আমার মন্ত্রিমণ্ডলের সহযোগী শ্রী থাবর চন্দ্রগেহলট মহোদয়,
শ্রী বিজয় সাঁপলা মহোদয়,
শ্রী রামদাস অঠাওলে মহোদয়,
শ্রী কৃষ্ণ পাল মহোদয়,
শ্রী বিজয় গোয়েল মহোদয়,
সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন সচিব জি লতা কৃষ্ণরাওমহোদয় এবং
উপস্থিত সকল সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ, ভাই ও বোনেরা,
এটা আমার সৌভাগ্য যে, ডঃ আম্বেদকর আন্তর্জাতিককেন্দ্রটি দেশকে উৎসর্গ করার সুযোগ পেয়েছি।
আমার জন্য এটি দ্বিগুণ খুশির বিষয় যে, ২০১৫ সালেএই আন্তর্জাতিক কেন্দ্রটি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনেরও সুযোগও আমি পেয়েছিলাম। অত্যন্তকম সময়ের মধ্যে, নির্ধারিত সময়ের আগেই এই কেন্দ্রটি নির্মিত হয়েছে। সেজন্য এরনির্মাণের সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি বিভাগকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, এই কেন্দ্রটি বাবাসাহেবেরশিক্ষা ও তাঁর চিন্তাচেতনার প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে একটি বড় প্রেরণাস্থলেরভূমিকা পালন করবে। এই ডঃ আম্বেদকর আন্তর্জাতিক কেন্দ্রেই ‘ডঃ আম্বেদকরইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সোসিও ইকনোমিক ট্রান্সফরমেশন’-এরও নির্মাণ করা হয়েছে।এটি সামাজিক ও আর্থিক বিষয়গুলি নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কেন্দ্র হয়ে উঠবে।
‘সবার সাথে সবার উন্নতি’ প্রকল্পটি ‘ইনক্লুসিভগ্রোথ’-এর মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পথে কিভাবে আর্থিক ও সামাজিক বিষয়গুলি নিয়েকাজ করবে, এই কেন্দ্র সেক্ষেত্রে একটি ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’-এর ভূমিকা পালন করবেপ্রতিনিয়ত মন্থনের মাধ্যমে।
আর আমার মনে হয়, নতুন প্রজন্মের জন্য এই কেন্দ্রএকটি আশীর্বাদের মতো, যেখানে এসে তাঁরা বাবাসাহেবের চিন্তাভাবনা সম্পর্কে অবহিতহতে পারবেন ও বুঝতে পারবেন।
বন্ধুগণ, আমাদের দেশে বিভিন্ন সময়ে এরকম মহাত্মারাজন্মগ্রহণ করেছেন, যাঁরা শুধুই সামাজিক সামাজিক সংস্কার করেননি, তাঁদের চিন্তাভাবনাদেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, সাধারণ মানুষের সুস্থমানসিকতা গঠন করেছে। বাবাসাহেব আম্বেদকর-এরও তেমনই অদ্ভুত শক্তি ছিল, তাঁরপ্রয়াণের এত বছর পরও, দীর্ঘকাল তাঁর চিন্তা-চেতনাকে চেপে রাখা ও রাষ্ট্র নির্মাণেতাঁর অবদানকে নস্যাৎ করার যাবতীয় চেষ্টা সত্ত্বেও ভারতীয় জনমানস থেকে তাঁর দর্শনকেঅস্তিত্বহীন করে দিতে তাঁরা সফল হয়নি।
আমি যদি বলি, যে পরিবারের স্বার্থে এই সমস্ত কিছুকরা হয়েছে, সেই পরিবারের অধিকাংশ মানুষও আজ বাবাসাহেব দ্বারা প্রভাবিত, তা হলে ভুলবলা হবে না। ভারত নির্মাণে বাবাসাহেবের অবদানের জন্য আমরা সকলে ঋণী। সেজন্যবর্তমান সরকার চায় যে, তাঁর চিন্তাভাবনা অধিকাংশ মানুষের কাছে পৌঁছাক। বিশেষ করে,যুবসম্প্রদায় তাঁর সম্পর্কে জানুক, তাঁকে অধ্যয়ন করুক।
আর সেজন্য বর্তমান সরকার বাবাসাহেবের জীবনের সঙ্গেযুক্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিকে তীর্থস্থান রূপে বিকশিত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।দিল্লির আলিপুরে যে ঘরটিতে বাবাসাহেব শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন, সেই ঘরটিকে ডঃআম্বেদকর রাষ্ট্রীয় স্মারক রূপে নির্মাণ করা হচ্ছে। তেমনই মধ্যপ্রদেশের মহু’তেবাবাসাহেবের জন্মস্থানটিকেও তীর্থস্থান রূপে গড়ে তোলা হচ্ছে। লণ্ডনের যে ঘাটিতেবাবাসাহেব থাকতেন, মহারাষ্ট্রের বিজেপি সরকার সেই ঘরটি কিনে একটি স্মারক গড়েতুলছে। তেমনই মুম্বাইয়ে ইন্দুমিল-এর জমি কিনে আম্বেদকর স্মারক নির্মাণ করা হচ্ছে।নাগপুরে তাঁর দীক্ষাভূমিকেও স্মারক রূপে বিকশিত করা হচ্ছে। নতুন প্রজন্মের জন্য এই‘পঞ্চতীর্থ’ যাত্রা বাবাসাহেবের প্রতি শ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধাঞ্জলি রূপে প্রতিপন্ন হবে।
এমনিতে গত বছর ভারচ্যুয়াল বিশ্বেও একটি ষষ্ঠ তীর্থগড়ে তোলা হয়েছে। এই তীর্থ দেশকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে শক্তি প্রদান করছে এবং ক্ষমতায়িতকরছে। বাবাসাহেব’কে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে সরকার গত বছরই শুরু করেছে ‘ভারত ইন্টারফেসফর মানি’ বা ‘ভীম’ অ্যাপ। ‘ভীম অ্যাপ’ দেশের গরিব, দলিত, পিছিয়ে পড়া মানুষ শোষিত ওবঞ্চিতদের জীবনে আশীর্বাদ-স্বরূপ একটি প্রয়োগ।
ভাই ও বোনেরা, বাবাসাহেব জীবনে যত লড়াই করেছেন,সেগুলি সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। কিন্তু তাঁর জীবন ছিল লড়াইয়ের পাশাপাশি প্রেরণায়ভরপুর। হতাশা ও নিরাশাকে পেছনে ফেলে রেখে একটি সংস্কারমুক্ত ভারতের স্বপ্নদেখেছিলেন। সংবিধান সভার প্রথম বৈঠকের কয়েকদিন পরই ১৯৪৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর তিনিসেই সভার একটি বৈঠকে বলেছিলেন –
“এদেশের সামাজিক, প্রশাসনিক ও আর্থিক উন্নয়ন আজনয়তো কাল হবেই। সঠিক সময় ও পরিস্থিতি এলে এই বিশাল দেশ ঐক্যবদ্ধ না হয়ে থাকবে না।বিশ্বের কোনও শক্তিই এর একতার প্রতিবন্ধক হয়ে উঠতে পারবে না।
এদেশে এত ধর্ম, পন্থা ও জাতি থাকা সত্ত্বেও কোনওনা কোনওভাবে আমরা সবাই যে একদিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠবই, সে সম্পর্কে আমার কোনও সন্দেহনেই।
আমরা নিজেদের আচরণের মাধ্যমে এটা বুঝিয়ে দেব যে,জাতি-ধর্ম-বর্ণ-ভাষা ও লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলকে একসঙ্গে নিয়ে ঐক্যের পথে এগিয়েযাওয়ার শক্তি ও বুদ্ধিমত্তা আমাদের রয়েছে”।
দেখুন, বাবাসাহেবের এই শব্দগুলি কত আত্মবিশ্বাসেটইটুম্বুর, কোথাও নিরাশার চিহ্ন মাত্র নেই। দেশের নানা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যিনিআজীবন লড়াই করে গেছেন, তাঁর মন দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কত আস্থাবান ছিল।
ভাই ও বোনেরা, আমাদের এটা মেনে নিতে হবে যে,সংবিধান রচনার পর থেকে স্বাধীনতার এত বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও আমরা বাবাসাহেবের সেইআশা ও স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি। অনেকের কাছেই জন্মসূত্রে পাওয়া জাতি জন্মভূমিরথেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আমি মনে করি, আজকের নতুন প্রজন্মের সেই ক্ষমতা ওযোগ্যতা রয়েছে যে, তাঁরা এই সকল সামাজিক কুসংস্কার দূর করতে পারে। বিশেষ করে, বিগত১৫-২০ বছরে আমি যে পরিবর্তন দেখছি, তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আমি নতুন প্রজন্মকেই দিতেচাইব। তাঁরা ভালোভাবেই বোঝেন যে, যাঁরা দেশকে জাতির নামে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে,তারা দেশের উন্নয়ন চায় না। কারণ, জাতির নামে বিভাজিত হয়ে সকলে সমান গতিতে এগিয়েযাওয়া সম্ভব নয়। আর ভারত’কে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সকলকেই সমান গতিতে এগিয়ে যেতেহবে। আমি যখন ‘নতুন ভারত’কে জাতিভেদ মুক্ত করার কথা বলি তার পেছনে এই যুবশক্তিরপ্রতি অকুন্ঠ আস্থা ও তাঁদের মনে বাবাসাহেবের স্বপ্নগুলিকে বাস্তবায়িত করার শক্তিথেকে ভরসা আহরণ করি।
বন্ধুগণ, ১৯৫০ সালে যখন ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশরূপে আত্মপ্রকাশ করে, সেদিন বাবাসাহেব বলেছিলেন –
“এই রাজনৈতিক গণতন্ত্র নিয়ে আমাদের সন্তুষ্ট থাকলেচলবে না, আমাদের এই রাজনৈতিক গণতন্ত্রকে সামাজিক গণতন্ত্রে রূপান্তরিত করতে হবে।সামাজিক গণতন্ত্রের ভিত্তির ওপর না দাঁড়ালে, রাজনৈতিক গণতন্ত্র দীর্ঘস্থায়ী হতেপারে না”।
এই সামাজিক গণতন্ত্র প্রত্যেক ভারতীয়র কাছেস্বাধীনতা ও সাম্যের মন্ত্রস্বরূপ। শুধু অধিকারের সাম্য নয়, সমান স্তরের জীবননির্বাহেরও সাম্য। স্বাধীনতার এত বছর পরও আমাদের দেশে কোটি কোটি মানুষের জীবনে এইসাম্য আসেনি। অনেক মৌলিক বিষয় যেমন – বিদ্যুৎ সংযোগ, পানীয় জলের ব্যবস্থা, মাথাগোঁজার মতো ছোট্ট একটি ঘর জীবন বিমা – এসবের অভাবই জীবনের চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে।
আপনারা যদি আমাদের সরকারের কর্মপদ্ধতি ওকর্মসংস্কৃতিকে নিবিড়ভাবে দেখেন, তাহলে অনুভব করবেন যে, বিগত তিন-সাড়ে তিন বছরেআমরা বাবাসাহেবের সামাজিক গণতন্ত্রের স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা চালিয়ে গেছি। আমাদেরসকল প্রকল্প সামাজিক গণতন্ত্রকে মজবুত করার প্রকল্প। যেমন – জন ধন যোজনার মাধ্যমেদেশের কোটি কোটি গরিব মানুষকে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অধিকারসুনিশ্চিত করা হয়েছে। তাঁদেরকে দেশের অন্যান্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টধারী ও যাঁদেরডেবিট কার্ড ছিল সকলের সঙ্গে এক সারিতে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছি।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার ৩০ কোটিরও বেশি গরিবমানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলাতে পেরেছে । আর ইতিমধ্যেই ২৩ কোটিরও বেশি মানুষকে রুপে ডেবিট কার্ড প্রদান করা হয়েছে। এখন গরিবদেরমনেও সেই সাম্যের ভাব এসেছে, তাঁরাও সেই এটিএম-এ দাঁড়িয়ে রুপে কার্ড দিয়ে টাকাতুলছেন, যা দেখে তাঁরা আগে ভয় পেতেন।
আমি জানি না, এখানে উপস্থিত কতজন প্রত্যেকচার-পাঁচ মাসে একবার গ্রামে যাওয়ার সুযোগ পান। যাঁরা দীর্ঘদিন গ্রামে যাননি,তাঁদেরকে অনুরোধ করব যে, আপনারা একবার গিয়ে নিজের নিজের গ্রাম ঘুরে আসুন। গ্রামেরযে কোনও গরিবকে উজ্জ্বলা যোজনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন, তা হলেই বুঝতে পারবেন, এইপ্রকল্প গ্রামের মানুষের জীবনে কেমন পরিবর্তন এনেছে। আগে শুধু সম্পন্নপরিবারগুলিতেই রান্নার গ্যাসের সংযোগ ছিল। আর বাকিরা কাঠ-কয়লা দিয়ে রান্না করতেন।বর্তমান সরকার দেশের গ্রামে গ্রামে এই ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে। এখন গ্রামের দরিদ্রথেকে দরিদ্রতম পরিবারের মহিলারাও গ্যাসের উনুনে রান্না করেন। আজ আর কোনও গরিবমায়ের চোখ কাঠের উনুনের ধোঁয়ায় অশ্রুসিক্ত করতে হয় না।
এই পার্থক্য এসেছে। যাঁরা গ্রামের সঙ্গে বেশিযোগাযোগ রাখেন, তাঁরা এই পার্থক্য বুঝতে পারছেন। আগে গ্রামের হাতে গোনা বাড়িরমহিলারা বাড়ির মধ্যেই শৌচালয় ব্যবহার করতেন। আমরা সেই ব্যবধানটিও মিটিয়ে দিয়েছি।ফলে, গ্রামের মহিলাদের স্বাস্থ্য ও তাঁদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত হয়েছে। এখন ধীরে ধীরেদেশের অধিকাংশ গ্রামে শৌচালয় গড়ে উঠছে। সেজন্য আগে যেখানে দেশে পরিচ্ছন্নতারমাত্রা ৪০ শতাংশ ছিল, এখন তা বৃদ্ধি পেয়ে ৭০ শতাংশেরও বেশি হয়েছে।
সামাজিক গণতন্ত্রকে মজবুত করতে বর্তমান সরকারপ্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বিমা যোজনা এবং জীবন জ্যোতি বিমা যোজনার মাধ্যমে ইতিমধ্যেইদেশের ১৮ কোটি গরিব পরিবারের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। মাসিক মাত্র ১টাকা কিস্তির বিনিময়ে দুর্ঘটনা বিমা এবং দৈনিক ৯০ পয়সা কিস্তির বিনিময়ে জীবন বিমারসুবিধা প্রদান করা হয়েছে।
আপনারা এটা জেনে অবাক হবেন যে, ইতিমধ্যেই এইপ্রকল্পগুলির মাধ্যমে দেশের গরিব মানুষদের প্রায় ১,৮০০ কোটি টাকার দাবি পূরণ সম্ভবহয়েছে। ভাবুন, আজ গ্রামগঞ্জের গরিবরা কত বড় চিন্তা থেকে মুক্ত থাকতে পারছেন।
ভাই ও বোনেরা, বাবাসাহেবের দর্শনে মৌলিক সাম্য নানারূপে নিহিত –
সম্মানের সাম্য,
আইনের সাম্য,
অধিকারের সাম্য,
মানবিক গরিমার সাম্য,
সুযোগের সাম্য।
এরকম কত বিষয় নিয়ে বাবাসাহেব নিরন্তর কথা বলেগেছেন। তাঁর প্রত্যাশা ছিল যে, ভারতের জনগণ দ্বারা নির্বাচিত সরকারগুলি সংবিধানকেপালন করার মাধ্যমে জাতি, ধর্ম, ভাষা, লিঙ্গ-এর বৈষম্য ভুলে সাম্যের পথ অবলম্বনকরবে। স্বাধীনতার এত বছর পর বর্তমান সরকার তাঁর প্রতিটি প্রকল্পের মাধ্যমে এই সকলপ্রকার বিভেদের ঊর্ধ্বে উঠে সাধারণ মানুষকে সাম্যের অধিকার প্রদানের প্রচেষ্টাচালিয়ে যাচ্ছে।
যেমন – সম্প্রতি সরকার আরেকটি প্রকল্প শুরু করেছে‘প্রধানমন্ত্রী সহজ হর ঘর বিজলী যোজনা’ সংক্ষেপে ‘সৌভাগ্য’। এই প্রকল্পের মাধ্যমেদেশের এমন ৪ কোটি বাড়িতে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হবে। যাঁরাস্বাধীনতার ৭০ বছর পরও সন্ধ্যার পর অষ্টাদশ শতাব্দীর মতো বিদ্যুৎহীন জীবনযাপনকরেন। এভাবে এই সৌভাগ্য যোজনা বিগত ৭০ বছরের অসাম্যকে সমাপ্ত করবে।
সাম্য বৃদ্ধির এই পর্যায়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণপ্রকল্প হ’ল ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’। আজও দেশে এরকম কোটি কোটি মানুষ রয়েছেন,যাঁদের মাথার অপর নিজস্ব ছাদ নেই, ঘর ছোট হোক বা বড় আগে নিজস্ব ছাদ থাকা জরুরি।
সেজন্য সরকার ২০২২ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটিগ্রাম ও শহরে প্রত্যেক গরিবের মালিকানাধীন নিজস্ব বাড়ি সুনিশ্চিত করতে চায়। সেজন্যসরকার আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে গরিব ও মধ্যবিত্তদের ঋণে সুদের হার-এ ছাড় দিচ্ছে।সবার মাথার ওপর ছাদ হলে এক্ষেত্রেও সাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে। আমরা সেই চেষ্টাই চালিয়েযাচ্ছি।
ভাই ও বোনেরা, এই প্রকল্পগুলি সুনির্ধারিত গতিতেইএগিয়ে চলেছে এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সম্পন্ন হবে বলে আমার বিশ্বাস।উদাহরণস্বরূপ, আজকের এই ডঃ আম্বেদকর আন্তর্জাতিক কেন্দ্রটির কথাই উল্লেখ করা যেতেপারে। বর্তমান সরকারের কোনও প্রকল্প থেমে থাকে না কিংবা দিকভ্রষ্ট হয় না।নির্দিষ্ট লক্ষ্যে সময়ের আগেই প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়িত করার জন্য আমরা সম্পূর্ণশক্তি দিয়ে লেগে পড়ি, এটাই আমাদের কর্মসংস্কৃতি।
আপনাদের হয়তো মনে আছে, আমি ২০১৪ সালেই লালকেল্লারপ্রাকার থেকে প্রদত্ত প্রথম ভাষণে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে, এক বছরের মধ্যেইদেশের সমস্ত সরকারি বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের জন্য পৃথক শৌচালয় থাকবে। আমরা এক বছরেরমধ্যেই দেশের চার লক্ষেরও বেশি বিদ্যালয়ে পৃথক শৌচালয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি। আজআর শৌচালয়ের অভাবে ছাত্রীদের স্কুলছুট হতে হয় না। এই একটি পদক্ষেপে তাঁদের জীবনেকতটা পরিবর্তন এসেছে, তা আপনারা ভালোভাবেই বুঝতে পারছেন।
বন্ধুগণ, ২০১৫ সালে লালকেল্লার প্রাকার থেকেপ্রদত্ত ভাষণে বলেছিলাম, এক হাজার দিনের মধ্যে দেশের সেই ১৮ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎপৌঁছে দেব, যেগুলিতে স্বাধীনতার ৭০ বছর পরও বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। এখনও ১ হাজার দিনপূর্ণ হতে কয়েক মাস বাকি আছে। আর কেবলমাত্র ২ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছনোর কাজঅধরা রয়েছে।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা কৃষকদের মৃত্তিকাস্বাস্থ্য কার্ড প্রদানের প্রকল্প শুরু করেছিলাম। আমাদের লক্ষ্য ছিল যে, ২০১৮সালের মধ্যে দেশের ১৪ কোটি কৃষকদের হাতে মৃত্তিকা স্বাস্থ্য কার্ড তুলে দিতে হবে।ইতিমধ্যেই আমরা ১০ কোটিরও বেশি কৃষকদের হাতে মৃত্তিকা স্বাস্থ্য কার্ড তুলে দিতেপেরেছি, অর্থাৎ আমরা লক্ষ্য থেকে খুব একটা দূরে নেই।
এভাবেই ‘প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিঞ্চাই যোজনা’ চালুকরা হয়েছিল ২০১৫ সালের জুলাই মাসে। এর মাধ্যমে আমরা ঠিক করেছিলাম যে, ২০১৯ সালেরমধ্যে ৯৯টি দীর্ঘকাল ধরে থেমে থাকা প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়িত করব। ইতিমধ্যে এরকম২১টি প্রকল্প আমরা বাস্তবায়িত করতে পেরেছি। আগামী বছর আরও ৫০টিরও বেশি প্রকল্পবাস্তবায়িত হবে। তার মানে এই প্রকল্পের প্রগতিও নির্দিষ্ট লক্ষ্যের পরিসীমারমধ্যেই দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।
কৃষকরা যাতে তাঁদের ফসলের সঠিক দাম পান, ফসলবিক্রির প্রক্রিয়া যাতে আরও সহজ হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে‘ই-ন্যাশনাল এগ্রিকালচার মার্কেট যোজনা’ বা ‘ই-নাম’ যোজনা চালু করা হয়। এর মাধ্যমেসরকার দেশের ৫৮০টিরও বেশি বাজারকে অনলাইনে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ইতিমধ্যেইএগুলির মধ্যে ৪৭০টিরও বেশি কৃষি বাজারকে অনলাইনে যুক্ত করা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা সম্পর্কে আমি আগেইবলেছিলাম, এটি গত বছর মে মাসে চালু করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে সরকার ২০১৯ সালের মধ্যে৫ কোটি গরিব মহিলাকে বিনামূল্যে রান্নার গ্যাসের সংযোগ দেবে। কিন্তু মাত্র ১৯মাসের মধ্যে সরকার ৩ কোটি ১২ লক্ষেরও বেশি মহিলাকে বিনামূল্যে রান্নার গ্যাসেরসংযোগ দিয়েছে।
ভাই ও বোনেরা, এটাই আমাদের কাজ করার পদ্ধতি। স্বাধীনতারএত বছর পর বর্তমান সরকার তাঁর প্রতিটি প্রকল্পের মাধ্যমে এই সকল প্রকার বিভেদেরঊর্ধ্বে উঠে সাধারণ মানুষকে সাম্যের অধিকার প্রদানের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।কোনও প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়িত না করাকে বর্তমান সরকার অবহেলাজনিতঅপরাধ বলে মনে করে।
এখন এই কেন্দ্রটির দিকেই তাকান। এটি নির্মাণেরসিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ১৯৯২ সালে। কিন্তু ২৩ বছর ধরে কিছুই হয়নি। আমরা সরকারেরদায়িত্ব গ্রহণের পর এর শিলান্যাস হয়েছিল আর আজ আমরাই একে জাতির উদ্দেশে উদ্বোধনকরছি। যে রাজনৈতিক দল বাবাসাহেবের নাম নিয়ে ভোট ভিক্ষা করে তারা হয়তো এই খবরও রাখেনা।
অবশ্য, আজকাল তাঁরা বাবাসাহেবের কথা নয়,ভোলেবাবা’কে স্মরণ করছেন । ঠিক আছে , এটাই অনেক!
বন্ধুগণ, যেভাবে এই কেন্দ্রটি নির্ধারিত সময়েরঅনেক আগেই গড়ে উঠেছে, তেমনই আমাদের অসংখ্য প্রকল্প আমরা নির্ধারিত সময়ের আগেইসম্পন্ন করতে পেরেছি কিংবা সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করেছি। গোটাব্যবস্থা এখন ঠিক লাইনে চলে এসেছে, সেজন্য প্রকল্প সম্পাদনের গতিও বেড়েছে। আর এইগতি বৃদ্ধিই নির্ধারিত সময়ের আগে লক্ষ্য পূরণের মূল কারণ।
যেমন – সম্প্রতি আমরা ‘মিশন ইন্দ্রধনুষ’-এর জন্যযে সময়সীমা নির্ধারণ করেছিলাম, তা দু’বছর কমিয়ে দিয়েছি। এই প্রকল্পের মাধ্যমেসরকার দেশের সেসব এলাকায় টিকাকরণ অভিযান শুরু করেছে, যেখানে আগে টিকাকরণ অভিযানকরা সম্ভব হয়নি। ফলস্বরূপ, দেশের লক্ষ লক্ষ শিশু ও গর্ভবতী মহিলা আবশ্যিকটিকাকরণের পরিষেবা থেকে বঞ্চিত থাকতেন। আমরা এই অভিযান চালিয়ে ইতিমধ্যেই আড়াইকোটিরও বেশি শিশু আর ৭০ লক্ষেরও বেশি গর্ভবতী মহিলাকে টিকা দিতে পেরেছি।
শুরুতে সরকারের লক্ষ্য ছিল, ২০২০ সালের মধ্যে এইটিকাকরণ অভিযান সম্পূর্ণ করা। এখন সেই সময়সীমা হ্রাস করে ২০১৮ সালের মধ্যে দেশেসম্পূর্ণ টিকাকরণের সংকল্প করা হয়েছে। এই লক্ষ্যসাধনের জন্য ‘মিশন ইন্দ্রধনুষ’-এরপাশাপাশি ‘ইন্টেন্সিফায়েড মিশন ইন্দ্রধনুষ’ শুরু করা হয়েছে। এভাবে সরকার প্রত্যেকগ্রামকে সড়কপথে যুক্ত করার নির্ধারিত লক্ষ্য ২০২২ থেকে কমিয়ে ২০১৯ করেছে। সড়কনির্মাণে এখন যে গতি এসেছে, সেই গতিই আমাদের নির্ধারিত সময়সীমা হ্রাসের সুযোগ করেদিয়েছে।
বন্ধুগণ, শ্রদ্ধেয় অটল বিহারী বাজপেয়ীরনেতৃত্বাধীন সরকার দেশে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনা চালু করেছিল। কিন্তুদুঃখের বিষয় এত বছর পরও দেশের সবকটি গ্রাম সড়কপথে যুক্ত হয়নি। ২০১৪ সালে আমরাদায়িত্ব গ্রহণ করে একটি সমীক্ষার মাধ্যমে জানতে পেরেছিলাম যে, দেশের ৫৭ শতাংশগ্রামই কেবল সড়কপথে যুক্ত। বিগত তিন বছরের প্রচেষ্টায় আমরা ৮১ শতাংশেরও বেশিগ্রামকে সড়কপথে যুক্ত করতে পেরেছি। ১০০ শতাংশ গ্রামকে যুক্ত করার কাজ তীব্র গতিতেএগিয়ে চলেছে।
দূরদূরান্তের গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রান্তিকদলিত, পিছিয়ে থাকা ভাই-বোনদের স্বরোজগারে উৎসাহিত করার জন্য সরকার স্ট্যান্ড আপইন্ডিয়া প্রকল্প চালু করেছে। এর মাধ্যমে দেশের প্রতিটি ব্যাঙ্কের প্রত্যেক শাখাকেন্যূনতম একজন তপশিলি জাতি কিংবা জনজাতির নবীন উদ্যোগীকে ঋণ প্রদানের নির্দেশ দেওয়াহয়েছে।
ভাই ও বোনেরা, আপনারা শুনে অবাক হবেন যে, সরকারপ্রচলিত মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে যাঁরা ইতিমধ্যেই লাভবান হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৬০শতাংশই দেশের দলিত-পিছিয়ে থাকা এবং আদিবাসী মানুষ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই৯ কোটি ৭৫ লক্ষেরও বেশি ঋণ মঞ্জুর হয়েছে আর কোনও রকম ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি ছাড়া ৪লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ঋণ প্রদান করা হয়েছে।
বন্ধুগণ, বর্তমান সরকারের জন্য সামাজিক অধিকারশুধুই কথার কথা নয়, এটি একটি অঙ্গীকার। আমি যে ‘নতুন ভারত’-এর কথা বলি, সেটিবাবাসাহেবের স্বপ্নের ভারত।
সকলের জন্য সমান সুযোগ, সকলের সমান অধিকার, জাতি,ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ এবং ভাষার বিভেদ মুক্ত আমাদের ভারত। প্রযুক্তির শক্তিতে এগিয়েযাওয়া ভারত, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে, সকলের উন্নয়ন সুনিশ্চিত করা ভারত।
আসুন, আমরা বাবাসাহেবের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করারজন্য সংকল্প গ্রহণ করি। বাবাসাহেব আমাদের আগামী ২০২২ সালের মধ্যে সেই সংকল্পগুলিকেবাস্তবায়িত করার শক্তি দিন। এই আশা রেখেই আমি নিজের বক্তব্য সম্পূর্ণ করছি।
আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
জয় ভীম, জয় ভীম, জয় ভীম।