বক্তব্য রাখে, তাহলে দেখবেন বাতাসে এই বিষয়ের সচেতনতা ছড়াবে।
মনে করুন, কোথাও আমরা ৬টি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছি, এর মধ্যে কোনটি কোনওঅঞ্চলে সফল হচ্ছে আবার অন্য কোনও অন্য অঞ্চলে। আপনারা শুধু সাফল্যটাকেই মডেলহিসেবে তুলে ধরুন। অন্যদের ডেকে এনে সেই সাফল্য পরিদর্শন করান। তবেই তাঁদের মনেআত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে। তাঁরা ভাববেন যে, আমরাও নিজেদের গ্রামে এভাবে করতে পারব।এই ভাবনা মাথায় নিয়েই আমরা ১১৫টি উচ্চাকাঙ্খী জেলায় লক্ষ্য পূরণের কথাভেবেছি।
পরিকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে সর্বাধিক চাহিদা ও দাবি থাকে সড়ক নির্মাণে।কখনও বাজেট অপ্রতুল থাকতে পারে কিন্তু আপনারা যদি ঐ এলাকার জনগণের ওপর দায়িত্ব দেনযে, সড়ক অবশ্যই গড়ে উঠবে। কিন্তু আজ আমি যেখান দিয়ে পথ যাবে সেই দাগ কেটে দিচ্ছি,সেই দাগের দু-পাশে আপনারা গাছ লাগানো শুরু করুন, সেই গাছগুলির উচ্চতা যেদিন ৫ ফুটহবে, তার আগেই পাকা রাস্তা তৈরি হয়ে যাবে। আপনারা দেখবেন, এতে গ্রামের মানুষদায়িত্ব নিয়ে কাজ করবেন। আপনারাও ঐ চিহ্নিত পথে প্রথমে মনরেগার কাজ শুরু করান। এতেগ্রামের মানুষের কিছুটা কর্মসংস্থানও হবে। মানুষের উচ্চাকাঙ্খা আর সরকারের প্রকল্পউভয়ের মিলন বিন্দু যদি তাঁদের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় তবে উন্নয়ন অনেকসরল হয়। আমাদের অনেক আধিকারিক অনেক সৃষ্টিশীল হন, তাঁরা নতুন নতুন উদ্ভাবনেরমাধ্যমে কাজ করেন। কিন্তু দেশের দুর্ভাগ্য যে, তাঁদের প্রয়োগ ও সাফল্যকে ব্যবস্থাতেমন গুরুত্ব দেয় না। তাঁদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সেই উদ্ভাবনও হারিয়ে যায়। আমিএজন্য প্রশাসকদের ঘন ঘন বদলির পক্ষে নই। আমার নেতৃত্বে আমার টিম যতটা কাজ করবে,তার জন্য যদি আমাকেই জবাবদিহি করতে হয় কিংবা তার ফল আমাকেই ভোগ করতে হয়, তা হলেআমার কাজের ঐকান্তিকতা অনেক বেশি থাকবে। ভালো টিম গড়ে তুলতে পারলে, সুনির্দিষ্টদায়িত্ব, পরিচ্ছন্ন রোডম্যাপ, কার্যকরি তদারকি ব্যবস্থা এবং সুনির্দিষ্ট সময়ে কাজশেষ করার অভ্যাস একবার গড়ে তুলতে পারলে নেতৃত্ব বদল হলেও সেই টিম একইভাবে কাজ করতেথাকে। আপনারা কল্পনা করতে পারবেন না যে, দেশের যে ১১৫টি জেলা বোঝা হিসাবে পরিগণিতহচ্ছে, সেগুলির উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারলে দেশ মাথা উঁচু করে এতদূর এগিয়ে যাবে যেআর কখনও থামবে না।
আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে, দেশের এরকম অনেক জায়গা আছে, যেখানে কোনওএকটি কারণে এমন মোড় এসেছে যে গোটা এলাকা উন্নতির শিখর স্পর্শ করেছে। ভারতে এরকম৫০-১০০টি জায়গা আছে, যেখানে হঠাৎ-ই উন্নয়ন হয়েছে। তাদের উদাহরণ নিয়ে আপনারাওনিজেদের এলাকায় এ ধরনের কোনও ‘ব্রেক থ্রু’ করুন, দেখবেন কিভাবে সমস্ত কিছু বদলাতেশুরু করেছে। এই ১১৫টি উচ্চাকাঙ্খী জেলা যদি ১০ পা এগিয়ে যায়, তা হলে কল্পনা করুনদেশের সমস্ত হিসাব কতটা বদলে যাবে। তখন সরকারগুলিও ভাববে, এই জেলাগুলির জন্য বাজেটবরাদ্দ করতেই হবে, অগ্রাধিকার দিতেই হবে।
মানুষের স্বভাব হ’ল ট্রেনে সফরের সময় জানালার পাশে সিট পেলে ভালো লাগে।কিন্তু উড়োজাহাজে বসলে তখন পা লম্বা করে বসার জায়গা যে আসনে থাকে সেই আসনের চাহিদাবেশি হয়। আমি এই আকাঙ্খাকে খারাপ ভাবি না। তেমনই আপনাদের যে সহ-শিক্ষার্থীরা উন্নতজেলাগুলিতে পোস্টিং হয়েছেন, তাঁরা আপনাদের থেকে নিজেদের বেশি ভাগ্যবান ভেবেছেন। আরআপনাদেরকে সান্ত্বনা দিয়েছেন, চিন্তা কোরো না কষ্ট করে কয়েক মাস কাটিয়ে দাও।কিন্তু আমি মনে করি, উন্নত জেলাগুলিতে যে নবীন আধিকারিকদের পোস্টিং হয়, তাঁদেরনতুন কিছু করার সুযোগ খুব কম থাকে। তাঁরা প্রচলিত গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়েদেন। কিন্তু যাঁদের পোস্টিং কঠিন এলাকাগুলিতে হয়, তাঁরা নানারকম উদ্ভাবনীপ্রচেষ্টার মাধ্যমে যে সাফল্য অর্জন করেন, তা তাঁদের সতীর্থদের থেকে অনেক বেশিআত্মবিশ্বাসী এবং ব্যক্তিত্বসম্পন্ন করে তোলে। ভবিষ্যতে তাঁরাই জীবনে অনেক বেশিউন্নতি করার সুযোগ পান। সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণ করলেই জীবনটা সব ক্ষেত্রেসোনার হয়ে যায় না। যাঁরা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে নিজেদের গড়ে তোলেন, অধিকাংশক্ষেত্রে তাঁরাই জীবনে বেশি সফল হন।আপনাদের বিভাগগুলিতে যাঁরা সর্বোচ্চ পদে রয়েছেন, তাঁরা প্রায় সকলেই কঠিনপরিস্থিতির মোকাবিলা করে উঠে এসেছেন। সেজন্য ১১৫টি কঠিন ও উচ্চাকাঙ্খী জেলারনেতৃত্ব প্রদানকারী আধিকারিকদের আমি ভাগ্যবান বলে মনে করি। তাঁরা জীবনে উন্নতিরচরম শিখরে ওঠার সুযোগ পেয়েছেন। যেখানে ভালো থাকে, সেখানে আরও ভালোকে কেউ আমল দেননা। কিন্তু যেখানে কিছুই নেই, মনে করুন, উষর মরুভূমিতে কেউ যদি একটিও গাছ বড় করেতুলতে পারেন, তাঁর জীবনে আনন্দের পরিসীমা থাকবে না। আপনারা তেমনই ভাগ্যবান মানুষ,যাঁরা নানা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছেন, আমার বিশ্বাস আপনাদের সামর্থ্য দিয়েআপনারা নতুন পরিস্থিতি গড়ে তুলতে পারবেন। এতে আপনার নিজের জীবনেও অনেক বিবর্তন ঘটেযাবে, সন্তুষ্টি আসবে – এটা ভাবতে পারবেন, আমি কোথা থেকে কোথায় পৌঁছে দিয়েছি। যাঁদেরজীবনে কোনও প্রতিস্পর্ধা নেই, তাঁদেরকে আমি ভাগ্যবান বলে মনে করি না। যাঁরাপ্রতিস্পর্ধা মোকাবিলা করার সামর্থ্য রাখেন, তাঁদেরকেই জীবন দু’হাত ভরে দেয়। এইইতিবাচক মনোভাব নিয়ে আপনারা কাজে লেগে পড়ুন।
আজ আমরা জানুয়ারি মাসে পরস্পরের সঙ্গে কথা বলছি। বাবাসাহেব আম্বেদকরের নামেনামাঙ্কিত এই ভবনে দাঁড়িয়ে যে আলোচনা করছি, তার একটি লক্ষ্য পূরণের টাইম টেবিল কি১৪ এপ্রিল পর্যন্ত হতে পারে? ১৪ এপ্রিল বাবাসাহেব আম্বেদকরের জন্মজয়ন্তী পালিতহবে। এই তিন মাসের মধ্যে আপনাদের নেতৃত্বে এই ১১৫টি জেলাকে আমরা কোথায় পৌঁছে দিতেপারি, তার ফলাফলকে ভিত্তি করে এই ১১৫টি জেলার ভবিষ্যৎ কর্মসূচি আমরা নির্ধারণ করব।আপনাদের মধ্যে যাঁরা সবচেয়ে ভালো কাজ করবেন, আমি কথা দিচ্ছি যে আগামী এপ্রিল মাসেআমি সেই জেলায় গিয়ে সেই টিমের সঙ্গে কয়েক ঘন্টা সময় কাটাবো। তাঁরা কিভাবে সাফল্যপেয়েছেন, তা আমি সরেজমিনে দেখে বোঝার চেষ্টা করব। তাঁদের থেকে শেখার চেষ্টা করব।আমি জানি যে, তিন মাসের মধ্যে তেমন কোনও নতুন জিনিস আমরা চালু করতে পারব না। যেব্যবস্থা রয়েছে, তার মধ্যেই নতুন প্রাণশক্তি সঞ্চার করতে হবে, সচেতনতা বৃদ্ধিরমাধ্যমে গণঅংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করতে হবে। নতুন প্রয়োগের পরিকল্পনা করতে হবে।আপনাদের সাফল্য দেখে আমি আমার ভবিষ্যৎ কর্মসূচি পরিবর্তিত করতে চাই। আপনাদেরকর্মযজ্ঞের অংশ হয়ে উঠতে চাই।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, ছোট ছোট এককের পরিবর্তনের মাধ্যমেই দেশের উন্নতি ওসাধারণ মানুষের জীবনে পরিবর্তনের সূচনা হয়। এসবের সামগ্রিক প্রভাবেই দেশে পরিবর্তনআসে। এগুলি আমাদের দেশের অনুঘটক প্রতিনিধি আর আপনারা সেই পরিবর্তনের প্রতিনিধিদেরনেতৃত্ব দেবেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই দর্শন, সামর্থ্য ও সম্ভাবনা আগামী ২০২২ সালেভারত যখন স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ পূর্তি পালন করবে তার আগেই দেশকে উন্নতির নতুন শিখরেপৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমরা আমলাতান্ত্রিক জগতে বড়বড় সফল আমলাদের সাফল্যগাথা শুনেছি। অমুক আধিকারিক সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের সঙ্গেকাজ করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তাঁর সময়ে এই এই কাজ হয়েছে, যার সুফল দেশ এখনও ভোগকরে। তমুক আধিকারিক পণ্ডিত নেহরুর সঙ্গে কাজ করেছেন, তমুক কাজকে পণ্ডিত নেহরুপ্রশংসা করেছেন। এই প্রেরণাদায়ী গাথাগুলি দেশের পরবর্তী আমলাদের কিভাবে নতুন দিশাপ্রদান করেছে, কিভাবে কর্মসম্পাদনের ইতিহাস গড়ে উঠেছে! কিন্তু জেলাস্তরে সাফল্যেরকথা নিয়ে তেমন গাথা শোনা যায় না। কিন্তু এটা তো ঠিক যে, জেলাস্তরেও অসংখ্যপ্রাণবন্ত আধিকারিকের সফল নেতৃত্বে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমি চাই যে, বিগত ৭০ বছরেএ ধরনের সাফল্যের ঘটনাগুলি আপনারা তুলে আনুন, যা থেকে আপনারাও প্রেরণা পাবেন আরভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও প্রেরণা যোগাতে পারবেন। এখন সময়ের চাহিদা হ’ল জেলা থেকে আওয়াজউঠুক, সমস্ত সাফল্যগাথা জেলাগুলি থেকে উঠে আসুক।
আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় অত্যন্ত সক্রিয় ছিলাম গোড়ার দিকে। এখন তেমন একটা সময়পাই না। কিন্তু দু’দিন আগে এমনি সার্ফিং করতে গিয়ে আমি একজন মহিলা আইএএসআধিকারিকের ট্যুইট দেখেছি, যা অত্যন্ত কৌতূহলজনক। তিনি এখন অত্যন্ত উচ্চপদাধিকারী,আমি নামটা ভুলে গেছি। তিনি লিখেছেন, তাঁর জীবনের সর্বাধিক আনন্দের মুহূর্ত হ’লতিনি যখন জুনিয়র অফিসার ছিলেন, একবার গাড়িতে যাওয়ার সময় দেখেন একটি শিশু একটিস্কুলের সামনে ছাগল চড়াচ্ছে। তিনি গাড়ি দাঁড় করিয়ে সেই স্কুলের শিক্ষককে ডেকেবলেন, যাতে ঐ বাচ্চাটিকে স্কুলে ভর্তি করেন। তিনি বাচ্চাটিকেও বোঝান। এর ২৭ বছর পরতিনি যখন ঐ এলাকায় পরিদর্শনে যান, একজন হেড কনস্টেবল এগিয়ে এসে তাঁকে স্যালুট মেরেবলেন, ম্যাডাম চিনতে পেরেছেন, আমি সেই ছাগল চড়ানো ছেলেটি, যাকে আপনি স্কুলে ভর্তিকরে দিয়েছিলেন। সেই মহিলা আধিকারিক ট্যুইটে লিখেছেন, একটি ছোট্ট ঘটনা কত বড়পরিবর্তন আনতে পারে। আমাদের জীবনে সুযোগ পেলেই আমাদের উচিৎ সেই সুযোগগুলিকে কাজেলাগানো।
আমাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে এই দেশ অনেক কিছু প্রত্যাশা করে। এদেশে কোনওকিছু খারাপ হলে আজও বলা হয় যে, হয়তো ঈশ্বরের এটাই ইচ্ছা ছিল। এরকম সৌভাগ্য বিশ্বেরকোনও সরকারের হয় না যে, তাঁদের নিষ্ক্রিয়তা বা ব্যর্থতার ফলকে জনগণ নিজেদেরভাগ্যফল হিসাবে মেনে নেন। তাঁরা ঈশ্বরকে দোষ দেন কিন্তু আমাদের দিকে আঙুল তোলেননা। এর চেয়ে বড় জনসমর্থন কিংবা জন-সহযোগ আমরা আর কি আশা করতে পারি? এরচেয়ে বড়গণআস্থা আর কি হতে পারে? আমরা যদি একে না চিনতে পারি, আমরা যদি এই সুযোগেরসদ্ব্যবহার করে তাঁদের জীবনে পরিবর্তন আনতে না পারি, তা হলে আমরা নিজেদের মনে কিজবাব দেব? আর সেজন্য বন্ধুগণ আমার বিশ্বাস, এই ১১৫টি জেলাই ভবিষ্যতে ভারতের ভাগ্যপরিবর্তনের কারণ হয়ে উঠতে পারে। নতুন ভারতের স্বপ্ন বাস্তবায়নের একটি মজবুত ভিত্তিএখান থেকেই গড়ে উঠতে পারে। আর বন্ধুগণ, এই কাজের দায়িত্ব এখন আপনার ও আপনাদের টিমেকাঁধে ন্যস্ত। আমি আপনাদের সকলকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।