আমি বলব মহাত্মা গান্ধী,
আপনারা সবাই বলবেন – অমর রহে, অমর রহে
মহাত্মা গান্ধী অমর রহে, অমর রহে
মহাত্মা গান্ধী অমর রহে, অমর রহে
মহাত্মা গান্ধী অমর রহে, অমর রহে
চম্পারণের পবিত্র ভূমিতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে সমাগত স্বচ্ছাগ্রহী ভাই ওবোনেরা, আপনারা আমার ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। বড়দের প্রণাম জানাই। আমরাসবাই জানি যে, চম্পারণের এই পবিত্র ভূমি থেকেই বাপুজি সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরুকরেছিলেন। ব্রিটিশের দাসত্ব থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য দেশবাসীর স্বাধীনতাআন্দোলনে সত্যাগ্রহ ক্রমে একটি শক্তিশালী অহিংসাশ্রয়ী হাতিয়ার হয়ে ওঠে। সেইসত্যাগ্রহ আন্দোলনের পর ১০০ বছর পেরিয়ে গেছে। তার প্রভাব আজও রয়েছে। এই সত্যাগ্রহথেকে এখন সময়ের চাহিদা হয়ে উঠেছে স্বচ্ছাগ্রহ। চম্পারণ সত্যাগ্রহের সময় চম্পারণেরসুসন্তান লক্ষ্মণ সেন মহাত্মা গান্ধীর স্বচ্ছতা অভিযানের সূত্রপাত করেছিলেন।
আজ আমরা ‘সত্যাগ্রহ থেকে স্বচ্ছাগ্রহ’ আন্দোলনের মাধ্যমে বাপুজি স্বচ্ছতাঅভিযানকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
মঞ্চে উপস্থিত বিহারের মাননীয় রাজ্যপাল শ্রী সতপাল মালিকজি, রাজ্যেরজনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী নীতিশ কুমারজি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য শ্রীরবিশঙ্কর প্রসাদজি, শ্রী রামবিলাস পাসওয়ানজি, শ্রীমতী উমা ভারতীজি, শ্রী রাধামোহনসিংজি, শ্রী গিরিরাজ সিংজি, শ্রী শ্রীরাম কৃপাল যাদবজি, শ্রী এস এস আলুওয়ালিয়াজি,শ্রী অশ্বিনী কুমার চৌবেজি, বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী শ্রী সুশীল কুমার মোদীজি,রাজ্যের মন্ত্রী শ্রী শ্রবণ কুমারজি, শ্রী বিনোদ নারায়ণজি, শ্রী প্রমোদ কুমারজিএবং এখানে উপস্থিত হাজার হাজার সত্যাগ্রহী এবং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এইঅনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত সকল বন্ধুগণ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্র মহোদয়গণ,
যাঁরা বলেন যে, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয় না, তাঁরা এখানে এসে দেখতে পারেনযে কিভাবে শতবর্ষ পূর্বের ইতিহাস আজ আবার আমাদের সামনে প্রত্যক্ষ হয়ে উঠেছে! আমারসামনে যে স্বচ্ছাগ্রহীরা বসে আছেন, তাঁদের মনে গান্ধীজির ভাবধারা, গান্ধীজিরআদর্শের অংশ জীবিত রয়েছে।
আমি এমন সকল স্বচ্ছাগ্রহীদের মনে বিরাজমান মহাত্মা গান্ধীর অংশকে শত শতপ্রণাম জানাই। চম্পারণের এই পবিত্র ভূমিতে জনআন্দোলনের এমনই চিত্র ১০০ বছর আগেবিশ্ব দেখেছিল আর আজ আরেকবার বিশ্ববাসী এই দৃশ্য দেখে পূজনীয় বাপুজিকে স্মরণ করছে।
১০০ বছর আগে চম্পারণে দেশের সকল প্রান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ এসেছিলেন।গান্ধীজির নেতৃত্বে তাঁরা অলিগলিতে গিয়ে কাজ করেছিলেন। ১০০ বছর পর আজ একই ভাবনানিয়ে দেশের ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চল থেকে অসংখ্য মানুষ এসে স্থানীয়দের সঙ্গে কাঁধে কাঁধমিলিয়ে দিন-রাত এক করে কাজ করছেন। আজ এই বিশাল সমাগমে কেউ কস্তুরবা, কেউ রামচন্দ্রশুক্লা, কেউ গোরখ প্রসাদ, কেউ শেখ গুলাব, কেউ লোমরাজ সিং, কেউ হরিবংশ রায়, কেউশীতল রায়, কেউ বিন মহম্মদ, কেউ ডঃ রাজেন্দ্র বাবু, কেউ ধরতী ধর বাবু, কেউ রামনবমীবাবু আবার কেউ জে পি কৃপালনীজি রয়েছেন।
১০০ বছর আগে যেভাবে সত্যাগ্রহ আন্দোলন এই আপনাদের মতো দেশের লক্ষ-কোটিমানুষের জীবনকে নতুন পথ দেখাচ্ছে। চম্পারণ চল – এই শ্লোগানে আকাশ-বাতাস মুখরিত করেদেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা হাজার হাজার স্বচ্ছাগ্রহী আজ এখানে এসে পৌঁছেছেন।আমাদের এই উৎসাহ, এই উদ্দীপনা, এই প্রাণশক্তি, এই রাষ্ট্র নির্মাণের আকুতিকে,বিশেষ করে বিহারের জনগণের এই অভিলাষাকে আমি প্রণাম জানাই।
মঞ্চে ওঠার আগে আমি স্বচ্ছতা বিষয়ক একটি নতুন প্রদর্শনীও দেখেছি। এইপ্রদর্শনীতে নতুন প্রযুক্তি, নতুন শিল্পোদ্যোমগুলি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে বোঝানোহয়েছে। চম্পারণ সত্যাগ্রহের শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন সমারোহের বর্ষব্যাপী অনুষ্ঠানেরসমাপ্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানও আমি দেখেছি। কিন্তু এই সমাপন উৎসবের থেকেও বেশিগুরুত্বপূর্ণ পরিচ্ছন্নতার প্রতি আমাদের আগ্রহ বৃদ্ধিকারী স্বচ্ছতা অভিযানেরসূত্রপাত।
ভাই ও বোনেরা, বিগত ১০০ বছরে তিনটি বড় বিপত্তির সময় এই বিহার, দেশকে পথদেখিয়েছে। যখন দেশ পরাধীনতার শৃঙ্খলে জর্জরিত ছিল, তখন বিহার মোহনদাস করমচাঁদগান্ধীকে মহাত্মা বানিয়ে দিয়েছে, বাপু বানিয়ে দিয়েছে।
স্বাধীনতার পর যখন কোটি কোটি কৃষকদের সামনে ভূমিহীনতার সঙ্কট এসেছে, তখন বিনোবাজিভূদান আন্দোলন শুরু করেছিলেন। আর তৃতীয়বার দেশের গণতন্ত্র সংকটগ্রস্থ হওয়ার এইমাটিরই নায়ক বাবু জয়প্রকাশজি উঠে দাঁড়িয়ে আন্দোলন গড়ে তুলে দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষাকরবেন।
আমি গর্বিত যে, এবার সেই বিহারের জনগণই ‘সত্যাগ্রহ থেকে স্বচ্ছাগ্রহ’আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে এই আন্দোলনকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছেন। আমি জানি, অনেকেইহয়তো প্রশ্ন তুলবেন, বিহার পরিচ্ছন্নতার পরিস্থিতি দেখিয়ে বলবেন, তারপরও মোদীজিএমন কথা কিভাবে বলছেন? এর পেছনে একটি কারণ আছে। নীতিশজি এবং সুশীলজির নেতৃত্বেবিহার যে কাজ করে দেখিয়েছে, তা সকলের সাহস বাড়িয়েছে।
বন্ধুগণ, দেশের মধ্যে বিহারই একমাত্র রাজ্য ছিল, যেখানে পরিচ্ছন্নতার মান৫০ শতাংশের নীচে ছিল। কিন্তু আজ আমাদের সচিব শ্রী পরমেশ্বরজি বলেছেন যে, একসপ্তাহের স্বচ্ছাগ্রহ অভিযানের মাধ্যমে বিহার সেই ব্যবধানের দেওয়াল ভেঙে দিয়েছে।গত এক সপ্তাহে বিহারে ৮ লক্ষ ৫০ হাজার শৌচালয় নির্মিত হয়েছে। এই গতি এবং প্রগতি কমকথা নয়। এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে বিহার অত্যন্ত দ্রুত পরিচ্ছন্নতার মান বৃদ্ধিকরে জাতীয় মানের সমকক্ষ হওয়ার সাফল্য অর্জন করবে! সেজন্য আমি রাজ্যের সমস্তস্বচ্ছাগ্রহী বন্ধু এবং রাজ্য সরকারের উদ্যোগকে, বর্তমান নেতৃত্বকে হৃদয় থেকে অনেকঅনেক শুভেচ্ছা জানাই।
কিছুক্ষণ আগে কয়েকজন স্বচ্ছাগ্রহীকে পুরস্কৃত করার সৌভাগ্য হয়েছে। আমিতাঁদের প্রয়াসগুলির প্রশংসা করি, তাঁদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। এটাই দেখেছিযে, যাঁরা নিজস্ব ক্ষমতার বাইরে গিয়ে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন, তাসদেরঅধিকাংশই মহিলা। পরিচ্ছন্নতার মাহাত্ম্য কী হয় তা আমাদের মা-বোনেরা ভালোভাবেইজানেন। আজ একজনকে সম্মানিত করার সৌভাগ্য আমার হয়নি, কিন্তু আমার ইচ্ছে প্রশাসনিকমর্যাদা লঙ্ঘন করে তাঁর নাম উচ্চারণ করি।
সরকারি কাজে অনেক সফল মানুষও অনামী থেকে যান। তাঁরা কখনও পর্দার সামনে আসেননা, কিন্তু আমি বলতে চাই। আমাদের কেন্দ্রীয় সরকারের সচিব শ্রী পরমেশ্বর আয়ার, তিনিনীচে কোথাও বসে আছে, তদারকি করছেন। এই আইএএস অফিসার, আইএএস-এর চাকরি ছেড়ে আমেরিকাচলে গিয়েছিলেন। সেখানে অনেক উপার্জন করতেন -সুখে জীবনযাপন করতেন। আমরা সরকার গঠনেরপর আমার আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিনি সেই সুখের জীবন ছেড়ে ভারতে ফিরে এসেছেন। একটু আগেইআপনারা তাঁকে টিভির পর্দায় দেখছিলেন। আমি টিভির বন্ধুদের বলব তাঁকে আরেকবারদেখানোর জন্য। এই ভদ্রলোক নিজে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে শৌচালয় পরিষ্কার করেন। তাঁরমতো একজন সঙ্গী পেয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমাগত হাজার হাজার স্বচ্ছাগ্রহীদেরপাশে পেয়ে আমার বিশ্বাস দৃঢ়তর হয়েছে যে, বাপুর সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উদযাপনের আগেইআমরা বাপুর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করে তুলতে পারব।
আগেকার দিনের মানুষরা বলতেন যে, ভগবানের হাজার হাত! কিন্তু কোনওপ্রধানমন্ত্রীর হাজার হাত আছে – এরকম আমরা কখনও শুনিনি। আমি অত্যন্ত নম্রতার সঙ্গেবলতে পারি যে, হাজার হাজার স্বচ্ছাগ্রহী আমার সামনে বসে আছেন তাঁদের উপস্থিতিতেদেশের প্রধানমন্ত্রীর এখন সহস্র সহস্র হাত!
আপনাদের ঐকান্তিকতা, পৌরুষ, আপনাদের সমর্থন; আপনারা গ্রাম ছেড়ে বিহারের অলিগলিতেঘুরে ঘুরে পরিচ্ছন্নতার অভিযান চালাচ্ছেন। তার আগে নিজেদের অঞ্চলও একইভাবেপরিচ্ছন্ন করে এসেছেন। এই পরিচ্ছন্নতায় সমর্পিত মানুষেরা স্বচ্ছাগ্রহী পূজ্য বাপুরস্মরণে সত্যাগ্রহ থেকে স্বচ্ছাগ্রহ আন্দোলনকে একটি নতুন গতি দিয়েছেন, নতুনপ্রাণশক্তিতে ভরপুর করে তুলেছেন। সেজন্য আমি আরেকবার আপনাদের সকলকে শুভেচ্ছাজানাই।
বন্ধুগণ, স্বচ্ছতা মিশন হোক কিংবা কালো টাকা অথবা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইহোক, কিংবা সাধারণ মানুষের জন্য বিভিন্ন পরিষেবার উন্নয়ন হোক; কেন্দ্রীয় সরকারনীতিশজি ও তাঁর টিমের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। বিহারের উন্নয়নেরজন্য রাজ্যের মানুষের সামাজিক ও আর্থিক ক্ষমতায়নের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারেরনীতি ও রণনীতিগুলি পরস্পরের পরিপূরক।
এখানে এই মঞ্চ থেকে আজ বিহারের উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত ৬ হাজার ৬০০ কোটিটাকারও বেশি বিনিয়োগে নির্মিত বেশ কিছু প্রকল্পের উদ্বোধন কিংবা শিলান্যাস করারসৌভাগ্য আমার হয়েছে। জল, রেল, সড়কপথ, পেট্রোলিয়াম; এমনই অনেক প্রকল্প চম্পারণ তথাবিহারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এই সমস্ত প্রকল্প কোনও না কোনওভাবেপরিচ্ছন্নতা এবং পরিবেশ রক্ষার সঙ্গে যুক্ত।
ভাই ও বোনেরা, আজ যে প্রকল্পগুলির শিলান্যাস হয়েছে, তার মধ্যে একটি হ’লমোতিহারি ঝিল সংস্কার। আমাদের মোতিহারি শহর এই ঝিলের নামেই পরিচিত, যা চম্পারণআন্দোলনের ইতিহাসের অঙ্গ তার পুনরুদ্ধারের কাজ আজ থেকে শুরু হ’ল। গান্ধীজি যখনসত্যাগ্রহের জন্য চম্পারণে ছিলেন, তখন তিনি এই ঝিল সম্পর্কে বলেছিলেন যে, বিকেলেমোতিঝিলের দিকে তাকিয়ে থেকে তিনি খুব আনন্দ পেতেন। এই ঝিলের কারণেই এই শহর সুন্দর।কিন্তু গান্ধীজির দেখা সেই ঝিলটির সৌন্দর্য সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে হারিয়ে গিয়েছিল।
আমি শুনেছি যে, এখানকার সুধী নাগরিকরা এই ঝিলকে রক্ষা করার জন্য নিজেদেরপক্ষ থেকে যথাসম্ভব চেষ্টা করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে পায়ে হেঁটেশোভাযাত্রা বের করেও তাঁরা সচেতনতার অভিযান চালিয়েছেন। আপনাদের এই প্রচেষ্টার সঙ্গেযুক্ত হয়ে এবার সরকার এই ঝিলের সংস্কার করবে, যাতে ঝিলটি স্থানীয় জনগণের পাশাপাশিভবিষ্যৎ পর্যটকদের জন্য একটি বিনোদনের স্থান হয়ে উঠতে পারে।
ভাই ও বোনেরা, পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে জলের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। বেতিয়ার জলেরঅভাব দূর করার জন্য পরিচ্ছন্ন পানীয় জলের কষ্ট দূর করার জন্য অমৃত যোজনার মাধ্যমেপ্রায় ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে জল সরবরাহ প্রকল্পের শিলান্যাস করা হয়েছে। এরদ্বারা দেড় লক্ষেরও বেশি মানুষ পানীয় জলপাবেন।
পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে যুক্ত আমাদের আরেকটি প্রচেষ্টা হ’ল জীবনদায়িনী মাগঙ্গাকে নির্মল করে তোলা। গঙ্গোত্রী থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত গঙ্গা নদীকে নির্মলকরে তোলার সঙ্কল্প নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বিহার এই মিশনেরগুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ঘর কিংবা কারখানার নোংরা জল যাতে গঙ্গায় গিয়ে না পড়ে, তাদেখার জন্য বিহার সরকার ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগে ১১টি প্রকল্প মঞ্জুরকরেছে। এই টাকা দিয়ে ১ হাজার ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ সিভিল লাইন বিছানোরপরিকল্পনা রয়েছে। এগুলির মধ্যে ৪টি প্রকল্পের শিলান্যাস আজ হয়েছে।
গত বছর যখন আমি মোকামা এসেছিলাম, তখন যে ৪টি প্রকল্পের শিলান্যাস করেগিয়েছিলাম, খোঁজ নিয়ে দেখেছি সেগুলিতেও দ্রুত কাজ এগিয়ে চলেছে। কিছুদিনের মধ্যেইবাকি প্রকল্পগুলিরও কাজ শুরু করে দেওয়া হবে। গঙ্গার তীরের গ্রামগুলিকেঅগ্রাধিকার-ভিত্তিক খোলা মাঠে প্রাকৃতিক কর্ম মুক্ত করা হচ্ছে।
উত্তরাখন্ড, উত্তর প্রদেশ, বিহার, ঝাড়খন্ড এবং পশ্চিমবঙ্গ – মা গঙ্গা যে৫টি রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হন, সমস্ত রাজ্যে গঙ্গা তটবর্তী গ্রামগুলিতে এইআন্দোলন সফল হয়েছে। গঙ্গা তটবর্তী গ্রামগুলির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন প্রকল্পচালু করা হচ্ছে, যাতে তারা গ্রামের আবর্জনা ও বর্জ্য পদার্থ নদীতে না ফেলেন। সেসম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আমি আশা করি যে, নিকট ভবিষ্যতেই গঙ্গাতটসম্পূর্ণ রূপেই প্রাকৃতিক কর্মমুক্ত হয়ে উঠবে।
বিগত দিনে বেনারসে ‘কাচড়া মহোৎসব’ পালন করা হয়েছে। আমি এই গঙ্গা তটবর্তীসমস্ত শহরের মানুষদের অনুরোধ করব যে, আপনারাও জঞ্জাল মহোৎসব পালন করুন এবং জঞ্জালকিভাবে কাঞ্চন হয়ে উঠতে পারে, বর্জ্য থেকে সম্পদ কিভাবে উৎপাদিত হতে পারে – সেবিষয়ে মানুষকে শিক্ষিত করুন তারপর আপনারা দেখতে পাবেন এই আবর্জনা থেকেও কত বড়সম্পদ তৈরি হতে পারে।
ভাই ও বোনেরা, নির্মল জ্বালানিও পরিচ্ছন্নতা আন্দোলনের একটি অংশ। সরকারউজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে প্রত্যেক গরিব মা-বোনকে বিষাক্ত ধোঁয়া থেকে মুক্তি দিতেউঠে পড়ে লেগেছে। ইতিমধ্যে দেশে সাড়ে তিন কোটিরও বেশি পরিবারকে বিনামূল্যে রান্নারগ্যাস সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। বিহারের প্রায় ৫০ লক্ষ মহিলার মাধ্যমে ৫০ লক্ষপরিবার এর দ্বারা উপকৃত হয়েছেন। কিন্তু বন্ধুগণ, নির্মল জ্বালানিকে অগ্রাধিকারদেওয়ায় এবং উজ্জ্বলা যোজনার সাফল্যের কারণে সিলিন্ডারের চাহিদাও অনেক বেড়ে গেছে।চম্পারণ ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের জনগণের যাতে এই গ্যাস সিলিন্ডারের অভাব না হয়, তাসুনিশ্চিত করার জন্য মোতিহারি এবং সগোলিতে এলপিজি প্ল্যান্ট বসানোর প্রকল্পেরও আজশিলান্যাস করা হয়েছে। এটি চালু হলে দিনে প্রায় ৯০ হাজার সিলিন্ডার ভরা যাবে।
তাছাড়া, মোতিহারিতে আজ ‘পেট্রোলিয়াম-অয়েল লিউব টার্মিনাল’-এরও শিলান্যাসহয়েছে। এটি চালু হলে চম্পারণ এবং তার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলি ছাড়াও প্রতিবেশী দেশনেপালে পেট্রোলিয়াম সরবরাহ সুচারু রূপে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
ভাই ও বোনেরা, আজকের এই প্রকল্পগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের সেই ভাবনার ফল,যেখানে পূর্ব ভারতকে দেশের উন্নয়নের ‘গ্রোথ ইঞ্জিন’ বলে মনে করা হয়। পূর্ব উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের ৮টি রাজ্যে পরিকাঠামোউন্নয়নের জন্য আমাদের সরকার যেভাবে কাজ করছে, তা আগে কখনও হয়নি।
নীতিশজিও এর সাক্ষী, কিভাবে বিহার সহ গোটা পূর্ব ভারতের প্রয়োজনীয়তা মাথায়রেখে নতুন নতুন প্রকল্পগুলি গড়ে তোলা হচ্ছে। বিশেষ করে, আমাদের সরকার গোটা পূর্বভারতে যোগাযোগ ব্যবস্থার সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
একবিংশ শতাব্দীর প্রয়োজনীয়তা মাথায় রেখে পূর্ব ভারতে হাইওয়ে, রেলওয়ে,ওয়াটারওয়ে এবং আইওয়ে – এই সবকটির উন্নয়ন তীব্র গতিতে এগিয়ে চলেছে। আজ এখানে প্রায়৯০০ কোটি টাকার জাতীয় মহাসড়ক প্রকল্পের শিলান্যাস করা হয়েছে। ঔরঙ্গাবাদ থেকেচৌরদাহ পর্যন্ত যে মহাসড়ক এখন চারলেনের রয়েছে, সেটিকে এখন ছয় লেন করার কাজ আজ থেকেশুরু হ’ল। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিহার ও ঝাড়খন্ড উভয় রাজ্যই উপকৃত হবে।
এভাবেই চম্পারণের জন্য দুটি রেল প্রকল্পের শিলান্যাস করা হয়েছে। মুজাফফরপুরথেকে সগোলি আর সগোলি থেকে বাল্মীকীনগর সেকশনে ডবল লাইন করা হবে। এতে শুধুচম্পারণের মানুষই উপকৃত হবেন না, উত্তর প্রদেশ থেকে শুরু করে নেপাল পর্যন্তযাতায়াত ও ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সহজ হয়ে উঠবে।
বন্ধুগণ, চম্পারণ সত্যাগ্রহের শতবর্ষ উপলক্ষে আমার আজ একটি নতুন রেলযাত্রাউদ্বোধনের সৌভাগ্য হয়েছে! এই ট্রেনটি কাটিহার থেকে দিল্লি পর্যন্ত যাবে। সরকার এইট্রেনটির নাম রেখেছে ‘চম্পারণ হামসফর এক্সপ্রেস’। আধুনিক পরিষেবা সমৃদ্ধ এইরেলযাত্রা কাটিহার ও দিল্লির মধ্যে যাতায়াতের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সুবিধাজনক হয়েউঠবে।
ভাই ও বোনেরা, আজ মাধেপুরায় ইলেক্ট্রিক লোকোমোটিভ ফ্যাক্টরির ফেজ-১-এরওউদ্বোধন করা হয়েছে। এই কারখানাটি দুটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, এটি মেক ইনইন্ডিয়ার উত্তম উদাহরণ। দ্বিতীয়ত, এর মাধ্যমে এই অঞ্চলে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগসৃষ্টি হবে। ভারতীয় রেল ফ্রান্সের একটি কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে এই প্রকল্পের কাজএগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই কারখানায় শক্তিশালী ইঞ্জিন নির্মাণ করা হবে। এই আধুনিককারখানায় নির্মিত ১২ হাজার অশ্বশক্তিসম্পন্ন প্রথম ইঞ্জিনটিকে সবুজ পতাকা দেখানোরসৌভাগ্য আজ আমার হয়েছে।
বন্ধুগণ, বিশ্বে খুব কম দেশই রয়েছে, যেখানে পণ্য পরিবহণের জন্য এতশক্তিশালী ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়। এই ইঞ্জিনগুলির মাধ্যমে ভারতে মালগাড়ির গড় গতিদ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পাবে।
আরেকটি কারণে এই প্রকল্পের ওপর বিস্তারিতভাবে বলতে চাই। ভাই ও বোনেরা, এইপ্রকল্পটি আসলে ২০০৭ সালেই মঞ্জুর হয়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় তারপর থেকে ৮ বছরধরে প্রকল্পটি লালফিতের ফাঁসে আটকে ছিল। তিন বছর আগে এনডিএ সরকার ক্ষমতায় এসেপ্রকল্পটির কাজ শুরু করিয়েছে আর ইতিমধ্যেই প্রথম ফেজের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেছে।
আমাদের দেশে দরিদ্র মানুষের জীবনে পরিচ্ছন্নতা সুনিশ্চিত করার পাশাপাশিসরকার তাঁদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। দেশের দরিদ্র থেকেদরিদ্রতম পরিবারে কেউ অসুস্থ হলে তাঁদের বছরে ৫ লক্ষ টাকা চিকিৎসার খরচ সরকার বিমাকোম্পানিগুলির মাধ্যমে বহন করবে। এখন আর পয়সার অভাবে কারও চিকিৎসা বন্ধ থাকবে নয়া।কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্পটির নাম আমরা দিয়েছি – আয়ুষ্মান ভারত। এটি আমরা যতশীঘ্র সম্ভব চালু করতে যাচ্ছি।
আমার সরকারের কাজ করার একটি নিজস্ব পদ্ধতি আছে। এখন আটকে দিলে, ঝুলিয়েরাখলে আর বিভ্রান্ত করলে চলবে নয়া। ফাইল চাপা দেওয়ার সংস্কৃতিকে আমরা তামাদি করেদিয়েছি। সরকার নিজের প্রত্যেকটি মিশন, প্রতিটি সংকল্প জনগণের সাহায্যে বাস্তবায়িতকরছে। যাঁরা এই পরিবর্তনকে স্বীকার করতে পারছেন না, তাঁদের খুব কষ্ট হচ্ছে। তাঁরাগরিবের ক্ষমতায়ন সহ্য করতে পারছেন না। তাঁরা ভাবেন, গরিব মানুষ শিক্ষিত ওশক্তিশালী হয়ে উঠলে তাঁদের কাছে আর মিথ্যা কথা বলা যাবে না, তাঁদেরকে আর বিভ্রান্তকরা যাবে না। সেজন্য সড়ক থেকে শুরু করে সংসদ পর্যন্ত সরকারের কাজে নানারকমপ্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে।
বন্ধুগণ, এমনিতে আপনারা এমন সরকার নির্বাচিত করেছেন, যা প্রকৃত অর্থেইজনমনের সঙ্গে যুক্ত থেকে জনগণের স্বার্থে কাজ করে চলেছে। সেজন্য কিছু বিরোধীবিভাজনের প্রচেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন।
বন্ধুগণ, আজ এই উপলক্ষে আমি নীতিশজির ধৈর্য্য এবং তাঁর দক্ষ প্রশাসনেরবিশেষ প্রশংসা করতে চাই। তিনি যেভাবে ভ্রষ্ট ও অসামাজিক শক্তিগুলির বিরুদ্ধে লড়াইজারি রেখেছেন, তা সহজ কাজ নয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর পরিচ্ছন্নতা অভিযান,সামাজিক পরিবর্তনের জন্য তাঁর বহুমুখী প্রচেষ্টাকে কেন্দ্রীয় সরকার সম্পূর্ণ রূপেসমর্থন করে।
‘সকলের সঙ্গে সকলের উন্নয়ন’ – এই মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে চলা এনডিএ সরকারসংকল্পবদ্ধ হয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নের কাজ করে চলেছে। পূর্ববর্তীসরকারগুলি সময়ের গুরুত্বকে না বুঝলেও গান্ধীজি সর্বদাই সত্যাগ্রহ এবংস্বচ্ছাগ্রহের পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ করায় জোর দিতেন। গান্ধীজির কাছেসবসময় একটি পকেট ঘড়ি থাকতো! তিনি বলতেনও, ‘আপনারা যেমন একদানা ভাত কিম্বা এক টুকরোকাগজ নষ্ট করতে পারেন না, তেমনই সময়ের একটি মিনিটও নষ্ট করতে পারেন না’। এই সময়আমাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। এই সময় রাষ্ট্রের সম্পত্তি এবং তা রাষ্ট্রেরই কাজেলাগানো উচিৎ।
গান্ধীজির এই ভাবনায় উজ্জীবিত ১২৫ কোটি দেশবাসী আজ ব্রতের সংকল্প নিয়ে কাজকরছেন। ২০১৪ সালে দেশে পরিচ্ছন্নতার পরিমাপ ৪০ শতাংশের কম ছিল, আপনাদেরস্বচ্ছাগ্রহ আন্দোলনের পরিণাম স্বরূপ তা ইতিমধ্যেই বৃদ্ধি পেয়ে ৮০ শতাংশেরও বেশিহয়েছে। অর্থাৎ স্বাধীনতার পর ৬৭ বছর ধরে দেশে পরিচ্ছন্নতার মাপকাঠি যা ছিল, তারদ্বিগুণেরও বেশি বর্তমান সরকারের আমলে কাজ করা সম্ভব হয়েছে।
বন্ধুগণ, বিগত সাড়ে তিন বছর ধরে দেশে ৩৫০টিরও বেশি জেলায় এবং সাড়ের তিনলক্ষেরও বেশি গ্রামকে উন্মুক্ত স্থানে প্রাকৃতিক কর্ম মুক্ত ঘোষণা করা সম্ভবহয়েছে। বিগত তিন বছরে দেশে প্রায় ৭ কোটি শৌচালয় নির্মাণ করা হয়েছে। এটি সাধারণমানুষের ইচ্ছাশক্তিরই পরিণাম যে বিগত ৪ এপ্রিল থেকে আজ পর্যন্ত এক সপ্তাহ থেকে‘সত্যাগ্রহ থেকে স্বচ্ছাগ্রহ’ আন্দোলনের সপ্তাহ পালনের মাধ্যমে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা এবং জম্মু ও কাশ্মীরে প্রায় ২৬ লক্ষ শৌচালয় নির্মাণ করা হয়েছে। এইচারটি রাজ্য স্থির করেছে যে, তারা নিজেরাও পরিচ্ছন্নতার পরিধি আরও দ্রুতগতিতেবৃদ্ধি করবে।
বন্ধুগণ, স্বচ্ছ ভারত অভিযান দেশের কোটি কোটি মহিলাদের জীবন কিভাবে বদলেদিয়েছে, সে সম্পর্কে আপনারা ভালোভাবেই জানেন। একটি শৌচালয় নির্মাণের মাধ্যমে এক বাএকাধিক মহিলার সম্মান সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য তিনটিই সুনিশ্চিত হয়েছে। আমাকে বলাহয়েছে যে, এখন বিহারেও সাধারণ মানুষ শৌচালয়কে ‘ইজ্জত ঘর’ বলা অভ্যাস করে নিয়েছে।এই শৌচালয় নির্মাণের মাধ্যমে দেশে একটি বড় সামাজিক ভারসাম্যহীনতার বিরুদ্ধে লড়াইয়েজয়লাভ সম্ভব হচ্ছে। এটি আর্থিক এবং সামাজিক ক্ষমতায়নেরও কারক হয়ে উঠছে।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের একটি সমীক্ষায় জানা গেছে যে, যে বাড়িতে শৌচালয় থাকেসেই বাড়িতে বছরে গড়ে ৫০ হাজার টাকা বাঁচে। না হলে নানা রোগের চিকিৎসা ও হাসপাতালেআসা-যাওয়া এবং কর্ম ক্ষেত্র থেকে ছুটি নেওয়া বাবদ এই টাকা খরচ হয়ে যায়।
আরেকটি আন্তর্জাতিক এজেন্সির সমীক্ষা থেকে জানা গেছে যে, যে গ্রামগুলি খোলামাঠে প্রাকৃতিক কর্ম মুক্ত ঘোষিত হয়েছে, সেই গ্রামগুলির বাচ্চাদের ডায়েরিয়া কম হয়এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশও সঠিকভাবে হয়। সার্বিকভাবেই বাচ্চারা কম অসুস্থহওয়ায় স্কুলে অনুপস্থিত থাকে না। ফলে, তাদের পড়াশুনায় ফলাফলও ভালো হচ্ছে।
বন্ধুগণ, স্বচ্ছ ভারত অভিযান যেভাবে জনআন্দোলন হয়ে দেশের কোণায় কোণায় পৌঁছেগেছে, তা দেখে বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এটিকে কেস স্টাডির বিষয় হিসাবেবেছে নিচ্ছে। আমার মনে হয়, একবিংশ শতাব্দীতে মানুষের স্বভাব পরিবর্তনের জন্য এরকমগণআন্দোলন এখনও পর্যন্ত বিশ্বের আর কোনও দেশে হয়নি। নিশ্চিতভাবেই ভারত পরিবর্তিতহচ্ছে।
কিন্তু এখানে গান্ধী ময়দানে উপস্থিত প্রত্যেক স্বচ্ছাগ্রহীকে, দেশের ছোটছোট শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক পর্যন্ত সকলকে এখন আসল চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতেহবে। এই চ্যালেঞ্জটি হ’ল সড়ক থেকে শুরু করে রেল স্টেশন, বাড়ি-দোকানের সামনে থেকেশুরু করে স্কুল-কলেজ, বাস স্ট্যান্ড-বাজার-গলিতে গলিতে, পাড়ায়-পাড়ায় পরিচ্ছন্নতারপ্রতি এই আগ্রহ বজায় রাখা। যতক্ষণ পর্যন্ত দেশের প্রত্যেক নাগরিক নিজস্ব স্তরেপরিচ্ছন্নতার জন্য প্রচেষ্টা না চালাবে ততক্ষণ স্বচ্ছ ভারত মিশন বাস্তবায়িত হবেনা। যতক্ষণ পর্যন্ত পরিচ্ছন্নতা দেশের প্রত্যেক মানুষের জীবনের অংশ হয়ে না উঠবে,ততক্ষণ পর্যন্ত স্বচ্ছ ভারত মিশন সম্পূর্ণ হয়ে উঠতে পারবে না। সেজন্য আমাদেরস্বচ্ছাগ্রহ যতটা শক্তিশালী হবে, ততটাই ২০১৯ সালে আমরা স্বচ্ছ ভারত মিশনকেবাস্তবায়িত করতে পারব। তবেই আমরা আগামী বছর ২ অক্টোবর পূজ্য বাপুকে সত্যিকরেরশ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করতে পারব।
বন্ধুগণ, গান্ধীজি এই চম্পারণে কৃষক, শ্রমিক, ডাক্তার, উকিল, ইঞ্জিনিয়ারসবাইকে এনে এক পঙক্তিতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন। তবেই সত্যাগ্রহ সফল হয়েছিল।স্বচ্ছাগ্রহীদের জন্য আমাদের ভূমিকাও তেমনই হওয়া উচিৎ। পরিচ্ছন্নতার এই বার্তাসমাজের প্রত্যেক ব্যক্তি, প্রত্যেক গোষ্ঠীর কাছে যাতে পৌঁছয় – সে চেষ্টা আমাদেরলাগাতার করে যেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে দেশে গরিবদের মাথার ওপর নিজস্ব ছাদ তুলেদেওয়ার দায়িত্ব দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বিহার যে গতিতে শৌচালয়নির্মাণের কাজ শুরু করেছে, গৃহহীন দরিদ্রদের গৃহ নির্মাণের কাজও তেমনই দ্রুতগতিতেএগিয়ে যাবে।
আমরা সবাই আরও একটি প্রচেষ্টা চালাতে পারি আজ থেকে নিয়ে আগামী বছর ২অক্টোবর পর্যন্ত দেশে যে কোনও উপলক্ষে, যে কারও জন্মজয়ন্তীতে, যে কারও মৃত্যুদিবসে, যে কোনও উৎসব অনুষ্ঠানে মানুষের মনে স্বচ্ছ ভারতের বার্তা পৌঁছে দিয়েসচেতনতা বৃদ্ধির কাজও করতে পারি। যেমন আগামীকাল ১১ এপ্রিল মহান সমাজ সংস্কারকজ্যোতিবা ফুলের জন্মদিন, আগামী ১৪ এপ্রিল বাবাসাহেব আম্বেদকরের জন্মদিন – এই বিশেষদিনগুলিতে মানুষকে এই মহাপুরুষদের সম্পর্কে বলার পাশাপাশি তাঁদের পরিচ্ছন্নতারপ্রতি আগ্রহ বৃধির কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।
আপনাদের জানার জন্য বলতে পারি যে, কেন্দ্রীয় সরকার ১৪ এপ্রিল থেকে গ্রামস্বরাজ অভিযানও শুরু করতে যাচ্ছে। এই অভিযানের মাধ্যমে আগামী ১৮ এপ্রিল আমাদের সকলনির্বাচিত সাংসদ, বিধায়ক এবং পঞ্চায়েত, পৌরসভা ও পৌর নিগমগুলিকে নির্বাচিতজনপ্রতিনিধিরা নিজের নিজের এলাকায় স্বচ্ছ ভারত মিশনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কোনও নাকোনও কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবেন, ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে বোঝাবেন। তাঁদের পরিবেশ ওপ্রতিবেশ পরিচ্ছন্ন এবং নির্মল রাখার প্রচেষ্টা চালাবেন।
ভাই ও বোনেরা, রাষ্ট্র নির্মাণে আপনাদের এই অবদান দেশের আগামী প্রজন্মেরমানুষেরা মনে রাখবেন। প্রত্যেক সত্যাগ্রহী সুস্থ, পরিচ্ছন্ন ও সমৃদ্ধ সমাজনির্মাণের জন্য কাজ করছেন। যখন চম্পারণ সত্যাগ্রহ শুরু হয়েছিল, তখন সেই আন্দোলনেঅংশগ্রহণের জন্য আমরা ছিলাম না। আমাদের মধ্যে কারোই তখন জন্ম হয়নি। কিন্তু চম্পারণস্বচ্ছাগ্রহকে সফল করে তুলতে আমরা দিন-রাত এক করে কাজ করতে পারি।
আমি জানি যে, এই কাজে অসীম ধৈর্য্যের প্রয়োজন হয়। আমি এটাই জানি যে,আপনাদের মতো স্বচ্ছাগ্রহীদের মনে দেশে পরিবর্তন আনার জন্য এতটাই আগ্রহ রয়েছে যে,আপনারা নিরন্তর নিজেদের প্রচেষ্টায় নিজের মতো করে কাজ করে যাচ্ছেন। চম্পারণস্বচ্ছাগ্রহ আজকের যুবসম্প্রদায়ের স্বপ্নের একটি রাষ্ট্রগীত হয়ে উঠেছে, যা এই কাজেসমস্ত প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মাধ্যমে জয়যুক্ত না হওয়াপর্যন্ত অবিরাম কাজ করে যাওয়ার শক্তি যোগায়। এই গণআন্দোলন ভারতের ভবিষ্যৎপ্রজন্মের জন্য আলোকবর্তিকাও বটে।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, পরিচ্ছন্নতার প্রতি আমাদের আগ্রহ একটি পরিচ্ছন্ন,সুন্দর ও সমৃদ্ধ ভারতের নতুন অধ্যায় লিখবে। এখানে এই সমারোহে আগত সকলস্বচ্ছাগ্রহীদের আমি অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। পাশাপাশি আবেদন রাখি যে, ২০১৮-র ২অক্টোবর থেকে ২০১৯-এর ২ অক্টোবর আমরা জাতির জনকের সার্ধশতজন্মবার্ষিকী পালন করব।এই সময়কালের মধ্যে আপনাদের দেশের মধ্যে একটি নতুন ভারতের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যআমাদের সমাজে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ত্রুটি, কুসংস্কার যা দেশকে প্রতিনিয়ত উত্যক্তকরে তুলছে, দুর্বল করে তুলছে – সেগুলিকে সমূলে উৎপাটন করতে হবে। আবর্জনামুক্ত,দুর্নীতিমুক্ত, জাতপাত, উঁচু-নীচু ও অস্পৃশ্যতা ভাবনামুক্ত জনগণই দেশকেসাম্প্রদায়িক উত্তেজনা থেকে সাম্প্রদায়িকতাবাদ থেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হবে। ১২৫কোটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে।
এই সংকল্প নিয়ে এগোলেই আমরা ২০২২ সালের মধ্যে স্বাধীনতা সংগ্রামীদেরস্বপ্নের ভারত গড়ে তুলতে পারব। এটাই ২০১৮-১৯ – এ গান্ধীজিকে তাঁর সার্ধশতজন্মবর্ষে প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হবে। এই কাজ সরকারি কাজ নয়, এই কর্মসূচিপ্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর নয়, কোনও রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের নয় – এইকর্মসূচি ১২৫ কোটি ভারতবাসীর কর্মসূচি। এই কর্মসূচি দারিদ্র্য মুক্তির কর্মসূচি,দেশের সামাজিক ন্যায় প্রতিস্থাপনের কর্মসূচি, মা-বোনদের সম্মান পুনরুদ্ধারেরকর্মসূচি। সেজন্য সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে আমাদের এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এইভাবনা নিয়ে আরেকবার সমস্ত স্বচ্ছাগ্রহীদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। ধন্যবাদ জানাই।আরেকবার আমার সঙ্গে বলুন –
আমি বলব মহাত্মা গান্ধী,
আপনারা সবাই বলবেন – অমর রহে, অমর রহে
মহাত্মা গান্ধী অমর রহে, অমর রহে
মহাত্মা গান্ধী অমর রহে, অমর রহে
মহাত্মা গান্ধী অমর রহে, অমর রহে